সমগ্র বিশ্ব ফুটবল জোয়ারে ভাসছে, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বাঙ্গালী এখন নেইমার, মেসিতে মুখোর। এই ফুটবল জোয়ারের মধ্যে অন্য বিষয়ের অবতারণা করাই বোধ হয় অবান্তর। তবে এই অবান্তর কাজটিই করতে বাধ্য হচ্ছি বলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

ঘটনা ২৪ শে জুন ২০১৪ মঙ্গলবার। সেদিন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর রায় ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু নিজামি অকস্মাৎ রাজনৈতিক অসুস্থ হয়ে পড়ার ফলে আদালতে রায়ের তারিখ আবার পিছিয়ে দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, নিজামির রক্তচাপ বেড়ে গেছে তাই তার বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন!

নিজামির ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে, গণজাগরণ মঞ্চের ঐদিন সকালে শাহবাগে সমবেত হবার কর্মসূচী ছিলো। সকালের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে রাকিব আল মামুন বাসা থেকে রওনা দেন। রাকিব পেশায় পালর্স কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেডের প্রজেক্ট কোঅরডিনেটর। বেলা ১১টার দিকে মোহম্মদপুর পিসি কালচার হাউজিং এলাকায় তার উপর গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা।

তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখনও চিকিত্সাধীন। রাকিবের অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল আমীন হোসেন জানান, রাকিব তাকে বলেছেন যে, তার ওপর হামলাকারী দুর্বৃত্তরা দাড়ি-টুপি পরিহিত ছিল। রাকিবের উপর হামলার ঘটনাটি একেকটি পত্রিকায় একেক ভাবে এসেছে। আমি বেশ কিছু পত্রিকার সরাসরি লিঙ্ক আপনাদের দিচ্ছি, আপনারা যেয়ে আরও বিস্তারিত দেখতে পারেন।

সমকাল

নয়া দিগন্ত

আমার দেশ

বাংলা নিউজ

আজকালের খবর

দৈনিক সংবাদ

পরিপ্রেক্ষিত

আলোকিত বাংলাদেশ

রাকিব গণজাগরণমঞ্চের একজন সক্রিয় কর্মী। প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চের সাথেই আছেন। অনলাইনে বিশেষ করে ফেসবুকে জামাত, শিবির এবং ধর্মান্ধ রাজনীতি নিয়ে তিনি বেশ কিছু লেখালেখিও করেছেন। আর এর মাধ্যমেই তিনি মৌলবাদী জামাত শিবিরের আক্রশে পড়েন।

জানা যায়, আনসার আল ইসলাম নামে একটি সিক্রেট ফেসবুক গ্রুপ থেকে তার উপরে নজরদারি করা হয়। রাকিব আল মামুনকে নাস্তিক অবিহিত করে তার কিছু কথিত অপরাধ নিয়ে সিরিজ প্রকাশ করে এই গ্রুপটি। পরে এই গ্রুপটি একটি ফেসবুকে পেইজ উন্মুক্ত করে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ নামে। নিম্নে তাদের পেইজের ব্যানারটি দিয়ে দেয়া হলো, যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়ে না।

চলুন দেখি আনসার আল ইসলামের মতে রাকিবের অপরাধগুলোঃ

প্রথম অপরাধঃ আনসার আল ইসলামের মতে রাকিবের প্রথম অপরাধ সে নাস্তিক। সে নাকি রাসুলের অবমাননা করেছে। রাসুল অবমাননার বিচার করে প্রদত্ত স্ট্যাটাসে আক্ষেপ করা হয়, “ওর ভাগ্য ভালো যে, আজকে আমাদের মুজাহিদীনদের একটা রিভলবার ঠিকমতো কাজ করে নি। ও মাত্র একটি গুলি খেয়েছে।”

দ্বিতীয় অপরাধঃ রাকিবের দ্বিতীয় অপরাধ নাকি ইসলামকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা। উদাহরণ সরূপ Rakib Mamun নামক আইডি থেকে শেয়ার করা একটি লিঙ্ক দেখানো হয়।

তৃতীয় অপরাধঃ তৃতীয় অপরাধ তার বন্ধু তালিকায় নাস্তিক ব্লগাররা আছে, যাদেরকে নাকি সে সম্মান করে।

চতুর্থ অপরাধঃ রাকিবের পরবর্তী অপরাধ হচ্ছে সে সমকামীদের সমর্থন করে এবং মদিনা সনদকে হেয় করে। উদাহরণ সরূপ সেই আইডি থেকে সমকামীদের শোভাযাত্রা করার একটি খবরের শেয়ার দেখানো হয়।

পঞ্চম অপরাধঃ রাকিবের পঞ্চম অপরাধ হচ্ছে, যে সকল তথাকথিত নাস্তিক ব্লগারদের মুরতাদ সরকার গ্রেফতার করেছে, তাদের জন্য সে আন্দোলন করেছে। এভাবে সে আল্লাহ ও রাসুলের শত্রুদেরকে সহযোগিতা করেছে।

ষষ্ঠ অপরাধঃ রাকিবের ষষ্ঠ অপরাধ হচ্ছে, নাস্তিক হুমায়ূন আজাদকে প্রমোট করা। যদি সে বেচে থাকে তার অবস্থাও হুমায়ূন আজাদের মতো হবে বলে স্বস্তি প্রকাশ করা হয়।

এগুলো হচ্ছে রাকিবের অপরাধ, যার জন্য তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। রাকিব এবারের মতো প্রাণে বেচে গেছেন, ইতিমধ্যে তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। আমরাও কি তাহলে আশঙ্কামুক্ত?