আমেরিকান নির্বাচন নিয়ে আমি যা কিছু লেখার, নিজের ওয়াল এবং ব্লগেই লিখেছি। গুরুর মেইন সাইটে একটা নির্বাচনী থ্রেড আছে-সেখানেও কিছু কিছু পোষ্ট দিয়েছি। মোটামুটি ভাবে সাজালে ঃ
(১) ভোটের দুমাস আগে থেকে আমি তিনটে প্রেডিকশন করেছিলাম
( আমার লাস্ট দুমাসের ফেসবুক পোষ্ট দেখতে পারেন )
নির্বাচন খুব ক্লোজ হবে
এই নির্বাচনে রেজিজম, সেক্সিজম ইত্যাদির ওপরে ভরসা করলে হিলারী ডুববে
হিলারী জন বিচ্ছিন্ন -তার নির্বাচনী কৌশলে সমস্যা আছে
(২) লোকে হিলারীকে দোষ দিচ্ছে। এটা ভুল। আমেরিকাতে প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন ৪ বছর অন্তর হয়। কিন্ত সেনেট এবং কংগ্রেস নির্বাচিত হয় দুবছর বাদে বাদে। ২০১০,১২,১৪-সব কটা বছরেই ডেমরা গোহারা হেরেছে। এবার ও তাই। ২০০৮ থেকে ২০১৬- রাজ্য সেনেটগুলিতে ডেমরা হারিয়েছে ২৫% বা ৯০০ ডেলিগেট। এগুলো হচ্ছে যখন ওবামা ডেমোক্রাটিক পার্টির মুখ। সুতরাং হিলারিকে দোষ দেওয়াটা মিজোগাইনি এবং অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই না।
(৩) গত ৮ বছরের সংখ্যাতত্ত্ব থেকে প্রমানিত, ডেমোক্রাটিক পার্টর নীতি নির্ধারনেই ভুল আছে। নেতার অভাব আছে। এই ভুলগুলো সংক্ষেপে
– ওবামাকেয়ার। এই ইন্সুয়ারেন্স আইনের ধাক্কায়, সব মধ্যবিত্তের প্রিমিয়াম বেড়েছে ৪০-২০০% ( আমার বেড়েছিল প্রায় ৩০০%), কভারেজ কমেছে। এটি আদর্শবাদি এজেন্ডা হিসাবে ভাল-কিন্ত পেটে টান পড়লে কে আদর্শ শোনে? ডেমোক্রাটরা সক্রিয় ভাবে ওবামার বিরোধিতা করেনি গরীব ভোটের আশায়। কারন এতে লাভবান হচ্ছিল গরীবরা। কিন্ত আমেরিকাতে গরীবদের চেয়ে মধ্যবিত্ত বেশী।
– ক্লিন্টন ফ্রিট্রেডের পক্ষপাতি ছিলেন। ন্যাফটা এবং গ্যাট এগ্রিমেন্টের ফলে আমেরিকার ম্যানুফ্যাকচারিং চলে গেছে মেক্সিকো এবং চীনে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পেনসিল্ভেনিয়া, ওহায়ো-ইত্যাদি নর্থ ওয়েস্ট বেল্ট। চূড়ান্ত ভাবেই। আমি এই অঞ্চলে প্রচুর ঘুরি। সেই জন্য অনেক দিন আগে থেকেই লিখেছিলাম এখানে ক্লিনটন হারবে। এবং সেইগুলি সুইং স্টেট।
-ছোট খাট বিজনেস ওনাররা রেগুলেশনের ছোটে ত্রস্থ। বড্ড বাড়াবারি রকমের রেগুলেশন বাড়িয়েছেন ওবামা সব বিজনেসে। ফলে অনেক বিজনেসে লাল বাতি জ্বলেছে। ছোট ছোট বিজনেস ক্লাস ডেমোক্রাটিক পার্টি থেকে সরে গেছে।
(৪) এখানে বর্ণ বিদ্বেশ, মুসলিম বিদ্বেশ নিয়ে বেশী নাচানাচি হচ্ছে। ওই ধরনের কিছু ভোট থাকতে পারে, কিন্ত অধিকাংশ ভোট সেই কারনে ট্রাম্পের দিকে যায় নি। মনে রাখতে হবে এবার চারজন ভারতীয় কংগ্রেসে জিতেছেন। আগের বার ছিল মাত্র একজন। রেসিজম এত বেশী হলে এরা জিততেন না। মুসলমান বিদ্বেশ বরং তাও কাজ করতে পারে-কারন এটা সবাই জানে ইসলাম একটা রিয়াল থ্রেট। হিলারী সেটা মানতে চান নি।
(৫) প্রশ্ন হচ্ছে আগে কি?
আমাদের সব থেকে যেটা বেশী ক্ষতি হবে সেটা শিক্ষায়। ওবামা শিক্ষার মান উন্নয়নে নজর দিয়েছিলেন এবং আমেরিকার স্কুল শিক্ষা অনেক এগিয়েছে এই কয় বছর। ট্রাম্প আসলে এসব বাতিল করবে। আমাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের ক্ষতি হবে।
বিজনেসের জন্য ট্রাম্প ভাল ।
এখন বিজনেসে ৩৫% ট্যাক্স দিই-ট্রাম্প ওটা ১৬% করবে। রেগুলেশনের চাপে এই দেশে বিজনেসে ত্রাহি অবস্থা। সেটা কমলে দেশে ব্যবসা বাড়বে। ইম্পোর্ট ট্যারিফ বাড়ালে , আমেরিকাতে ম্যানুফ্যাকচারিং বাড়বে।
বর্ণ বিদ্বেশ খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেটা হচ্ছে আস্তে আস্তে। হেট ক্রাইম বাড়বে। তবে আমেরিকাতে সব সময় হয় গাড়ি, নইলে বাড়ি, নইলে অফিস। যে যার মতন থাকে-অতটা গায়ে লাগবেনা। এখন নেক্সট চার বছর হেট ক্রাইম কোথায় যায় সেটাই দেখি।
(৬) আই টি আউটসোর্সিং- ট্রাম্প আই টি আউটসোর্সিং এর বিরুদ্ধে। এইচ ওয়ান বি তুলে দেবে বলেছে। আউটসোর্সিং করলে আউটসোর্সিং ট্যাক্স দিতে হবে-এইসব ভুল ভাল এজেন্ডা তার আছে। কি করবে তা জানি না। তবে এসব করলে ভারতের আই টি ব্যবসার ক্ষতি হবে বই কি। এখন এইচ ওয়ান বি তুলে দিলে টিসিএস, ইনফিতে লালবাতি জ্বলবে। দেখা যাক কি হয়।
বাংলাদেশী শিক্ষার্থী যারা আমেরিকাতে উচ্চশিক্ষার জন্য যায় তাদের ক্ষেত্রে ট্রাম্প সরকার কতটুকু সাহায্যপুর্ন হবে বলে আপনি মনে করেন?
বিপলবদা, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কিছু বললেন না। ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনকে নাকি “বুলশিট” মনে করেন। ট্রাম্প আমলে নতুন করে কয়লা ভিত্তিক কারখানার বাড়লে প্যারিস এগ্রিমেন্ট চুলোয় চলে যেতে পারে। তার ফল তো ভয়ঙ্কর হবে। নিউ ওয়ার্ক, ফ্লোরিডা, মুম্বাই, দুই বাংলার দক্ষিণ বঙ্গ সব জলে! বাংলার তলিয়ে যাওয়া অবশ্য পুরোটাই ভবিষ্যতের ব্যাপার নয়, সুন্দরবনের মানুষের কাছে তা এখনই বাস্তব।
বাংলাদেশী শিক্ষার্থী যারা আমেরিকায় বৃত্তি নিয়ে পড়তে যায় তাদের ক্ষেত্রে ট্রাম্প কতটুকু উদার থাকবে বলে আপনি মনে করেন? আমেরিকাতে উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় পাড়ি জমানো কি আগের থেকে কঠিন হবে?