উপরের ছবিটির দিকে একবার তাকান। কেমন লাগছে? আপনার যদি মূল ঘটনা জানা না থাকে , অনেকদিন পর এসে কম্পিউটার খুলে পেপারে প্রকাশিত ছবিটি দেখেন, হয়তো ভাববেন কোন চোর ছ্যাঁচোর গুণ্ডা বদমায়েশ কিংবা কোন কুখ্যাত চোরাকারবারি বমাল সমেত ধরা পড়েছে। সীমান্তে চোরাকারবারিরা অবৈধ মাল নিয়ে ধরা পড়লে কিংবা কোন ফেন্সিডিল ব্যবসায়ী শ’খানেক বোতলের চালান সহ ‘ধরা খেলে’ যেমন ছবি ছাপায়, টেবিলে রাখা থাকে চোরাই মালমসলা আর তার পেছনে গুণধর অপরাধীরা সব লাইন ধরে দাঁড়ানো; আর তার পাশে বীর-দর্পে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আমাদের গর্বিত পুলিশ বাহিনী। অবিকল সেই ধরণের ছবি।
কিন্তু আপনি অবাক হয়ে যাবেন যদি শোনেন এরা কোন চোরাকারবারি নন। এরা কৃতবিদ্য লেখক। অনলাইন কমিউনিটিতে লেখেন, যাদের আমরা ব্লগার বলি। আর তাদের সামনে টেবিলে যা রাখা সেটা ফেন্সিডিলের বোতলও নয়, নয় কোন মারাত্মক যুদ্ধাস্ত্র, কিংবা কোন চোরাই মাল। টেবিলে রাখা তাদের কম্পিউটার, আর ল্যাপটপগুলো। কি বিশাল প্রাপ্তি পুলিশের! লেখকদের কথা কি বলব। তাদের লেখা আমার মত ছাপোষা পাঠকেরা মন দিয়ে পড়ি, তাদের যুক্তি-বুদ্ধিতে নিজেকে শানিত করে তুলি। খুঁজে পাই জ্ঞানের নতুন নতুন দিগন্ত। নিশ্চয় আমার মত অনেকেই তাই পান। সুব্রত শুভ নামের যে ছেলেটিকে ধরা হয়েছে তার লেখালিখির সাথে আমি খুব ভালভাবেই পরিচিত ছিলাম। কিছুদিন আগে নিজে থেকেই মুক্তমনায় লিখবার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। তার প্রথম পোস্টটিই ছিল মুক্তিযোদ্ধা ‘শহিদুল হক মামা’ কে নিয়ে। সুব্রতের লেখা থেকেই আমি জেনেছি কাদের মোল্লার বিচারের অন্যতম প্রধান সাক্ষী শহিদুল হক মামা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন; গেরিলা বাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন সে সময়। মিরপুরে কাদের মোল্লা ও বিহারীদের নির্মম ধ্বংসলীলা তিনি নিজ চোখে দেখেছেন। এছাড়াও তিনি ৬৬ -তে ছয় দফা, ৬৯-তে গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি জড়িত ছিলেন। লেখাটা পড়ার আগে উনার কাজের সাথে পরিচয়ই ছিল না আমার। সুব্রত আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল জ্ঞানে গুনে কত ক্ষুদ্র আমি, শহীদুল হক মামার নামই আমি আগে শুনিনি। তার লেখা থেকেই জেনেছিলাম, সুইডেন নিবাসী অকুতোভয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা কিভাবে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে দেশে চলে এসেছিলেন। রায়ে উপযুক্ত শাস্তি না হওয়ায় বেদনাহত কণ্ঠে বলেছেন – ‘বুক ভরা আসা নিয়ে সুইডেন থেকে আসছিলাম। অন্তত আমি ন্যায় বিচার পাব। যারা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে, গণহত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচার পাব আদালত থেকে। ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নেই। আমার অভিযোগ হচ্ছে রায়ের বিরুদ্ধে।’ সুব্রত শুধু শহীদুল হক মামাকে নিয়েই লিখেনি। তার আরো দুটো গুরুত্বপূর্ণ পোস্টের কথা মনে পড়ছে – ‘মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধশিশু প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর কিছু কথা।’ এবং অন্যটি – ‘১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ সম্পর্কে দৈনিক সংগ্রাম-এর ভূমিকা।’ পোস্টগুলোর শিরোনাম দেখেই নিশ্চয় পাঠকেরা অনুমান করতে পারছেন কি অপরিসীম ভালবাসা ছেলেটি বুকে ধারণ করে দেশের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের জন্য। বলতে দ্বিধা নেই এদের মত দৃপ্ত তরুণদের জন্যই শাহবাগের গণজাগরণ সম্ভব হয়েছে। মানুষ পেয়েছে হারানো শক্তি, উদ্যম। নতুন আশায় বুক বেঁধেছে পরবর্তী রায়ের জন্য।
অথচ মুক্তিযুদ্ধের সার্বক্ষণিক কর্মী এ ছেলেটাকে ‘নাস্তিক’ সাব্যস্ত করে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে পাঠিয়ে দেয়া হল। গ্রেপ্তারের খবর পাবার পর মুক্তমনায় তার পোস্টগুলো আবারো পড়লাম খুঁটিয়ে। দেখলাম তার একটা লেখাও নাস্তিকতার উপরে নয়। একটি লেখা আছে বটে বিখ্যাত এক নাস্তিক বিজ্ঞানীকে নিয়ে। লেখাটির শিরোনাম – ‘রিচার্ড ডকিন্স’এর প্রতি ভালোবাসা’। হ্যা রিচার্ড ডকিন্স ব্যক্তি জীবনে নাস্তিক ঠিকই, কিন্তু নাস্তিকতার চেয়েও বড় যে ব্যাপারটি সেটা হল তিনি পৃথিবীর অন্যতম সেরা জীববিজ্ঞানী। যার লেখার যাদুতে, বৈজ্ঞানিক যুক্তির স্ফুরণে বিমোহিত হননি, এমন লোক পাওয়া দুর্লভ। তার ‘সেলফিশ জিন’ বইটিকে আমি এ শতকের অন্যতম সেরা বইয়ের তালিকায় রাখব চোখ বন্ধ করেই। এহেন ব্যক্তির কাজের জন্য কেউ ভালবাসা প্রকাশ করতেই পারেন। আমিও করেছি বহুবারই। ডকিন্সের শেষ বইটা ‘ম্যাজিক অব রিয়ালিটি’ ছিল আমার জন্য অনাবিল এক আনন্দের উৎস। যেভাবে আমি আপ্লুত হই হুমায়ুন আজাদের ‘সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’, কিংবা ‘বাঙলাদেশের কথা’ আবৃত্তি করে, ঠিক তেমনই আপ্লুত হয়ে উঠি রিচার্ড ডকিন্সকে পড়তে পেরে। এই জ্ঞানের আনন্দকে কি আস্তিকতা, নাস্তিকতা দিয়ে মাপা যায়, না উচিৎ? একজন দক্ষ পিয়ানো বাদক যেমন আমাদের আপ্লুত করতে পারেন তার দক্ষ হাতের যাদুতে, একজন কবি যেমন আমাদের আপ্লুত করতে পারেন কাব্যের মূর্ছনায়, তেমনি ডকিন্স আমাদের করেছেন ক্ষুরধার বৈজ্ঞানিক যুক্তি আর লেখনীর মাধ্যমে। এই আনন্দে কেবল আমি আপনি নন, আপ্লুত হতেন স্বয়ং আইনস্টাইনও। ব্যক্তি ঈশ্বরের ধারনাকে পরিত্যাগ করেও তিনি মহাবিশ্বের রহস্য অনুসন্ধান করে রোমাঞ্চিত হতেন ছোট বাচ্চাদের মতোই। বলতেন, ‘আমি ব্যক্তি ঈশ্বরের কল্পনা করতে চাইনা; আমরা আমাদের অসম্পূর্ণ ইন্দ্রিয়ের সহায়তায় যে মহাবিশ্বের গড়ন এখন পর্যন্ত সম্যক বুঝতে পেরেছি এতেই শ্রদ্ধা-মিশ্রিত ভয়ে আমরা আপ্লুত।‘ কি কাব্যিক একটি লাইন। এই উপমার আঘাতে উতলা হয়ে যাবে আস্তিক-নাস্তিক সবাই। কিন্তু সরকার বাহাদুর পণ করেছেন জ্ঞানার্জনের এই আনন্দটা মাটি না করে ছাড়বেন না।
শুভর পাশাপাশি রাসেলের সম্বন্ধেও জানলাম। সুলেখক আরিফ জেবতিক একটি পেপারে চমৎকার একটি লেখা লিখেছেন একটি পত্রিকায় -‘একমাত্র বিকল্প ভালো মানুষদের সক্রিয়তা’ শিরোনামে। সে লেখায় রাসেল পারভেজকে নিয়ে তিনি যা বলেছেন, তা পড়ে যে কারোই মনে হবে, কি দরকার ছিল আমাদের এ পোড়া দেশ নিয়ে চিন্তা করার। আরিফ জেবতিক লিখেছেন, ‘রাসেল পারভেজ আর তাঁর স্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের এই দুই মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা গিয়েছিলেন। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে তাঁরা চাইলেই বিদেশে থেকে যেতে পারতেন, নিশ্চিত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আর জীবনযাত্রা উপভোগ করে খুব সহজেই ফেলে আসা স্বদেশকে দুটো গালি দিয়ে আর করুণার চোখে তাকিয়ে তাঁরা জীবন পার করে দিতে পারতেন। কিন্তু তাঁদের হৃদয়ে ছিল বাংলাদেশ। এই দেশটা এমনভাবে তাঁদের হৃদয়ে গেঁথে ছিল যে যখন স্ত্রীর পিএইচডি শেষ হতে দেরি হচ্ছে তখন রাসেল তাঁর নিজের দুই বছরের শিশুকে নিয়ে একাই বাংলাদেশে চলে এসেছেন, স্ত্রীর লেখাপড়া শেষ করতে আরো কয়েক বছর লেগেছে, এই সময় রাসেল তাঁর শিশুপুত্রকে বাংলাদেশ দেখাবেন বলে ঘাড়ে করে নিয়ে বইমেলায় ঘুরেছেন, শহীদ মিনারে গিয়েছেন, রমনার বটমূলে গান শুনেছেন। কর্পোরেট উচ্চ বেতনের হাতছানি উপেক্ষা করে বাচ্চাদেরকে বিজ্ঞান শেখানোর ব্রত নিয়ে রাসেল পারভেজ স্কুলমাস্টার হয়েছেন। রাসেলের স্ত্রীও দেশে ফিরে এসে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন শিক্ষকতা। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ, ঘাতক জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে অনলাইন প্রচারণায় রাসেল পারভেজ সবসময়ই উচ্চকণ্ঠ ছিলেন’। আর এ ছেলেটাকে দাগী আসামীর মতো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। তার অপরাধ ‘নাস্তিকতা’। একইভাবে দাঁড় করানো হয়েছে মশিউর রহমান বিপ্লবকেও, যার স্ট্যাটাসগুলোতে থাকত সাহসের ছাপ।
এর পরদিন ধরা হল আসিফ মহিউদ্দীনকে। আসিফের উপর দিয়ে চোট যেন ক্রমাগত চলছেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে ব্লগ লিখে সরকারের বিরাগভাজন হয়েছিলেন, তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। করা হয়েছে নানা ধরনের হেনস্থা। এ অবস্থা পার হতে না হতেই কিছুদিন পরে হয়েছেন মৌলবাদীদের আক্রোশের শিকার। ফিরে এসে লেখালিখি শুরু করতে না করতেই তার ব্লগ বিটিআরসির চিঠির মাধ্যমে চাপ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হল। আর এখন তো করা হল গ্রেপ্তার। এ ছেলেটাকে যত দেখি তত অবাক হয়েছি। শেষ সময় পর্যন্ত রাষ্ট্র শক্তির বিপক্ষে যুদ্ধ করে গেছে শিরদাঁড়া সোজা করে। এমনকি গ্রেপ্তারের আগের দিনও তিনজন ব্লগারকে হেনস্থা করা নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন এভাবে –‘সপ্তদশ অষ্টাদশ শতাব্দীর ইউরোপের উইচ হান্টের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সে সময়ে খ্রিষ্টান ধর্মীয় মৌলবাদ এবং রাষ্ট্র সমার্থক ছিল; যে সকল নারী সমাজের পুরুষদের চাইতে জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, দর্শনে এগিয়ে যেত, তাদেরকে ডাইনী আখ্যা দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারতো ধর্মরক্ষক সরকার এবং খ্রিষ্টান মৌলবাদীরা। মৌলবাদের জন্য নারী শিক্ষা এবং নারী প্রগতি সর্বদাই বিপদজনক, তাই সরকার এবং চার্চ মিলে মিশেই প্রগতিশীল নারীদের জীবন্ত জ্বালিয়ে চারপাশে দাঁড়িয়ে আনন্দ করত। ঠিক একই অবস্থা আজ এই স্বাধীন বাঙলাদেশে! যে সমস্ত তরুণ জ্ঞানে বিজ্ঞানে দর্শনে প্রগতি চিন্তায় এগিয়ে, যারা প্রচলিত প্রথা এবং ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে স্বাধীন মত প্রকাশ করছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ-ধর্মনিরপেক্ষতা-সাম্যবাদ-বাক স্বাধীনতার পক্ষে লিখে যাচ্ছিলেন, তাদের এবার উইচ হান্টের মতই পুড়িয়ে মারা হবে। বহুদিন ধরেই সরকারের এই ছদ্ম প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধে কথা বলে অজস্র সরকার সমর্থক ব্লগারের গালি খেয়েছি। আজকে তারা কে কোথায় তা খুব জানতে ইচ্ছা করছে। তারা ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল সরকারের এহেন ধর্মের রক্ষকের ভূমিকায়, জামাতে ইসলামি এবং হেফাজতে ইসলামির সাথে ধর্মপ্রেমের প্রতিযোগিতায় নামায় কতটা আনন্দিত, তা দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে।’ আসিফ মাথা উঁচু করেই জেলে গেছেন, আর করে গেছেন নিপীড়ক রাষ্টযন্ত্র আর তার সুবিধালেহনকারীদের গালে সজোরে চপেটাঘাত।
কিছুদিন আগে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এ প্রকাশিত ‘ব্লগারদের বাকস্বাধীনতায় চাই না হস্তক্ষেপ’ শিরোনামের লেখায় বলেছিলাম, ফেসবুকে এখনো বাঁশের কেল্লা আর নিউ বাঁশের কেল্লার মতো সাইট উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের এই সাম্প্রদায়িক উস্কানির বলি হয়ে নির্যাতিত হয়েছেন শত শত সংখ্যালঘু পরিবার। ধর্ষিতা হয়েছেন, গুম খুন হয়েছেন। রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়েছে, হয়েছে হাজার হাজার বৃক্ষ কর্তন। চাঁদে সাইদীর মিথ্যা ছবি প্রচার করে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষকে সম্মোহিত করার প্রচেষ্টা করেছে। তাদের সাইট বন্ধ হয়নি, বন্ধ করা যায়নি তাদের কর্মকাণ্ড। আর বাঁশের কেল্লাই বা বলি কেন? বাঁশের কেল্লার চেয়েও উগ্র সাইট বহাল তবিয়তে রাজত্ব করে যাচ্ছে। মাহমুদুর রহমানের আমার দেশ এবং নয়া দিগন্তের মত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে মিথ্যার কুৎসিত বেসাতি দিনের পর দিন। একে তাকে নাস্তিক আখ্যা দেয়া হয়েছে, মৃত ব্লগারের ব্যক্তিজীবন নিয়ে টানা হ্যাচড়া করা হয়েছে। অশিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত মোল্লা যাদের ব্লগ সম্বন্ধে কোন ধারনা নেই, তাদের দিয়ে উস্কানি দেয়া হয়েছে, চট্টগ্রামের মহাসমাবেশ পণ্ড করে দেয়া হয়েছে। সরকার সে সব পত্রিকার সার্কুলেশন এবং অনলাইন প্রকাশনা বন্ধ করেনি। করতে পারেননি হিযবুত তাহরীরের মত উগ্রবাদী দলগুলোর প্রচারণাও। এই যে হিযবুত তাহরীরের সাইডকিক – ‘আনসারউল্লাহ বাংলা টিম’ নামের উগ্রপন্থী গ্রুপ যাদের কয়েকজন সদস্য রাজীব হত্যায় জড়িত ছিল, তাদের সাইটে গেলে যে কেউ দেখবে, বাংলা ভাষায় কিভাবে বোমা বানানোর নির্দেশিকা দেওয়া আছে, আছে নানা ধরণের উষ্কানীমূলক বার্তা। ‘রান্নাঘরে বসেই কিভাবে বোমা বানানো যায়’ – এ ধরণের শিরোনামে নির্দেশিকা আছে; আছে নারীদের আত্মঘাতী হামলায় উদ্বুদ্ধ করার মতো পোস্ট –‘ইমানদার বোনেদের দায়িত্ব কর্তব্য’ শিরোনামে। রাজীবের হত্যাকারীদের ‘বীর’ হিসেবে উপাধি দেয়া হয়েছে এগুলো সাইটে। ভিডিও ছাড়া হয়েছে – ‘চেরি পিকিং’ করে ধর্মগ্রন্থের রেফারেন্স কিংবা ধর্মপ্রচারকদের কর্মকাণ্ড দিয়েও রাজীব হত্যাকে বৈধতা দিতে চেয়েছেন এই সব উগ্র ধর্মান্ধরা। অথচ মাননীয় সরকারের চোখে এগুলো পড়ছে না। তারা খড়গ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রগতিশীল কিছু ব্লগারদের যারা কাউকে চাপাতি দিয়ে কোপাননি, কাউকে উস্কানি দেননি, আক্রমণ করেননি; বরং আক্রান্ত হয়েছেন, যারা কুসংস্কার, ধর্মীয় উগ্রতা আর ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। যেখানে সাধারণ মানুষ ছাব্বিশে মার্চের মধ্যে জামাত শিবিরকে নিষিদ্ধ দল হিসেবে দেখতে চেয়েছিল, তাদের নিষিদ্ধ না করে নিষিদ্ধ করছেন ধর্মের প্রভাবমুক্ত প্রগতিশীল ব্লগারদের, যারা মূলতঃ জামাত শিবির সহ সব মৌলবাদী দলগুলোর বিরুদ্ধেই সোচ্চার। ‘সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ’!
আর তার চেয়েও বিচিত্র এবং নজিরবিহীন ব্যাপারটি হল – মিডিয়ার সামনে তিনজন ব্লগারকে যেভাবে দাগি আসামীর মত উপস্থাপন করা হল তার অভিনব পরিবেশনা। এর আগে কখনোই এটি দেখা যায়নি। কতটা নির্বোধ এবং নির্লজ্জ হলে এই কাজটি কেউ করাতে পারে, তা বোধগম্য হয় না। যেখানে সরকারের মধ্যেই থাকে শামীম ওসমানের মত ফুলের মত চরিত্র, যেখানে সাগর রুনীদের হত্যাকারীদের, ত্বকীর হত্যাকারীদের খুঁজে পেতে গলদঘর্ম হতে হয়ে যায় পুলিশ আর দেশের দুঁদে গোয়েন্দারা, সেই তারাই আবার ক্যামেরার সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ান বুদ্ধিবৃত্তির চর্চাকারী লেখক এবং ব্লগারদের হাতকড়া পরাবার মতো ছবি তুলে বিধ্বংসী পোজ নিয়ে। সহ ব্লগার নিঝুম মজুমদার পরদিন তার স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, “অপরাধীদের ধরলে যেমন অস্ত্র, গোলাবারুদ এগুলোর সামনে দাঁড় করিয়ে ডিবি ছবি তোলে, ঠিক তেমনি এই তিন ব্লগারকেও কিছু কম্পিউটারের সামনে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন কয়েকজন মানুষ কম্পিউটার চুরি করে বাংলাদেশের দুর্দান্ত নব্য রক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা খেয়েছে। একজন ব্লগার হিসেবে আমি সিম্পলী লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেছি এই ছবি দেখে। ” আমি নিশ্চিত এই লজ্জা নিঝুমের কেবল একা লাগেনি, লজ্জা আমাদের সবার। লেখালিখির সাথে জড়িত সকল ব্লগারেরই। সেই লজ্জা আর অপমান থেকেই ব্ল্যাক আউটে গেছে আমার ব্লগ, সচলায়তন, মুক্তাঙ্গন, মুক্তমনা, নাগরিক ব্লগ, আমরা বন্ধু, চতুর্মাত্রিক, ক্যাডেট কলেজ ব্লগ, ইস্টিশন ব্লগ এবং সরব। সরকারের মৌলবাদ তোষণ এবং ব্লগার গ্রেফতারের প্রতিবাদ- প্রতিরোধে শুরু হয়েছে এ ব্ল্যাক আউট। কিন্তু লজ্জাটা যাদের লাগার কথা ছিল তারা শেষ পর্যন্ত বেহায়া আর নির্লজ্জই থেকে গেল। পরিতাপের বিষয় সেটিই।
এত দুঃসময়ের মধ্যেও কিছু ঘটনায় আশার আলো খুঁজে পেলাম। পত্রিকায় গত পরশুদিন (এপ্রিল ৫, ২০১৩) দেখলাম, মুক্তচিন্তার পথ রুদ্ধ না করার আহবান জানিয়েছেন দেশের ২০ বিশিষ্ট নাগরিক। তার মধ্যে আছেন, ড. সালাউদ্দিন আহমেদ, ড. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ড. আকবর আলি খান, অজয় রায়, কাইয়ূম চৌধুরী, রামেন্দু মজুমদার, ডা. সারওয়ার আলী, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী, খুশী কবীর, সুপ্রিয় চক্রবর্ত্তী, তারেক আলী, ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, এম এম আকাশ, ড. ইয়াসমিন হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, শাহীন আনাম ও রোবায়েত ফেরদৌস। তারা বলেছেন, ‘আপনারা সর্বজনের ধর্মানুভূতি রক্ষা করুন, তবে মুক্তচিন্তার পথ রুদ্ধ করবেন না। এর ফলে দেশে বিদেশে ভুল বার্তা পৌঁছুবে।’ আমি আনন্দিত হলাম জেনে যে বাংলাদেশে আলোকিত মানুষ এখনো আছে, যদিও অর্ধশিক্ষিত ‘হেফাজতি’দের তাণ্ডবে মুক্তচিন্তার কণ্ঠস্বর যেন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে উঠেছে।
গতকালের প্রথম আলো পত্রিকায় (এপ্রিল ৭, ২০১৩) দেখলাম আরো বলিষ্ঠভাবে অভিমত দিয়ছেন ব্লগারদের মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ। ‘মুক্তচিন্তার প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে সরকার’ শিরোনামের সংবাদে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উঠে এসেছে –
ধর্মান্ধ মৌলবাদী হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখে ব্লগারদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু যারা ধর্মের নামে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার। এর মাধ্যমে সরকার মুক্তচিন্তার প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুব্রত অধিকারী শুভসহ গ্রেপ্তার করা ব্লগারদের মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশে এসব কথা বলেন বক্তারা।
আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান বলেন, ‘যারা ব্লগ সম্পর্কে জানে না, তারা ব্লগ নিয়ে কথা বলার অধিকার রাখে না। গ্রেপ্তারকৃতদের ব্লগার বলতে চাই না, তাঁদের লেখক বলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে এদেরকে মুক্তি দিন।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাবেরী গায়েন বলেন, ‘ব্যক্তিগত ব্লগ নিয়ে নিয়ে যারা গণমাধ্যমে প্রচার করে সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিল, তাদের গ্রেপ্তার করা হলো না। গ্রেপ্তার করা হলো মুক্তচিন্তার মানুষকে। যারা হাজার হাজার মন্দির ভাঙছে, সহিংসতা চালাচ্ছে, বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে, তারা কি অন্য মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করছে না? রাষ্ট্র আসলে কার ধর্মানুভূতি রক্ষা করতে চায়।’
রাষ্ট্র আসলে কার ধর্মানুভূতি রক্ষা করতে চায় – এ প্রশ্নটা তো আমারো। এ ধরণের প্রশ্ন অনেক আগেই করেছেন হুমায়ুন আজাদ তাঁর বিখ্যাত ‘ধর্মানুভূতির উপকথা’ শীর্ষক প্রবন্ধে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার অজস্র অনুভূতি দিনরাত আহত হয়; পত্রপত্রিকায় গ্রন্থে গ্রন্থে নিকৃষ্ট শিল্পকলাহীন কবিতার মতো ছোটো বড়ো পংক্তির প্রাচুর্য দেখে আহত হয় আমার কাব্যানুভূতি, নিকৃষ্ট লঘু অপন্যাসের লোকপ্রিয়তা দেখে আঘাত পায় আমার উপন্যাসানুভূতি; রাজনীতিবিদদের অসততা ভণ্ডামোতে আহত হয় আমার রাজনীতিকানুভূতি; এবং আমার এমন অজস্র অনুভূতি নিরন্তর আহত রক্তাক্ত হয়, আমি ওগুলোর কোনো চিকিৎসা জানি না, ওগুলো নিয়ে আমি কোন জঙ্গলে কোন রাস্তায় চিৎকার করবো, তাও জানি না। রাষ্ট্র এগুলোকে অনাহত রাখার কোনো ব্যবস্থা করে নি, রাষ্ট্রের মনেই পড়ে নি এগুলোর কথা। রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব নয় আমার এসব অমূল্য অনুভূতিকে অনাহত রাখার সাংবিধানিক ব্যবস্থা নেয়া? সবাই বলবে এটা রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়, তাহলে তাকে খুলতে হবে একটি বিকট ‘অনুভূতি মন্ত্রণালয়’, যার কাজ হবে কোটি কোটি মানুষের কোটি কোটি অনুভূতির হিশেব নেয়া, সেগুলোর আহত হওয়ার সূত্র বের করা, এবং সেগুলোকে সব ধরনের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করা। আমার শিল্পানুভূতি সৌন্দর্যানুভূতি রাজনীতিকানুভূতি কাব্যানুভূতি প্রভৃতি পাহারা দেয়া রাষ্ট্রের কাজ নয়, কিন্তু এখন রাষ্ট্র এক উদ্ভট দায়িত্ব নিয়েছে, মনে করছে ধর্মানুভূতি পাহারা দেয়া তার কাজ; তাই রাষ্ট্র দেখে চলছে কোথায় আহত হচ্ছে কার ধর্মানুভূতি।’
তবে, দেশে বিদেশে ভুল বার্তা পৌঁছুনোর ব্যাপারে যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের বিদগ্ধ চিন্তাবিদেরা, ক’দিন ধরেই দেখছি তাদের আশঙ্কা ইতোমধ্যেই সত্য হতে চলেছে। ‘ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট এণ্ড এথিকাল ইউনিয়ন’ (IHEU) খুব কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করে তাদের বক্তব্য দিয়েছে। তারা বলেছে বর্তমান সরকার ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের গ্রেপ্তার করে মৌলবাদীদের পাতা ফাঁদে হাঁটছে। তারা মৌলবাদীদের করে দেয়া ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা সরকারীভাবে গ্রহণ এবং পত্রিকায় প্রকাশেরও সমালোচনা করেছে। সাড়া বিশ্বের বহু সেক্যুলার সংগঠনই সমালোচনা করছে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জার্নালিস্ট (IFJ) ব্লগারদের মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে। ‘এথিস্ট অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’ (AAI) ব্লগারদের তাৎক্ষণিক মুক্তি দাবী করেছে। এথিস্ট অ্যালায়েন্স-এর প্রেসিডেন্ট কার্লোস ডিয়াজ স্বাক্ষরিত বক্তব্যে তারা ব্লগারদের মুক্তির ব্যাপারে যে কোন সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। তীব্র প্রতিবাদ এসেছে গ্লোবাল ভয়েস এডভোকেসি গ্রুপ থেকেও। প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী এবং এক্টিভিস্ট পি জে মায়ার্স তার ব্লগে বাংলাদেশী মুক্তচিন্তকদের সাথে ‘সলিডারিটি’ ঘোষণা করেছেন। ব্লগে বিবৃতি দিয়েছেন বিখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন, মরিয়ম নামাজী প্রমুখ। সিএনএন, বিবিসি, হাফিংটনপোস্ট, স্লেট সহ বহু মিডিয়ায় মুক্তচিন্তকদের গ্রেফতারের ব্যাপারে সরকারের সমালোচনামূলক প্রবন্ধ এবং পোস্ট এসেছে। ব্লগারদের মুক্তির দাবীতে পিটিশনও হয়েছে বেশ কিছু ব্যক্তি এবং সংঘের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে আমেরিকান হিউম্যানিস্ট আমেরিকার অ্যাম্বেসেডরকে পদক্ষেপ চেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে তাদের পিটিশনে। বোঝাই যাচ্ছে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশঃ বাড়ছে। কাজেই সরকার যদি এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করে, তা দেশের জন্য শুভ ফলাফল বয়ে আনবে না বলাই বাহুল্য। এখন দেখার বিষয় সমস্ত ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের জেলে পুরে, নিপীড়ন করে তারা হেফাজতিদের উগ্রতার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন, নাকি আটককৃত ব্লগারদের মুক্তি দিয়ে মুক্তচিন্তা যৌক্তিক সমালোচনার ক্ষেত্রকে বাধাগ্রস্ত না করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সুনাম পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবেন, সেটা সরকারের আচরণের উপরেই নির্ভর করছে।
:line:
লেখাটির উল্লেখযোগ্য অংশ ‘আমাদের এ লজ্জা কোথায় রাখি?’ শিরোনামে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এ প্রকাশিত হয়েছে।
আমাদের ব্লগারদের যখন রাষ্ট্রের বাহিনী এভাবে চোর ডাকাত বানিয়ে মিডিয়ায় প্রচার করছিল, তখন যারা প্রতিবাদ করে নি; এখন শিক্ষকদের কান ধরে উঠবস করানো হলেও রাষ্ট্রীয় বাহিনী নির্বিকার। এমন দিন আসবে বাঙলার ঘরে ঘরে ঢুকে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে সোনার ছেলেরা মা বোনদের কান ধরে উঠবস করাবে, মা বোনদের সম্ভ্রমহানি ঘটাবে এই জয় বাংলা শ্লোগান দিয়েই।
আস্তিকতা আর নাস্তিকতার ব্যাপারটা কেন যেন অনেক সময়েই মানুষ বুঝে হোক বা না বুঝেই হোক কেমন একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয় করে তুলে – কিন্তু বিষয়টি কি আসলে তাই ! আরো একটু খোলাসা করে বিষয়টি বলতে চাই ! যদি বিষয়টি এমন হত যে আল্লাহ/ঈশ্বর/জিহোভা/ ভগবান যে আছেন এটি একটি প্রমানিত সত্য তবে প্রশ্ন করাটা যুক্তিযুক্ত হত বা শোভন হত আমি বা আপনি তাকে মানি কি না বা তাকে বিশ্বাস করি কিনা ! কিন্তু নির্মম সত্যিটি হলো এখন পর্যন্ত কোনো ভাবেই এটি প্রমানিত হয়নি যে একজন ব্যক্তি ঈশ্বর বলে কিছু বিদ্যমান আছে ! একজন ব্যক্তি ঈশ্বরের আবিস্কার নিছকই মানুষের মনগড়া একটা কল্পনা ! আর এই ঈশ্বরের সৃষ্টিকর্তা আমাদের প্রাচীন ইতিহাসের কিছু অবিবেচক মানুষ – যারা রচনা করেছে কিছু গ্রন্হ আর প্রচার করেছে এদেরকে ধর্মগ্রন্হ বলে – প্রচার করেছে এই গ্রন্হগুলি প্রেরিত হয়েছে ঈশ্বরের কাছ থেকে ! আর এটা যে কত বড় মিথ্যা সে সন্বব্ধে রয়েছে অজস্র প্রমান ! প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম সন্বন্ধে Bertrand Russell এর উক্তিটি এখানে প্রনিধানযোগ্য “Religion is something left over from the infancy of our intelligence, it will fade away as we adopt reason and science as our guidelines” ! কাজেই ব্যাপারটা কি দাড়ালো ? একটা মিথ্যার উপর, একটা রূপ কথার (প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের) গল্পের উপর ভিত্তি করে যারা অ-প্রমানিত একটা বিষয়ে – ‘”ঈশ্বর”-এ বিশ্বাস করে, যে বিশ্বাসের কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই তাদেরকে বলা হয় “আস্তিক” | আর যারা বৈজ্ঞানিক সত্যে আস্থাশীল – এবং যে বৈজ্ঞানিক সত্য এখন পর্যন্ত “ঈশ্বর” বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব আবিস্কার করতে পারে নি – (কাজেই সঙ্গত কারণেই তাদের পক্ষে “ঈশ্বর” বলে কিছুকে মানা অসম্ভব বা অযৌক্তিক !) – আর তাদেরকেই বলা হয় নাস্তিক !! আসলে এই শব্দটির ব্যবহার সঠিক অর্থে সত্যিই গোলমেলে ! বরং বলা চলে – সেই তথাকথিত নাস্তিকরাই সত্যের অনুসারী – যেহেতু ব্যক্তি ঈশ্বর বলে কিছু নেই কাজেই তাতে বিশ্বাস স্হাপন বা না-স্হাপনের প্রশ্নটিই অবান্তর ! কাজেই একটি নেতিবাচক শব্দ ” নাস্তিকতার” প্রয়োগ এখানে অপপ্রয়োগ মাত্র ! বরং বলা চলে রূপকথার গল্পের উপর আস্থা স্হাপনের পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক সত্যের প্রতি যাদের অবিচল আস্থা, সঠিক অর্থে তারাই আস্তিক – আর যারা ধর্মগ্রন্হের মত রূপকথার গল্পের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে কাল্পনিক -অপ্রমানিত এক নেতিবাচক ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন তারাই সঠিক অর্থে “নাস্তিক ” ! যদি সত্যি ঈশ্বর বলে এক মহাশক্তিধর কেউ থাকত তবে তাকে বিশ্বাস না করার কোন প্রশ্নই উঠত না ! আমি ঈশ্বর বিশ্বাসীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ করছি আপনারা প্রমাণ করুন ঈশ্বর বলে কেউ আছে !!! যে দিন প্রমাণ করতে পারবেন যে ঈশ্বর আছে সেদিন এই পৃথিবীতে এমন একজন মানুষও থাকবে না যে সেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করবে না !! কাজেই যে পর্যন্ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমানিত না হচ্ছে সে পর্যন্ত তাকে “নাস্তিক” আখ্যা দিয়ে তাকে বিচরের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো – এক মহা-অন্যায়, এক মহা-অবিচার , এক মহা- মানবতা বিরোধী কাজ ! তার অর্থ সত্যকে গলাচেপে হত্যা করা – মানুষের বিবেচনা শক্তিকে নির্মম ভাবে খুন করা – যুক্তি-বুদ্ধি-বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াকে দমিত করে অজ্ঞানতা, মুর্খতা আর মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে উৎসাহিত করা ! তাই আমি জোরালো কন্ঠে আহবান করছি অবিলম্বে অটককৃত সকল ব্লগারকে মুক্তি দেয়া হোক ! আর এর মাধ্যমে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে উৎসাহিত করা হোক ! ধর্মান্ধতাকে নয় শুভবুদ্ধির উদয়কে স্বাগত জানানো হোক !!
@অমল রায়,
প্রাচীন কালে সব ধর্মই এসেছিল মানুষকে উন্নত জীবনের সন্ধান দিতে। কিন্তু কালের গতিতে ধর্মের ঐ সব নির্দেশ বেশিরভাগ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। কিন্তু মুশকিল হল ‘ ধার্মিকরা’ এটা মানবে না। কারণ তাদের বিশ্বাস একবার যদি এটা প্রতিষ্ঠা করা যায় যে ধর্মের নির্দেশ যুক্তিসহযোগে পরিবর্তনযোগ্য তাহলে ক্রমাগত পরিবর্তনের দাবী আসবে কারণ সেটাই আধুনিকতার/প্রগতিশীলতার/যুক্তির দাবী । আর এটাই তাদের ভয়। ধর্মকে আক্রমন না করলে ধর্ম মাথায় চেপে বসে । আর একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখুন অন্য সব রাজনৈতিক/ দার্শনিক বিশ্বাস কে বিরোধিতা / সমালোচনা / আলোচনা/ করা যাবে বলে সবাই মেনে নিয়েছে কিন্তু ধর্ম কে বিরোধিতা / সমালোচনা / আলোচনা/ করা যাবে না। গনতন্ত্র কেন ধর্মকে ছাড় দিল?
ভালো না মন্দ তার উর্ধে বলি,
এমন লেখা আরো দরকার,
অভিনন্দন অভিজিৎ (Y) (F)
তালেবানরা মুক্তমনাদের তালিকা তৈরি করে সরকারের হাতে দিয়েছে, তাদের ধরে ধরে হত্যা করতে। মুক্তমনাদের অপরাধ হচ্ছে, তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা বলে, সাম্যের কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে, ওরা কাউকে হত্যা করে না, হত্যার কথা বলে না। সরকারও তালেবানদের বর্বর দাবি অনুযায়ী কাজ করতে শুরু করেছে। এমন অনেক সাইট আছে যেখানে প্রতিনিয়ত অশ্লীল কথাবর্তা বলা হয়, প্রকাশ্যে জিঘাংসা প্রকাশ করা হয়। সেই সকল মানবতাবিরোধী বিধ্বংসী লোকদের তালিকা তৈরি করে আমরাও কি সরকারের কাছে দিতে পারি না? দেখি না সরকার নাশকতাকারী ও নাস্তিকদের নিধার্মিকানুভূতিতে আঘাতকারীদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়!
সরকার এখন আওয়ামীলীগ থেকে ‘I-am-a মুসলিম লিগ’ হওয়ার চেষ্টা করছে
যে দলকে অসম্প্রদায়িক দল ভেবে ভোট দিয়া নিৰ্বাচিত করলাম তারাই এখন আমাদের মুক্তচিন্তায় শিকল পরাতে চায় । এইভাবে ব্লগার গনমাধ্যমে উপস্থাপন করার সিদ্ধান্তকে তীব্র ক্ষোভ জানাই । (N)
ধর্মের সাথে রাজনীতির একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছেlমানব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, শাসকগোষ্ঠী বারবার ধর্মকে নিজেদের শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করেছেlধর্মীয় চেতনায় আচ্ছন্ন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা সহজlতাই শাসকগোষ্ঠী নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ধর্মের অজুহাতে মানুষের মানবিক বিকাশের পথকে রুদ্ধ করে রাখেlযদিও সব যুগেই কিছু বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ থাকে যারা অচল প্রথা এবং শোষণের বিরুদ্ধে আজীবন যুদ্ধ করে যায়lআর এসব বিজ্ঞানমনস্ক যোদ্ধার কারনেই প্রগতি বিকাশ লাভ করেlতাই আমরা দেখতে পাই যে ,ক্ষমতালোভী শাসকগোষ্ঠীর সাথে প্রগতিশীল এবং বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের দ্বন্দ্ব অনিবার্যlএই দন্দের ফলেই সমাজিক কাঠামোর পরিবর্তন হয়lএকটি দেশের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী এবং স্বার্থান্বেষী শাসকগোষ্ঠী কখনই চায় না সে দেশের মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতার বিকাশ ঘটুকlতাই একটি দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা এবং বিভিন্ন প্রথার মাধ্যমে অবচেতন ভাবে জাতির মধ্যে ধর্মীয় চেতনার বিষ ঢুকিয়ে দেয়া হয়l
ক্ষোভ প্রকাশ করছি সরকারের এই রকম মনোভাবে ।
সরকারের এই নেতিবাচক অর্বাচীন কর্মকান্ড আর প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির কাছে নতজানু প্রতিক্রিয়ায় তীব্র ঘৃনা প্রকাশ করছি।
হেফাজতকে আ’লীগ, বিএনপি, জামাত ও জাপা — নিজ হেফাজতে নিতে ব্যস্ত। আস্তিক বোমাবাজ আর নাস্তিক কি বোর্ডবাজের [?] বিতর্কের ফাঁকে যুদ্ধাপরাধী যেন পার না পায়।
জেগে থাকো শাহবাগ!
__
ব্লগারদের হাটুরে চোরের মতো গণমাধ্যমের সামনে হাজির করায় বীর ঠোল কম্পানির প্রতি অশেষ ঘৃণা। (N)
নাস্তিক ব্লগারদের ফাসি চাই ইটা যেন ঠিক রাজাকারের ফাসি চাই এর একটা রি অ্যাকশন .একজন লোক নাস্তিক এটা তার সম্পূর্ণ বাক্তিগত বাপার এটা বোঝার মত মেধা বা মগজ কোনটাই অনেক মানুষের নাই .সর্বনাশের মূলে কিন্তু মাদ্রাসা শিখা ব্যবস্থা যা অনেক আগেই ধরা উচিত ছিল .যখন একটা ইউনিভার্সিটি এর একটা ছেলে কে দেখি নাস্তিক এর ফাসির দাবিতে উচ্ছ কন্ঠ হতে তখন অল্প বা অশিক্ষিত মাদ্রাসার ছেলেদের আর দায় কি .
আমি কোন দল বুঝিনা আমার ধর্মের ব্যাপারে কেউ যদি কটূক্তি করে তাহলে যেভাবেই হোক আমি এর প্রতিবাদ করব তাতে যে যাই বলুক না কেন।
আল্লামা শফী সাহেবের ১৩ দফাকে ঈমানের জোশে বাংলাদেশের জন্য সমর্থন দিতে চান?
তাহলে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ থাকবেনা। বাংলাদেশ পরিণত হবে একটি শারীয়া শাসিত তালেবান আফগানিস্তান (বাংলাস্তান)। আর সেই বাংলাস্তান ১৪০০ বছরের পিছনের অন্ধকার যুগে ফিরে গিয়ে আটকে পড়ে থাকবে। অন্ধকারের মধ্যে আবদ্ধ রাখাটাই উনাদের মূল নীতি।
আসুন আমরা সবাই এখনি সতর্ক হয়ে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করে ঝাপিয়ে পড়ি। ইনশাআল্লাহ আমরা এই অন্ধদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হইবই। আল্লাহ আমাদের সহায় হইবেন। আল্লাহ সব সময় জ্ঞান পিপাশুদের সংগেই থাকেন।অজ্ঞদের সংগে কখনোই আল্লাহ থাকেননা।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
ভাই , বিএনপি আর জাপার নেতাদের কি আপনি দেখেন নাই ঐ দিন আশেকে জামায়াতের বিশাল সম্মেলনে ১৩ দফা দাবির প্রতি সংহতি জানাইতে ? ঐ সব দলের সৰ্মথকরাও(বুদ্ধি প্রতিবন্ধী) দেখলাম ইসলামী জোসে বুইঝা-নাবুইঝা আল্লামা শফী সাহেবের ১৩ দফাকে সৰ্মথন দিচ্ছে । :-Y
কেন ১৩ দফা দাবি মানলে বাংলাদেশ সৌদিআরব হয়ে যাবে এটা বলা যায় না?
@mona,
না বলা যায়না।
সৌদি আরবে গণতন্ত্র নাই। বাংলাদেশীরা কী গণতন্ত্র ত্যাগ করতে পারবে?
সৌদি আরবে অমুসলিমদের বসবাস নিষিদ্ধ-বাংলাদেশে কী শুধু মুসলমানদের জন্য করলে চলবে?
তাহলে কিছু সউদী আইন দেখুন-
ISLAMIC LAW IN SAUDI
1. Being poor is against the law. Any man not earning a “reasonable” income can be imprisoned.
2. It is considered an offense if a woman appears in public, unless accompanied by a male relative or guardian.
3. It is illegal to engage in any religious practice other than Islam.
4. It is illegal to import any books featuring Christian symbols such as a cross.
5. Woman are not allowed to drive a car.
ইসলামে কোন গণতন্ত্র নাই। তাহলে এখানে বা নীচের লিংকে দেখুন।
http://www.youtube.com/watch?v=hyWIBjWwhkw&list=PL7D021DBA349CBEAA
ক্ষমতাকেই এখন মানুষ বড় করে দেখছে, প্রগতি কে না। হেফাজত এর শো ডাউন দেখে সবাই চিন্তায় পরে গেছে। এরা এত গুলো মানুষ, তার উপর আবার এদের পরিবার ( দেশে এখন ও দেখা যায় যে পরিবার এর কর্তা যে দলে সমর্থন করে অন্যেরাও খুব কমই তার বিপক্ষে যায়) এর ভোট।লোভ সামলানো আসলেই খুব কঠিন।প্রগতি এমনি এমনি প্রসারিত হয় না।মাধ্যমের দরকার হয়।আমাদের সরকার এই ব্লগার দের গ্রেফতার করায় আমিও লজ্জিত বোধ করছি,আমার দেশ যদি কাউকে বাক স্বাধীনতা দিতে না ই পারে তো কি লাভ এই ঠুনকো গনতন্ত্রের।
মুক্ত মনা ব্লগ । নাসিতকেদ্র ব্লগ। এ
চোখের সামনে মানব জীবনের জন্য হুমকী স্বরুপ এতো গুলো অস্ত্র ডীবী পুলিশ সাজিয়ে রাখলো তার পরেও আপনি এতো বড় সন্ত্রাসীদের নিয়ে লিখলেন? আপনার স্পর্ধাতে আমি বিষ্মিত। আনি জানেননা দাদা এমন ভয়ঙ্কর অস্ত্র রেখেছে এরা কিন্তু একটা অস্ত্রের ও লাইসেন্স নেই।ইহুদি নাসারাদের এই বিধ্বংসী অস্ত্র সমাজ থেকে বিতাড়ন ছাড়া শরীয়া ভিত্তিক জীবন ব্যবস্থা নিয়ে বাচা বড়ই মুসকিলের বিষয় হইয়া দাড়াইবেক।
আজ দুপুরের একটা ঘটনা সারা দেশে বেশ আলোড়ন তুলেছে। চট্টগ্রামে কাজির দেউড়ী মোড়ে এক হিন্দু দম্পতির রি্কসা আটকালো হেফাজতে ইসলাম, দাবী প্রমান করতে হবে তারা স্বামি-স্ত্রী । লজ্জায় দুপুরে গলা দিয়ে ভাত নামতে পারিনি। ৭১ চোখে দেখিনি তবে শুনেছি লুঙ্গি তুলে মুসলমানিত্বের প্রমান দেওয়া লাগতো।
বরাবরের মতই ভাল লিখেছেন অভিদা_
তবে এই লাইনটা…
এই লাইনের সুরটা এমন মনে হচ্ছে যে নাস্তিকতা সত্যিই একটি অপরাধ 🙁
কাউকে ‘নাস্তিক’ সাব্যস্ত করতে পারলেই কি তাকে রিমান্ডে নিতে হবে নাকি !
নাস্তিকতা তো গর্বের সাথে প্রকাশ করার মত বিষয় ।
আমি অনেকদিন থেকে আপনার লেখার সাথে পরিচিত অন্য লেখাগুলোতে এই লাইনটার মত দুর্বলতা পাইনি।
আর ১ সেকেন্ডও কোন ব্লগার কে বন্দি দেখতে চাইনা।
ধর্মঅনুভুতির এই চুড়ান্ত পর্যায়ে এদের অনুভুতিতে জোরে জোরে আঘাত করে অনুভুতিটা নষ্ট করে দেয়া উচিত ।
@মহন, (Y)
@মহন,
ভাল কিছু পয়েন্ট বলেছেন। না নাস্তিকতা কোন অপরাধ নয়। অন্ততঃ মুক্তমনা ব্লগে নয়। কিন্তু দেশে তা নয়। আজকে পেপারে দেখলাম ‘অগ্নিকন্যা’ মতিয়া চৌধুরী বলেছেন – ‘গ্রেফতারকৃত ব্লগারদের বিচার হবে, শাস্তি হবে, ইসলামের অবমাননাকারীদের সহ্য করা হবে না’। একজন দেখলাম অন্য একটা ব্লগে বলেছেন, অগ্নিকন্যা ‘বায়ুকন্যা’তে পরিণত হয়েচেন; বাতাসে যেদিক নিয়ে যায়, সে পথ ধরেই আজ হাসিনার মন্ত্রিসভায়।
দেশের পত্রিকার জন্য লিখতে হলে একটু ‘নরম ভাষায়’ লিখতে হয়। সেজন্যই এই দুর্গতি। নাস্তিক হলেই কাউকে রিমান্ডে থাকতে হবে তা নয়। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, শুভ মুক্তমনায় মূলতঃ মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই লেখালিখি করেছেন। নাস্তিকতা নয়। সেটাও জানিয়ে দেয়াটা জরুরী। বিশেষতঃ এই তথ্যগুলো শুভর বিচার হলে গুররুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ, ব্যাপারটা পরিষ্কার করার জন্য। (F)
সরকার ভোটের হিসাব ধরে আগাচ্ছে। হেফাজতের ১৩ দফাও ভোট কেন্দ্রিক। তাদের আমীরের বক্তব্যে বলা হয়েছে
বিএনপি বা জাপও এর মধ্যে ভোটের লাভ খুঁজছে। আন্দালিব রশীদ পার্থ’র একটি স্ট্যাটাসের ছবি দেখেছি ফেসবুকে– সেখানে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় জামায়াতের যে ভোট আছে তার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রশ্ন করেছেন, সেগুলো তাকে কে দেবে? হেফাজত এই কাজটিই করছে– তাদের কত ভোট আছে তাই দেখানোর চেষ্টা করছে।
সরকারের নীতি নির্ধারকেরা ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের বাদ দিয়ে ভোটের হিসাব মিলাতে পারছে না। আবার এটাও পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে না স্বাধীনতার চেতনা পক্ষে মুক্তমনের মানুষের নির্বাচন/ভোটের বিষয়ে মতামত কী।
সামনে কোনো নির্বাচন না থাকলে আজ রাজনৈতিক ময়দানে হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলাম, জাতীয় পার্টির যে গুরুত্ব আছে তা থাকত না। যদি ধরে নেওয়া যায় যে, সামনে কোনো নির্বাচন নেই তাহলে মৌলবাদী ধর্মান্ধদের নিয়ে অন্যভাবে ভাবা যেত এবং তদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামের চেহারাও ভিন্ন হতো।
তবে নির্বাচন অনিবর্য ধরে নিয়েও কর্ম কৌশল নির্ধারণ করা যায়। সে ক্ষেত্রে প্রথমে দরকার আগামী নির্বাচনের ম্যানিফেস্টো নিয়ে কথা বলা। দ্বিতীয়ত কারা প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠত হবেন তা ঠিক করা।
এ বিষয়গুলো যারা রাজনীতি করেন তাদের ওপর নির্ভর করে। ব্লগাররা এবিষয় নিয়ে ভাববেন কেন ? যদি বিএনপির নেতৃত্বে ধর্মীয় লেবাসধারীরা ক্ষমতায় যায় তাহলে তো গেল। তদের নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। যদি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট এদের সাথে আপস করে ক্ষমতায় আসে তাহলেই বা কী লাভ হবে? এত আন্দোলন, সংগ্রাম এবং ত্যাগের পরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেই সব অসতরাই থেকে যাবে? তারপর আবার লড়াই-সংগ্রাম– যতক্ষণ পর্যন্ত সঠিক নেতৃত্ব ক্ষমতায় না আসে, যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রের চরিত্র পরিবর্তন না হয়…
জঙ্গিবাদীদের তুষ্ট করতে শেখ হাসিনার সরকারের করুণ প্রচেষ্টা হীতে বিপরীত হয়ে তাঁদের ক্ষমতার রাজনীতিতেও উল্টো ফল দিতে পারে । আমার ভাই, আমার বন্ধুজন , আমার সহযোদ্ধা অন্যায় ভাবে কারাগারে থাকবে , রিমান্ডে থাকবে আর আমি নাচতে নাচতে আবার ঠিকই নৌকা মার্কায় ভোট দিতে যাব এরকম চিন্ত করে থাকলে শেখ হাসিনা বিরাট ভুল করছেন । মুক্তমত চর্চার উপর আঘাত বন্ধ না হলে , ব্লগারদের মুক্তি দেয়া না হলে এবং উগ্র জঙ্গিগোষ্টির উপর ব্যবস্থা না নেয়া হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে আগামী নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি জানি আমার মত অনেকেই আছেন ।
দেখা যাক হেফাজতের ভোটে আলীগ ক্ষমতায় ফিরতে পারেন কীনা (হেফাজতের র্যালীতে দেখা গেল ১৫/১৬ বছরের কচি পোলাপান যারা কীনা ভোটারই না আর যারা ভোটার তারা কেউ নৌকা মার্কায় ভোট দিবে বলে শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন?? )