২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলাম ধর্ম বিষয়ক অনুবাদ সংকলন গ্রন্থ ‘ইসলাম বিতর্ক’ প্রকাশ করে ব-দ্বীপ প্রকাশনী। ষাটের দশকের ছাত্রনেতা এবং সমাজ বিশ্লেষক ও গবেষক শামসুজ্জোহা মানিক বইটির সম্পাদক। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক মুক্তচিন্তার বই প্রকাশনী ‘রোদেলা প্রকাশনী’ বন্ধ, আল-কায়েদার বাংলাদেশ শাখা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম দ্বারা মেলা প্রাঙ্গণে মুক্তমনা লেখক ও মুক্তমনা সম্পাদক অভিজিৎ রায়কে হত্যা, বিজ্ঞান লেখক বন্যা আহমেদের উপর আক্রমণের মাধ্যমে বাংলাদেশীদের ‘প্রাণের মেলা, বইমেলা’র অস্তিত্ব শেষ হয়। এ বছর থেকে নিজের দ্রোহের রূপ হারিয়ে মৌলবাদ তোষণ কারী মেলার সূচনা হয়, যেই মেলাটিকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান দেখতে চেয়েছেন ‘উস্কানিহীন মেলা’ হিসেবে। প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে মেলায় লেখক অভিজিৎ রায় এবং জাগৃতির প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপনকে স্মরণ তো দূরের কথা- তাদের জন্য কিছু করা হচ্ছে না এমন গর্বিত ঘোষণা দিয়ে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে মৌলবাদ তোষণ কারী বইমেলার সূচনা হয়।
মেলার অর্ধেক না পেরোতেই, মৌলবাদী অপশক্তিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব-দ্বীপ প্রকাশনীর ‘ইসলাম বিতর্ক’ বইটিতে ইসলামের নবীকে ব্যাঙ্গ করার অভিযোগ তোলে। বইয়ে সত্যিকার অর্থেই কি লেখা আছে সেটা না জেনেই অভিযোগের পর ‘ব-দ্বীপ’ প্রকাশনী বন্ধ, আগুন, প্রকাশককে হত্যা করার হুমকিতে মৌলবাদী শক্তি একত্রিত হয়ে ওঠে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেমন করে এই ভয়ংকর কাজটি সাধন করা হবে সেটির জন্য বিভিন্ন ইভেন্ট, গ্রুপ খোলা শুরু হতে থাকে। আক্রমণের জন্য প্রকাশ করা হয় শামসুজ্জোহা মানিকের বাসার ঠিকানা, অফিস ঠিকানা, ফোন নম্বর। বইটি নিয়ে মৌলবাদীদের হুমকির সাথে সাথেই আমরা শামসুজ্জোহা মানিকের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করি। বাংলা ব্লগ কমিউনিটি এলায়েন্সের মাধ্যমে শামসুজ্জোহা মানিককে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মুক্তমনার পক্ষ থেকে আমরা সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীকে বিষয়টি অবহিত করার জন্য অনুরোধ করি। প্রায় এক বছর আগে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হলেও, এখনও হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ক্লু-লেস বাংলাদেশ পুলিশের কাছ থেকে শামসুজ্জোহা মানিক আদৌ নিরাপত্তা পাবেন কিনা এই সংশয় প্রকাশ করেন অনেক মুক্তমনা সদস্য।
জঙ্গিদের ব্যাপারে ক্লু লেস থাকলেও অভিযোগের একদিন পরেই শাহবাগ থানা পুলিশ কোনো ধরণের তদন্ত, ক্লু এর সন্ধান ছাড়াই বইমেলায় ব-দ্বীপের স্টল বন্ধ করে দেয়। রাত নয়টায় নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রকাশক মানিককে, যিনি ছিলেন আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা এবং বাঙ্গালীর স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতির অন্যতম প্রধান সংগঠক। এখন পর্যন্ত কেনো বাংলা একাডেমির মেলা প্রাঙ্গণে পুলিশ এসে কেনো ‘ব-দ্বীপ’ প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করেছে সেটা সম্পর্কে কোনো বিবৃতি প্রকাশ করে নি বাংলা একাডেমি। এখনও পর্যন্ত মৌনতার মাধ্যমে তারা সম্মতি জানানোর অবস্থায় আছেন, আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে তারা মৌনতা ভেঙ্গে পুলিশী একশনের সম্মতি জানাবেন। আপডেট: পাঠকের বিবেচনার জন্য শামসুজ্জামান খানের বিবিসিতে দেওয়া সাক্ষাৎকার পোস্টের সাথে সংযুক্ত হলো।
মুক্তমনার পক্ষ থেকে আমরা সরকারের কাছ অনুরোধ করছি, বিষবৃক্ষে আর পানি ঢালবেন না। যারা লেখক-প্রকাশকদের লেখালেখির জন্য মৃত্যু হুমকি দেয় এবং সত্যি হত্যা করে, তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনুন, লেখক-প্রকাশকদের নয়। আজ বইমেলার সত্যিকার পরিচয় দখল করে ফেলেছে মৌলবাদী শক্তি, আপনারা দেখেও না দেখার ভান করলে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের পরিচয় ছিনতাই হতে আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না।
‘ইসলাম বিতর্ক’ বইটি খুব দ্রুত মুক্তমনা পাঠকদের হাতে ই-বুক আকারে তুলে দেবার জন্য কাজ চলছে। আমরা নিশ্চিত অনেক পাঠকই এই বইটি পড়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। এক নজরে বইটি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
সম্পাদকের ভূমিকা
ইন্টারনেট ও ওয়েবসাইটের কল্যাণে বর্তমান পৃথিবীর ভাবজগতে যে বিপ্লব চলছে তার ঢেউ আছড়ে পড়ছে ইসলাম ধর্মের উপরেও। যে ধর্ম এতকাল চরমতম অসহিষ্ণুতা ও হিংস্রতা দিয়ে তার বিরুদ্ধে সকল সমালোচনার মুখ বন্ধ রাখতে অভ্যস্ত ছিলো তা এখন এই নূতন প্রযুক্তির প্রচার মাধ্যমের সামনে অসহায় হয়ে পড়েছে। বোমাবাজি, হামলা, সন্ত্রাস, হত্যা কোনটা দিয়ে ইন্টারনেটকে ঠেকানো সম্ভব নয়। সুতরাং সারা পৃথিবীতে যারা এতকাল ইসলামের বিষয়ে বিচার ও বিশ্লেষণমূলক চিন্তা করলেও প্রচারের সুযোগের অভাবে নিশ্চুপ থেকেছেন তারা এখন সরব হতে শুরু করেছেন। তাদের কলম বা কম্পিউটার থেকে এখন অঝোর ধারায় ঝরে পড়ছে ইসলামের উপর আলোচনা, সমালোচনা, পর্যালোচনা। বিদেশের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ ধরণের কয়েকটি ইংরেজি নিবন্ধের অনুবাদ নিয়ে প্রকাশ করা হল ইসলাম বিতর্ক নামক সংকলন গ্রন্থটি। উল্লেখ করা যায় যে, এখানে মুদ্রিত সবগুলি অনূদিত লেখাই ওয়েব সাইট ‘বঙ্গরাষ্ট্রে’ (www.bangarashtra.org) প্রকাশিত হয়েছে।
শামসুজ্জোহা মানিক
ঢাকা, ১৫ নভেম্বর, ২০১০
সূচীপত্র
অবিলম্বে শামসুজ্জোহা মানিককে মুক্ত করে তাঁর এবং পরিবারের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দাবী জানাচ্ছে মুক্তমনা। আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
অবিলম্বে শামসুজ্জোহা মানিক সহ গ্রেফতার সকলের মুক্তি কামনা করছি এবং বইটি নেটে পেলে ভাল হয়।
এত যে ধর্ম এত মতবাদ
আসলে তে দেখি সবই জল্লাদ।
আমি এই বই নেট এ পেতে পারি , মানে ই বুক, কেউ জানাবেন কি ?
আসলেই তাই। ”আজ বইমেলার সত্যিকার পরিচয় দখল করে ফেলেছে মৌলবাদী শক্ত “। বইটির অনলাইন সংস্করণ পাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম
ব্লগের ইউজারদের জন্য IRC (internet relay chat) এ একটা চ্যাটরুম খোলা হয়না কেনো? প্রাইভেসির সমস্যা নেই কারণ আইপি লুক্কায়িত থাকে, অধিকাংশ আইআরসি নেটওয়ার্কে।
বইটির অপেক্ষায় আছে সকলেই।
অবিলম্বে মানিক ভাই সহ গ্রেফতার সকলের মুক্তি কামনা করছি।
এই বই নেট এ
http://www.mediafire.com/download/n3bnz3v2pux2o1y/Islam+Bitorka.pdf
@ মুক্তমনা সম্পাদক,
এই পেজ শো করছে না।অন্য কনো লিংক কি আছে?
@ মুক্তমনা সম্পাদক,
অন্যান্য সোর্স, ফেইসবুক থেকে বুঝতে পারছি একদল মানুষ দারূণ উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন বইটি পড়তে। ইসলামের সমালোচনার গন্ধ পেলে কিছু মানুষ মুখিয়ে থাকেন তা দেখেছি বিভিন্ন জায়গায়। বইটি ই-বুক আকারে মুক্তমনায় দেয়ার আগে সম্পূর্ণ বইটি সম্পাদকমন্ডলীকে ভালভাবে পড়ে নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। সেই সাথে বইটির সম্পাদক শামসুজ্জোহা মানিকের অন্যান্য লেখাগুলোর প্রতিও আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
শ্রদ্ধেয় আকাশ মালিক আপনার কাছ থেকে এধরণের একটি মন্তব্য কিছুটা অপ্রত্যাশিত বৈকি!
বাংলা অনলাইন দুনিয়ায় ধর্ম নিয়ে চাছাঁছোলাভাবে আলোচনা করার জন্য আপনি সুপরিচিত। অভিজিৎদার সাথে আরো যাদের লেখা পড়ে মুক্তমনার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম আপনি তাদের অন্যতম। এই নিয়ে মুক্তমনাতেই অন্য অনেক মুক্তমনা লেখকের সাথে আপনার তুমুল তর্কবিতর্ক হয়েছিল। তাই আপনার এই বইটির প্রতি কিছুটা উষ্মা প্রকাশে অবাক না হয়ে পারলাম না।
কারণ অনেক সমঝোতাবাদীদের ভিড়ে আপনাকে দেখলে তা শুধু আমাদের জন্য একরাশ হতাশারই কারণ হবে। আর কিছু লোক চিরকাল সিলেক্টিভ আচরণ করবে।
দ:খিত মন্তব্যটি শেষ করতে পারিনি। এই সিলেক্টিভ নিজ ধর্ম ছাড়া অন্যদের সমালোচনাকারীদের জন্য সম্মিলিত পথচলায় বিভ্রান্ত হবার কোনো প্রয়োজন আছে কি?
প্রসূনজিৎ দা’র মন্তব্যের উত্তরে,
ফেইসবুকে দেয়া আমার একটি স্ট্যাটাস থেকে কিছু কাটছাট করে আপনার মন্তব্যের উত্তরে এই লেখা-
যে বইটি নিয়ে এতো তোলপাড় এতো হৈচৈ সেই বইটির কিছু লেখা নিয়ে আমার কিছু বলার আছে। বইটির নাম ‘ইসলাম বিতর্ক’। আকর্ষণীয় নাম নিঃসন্দেহে। যে বই পড়তে জানেনা সেও অন্যের দ্বারা কিনে নিয়ে পড়াবে। পাঠশালার অক্ষরজ্ঞান জানা না থাকলেও আগ্রহ উচ্ছাসে মুসলিম অমুসলিম, মূর্খ বোকা সবাই একবার তাকাবে। বইয়ের ভেতরে যাওয়ার আগে কিছু কথা বলে নিই। যে কোন অজুহাতেই বইটি বাজেয়াপ্ত করা, এর প্রকাশনা বন্ধ, প্রকাশককে গ্রেফতার সমর্থন করিনা বরং আমি সরকার বা কর্তৃপক্ষের এই অন্যায় আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। (বাকিটুকু পরে দেবো। কয়েকবার চেষ্টা করেও পূর্ণ লেখা মন্তব্য সেকশনে দিতে পারলাম না)
প্রথমেই বইটির সম্পাদকের লেখা একটি প্রবন্ধের কিছু অংশের ওপর দৃষ্টিপাত করা যাক-
‘ইসলাম ও আধুনিক সভ্যতা’। (শামসুজ্জোহা মানিক)
‘বিস্ময়কর মনে হলেও এটাই আবার সত্য যে, আধুনিক ইউরোপের জন্মই সম্ভব হত না যদি সেখানে খ্রিস্ট ধর্ম না থাকত এবং কয়েক শতাব্দী ব্যাপী ক্যথলিক চার্চের আধিপত্য না থাকত।
কেন এ কথা বলছি তা বুঝার জন্য খ্রিস্ট ধর্মের কিছু বৈশিষ্ট্যের দিকে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। এটা ঠিক যে আর সব আলোকবাদী ধর্মের মত খ্রিস্ট ধর্মও অন্ধ ও যুক্তি-প্রমাণহীন বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। যেমন ঈশ্বর, আত্মা, স্বর্গ-নরক ইত্যাদি সংক্রান্ত ধারণা। কিন্তু এ ধরনের বিশ্বাস নির্ভর ধারণাগুলি সে কালে সাধারণ মানুষের জন্য স্বাভাবিক ছিল এবং দেবতা বা ঈশ্বর কিংবা অলৌকিক শক্তি এবং আত্মা ইত্যাদি ধারণাকে কেন্দ্র করে মানুষ তার ধারণা বা বিশ্বাসের যে কাঠামো গড়ে তুলত তা দিয়ে তার বাস্তব জীবনকেও কম বা বেশী নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতে চাইত। কিন্তু এই বিশ্বাসের কাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে খ্রিস্ট ধর্ম এমন কিছু মূল্যবোধ এবং নীতি বা ধারণাকে গুরুত্ব দিয়েছিল যা মানুষের মানবিক গুণাবলীর বিকাশের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছিল। যিশুখ্রিস্টের বাণীতে ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে মানুষের জন্য প্রেম, সহমর্মিতা এবং সেবা ধর্মকে যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এ ক্ষেত্রে তার উল্লেখ করতে হয়। খ্রিস্ট ধর্মে শুধু যে যিশু ঈশ্বর পুত্র তা-ই নয়, এমন কি মানুষও তা-ই, যে কারণে বাইবেলে যিশু ঈশ্বরকে নিজের সঙ্গে অন্য সব মানুষের পিতা বলছেন। (কেননা তোমরা সকলে, খ্রিস্ট যিশুতে বিশ্বাস দ্বারা, ঈশ্বরের পুত্র হইয়াছ। বাইবেল, নূতন নিয়ম, গ্যালাতীয়, ৩:২৬)। অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক মূলত দাস ও প্রভুর না হয়ে সন্তান ও প্রেমময় পিতার সম্পর্ক হয়ে দেখা দেয়। বাইবেলে মানুষের প্রতি যে বিরাট মর্যাদা যিশু দিয়েছেন তার প্রভাবে মানুষকে অধিকারহীন ও অসহায় দাস বা ইসলামের মত ‘বান্দা’ হিসাবে না দেখে মানুষ হিসাবে দেখা হয়েছে। খ্রিস্টীয় এই দৃষ্টিভঙ্গীর গভীরে ধর্মীয় আবরণে সংগুপ্ত ছিল ব্যক্তি মানুষের মুক্তি এবং স্বাধীনতার চেতনা।
অপর একটি বৈশিষ্ট্য খ্রিস্ট ধর্মকে অনন্যতা দান করেছে, তা হল এক স্বামী-এক স্ত্রী ভিত্তিক বিবাহ ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব প্রদান (‘সুতরাং তাহারা আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ।’ বাইবেল, নূতন নিয়ম, মথি লিখিত সুসমাচার, ১৯:৩)। বস্তুত এর ফলে প্রাচ্য সমাজে অখ্রিস্টীয় সমাজগুলিতে এক স্বামীর বহু নারী বিবাহের যে অবাধ সুযোগ ছিল ইউরোপে সেই সুযোগ থাকে নাই। খ্রিস্ট ধর্ম পুরুষতান্ত্রিক হলেও এবং নারী-পুরুষের সমাধিকার না দিলেও এক স্বামী এক স্ত্রী ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দিবার ফল হয়েছে যুগান্তকারী। এটি ভবিষ্যতে নারীর জন্য অধিকতর অধিকার বা সমাধিকার লাভের পথ খুলে দেয়।
অতীতে বিভিন্ন সময়ে আমরা ইউরোপে নারীর যে মর্যাদা ও ভূমিকা দেখতে পাই তা সমকালীন অনেক সমাজের তুলনায় বিস্ময়কর। শুধু ডাইনি পুড়ানো দেখলে হবে না। সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে নারীদের অংশগ্রহণকেও দেখতে পারতে হবে। এখানে স্পেনের রাণী ইসাবেলার (জন্ম ১৪৫১ খ্রিঃ Ñ মৃত্যু ১৫০৪ খ্রিঃ। শাসনকাল ১৪৭৪-১৫০৪।) দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যায়। তিনি তাঁর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি ছিলেন স্পেনের উত্তরাঞ্চলের একটি শক্তিশালী রাজ্য ক্যাস্তিলের রাণী। স্পেনের উত্তরাঞ্চলের অপর একটি শক্তিশালী রাজ্য আরাগনের রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী ফার্দিনান্দকে তিনি ১৪৬৯-এ বিবাহ করেন এবং স্বামীর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে তার সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করে ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে মুসলিমদের শেষ রাজ্য গ্রানাডা জয়ের মাধ্যমে সমগ্র স্পেন থেকে মুসলিম শাসন উচ্ছেদ করেন। এই জয়ের মাধ্যমে স্পেন থেকে আটশত বৎসর স্থায়ী মুসলিম শাসন উচ্ছেদ হয়। স্পেনে ইসলামী শাসন ছিল ৭১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী। স্বামীর সঙ্গে রাণী ইসাবেলা যৌথভাবে স্পেন শাসন করেন। আমেরিকা আবিষ্কারের (১৪৯২ খ্রিঃ) জন্য অর্থ, জাহাজ ও জনবল দিয়ে তিনি ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে সাহায্য করেন। এভাবে আমেরিকা আবিষ্কারের কৃতিত্বের সঙ্গে তাঁর নামও জড়িয়ে গেছে।
মধ্যযুগে খ্রিস্টান ইউরোপের বিভিন্ন রাজ্যে রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে জানা যায়, যা প্রাচ্য সমাজে সাধরণভাবে অভাবিত ছিল।
মুসলমানদের অধিকার থেকে জেরুসালেম ও প্যালেস্টাইনকে মুক্ত করার জন্য দুই শত বৎসর ব্যাপী পরিচালিত ক্রুসেডে ইউরোপের খ্রিস্টান নারীদের বিপুল ভূমিকা ছিল। পুরুষদের পাশাপাশি তারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এবং প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল। মধ্যযুগীয় ইউরোপের নাইট বা যোদ্ধা শ্রেণীর কথা হয়ত অনেকের জানা আছে। তাদেরকে আমরা প্রাচীন ভারতের ক্ষত্রিয় কিংবা আরও সঠিকভাবে জাপানের সামুরাই যোদ্ধা শ্রেণীর সঙ্গে তুলনা করতে পারি। তাদের ‘শিভালরি’ বা বীরধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি ছিল নারীর প্রতি সম্মান এবং নারী ও দুর্বলের বিপদ দেখলে তাকে উদ্ধারের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া। ইউরোপ এমনই ইউরোপ হয় নাই। নারীর প্রতি এই যে গুরুত্ব ও মর্যাদা দান তার ভাবাদর্শিক প্রেরণার উৎস যদি খ্রিস্ট ধর্মে না থাকত তাহলে আমরা মধ্যযুগের ইউরোপে নারীর এমন গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান দেখতে পেতাম না। কারণ মধ্যযুগের ভাবাদর্শ ছিল ধর্ম।
এমনিতে খ্রিস্ট ধর্ম ছিল শান্তিবাদী। শান্তিপূর্ণভাবে জন্ম নেওয়া এই ধর্ম সুদীর্ঘকাল ছিল নির্যাতনের শিকার। প্রথমে ইহুদীদের চাপে এই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা যিশুখ্রিস্টকে প্যালেস্টাইনের রোমান শাসক ক্রুশবিদ্ধ করেন। এরপরও যখন রোমান সা¤্রাজ্যে খ্রিস্ট ধর্ম ছড়িয়ে পড়তে থাকে তখন বহুসংখ্যক খ্রিস্টানকে হত্যা ও অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও খ্রিস্ট ধর্মের প্রসারকে রোধ করা যায় নাই। এটি ছিল প্রথমে দাস, দরিদ্র এবং নি¤œবর্গের জনসাধারণের ধর্ম। কিন্তু ক্রমে রোমের স্বাধীন মানুষ, দাস মালিক, রোমের সেনাবাহিনীর সদস্য এবং উচ্চ শ্রেণীর নাগরিকদের মধ্যেও তা বিস্তৃত হয়। প্রায় তিনশত বৎসর পর রোমের স¤্রাট কন্সট্যান্টাইন (শাসনকাল ৩০৬ খ্রিঃ – ৩৩৭ খ্রীঃ) ৩১৩ খ্রিস্টাব্দে ‘মিলান অনুশাসন’ দ্বারা খ্রিস্ট ধর্মসহ সকল ধর্মের প্রতি সহনশীলতার নীতি ঘোষণা করলে খ্রিস্ট ধর্মের সঙ্গে রোমান রাষ্ট্রের দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্কের অবসান হয়। তার মা হেলেনা ছিলেন খ্রিস্টান। তিনিও তাঁর মায়ের ধর্ম গ্রহণ করেন। স¤্রাট কন্সট্যান্টাইনের উপর খ্রীষ্টধর্মের প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে এটুকু বলাই মনে হয় এখানে যথেষ্ট হবে যে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে ক্রুশবিদ্ধ করে ভয়ানক যন্ত্রণা দিয়ে রোমান সা¤্রাজ্যে হত্যার যে জনপ্রিয় বিধান ছিল তা রদ করে তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান চালু করেন। এবং ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি গ্ল্যাডিয়েটদের দিয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য অনুষ্ঠিত নৃশংস মরণ খেলা নিষিদ্ধ করেন। তাছাড়া রোমান সা¤্রাজ্যের বন্দিদেরকে কারাগারের অন্ধকারে সারাক্ষণ রাখা নিষিদ্ধ করে তিনি তাদেরকে কারাকক্ষের বাইরে যাবার এবং দিনের আলো পাবার অধিকার দেন।
ভয়ানক সহিংসতা, নির্দয়তা, অসাম্য, যুদ্ধ এবং দাসত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত রোমান সভ্যতার বিরুদ্ধে খ্রিস্ট ধর্ম ছিল একটা প্রতিক্রিয়া বা বিদ্রোহ। তবে এই বিদ্রোহ ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু দাস, দরিদ্র এবং পরাধীন জাতিসমূহের মানুষদের মনে মানুষের মুক্তির জন্য ক্রুশে আত্মদানকারী যিশুর প্রভাব হল দূর প্রসারী ও প্রচন্ড। প্রেমময় ও দয়ার্দ্র যে সত্তার আশ্রয় সাধারণ মানুষ খুঁজে ফিরছিল তা তারা পেল ক্রুশবিদ্ধ যিশু এবং তাঁর প্রেমময় ও পরম পিতা ঈশ্বরের কল্পনার মধ্যে।
এভাবে পশ্চিম ইউরোপ পুঁজিবাদের বিকাশ ও শিল্প বিপ্লবের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক বিপ্লব এবং রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু আধুনিক গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধের অনেক কিছুরই বীজ আমরা খুঁজে পাব খ্রিস্ট ধর্মের ভিতর’’।
‘ইসলাম ও আধুনিক সভ্যতা’ শিরোণাম দিয়ে লেখা প্রবন্ধের বেশীরভাগই যিশু ও বুদ্ধের স্তুতি, খৃষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের গুনকীর্তন, এর কারণটা কী? একটা বিষ্ঠাকে নিকৃষ্ট প্রমাণ করতে আরেকটা বিষ্ঠার প্রশংসা করতে হবে কেন? গন্ধে তারতম্য থাকতে পারে কিন্তু বিষ্ঠা তো বিষ্ঠাই। সংক্ষেপে একটু ফিডব্যাক করা যাক –
– আধুনিক গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধের অনেক কিছুরই বীজ আমরা খুঁজে পাব খ্রিস্ট ধর্মের ভিতর। ( এ রকম হাজারটা বীজ ইসলামেও পাওয়া যাবে, অন্যতায় ইসলাম মক্কার বাইরে যাওয়ার আগেই আত্মহত্যা করতো।)
– ভয়ানক সহিংসতা, নির্দয়তা, অসাম্য, যুদ্ধ এবং দাসত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত রোমান সভ্যতার বিরুদ্ধে খ্রিস্ট ধর্ম ছিল একটা প্রতিক্রিয়া বা বিদ্রোহ। তবে এই বিদ্রোহ ছিল শান্তিপূর্ণ। (সাধারণ পাথর নিয়ে মারামারি খুনাখুনির অসভ্য সমাজে মুহাম্মদের ইসলামের ডাকও ছিল ঠিক তাই)
– দাস, দরিদ্র এবং পরাধীন জাতিসমূহের মানুষদের মনে মানুষের মুক্তির জন্য ক্রুশে আত্মদানকারী যিশুর প্রভাব হল দূর প্রসারী ও প্রচন্ড। প্রেমময় ও দয়ার্দ্র যে সত্তার আশ্রয় সাধারণ মানুষ খুঁজে ফিরছিল তা তারা পেল ক্রুশবিদ্ধ যিশু এবং তাঁর প্রেমময় ও পরম পিতা ঈশ্বরের কল্পনার মধ্যে। (প্রেমময় ও পরম পিতা ঈশ্বর! ওয়াও! মুহাম্মদের মাঝেও কিছু লোক শান্তির আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিল বলেই তিনি একটি দল গঠন করতে পেরেছিলেন।)
– এমনিতে খ্রিস্ট ধর্ম ছিল শান্তিবাদী। শান্তিপূর্ণভাবে জন্ম নেওয়া এই ধর্ম সুদীর্ঘকাল ছিল নির্যাতনের শিকার। প্রথমে ইহুদীদের চাপে এই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা যিশুখ্রিস্টকে প্যালেস্টাইনের রোমান শাসক ক্রুশবিদ্ধ করেন। এরপরও যখন রোমান সা¤্রাজ্যে খ্রিস্ট ধর্ম ছড়িয়ে পড়তে থাকে তখন বহুসংখ্যক খ্রিস্টানকে হত্যা ও অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও খ্রিস্ট ধর্মের প্রসারকে রোধ করা যায় নাই। (একই ইতিহাস দেখা যায় ইসলাম প্রচার ও প্রসারের বেলায়ও। কোরায়েশদের নির্যাতনে দেশ ছেড়ে আবিসিনিয়ায় পালিয়ে গিয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদই মুসলমানরা করেছিলেন। কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা সে তর্ক অর্থহীন)
– খ্রীষ্টধর্মের প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে এটুকু বলাই মনে হয় এখানে যথেষ্ট হবে যে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে ক্রুশবিদ্ধ করে ভয়ানক যন্ত্রণা দিয়ে রোমান সা¤্রাজ্যে হত্যার যে জনপ্রিয় বিধান ছিল তা রদ করে তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান চালু করেন। (তো তলোয়ার দিয়ে শিরচ্ছেদ কী দোষ করলো?)
– ইউরোপ এমনই ইউরোপ হয় নাই। নারীর প্রতি এই যে গুরুত্ব ও মর্যাদা দান তার ভাবাদর্শিক প্রেরণার উৎস যদি খ্রিস্ট ধর্মে না থাকত তাহলে আমরা মধ্যযুগের ইউরোপে নারীর এমন গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান দেখতে পেতাম না। (হাইপেশিয়ার ওপর নির্মম অত্যাচার ও তাকে নৃশংসভাবে খুনের ইতিহাস যদি আমরা পড়তামনা, ব্রুনো, গ্যালিলিওর কথা যদি জানতাম না তাহলে না হয় নারীর প্রতি, মুক্তচিন্তকের প্রতি শান্তিবাদী খৃষ্টান ধর্মের মহত্ব স্বীকার করে নিতাম। হাইপেশিয়া বাইবেল সম্পর্কে কী বলেছিলেন: ‘আমি খ্রীষ্টান নই। কিন্তু বাইবেলের প্রাচীন ও নবীন দুটো খন্ডই আমি পড়েছি। আব্রাহাম ইয়াকুব ইউসুফ ধর্মই বলো, আর যীশু খ্রীষ্টের ধর্মই বলো, অহঙ্কার না করেও আমি বলতে পারি, ও দুটি মর্মই আমি উপলব্ধি করেছি। বিশ্বাসের কথা, ঈশ্বরের প্রেমের বাণী ও-দূটিতে আছে ঢের কিন্তু দার্শনিকের দৃষ্টিতে ওসব বালকসুলভ উচ্ছ্বাস ছাড়া আর কিছু নয়। পরিণত বুদ্ধির জাতির জন্য থাকা উচিৎ যুক্তি-নির্ভর জ্ঞানভিত্তিক ধর্ম একটা, যা ছিলো গ্রীকদের, যার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সঙ্কল্প নিয়ে আমি যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছি আলেকজান্দ্রিয়ায় বসে।’)
– অতীতে বিভিন্ন সময়ে আমরা ইউরোপে নারীর যে মর্যাদা ও ভূমিকা দেখতে পাই তা সমকালীন অনেক সমাজের তুলনায় বিস্ময়কর। শুধু ডাইনি পুড়ানো দেখলে হবে না। সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে নারীদের অংশগ্রহণকেও দেখতে পারতে হবে। মধ্যযুগে খ্রিস্টান ইউরোপের বিভিন্ন রাজ্যে রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে জানা যায়, যা প্রাচ্য সমাজে সাধরণভাবে অভাবিত ছিল। মুসলমানদের অধিকার থেকে জেরুসালেম ও প্যালেস্টাইনকে মুক্ত করার জন্য দুই শত বৎসর ব্যাপী পরিচালিত ক্রুসেডে ইউরোপের খ্রিস্টান নারীদের বিপুল ভূমিকা ছিল। পুরুষদের পাশাপাশি তারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এবং প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল।
(বাহ, চমৎকার! লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ নিরস্ত্র অসহায় নারী শিশু পুড়ানো তেমন কিছুই নয়? খৃষ্টান ধর্মের বলিদান বলে কথা। সতীদাহ এদিক থেকে তো বেশ মানবিকই ছিল বলতে হবে, তাই না? সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে মুসলমান বা ভারতের নারীদের অংশগ্রহণ নেই? সুলতানা রাজিয়ার রাজ্য শাসন, যুদ্ধের ময়দানে আয়েশার সেনাপতির দায়ীত্ব পালন, এগুলো ক্ষুদ্র দৃষ্টান্ত মাত্র আরো প্রচুর আছে। মুসলমানদের ওপর ইউরোপের খ্রিস্টান ক্রুসেডের আগ্রাসন যদি সমর্থন করেন তাহলে কোন মুখে সালাউদ্দীন আয়ূবি আর বখতিয়ার খিলজির সমালোচনা আমরা করি?)
যে শান্তির ধর্মে আধুনিক গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধের বীজ খুঁজে পাওয়া যায়, এমনিতেই যে ধর্ম শান্তিবাদী, মানুষের মুক্তির জন্য যে ধর্মের প্রেমময় ও পরম পিতা ঈশ্বরপুত্র ক্রুশে আত্মদান করেন, শান্তিপূর্ণভাবে জন্ম নেওয়া যে ধর্ম নারীর প্রতি গুরুত্ব ও মর্যাদা দান করে, নারীকে সমানাধিকার দান করে সামাজিক অর্থনৈতিক সকল কাজে অংশ গ্রহনের সুযোগ দেয়, যে ধর্মের কাছে ইউরোপের উন্নয়ণ ও সভ্যতা ঋণী, সেই পরম মানবিক খৃষ্টধর্মের ওপর একটু নজর দেয়া যাক।
যে ধর্মের জন্ম না হলে ইউরোপ সভ্যতার আলো দেখতোনা, আজও আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার যুগে পড়ে থাকতো সেই ধর্ম নারীকে কি সুমহান উচ্চাসনে স্থান দিয়েছে তা একজন ক্রিস্টিয়ান লেখকের উক্তি থেকে দেখে নেয়া যাক-
‘এ্যাডাম-এর প্রয়োজনেই হয়েছিল ইভের সৃষ্টি। নারী পুরুষ থেকে সৃষ্টি, নারীর জন্মই হয়েছে পুরুষের জন্যে ‘Women are subordinate to men because they are created after men and from men and for men. (Drury, 1994, 34)’
বিষয়টা আরেকটু পরিষ্কার হয় নিচের আয়াতে-
“Indeed, man was not made from women, but women from man. Neither was man created for the sake of woman, but women for the sake of man.” (1 Corinthians 11:3-10) (একটু খুঁজ নিয়ে দেখুন তো কোরান বা হাদিসের কোনো আয়াতের সাথে এর মিল আছে কি না।)
“…I permit no women to teach or to have authority over a man; she is to keep silent. For Adam was formed first, then Eve; and Adam was not deceived, but the women was deceived and became a transgressor. Yet she will be saved through childbearing, provided they continue in faith and love and holiness with modesty.” (1 Timothy 2:8-15) (বোখারী শরিফের একটি হাদিস তো এরকমই মনে হয় পড়েছি। ‘she is to keep silent’ শান্তির ধর্ম মুখ বন্ধ করে স্বাধীনতা দিয়েছে নারীকে)
To the woman he said, “I will make your pains in childbearing very severe; with painful labor you will give birth to children. Your desire will be for your husband, and he will rule over you.” Genesis 3:16 (সুরা নিসাটা আর নারীর দুনিয়ায় শাস্তি বিষয়ক হাদিসগুলো একটু পড়ে দেখুন তো, কোরান বাইবেলকে কপি করলো, না বাইবেল কোরানকে। আর একই সাথে সনাতন হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বৃহদারণ্যকোপনিষদ (৬/৪/৭, ১/৯/২/১৪) এবং শতপথ ব্রাক্ষ্মণের (৪/৪/২/১৩) দেখে নিবেন।)
I do not permit a woman to teach or to exercise authority over a man; rather, she is to remain quiet. (1 Timothy 2:12)
নিষ্পাপ শুভ্র চেহারার বেবী লুকিং যিশুর আরো কিছু উপদেশবাণী শুনা যাক-
The women should keep silent in the churches. For they are not permitted to speak, but should be in submission, as the Law also says. If there is anything they desire to learn, let them ask their husbands at home. For it is shameful for a woman to speak in church. (1 Corinthians 14:34-35) (আমার মনে হলো যেন আশরাফ আলী থানভির লেখা ‘ইসলামে নারী’ বইটির একটি বাক্য পড়লাম)
Wives, submit to your own husbands, as to the Lord. For the husband is the head of the wife even as Christ is the head of the church, his body, and is himself its Savior. Now as the church submits to Christ, so also wives should submit in everything to their husbands. Husbands, love your wives, as Christ loved the church and gave himself up for her, that he might sanctify her, having cleansed her by the washing of water with the word, … (Ephesians 5:22-33)
Then the LORD God said, “It is not good that the man should be alone; I will make him a helper fit for him.” Genesis 2:18 (নারী হেল্পার!)
বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের অন্তর্গত তৌরাত শরিফের Exodus -এর ২২:১৮ নং শ্লোকে সরাসরি বলা হয়েছে,Thou shalt not suffer a witch to live. (কোনো জাদুকারিণীকে বেঁচে থাকতে দেবে না।) (Good News Version: Put to death any woman who practices magic.) তৌরাতের এই আয়াতের উপর ভিত্তি করে নব্বই লক্ষ ভূতগ্রস্ত ব্যক্তিকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তিন থেকে চার বছরের শিশুরাও পর্যন্ত খ্রিস্টান মৌলবাদীদের নৃশংস ও বীভৎস কালো হাত থেকে রেহাই পায়নি। (দ্রষ্টব্য-The Malleus Maleficarum (The Witch Hammer) of Heinrich Kramer and James Sprenger.) আসলে কেউ কোনদিন ভূতগ্রস্ত হয়নি,ভূত বলতে কোন জিনিষ কোন কালেই ছিলনা,আজও নেই। কুমারী (!) মাতা মেরির কোলে ছোট্ট, সুন্দর, শুভ্র, নিষ্পাপ যিশুর ছবি দ্বারা যেসব খ্রিস্টান মিশনারিজরা শান্তিবাদী-করুণাময় যিশুর রূপ তুলে ধরতে চান, তাদের গালে চপোটাঘাত করেছেন যিশু নিজেই :“আমি দুনিয়াতে শান্তি দিতে এসেছি এ কথা মনে করো না। আমি শান্তি দিতে আসিনি বরং আমি এসেছি মানুষের বিরুদ্ধে মানুষকে;ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে,মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে,স্ত্রীকে শাশুড়ীর বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে।” (Do not think that I came to bring peace on the earth; I did not come to bring peace, but a sword. “For I came to set a man against his father, and a daughter against her mother, and a daughter-in-law against her mother-in-law….. (Matthew 10:34) (আহা, ঠিক এই রকম একটি আয়াত তো কোরানেও পড়লাম। তবে নিশ্চয়ই পাথর মারা বাইবেলে থাকার কথা নয়। দেখা যাক কী হয়।)
‘ব্ল্যাসফেমির (ঈশ্বর নিন্দা) কারণে যে কোনো ব্যক্তিকেই পাথর ছুড়ে হত্যার নির্দেশ দেওয়া আছে তৌরাত শরিফের Leviticus(লেবীয়)-এর ২৪:১৬ নং শ্লোকে! বাইবেলের এসব নিষ্ঠুর,আগ্রাসী আয়াতের উপর নির্ভর করে যুগে যুগে কত যে স্বাধীন চিন্তাবিদ,লেখক,মুক্তচিন্তার অধিকারী ব্যক্তিকে নির্যাতন,বন্দীত্ব বরণ,অঙ্গচ্ছেদ,আগুনের ছেঁকা ইত্যাদির শিকার হতে হয়েছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। এমন কি, যে ইহুদিরা একসময় খ্রিস্টানদের উপর গণহত্যা চালিয়েছিল,সেই ইহুদিরাও খ্রিস্টানদের হাতে কম নির্যাতনের শিকার হতে হয়নি। খ্রিস্টানদের অত্যাচার,নির্যাতনের ভয়ে ইহুদিদের যাযাবরের জীবন বেছে নিতে হয়। পঞ্চম শতাব্দীতে পোপ প্রথম লিও বাইবেল সম্পর্কে ভিন্নমতপোষণকারী স্বাধীন চিন্তাবিদদের ধরে এনে মৃত্যুদণ্ড দিতেন। নবম শতাব্দীতে রোমান ক্যাথলিক চার্চ এক লক্ষ ভিন্নমতাবলম্বীকে হত্যা করে; দুই লক্ষ লোককে দেশ থেকে বিতাড়িত করে। ফ্রান্সের আবেলার পীয়রকে (১০৭৯-১১৪২) ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়,তাঁর পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয়,তার সব রচনা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ফ্লোরেন্সের স্যা ভোনা রোলা (১৪৫২-১৪৯৮) খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ছিলেন,গির্জার সংস্কার দাবি করেছিলেন;এজন্য তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারের মধ্যে যাতা কাঁধে তুলে দিয়ে পৈশাচিক পন্থায় নির্যাতন চালানো হয়। স্পেনের মনীষী মাইকেল সারভেন্টাস খ্রিস্টানদের ‘ট্রিনিটী’ Trinity অস্বীকার করেছিলেন এবং ঈশ্বরের পুত্রের অবিনশ্বরত্বকে অবিশ্বাস করেছিলেন,যার জন্য তাঁকে খোঁটায় বেঁধে শ্বাসরোধ করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। যাজকতন্ত্রের নিন্দা করায় আলেকজান্ডার লেটনকে (১৫৬৮-১৬৪৯) বেত্রাঘাত করা হয়,তাঁর নাক-কান কেটে ফেলা হয়। খ্রিস্টান পোপ নবম গ্রেগরি ১২৩৩ খ্রিস্টাব্দে ধর্মীয়-বিরুদ্ধবাদীদের (বাইবেল সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণকারী) খুঁজে বের করে তাদের ফাঁসিতে কিংবা আগুনে পুড়িয়ে হত্যার জন্য ‘ইনকুইজিশন’ বা ধর্মীয় বিচার সভার প্রবর্তন করেন। এই ইনকুইজিশনের মাধ্যমে খ্রিস্টধর্মবিরোধী যে কোনো ব্যক্তিকে নির্যাতনের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিওরদানো ব্রুনোকে (১৫৪৮-১৬০০) ধর্মান্ধদের হাত থেকে বাঁচতে সুইজারল্যান্ড,ফ্রান্স,ইংল্যান্ডে পালিয়ে বেড়াতে হয়। অবশেষে তাঁকে গ্রেফতার করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে ধর্মান্ধের দল। বৃদ্ধ গ্যালিলিও গ্যালিলিকে অত্যাচারের শিকার হতে হয়,তাকে গির্জার সামনে নতজানু হয়ে পাদ্রীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। দার্শনিক স্পিনোজাকে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে আমস্টারডামের সিন্যাগগ (ইহুদিদের ধর্মমন্দির) সমাজচ্যুত করে,নির্বাসন দেয়। বার্থৌলোমিউ লির্গেটকে (১৫৭৫-১৬১১) নিজের চিন্তা প্রচারের অভিযোগে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়;১৬১৮ সালে স্যার ওয়াল্টার রাওয়ালকেও ধর্মবিরোধিতার কারণে হত্যা করা হয়। তাকে শিরোচ্ছেদ করার পর তাঁর মাথাকে মমি করে তাঁর স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তুলুজে লুচিলিও ভানিনিকে ১৬১৯ সালে ‘নাস্তিকতার’ অপরাধে জিহ্বা ছিড়ে ফেলে তারপর আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারা হয়’। ( ‘যে সত্য বলা হয় নি’ বই থেকে)
এই বুঝি শান্তিকামী মুক্তিকামী করুণাময় যিশু, তার পিতা ইশ্বরের রূপ ও তার খৃষ্টান ধর্মের নমুনা? মদ্যপানে মাতাল পিতার সাথে তার দুই যুবতি মেয়ের সেক্স করা বাইবেলেই শোভা পায়। এটা খৃষ্টানরা এখনও তেলাওত করে, নারীকে ভুত ঘোষণা দিয়ে পাথর মেরে হত্যা করার বাণীও বহাল তবিয়তে আছে,নারীর মুখ বন্ধ রাখার আয়াতও আছে,এসব কিছু জায়েজ ফতোয়া দিয়ে কোরান সংস্কারের কথা বলেন কোন মুখে? এই বইয়ের একটি প্রবন্ধে সরাসরি বুশের ইরাক আক্রমণ, আফগানিস্তান দখলকে সমর্থন দেয়া হয়েছে, খৃষ্ট ধর্মের লক্ষ্য পরাধীন মানুষকে মুক্তি্র জিহাদ হিসেবে।
প্রবন্ধের নাম দিয়েছেন ‘ইসলাম ও সভ্যতা’ আর সারা প্রবন্ধ জুড়ে গুনকীর্তণ করবেন খৃষ্টান ধর্মের তা তো হয় না। বাইবেলের কুৎসিত জঘন্য নোংরা আয়াত ও ইহুদিদের দ্বারা খৃষ্টানদের নির্যাতন সম্পর্কে মুহাম্মদ ভালই অবগত ছিলেন। কোরান বাইবেল থেকে ধার করা। আপনি কোনো একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সমর্থক হন, সেই ধর্মের ওকালতি করুন, প্রচার প্রসার ঘটান, মার্কেটিং করুন আমার কোনই আপত্তি নাই। মুহাম্মদকে তার ধর্মকে হাজারবার গালি দেন তাতে আমার কিছু যায় আসেনা, তবে খৃষ্টান ধর্মের স্তুতি গাইতে গিয়ে যিশু যে মেরির জারজ সন্তান কোনো ইশ্বরপুত্র নন সেটাও উল্লেখ করা বাঞ্ছণীয়। আর কোন নির্দিষ্ট ধর্মের মার্কেটিং করতে গিয়ে সেই ধর্মের বিজ্ঞাপন দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখে অন্য ধর্মের বিজ্ঞাপন ছিড়ে ফেলতে গেলে আমার কিছু বলার ইচ্ছে জাগে। ব্যস এই টুকুই।
আকাশ মালিক আমার মন্তব্যের উত্তরে আপনি যে বিশাল ও তথ্যবহুল মন্তব্য করেছেন, এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সত্যি বলতে গেলে আপনার এই প্রতিমন্তব্য একটি পোস্ট আকারে দিলেই বোধহয় আরো ভাল হত। তা আরো অনেকের কাছে সহজে পৌছে যেত।
আমি আসলে শামসুজ্জোহা মানিকের অন্যান্য লেখার সাথে পরিচিত ছিলাম না।তাই উনার সম্বন্ধে সামগ্রিক ধারনা আমার ছিল না। আমার মনে হয় বর্তমানে বুদ্ধিবৃত্তিক ও উদারনৈতিক মানুষদের মধ্যে ধর্ম নিয়ে বিশেষত ইসলাম ধর্মের জঙ্গিবাদীরূপ নিয়ে যে বিভ্রান্তি দেখা যাচ্ছে উনিও তার বাইরে নন।প্রগতিশীল, পশ্চিমা লিবারেল গোষ্ঠী, বামপন্থী, উদারতাবাদীসহ নাস্তিকরাও এর বাইরে নন।সবাই যে যার মত করে এই ভয়াবহ ব্যাপারটির সাথে নিজেদের বোঝাপড়া করে নিচ্ছেন। এদের মধ্যে বেশীরভাগই হচ্ছেন সমন্বয়বাদী।ধর্মের মধ্যে শান্তির বাণী খুঁজেই তারা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন।
আবার মানিকসাহেবের মত কেউ কেউ হয়ত ইসলামের ভয়াবহ রূপ দেখে অন্য ধর্মে নিজেদের আশ্রয় খুঁজছেন।কিন্তু ধর্ম যে একটা পর্যায়ে এসে চরম ফ্যাসিস্ট ও মৌলবাদীরূপ নেয়, এই জিনিসটি যেন উনারা দেখেও না দেখার ভান করছেন।বিশ্বাসের ভাইরাসের হাত থেকে তখন বিশ্বাসীদের আর রেহাই পাবার কোনো উপায় থাকে না।তারা অনেকটা কলের পুতুলের মত তখন তাদের বিশ্বাস দ্বারা চালিত হন।
তাই আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের সচেতন ও প্রগতিশীল মানুষ যখন এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন তখনই আমরা এই ধর্ম নামক রাহুগ্রাসের হাত থেকে মুক্তির পথে একটু হলেও এগিয়ে যাব।অবশ্য ততদিনে যদি অনেক দেরী না হয়ে যায়।আপনাকে আবারো অনেক ধন্যবাদ।
শুধু উন্মুখ নয় একেবারে ক্ষুধার্তের ক্ষুধা নিয়ে বসে আছি। আমরা যারা প্রবাসে আছি তাদের একমাত্র ভরসা এ ই-বুক।
বইটি দ্রুত ই-বুক আকারে প্রকাশ করার ঘোষনা দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি সেই সাথে অতি সত্তর বইটি ই-বুক আকারে পাওয়ার প্রতীক্ষায় থাকলাম।
ইবুক গুলোর epub ভার্সন করবেন
ইবুকের ইপাব বানানোর জন্য online pdf to epub converter গুলো নিজে ব্যবহার করলেই তো হয়, সম্পাদক শুধু pdf আপলোড দিলেই হয়।
ebook.online-convert.com/convert-to-epub
pdftoepub.com
toepub.com
zamzar.com/convert/pdf-to-epub/
‘ইসলাম বিতর্ক’ বইটি খুব দ্রুত মুক্তমনা পাঠকদের হাতে ই-বুক আকারে তুলে দেবার জন্য কাজ চলছে।
খুবি ভালো উদ্যোগ। এ প্রসংগে আমার একটি পরমর্শ ছিলো। মুক্তমনার প্রকাশিত ই বইগুলোর জন্যে একটি আলাদা ফেইসবুক পেইজ প্রকাশ করে ফেইসবুকের মাধ্যমে পেইজটি বুষ্ট করা হোক। এতে অনেক বেশি বাংলাভাষী পাঠকের কাছে ইবুক গুলো পৌছাবে।
আমার মনে হয় না বাংলাভাষার প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে বাংলা একাডেমী বাংলাদেশে মুক্তচিন্তা চর্চায় কোনরকম পৃষ্ঠপোষকতা করার প্রশাসনিক এখতিয়ার রাখে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের অন্যান্য প্রশাসনিক ক্যাডারদের মতো বাংলা একাডেমীও পরিচালিত হয় আমলাদের মাধ্যমে। অপরাপর প্রশাসনিক শাখা-প্রশাখার মতো বাংলাডেমীও রাষ্ট্রের পরিচালকের আসনে বসা রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর নির্দেশনা মতোই কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সরকার যখন দেশে লিকলিকে জিভ বের ফোঁস ফোঁস করে ছোবল মারতে উদ্যত মৌলবাদীদের সাথে আপসরফা করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বদ্ধপরিকর তখন মুষ্ঠিমেয় মুক্তচর্চার পক্ষের মানুষদের যুক্তিবাদিতার জন্য সেই আঁতাত ভেঙে ঝামেলায় পড়তে চায় না। তাই তারা ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার অজুহাতে গতবছর রোদেলা আর এবছর বদ্বীপ-এর বুকস্টল বন্ধ করে দিলো। বাংলা একাডেমীতে কর্মরত বুদ্ধজীবী তকমাধারীরা শুধুই রাষ্ট্রের কর্মচারী। তাদের নিজস্বতা বলতে কিছু নেই। নিজেদের বুদ্ধিজীবী তকমাটা হাতছাড়া হবার আশংকায় লোকসমাজে নিজেদের স্ট্যান্টবাজি করে যান সার্কাসের ক্লাউনদের মতো কিন্তু “স্পর্শকাতর” বিষয়ের অজুহাতে মোল্লাদের মতোই আচরণ করেন। সুতরাং বাঙালীর দ্বিতীয় বিপ্লব সাংস্কৃতিক জাগরণে এই মাথাভারী আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনের কাছ থেকে কোনপ্রকার ইতিবাচক ভুমিকা আশা করা যায় না।
শাসকের সেবাদাস মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান ধরনের শিরদাঁড়া বিহীন জ্বে হুজুর আছে দেশজুড়ে। প্রগতি, মানে উন্নয়নের লক্ষ্যে যে পরিবর্তন এরা তাতে বাধা দেয় নিজস্বার্থ উদ্ধারের জন্য। প্রভুর তুষ্টি যোগাতে এরা বলে বই পড়ে জ্ঞ্যনার্জনের ইচ্ছাই উস্কানি। এরাই নিরীহ নাগরিক ঠকায়। এরাই তোষামোদকারী মেরুদন্ডহীন এবং দেশের শত্রু। সচেতন মানুষ; এদেরকে পরিত্যাগ করুন, প্রতিহত করুন এবং প্রতিবাদী হোন। না’হলে কেঁচো টাইপের এইসব মৌলবাদ সমর্থকরা তাদের প্রভুদের কাছে দেশ বেচে শেষ করবে দ্রুত। বাঙালি থাকুন। নাগরিক অধিকার চর্চা করুন; পড়ে পড়ে মার খাবেন না আর।
কোন সন্দেহ নেই, অপেক্ষায় আছি। ই-বুক নির্মান ও প্রকাশ দ্রুত সফল হোক।
আমরা ফিরছি মধ্যযুগে