১.
একটু একটু করে বেঁচে ওঠার চেষ্টা করছি প্রতিদিন। শরীরের ক্ষত তাকিয়ে থাকে আমার দিকে, জীবনের ক্ষত নিয়ে ভাবার ইচ্ছে হয়না এখনো। একটু একটু করে গড়ে তোলা বহু বছরের জীবনটাকে ফেলে এসেছি ঢাকার বইমেলার ফুটপাতে। এখনো মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে চোখের সামনে দেখতে পাই ফুটপাতের উপর পরে থাকা অভিজিৎ এর রক্তাক্ত দেহ, ভরদুপুরের নিস্তবদ্ধতায় শুনতে পাই হাসপাতালে আমার পাশেই শুইয়ে রাখা ক্ষতবিক্ষত অর্দ্ধচেতন অভিজিৎ এর মুখ থেকে ভেসে আসা অস্ফুট আওয়াজ। ডাক্তার যখন আমার কপালের, মাথার চাপাতির কোপগুলোর সেলাই খোলে তখনও আঁতকে উঠি, বুড়ো আঙ্গুলহীন বাম হাতটা দেখে প্রায়শঃ চমকেও উঠি, আয়নায় নিজের চেহারাটাও ঠিকমত চিনতে পারিনা আর। আহত মস্তিষ্ক উত্তর খোঁজে, খোঁজে কারণ আর পারম্পর্য। তারপর বুকের খুব গভীরের সেই অপূরনীয় শূণ্যতা থেকে জন্ম নিতে থাকে এক অদ্ভূত অনভূতি। চোখে ভাসতে থাকে মানুষের চেহারায় মানুষ্যেতর সেই প্রাণীদের কথা, যারা ঢাকার রাজপথে উন্মুক্ত চাপাতি হাতে বেরিয়ে আসে অন্ধকার মধ্যযুগীয় মূল্যবোধের গুহা থেকে, যাদের হুঙ্কারে ক্রমশঃ আজ চাপা পড়ে যাচ্ছে সভ্যতার স্বর। লেখাটা লিখতে লিখতেই দেখলাম ঢাকা শহরে আবারো নাকি চাপাতির উল্লাসে ফেটে পড়েছে তাদের বিজয়গর্জন। একমাস যেতে না যেতেই তারা আবার অভিজিতের হত্যা উদযাপন করেছে আরেকটি হত্যা দিয়ে। বাংলার মাটি ভিজতেই থাকে ধর্মোন্মাদ কূপমন্ডুকদের নবীন উল্লাসে।
কিন্তু ইতিহাস এবং বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে তারপরেই মনে পড়ে যায় যে, তোমরা তো সব সময়েই ছিলে। তোমাদের মত ধর্মোন্মাদ অপশক্তিগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই তো এগিয়েছে মানবসভ্যতা। তোমাদের মত হায়েনার দলতো সব সময়েই প্রগতিকে খুবলে খুবলে খাওয়ার চেষ্টা করেছে; বুদ্ধিবৃত্তি, বিজ্ঞান্মনষ্কতা, প্রগতিশীল শিল্প সাহিত্য সংষ্কৃতি সবইতো তোমাদের আতঙ্কিত করেছে যুগে যুগে। তোমরাইতো প্রতিবার জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রগতিকে আটকাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছো। কিন্তু সামান্য কলমের আঁচড়ে তোমাদের কাঁচের ঘর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। তোমাদের দুর্বল ধর্মবিশ্বাস মুক্তচিন্তার হাওয়ায় নড়ে ওঠে, তলোয়ার নিয়ে, চাপাতি নিয়ে ছুটে আসো, কল্লা ফেলেই শুধু তোমাদের ঈমান রক্ষা হয়। তোমরা তো সবসময়েই ছিলে… হাইপেশিয়ার শরীরের মাংস তো তোমরাই নিজের হাতে চিরে চিরে উঠিয়েছিলে, অসংখ্য নির্দোষ ‘ডাইনি’ পুড়িয়েছো তোমরা, সতীদাহতে মেতেছো, ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে দানবীয় আনন্দ পেয়েছো, কূপমণ্ডুকের মত গ্যালিলিওকে শাস্তি দিয়ে স্বস্তির ঢেকু্র তুলে ভেবেছো, এই বুঝি পৃথিবীর ঘোরা চিরতরে বন্ধ করে দিতে সক্ষম হলে।
অভিজিৎ হাইপেশিয়াকে নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলো অনেক আগে। সামান্য অক্ষরজ্ঞান থাকলে পড়ে দেখো, দেড় হাজার বছর আগের ধর্মোন্মাদ ফ্যানাটিকদের সাথে আজকের তোমাদের কোনোই পার্থক্য নেই। সময়, পটভূমি এবং ঘাতকদের অস্ত্রগুলো শুধু একটু বদলে দিলেই দেখবে যে, তোমাদের নিজেদের চেহারাই দেখা যাচ্ছে ওদের মধ্যে। হাজার বছরেও কাল, দেশ, ধর্ম, জাতি নির্বিশেষে তোমাদের কোনই পরিবর্তন হয়নি।
“৭১ এ বাঙালী বুদ্ধিজীবী হত্যার মতই সিরিল(পোপ-পূরবর্তী সময়ে আলেকজান্দ্রিয়ার ক্রিশ্চান ধর্মগুরু) যেমনিভবে বেছে বেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নব্যতান্ত্রিক’ নিও-প্লেটোনিস্টদের ধরে ধরে হত্যার মহোৎসবে মত্ত ছিলেন,এমনি এক দিন কর্মস্থলে যাওয়ার পথে হাইপেশিয়া মৌলবাদী আক্রোশের শিকার হলেন,অনেকটা আজকের দিনের হুমায়ুন আজাদের মতোই। তবে হাইপেশিয়ার ক্ষেত্রে বীভৎসতা ছিলো আরও ব্যাপক। হাইপেশিয়া-হত্যার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ পাওয়া যায় পনের শতকে সক্রেটিস স্কলাসটিকাসের রচনা হতে:
‘পিটার নামের এক আক্রোশী ব্যক্তি অনেকদিন ধরেই তক্কে তক্কে ছিলো,শেষমেষ সে হাইপেশিয়াকে কোন এক জায়গা হতে ফিরবার পথে কব্জা করে ফেলে। সে তার দলবল নিয়ে হাইপেশিয়াকে তার ঘোড়ার গাড়ী থেকে টেনে হিঁচড়ে কেসারিয়াম (Caesarium) নামের একটি চার্চে নিয়ে যায়। সেখানে তারা হাইপেশিয়ার কাপড়-চোপড় খুলে একেবারে নগ্ন করে ফেলে,তারপর ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে তাঁর চামড়া চেঁছে ফেলে,তার শরীরের মাংস চিরে ফেলে,আর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত হাইপেশিয়ার উপর তাদের অকথ্য অত্যাচার চলতে থাকে। এখানেই শেষ নয়;মারা যাবার পর হাইপেশিয়ার মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে সিনারন (Cinaron) নামের একটি জায়গায় জড় করা হয় আর তারপর পুড়িয়ে তা ছাই করে দেয়া হয়’। হাইপেশিয়াকে হত্যা করা হয় ৪১৫ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে। হাইপেশিয়ার হত্যাকারীদের তালিকায় ছিলো মূলতঃ সিরিলের জেরুজালেমের চার্চের প্যারাবোলানস,মৌলবাদী সন্ন্যাসী,নিটৃয়ান খ্রীষ্টীয় ধর্মবাদীরা।“
ভুল করেও ভেবোনা যে, আমরা ভাবছি তোমরা শুধু ইতিহাসের পাতা জুড়েই আবদ্ধ হয়ে আছো। তোমরা যে এই একুশ শতকে আরো শক্তিশালী হয়ে আহত হিংশ্র পশুর মত দক্ষযজ্ঞে লিপ্ত হয়েছো, সেটা তো ইচ্ছে করলেও কা্রো চোখ এড়াতে পারবে না। ঈমান রক্ষার জন্য আইসিসের জল্লাদেরা যখন কল্লা কাটে, বিধর্মী মেয়েদের যৌনদাসী হতে বাধ্য করে, বোকা হারাম যখন কয়েকশো তরুণীকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে মধ্যযুগীয় বাজারদড়ে বিক্রি করে বা তালিবানরা যখন একশো চল্লিশজন নিস্পাপ স্কুলছাত্রের উপর গণহত্যা চালায়, তখনো আমরা দেখতে পাই, তোমরা আগেও যেমন ছিলে, এখনো তেমনি আছো। বিশ্বজুড়ে তোমাদের ক্ষমতাধর পৃষ্ঠপোষকদেরও আমরা চিনি, যারা যুগে যুগে তোমাদের টিকে থাকতে সাহায্য করেছে, ধর্মের ব্যবসা থেকে মুনাফা লুটেছে। তোমাদের মূর্খতা, কূপমণ্ডুকতা এবং পাশবিক নিষ্টুরতার নমুনা তো সারাক্ষণ চারপাশেই দেখেছি, এবার নিজের জীবনেও দেখলাম। আমার মাথার চাপাতির কোপগুলো এখনো পুরোপুরি সারেনি, আঙ্গুলবিহীন হাতটা এখনো অবাক করে, আর অভিজিৎ এর নিথর হয়ে পড়ে থাকা দেহটা তো চোখের সামনে ভেসেই থাকে। আর তখনই বুঝুতে পারি, না, তোমাদেরকে ঘৃণাও করিনা আমি, করতে পারিনা, বড্ড অরুচি হয় তোমাদের মত অমানুষদের ঘৃণা করতে। একজন মানুষকে ঘৃণা করার জন্য তাদের মধ্যে যতটুকু মনুষত্ব অবশিষ্ট থাকতে হয়, তার কণাটুকুও নেই তোমাদের মধ্যে। তোমরা আমার ঘৃণারও যোগ্য নও।
অভিজিৎ, আমি, বাবু এবং বর্তমান ও ইতিহাসের পাতা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা আমাদের মতো হাজারো মানুষেরা তোমাদের অপকর্মেরই সাক্ষী। তোমাদেরকে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলার সময় মানবসভ্যতা এই বর্বর উন্মাদনা দেখে ঘৃণায় শিউরে উঠবে, এ থেকেই সামনে এগিয়ে যাবার প্রতিজ্ঞা নেবে।
২.
এবার একটু অন্য প্রসংগে আসি। মাঝে মাঝেই ভেবে অবাক হই যে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ প্রসঙ্গে আমরা এখনও একটা রা শব্দও শুনলামনা। যে দেশের ন্যচারা্লাইজড নাগরিক আমরা, তার সরকার যতোটুকু বললো, আমাদের জন্ম নেওয়া দেশের সরকার তার ধারে কাছেও কিছু বললো না। ভয়ে সিঁটকে থাকলো। বলুন তো, আপনাদের ভয়টা কোথায়? নাকি এ শুধুই রাজনীতির খেলা? অভিজিৎ এর বাবাকে নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী, দেখা করেছিলেন কয়েকজন মন্ত্রীসাহেব। সে খবরটা যেনো গোপন থাকে, সে সতর্কতাও নিয়েছিলেন তাঁরা। আমরা জন্মেছি যে দেশে, বড় হয়েছি যে দেশে, দেশের বাইরে এসে ভালো চাকরি, গাড়ি বাড়ি নিয়ে শুধু স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার চিন্তা না করে লেখালেখি করেছি যে দেশের জন্য, বারবার ফিরে এসেছি যে দেশের মায়ায়, সে দেশের সরকারের কি কিছুই বলার ছিলো না? বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর আন্তর্জতিক বিভিন্ন মিডিয়া, ব্লগগুলো তীব্র প্রতিবাদ করেছে,অভিজিৎ রায়ের লেখাগুলো অনুবাদ এবং পুনঃপ্রচারে নেমেছে অনেকগুলো প্ল্যাটফর্ম। দেশের বিভিন্ন শহরে,আর দেশের বাইরে লন্ডন,ওয়াশিংটন ডিসি, ফ্লোরিডা, টরন্টো,নিউইয়র্ক,বার্লিন,সিডনি-তে মানববন্ধন থেকে শুরু অসংখ্য প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। অথচ বইমেলায় লোকে লোকারণ্য, আলোকিত ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার’ মধ্যে অভিজিৎ এর মতো একজন লেখককে কুপিয়ে কুপিয়ে মারা হলো, তার প্রতিবাদ জানিয়ে একটা কথাও কি বের হতে পারলো না আপনাদের মুখ থেকে? অথচ আপনারাই আপনাদের ধর্মোন্মাদ বন্ধুদের দাবিতে নাস্তিক ব্লগারদের ধরে ধরে জেলে পুরেছিলেন। তাদের ধরে জেলে পুড়তে যে তৎপরতা দেখিয়েছিলেন তার কণাটুকুও তো চোখে পড়লোনা আজ। অনেক সময় মৌনতাই অনেক কিছু বলে দেয়। আমরা কি ধরে নেবো যে অভিজিৎ বা বাবুর হত্যার পেছনে, আমাকে কোপানোর পেছনে, আপনাদেরও প্রচ্ছন্ন সম্মতি আছে? কলমের বিরুদ্ধে চাপাতির আঘাতকেই আপনারা এখন দেশের সংষ্কৃতি হিসেবে মেনে নিতে বলছেন?
এক মাস চলে গেলো। শুরুতে তদন্তের যাওবা কিছুটা তাগাদা দেখলাম, তাও আস্তে আস্তে মিইয়ে গেলো। আপনাদের কাছ থেকে সহানুভূতি আশা করি না আমরা, সমর্থনের আশা তো বাদ দিয়েছি সেই কোন কালেই। আপনাদের ভোটের রাজনীতি করতে হয়, মন জুগিয়ে চলতে হয় কতো ধরনের অপশক্তির, সেটা তো আমরা বুঝি। কিন্তু আপনাদের নিশ্চুপতার কারণটাও বড্ড জানতে ইচ্ছে করে। বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদ যে ধীরে ধীরে আঁটি গেড়ে বসেছে, তার খবর তো আমরা সবাই জানি। তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দেশবিদেশ জুড়ে কারা কাজ করছে তাও তো আমাদের অজানা নয়। অভিজিৎ এর হত্যা তো একজন দুজন লোকের হাতে হয় নি। এর পিছনে সংগঠিত ইসলামী মৌলবাদী সন্ত্রাসী দলের হাত রয়েছে, তার প্রমান তো আমরা সাথে সাথেই পেয়েছি। না হলে এতো তাড়াতাড়ি আনসার বাংলা ৭ এর মতো দল হত্যার দায়িত্ব স্বীকার করতে পারতো না। এদেরকে যদি সমূলে উৎপাটন করার ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা কি ভেবে দেখা দরকার নয় এখন? আইসিস, বোকা হারাম, আল কায়দার পথে জাতিকে ঠেলে দেওয়াটাই কি ভবিতব্য?
৩.
মানব সভ্যতা যখন আজ মঙ্গলগ্রহে বসতি বানানোর স্বপ্ন দেখছে, তখন আমরা মধ্যযুগীয় উদ্ভট এক উটের পিঠে চড়ে পিছনের দিকে যাত্রা শুরু করেছি। ক্ষমতাশালীরা সবসময়ই ধর্মকে, ধর্মীয় মৌলবাদকে লালন করেছে প্রগতির গলা চেপে ধরার অস্ত্র হিসেবে। তারা জয়ীও হয়েছে কখনো কখনো, কিন্তু যতো সময়ই লাগুক না কেনো, মানবসভ্যতা তাকে হারিয়ে দিয়ে আবার এগিয়েও গিয়েছে। অভিজিৎ তো শুধু লেখালেখিই করে নি, দেশে মুক্তবুদ্ধি চর্চার এক দৃঢ় প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টাও করে গেছে সে সারাজীবন ধরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরী গায়েন আমাকে এক ব্যক্তিগত ম্যাসেজে লিখেছেন, ‘জানি, লেখার প্রতিবাদে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারাটাই আমাদের এখন আমাদের দেশের আইনি সংষ্কৃতিতে পরিণত গেছে। তবে অভিজিতের মৃত্যুর পর একজন নাস্তিক এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারীর পক্ষে দাড়ানোর ব্যাপারে আমাদের যে ট্যাবুটা ছিল তা ভেঙ্গে পড়েছে। চারিদিকে মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই প্রায় এ নিয়ে লেখালেখি, মিটিং মিছিল চলছে।‘ অভিজিৎকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যার বিনিময়ে এই অর্জনটা কতোটা যুক্তিযুক্ত সেই বিতর্কে না গিয়েই বলছি সমাজ সরলরেখায় এগোয় না, কখনো হোঁচট খেয়ে, কখনো হাঁটি হাঁটি পা পা করে, কখনো বা জনগনের প্রবল শক্তিতে বলিয়ান হয়ে তীব্র গতিতে সামনে এগিয়ে চলে। আজ অগুনতি অন্যায়, হত্যা, অরাজকতা, দুর্নীতি দেখতে দেখতে যে মানুষেরা মনুষ্যত্বহীন হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ফুটপাতে পড়ে থাকা চাপাতিতে কুপানো নিথর শরীরের দিকে, সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার কথাও ভাবতে পারে না, তারাই হয়তো একদিন জাগবে। ইতিহাস বলে, আমরাও এগুবো, তবে দুপা আগানোর আগে য়ার কত পা পিছাতে হবে সেটা হয়তো সময়েই বলে দেবে।
বন্যা আহমেদ
৩/৩০/২০১৫
যাদের বোধ আছে, অনুভূতি আছে, উপলদ্ধি করার মত হুস আছে তাদেরকে ঘৃণা করা যায়। কিন্তু যারা জড়,ধর্মের তৈরি রোবট তাদেরকে ঘৃণাও করা যায় না।
আমাদের অবস্থা হয়েছে সেই তৈলাক্ত বাঁশের চূড়ায় উঠতে যাওয়া বানরের মতো যে কীনা দুই হাত উঠে পৌনে দুই হাত পিছলে নেমে যায়। আল্টিমেটলি উন্নতি সাকুল্যে ঐ এক হাতের এক চতুর্থাংশ হলেও দিনশেষে সেটা একেবারেই অল্প।
এতোকিছুর পরেও আপনাকে আমাদের মধ্যে পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ..
বন্যা আহ্মেদের লেখা পড়ে কিছু মন্তব্য করতে ইচ্ছা হচ্ছে। লেখক আভিজিৎ রায়ের মৃতুয়কে স্বাভাবিক ভাবে মন থেকে মেনে নিতে পারছেন্না। তাই তিনি অজস্র ঘৃণার সাথে উক্তি ক্রেছেন যে, “তোমাদের ঘৃণা করতেও ঘৃণা হয় আমার”। এরা অতি ঘৃণ্য জীবেরও আধ্ম। তথাপি এদেরকে ঘৃণা না করে ভালবাসা, স্নেহ দিয়ে বুঝাতে হবে যে, “তোমরা ধ্রমের নামে অধ্রম করছ, মানুষ মেরে ধর্মম আনা যায়না, নুষ্য-সমাজের কলঙ্ক তোমরা, মানুষকে ভালবাসতে শিখ, তুমি; আমি;সে সবাই মানুষ, আমাদের বড় ধর্ম হল মানবতা,তোমরা একজন মানবতার সৈনিকে দেখে ভয় পেয়ে তাকে বহুজন মিলে মেরেছ। তোমরা ভীতু, তোমাদের বিবেক-বুদ্ধি ব্লতে কিছু নেই। তোমরা কতগুলি ধ্রমান্ধ লোকের দ্বারা প্রিচালিত, তারা তাদের সবারথে তোমাদের প্রিচালিত করে, তোমাদের নিজস্ব চিন্তা ধারা ব্লতে কিছু নেই, তোমরা স্ত্যিকারে কি চাও – তাই জাননা, তোমাদের আন্ধ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তোমাদের হাতে ধর্ম নামে ধজবা ধ্রিয়ে পুণ্যের নামে মানুষ মারার শিক্ষয়া দেয়, এটা সঠিক পথ নয়। যদি পাপ-পূণ্যে বিশ্বাস থাকে, তবে মানুষ মারা পাপ, নরকেও ঠাঁই হবে না। তোমরা ঐ পথ ছেড়ে মানুষকে ভালবাস, এতে শান্তি পাবে। যদি ধরমে বিশ্বাস থাকে, তবে তুমি তোমার ধর্মে থাক, অপরকে আঘাত করোনা। আর একটা কথা মনে রাখবে, ব্রত্মান পৃথিবীতে মানবধর্ম বিশ্বাসের মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, তোমরা সংখ্যায় কমে যাচ্ছ, একদিন তোমরা শেষ হয়ে যাবে। সুত্রাং এখন থেকে নিজেদের পরিবর্তন কর। এক,দুই,তিন,চার আভিজিৎ ও বাবুকে মেরে কিছু হবেনা। তাদের হয়ে নিশান ধরার লোক ১০/২০/১০০ করে বাড়বে। আমরা তোমাদের ঘৃণা করিনা, তোমাদের ভালবেসে শিক্ষয়া দিতে চাই।
মাঝে মাঝে বড্ড হতাশা গ্রাস করে। সব অর্থহীন লাগে। 🙁
I cannot hold back my emotions. Every word you said comes right from your heart. I can feel your heart is crying, like thousands of other hearts, not out of physical pain but out of realisation of sheer inhumanity in Bangladesh.
As a blogger myself in the English version of mukto-mona, I ask myself, is that the country we dreamt of, is the country for which we sacrificed so much? We want nothing from the country, but only the little appreciation that we come from a decent, civilised country. Is that too much to ask?
আপনার লেখাটির প্রত্যেকটি শব্দ যেন বুলেট হয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেয় ধর্মান্ধ, বিশ্ব-মানবতাবিরোধী নরপিশাচ-গুলিকে ও তাদের যারা অতি যত্নে লালন-পালন করছে ও আড়াল করছে তাদের সকলকে।
ওরে মূর্খ কষাইয়ের দল, জেনে রাখ – অভিজিতদা জন্ম দিয়েছেন হাজার হাজার আভিজিতের, সারা বিশ্ব জুড়ে। তাদের কি করতে পারবি?
আমরা অপরাজেয়। হারাতে পারবি না।
দ্রুত সুস্হ হয়ে উঠুন বন্যাদি, আপনাকে সান্তনা জানাবার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
মানুষ যখন এক ঘন্টায় পৃথিবী থেকে মঙ্গলে যাতায়াত করবে, তখনো আমরা দেখবো মঙ্গলে যে ব্যবসাটি সবচেয়ে বেশি লাভজনক তাহলো ধর্ম। পৃথিবী থেকে আরো অনেক বেশি ও অনেক আধুনিক মন্দির-মসজিদ-গির্জা ওখানে থাকবে এবং তার সাথে থাকবে অত্যাধুনিক চাপাতি। আর আমরা তখনো আশা করে যাব যে মানুষ একদিন সভ্য হবে..
মানুষ কি এভাবে মরতেই থাকবে? স্বাধীন মনে কিছু বললেই কি পশুদের ছোবলে প্রাণ দিতে হবে?
বাংলা এখন আফ-পাকি-নাপাকস্থান হয়ে গেছে।এটার যে মাথা সেটা টিউমার দিয়ে শুরু হয়ে এখন ক্যান্সারের হয়ে মৃত্যুর দিন গুনছে।এটা যে মেরুদন্ড সোজা করে শির উচ্চ করে ৭১’এ দীপ্তিময় শপথ নিয়েছিল আমাদের জীবনের জয় গানের জন্যে সেটার অপমৃত্যু হয়েছে।
এখানে এখন শুধু হিংস্র বাঘ,ভাল্লুক,হায়েনাদের আবাস্থল আর রাজত্ব।এখানে জ্ঞান -বিজ্ঞানের কোন কদর নাই,আছে শুধু মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যযুগীয় বর্বর সংস্কৃতি আর না বুঝা অলীক কুরানের বয়ান।
বাংলা এখন সত্যিকার এক মধ্যযুগীয় অন্ধকার গুহায় প্রবেশ করেছে, সে গুহা থেকে আলোর পথে বের হয়ে আসার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে আপাতত কিন্তু সুস্থ জীবনের জ ন্যেই তাকে সম্মুখপানে যেতেই হবে, এছাড়া যে জীবনের আর কোনো পথ খোলা নেই কারুর জন্যে।
বন্যা, আপনার এলেখার প্রতিটি শব্দ যেন বারুদ হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাথা ছিন্নভিন্ন করে দেয় সেই প্রতাশাই করছি।
অভিজিৎ এর লেখার মাধ্যমে প্রথম হাইফোসিয়ার কথা জানি, আর সেই হাইফোসিয়ার করুন জীবন্ত পরি নতি আপনাদেরকেও আড়াই হাজার বছর পরে ভুগতে হবে তা কল্পনার অতীত ছিল।
আপনারা আমাদের একুশ শতকের হাইফোসিয়া।হাইফোসিয়ারাই বাংলাকে একদিন নতুন আলোর সভ্যতার পথে নিয়ে যাবে আলো হাতে আধারের যাত্রী হয়ে।
আপনার ইস্পাত কঠিন দৃঢ় মনোবল আমাদের পাথেয়।
জয় বাংলা।
সুনিশ্চতভাবে বলতে পারি এটাই মৌলবাদীদের ভবিষ্যত। আমরা লিখে যাবই, কালি দিয়ে লিখতে না দিলে রক্ত দিয়ে লিখব।
আমরা কার কাছে বিচার চাইব ? কবি শামসুর রাহমানের বাসায় হামলা হল , বিচার হয়নি। হুমায়ুন আজাদকে খুন করা হল বিচার হয়নি । লেখক-চিন্তক অভিজিৎ রায়ের হত্যা বিচার হবে – এটা বিশ্বাস করার পেছনে কি কোন কারণ সক্রিয় রয়েছে ?
আমার জানা নেই।
তা’হলে কি আমরা থেমে যাব ?
না, আমরা থেমে যাব না।
এই এক জীবন নিয়ে, আসুন, হাসতে হাসতে, ; সাহসিকতার সাথে দাঁড়িয়ে যাই শত্রুর মুখোমুখী।
কারা শত্রু ?
ঘাতকদের চালক কারা?
কারা সব কল-কাঠি নাড়ছে ?
জানা খুব দরকার ।
কিন্তু একা একা বীরত্বের যুগ থেকে বেরিয়ে এসে, আসুন; যারা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ছুৎ-মার্গ থেকে অনেক দূরে; সেই কৃষক-শ্রমিকদের সাথী করে নেই। ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাই ।
অবিশ্বাস্য প্রলয় সম্ভব, খুব সম্ভব ।
একমাত্র এ পথ ধরেই আমরা প্রতিটি অন্যায্য খুনের বদলা নিতে পারি, প্রতিষ্ঠা করতে পারি মানবিক সমাজ ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের যে সোনার বাংলা, বিদ্রোহী কবি নজরুলের যে বাংলাদেশ, প্রকৃতির কবি জীবনানন্দের যে রূপসী বাংলা একদিন পাকিস্তানীদের অপশাসনের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছিল তার থেকে এই দেশটাকে উদ্ধার করে আবার সোনার বাংলা পুন:প্রতিষ্ঠার লক্ষে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই দেশটা ৭১ সালে স্বাধীন হয়েছিল ! আশা ছিল জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই দেশটি হবে সকল মানুষের জন্য একটি বাসোপযোগী দেশ, আশা ছিল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের এই দেশের শাসকরা এই দেশে সকল মানুষের জন্য চালু করবে ধর্মান্ধতা- মুক্ত আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা – এই দেশের মানুষেরা সত্যিকার অর্থেই মানুষ হবে – কিন্তু হায় ! আমাদের চরম দূর্ভাগ্য – ৭১ সালের পর থেকে – আমরা বাঙালি শাসক পেলেও – আমরা একের পর এক পেলাম সব বাঙালি অপশাসক ! দেশটাকে একটা আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করার পরিবর্তে তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ধর্মান্ধতাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে শুরু করলো – এবং এক সময় তারা ধর্মান্ধ – মৌলবাদীদের লালন-পালন করতে শুরু করলো – এবং তারই পরিণতিতে বাংলাদেশ আজ ধর্মান্ধ-মৌলবাদীদের বৃদ্ধির জন্য এক ঊর্বর ভূমিতে পরিণত হয়েছে – আর সাধারণ মানুষের জন্য হয়েছে সোনার বাংলার পরিবর্তে একটি দুর্দশাগ্রস্ত বাংলা, আর আলোকিত মানুষদের জন্য একটি মৃত্যু উপত্যকা !!!
প্রিয় মডারেটরবৃন্দ,
কমেন্টে ছবি যোগ করা যায় না। অনুগ্রহ করে এই ছবিটি উপরের কমেন্টে যোগ করে এই কমেন্টটি মুছে দিবেন।
http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2015/03/Photo0261.jpg
১। তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও ঘটনা দেখে অনুমান করছি যে,বাবুকে সরাসরি মৌলবাদিরা হত্যা করলেও অভিজিতদার ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। মৃত্যু হুমকিতে থাকা তার মতো বুদ্ধিমান মানুষ সেদিন অনেকগুলো ভুল করেছিল। সেসব ভুলের কারনে তার আশেপাশের বিজ্ঞান কর্মীরা সন্দেহের শীর্ষে।
২। এখনো আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে পুলিশ হত্যাকারীদের সনাক্ত করতে পেরেছে, যাচাই-বাচাই করতে কিছুটা সময় নিচ্ছে। এফ বি আই আগমন আইওয়াশ, আমাদের পুলিশরাই এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে সক্ষম।
৩। মোটা মাথায় একটা কথা বলছি, সেদিন বইমেলা এলাকা থেকে হত্যাকান্ডের ওই সময়ে বের হওয়া লোকদের ছবি নিয়ে এগুলেই তো হয়। এই ছবির ডান দিকে যে সিসি ক্যামরা ছিল তা ঘটনাস্থলে কভার করার কথা।
ধর্মোন্মাদদের চাপাতিতে শান দেন রাজনীতি-উন্মাদেরা। তেঁতুল শফীকে রেলওয়ের জমি দিয়ে দেন। ধর্মোন্মাদরা রাজনীতি-উন্মাদদের হাতে নাস্তিকদের লিস্ট ধরিয়ে দেয় সেই লিস্ট অনুযায়ী দেশের আনাচ কানাচ ছেঁকে নাস্তিক ধরে ধরে জেলে পুরে রাজনীতি-উন্মাদেরা ধর্মোন্মাদদের তৈলমর্দন করতে থাকেন।
অভিজিত রায়ের হত্যার বিচার হবে বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু এখন শুধুই হতাশা। এক মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও কোন ইতিবাচক খবর নেই। এখনও মনে মনে কল্পনা করি জঘন্য এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। ‘ব্যক্তি’ অভিজিতের মৃত্যু হলেও, তাঁর আদর্শ অমর। তিনি আমাদের মাঝের বেঁচে ছিলেন, বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন।