জামিলের বুক দুরুদুরু কাঁপছে। কারণ আজ তাকে পাত্রীপক্ষ দেখতে আসবে। এই ঘটনা তার জন্য নতুন কিছু নয়। সে ইন্টারমিডিয়েটে ওঠার পর থেকেই তার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসছে, এবং বিভিন্ন পাত্রীপক্ষ তাকে দেখে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। কখনও কলেজে, কখনও রাস্তায়, কখনও শপিং মলে, কখনও কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে, কখনও বা তাদের নিজেদের বাড়িতে। এ পর্যন্ত প্রতিবারই সে পাত্রীপক্ষ দ্বারা রিজেক্টেড হয়েছে। একই ঘটনা পুনঃপুন ঘটছে বেচারার সাথে। প্রতিটি পাত্রীপক্ষই একেকটি নিত্যনতুন খুঁত আবিষ্কার করে দিয়ে চলে গিয়েছে। কেউ বলেছে ছেলের মুখে দাড়ি কম, কেউ বলেছে ছেলের গায়ের রঙ শ্যামলা, কেউ বলেছে নাক চ্যাপটা, কেউ বলেছে হাসি তেমন মায়াময় নয়, কেউ বলেছে দাঁতগুলো আরও সুন্দর হতে পারতো, কেউ বলেছে ছেলে হনহন করে হাঁটে আদব-কায়দা কম, কেউ বলেছে চেহারাটা কেমন জানি! আমরা ঠিক এই রকম চেহারা খুঁজছিলাম না, কেউ বলেছে আমরা আরও কচি ছেলে খুঁজছি। এর বয়েস একটু বেশি। ইত্যাদি ইত্যাদি। ফিজিক্সে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে জামিল। তার বয়েসি অনেক বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের বিয়ে হয়ে বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গেছে। তার এখনও বিয়ে হলো না। এটা একটা গ্লানির বিষয়। বয়েস বেড়ে চলেছে স্রোতের গতিতে। জামিল সব সময় এ জন্য হীনমন্যতায় ভোগে। বারবার পাত্রীপক্ষ কর্তৃক অযোগ্য বিবেচিত হবার কারণে মা-বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের লাঞ্ছনা এবং কটাক্ষ নিত্য জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত বড় আইবুড়ো ছেলে এখনও বিয়ের নাম নেই। বিয়ে হবে কেমন করে, রূপ গুণ কিছু আছে নাকি? প্রভৃতি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর কতো? পাত্রীপক্ষের সামনে চা নাস্তা নিয়ে গিয়ে লাজুক রোবট সেজে বসে থাকা। বিদঘুটে অবান্তর প্রশ্নের মনরাখা উত্তর দেওয়া। ক্লান্ত সে।
এবারের পাত্রীর নাম রিমি। বয়েস ৩৯।
ব্যবসায়ী। মনের মতন পাত্র মিলছিল না বলে এতদিন বিয়ে করেনি। এখন বিয়ে করা খুবই জরুরি। কারণ রিমির বাবা অসুস্থ। সংসারের কাজকর্ম কিছুই করতে পারেন না। ঘরদোর, রান্নাবান্নার অবস্থা হেরঢের। রিমির মা রাহেলা বানু কাজ থেকে এসে দেখেন, ঘরদোর অগোছালো। রান্না মুখে দেওয়া যায় না। আর তার স্বামী আনিস উদ্দীন রোগ-যাতনায় কোঁকোঁ করছে। কাজ থেকে ক্লান্ত হয়ে এসে এসব দেখতে আর কত ভালো লাগে। রাহেলা বানুর মেজাজ মাঝে মাঝে বিগড়ে যায়। রাগে, বিরক্তিতে আনিস উদ্দীনের পৃষ্ঠদেশে ঢোল বাজাতে ইচ্ছে করে। সমস্যা হচ্ছে, এখন দু’জনেরই বয়েস হয়েছে। ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। এই অসময়ে বর পেটানো তেমন শোভন কিছু নয়। তাই রাহেলা বানু নিজের রাগ নিজে হজম করার চেষ্টা করেন। তবে যৌবনে তিনি এত নির্জীব, কা-নারী ছিলেন না। কখনও সখনও তিনি স্বামী আনিস উদ্দীনের চুলের মুঠি ধরে পিঠে তাল, নারকেল, বেল ইত্যাদি ধুমাধুম ফেলে দিতেন। কোথায় গেল সেই সব দিন! যাক পুরনো দিনের কথা। এখন সংসারের কাজকর্ম ও রিমির বাবার সেবাযত্নের জন্য একটা লক্ষ্মী জামাই অত্যাবশ্যক।
এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। পাত্রীপক্ষ দলবল নিয়ে হাজির হলো পাত্রের বাড়িতে। জামিল যথারীতি চা নাস্তা নিয়ে এলো সবার সামনে। একরাশ লজ্জা নিয়ে, চোখ দুটি মেঝের দিকে নিবদ্ধ করে, বাতিল হবার সমূহ সম্ভাবনা নিয়ে ধকধক বক্ষে জামিল পরীক্ষকদের সামনে বসে রইলো। এখনই অগ্নিপরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। চতুর্দিক থেকে নানান প্রশ্নের বান ছুটে আসছে। কি কি রাঁধতে পারো? সমুচা বানানোর রেসিপিটা বলো তো, কালোজাম আর কালোজামের মধ্যে পার্থক্য কি? রসগোল্লাকে রসগোল্লা বলে কেন? চা আর কফির মধ্যে পার্থক্য কি? আলো চাল আর মোটা চালের তফাৎ কি? আরো এ রকম অজস্র গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। মৌখিক পরীক্ষার পরে শুরু হলো প্র্যাকটিকেল। একটু হেঁটে দেখাও, জুতোটা খোলো তো দেখি পায়ের আঙুল কয়টা। দাঁত দেখতে হবে, একটু দাঁত বের করে হাসো। জামিল যন্ত্রের মতন পরীক্ষা দিয়ে যেতে লাগলো। অবশেষে জামিলকে তাদের পছন্দ হয়েছে এই ফলাফল ঘোষিত হলো। খুঁত ধরতে চাইলে অনেকই ধরা যেতো। তবে পাত্র দেখে দেখে সময়ক্ষেপণের সময় নেই আর। একে তো রিমির বয়েস বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে তার বাবা অসুস্থ, সংসার অচল। সুতরাং বিয়ের কথা আজই পাকা হয়ে গেল। রিমিদের চাহিদা সামান্য। রিমির মোটর সাইকেল চালানোর খুব শখ। আগেরটা পুরনো হয়ে গেছে। তাই সে একটা নতুন মোটর সাইকেল চায়। আর একটা মোভাডো ঘড়ি। রাহেলা বানু চান মাত্র একটা ৬০ ইঞ্চি এলসিডি টিভি, মাত্র একটা ফ্রিজ। আর কনেযাত্রী মাত্র হাতেগোনা ক’জন, মাত্র ১৫০০ জন। জামিলের মা-বাবা অনেক কষ্ট করে, ধারকর্জ করে সবকিছুর আয়োজন করলেন। যৌতুকগুলিও নগদে দেবার ব্যবস্থা করলেন। কী আর করবেন তারা! পুত্রসন্তান জন্ম যখন দিয়েছেন এ সকল লোকসানের স্বীকার তো হতেই হবে।
বিয়ে হয়ে গেল। মা-বাবা, ভাইবোন সবাইকে ছেড়ে জামিল চলে গেল বৌয়ের বাড়ি। বিদায়ের সময় অনেক কাঁদলো বেচারা। বিয়ের পর কয়েকদিন বেশ কাটলো। তারপরে শুরু হলো আসল জীবন। জামিলের লেখাপড়া শিকেয় উঠলো। জামাই ইউনিভার্সিটিতে পড়তে চলে গেলে ঘরের কাজ করবে কে? ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে পরনারীদের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করে পড়ালেখা করবার দরকারই বা কি? অত পড়ে কি হবে? পুরুষ মানুষের অত পড়ার দরকার কি? পুরুষ মানুষ ফিজিক্স পড়ে কি করবে? গার্হস্থ বিজ্ঞান বা রসায়ন হলেও একটা কথা ছিল। সংসার ও রান্নার কাজে লাগতো। রান্নাও যেহেতু এক প্রকারের রসায়ন। আহা, জামিলের কত শখ ছিল সে কলেজে পড়াবে। তার সকল আকাঙ্ক্ষা চুলোয় পুড়ে ছাই হলো। সকল চাওয়া ধোঁয়ার সাথে উড়ে গেল। কী আর করার? তার একার তো এমন হয়নি। বেশির ভাগ ছেলেদের জীবনই তো এমন। তাদের নিজেদের ইচ্ছে, জীবনের উদ্দেশ্য বলে কিছু থাকে না। ঘরের চার-দেওয়ালের মধ্যে থেকে রান্না, কাপড় ধোয়া, আর সবার সার্বক্ষণিক সেবা করাই জামিলের জীবন। সবার অন্তর্বাসটা পর্যন্ত জামিলকে ধুতে হয়। এত যত্নের সাথে কাজ করে জামিল, তবুও নাকি তার শুধু পান থেকে চুন খ’সে যায়। সবাই পদে পদে গঞ্জনা করে, ভুল না হলেও ভুল ধরে। ভুল হলো না কেন? এটাও একটা ভুল। মাছে ধনেপাতা বেশি দিয়েছ কেন? রুটি এত পাতলা কেন? ভাত এত ঝরঝরে কেন? চমচম এত মিষ্টি কেন? সমুচা এত মচমচে কেন? ডালপুরিতে ডাল দিয়েছ কেন? জামিল হাঁপিয়ে ওঠে। তার মনে মেঘ জমে। চোখে শ্রাবণ নামে। রিমিরও কোনো সময় নেই জামিলের জন্য। কখনও তাকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যায় না। তাদের বাড়ি থেকে দেওয়া মোটর সাইকেলে রিমি একা একা লং ড্রাইভে যায়। জামিলকে নিয়ে যায় না। জামিলের এত শখ মোটর সাইকেলে চড়ার। রিমি তার প্রতি কেমন যেন উদাসীন। দুদণ্ড বসে তার সাথে একটু ভালোবাসা বা সুখদুঃখের কথা বলে না। একটুও রোমান্টিক নয়। তার মিটিং থাকে। ব্যবসায়ের কাজে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। অনেক রাত করে বাড়ি ফেরে রিমি।জামিল বিরহী পাখির মতন একা ছটফট করে। রিমির মদ গাঁজার অভ্যাসও আছে। জামিল এসবের গন্ধও সহ্য করতে পারে না। আহা, পুরুষ হবার এত জ্বালা! সবাই কত মজা করে এলসিডি টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখে। জামিল কাজকর্ম সেরে একটু টিভির সামনে এলে শাশুড়ি বলেন, জামাই কয়েকটা শিঙারা ভেজে আনো তো।সিঙারা খেয়ে খেয়ে সিরিয়াল দেখার মজাই আলাদা।
দেখতে দেখতে ওদের বিয়ের চার বছর পার হয়ে গেল। এখনো তাদের কোনও বাচ্চাকাচ্চা হলো না। এ জন্য সারাদিন গঞ্জনা সইতে হয় জামিলকেই। জামিল রিমিকে বললো, চলো আমরা দু’জনে মিলে ডাক্তারের কাছে যাই। রিমি রেগে গিয়ে বলল, আমার কোনো সমস্যা নেই। মেয়ে মানুষের কীসের সমস্যা? এসবক্ষেত্রে সমস্যা থাকে পুরুষের। ওদিকে রিমির মা-বাবা তার জন্য নতুন পাত্র দেখা শুরু করে দিয়েছে। বাঁজা জামাই দিয়ে তাদের জীবন কেটে যাবে নাকি? ঘরে কোনও নাতিপুতি নেই। কেমন অলক্ষুণে কথা। জামিল নীরবে চোখের জল ফেলে। রিমিকে বলে, তুমি আবার বিয়ে করতে পারবে? আমার ভালোবাসার কি কোনোই মূল্য নেই? রিমি বলে, আমার জীবন প্রবাহিত না হয়ে এখানেই থেমে যাক; আমি নির্বংশ হয়ে থাকি সেইটেই কি তুমি চাও? জামিলের বুকে মোচড় দেয়। নীরব নিষ্ক্রিয় বারিধারা বইতে থাকে তার শেভ না করা অযত্নে বেড়ে ওঠা দাড়ির ফাঁকে ফাঁকে। একদিন রিমি ধুমধাম করে নতুন দ্বিতীয় বর নিয়ে এলো। জামিলের বুক ভেঙে গেল। শেষ পর্যন্ত তাকে সপতির ঘর করতে হবে! কী আর করবে সে। পুরুষ হয়ে জন্মেছে যে! তার সপতির নাম রাজা। সত্যিই যেন সে এ সংসারে রাজা হয়ে এসেছে। সবার কত আহ্লাদ তাকে নিয়ে। রিমি জামিলের বাবার দেওয়া মোটর সাইকেলে রাজাকে নিয়ে ঘুরতে যায়। তাকে কত নতুন ফ্যাশনের জিনিসপত্র কিনে দেয়। আর জামিল পুরনো লুঙ্গি পরে থাকে। তাকে একটা নতুন লুঙ্গি পর্যন্ত কিনে দেয় না। তার সপতি রাজাও তাকে কেবল কাজের হুকুম জারি করতে থাকে। জামিল ভাই, আমার কাপড়গুলি গুছিয়ে কোথায় রেখেছ? জামিল ভাই, আমার বিছানার চাদরটা ভালো করে ধুয়ে দিয়ো তো। জামিল যেন এ সংসারে সবার ক্রীতদাস। জামিলের বুকে পিনপিনে ব্যথা ওঠে।
দ্বিতীয় বরের সাথে আরো ৫ বছর কেটে গেল রিমির। দুটি বর থাকার পরেও এখনও তার কোনো বাচ্চা হলো না। রিমির বয়েস হয়ে গেল ৪৮ বছর। তার মেনোপজও হয়ে গেলো ইতোমধ্যে। রিমির মা বললে, কী মন্দ জামাই-ভাগ্য আমাদের! দুটো জামাই-ই বাঁজা। রিমির জন্য আবার বর দেখতে হবে। রাজা আর রিমি দুই সপতিতে শাশুড়িকে বললো, আম্মা রিমির তো মেনোপজ হয়ে গেছে। ওর আর বাচ্চা হবে কীকরে? যতই বিয়ে দেন না কেন, কোনো লাভ নেই। শাশুড়ি ধমক দিয়ে বললেন, চুপ থাকো তোমরা। অভদ্র বেয়াদব বেটাছেলে কোথাকার। মেয়েদের মেনোপজ হলেও বাচ্চা হতে সমস্যা হয় না। তোমরা বাঁজা সেটাই বলো। যতো সমস্যা সব তো পুরুষদেরই।
আপু গল্পটি আমি নারী বিষয়ক পাক্ষিক অনন্যার জন্য নিলাম। প্রকাশিত হলে জানাবো। আর আপনার প্রকাশে আপত্তি থাকলে এখানে অথবা আমাকে টেক্সট করে জানাবেন প্লিজ। শুভেচ্ছা রইল।
@মোজাফফর হোসেন, কোনো আপত্তি নেই আমার। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
জানি না কোন অব্যক্ত বেদনা থেকে এই লেখার প্রেরণা পেয়েছেন, তবে দিন বদলের হাওয়ায় এমন দিন আসুক – এই কামনায়….
ভাল থাকবেন। (Y)
আমি নিজেরে জামিলের জায়গায় কল্পনা কইরা কাপ্তাছি আর রোমাঞ্চিত হইতাছি।লেখিকার জন্য (F)
@রতন কুমার সাহা রায়,
আপনি কেবল কল্পনা করেই কাঁপছেন। ভেবে দেখুন, যারা সত্যিই এই অবস্থার ভেতরে জন্মে মরে যায়, তারা সারা জীবন কেমন ত্রাসে কাঁপতে থাকে।
পাঠকের জন্যও (F) (F)
যেমন নারীদের প্রতি এখন এমনটা হচ্ছে তখন পুরুষের প্রতি এমনটা হবে। অর্থাৎ এক পক্ষ সব সময়ই লাঞ্ছিত হচ্ছে। যেটা করা দরকার সেটা হচ্ছে আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি পালটাতে হবে। নারীপুরুষ সবাইকে সমভাবে সংসার সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে। বর্তমান আধুনিক যুগে আমি মনে করি কারো দায়িত্ব ছোট করে দেখার মত নয়। আর গটা করে পাত্রী দেখতে যাওয়া পৃথিবীর অনেক দেশেই শেষ হয়ে গেছে, আমাদেরও হবে কিছু সময় লাগবে।কেও যদি জরিপ করেন দেখবেন আমাদের দেশে এখন বেকার মহিলাদের চেয়ে আয় রোজকার করা মহিলাদের পাত্রী হিসেবে অগ্রগণ্য।
@নিগ্রো,
এই বিকট বিভৎস জাতিবিদ্বেষী নিকে আপনার আর কোন মন্তব্য প্রকাশ করা হবে না।
ধন্যবাদ
মুক্তমনা মডারেটর।
@মুক্তমনা মডারেটর,
নিকটা বীভৎস, এটা ঠিক। কিন্তু কেন উনি এই নিক নিলেন তার ব্যাখ্যা চাওয়া উচিৎ। হতে পারে স্যটায়ার। যেমন “ক্রিতদাস” নিক নেয় অনেকে এটি বুঝাতে যে মানব সমাজে এখনও আধুনিক ক্রিতদাস প্রথা আছে। ব্যাখ্যা পাওয়ার পরে সন্তস্ট জনক উত্তর না পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নিলে মনে হয় ভালো হয়।
***** নাকি মাতব্বরি করে ফেললাম !! ******* 😛
ঝুমুদি,
এমন একটা লেখার প্রয়োজন ছিলো…
এ গল্পটা প্রতিটা পুরুষকে পড়ালে তারা বুঝতে পারতো যুগ যুগ ধরে তারা কি মারাত্নক অনাচার করছিলো…
আমিও চাই মানবতার জয় হোক…
@ঋতানৃত তূর্য্য, ধন্যবাদ লেখাটি পড়ে মতামত জানানোর জন্য।
আমি এমনই চাই, শুধু নির্যাতনের অংশটুকু বাদ দিয়ে। ঘর সংসার ছেড়ে বাইরে সারাদিন চাকরি করতে কেমন যে লাগে কি বোঝাবো? তার চাইতে আমার বউটা যদি আমার সমান বেতনের চাকরি করতো, তাহলে আমি সত্যিই চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে থাকতাম। রান্না করতাম, বাচ্চা সামলাতাম, বই পড়তাম। আহ! আমার ধারণা, তাহলে বাচ্চাটা আরও বেশি পুষ্টিকর খাবার পেত, শান্ত থাকতো, ঘরদোর বেশি গোছালো থাকতো (বউকে দোষ দিচ্ছি না)। বউকে ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখতাম, তাহলে তো আর অশান্তির কিছু থাকতো না। গারো সমাজে মাতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা তো ঘরেই থাকে, আর মেয়েরা বাইরে কাজ করে। তাদের তো কোন জটিলতা নেই। আহা, যদি মুসলমান পরিবারে না জন্মে গারো পরিবারে জন্মাতাম, তাহলে জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যেত।
গল্প পড়ে হাসি ও মজা দুটোই পেলাম।
অনেকটা বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ এর মতন মনে হল।
আপনার গল্পটা পুরুষদের কিছুটা হলেও বুঝতে সাহায্য করবে যে তারা কতটা অমানবিক নারীর প্রতি!
তবে নারী বা পুরুষ যেই হোক না কেন অমানবিক আচরণ কারো ক্ষেত্রেই কাম্য নয়।
সবশেষে আপনাকে ধন্যবাদ।
@আম্মানসূরা,
কেউ যদি কারুর প্রতি অমানবিক অপরাধ করে থাকে আর সেই অপরাধীর বিচার যদি অদালতের কাঠগড়ায় করা হয়, তবে সেই বিচারের রায় কি অতি কোমল হওয়া বাঞ্ছনীয়?
যাক ধন্যবাদ আপনাকেও।
@তামান্না ঝুমু,
অপরাধীর বিচারের ক্ষেত্রে আমার কোন কোমল অনুভূতি নেই, কিন্তু খারাপের প্রতিযোগিতা আমি করতে চাই না। আমি কাঁদা ছোড়ার প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে চাই না, আমি ফুল ছোড়ার প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে চাই।
@আম্মানসূরা, আমার মনের কথাটাই বলেছেন। সব পুরুষ তো আর স্ত্রীর উপর নির্যাতনকারী নয়।
@আব্দুল মান্নান,
ধন্যবাদ।
আমার মতের সাথে একমত হবার জন্য।
@আম্মানসূরা,
অপরাধীর বিচারের ক্ষেত্রে কোনো কোমল অনুভূতি নেই আর ফুল ছোঁড়ার প্রতিযোগিতা কথা দুটি পরস্পর স্ববিরোধী হয়ে গেল না?
তবে কি ঘৃণ্য অপরাধীকেও ফুলের মালা পরাতে হবে? খারাপ কাজের প্রতিযোগিতার কথা ত আমিও বলিনি। আমি বলেছি অনাদিকাল থেকে চলে আসা অপরাধের অপরাধীদের বিচারের কথা। খুনের শাস্তি কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশেই মৃত্যুদণ্ড বা যাবত জীবন এখনো প্রচলিত আছে। অপরাধের মাত্রানুযায়ী বিচার হতে হবে। আমি সেইটেই বলেছি।
@তামান্না ঝুমু,
না হয়নি, কারন শুধুমাত্র অপরাধীকে শাস্তি দিতে গিয়ে পুরুষ জাতিকে অবহেলা, ঘৃণা বা খারাপ কামনা করা উচিত না। পুরুষ রা অনেক অমানবিক আচরণ করেছে এটা যেমন সত্যি আবার এটাও তো মিথ্যা নয় যে সতীদাহ, বিধবা বিবাহ এর মতন মারাত্নক অপরাধ গুলো দূর করেছে কিছু মানব পুরুষ!! এবং বর্তমানেও আমি সেই মানব পুরুষদের গরজে উঠতে দেখি যখন কোন নারী অবহেলিত হয়। তবে খারাপ এর বিকাশ ও প্রকাশ বেশী বিধায় খারাপি টা নজরে আসে। নির্যাতনের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও শাস্তি তে আপত্তি নেই কিন্তু কক্ষনই নির্যাতন কারী হয়ে নির্যাতন করে নয় তাহলে ভালো আর মন্দের কোন পার্থক্য থাকে না!
@আম্মানসূরা,
রোকেয়া মনে হয় না তামান্না ঝুমুর মত এতটা আশাবাদী ছিলেন।উনিতো শুধুই একটা সুন্দর লেখা লিখেছিলেন। ঝুমু তো এটা বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। 😀
@অর্ফিউস,
তাহলে বোঝেন অবস্থা!!! পুরুষরা মমতাময়ীর মমতা নষ্ট করে নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে । ভাই সাবধান 😛
@আম্মানসূরা, 😛 সাবধানেই আছি ভাই, তবে খানিকটা ডরেও ছিলাম। তবে উপরে দেখেন লেখক আরেক মন্তব্যে নিজের কথা পরিষ্কার করে দিয়েছেন, তাই খানিকটা শান্তি লাগতেছে :))
ভয়ংকর লেখা !!! ভয় পাইছি … ;-(
@তারিক,
ভয় পাইলে বুকে ফুঁ দেন ভাই।
খাইসে, নারীস্তানের কল্প কাহিনী লিখলেন, নাকি পুরুষদের কে নারীদের যে কি দুর্দশা সেইটা চোখে দেখিয়ে দিলেন? যেটাই হোক সুন্দর লিখেছেন (Y)
@অর্ফিউস,
এই কল্পকাহিনী যেন বাস্তব রূপ লাভ করে অদূর ভবিষ্যতে। অনাদিকাল থেকে আজ অবধি পুরুষ কর্তৃক নারীর যে দুর্দশা সেই দুর্দশা হয়ত পুরুষের জন্যও অপেক্ষা করছে। কারণ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়েই থাকে।
@তামান্না ঝুমু, বাপরে বাপ ম্যাডাম, দিলেন তো মজাটা নষ্ট করে। 🙂
আচ্ছা আপনি কি সত্যি Feminist নাকি Misandrist ? ২য়টাই মনে হচ্ছে সঠিক। সেক্ষেত্রে আপনার কল্পনার কোন ভবিষ্যৎ তো আমি দেখতে পাচ্ছি না। না নিকট ভবিষ্যতে না আজ থেকে ১ লাখ বছর পরে।
এটাতো পুরাই আসিফ মহিউদ্দিনের হাজার বছরের হিসাব নিকাশের ব্যাপারের মত, যদিও তিনি পরিষ্কার করে আমাকে উত্তর না দিয়ে পিছলে গেছেন। নাহ এভাবে হবে ভাবছেন কেন? পুরুষদের জন্য দুর্দশার স্বপ্ন দেখলে কি পুরুষরা ( কিছু কিছু Cuckold Fetish এ আক্রান্ত মানসিক ভারসাম্যহীন পুরুষ ছাড়া) বসে আঙ্গুল চুষবে? না তা চুষবে না, সেক্ষেত্রে নারীবাদের ভবিষ্যৎ বলে কিচ্ছু থাকবে না।
নর্ডিক দেশ গুলোতে নাকি কিছুটা এইসব কাজ কারবার হয়, যেমন ধরেন যে বউ পেটানোর হুমকি দিলেন, অমনি আপনাকে পুলিশ নিয়ে জেলে ভরে দিল। গুগল করেন পেয়ে যাবেন। কিন্তু সেটা কতদিন চলবে? এক মাঘে শীত যায় না জানেন তো?
এইভাবে এইসব ফেটিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে গেলে নারীবাদী প্রোজেক্ট মার খেয়ে যাবে অদূর ভবিষ্যতেই। সুখের বিষয় যে বেশিরভাগ নারীবাদীই হাজার বছরের দেনা পাওনা মেটাবার চেয়ে, নারীদের ভাল ভবিষ্যৎ নিয়েই চিন্তা করতে ভাল বাসেন, যেটা আসলে বাস্তব সম্মত। তাই রক্ষা। না হলে…….
আপনি কি আশা করেন যে এইটাও অদুর ভবিষ্যতে হয়ে যাবে? মানে মেনোপজ হলেও মেয়েদের বাচ্চা হতে সমস্যা হবে না? :-s
@অর্ফিউস,
চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে এটা অদূর ভবিষ্যতে সম্ভব হতেও পারে। আশা করতে ক্ষতি কি?
তবে আমি এই লেখায় এই কথাটা এই অর্থে বলেছি যে, পুরুষ শাষিত সমাজে সব দোষ নারীর উপর বর্তায়। কোনো কাপলের বাচ্চা না হলে সে দোষও সাধারণত নারীর উপরেই পড়ে। একবার ভাবুন তো, যদি আমাদের সমাজ পুরুষ শাষিত না নারী শাষিত হতো তবে এর উল্টোটাই কি হতো না? নারীর দোষও পুরুষের উপর বর্তাতো। শোষিত নারীর উপরে শোষক পুরুষের যে কোনো অবান্তর ব্যাপারেই দোষারোপের বিষয়টিই বলতে চেয়েছি।
@তামান্না ঝুমু,
কোন ক্ষতি নেই, কিন্তু সেক্ষেত্রে মেয়েটি মেনোপজড হয়ে গেছে এটা বলা সঠিক হবে কি? বিজ্ঞান নিশ্চয়ই মেয়েদের উর্বরতার সময়সীমা বাড়াতে পারে, কিন্তু মেনোপজড হয়ে গেলেও কি করে বাচ্চা হবে যদি তার ডিম্বানুই না থাকে?
আপনার লেখাটার অর্থ আমি বুঝছি। কিন্তু মাঝে মাঝে মন্তব্য করতে গিয়েই পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করে বসছেন, এইখানেই বুঝতে সমস্যা হচ্ছে।
আপনার বক্তব্য যদি হয় নিচেরটা সেক্ষেত্রে আমি শতভাগ একমত আগেই বলেছি। দেখুন আমাকে করা আপনার মন্তব্যটা আবার
এইটাই হল সব কথার আসল কথা। তা না সব পাঠকের উত্তরে কি সব বলছেন আর নতুন করে বিতর্ক শুরু হচ্ছে । তারচেয়ে থাকতে দিন না এটাকে সুন্দর একটা রুপক লেখা হয়ে, যেন এটা পড়ে কিছু বিবেকবান পুরুষ বুঝতে পারে যে নারী হয়ে জন্মালে তাদের কপালেও এমন অকারন গঞ্জনা সইতে হত। সেক্ষেত্রে আপনার লেখাটি অনেকটাই কাজ দেবে বলে আমার বিশ্বাস! ভাল থাকেন ধন্যবাদ! 🙂
@অর্ফিউস,
নারীবাদ বা পুরুষবাদ কোনোটাতেই আমি আস্থাশীল নই। এর যে কোনো একটি প্রতিষ্ঠিত হোক তাও আমি চাই না। নারী বা পুরুষ কেউই বাদ যাক তা আমার কাম্য নয়। আমি চাই এই পৃথিবীতে লিঙ্গ ও অন্যান্য সকলকিছুর ঊর্ধ্বে মানবতার জয় হোক।
@তামান্না ঝুমু,
এইত এইবার বলেছেন লাখ কথার এক কথা। আমিও এটাই চাই মনে প্রাণে। মানবতার জয় হলে আর মানবাধিকার সংরক্ষিত হলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। (Y)
খুব ঝরঝরে লেখা,পড়ার পর মনে হচ্ছে যদি সত্যি এমন কিছু করা যেত।
@প্রাক্তন আঁধারে,
এমনটি যেন সত্যিই হয় একদিন সে স্বপ্নই দেখি আমি। অথবা না-ই হলো। তবুও স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি কি? স্বপ্নচারী আমি। পাথরেও নাকি ফোটে। তবে এমনটিও নিশ্চয়ই হবে এই আশা রাখি।
ধন্যবাদ আপনাকে।