“ব্লগার হত্যা জাতির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ব্লগার হত্যা এমন একটা বিষয়, যার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা কোনভাবেই ব্লগার হত্যা এড়িয়ে যেতে পারি না। ব্লগার হত্যা এড়িয়ে জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়, এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। যদি এগিয়ে যেতে চান, তাহলে ব্লগার হত্যার ঘটনা এড়িয়ে যাবেন না। সুতরাং এটা প্রমাণিত যে, ব্লগার হত্যা মোটেও অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আমি বলতে চাই, পুলিশ বাহিনী এসব ব্লগার হত্যার রহস্যের উন্মোচন করতে প্রাণবাজি রাখবে। হত্যার পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতার করতে জানবাজি রাখবে। হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া খুনীদের ধরতে প্রাণবাজি রাখবে। তোমরা যেসব পুলিশ সদস্য প্রাণবাজি রাখতে অপারগতা জানাবে, বুঝতে হবে তাদের প্রাণের কোন মূল্য নাই, গুরুত্ব নাই। তাই নিজের প্রাণের মূল্য প্রমাণ করতে পুলিশ বাহিনীকে ব্লগার হত্যার তদন্তে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।“

– আবারো ব্লগার খুন হওয়া প্রেক্ষিতে ডাকা জরুরী বৈঠকে প্রায় এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন পুলিশের আইজি।

এরপর তিনি উপস্থিত অধীনস্থ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তদন্তের বিষয়ে আইডিয়া চাইলেন। আইজিপি বললেন, “একটি সফল তদন্তের জন্য সবার আগে প্রয়োজন ফাটাফাটি আইডিয়া। ফাটাফাটি আইডিয়া একটি সফল তদন্তের ভিত গড়ে দেয়। ফাটাফাটি আইডিয়া ছাড়া একটি তদন্ত সফল হয়ে উঠে না। আমরা একটি সফল তদন্তের জন্য ফাটাফাটি আইডিয়া চাই। এখানে যারা উপস্থিত আছেন, তারা সবাই একটি করে ফাটাফাটি আইডিয়া দেন। আমরা সবগুলো ফাটাফাটি আইডিয়ার সমন্বয় করে একটি সুপার ফাটাফাটি আইডিয়া বের করে নিবো।“

উপস্থিত সবাই তাদের আইডিয়াগুলো বলতে থাকলেন।

এডিশনাল আইজিপিঃ
স্যার, আমার মনে হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টীমের বড়হুজুর রাহমানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসতে পারে মূল ঘটনা।

ডিএমপি কমিশনারঃ
পুলিশ বাহিনীর ভেতরেই টিকটিকি আছে। এই মুহূর্তে যেটা দরকার, সেটা হচ্ছে বাহিনীর মধ্যে ফাঁদ পাতা। এই ফাঁদে টিকটিকি ধরা পড়বেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, টিকটিকি ধরার জন্য ইঁদুর ধরার কল বসালে লবে না। টিকটিকির কলই বসাতে হবে।

যুগ্ম কমিশনার, ডিবিঃ
এসব কলে টলে হবে না। ব্লগার হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত যারা জামিনে আছে, তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিলে কিছু ক্লু পাওয়া যেতে পারে। আমরা সেইসব ক্লু ধরে এগিয়ে গেলে হত্যায় অংশ নেয়াদের শনাক্ত করতে পারবো।

ডিসি ওয়ারী জোনঃ
স্যার, আমার মনে হয় ওলামালীগ নেতাদের ফোনে আড়ি পাতলেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

ওসি, সূত্রাপুর থানাঃ
ওলামালীগ নয়। আড়ি পাততে হবে হেফাজত নেতাদের ফোনে। আমি মনে করি এটাতে কিছু ফল পাওয়া যেতে পারে।

এডিশনাল ডিআইজিপিঃ
ওলামা লীগ আর হেফাজততো খুব সহজ সন্দেহ। একটু ভিন্নভাবে ভাবতে হবে। সরকারের কতিপয় বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীর সাথে জঙ্গী কানেকশন আছে। তাদের প্রতি নজর রাখলেও কিছু একটা পাওয়া যেতে পারে।

ডিআইজিপিঃ
কথাতো অনেক বলা যায়। কিন্তু আমি যেটা বলতে চাই, সেটা হলো এই তদন্তটাও আগের তদন্তগুলোর মতো যেনতেনভাবে শেষ করে দিই। কিন্তু ভবিষ্যতে যেন খুন ঠেকাতে না পারলেও খুনীদের ধরতে পারি, সে বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে পারি। কিন্তু ঢাকা শহর এখনো পুরোপুরি সিসিটিভির আওতায় আসেনি। কিন্তু এক মাসের মধ্যে পুরো শহরকে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

এএসপিঃ
আমি এই ভেবে অবাক হচ্ছি যে, কেউই দেখি তদন্তের কলাকৌশল নিয়ে কথা বলছে না। সবাই শুধু সস্তামার্কা বিপ্লবের থিওরি দিয়ে যাচ্ছে। আমরাতো আগে তদন্ত করতে হবে, পরে না খুনী ধরবো। আমাদেরকে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে কতগুলো সূত্র ধরে এগুতে হবে। এর সব সূত্রই আমাদের জানা আছে। এটা নিশ্চিতভাবেই ইসলামী জঙ্গীদের কাজ। দুইজন জঙ্গীপোষককে ফেলে দিয়ে তৃতীজনের কাছে গেলেই সুরসুর করে পুরো ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

এএসআই মতিনঃ
কিন্তু আমাদেরতো আগে জানতে হবে তাকে কেন খুন করা হয়েছে। সে কী এমন লিখতো, যার কারণে তাকে খুন করতে হবে। আরো জানতে হবে সে কি কারো অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে লিখতো? লিখলে কাকে আঘাত দিয়ে লিখতো? আসলে তদন্তের একমাত্র মোটিভ হতে হবে নিহত ব্লগারের লেখালেখি খতিয়ে দেখা। সে কী লিখতো, এটা যদি বুঝতে না পারি, তাহলে আমরা কখনো কাউকে বলতে পারবো না তাকে আসলে কেন খুন করা হয়েছে।

টেবিল চাপড়ানোর আওয়াজ, ধুম করে শব্দ হলো। শব্দ শুনে সবাই আইজিপির দিকে তাকিয়ে রইলেন। প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসের সাথে তিনি বললেন, “ফাটাফাটি! ফাটাফাটি আইডিয়া!! লেখালেখি খতিয়ে দেখার আইডিয়াটাই ফাটাফাটি। অত্যন্ত ফাটাফাটি। আমাদের প্রত্যেকের উচিত যেসব ব্লগার মরে যাচ্ছে, তাদের লেখালেখি খতিয়ে দেখা। এটা খুবই জরুরী একটা ব্যাপার। লেখালেখি খতিয়ে দেখতেই হবে। আসলে লেখালেখি খতিয়ে দেখা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।“

উপস্থিত সবাই সম্মতি জানালেন। একজন বললেন, সেক্ষেত্রে এই বৈঠকে বসেই লেখালেখি খতিয়ে দেখা যেতে পারে। এবং এই মিটিংয়ে বসেই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে ফেলা যায়।

আরেকজন বললেন কম্পিউটার অপারেটরকে এই বৈঠকে ডেকে আনতে। লেখা খতিয়ে যা যা পাওয়া যাবে, সে সাথে সাথে লিখে ফেলবে। তাহলে দ্রুততার সাথে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা যাবে।

যে ভদ্রলোক দুইজন জঙ্গীপোষককে মেরে ফেলার আইডিয়া দিয়েছেন, তিনি বললেন পুলিশ বাহিনীর সামনে একাধিক বিশ্বরেকর্ডের রেকর্ডের হাতছানি আছে। প্রথমত দ্রুততম সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির রেকর্ড, দ্বিতীয়ত মাঠে না গিয়ে একই স্থানে বসে থেকে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির রেকর্ড, তৃতীয়ত একটি টেবিলে বসে থেকে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির রেকর্ড। আমরা এমন কিছু রেকর্ড অর্জন করতে পারবো, যা পৃথিবীর কোন পুলিশ বাহিনী করতে পারেনি। এটা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয় হবে।

লেখা খতিয়ে দেখার জন্য একজন ফেসবুক এক্সপার্ট এবং খতিয়ে দেখার পর ক্লুগুলো লেখার জন্য একজন টাইপরাইরাট প্রস্তুত। গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানের নির্দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে লেখা খতিয়ে দেখা শুরু হলো।

ফেসবুক এক্সপার্টঃ
স্যার শুরুতেই একটা ক্লু পাওয়া গেলো। নিহত লেখকের নাম দেখে বুঝা যাচ্ছে সে একটি মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তার নামের আগে মুহম্মদ লাগানো নেই।

আইজিপিঃ
কী নাম লেখা আছে?

এক্সপার্টঃ
নাজিমুদ্দিন সামাদ।

আইজিপিঃ
হোয়াট ডু য়্যু মীন বাই নাজিমুদ্দিন সামাদ? ইজ ইট নাজিম উদদীন সামাদ?

এক্সপার্টঃ
না স্যার, এই যে প্রজেকশনে দেখুন।

ডিএমপি কমিশনারঃ
যা ভেবেছি তাই। এটাতো স্যার পুরাই একটা অনুভূতি কেইস। ভেরি স্যাড!

আইজিপিঃ
টাইপরাইটার লিখো, যেহেতু তার নামের আগে মুহম্মদ নাই এবং নামের বানান বিকৃত করেছে, সেহেতু খুনের ঘটনাটি সন্ধ্যায় ঘটেছে। এক্সপার্ট, তারপর খতিয়ে দেখো।

ডিআইজিপিঃ
স্যার, আমি একটা কথা বলবো। এই বৈঠকে, আই মীন এই টেবিলে বসে থাকাদের মাঝে অন্তত দুই জনের নামের আগে মুহম্মদ নেই। এটা স্যার পুলিশ বাহিনীর জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। আজ সাধারণ মানুষ যে পুলিশকে দুই চোখে দেখতে পারে না, তা এসব পাপিষ্ঠদের পাপের ফসল। মুসলমান হয়েছে, অথচ নামের আগে মুহম্মদ নেই। আমারতো সন্দেহ হয় এদেরকে মুসলমানি করানো হয়েছে কিনা।

এক্সপার্টঃ
মুহম্মদ নাজিম উদদীন সামাদের একটি কভার ফটোতে মানবজাতির উদ্ভব বিষয়ে বিজ্ঞানের সাথে ধর্মীয় মতবাদের তুলনা করে দেখানো হয়েছে ধর্মীয় মতবাদ ভুয়া।

আইজিপিঃ
ওহ মাই আল্লাহ! সত্যি সে এটা করেছে! আনবিলিভেবল!! ৯৫ ভাগ মুসলমানের দেশে বসবাস করে কভার ফটোতে মানুষ এসব কিভাবে শো করে! এটা পরিষ্কার কুফরী কাজ। টাইপরাইটার, তাহলে এর দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে যখন এই কাফিরকে খুন করা হয়, তখন সে রাস্তায় হাঁটছিলো। তারপর…

এক্সপার্টঃ
আরেকটি কভার ফটোতে সে নাস্তিক অভিজিৎ রায় এর ছবি ব্যবহার করেছে।

যুগ্ম কমিশনার ডিবিঃ
স্যার, একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে আমার অবজারর্ভেশন বলে এই খুনের পরিকল্পনা নিহত ব্লগার নিজেই করেছে। আপনি দেখুন স্যার, একজন নাস্তিকের ছবি কভার ফটোতে ঝুলানোর মানে হচ্ছে মুহম্মদ নাজিম উদদীন সামাদ নিজেকে নাস্তিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। আমরা যদি এটাকে অনুবাদ করি, তাহলে যেটা পাই সেটা হলো, “আমি নাস্তিক, এসো আমাকে খুন করো।“

আইজিপিঃ
দারুণ বলেছো তুমি। টাইপরাইটার, স্পষ্ট করে লিখো খুনের পরিকল্পনাকারী নিহত নাস্তিক নিজেই।

এক্সপার্টঃ
এই নাস্তিকের ওয়ালে একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে সে উদাম গায়ে মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। বুকে আর পেটের উপর লেখা রাজাকার নিপাত যাক। এই যে স্যার, প্রজেকশনে বড় করে দেখুন।

ডিসি, ওয়ারী জোনঃ
নাউজুবিল্লাহ! স্যার, উদাম গায়ে জাতীয় পতাকা মাথায় বাঁধা জারাজার গুনাহ। তাছাড়া পতাকা ব্যবহারের কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী আছে। এটা স্যার কখনোই মাথায় বাঁধা যাবে না। এই নাস্তিক যা করেছে তা রীতিমতো রাষ্ট্রদ্রোহিতা। সে রাষ্ট্রের নিশানার অপমান করেছে।

আইজিপিঃ
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। নোট ইট। এক্ষেত্রে লিখতে হবে, নিহত নাস্তিক একই সাথে পুলিশকে আহবান করেছে তাকে গ্রেফতার করতে এবং পিটিয়ে পাছার ছাল তুলে ফেলতে। ভাগ্য ভালো সে মরে গেছে। জীবিত থাকলে এখন পুলিশ তার এই আহবানে সাড়া দিতো। স্টুপিড কোথাকার।

এক্সপার্টঃ
খতিয়ে দেখার এই অবস্থায় এসে দেখা যাচ্ছে এই নাস্তিক মরার পর তার ফেসবুক ওয়ালজুড়ে শত শত নাস্তিকদের পোস্ট। সবাই বিচার চাইছে। অনেকে কান্নাকাটি করছে।

আইজিপিঃ
এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। এক নাস্তিকের জন্য অপর নাস্তিকের টান থাকবে। যেমন পুলিশের জন্য পুলিশের টান আছে। তো, এই টান বিশ্লেষণ করলে যেটা পাওয়া যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে নাস্তিকটি আগে থেকে জানতো তাকে খুন করা হবে। কারণ সে নিজেই পরিকল্পনা করেছিলো। আর যেহেতু তার মৃত্যুর পর একাধিক নাস্তিক কান্নাকাটি করছে, সেহেতু হত্যাকান্ডে একাধিক খুনী অংশ নিয়েছে। এটা মোটেও একজন খুনীর কাজ নয়।

এক্সপার্টঃ
মৃত্যুর ২৪ ঘন্টা আগে দেয়া একটা পোস্টে দেখা যাচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করেছে এবং সরকারকে জনরোষের হুমকী দেখিয়েছে। বলেছে সরকার নাকি রেহাই পাবে না।

আইজিপিঃ
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা! মানে নাস্তিকের বাচ্চা পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দিয়েছে। ব্লাডি নাস্তিক! আর সরকারকে হুমকী? মানে রাষ্ট্রকে হুমকী! মাথায় পতাকা বেঁধেই ক্ষান্ত হয়নি, আবার রাষ্ট্রকেও হুমকী দেয়। এখন আমরা যদি এই দুইটা বিষয়ে আলোকপাত করি, তাহলে দেখতে পাই যে, চাপাতির আঘাতেই তার মৃত্যু হয়েছে। এবং সেটা একজনের চাপাতির আঘাতে নয়। একাধিক ব্যক্তির চাপাতির আঘাতে।

এক্সপার্টঃ
তার ওয়ালে অন্য একজনের পোস্ট করা একটা স্ক্রীণশটে দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি মাসে তার দেয়া এক পোস্টে বলেছে যারা শতভাগ ধর্ম মানতে চায়, তারা জঙ্গী। আর এই টেবিলে যারা আছি, মানে আমাদের মত যারা আংশিক ধর্ম মানি, তারা মডারেট। সে আরো বলেছে, আমরা, মানে মডারেটরা আছি বলেই ধর্ম এখনো বিশ্বমানবতার প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়নি।

আইজিপিঃ
যাক বাবা, সে পুলিশকে জঙ্গী বলেনি, মডারেট বলছে। এবং বাংলাদেশ পুলিশের কারণে ধর্ম এখনো বিশ্বমানবতার প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়নি। কী দারুণ কমপ্লিমেন্ট! ভেরি ওয়েল সেইড। তো, এবার বোধহয় আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস উদঘাটন করতে পেরেছি। এই নাস্তিককে মারার সময় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও হয়েছে। অর্থাৎ চাপাতি দিয়ে কোপানোর পর তাকে গুলিও করা হয়েছে। এখানে ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট হলো, এর আগে কোন নাস্তিককে হত্যার সময় গুলি করা হয়নি। এটা কিন্তু ঘটনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট।

এক্সপার্টঃ
স্যার, খতিয়ে দেখতে দেখতে এবারতো ভয়ংকর একটা জিনিস পেলাম। মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষার বিরোধিতা করেছে এই বদমাশ। সে বলেছে এর মাধ্যমে নাকি জঙ্গী উৎপাদন হবে।

আইজিপিঃ
উফ! আমি আর নিতে পারছি না। এসব কিছু আমার সহ্য ক্ষমতার বাইরে। এটা বর্বরতা ছাড়া আর কিছুই না। টাইপরাইটার লিখো, যেহেতু নাস্তিকটা মসজিদ নিয়ে আকথা কুকথা লিখেছে, সেহেতু বুঝাই যাচ্ছে খুন করার সময় খুনীরা আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে ঘটনাস্থল মুখরিত করে রেখেছিলো। এই লাইন লেখার পর সুবহানাল্লাহ লিখে বোল্ড আর ইটালিক করে দিও।

এক্সপার্টঃ
স্যারগো, এবার যা দেখলাম, তা বলার মতো সাহস আমার নাই। হারামজাদা তনু হত্যা নিয়ে খুব সেনসেটিভ মন্তব্য করেছে। এবং সারা দেশের মানুষকে কুমিল্লা গিয়ে ঝাঁকুনি দিতে বলেছে। স্যার, তনু হত্যা যেহেতু সেনানিবাসে হয়েছে, সেহেতু সে আসলে সেনানিবাসে ঝাঁকুনি দিতে বলেছে। কতটা সেনসেটিভ ইস্যু, আপনি খেয়াল করেছেন?

এসআই মতিনঃ
শেষপর্যন্ত আমাদের গর্বের সেনাবাহিনীকে ঝাঁকুনি দিতে বলে নাস্তিক **** পুত এই দেশের জনগণের সেনানুনুভূতিতে আঘাত করেছে। কী নোংরা একটা নাস্তিক! থু!!

আইজিপিঃ
খুবই হতাশাজনক বিষয়। এটা সে কিভাবে করলো! কিভাবে সে সেনাবাহিনী নিয়ে এরকম আচরণ করতে পারলো? এটাতো দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত। খুব করুণা হচ্ছে এই অপদার্থ রাস্কেল নাস্তিকটার জন্য। যাইহোক, তার এসব স্পর্ধা ধারা প্রমাণিত হয়, খুন হওয়ার পর তার লাশ রাস্তায় পড়েছিলো, মিরপুর স্টেডিয়ামে কিংবা চন্দ্রিমা উদ্যানে নয়। অর্থাৎ এটা নিয়ে কোন বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।

ওসি, সূত্রাপুর থানাঃ
কিন্তু এক্সপার্ট, তুমি যেভাবে চুলচেরা খতিয়ে দেখছো, তাতেতো আমাদের বিশ্বরেকর্ডের বিষয়টা হুমকীর মুখে চলে যাচ্ছে। যতদ্রুত খতিয়ে দেখা শেষ করবে, ততদ্রুত তদন্ত শেষ হবে, তারচে অধিক দ্রুত আমাদের বিশ্বরেকর্ড হয়ে যাবে। শুনো, এরকম চান্স বারবার আসে না। তুমি একটু দ্রুত হাত চালাও।

এক্সপার্টঃ
চিন্তা করবেন না ওসি সাহেব। আমি খতিয়ে দেখার একেবারে শেষ পর্যায়ে। শেষ পর্যায়ে এসে একটি হৃদয় বিদারক বিষয় উল্লেখ করবো। আমি জানি এটা বলার পর এখানে অত্যন্ত আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কিন্তু আমি দুঃখিত, অত্যন্ত দুঃখিত। কিছু করার নাই। এই নাস্তিকের প্রোফাইল ফটোতে দেখা যাচ্ছে তার গায়ে মুজিব কোট। আরো দুঃখের বিষয় হচ্ছে ঘৃনিত এই নাস্তিক বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ সিলেট শাখার তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক। এই পর্যায়ে আমি আর চোখের জল ধরে রাখতে পারছি না। আমায় আপনারা ক্ষমা করুন। জীবনে এই প্রথম টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে কান্না করছি। আমি লজ্জিত।

আইজিপিঃ
এখানে লজ্জার কিছু নাই এক্সপার্ট। তুমি যা বললে, তা শুনে এখানে উপস্থিত সবারই কমবেশি কান্না পাচ্ছে। কিন্তু আমার পাচ্ছে না। আমি আসলে অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছি। বিশ্বাস করতে পারছি না এই ছেলে আওয়ামীলীগের কর্মী। কী বলবো বুঝতে পারছি না। আমার আর কীইবা বলার আছে। আওয়ামীলীগে এইভাবে নাস্তিক ঢুকে যাচ্ছে, অথচ ঠেকানোর কোন উপায় নেই। একটি আওয়ামীলীগ ধ্বংস করার জন্য একফোটা নাস্তিকই যথেষ্ট। সেই জায়গায় পুরো একপিস নাস্তিক! আওয়ামীলীগকে বুঝি আর টেকানো গেলো না। জনগণের আশা আকাংখার প্রতীক, মাটি ও মানুষের প্রাণের দল, মুসলিম জাহানের অংহকার, মদীনা সনদের পতাকাবাহী আওয়ামীলীগ এভাবে হারিয়ে যাবে!

ডিআইজিপিঃ
স্যার, তদন্ত প্রতিবেদনে এটা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, দলে নাস্তিকের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের আরো কঠোর ও বিচক্ষণ হতে হবে। নইলে আওয়ামীলীগের গৌরব ধুলিস্মাৎ হয়ে যাবে। ডজন ডজন নাস্তিক হত্যা করেও তা ফিরে পাওয়া যাবে না।

আইজিপিঃ
যাইহোক তদন্তের বিষয়ে আসি। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। এটা আনপ্রেডিক্টেবল ছিলো। তদন্তের বিষয়টাকে যত সহজ ও সরল ভেবেছি, ততটাই দুর্বোধ্য হয়ে গেছে। গন্ডমূর্খটা যেসব লিখেছে, তা পড়ার পর মাথা ঠিক রাখা মুশকিল। আপনাদেরকে কিভাবে বুঝাই, মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে এই পোশাক খুলে চাপাতি হাতে দ্বীনের পথে বেরিয়ে যাই। থাক, তদন্তে ফিরে যাই। এখানে নিহত নাস্তিকের গায়ে মুজিব কোট থাকার মানে হচ্ছে চাপাতি দিয়ে কোপানোর পর আবার গুলি করে মারার বিষয়টি দুঃখজনক। আর আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠনের সংগঠক হওয়ার মানে হচ্ছে, তার এসব লেখালেখি করা ঠিক হয়নি। তো, আমরাতো তদন্ত প্রতিবেদনের সবকিছু বের করলাম, এবার দরকার উপসংহারের জন্য দুইটা লাইন। এটা হতে পারে “ব্লগার খুন একটি অপরাধ। আর মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে লেখালেখি করা এক্সট্রিমলি গর্হিত অপরাধ।“

ডিএমপি কমিশনারঃ
তারপরও আমরা যদি কয়েকজন জঙ্গীর সাথে কথা বলে তাদের বক্তব্য এই প্রতিবেদনে এড করি, তাহলে ভালো হতো না?

আইজিপিঃ
স্যরি কমিশনার, আপনার আইডিয়াটা রাখতে পারলাম না। জঙ্গীদের বক্তব্য নিতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। বিশ্বরেকর্ড হবে না। তদন্ত এখানেই শেষ। এবার ঘড়ি দেখে বলুন, তদন্ত শেষ করতে ঠিক কত মিনিট সময় লেগেছে। তারপর গিনেস বুককে ফোন লাগান।

লেখা খতিয়ে দেখা শেষ, মদীনা সনদের বাংলাদেশ।