১.
একটি স্মরণসভা। ছোট মঞ্চের সামনে শ’খানেক চেয়ার পাতা। লোকজন আসছে, বসছে। আর অল্প ক’খানা চেয়ার খালি আছে। মঞ্চের ব্যাকড্রপে এক ব্যক্তির ছবিসহ একটি ব্যানার টাঙানো। তাতে লেখা ‘মডারেট মঈনুলের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তার জন্য স্মরণসভা।’
বক্তারা মঞ্চে উপবিষ্ট হয়েছেন। সভার উপস্থাপক মাইকে ফু দিয়ে দেখছেন ঠিকঠাক আছে কিনা। চারপাশে তাকিয়ে সব ঠিকঠাক দেখে সভার কাজ শুরু করেন।
– মডারেট মঈনুল, আমাদের মঈনুল আজ আর নেই। অথচ গত সপ্তাহেও তিনি ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমাদের এই পাড়ায় গভীর শূন্যতা বিরাজ করছে। আমরা সবাই মঈনুল শূন্যতায় ভুগছি। মঈনুলের মৃত্যুতে এই পৃথিবীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। এই ক্ষতি…
উপস্থাপকের কথা শুনে মানুষজন ফিসফাস শুরু করে। মঞ্চে উপবিষ্ট একজন উঠে গিয়ে উপস্থাপককে বলছে, “কী যা তা বলছো। সারা পৃথিবীর ক্ষতি হয়েছে মানে? এটা বাড়াবাড়ি। তুমি বড়জোর বলতে পারো আমাদের এই পাড়ার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।”
– না ভাই। কী কন! অবশ্যই সারা পৃথিবীর ক্ষতি হয়েছে।
– আরে ধুর!
– আচ্ছা, তাহলে অনন্ত সাউথ এশিয়ার ক্ষতি …
– না না। তোমার মাথা খারাপ হইছে? তাকে এত মানুষ চিনে নাকি?
– ওকে। মানলাম। ভারতবর্ষের অপূরণীয় ক্ষতি হইছে না?
– কী পাগলের পাল্লায় পড়লাম! ওরে এই পাড়ার বাইরে কেউ চিনে না। তুমি মিয়া…
– ঠিক আছে। মডারেট মঈনুলের মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এটা বলি?
– তুমি খুব বাড়াবাড়ি করতেছ। মঈনুলের মৃত্যুতে এই পাড়ার কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা, সেটা নিয়াও সন্দেহ আছে।
– তাহলে স্মরণসভা করতেছি কিসের জন্য?
২.
মঈনুল হোসেন। চিন্তা ভাবনায় মডারেট, তাই নিজেই নিজের নাম দিয়েছেন মডারেট মঈনুল। তিনি আর নেই। গত সপ্তাহের সোমবার দিবাগত রাতে প্রাণ হারিয়েছেন। মৃত্যুর আগে তার বয়স হয়েছিলো মাত্র তিপ্পান্ন বছর। কোন অসুখ বিসুখ ছিলো না। সুস্থ সবল মানুষটি হঠাৎ করে ঘুমের মধ্যে প্রাণ হারান। প্রাণ হারানোর পর তাকে পাড়ার গোরস্থানে কবর দেয়া হয়। কবর দেয়ার পর তিনি মাটির নিচে আছেন। সেখানে অনেক কাজ। খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
পরকালের নিয়ম কানুন বদলে গেছে। আগের সিস্টেম নাই। এখন কেউ চাইলে কবরে নেমেই শুয়ে থাকতে পারে না। হালকা বিশ্রাম নিয়ে তাকে প্রথমে জাস্টিস সেন্টারে গিয়ে প্রোফাইল জমা দিতে হয়। প্রোফাইল জমা দিয়ে ওয়েটিং রুমে এক ঘন্টা ওয়েট করার পর জানতে পারে বেহেশতে যাবে নাকি দোযখে যাবে। তারপর যেতে হয় রিলোকেশন সেন্টারে। সেখানে গিয়ে জানতে পারে মাইগ্রেশন ডেট কবে।
দোযখে গেলে সমস্যা নেই, রিলোকেশন সেন্টার থেকে সোজা গিয়ে হাইবারনেশন পডে ঢুকে যেতে পারে। তারপর টানা শীতনিদ্রা। মাইগ্রেশনের দিন তাকে জাগিয়ে তোলা হবে। কিন্তু যারা বেহেশত পাবে, তাদেরকে হাইবারনেশন পডে ঢোকার আগে বুকিং কাউন্টারে গিয়ে বেহেশতের প্যাকেজগুলো দেখে বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। চার বছর আগে থেকে এই নিয়ম চালু হয়েছে।
বিগত শতাব্দীর শেষের দিকে টের পাওয়া যায় বেহেশতের প্রতি মানুষজনের একেবারেই আগ্রহ নেই। কেন যেন লোকজন বেহেশতে যেতে চাইছে না। পরে কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায় ধর্মগ্রন্থগুলোয় বেহেশতের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তা খুব বেশি আকর্ষণীয় নয়। দুই তিন হাজার বছর আগের মানুষের জন্য হয়তো ঠিক আছে, কিন্তু এখনকার মানুষের ওসব সার্ভিসে পোষায় না। প্যাকেজে উল্লেখিত সার্ভিসগুলো পড়ে লোকজন হাসাহাসি করে। তাই বেহশতকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা এটার ডেভেলপ করেছে। মাত্র একটি বেহেশত সরকারি খাতে আছে। ওখানে যারা যাওয়ার, তারা সরকারি কোটায় যাবে। বাকিরা বিভিন্ন কম্পানির বুথে গিয়ে একশটিরও বেশি প্যাকেজ যাচাই বাছাই করে পছন্দমত বেহেশতে বুকিং দিতে পারবে। এর মাধ্যমে বেহেশতবাসীদের গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই ঘটনাকে বিপ্লব হিসেবে ধরা হচ্ছে। লোকজন মোটামুটি খুশি।
৩.
জাস্টিস সেন্টারের ওয়েটিং রুমে বসে বসে ভাবছিলেন তার মৃত্যুর পর পরিবারের লোকজন কেমন আছে, পাড়ার লোকজনইবা কেমন আছে, কে কী বলছে, তার জানাজায় কী পরিমাণ লোকজন এসেছে, কোন স্মরণসভা হয়েছে কিনা, স্মরণ সভায় কে কী বললো, অফিসের কলিগরা মন খারাপ করেছে কিনা, হ্যাপি ম্যাডাম কি তাকে মনে রাখবে? এসব।
জাস্টিস সেন্টারের আনুষ্ঠানিকতা সেরে জানতে পারেন তিনি বেহেশতে যাবেন। অনলাইন এক্টিভিস্ট হিসেবে এই পুরস্কার পেয়েছেন। মডারেট মঈনুল একথা জেনে খুব খুশি। বেতনের টাকা দিয়ে ফোন ডাটা কিনে ফেসবুকিং করেছেন। এত অল্প ইনভেস্টে বেহেশত পেয়ে যাবেন, ভাবেননি। নামাজ টামাজ খুব একটা পড়তেন না। বিশেষ কোন কাজ না থাকলে জুম্মাবারে জুম্মাটা মেইনটেইন করতেন। অবশ্য ঈদের নামাজ মিস হতো না। ঠিকমতো রোজা করা হয়নি। উপোস থাকতে কষ্ট হতো। কোন বছরই পূর্ণমাস রোজা থাকেননি। তবুও বেহেশত মিলেছে। এরকম জানলে কষ্ট করে যে কয়টা রোজা করেছেন, তাও করতেন না। অনেক শুক্রবারে ইচ্ছে না থাকা সত্বেও মসজিদে গিয়েছেন। এখন আপসোস হচ্ছে। হুদাই! জুম্মার নামাজ না পড়লেও হতো।
ফাইল খুলে জাস্টিস সেন্টারের সার্টিফিকেট বের করেন। ওখানে লেখা আছে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোথাও জঙ্গি হামলা হলেই মডারেট মঈনুল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতেন, “যারা জঙ্গি হামলা করেছে, তারা সহীস মুসলমান নয়। ইসলাম কখনো জঙ্গিবাদকে অনুমোদন দেয়নি।” এই কাজটা তিনি একনিষ্ঠভাবে করেছেন। কখনো মিস করেননি। ইসলামের সম্মান রক্ষায় কাজ করার পুরস্কার স্বরূপ মডারেট মঈনুল বেহেশত পেয়েছেন।
এখান থেকে পৃথিবীতে যোগাযোগ করার সুযোগ নেই। নইলে তার দুই ছেলেকে বলতেন ফেসবুকের ডিউটিটা যেন ঠিকমত পালন করে। আরো বলতেন, কষ্ট করে নামাজ রোজা করার কোন দরকার নেই। বেহেশতে যাওয়া অনেক সহজ।
শুধু দুই ছেলেকে না, অফিসের পিয়া ম্যাডামকেও এই খবর দিতেন। ম্যাডাম খুব সুন্দরী। বয়সে ছোট হলেও বড় পোস্টে আছেন। মডারেট মঈনুল লুকিয়ে লুকিয়ে ম্যাডামকে দেখতেন। আর সবসময় আল্লাহর কাছে বলতেন ম্যাডাম যেন বেহেশতে যায়। অবশ্যই মঈনুল যে বেহেশতে যাবেন, যেন সেই বেহেশতে যায়। অবশ্য হুরপরী হিসেবে ম্যাডামকে পেলেতো কোন কথায়ই নেই! এমনটিও ভাবতেন।
৪.
বেহেশত বুকিং দেয়ার জন্য প্রথম বুথে গেলেন মডারেট মঈনুল। শুরুতে জানতে চাইলেন এই বেহেশতে জঙ্গিরা যাবে কিনা।
– জঙ্গিদের জন্য আলাদা বেহেশত আছে। উনারা সরকারি কোটায় বেহেশতে যাবে। বুকিংয়ের ঝামেলা নেই।
এটা জেনে মোটামুটি নিশ্চিত হলেন তিনি। কারণ জঙ্গি খুব ভয় পান। এমনকি মৃত্যুর পরও তাদের বিশ্বাস করতে পারছেন না। মনে মনে বললেন, জঙ্গিদের কোন মা বাপ নেই। কখন কাকে ধরে মেরে ফেলে ঠিক নেই।
জঙ্গির ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া গেলেও বেহেশতের প্রথম কম্পানিটা মঈনুলের পছন্দ হয়নি। তাদের প্যাকেজে যেসব ফিচার আছে, এরচেয়ে উপভোগ্য জিনিসপাতি দুনিয়াতেই ভোগ করে এসেছেন তিনি। সবচেয়ে বড় ঝামেলা হয়েছে শরবতের খাল নিয়ে। খালের কোন ঢাকনা নেই। বেহেশতে প্রচুর পাখি থাকবে, সুতরাং ঢাকনা ছাড়া শরবতের খাল নিরাপদ না। তাছাড়া খাল আর শরবত, একটা আরেকটার সাথে যায় না। কেমন যেন মনে হয়। এরপর সমস্যা হয়েছে ঘর নিয়ে। ওই বেহেশতে ঘরের দেয়াল স্বর্ণ আর রূপার ইটের তৈরি। এটা মঈনুলের পছন্দ না। তিনি খুঁজছেন প্লাটিনামের দেয়ালের ঘর। তা মা আর বৌয়েরই কয়েক ভরি স্বর্ণ রূপা আছে। এটা এত দামি জিনিস না।
দ্বিতীয় বুথে গিয়ে মেজাজ খুব খারাপ হলো। এখানের সবচেয়ে বড় ফিচার হচ্ছে বেহশতবাসীরা থাকবে কাঁটাহীন বরই গাছ আর পরিচ্ছন্ন কলা গাছের মাঝে। কলা গাছগুলোয় নাকি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত থরে থরে কলা সাজানো থাকবে। প্রচুর এরাবিয়ান লোকজন এই বুথে বুকিং দিচ্ছে। মঈনুল বুঝতেই পারছে না কলা আর বরইয়ের মাঝে কী এমন আছে!
– আপনাদের বরইগুলো দেখতে কেমন?
– সবুজ রঙের বরই। একেবারে কাঁচা সবুজ রং।
– খেতে কেমন?
– রসে টসটসে। হালকা কষকষে। কিন্তু ভারি মিষ্টি।
– আর কলা?
– কলাও অত্যন্ত মিষ্টি। বিচি নেই।
– আমি যদি ইলিশ মাছের স্বাদে কলা চাই, দেয়া যাবে? মানে জিনিসটা দেখতে কলার মত হবে, কিন্তু স্বাদে ইলিশ।
– লেট মি চেক! (ডাটাবেজ চেক করে) না স্যার। আমাদের প্যাকেজে এরকম কিছু নেই। এমনিতেই বরই আর কলার জন্য মানুষ পাগল। ফিউশনের দরকার হয়নি।
– এক্সট্রা পে করলে সাপ্লাই দিতে পারবেন না?
– দুঃখিত, প্যাকেজের বাইরে কিছুই দিতে পারবো না। আপনি মনে হয় আমাদের বরই আর কলার বিশেষত্ব বুঝতে পারেননি। গাছগুলোর শিকড় হচ্ছে স্বর্ণের, বডিটা রূপার আর পাতাগুলো ব্রোঞ্জের। অত্যন্ত সুন্দর।
– ফলগুলো হীরার করলেন না কেন?
– কী যে বলেন না স্যার! তাহলেতো খেতে পারবেন না।
মডারেট মঈনুল বুঝতে পারছেন না গাছের শিকড় কিভাবে স্বর্ণের হয়! বেহেশতে কেন স্বর্ণ রূপার এত ছড়াছড়ি? আর ফল নিয়েই বা এত কাড়াকাড়ি কেন? সম্ভবত বেহেশতের ডেভলপার কম্পানিগুলো দুনিয়াতে খুব বেশি ফলমূল খেতে পারেনি। কিন্তু স্বর্ণ রূপার ব্যাপারটা কী, মঈনুলের বুঝে আসছে না।
এবার গেলেন তৃতীয় বুথে। এখানকার ফিচার বেশ আকর্ষণীয়। কাস্টমাইজ ন্যাচরাল বিউটির বেহেশত। পাহাড়, ঝরণা, সমুদ্রসহ সবকিছুর আকৃতি বাড়ানো কমানো যায়। নিজের শরীরের টেম্পারেচারও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কেউ চাইলে উত্তপ্ত মরুভূমিতে গিয়ে শীত অনুভব করতে পারবে। তবে ওই শরবত টরবত নিজেকেই বানিয়ে খেতে হবে। এটা সমস্যা না। সমস্যা হয়েছে হুরপরী নিয়ে। মডারেট মঈনুল ৭২টা হুরপরী চান না। তিনি চান মাত্র তিনটা। একটি হচ্ছে গেম অব থ্রোনস এর সানসা, আরেকটি টাইটানিকে যে বয়সে অভিনয় করেছে সেই বয়সী কেট উইন্সলেট, আর তিন নম্বর হুরপরী হচ্ছে অফিসের কলিগ হ্যাপি ম্যাডাম। হুর ডিমান্ডের কথা শুনে বুথের লোকজন হাসাহাসি শুরু করে।
– স্যার, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আপনি বোধহয় হুরপরী নিয়ে গুজবে বিভ্রান্ত হয়েছেন। বেহেশতে যে ৭২টা ডিফল্ট হুরপরী পাওয়া যাবে, ওগুলো আসলে চাইনিজ রোবট। সেক্স ডল। আপনি যেভাবে চাচ্ছেন, ওভাবে দেয়া যাবে না। কোন কম্পানিই দিতে পারবে না।
– কোনভাবেই দেয়া যাবে না? আমি যদি এক্সট্রা পে করি?
– না স্যার। এটা সম্ভব না। আপনার আগে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা অনেকেই সানসা আর কেটের ডিমান্ড করেছেন। কিন্তু স্যার, আপনিই বলেন, এটা একটু বেশি হয়ে যায় না? অবশ্য হ্যাপি ম্যাডামের বিষয়টা আমরা ভেবে দেখতে পারি। উনি এখানে আসার পর প্রস্তাব দিয়ে দেখবো। যদি রাজি হন, তাহলেতো ভালোই। রাজি না হলে আমাদের আসলে কিছু করার নেই।
– আচ্ছা। মনে করেন চাইনিজ রোবটই দিলেন, জাস্ট ফিগারটা একটু ওদের মত করে দেন। সম্ভব?
– না স্যার। এটা কপিরাইট আইনের লংঘন। আমরা এটা পারবো না।
মডারেট মঈনুল ভাবছেন কোথাও ভুল হচ্ছে। এমনটি হওয়ার কথা নয়। তিনিতো চাইনিজ সেক্স ডলের আশায় টাকা দিয়ে কেনা ফোন ডাটা খরচ করে ফেসবুকিং করেননি। এটা এক ধরনের প্রতারণা। খুব মন খারাপ করলেন।
৫.
অনেকগুলো বুথ ঘুরেও হুরপরীর কোন সুরাহা করতে পারেননি। শেষমেষ নতুন বুদ্ধি বের করলেন। ভাবলেন অন্য গ্রহের মেয়েরা নিশ্চয় সানসা, কেটদের চেয়েও সুন্দরী হবে। সুতরাং কোন এলিয়েনদের গ্রহে বুকিং দেয়া যায় কিনা, চেষ্টা শুরু করলেন।
– দুঃখিত স্যার। এলিয়েনদের জন্য কোন বেহেশত বানানো হয়নি। কর্তৃপক্ষ এখনো এলিয়েনদের বিষয়ে নিশ্চিত নয়। পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা অন্য কোন গ্রহে প্রাণের সন্ধান পায়নি। পাওয়া গেলে এলিয়েনদের জন্যও বেহেশত বানানো হবে।
এবার একেবারে ভেঙে পড়লেন। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। বেসরকারি খাতে দিয়েও বেহেশতের কোন উন্নতি হলো না। এখন ৭২টা চাইনিজ সেক্স ডল, ঢাকনা ছাড়া শরবতের খাল আর স্বর্ণের শিকড়ের বরই কলা গাছ দিয়ে সারাটা জীবন কাটাতে হবে। ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। বেহেশতে পাবেন বলে কখনো রেড লাইট এরিয়ায় যাননি। একবার বেলি ড্যান্স দেখার সুযোগ পেয়েও দেখেননি। মজা নষ্ট করে চাননি। ভাগ্যিস শেষ বয়সে এসে এক ভ্যারাইটি শো’তে হালকা হট ড্যান্স দেখেছেন। জীবনে অর্জন বলতে ওইটুকুনই।
৬.
হতাশায় ভেঙে পড়া মডারেট মঈনুল গেলেন অভিযোগ বুথে। বুথের লোকজনকে গুছিয়ে নিজের অভিযোগ জানালেন।
– আমি মাত্র তিনটি হুরপরী চেয়েছি। সানসা, কেট আর হ্যাপি ম্যাডাম। কিন্তু কম্পানির লোকজন বললো এভাবে দেয়া যাবে না। কেন?
– আপনার অভিযোগ বঝতে পেরেছি। এটা কোনভাবেই সম্ভব না। আপনি চাইলেই একজন মানুষকে এভাবে পেতে পারেন না। বুঝতেই পারছেন, আপনার সেই অধিকার নেই।
– এটা কেমন কথা ভাই? কথা ছিলো ৭২টা হুরপরি পাবো। এখন দেখি চাইনিজ সেক্স ডল। কথা ছিলো যা খুশি তা খেতে পারবো। এখন দেখি বরই আর কলা। সুমিষ্ট পানীয় দেয়ার কথা বলে এখন দিচ্ছেন খালের শরবত। এসব কেন?
– আপনার সার্টিফিকেটটা দেখি।
মঈনুল তার সার্টিফিকেট দিলেন। বুথের লোকজন দেখলেন।
– বেহেশতের সবই ঠিক আছে। বরং পৃথিবীতে বেহেশত নিয়ে যা যা শুনেছেন, তারচে অনেক বেশি আছে। কিন্তু আপনি সবকিছু পাবেন না।
– কেন পাবো না?!
– আপনার জিপিএ কম। এটা বোধ হয় খেয়াল করেননি।
– জিপিএ কম হবে কেন? আমিতো সব ক্রাইসিসে একবার করে লিখেছি।
– তা লিখেছেন। কিন্তু সমস্যা আছে। আপনার হয়তো মনে নেই, দীর্ঘ সময় ধরে জিরো ফেসবুক ব্যবহার করেছেন। ইনভেস্টের পরিমান অনেক কম। তাই আপনি বেহেশতের সব ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন না।
– আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমার ওসব কিছু লাগবে না। বেহেশতও না দোযখ ও না। আমি আমার মত থাকতে চাই।
– তাও পারবেন না। আপনাকে বেহেশতেই যেতে হবে। খালের শরবত, বরই আর থরে থরে সাজানো কলা খেতে হবে। ৭২ টা চাইনিজ সেক্সডল নিতে হবে।
– ওকে, ওকে। বুঝতে পারছি। শুধু রোবটগুলো বাদ দেন।
– সম্ভব না। আরো আছে, শুনুন। সেক্সডলগুলো তাদের ডিফল্ট সেটিং অনুযায়ী চলবে। আপনি তাদেরকে কন্ট্রোল করতে পারবেন না। অর্থাৎ তাদেরকে যে কাজে বানানো হয়েছে, সেই কাজটা আপনাকে তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
এটা শুনে মডারেট মঈনুলের সারা শরীর আতংকে শীতল হয়ে যায়।
চরম হয়েছে
ভাল্লাগলো।
তারা মন্তব্য করে সেই দিন সম্পর্কে।অথচ ওইদিন তাদের কোন কাজে আসবে না।সুতরাং আপনি তাদের বর্জন করুন এবং অপেক্ষা করুন আর তারাও অপেক্ষা করুক।জেনে রেখ জান্নাতে যে যা চায় তাই পাবে।ওখানে ওয়াসরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।অপরিচ্ছন্ন জায়গাও হবে না।জান্নাতের তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হবে।সুতরাং উপর থেকে পাখির বিষ্ঠা পড়ার অভিযোগ অযৌক্তিক।বাকি আনুসাঙ্গিক সবই অযৌক্তিক
ভালো লেখছেন স্যার, একবারে ডাসা পেয়ারা।আমি কিন্তু নবীজী যা কইছে, তাতে ডট দিয়া বিসা আছি, কখন লাইনে আমু।
মডারেট মনু নাম দিলে জোশ হইতো। দিনশেষে আনু মনু মিলে মিশে একাকার। 😛