শহর জুড়ে কারফিউ চলছে। ভোরের প্রথম কিরণ যখন প্রথম পড়েছে সবুজ পাতার উপর তখন থেকে শুরু হয়েছে কারফিউ, চলবে রাতের অন্ধকারের শেষ ফোঁটাটি মিলানো পর্যন্ত, শেষ হবে নতুন করে শুরু হবার জন্য- পরবর্তী সূর্যের সাথ ধরে মাঠে-ঘাসে লেপ্টাবার জন্য।
শহর স্তম্ভিত, স্তম্ভিত জলপাই, খাকী ও কালো অন্ধকারেরা, বিস্মিত সময়-সত্ত্বা বিকিয়ে পেট চালানো মানুষেরা- কি স্পর্ধা এই দুজনের! শুধু অকারণ নাচছে বৃষ্টির প্রথম ফোটার মত সজীব কতগুলো শিশু- হয়ত ওরা কারফিউ বোঝেনা বলেই। না বোঝার মাঝেও বুঝি বেশ একটা আনন্দ আছে। ‘এ অন্যরকম কিছু’ এইটুকু বুঝলেই চলে, এইটুকু বোঝার পথ ধরেই নাকি আনন্দ ঢুকে যেতে পারে রোমে রোমে। ওদের একজনের নাম তরুণ, অন্যজন তরুণী। নীল আকাশের সাথে পরামর্শ করে তারা এ ধৃষ্টতা করেছে, বলে দিয়েছে আজ থেকে চলবে কারফিউ। জলপাই, খাকী বা কালো আঁধারেরা অবশ্য পাত্তা দেয়না ওদেরকে, ওরা জানে কাকে পাত্তা দিতে হয়না। কারফিউ অগ্রাহ্য করে যখন পথে বেরিয়েছে তখন তারা জানতেও পারেনি শত শত স্টেনগান অপেক্ষা করছিল তাদেরকে ঝাঝরা করে দেবার জন্য। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা দেখে তাদের শরীর-বুক ভেসে যাচ্ছে, ভেসে যাচ্ছে আকাশ নীল রঙে। মনে হচ্ছে টুকরো টুকরো আকাশ যেন লেপ্টে আছে তাদের শরীরে। আহত শরীরে তাদেরকে ঘাসের উপর লুটিয়ে পড়তে দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ে দুর্বৃত্তরা। শিশুদের সেই হাসি যেন আহতদের বয়ে নিয়ে যায় সেখানে, যেখানে ঘাসের উপরে আকাশ শুয়ে আছে।
পাড়ার সন্ত্রাসী মহাশয় বাড়ি থেকে বেরোতেই পড়লেন একরাশ গোলাপ ফুলের মুখোমুখি, ফুলগুলো তাকে যেতে দেবেনা পথে- আজ কারফিউ, আজ কেউ কাজে বেরোবেনা। খিস্তি খেউড়ের দঙ্গল দিয়েও যখন ফুলগুলোকে হটানো গেলনা তখন সে হাত দেয় কোমরে গোজা পিস্তলের বাটে। পিস্তল বের করে দেখে সেটার আগায় বসে আছে ছোট্ট একটা বিড়ালছানা! চোখাচোখি হতেই হেসে ফেলে ছানাটি। মাস্তানটি ছানাটাকে সরিয়ে দিতে চায় জোর করে, আর ঠিক তখনি ছোট্ট বিড়ালছানাটি হয়ে ওঠে রাজকীয় এক বাঘ! কামড়ে ধরে মাস্তানটির বুকে, ঠিক যেখানে হৃৎপিন্ড থাকে। তা থেকে বের হওয়া সাদায় ভেসে যায়, ঢেকে যায় মাস্তানের কালো শার্ট। পথের পাশে দাড়িয়ে থাকা যুবক-যুবতী অবাক চেয়ে থাকে।
আজকে তবু সময় বেঁচতে পথে বেরিয়েছে কর্মজীবীরা, কারণ ছুটি নেয়া কাকে বলে তারা ভুলে গেছে। যাদের থামার সময় নেই তাদেরকে থামায় কি সাধ্য এই তরুণ-তরুণীদের? অবুঝ শিশুদের? শহরের মাঝ দিয়ে তাদের বাস, রিক্সা ও গাড়িগুলো ছুটছে- ছুটতে ছুটতে হঠাৎ সেগুলো বেলুন হয়ে যায়! উড়ে যায় আকাশে যেখানে সাদা মেঘ থেকে ঝরে সবুজ বৃষ্টি। ভাসিয়ে নিয়ে যায় অফিসের ফাইল আর ল্যাপটপ। তাদের মনে হতে থাকে তারা আবার জেনেছে ছুটিকে। পশলা পশলা বৃষ্টির ফাকে ফাকে রোদের সাথে তারা আওড়ায়,
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করবার অবসর আছে…
যুবক-যুবতী ও শিশুরা আজ বেরিয়েছে কাজে। কেউ কারফিউ ভাঙলেই তাকে শাস্তি দিতে হবে, তার হৃদয়ের অন্ধকুঠুরিতে বন্দী থাকা সাদা, সবুজ বা আকাশ রঙকে টেনে হিচড়ে বের করে তা মেখে দিতে হবে শরীরে।
আজ উত্তেজনাহীন শুধু ভবঘুরেরা, তারা পথের পাশে পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। কারণ আজ অলস সকাল বা দুপুর বা সন্ধ্যে বলে কিছু নেই। আলস্য উপচে পড়ছে পুরো দিনটি থেকে। অলস ঘুমে ব্যস্ত থাকায় জানতেও পারলনা আজ মাছিদের জন্যেও কারফিউ। মাছিরা বিমর্ষ মুখে বসে আছে বাড়িতে কারফিউ খতম হবার আশায়। ভবঘুরেরা তা জানেনা বলেই অভ্যাসবশত একটু পরপর পা নাড়াচ্ছে মাছি তাড়াতে।
সন্ধ্যে হয়ে এলো, চাঁদ চোখ টিপে দিয়ে তরুণকে ইশারা দিল সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। একটা তারার ফুল হাসিমুখে টুপ করে খসে পড়ল তরুণের হাতে, তরুণ গেল তাকে জায়গামত পৌঁছে দিতে- তরুণীর খোপায়। আর তখন… ‘একটি কথার দ্বিধা থরথর চূড়ে ভর করেছিলো সাতটি অমরাবতী’। অতঃপর তারার বৃষ্টি ঝরল…
কারফিউ চলবে। ভোরের প্রথম কিরণ যখন প্রথম পড়বে সবুজ পাতার উপর তখন থেকে শুরু হবে কারফিউ, চলবে রাতের অন্ধকারের শেষ ফোঁটাটি মিলানো পর্যন্ত, শেষ হবে নতুন করে শুরু হবার জন্য- পরবর্তী সূর্যের সাথ ধরে মাঠে-ঘাসে লেপ্টাবার জন্য।
নোটটি খুব মন মেদুর। শাবাশ! (Y)
খুব জটিল মনে হচ্ছে কিছুই বুঝলাম না :-X
@মহন, দুঃখিত 😛
রূপান্তরের রঙগুলো খুব উজ্জ্বল আর জমজমাট। এমনকি কালোটাও।
চলুক। মানুষ যা কিছু ভালবাসবে, কারফিউ, বিবর্তিত রঙ অথবা অন্যরকম কিছু, তা ই তো থাকবে। বাকি সব ঝরে যাবে।
অনেক দিন পর দেখলাম তাই (F)
@কাজী রহমান, ধইন্যবাদ :))
শানে নুজুলটা একটু বুঝিয়ে দেন না। কবিতা যে বুঝিনা তা সবাই জানে। কিন্তু এ যে কবিতার চেয়েও কঠিন মনে হচ্ছে। যাক দেখা যে হল, তাতেই খুশী।
@আকাশ মালিক, এইখানে অবাস্তব ধরণের সুন্দর একটা প্রোপজাল সিন তৈরি করার চেষ্টা করা হইছে।
‘একটি কথার দ্বিধা থরথর চূড়ে ভর করেছিলো সাতটি অমরাবতী’ , এটা সুধীন্দ্রনাথ দত্তের শাশ্বতী কবিতার একটি লাইন, আমার খুবই প্রিয়, এবং এই ধরণের প্রোপজাল সিনে তরুণীর অনুভূতি বোঝানোর জন্য এর চেয়ে ভাল লাইন আমার মতে আর হয়না। তাই সুধীন্দ্রনাথ থেকে ধার নিলাম আর কি…
লেখাটা বেশ শৈল্পিক মনে হয়েছে। সুন্দর। 🙂
অনেক দিন পর আপনার লেখা দেখে আশাবাদী হয়ে উঠেছি। বই মেলার কাভারেজটা এবারও নিশ্চয় পাব। 🙂
@মইনুল রাজু, থাঙ্কু ভাইয়া।
মেলায় আজ সন্ধ্যা থেকেই যাচ্ছি। আইসা আপডেট দেয়ার ট্রাই করমু। :))
@লীনা রহমান,
আজ বেলা তিনটা থেকেই মেলা প্রাঙ্গনের আশে পাশে ছিলাম। সন্ধ্যার পরই আমি মেলাতে ঢুকি। শুদ্ধস্বরের স্টল খুজে বের করি। স্টল নম্বর ৪৩৫, ৪৩৬, ৪৩৭। আগামীকাল আবার যাবো।
@মাহফুজ, আমি গিয়েছিলাম সন্ধ্যায় কিন্তু কাউকে তো শুদ্ধস্বরের আশেপাশে পেলামনা। আমি ছিলাম সোয়া সাতটা পর্যন্ত। কাল যাচ্ছি সন্ধ্যায়।
যাক অনেক দিন পরে লীনার লেখা পাওয়া গেল। কিন্তু হঠাৎ কারফিউ নিয়া পড়লেন কেন? আপনার লেখা পইড়া প্রথম আলু খুইল্যা দেখলাম – দেশে আবার কারফিউ দিল নাকি!
আপনার লেখাটা পড়লে হুমায়ূন আজাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল বইটার কথা মনে পড়ে যায়। সেখানেও রাশেদ হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে দখেছিল না – জলপাই রঙ এ ছেয়ে গেছে দেশ? 🙂
ওহ, আরেকটা গানের কথাও মনে পড়ল – সুমনের –
মগজে কারফিউ!
@অভিজিৎ দা,
আমিই দেশে কারফিউ দেয়ার তালে আছি 😉
নতুন নতুন অফিসে যাইতাছি তো… আমার ভাল্লাগেনা। তাই কারফিউ দিয়া সব বন্ধ কইরা রাখতে চাই :))