(১)
লেখাটা না লিখিলেও চলিত! একটা আস্ত খোরাকের পেছনে সময় দেওয়া আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ কি না এই সব নিয়ে যখন ভাবছি –দেখলাম, উনি এতসব মণিমাণিক্য ছড়িয়েছেন-এগুলি নিজের ভাষায় না লিখলে, পাঠক এক বিশুদ্ধ হাস্যরস থেকে বঞ্চিত হবে!

আমার দাদু ছিলেন অনুকুল ঠাকুরের শিষ্য! তখনই প্রথম এই শব্দগুলির সাথে পরিচিত হই –

যজন,যাজন ও ইষ্টভৃতি

তখন দেখতাম এক অদ্ভুত কেরামতি। দাদু হাগতে গেলেও এক পয়সা গুরুর নামে একটা ভাঁড়ে জমা দিয়ে হাগতে বসত! এটি শ্রী শ্রী ঠাকুরে দীক্ষিত শিষ্যদের অবশ্য কর্তব্য-সর্বদা গুরুকে স্মরণ করিবে! হাগতে গেলেও করিবে! কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আমাশায় সর্বত্র গুরুকে স্বরণ করা এই কূলের ( যা সৎসঙ্গ) নিয়ম! গুরুদেব ঠাকুরকে এক পয়সা ভাঁড়ে দিলে , উনি কোষ্টকাঠিন্যে পায়খানা তরল করিবেন, আমাশায় আঁটি বাঁধিবেন! অহ ! এমন জগৎগুরুর সন্ধান কভি কেও দেখিয়াছেন?

উনার সর্বাধিক বিখ্যাত শিষ্য লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। সারা বাংলায় মেরেকেটে কোটি খানেক সৎসঙ্গী আছে বলে উনারা দাবী করেন!

(২)

তবে শ্রী শ্রী ঠাকুর বিখ্যাত অন্যকারনে। এই ডাইনামিক হিন্দুধর্মে ইউজেনিক্স নামে ডিনামাইট ঢোকানোর পেটেন্টটি উনার । যারা ইউজেনিক্স নিয়ে পরিচিত নন -তাদের জন্য দুই লাইন জানিয়ে রাখি। এটি একটি খরতরনাক অপবিজ্ঞান যা নিয়ে হিটলার অবসেসড ছিলেন বিশুদ্ধ জার্মান জাতির সৃষ্টিতে। বিবাহে নরনারীর নির্বাচনের বিশুদ্ধতা উৎকৃষ্টতর সন্তানের জন্ম দেয়-এই হচ্ছে উনাদের “বিজ্ঞান সম্মত ” বিশ্বাস!!

অনুকুল চক্রবর্ত্তীর (14 September 1888 – 27 January 1969) অবশ্য হিটলারে ঠাঙারে বাহিনী ছিল না। তাই হিন্দু ধর্মের বর্ণবাদকে আশ্রয় এবং সাশ্রয় করেই উনি, হিন্দু ধর্মে ইউজেনিক্স ঢোকাতে উৎসাহী হোন।

উনার দর্শনের মূল থিওরী এই রকম –

হিন্দু ধর্মের বর্ণবাদ ভাল! কারন তা বংশ গৌরব এবং বংশ দক্ষতা ( স্কিল) রক্ষা করে! রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষা করে!

এই ঠাকুর কোন এক কালে ডাক্তারী পাশ করেছিলেন। কোন বায়োলজি গ্রন্থে শুদ্র রক্তের সাথ ব্রাহ্মন রক্তের পার্থক্যর পরীক্ষালদ্ধ ফল পাওয়া যায়, তা আমাদের কারুর জানা নেই । তবে উনিত আবার ঈশ্বরের সাথে কথা বলতেন-হয়ত কানে কানে ইশ্বর এসে এসব বৈজ্ঞানিক অমৃতবানী উনার কানে ঢেলেছিল!

তবে এই বর্ণবাদ টেকাতে এবং উৎকৃষ্ট হিন্দু সন্তান প্রসব করিতে, উনার বিবাহের ফর্মুলা হচ্ছে এই রকম –

প্রতিটা হিন্দু পুরুষের দুইটি বিবাহ করা উচিত ! প্রথমটা সবর্ণ, পরেরটা অনুলোম অসবর্ণ । অনুলোম অসবর্ণ বিবাহ মানে উচ্চকাস্টের হিন্দু পুরুষের সাথে নিম্ন বর্ণের মহিলার বিবাহ। ব্রাহ্মন পুরুষের সাথে শুদ্রকন্যার বিবাহ। উচ্চবর্নের মহিলার সাথে নিম্ন বর্নের পুরুষের বিবাহে তিনি নারাজ। কারন তার বায়োলজি “গবেষণা” । নিম্নবর্নের স্পার্ম নাকি উচ্চবর্নের ডিম্বানুকে নষ্ট করে। প্রথমত উচ্চবর্নের আর নিম্ন বর্নের লোকেদের স্পার্ম আলাদা হয়-এই অতি মুল্যবান বৈজ্ঞানিক তথ্যর জন্য, উনাকে নোবেল বা নিদেন পক্ষে একটি গোবেল প্রাইজ দেওয়া উচিত ছিল!
সর্বর্নে বিবাহটা করার পর কিন্ত আপনি অসবর্ণ বিবাহটা করিবেন! কেন? কারন আপনার সবর্ন স্ত্রীর গর্ভে আসিবে বিশুদ্ধ সন্তান! আর অসবর্ন বিবাহে আসিবে অশুদ্ধ সন্তান! অশুদ্ধ সন্তান কেন? এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে শ্রী শ্রী ঠাকুর বিজ্ঞানে একেবারে “নিরক্ষর ” ছিলেন না । উনার মতে বায়োডাইভারসিটি বাড়াইতে দ্বিতীয় বিবাহটি অসবর্ণ করিতে হইবে!

মোদ্দা কথা উনার এই স্বরচিত ” বৈজ্ঞানিক ” ইউজেনিক্স ভারতে খুব বেশী চলে নি-কারন নেহেরু। যিনি হিন্দুদের বহুবিবাহ আইন করে রদ করেন । তবে শ্রীঠাকুর, থিওরী অনুয়ায়ী দুটি বিয়ে করেছিলেন। এতে সমাজে বিশুদ্ধ এবং ডাইভার্স সন্তান এসেছিল কিনা আমার জানা নেই – তবে সতীন ও সতীনপুত্রের ঝগড়ায়, তার সৎসঙ্গ আশ্রম উঠে যাবার উপায় হয় একসময়। শিষ্যরাও বিরক্ত হয়েছিল। আমার দাদু তার সন্তানদের ওপর খাপ্পা ছিলেন-এটুকু মনে আছে।

(৩)

কেও যদি জোকার নায়েকের বৈজ্ঞানিক আবিস্কারে পুলকিত হৌন-তাহলে অনুকুল চক্রবর্ত্তীর বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের উদ্ভাবনী শক্তিতে তূরীয় অবস্থা পেতে পারেন! উনার পুনঃজন্মের তত্ত্বটি এখানে হুবহু দিলাম –

।। পুণর্জন্ম কিভাবে হয় ।।
“সম্বেগ জীবের বা মানুষের মধ্যে gene-এর (জনির) ভিতর-দিয়ে যে pitch-এ
(স্তরে) ওঠে, মরে যাওয়ার সময় psycho-plasm-এ (মানস দেহে) engraved (মুদ্রিত)
হ’য়ে থাকে সেই pitch-এ wave-এর (তরঙ্গের) আকারে । মিলনেচ্ছু sperm-এর
(শুক্রকীটের) ভিতর সেই জাতীয় সম্বেগ সৃষ্টি হ’লে tunining (সঙ্গতি) হয় এবং মৃত
ব্যক্তি পুনরায় শরীর গ্রহণ করার সুযোগ পায় । জন্ম ও মৃত্যুর এটাই revolving process
(ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি) ।”
আঃ প্রঃ ২১।১০৭ থেকে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বাণী ।

শ্রী শ্রী ঠাকুরের মাথায় কতটা উর্বরা ফসফেট ছিল ভেবে দেখুন ত? ব্যাপারটা জাস্ট ভাবুন

আপনি মারা যাচ্ছেন-যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গে বিলীন হচ্ছেন! সেই তরঙ্গের একটা ফ্রিকোয়েন্সি আছে? রাইট!

এবার ধরুন আপনি যে সময় মৃত্যুর কারনে তরঙ্গে পরিনত, একজাক্টলি সেই সময়, অনেক পুরুষ, অনেক নারীর সাথে সঙ্গমে রত এবং তাদের যোনীদ্বারে কোটি কোটি স্পার্ম সবে ঢুকতে শুরু করেছে ! এই সব স্পার্মও তরঙ্গায়িত! নীলস বোর বা হাইজেনবার্গ স্পার্মের ওয়েভ পপার্টি বার করতে ব্যর্থ হলেও, শ্রী শ্রী ঠাকুর ঠিক জানেন, স্পার্মের ওয়েভ পার্টিকল ডুয়ালিটি!

এবার আপনার মৃত আত্মার একটা ফ্রিকোয়েন্সি আছে এবং স্পার্মদেরও নিজস্ব ফ্রিকোয়েন্সি আছে! এবার আপনার আত্মার ফ্রিয়োয়েন্সির সাথে স্পার্মের ফ্রিকোয়েন্সি মিলে গেলেই আপনি খাঁটি “রেজোনান্স” পদ্ধতিতে স্পার্মের মধ্যে ঢুকে গেলেন!! তারপরে সেই মহিলার পেট হইতে সন্তান হিসাবে বাহির হইবেন।

তবে গুরুর তত্ত্বে অসম্পূর্নতা আছে যা তার শিষ্য বা পুত্ররা সম্পূর্ন করেন নি! প্রথমত কন্ডোম থাকিলে কি হইবে? তাহলে ত সবই গেল!! আর ওই কোটি কোটি স্পার্মের মধ্যে মাত্র একটিই ডিম্বানুর প্রাচীর ভেদ করতে পারে! ভেবে দেখুন-আপনি একটি স্পার্মের মধ্যে ঢুকে গেলেন রেজোনান্সের মাধ্যমে কিন্ত সেটি প্রাচীর ভেদ করিতে পারিল না !
তাহা হইলে কি হইবে? আপনি আবার সেই জন্মাতে জন্মাতে মারা পড়িলেন! রাইট? সেক্ষেত্রে আপনি –সেই স্পার্ম হইতে বাহির হইয়া, নতুন যোনির সন্ধান করিতে লাগিলেন না পুনজন্ম হইলনা বলিয়া, মহাবিশ্বে তরঙ্গায়িত হইয়া ভাসিতে লাগিলেন, এসবের সমাধান কিন্ত গুরুদেব দিয়ে যান নি!!

ভেবে দেখুন। মৃত্যর পর আবার জন্ম নেওয়ার চেষ্টাটা কিন্ত বেশ চাপের! ওই তরঙ্গের ফর্মে আপনি শুধুই যোনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন যেখানে লিঙ্গ সবে ঢুকেছে আর স্পার্ম ফেলার তালে আছে! যোনিতে স্পার্ম পড়তেই আপনি ফ্রিকোয়েন্সি স্ক্যানার দিয়ে স্পার্ম খুঁজতে লাগলেন যদি ম্যাচিং ফ্রিকোয়েন্সি পেয়ে যান! তারপরেও যদিও নিস্তার নেই -কন্ডোম থেকে প্রতিযোগী স্পার্মদের কাছে হেরে যাওয়ার ট্রাবলটা এক্সট্রা! আমি বাপু মরে যাওয়ার পর এত ঝামেলার মধ্যে যেতাম না !

তবে এই সুমহান তত্ত্বটার জন্য উনাকে গোবেল প্রাইজ অবশ্যই দেওয়া উচিত ছিল!

ভাবতে অবাক লাগে জাকির নায়েক, অনুকুল ঠাকুর টাইপের লোকগুলো ধর্মীয় বাঙালী মধ্যবিত্তের মধ্যে জনপ্রিয় গুরুস্থানীয় চরিত্র। এই ব্যপারটা বোঝার জন্য যথেষ্ট আসলেই সংখ্যাগরিষ্ট বাঙালী কতটা অশিক্ষিত এবং অজ্ঞানের অন্ধকারে ডুবে আছে!

(৪)

কেও যদি ভাবেন শরিয়া এবং ইসলাম ভয়ংকর নারী বিরোধি-তারা অনুকুল ঠাকুরের “নারী” জাতির প্রতি উপদেশ পড়ে দেখতে পারেন! আমি দুয়েকটা মণিমানিক্য তুলে দিচ্ছি —মন্তব্য নেই কারন আমি সত্যই বাকরুদ্ধ!


এক মা জিজ্ঞাসা করলেন, স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা সত্ত্বেও
স্বামী যেখানে স্ত্রীর সঙ্গে দূর্ব্যবহার করে, সেখানে স্ত্রীর কী করবে?

শ্রীশ্রীঠাকুর- ঐ কথাই তো বলছিলাম। প্রকৃতিগত সামঞ্জস্য
দেখে বিয়ে না দিলে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই জীবন বিধ্বস্ত হ’য়ে যায়।
তুমি তোমার ধারনা অনুযায়ী হয়তো ভাল ব্যবহার করছ, কিন্তু স্বামীর
হয়তো অনুযোগ- আমি যা চাই, আমি যা পছন্দ করি, আমার স্ত্রী কিছুতেই
তেমনভাবে চলে না, সে তার নিজের খেয়ালমত চলে,
আমি তাকে নিয়ে আর পারি না। বড়জোর হয়তো বলবে, আমার
স্ত্রী এমনি ভাল মানুষ, কিন্তু আমি কিসে খুশি হই, আমি কিসে ভাল থাকি,
তা সে বোঝে না। তার নিজের এক ধরণ আছে, সেই ধরনে চলে। আমি বহু
ক্ষেত্রে দেখেছি, স্ত্রীর মত স্ত্রীও খারাপ নয়, স্বামীর মত স্বামীও খারাপ
নয়। উভয়েই ভাল মানুষ বলে সুনাম আছে বাইরে। সবার সঙ্গেই তাদের ব্যবহার
ভাল, কিন্তু উভয়ের মধ্যেই আর কিছুতেই বনিবনা হয় না। বিয়ে থাওয়ার এমনতর
গরমিল যদি কোথাও ঘটে গিয়ে থাকে, সেখানে স্বামী-স্ত্রীর
প্রকৃতিটা বুঝতে চেষ্টা করা উচিত এবং স্বামীর যাতে ভাল লাগে ও ভাল
হয় নিজের ব্যবহার সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করা উচিত। একটা জ্যান্ত
মানুষের সাথে ব্যবহার করার সব সময় স্মরণ রাখা উচিত, আমি ইট, কাঠ
বা পাথরের সঙ্গে ব্যবহার করছি না। যার সঙ্গে ব্যবহার করছি তার
একটি রুচি আছে, প্রকৃতি আছে , মেজাজ আছে, ধরণ আছে। বদ্যি যেমন
নারী টিপে ধাত বুঝে ওষুধ দেই, মানুষের সঙ্গে ব্যবহারের দাওয়াইও
তেমনি ধাত বুঝে প্রয়োগ করতে হয়। এক কথায় মানুষের মন-মেজাজ
বুঝে চলতে হয়। এমনটি যদি না চলতে পার তবে তোমার ভালর
ধারণা নিয়ে আবদ্ধ হ’য়ে থাকলে তুমি কিন্তু কখনও মানুষের মন পাবে না। শুধু
স্বামীর সঙ্গে ব্যবহারেই এমনতর নয়। প্রত্যেকের সঙ্গে ব্যবহারেই চোখ, কান, মন
খোলা রেখে চলবে। নজর করবে, কে কখন কী অবস্থায় আছে। তাই বুঝে তখন
যা বলার বলবে, যা’ করার করবে। তুমি হয়তো মনে করে রেখেছ, স্বামীর
কাছে সংসারের একটা প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য আবদার করবে। স্বামীর মন
কেমন তা লক্ষ্য না করে, তুমি তোমার চিন্তার সম্ভেগ অনুযায়ী এমন সময়ই
হয়তো কথাটা তাকে বললে যখন তার মন নানা সমস্যায় ভারাক্রান্ত। তখন
সে তো চটবেই। আবার, তুমিও বলবে, আমি তো নিজের জন্য কিছু
চাইতে যাইনি, সংসারের জন্য দরকার, সেই দরকারী জিনিসের
কথা বলতে গিয়ে কত কথা শুনলাম। যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা।
আমার ভাল কথাটাও তোমার গায়ে সয় না। এই বেধে গেল আর
কি লাঠালাঠি। পরস্পর হিসাব করে না চলার দরুন অনেক গোলমালের সুত্রপাত
হয়। মেয়েদের বিশেষ বিশেষ শারীরিক অবস্থায় বিশেষ-বিশেষ মেজাজের
সৃষ্টি হয়, সেটা হলো সাময়িক ব্যাপার এবং শারীরিক অবস্থার সাথে জড়িত।
পুরুষ ছেলের এটা সম্পর্কে যদি কোন জ্ঞান না থাকে এবং তখনকার
স্বাভাবিক বৈলক্ষণ্যের দরুন যদি অযথা শাসন করতে যায়, তাহলে কিন্তু
হিতে বিপরীত ঘটে। আবার, স্বামী হয়তো ফিটফাট থাকতে পছন্দ করে, কিন্তু
স্ত্রী হয়তো অগোছাল, অপরিচ্ছন্ন রকমে চলতে অভ্যস্ত। সেখানে স্ত্রীর ঐ
চলনে স্বামীর তো অসন্তুষ্ট হবার কথাই।
মা-টি অকপটে বললেন, আমার ঐ দোষটি আছে।
শ্রীশ্রীঠাকুর: দোষ যদি বুঝে থাকিস, তবে সেরে ফ্যাল্। যা করলে শরীর-
মনের পক্ষে ভাল হয়, ছেলেপেলে ভাল থাকে, স্বামীরও মনোরঞ্জন হয়,
তা তো করাই লাগে। স্বামীর কাছে যত সময় নত থাকবি। যুক্তি তর্ক
দিয়ে কারো মন জয় করা যায় না। তোর যদি কখনও মনেও হয় যে, স্বামী তোর
সঙ্গে অকারণ দূর্ব্যবহার করছে, তাও বলবি, আমি কথাটা বলতে চেয়েছিলাম
ভাল, কিন্তু ভাল করে বুঝিয়ে বলতে না পারায় তোমার অশান্তির কারণ
হয়েছি। ত্র“টি আমারই। এইরকম যদি করতে পারিস তাহলে দেখতে পাবি,
স্বামীর সব রাগ গলে জল হয়ে যাবে। একটা জায়গায় কেবল স্বামীর
বিরুদ্ধে দাড়াতে পারিস, অর্থাৎ যদি দেখিস, স্বামী তাঁর মা-
বাবা বা গুরুজনের সঙ্গে অসমীচিন ব্যবহার করছে, সেখানে কখনও কিন্তু
স্বামীর পক্ষ সমর্থন করতে যাবি না, শ্বশুর-শাশুড়ীর পক্ষ হয়ে সেখানে ন্যায্য
প্রতিবাদ করবি। স্বামীর মঙ্গলের জন্যই এটা করা দরকার। অনেক স্ত্রী তাদের
স্বামীকে তাদের গুরুজন ও আপনজন হতে বিচ্ছিন্ন করে নিজেদের
আঁচলধরা করে রাখতে চায়। ভাবে, আমরা স্বামী-স্ত্রী ছেলেপেলেদের
নিয়ে সুখে থাকতে পারলে হলো, আর চাই কী? কিন্তু এত যে স্বামীর প্রতি ও
নিজের প্রতি শত্র“তা করা হয়, এ-কথাটা বোঝে না। স্বামীর
প্রতি শত্র“তা এদিক দিয়ে যে, স্বামী যাদের নিয়ে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ,
প্রীতি, দায়িত্ব ও কর্ত্তব্যহীন করে তুললে সে ধীরে ধীরে অমানুষ হয়ে পড়ে,
তার জগৎটা হয়ে যায় সংকীর্ণ; কারণ, যে নিজের মা, বাপ,
ভাইবোনকে ভালবাসতে পারে না, তাদের প্রতি কর্ত্তব্য করতে পারে না,
সে দেশ ও দশকে ভালবাসবে, তাদের জন্য করবে, এ একটা মিছে কথা। অমনতর
যারা, তারা বড়জোর তথাকথিত politics (রাজনীতি)করতে পারে নাম-
চেতানর জন্য, স্বার্থ-সিদ্ধির জন্য। অন্তরের আসল বিস্তার তাদের কিছুই হয় না।
আর, তাদের আত্মপ্রসাদ বলেও কিছু থাকে না। যাদের খুশি করে, যাদের
আশির্বাদ ও প্রসাদ লাভ করে মানুষ বড় হবার প্রেরণা পায়, তাদের প্রতি টানই
যদি ছিঁড়ে যায়, তবে তার সম্বল কি রইল জীবনে তা তো বুঝি না।
ওভাবে রিক্ত ও নিঃসম্বল হয়ে করে দিল যে তাকে মনোজগতে, তার
প্রতি একদিন তার আক্রোশ আসাও অসম্ভব না। তখন ঐ
স্ত্রীকে হয়তো সে দুচক্ষে দেখতে পারে না। ভাবে, ঐ ডাইনী আমার
সর্বনাশ করেছে। আমার মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন সকলের
থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে আমাকে। আমার সাজানো বাগান
শুকিয়ে ফেলেছে। ও আমাকেও চায় না। ও চায় আমাকে দিয়ে ওর নিজের
খেয়াল পূরণ করতে। এটা প্রকারান্তে নিজের প্রতি শত্র“তা নয় কি? তাছাড়া,
যে ছেলেপেলেদের সুখসুবিধার দিকে চেয়ে অমন করে, তাদেরও কি ভাল
হয়? যে সঙ্কীর্ণ স্বার্থপরতার দীক্ষা তাদের দেয়, তার ফলে তারাও
তো পরস্পরকে ভালবাসতে শেখে না। কালে-কালে তারাও তো মা-
বাবা ও ভাই-বোন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যেমনতর বীজ বোনা যায়,
তেমনতর ফলই তো ফলবে। তখন হয়তো দেখবে, তোমার একটি ছেলে চর্ব্য, চোষ্য,
লেহ্য, পেয় খাচ্ছে আর একটি ছেলে পথে-পথে না খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে,
কিন্তু সে তাকে এক মুটি ভাতও দিচ্ছে না। দিতে চাইলেও তার স্ত্রীর
ভয়ে পারছে না। এই অবস্থা দেখলে তোমার কি ভাল লাগে? কিন্তু এই
অবস্থাটার তো সৃষ্টি করলে তো তুমি।
মা-টি সঙ্কুচিত হয়ে বললেন, ঠাকুর! আপনি আর বলবেন না, শুনে বড় ভয় করে।
মেয়ে মানুষ বোকা জাত, তাদেরই কি যত দোষ? মেয়েমানুষ ভূল
করে যদি স্বামীকে তার বাপ-মার থেকে নিজের দিকে টানতে চায়,
তাহলেই স্বামীও কি সেই ভূলে সায় দেবে?
শ্রীশ্রীঠাকুর তা তো দেওয়া উচিতই নয়। পুরুষেরই তো দায়িত্ব বেশী। সেই
তো তার পিতৃভক্তি ও মাতৃভক্তির দৃষ্টান্তে স্ত্রীকে তাদের
প্রতি আরো শ্রদ্ধাপরায়ণ করে তুলবে। যেখানে স্বামীর অতখানি দৃঢ়তা ও
পৌরুষ নেই, সেখানে সতী স্ত্রীর অনেকখানি করণীয় আছে। সে যদি স্বামীর
ভালই চায়, তবে তাই করবে যাতে স্বামীর মঙ্গল হয়। স্বামী যদি তার মা-
বাবার প্রতি কর্ত্তব্যচ্যুত হতে চায়, সে বরং তখন
কলেকৌশলে চেষ্টা করবে যাতে বাপ-মার প্রতি তার টান
বাড়ে এবং আবেগভরে সে তাদের সেবাযতœ করে। মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধা,
ভক্তি, প্রীতি ইত্যাদি বাড়াবার জন্য অনেক সময় দূতীগিরি করতে হয়।
স্ত্রী হয়তো স্বামীকে বলল, বাবা-মা তোমাকে খুব ভালবাসেন। বলেন ও
রাগধাগ করলে কি হয়? মন ওর খুব ভাল। বাইরে আধিক্যেতা নেই। কিন্তু সকলের
প্রতি অনেক টান। আবার, শ্বশুর-শাশুড়ীর কাছে হয়তো বলতে হয়,
উনি আমাকে সবসময় বলেন, আমার কিছু করা লাগবে না তোমার। তুমি সব সময়
দেখবা, বাবা-মার যাতে কোন কষ্ট না হয়।
এইভাবে যদি কৌশলে দূতীগিরি করা যায়, তাহলে পরস্পরের মধ্যে শ্রদ্ধা,
প্রীতি, ভাব-সাব গজিয়ে দেওয়া যায়। এই তো সতী স্ত্রীর কাজ,
লক্ষ্মী বৌয়ের কাজ। গড়া সংসার ভাঙবে না সে, ভাঙা সংসার গড়বে সে,
জোড়া লাগাবে সে। মায়েদের তুই বোকা বলিস? বোকা হলে কখনও সন্তান
পেটে ধরে মানুষ করে তুলতে পারে? দে তো একটা ব্যাটাছাওয়ালের
কাছে একটা মা হারা শিশুকে মানুষ করার ভার। প্রায়ই হাগে-
মুতে একসা করে ফেলবেনে। কিন্তু মায়েরা কেমন অনায়াসেই করে তা। তাই
নিজেদের কখনও ভাববি না। তোরাইতো বুদ্ধিস্বরুপিণী, লক্ষ্মীস্বরুপিণী,
দূর্গতিনাশিনী, দুর্ম্মতিদলনী দূর্গা। তোরা আছিস, তাই তো আমাদের
আগলে রেখেছিস। নইলে আমাদের উপায় ছিল কী?
[তথ্যসূত্র: আলোচনা প্রসঙ্গে, ৬ই কার্তিক, শুক্রবার, ১৩৪৯ (ইং ২৩/১০/১৯৪২)]

এবার উনার নারীবাদি তত্ত্বগুলি সাজিয়ে নিন

নিজেদের ভালোর জন্য নারীর স্বীকার করা উচিত তারা হীনবুদ্ধির জীব
স্বামী অত্যাচার করলে, বকলে, ভুল ব্যবহার করলেও তা মেনে নিতে হবে -কারন লং টার্মে তা সংসারের জন্য ভাল “যুক্তি তর্ক
দিয়ে কারো মন জয় করা যায় না। তোর যদি কখনও মনেও হয় যে, স্বামী তোর
সঙ্গে অকারণ দূর্ব্যবহার করছে, তাও বলবি, আমি কথাটা বলতে চেয়েছিলাম
ভাল, কিন্তু ভাল করে বুঝিয়ে বলতে না পারায় তোমার অশান্তির কারণ
হয়েছি। ত্র“টি আমারই। এইরকম যদি করতে পারিস তাহলে দেখতে পাবি,
স্বামীর সব রাগ গলে জল হয়ে যাবে। ‘
নিজেদের সংসার এবং সন্তান ছাড়া নারীর আর কোন কাজ নেই , জীবনের আর কোন উদ্দেশ্য নেই
সব সময় স্বামীর মন ও মেজাজ বুঝে চলতে হবে-তবে সে সার্থকনামা স্ত্রী!

মুশকিল হচ্ছে এত বড় একজন খোরাকের পেছনে, এতটা সময় দিয়ে লেখাটা ঠিক হল কি না ! কিন্ত যেভাবে রাজনৈতিক কারনে হিন্দুত্বের বিষ রক্ত আবার বাংলাতে ঢুকছে, পবিত্র হিন্দু গুরুরা ঠিক কি টাইপের এবং কোন গোয়ালের গরু সেটা মনে করিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি।