ছাই লাগবো নি ছাই।
চমকে ওঠার সাথে একটু অস্বস্তিও হচ্ছে।
এ যে সেই কন্ঠ। আবারও,
ছাই লাগবো নি ছাই।
ছাইয়ের মত বিনামূল্যের একটা জিনিস স্বল্প মূল্যে বেচতে এসে জিনিসটার মতই ফ্যারফ্যারে স্বরে সেই মহিলার ডাক — ছাই লাগবো নি ছাই।
চন্দ্রের মা জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে। তার মানে সে ও কণ্ঠটি শুনে কন্ঠের অধিকারিণীকে দেখতে চাচ্ছে।
পুঁজিবিহীন সওদার ডাক মহিলা কণ্ঠেই শুনি। কখনও কোন পুরুষকে ছাই ফেরি করতে শুনিনি।
কিন্তু এ কন্ঠ তো পরিচিত।
ছুটির দিন এ ডাক শুনতাম। কোন কোন ছুটির দিন কাজের চাপে ও ফাঁকে শুনতামও না। আবার শুনলেও কোন মতেই গুরুত্ব পেত না। একদিন মাছ কাটার ছাই নেই দেখে তার অভাব অনুভব করি।
ফেরিওয়ালার যে সুর শেখার জন্য অমল আগ্রহী। দই নেবে গো দই।
সে সুর ও স্বর তো সবাই দিতে পারে না। তবুও ছাইওয়ালীর কাছে একটু সুমিষ্ট স্বর কি আশা করতে পারি না? বোধ হয় পারি না। যে পরিস্থিতি তাকে ছাইওয়ালী বানিয়েছে, সে যে অবস্থায় ও অবস্থানে আছে সেখানে সুমিষ্ট স্বর ও সুর বিতাড়িত।
মনে করিয়ে দেয় শীতের সকালে মুড়ির মোয়ার ডাক। মুড়ির মো উ য়া য়া, মচমচে মোউ য়া।
গরমকালে মালাই আইসিক্রীমওয়ালার ডাক। দুধ মালা য়া ই । শরীর জুড়ায়।
ভাবনায় উঁকি দেয় রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ডাকঘর নাটকের অমলের কানে দইওয়ালার ডাক। দই —-দই — ভালো দই। যে ডাক অমলকে উতলা করত। বিথলা করত।
ছাইওয়ালীর ফ্যারফ্যারে কন্ঠের ডাক আমার মধ্যে আগ্রহের কোনটাই সৃষ্টি করত না। কিন্তু আজকে ছাইওয়ালীর ডাক উথল বিথল না করলেও আনমনা করছে।
এই তো বছর দুয়েক আগের ঘটনা। বাজার থেকে বাইম মাছ আর টেংরা মাছ এনেছে। চন্দ্রের মা প্যানপ্যান করছে এ পিছলা মাছ ছাই ছাড়া কীভাবে কাটবে? মাছ কাটার সময় ছাই নেই বলে বাইম আর টেংরা মাছ কাটতে অসুবিধায় পড়ে ছাইওয়ালীর কথা মনে হল।
ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলার প্রয়োজনের মত মাছ কাটতে সমস্যায় পড়ে ছাইওয়ালীর প্রসঙ্গ। ফ্যারফ্যারে স্বরই আকাঙ্ক্ষিত।
চন্দ্রের মা প্যানপ্যান করছে আর পুরানো খবরের কাগজ পাতছে মাছ কাটার জন্য। সাধারণত পুরানো খবরের কাগজ পেতে মাছ কাটে। কাগজ ছড়িয়ে বিছিয়ে নিলে মাছ কাটার পর পরিস্কার করতে সুবিধা।
বললাম, ছাই ছাড়া কাটতে না পারলে এমনিতেই ফ্রিজে রেখে দেন। ছাই পেলে পরে কাটবেন।
হ, পরে কাডি! মাচের পেডা বিতরে পইচ্চা গইল্যা থাকব। হেই মাচ আর কাউন লাগদ না।
ছাই ছাড়া কীভাবে কাটবেন?
এক মুড আচে। বাইম মাচ কাটতাম পারমু। আর টেংরা মাচ এমনে ঐ কাটমু। অহনে আর কি করমু।
নীচে গার্ডকে ইন্টারকমে বলে রাখলাম ছাইওয়ালী আসলেই যেন আমাকে বলে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই গার্ড জানাল ছাইওয়ালীকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
তাকে নিচ থেকে কোন মতেই উপরে উঠতে দেবে না। আসলে কোন ফেরিওয়ালারই উপরে উঠার অনুমতি নেই।
চন্দ্রের মাকে এখন নীচে নামতে বললে প্যানপ্যানানি বেড়ে যাবে। এমনিতেই বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে মেজাজ খারাপ। তার মেয়ের জামাই আবার টাকা চেয়েছে। আমাকে নিচে যেতে হলে মেক্সি পাল্টে যেতে হবে। মেক্সি টেক্সি ঘরের পোশাক পড়ে আমি নিচে যাই না। আলসেমিতে পোশাক পরিবর্তনও করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
চন্দ্রের মায়ের আবার সব ছাই পছন্দ না। একবার মায়ের বাড়ি থেকে ধানের চাতালের ছাই এনেছি, বলে, এত পিছলা ছাই! বাসন মাজমু নে। আসলে ড্যাগ মাজমু। এত বালা ছাই দিয়া মাচ কাডুন যায় না।
আমার মাকে এ ছাই যোগাড় করতে পাড়ার এক মহিলাকে ষোল মণ ঘিয়ের সাথে এক সকালে জলপান করাতে হয়েছিল। এখন এ ছাই লাগসই না।
আবার আরেকদিন শ্বশুর বাড়ি থেকে অন্য ছাই নিয়ে এসেছি। বলে এগুলা দ খড় খড়া। মাচ দরুন ঐ যায় না।
নিজেদের চুলার ছাই। লাড়কির সাথে সব খড়কূটো জ্বালানো ছাই।
কাজেই তাকে দেখিয়েই ছাই কিনতে হবে।
নিয়মভঙ্গ করে নীচে বলে দিলাম ছাইওয়ালীকে উপরে পাঠিয়ে দিতে।
সেই থেকে একজন মহিলা ছাই দিত। দুয়েক মাসে একবার ছাই রাখলেই হয়ে যেত। সে আবার দুই রকমের ছাই আনত। মাছ কাটা আর ডেকছি মাজা। চন্দ্রের মা গ্যাসের চুলায় ডেকচির তলার আবছা কালি ছাড়াতে ছাই দিয়ে ডেকচি মাজতে পছন্দ করে। আমাকে দুই রকমের ছাই ই রাখতে হত।
এই ঝুল্লা সাবানে ড্যাগ সাফা অয় না। ছালি রাহেন।
তথাস্ত। ঘরের এসব কাজে চন্দ্রের মা আমার উপদেষ্টা। ডিস ওয়াসিং লিকুইড দিয়ে ডেকচি মাজা তার পছন্দ না।
মহিলাটি চন্দ্রের মাকে বাঁধা কাস্টমার পেয়ে গেল। ছাই রাখতে তাকে উপরে নিয়ে আসে। নিজে নীচে গেলেও তাকে সাথে উপরে নিয়ে এনে টাকা দেয়। ছুটির দিনে আমি দেখি। কিছু বলি না। বলে ময়লা ফালাইতে গেছি , ট্যাহা লইয়া যাই নাই। ভাবি ঠিক আছে।
অফিস করি বলে টুকটাক কেনা কাটার টাকা চন্দ্রের মায়ের কাছে দেওয়া থাকে।
ছুটির দিন হলেও একদিন আমি একটু বাইরে ছিলাম। এসে দেখি ছাইওয়ালী ঘরের ভিতরে খাচ্ছে।
কি ব্যাপার? আপনি নিজে নীচে গিয়ে আবার উনাকে নিয়ে আসেন। এখন তো একেবারে ঘরে?
এর লাইগ্যা কি অইছে। হিন্দু মানু।
আমি টাকা দিয়ে বিদায় করে দিলাম।
পরে চন্দ্রের মায়ের সাথে কথা বলে বুঝলাম এর মধ্যে অনেকবার উপরে এনেছে। আমরা অফিসে ছিলাম।
হিন্দু মানুষ বলে ঘরে আনবেন? কোথাকার কে?
কোন ডাইলের ক্যাডা অইব কে?
আপনার আত্মীয় না কি?
আত্মীয় অইব কে?
তবে ঘরে নিয়ে আসলেন যে।
কইলাম না হিন্দু মানু।
কি খালি হিন্দু হিন্দু করছেন। আপনাকে বেঁধে রেখে সব নিয়ে যাবে। সর্বনাশ করবেন।
আরে না, হিন্দু মানু। আবারও বেডি মানু।
এর আগে চন্দ্রের মা টেলিভিশনে খবর দেখে আমাকে গল্প বলেছে কীভাবে মহিলারা বাসায় ডাকাতি করেছে।
রাগে আমার শরীর কাঁপছিল। সুব্রত বাইন আর বিকাশ বিশ্বাসের কাহিনী তো চন্দ্রের মা জানে না। আর হিন্দুত্বের সাথে খারাপ ভালোর সম্পর্ক কীভাবে মিলাল?
বেয়াক্কেলার মত কথা বলেন কেন? আপনাকে তো বলাই আছে অপরিচিত কাউকে উপরে উঠতে দিবেন না।
আরে অচিন না। হিন্দু মানু।
সকল হিন্দু আপনার চেনা মানুষ। সকল হিন্দু ভাল মানুষ। আপনার স্বামীকে মেরেছে কে?
আপনার পেয়ারের ভারতে খুন ডাকাতি কারা করে?
আরে হেই দেশের কতা উডান কে। হেন দ হিন্দুরা হিন্দুরা। আমগো দ্যাশের হিন্দুরা খারাপ না। আর আমার স্বামীরে তো আর গরীব মানু মারে নাই। লগে দ মুসলমানরাও আছিলো।
চন্দ্রের মায়ের কি অদ্ভূদ সমীকরণ। গরীব হিন্দু মহিলা মানে ভাল মানুষ।
আমি আর কথা বাড়তে দেই না। চূড়ান্তভাবে বলে দেই যেন আর কখনও এমন না করে।
চন্দ্রের মা বলে , আর আইত না। গেরাম অ যাইব গা আজগা। এর লাইগ্যা ঐ ঘর আইন্যা দুডা রুডি খাইতে দিছি। কোনো দিন ঘরঅ আইত কই না। আমি পাগল নাহি।
আজকে তো পাগলামি করলেন।
কি হতে পারে তা ভেবে আর কি হতে পারত ভেবে আমার মাথা ঘুরছে। পাশের বাসায় কবে মাছওয়ালাকে দিয়ে দরজায় বসিয়ে মাছ কাটিয়েছে এর বিচার চন্দ্রের মা আমার কাছে কমপক্ষে দশ দিন দিয়েছে। সাথে কি ঘটতে পারে তার সিনেমাটিক বর্ণনাসহ।
আমি চিন্তা করছি চন্দ্রের মাকেই এবার বিদায় করতে হবে। বেশি বাড়াবাড়ি করছে। নিজের মত করে সব কিছু করে বলে আমি একটু স্বাধীনতা দিয়েই রাখি। তার স্বাধীনতায় আমার স্বাধীনতাও পুষ্ট থাকে। ঘর সামলাতে হয় না। এ ঘটনা আমার স্বামীটি শুনলে আগুনের মত খেপবে। সাথে আমাকে অনুযোগ দিতেও ভুলবে না। অবশ্য ছেলেমেয়েরা বলবে, কিছু তো হয়নি। কি হতে পারতো তা নিয়ে এখন গবেষণা করে লাভ নেই।
অনেক ভেবে চিনতে চন্দ্রের মাকে একটু ধাতানি দিয়ে এ পাতা বন্ধ করব বলে মনস্থির করি।
আপাতত চুপ করে থাকি। বিকালে বসে পত্রিকা পড়ছি। পত্রিকার পাতায়ও এক মহিলা প্রতারকের কাহিনী। ছাইওয়ালীর ঘটনা ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারছি না। চন্দ্রের মাকে ডাকলাম। সে তো বলার জন্য প্রস্তুত হয়েই ছিল। আমি তাকে পত্রিকার খবরটি শুনাতে গেছি।
সে বলে, আমারডা আগে হুনেন। দুয়েকটা খারাপ খবর ছাপায়। আর বহুত বালা খবরের খবরও রাহে না।
পরে ছাইওয়ালীর কাহিনী বলা শুরু করল জি বাংলার সিরিয়েলের মত। এক লাইনকেই ইনিয়ে বিনিয়ে দীর্ঘ করা। আমি সাধারণত চন্দ্রের মায়ের পারিবারিক কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি। এ কথা শুনতে আগ্রহীও নই। আর কি হতে পারত এ চিন্তা আবার মাথায় কামড়াচ্ছে। তবুও শুনতে হবে। না শুনানো পর্যন্ত চন্দ্রের মায়েরও যে নিজের সাফাই গাওয়া হবে না। ঝুঁকিবিহীন রাখতে চায় নিজের অস্তিত্ব।
ছাইওয়ালীর নাম ছিল সারদা। এখন শরীফা। গরীব বাবার ভিটেবাড়িসহ একটা চালা ছিল গ্রামে। ধানী জমি না থাকলেও ঐচালায় তরিতরকারি ফলাত বাবা। আসলে বাবা একলা না। মা বাবা, তিন বোনও এক ভাই সবাই মিলেই কাজ করত সবজি ক্ষেতে। কারণ সবজি ক্ষেত অনেক যত্ন চায়। লাকড়ির সাশ্রয় করতে মা দুপুরে একবার রাঁধতো। সকালে পান্তা, দুপুরে গরম, আর রাতে ঠান্ডা ভাত খেয়ে ভালই জীবন চলছিল।
এটুকু বলে চন্দ্রের মা বিজ্ঞাপন বিরতি দিয়ে বিকালের চা বানাতে গেল।
চায়ের সাথে তার এ গল্প আমাকে হজম করাবে। বিশ মিনিটে যা বলল এতে মাত্র ভূমিকা শেষ। অবশ্য বিশ মিনিট গল্পের মাঝে মেয়ের জামাইয়ের টাকা চাওয়ার ঘটনারও পুনরাবৃত্তি করল।
চা নিয়ে আসার পর জি বাংলার স্টাইল পরিবর্তন করতে বললাম। ঘটনা নিয়ে না চিবিয়ে সরাসরি বলতে বললাম।
যা বুঝা গেল, পাশের গ্রামের এক মুসলিম ছেলের হাত ধরে শহরে আসা।
পরে ছয় মাসের মধ্যেই তালাক দিয়ে দেয় সামান্য কথা কাটাকাটির অজুহাতে। বিয়ে তালাক সবই মুখে মুখে। কোন কাগজপত্র নেই। এ নিয়ে মাথা ব্যথাও নেই। বরং প্রমাণ না থাকাতে সারদা ওরফে শরীফা খুশি। কারণ চন্দ্রের মায়ের ভাষায়, জানেন পরে হেই বেডায় কয় , বাড়িত গিয়া তর আমারে বিয়া করার কতা কইয়া দিমু। তর মা বাবায় আর দেশঅ থাকত পারত না। পরে তগো বাইত আমরাঐ থাকতাম পারমু। বালা না?
হেই কতা হুন্নাঐ হেয় হেই বেডারে ছারচে সারদায়।
এখন বিনা টিকিটে রেল গাড়িতে চড়ে গাজীপুর থেকে মাগনা ছাই এনে বেচে। আর দুই বাসায় সকাল ও বিকালে কাজ করে দুইবেলা খাওয়া আর তিন শ করে ছয় শ টাকা পায় । থাকে বাসাবো এক বস্তিতে তিনশ টাকায়। খরচ বলতে ঐ তিন শ টাকা। কিছু টাকা জমেছে। পাশেই সবুজবাগে একজনের সাথে ঘর ভাগাভাগি করলে দুই শ টাকায় থাকা যেত। যায়নি। বাড়ি নরসিংদির বেলাব উপজেলার আমলাবো গ্রামে। মামার বাড়ি বাজনাবো । এখন বস্তি বাসাবো তে থাকে। প্রতিদিন তো নিদেন পক্ষে বো বলতে পারে। যদিও উজিলাবো গ্রামের লোকের হাত ধরে ঢাকায় এসে এ বিপত্তি তবুও বো এর মায়া কাটাতে পারছে না।
বাহ। রীতিমত কবিতা দেখছি। আমি একটু ফোড়ন কাটি।
কবিতার কি আচে। হেয় লেহাপরা অ জানে। পেরাইমারি পাশ। ছাইওয়ালীর লেখাপড়া জানার কথাটি বলার সময় অহংকারে চন্দ্রের মায়ের ভ্রু একটু টান হয়ে যায়। লেখাপড়া জানা শুধু ভদ্রলকদের একচেটিয়া অধিকার না এমনটির প্রকাশ তার মুখভঙ্গিতে।
কি চন্দ্রের মা এত কথা শোনার সুযোগ পেলেন কখন?
ক্যার্যা, পরায়ঐ দ ছালি রাখতাম। একদিনে কি আর হুনছি?
বুঝতে পারছি লম্বা সিরিয়েল। আবার খবরের বিরতি। চন্দ্রের মায়ের সন্ধ্যা আহ্নিকের সময় হয়েছে। আমিও এই ফাঁকে একটা ম্যাগাজিন নিয়ে পাতা উলটে পালটে ঠিক করছি কোন লেখাটা আগে পড়ব।
ইতোমধ্যে ছাইওয়ালির গল্পটি শোনার জন্য আগ্রহ না বাড়লেও আগের সেই বিতৃষ্ণা ভাবটি যেন কেটে গেছে।
আফনেরে কিছু দিমু?
না, কেন?
না, সারদার কতা কইতে বমু না আবার।
ও আচ্ছা। তাড়াতাড়ি বলেন।
টাকা পয়সা চন্দ্রের মায়ের কাছেই জমা রাখত। এগার হাজার আটশ টাকা জমিয়েছে। চন্দ্রের মা দুইশ টাকা ভরে বার হাজার দিয়েছে।
এর আগে বস্তির এক দোকানীর কাছে টাকা জমাত। হারামজাদা সাত হাজার টাকা মেরে দিয়েছে।
বাড়িতে খবর নিয়েছে। ছোট এক বোনের বিয়ে হয়েছে। ভাইটি বাপের সাথে সবজি মাথায় বাজারে যাবার মত লায়েক হয়েছে। বাড়ি গিয়ে গার্মেন্টস এ কাজ করত বলবে। অজুহাত দেবে, বাপ মা রাজি হবে না বলে না বলে ঢাকায় গিয়েছিল। একেবারে মিথ্যা কথা না। এক গার্মেন্টসে কিছুদিন বদলি কাজও করেছে।
বাপের হাতে নগদ দশ হাজার দিলে মেয়েকে ফেলতে পারবে না নিশ্চয়ই। যে দুই বাসায় কাজ করত সেখান থেকে কিছু কাপড় চোপড়ও পেয়েছে। সব নিয়ে বাণিজ্য থেকে ফিরবে।
উজিলাবোর ছেলেটি বাড়িতে কিছু বলেনি। সারদাকে ঢাকায় দিয়েই সে বাড়ি গেছে যাতে তাকে সন্দেহ না করে। সারদা তখনই আরেকজনকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছিল যে সে ভালই আছে, যদিও তখন থাকা খাওয়া নিয়ে সমস্যায় ছিল।
আমি আবার ফোড়ন কাটি, চন্দ্রের মা,শরীফার ঢাকার কাহিনীর সব পাতা সারদা বই থেকে ছিঁড়ে ফেলবে।
আইচ্ছা, এই শহরে কেডা কার খবর রাহে? সারদা ডাহা আইছিল, আবার সারদা ফিরা যাইব।
আমি আর শোনার ধৈর্য রাখতে পারিনি। এ নিয়ে আর পাতাও উল্টাই নি।
আজ আবার সেই ছাইওয়ালী। দু বছরে আবার সে ঢাকায়। তবে সারদা না শরীফা হয়ে তা জানার সুযোগ আর চন্দ্রের মাকে দিইনি।
‘এক ছাইওয়ালীর কথা’ শিরনাম দেখেই পড়া শুরু করেছিলাম। লেখিকার নামটি খেয়াল করিনি। কিছুদূর পড়ার পরেই মনে হলো এ গীতাদির লেখা! আবার ফিরে এলাম উপড়ে, ঠিক তাই! এর মানে হলো দিদির লেখার একটা নিজস্বতা তৈরি হয়ে গেছে! তবে শেষে এসে বেশ কড়া ব্রেক করেছেন দিদি! পুরো লেখাটা পড়তে পড়তে অনুভব করেছি একটা হাহাকার, একটা হৃদয় চেপে ধরা যন্ত্রনার পাশাপাশি কেমন যেনো একটা অস্বচ্ছ শান্তি আর শেষে দীর্ঘশ্বাস! এই বোধ হয় শ্রেনী বিভাজিত আটপৌড়ে বাঙ্গালীর বহমান জীবন।
@কেশব কুমার অধিকারী,
দাদা, মন্তব্যটির শেষের লাইন দুটো তো কবিতা হয়ে গেল!
(Y)
@সংবাদিকা,
ধন্যবাদ
ছোটবেলার কিছু স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। আমার বাড়ীতে এক বুড়ীর কাছ থেকে মুড়ি রাখা হত। গতবার ছুটিতে বাসায় গিয়ে শুনি তিনি মারা গেছেন। মনে হল ছোটবেলা থেকে তাকে দেখে আসছি কিন্তু তার সম্মন্ধে কিছুই জানি না। পরে একটু খোজ নিয়ে জেনেছি তিনি ছিলেন একা। বিধবা বুড়ীর একটাই ছেলে ছিল। রিক্সাওয়ালা ছেলেটা বিয়ে করে বউকে নিয়ে আলাদা থাকত। ঘরের দাওয়াইতেও মায়ের জায়গা হয়নি। আর ভাত! তাই বাজার থেকে চাল কিনে মুড়ি তৈরি করে বিক্রি করা। তাইতো বুড়ী হয়েও মুড়ি তৈরি তার থামেনি মৃত্যুর আগের দিনও।
@আগন্তুক,
আপনার মুড়ি বেচার বুড়ির কথা বলাতে আমারও ছোটবেলার মটর বেচা নিঃসন্তান এক বুড়ির কথা মনে পড়ল।চালের বিনিময়ে মটর বেচত।
নিজস্ব শক্তিশালী ভঙ্গি নিয়ে গীতা দাস তার পাঠকদের হৃদয় আঁচড়েছে কোন সন্দেহ নেই (C)
গল্পটা আজকের বলে অস্বভাবিক লাগবে না হয়তো অনেকের কাছেই। ক বছর আগে হলে হয়তো এমন গল্পের জন্য কথা শুনতে হত গীতা দাসকে। একটা ফ্ল্যাট বাড়ী বা অন্য কোন ধরনের বাসস্থানে আপন নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে হয় বটে। পাশাপাশি নিজেকে বাঁচাতে মানুষের সাধারণ মায়া দয়া ভালোবাসা এগুলোও যে ভেসে যাচ্ছে; এরকম ভাবনাকেও একটু তুলে ধরা যেত মনে হয়। কাজের বুয়া তারচেয়ে দূর্বল আর একজন মেয়েকে সাহায্য করতে গিয়ে কতটা খারাপ কাজ করলো? মানুষের জন্য মানুষের ভালবাসায় চক্রবৃদ্ধি হারে শর্ত বেড়ে চলেছে, এসবের কি হবে? শুধুই শুধুই আপোষ, শুধুই ছোটা নাকি অনবরত গা ভাসানো? দেশে এখন বসবাসের স্টাইল বদলেছে অনেক কিন্তু বুয়া নির্ভরতার স্টাইল খুব এখটা বদলেছে বলে মনে হয় না। নিজের কাজ নিজে করাটা কি খুবই অসম্ভব ভাবনা? লেখাটিতে এমন ভাবনা গুঁজে দিয়ে একটু ওকালতি করা খুব বেশি অন্যায় হত কি?
@কাজী রহমান,
ছোট গল্প তো টর্চ লাইটের আলোর মত। কাজেই ফোকাস বেশি জায়গায় দেওয়া যৌক্তিক হত না।
‘ছাই’-এর মত এতো তুচ্ছ জিনিসও যে অপ্রয়োজনীয় নয়, ভীষণভাবে দরকারি এবং তাকে সাহিত্যে জায়গা দেওয়া… এটা দিদি বলেই সম্ভব। অনেক শুভ কামনা –
@বাবলু ভট্টাচার্য,
ধন্যবাদ, বাবলু।তবে আপনার মত এত বৈচিত্র্যধর্মী ক্ষেত্রে আমার বিচরণ সম্ভব নয়। আপনাকে মুক্ত-মনায় লেখার আহ্বান করছি।
গল্পটি পড়ে ছোটবেলার বহু স্মৃতি মনে এসে গেল। এক সময় আমাদের বাড়িতেও নিয়মিত ছাই কেনা হত। বহু রকমের সাবানের যুগে ছাই এর প্রয়োনীয়তা ঠিক কি তা অবশ্য বুঝতাম না।
আমাদের সমাজে শ্রেনী ভাগ এত প্রকট যে এ জাতীয় নিম্ন আয়ের মানুষের কথা নিশ্চিতভাবেই সাহিত্যে আসে না, আসা সম্ভব নয়। যারা সাহিত্য চর্চা করেন তারা তো আর সেই শ্রেনীর নয়।
এক সময় এভাবেই মায়ের কাছে শুনতাম বাড়ির ঝি বূয়া শ্রেনীর কর্মচারীরা তাদের জীবনের কত কাহিনী বর্ননা করত……এখন আর মনে হয় তেমন সম্ভব নয়।
@আদিল মাহমুদ,
ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
লেখকের বর্ণনায় কাহিনী চমৎকার প্রাণ পেয়েছে; তবে দ্বিতীয় পর্ব পর্যন্ত আর গড়াবে না জেনে আশাহত হলাম 🙁 । দিদি, চন্দ্রের মাকে কি আর একবার সুযোগ দেয়া যায় না?
@মনজুর মুরশেদ,
যায় না যে ভাই, ছোট গল্প যে শেষ হয়ে হইল না শেষ।