দীর্ঘ এই গণভাষণটি বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন ‘৭৫ এর ২৬ শে মার্চ। এর পররবর্তীতে বঙ্গবন্ধু আর জনসম্মুখে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পাননি। ভাষণটির অনুলিখন প্রকাশিত হয়েছিল ‘৭৯ সালের ১৫ই আগষ্ট উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে প্রকাশিত স্মরনিকায়। এই ভাষণটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, এখানে বঙ্গবন্ধু তার বিরুদ্ধে করা নানা অপপ্রচার এর জবাব দিয়েছেন। পাঠকের সামনে ভাষণটি হবহু তুলে ধরা হলঃ
আমার ভাই ও বোনেরা
আজ ২৬শে মার্চ। ২৫শে মার্চ রাত্রে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাংলার মানুষকে আক্রমণ করেছিল। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা করেছিল। সেদিন রাত্রে বি ডি আরের ক্যাম্পে, আমার বাড়ীতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং চারদিকে আক্রমণ চালায় ও নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশবিক শক্তি নিয়ে। বাংলার মানুষকে আমি ডাক দিয়েছিলাম। ৭ই মার্চ আমি তাদের প্রস্তুত করে দিয়েছিলাম। যখন দেখলাম আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে, সেই মুহূর্তে আবার আমি ডাক দিয়েছিলাম। আর নয়, মোকাবিলা কর। বাংলার মানুষও যে যেখানে আছ, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা কর। বাংলার মাটি থেকে শত্রুকে উৎখাত করতে হবে। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
দুনিয়ার মানুষের কাছে আমি সাহায্য চেয়েছিলাম। আমার সামরিক বাহিনীতে যারা বাঙালী ছিল, তাদের এবং আমার বি ডি আর, আমার পুলিশ, আমার ছাত্র, যুবক ও কৃষকদের আমি আহবান করেছিলাম। বাংলার মানুষও রক্ত দিয়ে মোকাবিলা করেছিল। ৩০ লক্ষ লোক শহীদ হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মা-বোন ইজ্জত হারিয়েছিল, শত শত বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল। দুনিয়ার জঘন্যতম ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল পাকিস্তানী শোষক শ্রেণী। দুনিয়ার ইতিহাসে এত রক্ত স্বাধীনতার জন্য কোন দেশ দেয় নাই, যা বাংলার মানুষ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা পঙ্কিলতা শুরু করলো। যা কিছু ছিল ধ্বংস করতে আরম্ভ করলো। ভারতে আমার এক কোটি লোক আশ্রয় নিয়েছিল। তার জন্য আমরা নিশ্চয়ই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করব। আমি তাদের স্মরণ করি, খোদার কাছে তাদের মাগফেরাত কামনা করি, যারা এদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে, আত্মহুতি দিয়েছে। আমি তাদের স্মরণ করব, যে সকল মুক্তিবাহিনীর ছেলে, যেসব মা-বোনেরা, আমার যে কর্মী বাহিনী আত্মাহুতি দিয়েছিল, শহীদ হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে। এদেশ তাদের সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর যারা জীবন দিয়েছিল বাংলার মাটিতে, আজ তাদের কথাও আমি স্মরণ করি।
এখানে একটা কথা। আপনাদের মনে আছে, পাকিস্তানীরা যাওয়ার পূর্বে ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে, ১৬ই ডিসেম্বরের আগে, কারফিউ দিয়ে ঢাকা এবং অন্যান্য জায়গায় আমার বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করব, সম্পদ ধ্বংস করব, বাঙালী স্বাধীনতা পেলেও এই স্বাধীনতা রাখতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা হয়েছে। বাংলার লোক স্বাধীন হয়েছে। বাংলার পতাকা আজ দুনিয়ায় ওড়ে। বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘের সদস্য। বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ গোষ্ঠীর সদস্য, কমনওয়েলথের সদস্য, ইসলামী সামিটের সদস্য। বানলাদেশ দুনিয়ায় এসেছে, বাংলাদেশ থাকবে, কেউ একে ধ্বংস করতে পারবে না।
পাকিস্তানের আচরণ
ভাইয়েরা-বোনেরা আমার, আমি চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু একটা ওয়াদা আমি রাখতে পারি নাই। জীবনে যে ওয়াদা আমি করেছি, জীবন দিয়ে হলেও সে ওয়াদা আমি পালন করেছি। আমরা সমস্ত দুনিয়ার রাষ্ট্রের সংগে বন্ধুত্ব চাই। আমরা জোটনিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাস করি, আমরা কো-একজিস্টেন্সে বিশ্বাস করি। আমরা ভেবেছিলাম, পাকিস্তানীরা নিশ্চয়ই দুঃখিত হবে, আমার সম্পদ ফেরত দেবে। আমি ওয়াদা করেছিলাম, তাদের বিচার করব। এই ওয়াদা আপনাদের পক্ষ থেকে খেলাপ করেছি। তাদের আমি বিচার করিনি। আমি ছেড়ে দিয়েছি এই জন্য যে, এশিয়ায়-দুনিয়ায় আমি বন্ধুত্ব চেয়েছিলাম। দুঃখের বিষয়, পাকিস্তানীরা আমার সম্পদ এক পয়সাও দিল না। আমার বৈদেশিক মুদ্রার কোন অংশ আমাকে দিল না। আমার গোল্ড রিজার্ভের কোন অংশ আমাকে দিল না। একখানা জাহাজও আমাকে দিল না। একখানা প্লেনও আমাকে দিল না। কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পদ এক পয়সাও দিল না। এবং যাওয়ার বেলায় পোর্ট ধ্বংস করলো, রাস্তা ধ্বংস করলো, রেলওয়ে ধ্বংস করলো, জাহাজ ডুবিয়ে দিল। শেষ পর্যন্ত কারেন্সী নোট জালিয়ে বাংলাদেশ কে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। পাকিস্তানীরা মনে করেছিল, বাংলাদেশকে যদি অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করতে পারি তাহলে বাংলাদেশের মানুষকে দেখাতে পারব যে, তোমরা কি করছো।
ভুট্টো সাহেব বক্তৃতা করেন। আমি তাঁকে সম্বর্ধনা দিয়েছিলাম লাহোরে আমাকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়েছিল বলে। ভুট্টো সাহেব বলেন, বাংলাদেশের অবস্থা কি? ভুট্টো সাহেবকে আমি জিজ্ঞাসা করি, ফ্রণ্টিয়ারের পাঠানদের অবস্থা কী? ভুট্টো সাহেবকে জিজ্ঞাসা করি, বেলুচেস্তানের মানুষের অবস্থা কী? এরোপ্লেন দিয়ে গুলী করে মানুষ হত্যা করছেন। সিন্ধুর মানুষের অবস্থা কী? ঘর সামলান বন্ধু, ঘর সামলান। নিজের কথা চিন্তা করুন। পরের জন্য চিন্তা করবেন না। পরের সম্পদ লুট করে খেয়ে বড় বড় কথা বলা যায়। আমার সম্পদ ফেরত দেওয়া না পর্যন্ত তোমার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হতে পারে না। তোমরা আমার কি করেছো? আমি সবার বন্ধুত্ব কামনা করি। পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে আমার কিছুই বলার নাই। কিন্তু আমার সম্পদ তাকে দিতে হবে।
আমরা চাই সকলের বন্ধুত্ব
আমি দুনিয়ার প্রত্যেক রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব চাই, কারো সাথে দুশমনি করতে চাই না। সকলের সাথে বন্ধুত্ব করে আমরা শান্তি চাই। আমার মানুষ দুঃখী, আমার মানুষ না খেয়ে কষ্ট পায়। আমি যখন বাংলাদেশ সরকার পেলাম, যখন জেল থেকে বের হয়ে এলাম, তখন আমি শুধু বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষই পেলাম। ব্যাঙ্কে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না। আমাদের গোল্ড রিজার্ভ ছিল না। শুধু কাগজ নিয়ে আমরা সাড়ে সাত কোটি লোকের সরকার শুরু করলাম। আমাদের গুদামে খাবার ছিল না। গত তিন চার বৎসরে না হলেও বিদেশ থেকে ২২ কোটি মণ খাবার বাংলাদেশে আনতে হয়েছে। বাইশ শ’ কোটি টাকার মত বিদেশ থেকে হেল্প আমরা পেয়েছি। সেজন্য যারা আমাদের সাহায্য করেছে, সে সমস্ত বন্ধু রাষ্ট্রকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
কিন্তু আর একটি কথা। অনেকে প্রশ্ন করেন, আমরা কি করেছি? আমরা যখন ক্ষমতায় এলাম, দেশের ভার নিলাম, তখন দেশের রাস্তাঘাট যে অবস্থায় পেলাম, তাকে repair করবার চেষ্টা করলাম। সেনাবাহিনী নাই, প্রায় ধ্বংস করে গেছে। পুলিশ বাহিনীর রাজারবাগ জ্বালিয়ে দিয়েছিল। সেই খারাপ অবস্থা থেকে ভাল করতে কী করি নাই? আমরা জাতীয় সরকার গঠন করলাম। আমাদের এখানে জাতীয় সরকার ছিল না। আমাদের Defense department ছিল না, বৈদেশিক department ছিল না, Planning department ছিল না। এখানে কিছুই ছিল না। তার মধ্যে আমাদের জাতীয় সরকার গঠন করতে হল। যাঁরা শুধু কথা বলেন, তাঁরা বুকে হাত দিয়ে চিন্তা করে বলুন, কী করেছি। এক কোটি লোককে ঘরবাড়ি দিয়েছি। রাষ্ট্রের লোককে খাওয়ানোর জন্য বিদেশ থেকে খাবার আনতে হয়েছে। Port গুলোকে অচল থেকে সচল করতে হয়েছে। দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে ২২ কোটি মণ খাবার এনে বাংলার গ্রামে গ্রামে দিয়ে মানুষকে বাঁচাতে হয়েছে।
অধিকার ও দায়িত্ব
এরপরও কথা আছে। আমি মানুষকে বললাম, আমার ভাইদের বললাম, মুক্তি বাহিনীর ছেলেদের বললাম, তোমাদের অস্ত্র জমা দাও। তারা অস্ত্র জমা দিল। কিন্তু একদল লোক-আমার জানা আছে, যাদের পাকিস্তান অস্ত্র দিয়ে গিয়েছিল তারা অস্ত্র জমা দেয় নাই। তারা এসব অস্ত্র দিয়ে নিরপরাধ লোককে হত্যা করতে আরম্ভ করলো। এমনকি, পাঁচজন parliament সদস্যকেও তারা হত্যা করলো। তবুও আমি শাসনতন্ত্র দিয়ে নির্বাচন দিলাম। কিন্তু যদি বাংলার জনগণ নির্বাচনে আমাকেই ভোট দেয়, তাহলে সেটা আমার দোষ নয়। ৩১৫ টি seat এর মধ্যে ৩০৭ টি seat বাংলার মানুষ আমাকে দিল। কিন্তু একদল লোক বলে, কেন জনগণ আমাকে ক্ষমতা দিল? কোনো দিন কোনো দেশ সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে কাউকে এভাবে অধিকার দেয় না। কিন্তু অধিকার ভোগ করতে হলে তার জন্য যে responsibility আছে, সেটা তারা ভুলে গেল। আমি বললাম, তোমরা opposition সৃষ্টি কর। তারা তা সৃষ্টি করলো। বক্তৃতা করতে আরম্ভ করলো। কিন্তু সেই সঙ্গে অন্ধকারে মানুষ হত্যা করতে আরম্ভ করলো। দরকার হলে অস্ত্র দিয়ে আমাদের মোকাবেলা করতে চায়। অস্ত্রের হুমকি দেওয়া হল। মানুষ হত্যা থেকে আরম্ভ করে রেল লাইন ধ্বংস করে, fertilizer factory ধ্বংস করে, জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে তারা এমন অবস্থার সৃষ্টি করলো যাতে বিদেশী agent যারা দেশের মধ্যে আছে, তারা সুযোগ পেয়ে গেল। আমাদের কর্তব্য মানুষকে বাঁচানো। চারিদিকে হাহাকার। স্বাধীনতা পাওয়ার সংগে সংগে সমস্ত দুনিয়ার সমস্ত জিনিষের দাম আস্তে আস্তে বেড়ে গেল। সমস্ত দুনিয়া থেকে আমাদের কিনতে হয়। খাবার কিনতে হয়, কাপড় কিনতে হয়, ঔষধ কিনতে হয়, তৈল কিনতে হয়। আমরা তো colony ছিলাম দুইশ’ বছর ইংরেজদের colony ছিলাম, পঁচিশ বছর পাকিস্তানের colony ছিলাম। আমাদের তো সব কিছুই বিদেশ থেকে কিনতে হয়। কিন্তু তার পরেও বাংলার মানুষ কষ্ট স্বীকার করে কাজ করতে আরম্ভ করেছে। কিন্তু তারা তাদের এগোতে, কাজ করতে দেয় না।
আর একদল বিদেশে সুযোগ পেল। তারা বিদেশ থেকে অর্থ এনে বাংলার মাটিতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করলো। স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করবার চেষ্টা করলো। আজ এদিনে কেন বলছি একথা? অনেক বলেছি, এত বলার দরকার ছিল না। কিন্তু আমার চোখের সামনে মানুষের মুখ ভাসে। আমার দেশের মানুষের রক্ত ভাসে। আমার চোখের সামনে ভাসে আমারই মানুষের আত্মা। আমার চোখের সামনে সে সমস্ত শহীদ ভাইয়েরা ভাসে, যারা ফুলের মত ঝরে গেল, শহীদ হল। রোজ কিয়ামতে তারা যখন বলবে, আমার রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করলাম, তোমরা স্বাধীনতা নস্যাৎ করছো, তোমরা রক্ষা করতে পার নাই, তখন তাদের আমি কী জবাব দেব?
আর একটি কথা। কেন system পরিবর্তন করলাম? System পরিবর্তন করেছি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। system পরিবর্তন করেছি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবার জন্য। কথা হল, এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, অফিসে যেয়ে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যায়, sign করিয়ে নেয়। Free style! Factory তে যেয়ে কাজ না করে টাকা দাবী করে। sign করিয়ে নেয়। যেন দেশে সরকার নাই। আবার, শ্লোগান হল- বঙ্গবন্ধু কঠোর হও।
বঙ্গবন্ধু কঠোর হবে। কঠোর ছিল, কঠোর আছে। কিন্তু দেখলাম, চেষ্টা করলাম, এত রক্ত, এত ব্যাথা, এত দুঃখ। তার মধ্যে ভাবলাম, দেখি, কি হয়, কিছু করতে পারি কিনা। আবদার করলাম, আবেদন করলাম, অনুরোধ করলাম, কামনা করলাম, কিন্তু কেউ কথা শোনে না। চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনী।
আমরা চাই শোষিতের গণতন্ত্র
ভাইয়েরা, বোনেরা আমার, আজকে যে system করেছি, তার আগেও ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর কম ছিল না। আমি বিশ্বাস করি না, ক্ষমতা বন্দুকের নলে। আমি বিশ্বাস করি ক্ষমতা বাংলার জনগণের কাছে। জনগন যেদিন বলবে, ‘বঙ্গবন্ধু ছেড়ে দাও’। বঙ্গবন্ধু তারপর একদিনও রাষ্ট্রপতি, একদিনও প্রধানমন্ত্রী থাকবে না। বঙ্গবন্ধু ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে নাই। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছে দুঃখী মানুষকে ভালবেসে, বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছে শোষণহীন সমাজ কায়েম করবার জন্য।
দুঃখের বিষয় তারা রাতের অন্ধকারে পাঁচজন Parliament সদস্যকে হত্যা করেছে, তিন-চার হাজারের মত কর্মীকে হত্যা করেছে। আরেক দল দুর্নীতিবাজ টাকা-টাকা, পয়সা-পয়সা করে পাগল হয়ে গেছে। তবে যেখানে খালি দুর্নীতি ছিল, গত দুই মাসের মধ্যে ইনশাআল্লাহ্, কিছুটা অবস্থা improve করেছে। দুর্নীতি বন্ধ করবার জন্য আজকে কিছু করা হয়েছে।
হ্যা, Presidential form of government করেছি। জনগণ president নির্বাচন করবে। Parliament থাকবে। Parliament এর নির্বাচনে একজন, দুইজন, তিনজনকে nomination দেওয়া হবে। জনগণ বাছবে, কে ভাল, কে মন্দ। আমরা চাই শোষিতের গনতন্ত্র। এটা পরিষ্কার।
বর্তমান কর্তব্য
আমি program দিয়েছি। আজকে আমাদের সামনে কাজ কী? আজকে আমাদের সামনে অনেক কাজ। আমি সকলকে অনুরোধ করব, আপনারা মনে কিছু করবেন না, আমার কিছু উচিৎ কথা কইতে হবে। কারণ, আমি কোন দিন ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি নাই। সত্য কথা বলবার অভ্যাস আমার আছে। মিথ্যা বলবার অভ্যাস আমার নেই। কিন্তু কিছুটা অপ্রিয় কথা বলব।
বন্যা হল। মানুষ না খেয়ে কষ্ট পেল, হাজার হাজার লোক না খেয়ে মরে গেল। দুনিয়া থেকে ভিক্ষা করে আনলাম! পাঁচ হাজার সাতশ’ লঙ্গরখানা খুললাম মানুষকে বাঁচাবার জন্য। আমি চেয়েছিলাম স্বাধীনতা। কি স্বাধীনতা? আপনাদের মনে আছে, আমার কথার মধ্যে দুইটি কথা ছিল। রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায়, যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে। যদি দুঃখী মানুষ পেট ভরে ভাত খেতে না পারে, কাপড় পড়তে না পারে, বেকার সমস্যা দূর না হয়, তা হলে মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসতে পারে না।
আজ কে দুর্নীতিবাজ? যে ফাঁকি দেয়, সে দুর্নীতিবাজ। যে smuggling করে সে দুর্নীতিবাদ। যে black-marketing করে, সে দুর্নীতিবাজ। যে hoard করে সে দুর্নীতিবাজ। যারা কর্তব্য পালন করে না, তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করে, তারাও দুর্নীতিবাজ, যারা বিদেশের কাছে দেশকে বিক্রি করে, তারাও দুর্নীতিবাজ। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম শুরু করতে হবে। আমি কেন ডাক দিয়েছি? এই ধুণেধরা ইংরেজ আমলের পাকিস্তানী আমলের যে শাসন ব্যবস্থা, তা চলতে পারে না। তাহলে দেশের মঙ্গল আসতে পারে, না হলে আসতে পারে না। আমি তিন বছর দেখেছি। দেখে শুনে আমি আমার স্থির বিশ্বাসে পৌছেছি। এবং তাই জনগণকে বুঝিয়ে দিতে হবে শাসনতন্ত্রের মর্মকথা।
আজকে জানি, আপনাদের কষ্ট হচ্ছে। আমি জানি, না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। আমার চেয়ে অধিক কে জানতে পারে? বাংলার কোন থানায় আমি ঘুরি নাই, বাংলার কোন যায়গায় আমি যাই নাই? বাংলার মানুষকে আমার মত কে ভাল করে জানে?
আপনারা দুঃখ পান, না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। আপনাদের গায়ে কাপড় নাই। আপনাদের শিক্ষা দিতে পারছি না। কিন্তু সবচেয়ে বড় জিনিষ খাদ্য।
দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করতে হবে
একটা কথা বলি আপনাদের কাছে। সরকারী আইন করে কোনো দিন দুর্নীতিবাজদের দুন করা সম্ভব নয়, জনগণের সমর্থন ছাড়া। আজকে আমার একটি মাত্র অনুরোধ আছে আপনাদের কাছে।আমি বলেছিলাম, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, জেহাদ করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে শত্রুর বিরুদ্ধে। আজকে আমি বলব বাংলার জনগণকে- এক নম্বর কাজ হবে, দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। আমি আপনাদের সাহায্য চাই। কেমন করে করতে হবে? আইন চালাব। ক্ষমা করব না। যাকে পাব, ছাড়ব না। একটা কাজ আপনাদের করতে হবে। গণআন্দোলন করতে হবে। আমি গ্রামে গ্রামে নামব। এমন আন্দোলন করতে হবে যে, ঘুষখোর, যে দুর্নীতিবাজ, যে মুনাফাখোর, যে আমার জিনিষ বিদেশে চোরাচালান দেয় তাদের সামাজিক boycott করতে হবে। একথা মনে রাখতে হবে। গ্রামে গ্রামে মিটিং করে দেখতে হবে, কোথায় আছে, ঐ চোর, ঐ black marketer, ঐ ঘুষখোর। ভয় নাই, আমি আছি। ইনশাআল্লাহ, আপনাদের উপর অত্যাচার করতে দেব না। কিন্তু আপনাদের গ্রামে গ্রামে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করতে পারে কে? ছাত্র ভাইয়েরা পারে। পারে কে? যুবক ভাইয়েরা পারে। পারে কে? বুদ্ধিজীবিরা পারে। পারে কে? জনগণ পারে। আপনারা সংঘবদ্ধ হন। ঘরে ঘরে আপনাদের দুর্ঘ গড়তে হবে। সে দুর্গ গড়তে হবে দুর্নীতিবাজদের খতম করবার জন্য, বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের দুঃখ মোচন করবার জন্য। এই দুর্নীতিবাজদের যদি খতম করতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশের মানুশের শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ দুঃখ চলে যাবে। এত চোর যে কোথা থেকে পয়দা হয়েছে জানি না। পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে, কিন্তু এই চোর রেখে গেছে। এই চোর তারা নিয়ে গেলে বাঁচতাম। কিছু দালাল গেছে, চোর গেলে বেঁচে যেতাম।
কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে
দ্বিতীয় কথা, আপনারা জানেন, আমার দেশের এক একর জমিতে যে ফসল হয়, জাপানের এক একর জমিতে তার তিনগুন বেশি ফসল হয়। কিন্তু আমার জমি দুনিয়ার সেরা জমি। আমি কেন সেই জমিতে double ফসল করতে পারব না? আমি যদি দ্বিগুণ করতে পারি তাহলে আমাকে খাদ্য কিনতে হবে না, ভিক্ষা করতে হবে না।
ভাইয়েরা আমার, বোনেরা আমার, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত নাই। একটা লোককে আপনারা ভিক্ষা দেন এক টাকা কি, আট আনা। তারপর তার দিকে কিভাবে চান? বলেন, ‘ও বেটা ভিক্কুক। যা বেটা, নিয়ে যা আট আনা পয়সা।’ কোন জাতি যখন ভিক্ষুক হয়, মানুষের কাছে হাত পারে, মানুষকে বলে, ‘আমাকে খাবার দাও, আমাকে টাকা দাও,’ তার তখন ইজ্জত থাকতে পারে না। আমি সেই ভিক্ষুক জাতির নেতা থাকতে চাই না।
আমি চাই বাংলাদেশের প্রত্যেক কৃষক ভাইয়ের কাছে- যারা সত্যিকার কাজ করে, যারা প্যান্ট-পরা কাপড় পরা ভদ্রলোক, তাদের কাছেও চাই, – জমিতে যেতে হবে। Double ফসল করুন। প্রতিজ্ঞা করূন আজ থেকে ঐ শহীদদের কথা স্মরণ করে double ফসল করতে হবে। যদি double ফসল করতে পারি, আমাদের অভাবও, ইনশাআল্লাহ্, হবে না। কারো কাছে ভিক্ষুকের মত হাত পাততে হবে না।
আমি পাগল হয়ে যাই চিন্তা করে। এ-বৎসর, ১৯৭৫ সালে, আমাকে ছয় কোটি মণ খাবার আনতে হবে। কি করে মানুষকে বাঁচাব? কি করে অন্যান্য জিনিষ কিনব? বন্ধু রাষ্ট্র সাহায্য দিচ্ছে বলে বেঁচে যাচ্ছি। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ন হয়ে নিজেদের পায়ের ওপর দাঁড়াতে হবে জাতি হিসেবে।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
ভাইয়েরা আমার, একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে আমাদের প্রত্যেক বৎসর ৩০ লক্ষ লোক বাড়ে। আমার জায়গা হল ৫৫ হাজার বর্গমাইল। যদি আমাদের প্রত্যেক বৎসর ৩০ লক্ষ্য লোক বাড়ে, তাহলে ২৫/৩০ বৎসরে বাংলায় কোন জমি থাকবে না হাল চাষ করবার জন্য। বাংলার মানুষ বাংলার মানুষের মাংস খাবে। সেই জন্য আজকে আমাদের পপুলেশন কনট্রোল, ফ্যামিলি প্ল্যানিং করতে হবে। এটা হল তিন নম্বর কাজ। এক নম্বর হল, – দুর্নীতিবাজ খতম করা। দুই নম্বর হল – কলে কারখানায়, ক্ষেতে খামারে প্রোডাকশন বাড়ান। তিন নম্বর হল, – পপুলেশন প্ল্যানিং। চার নম্বর হল, – জাতীয় ঐক্য।
জাতীয় দল ও তার শাখা
জাতীয় ঐক্য গড়বার জন্য একদল করা হয়েছে। যারা বাংলাকে ভালবাসে, এর আদর্শে বিশ্বাস করে, চারটি রাষ্ট্রীয় আদর্শ মানে, তারা সকলেই এই দলের সদস্য হতে পারবে। যারা বিদেশি agent, যারা বহিঃশত্রুর কাছ থেকে পয়সা নেয়, এতে তাদের স্থান নাই। সরকারী কর্মচারীরাও এই দলের সদস্য হতে পারবে। কারণ, তারাও এই জাতির একটা অংশ। তাদেরও অধিকার থাকবে এই দলের সদস্য হওয়ার। এই জন্য সকলে – যে যেখানে আছি, একতাবদ্ধ হয়ে দেশের কাজে লাগতে হবে।
ভাইয়েরা, বোনেরা আমার, এই জাতীয় দলের আপাতত পাঁচটা branch হবে। একটা শ্রমিক ভাইদের অঙ্গদল, কৃষক ভাইদের একটা, যুবক ভাইদের একটা, ছাত্রদের একটা এবং মহিলাদের একটা। এই পাঁচটা অঙ্গদল মিলে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। আমাকে অনেকে বলে, কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ তো হল। কিন্তু আমাদের কী হবে? আমি বলি আওয়ামী মানে তো জনগণ। ছাত্র, যুবক, শিক্ষিত সমাজ, সরকারী কর্মচারী, -সকলে মিলে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ।
শিক্ষিত সমাজের কাছে আমার একটা কথা। আমরা শতকরা কতজন শিক্ষিত লোক? আমরা শতকরা ২০ জন শিক্ষিত লোক। তার মধ্যে সত্যিকার অর্থে আমরা শতকরা ৫ জন শিক্ষিত। শিক্ষিতদের কাছে আমার একটা প্রশ্ন। আমি এই যে দুর্নীতির কথা বললাম, তা কারা করে? আমার কৃষক দুর্নীতিবাজ? না। আমার শ্রমিক? না। তাহলে ঘুষ খায় কারা? Black marketing করে কারা? বিদেশি agent হয় কারা? বিদেশে টাকা চালান দেয় কারা? Hoard করে কারা? এই আমরা, যারা শতকরা ৫ জন শিক্ষিত। এই আমাদের মধ্যেই রয়েছে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ। আমাদের চরিত্রের সংশোধন করতে হবে, আত্মশুদ্ধি করতে হবে। দুর্নীতিবাজ এই শতকরা ৫ জনের মধ্যে, এর বাইরে নয়।
শিক্ষিত সমাজের চরিত্রের পরিবর্তন চাই
শিক্ষিত সমাজকে আর একটা কথা বলব। আপনাদের চরিত্রের পরিবর্তন হয় নাই। একজন কৃষক যখন আসে খালি গায়ে, লুঙ্গী পরে, আমরা বলব, ‘এই বেটা, কোত্থেকে আইছিস, বাইরে বয়, বাইরে বয়।’ একজন শ্রমিক যদি আসে বলি ‘ঐখানে দাড়া।’ ‘এই রিক্সাওয়ালা, ঐভাবে চলিস না।’ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের তুচ্ছ করেন। এর পরিবর্তন করতে হবে। আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় ঐ গরীব কৃষক। আপনার মাইনে দেয় ঐ গরীব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমরা গাড়ি চড়ি ঐ টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক। ওদের দ্বারাই আপনার সংসার চলে।
সরকারী কর্মচারী বলি, মনে রেখো, এটা স্বাধীন দেশ। এটা ব্রিটিশের colony নয়। পাকিস্তানের colony নয়। যে লোককে দেখবে, তার চেহারাটা তোমার বাবার মত, তোমার ভাইয়ের মত। ওরই পরিশ্রমের পয়সায় তুমি মাইনে পাও। ওরাই সম্মান বেশী পাবে। কারণ, ওরা নিজেরা কামাই করে খায়।
একটা কথা আমি জিজ্ঞাসা করি, কিছু মনে করবেন না। আমাদের লেখাপড়া শিখিয়েছে কে? আমার বাপ-মা, – আমরা বলি, বাপ-মা। লেখাপড়া শিখিয়েছে কে? ডাক্তারী পাশ করায় কে? ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করায় কে? সায়েন্স পাশ করায় কে? বৈজ্ঞানিক করে কে? অফিসার করে কে? কার টাকায়? বাংলার দুখী জনগণের টাকায়। একজন ডাক্তার হতে সোয়া লাখ টাকার মত খরচ পড়ে। একজন ইঞ্জিনিয়ার করতে এক লাখ থেকে সোয়া লাখ টাকার মত খরচ পড়ে। বাংলার জনগণ গরীব। কিন্তু এরাই ইঞ্জিনিয়ার বানাতে টাকা দেয়, মেডিকেলের টাকা দেয় একটা অংশ।
আপনাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, শিক্ষিত ভাইয়েরা, আপনাদের লেখাপড়ার যে খরচ জনগণ দিয়েছে, তা শুধু আপনাদের সংসার দেখবার জন্য নয়। আপনাদের ছেলেমেয়েদের দেখবার জন্য নয়। দিয়েছে এই জন্য যে, তাদের জন্য আপনারা কাজ করবেন, তাদের সেবা করবেন। তাদের আপনারা কী দিয়েছেন? কী ফেরত দিয়েছেন, কতটুকু দিচ্ছেন? তাদের টাকায় ইঞ্জিনিয়ার সাহেব, তাদের টাকায় ডাক্তার সাহব, তাদের টাকায় রাজনীতিবিদ সাহেব, তাদের টাকায় মেম্বার সাহেব, তাদের টাকায় সব সাহেব। আপনারা দিচ্ছেন কী? কী ফেরত দিচ্ছেন? আত্মসমালোচনা করুন। বক্তৃতা করে লাভ নাই। রাতের অন্ধকারে খবরের কাগজের কাগজ black-marketing করে সকাল বেলা বড়া বড় কথা লেখার দাম নেই। রাতের বেলা ঔষধ black-marketing করে বড় বড় কথা বলার দাম নাই। হোটেল ইন্টারকন্টিনেণ্টালে মদ খেয়ে honesty এর কথা বলার দাম নেই। আত্মসমালোচনা করুন, আত্মশুদ্ধি করুন। তাহলেই হবেন মানুষ।
সমাজের পরিবর্তন চাই
এই যে কি হয়েছে সমাজের! সমাজ ব্যবস্থায় যেন ঘুণ ধরে গেছে। এই সমাজের প্রতি চরম আঘাত করতে চাই। যে আঘাত করেছিলাম পাকিস্তানীদের, সে আঘাত করতে চাই এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে। আমি আপনাদের সমর্থন চাই। আমি জানি, আপনাদের সমর্থন আছে।
কিন্তু একটা কথা এই, যে নতুন সিষ্টেমে যেতে চাচ্ছি আমি, তাতে গ্রামে গ্রামে বহুমুখী Co-operative করা হবে। ভুল করবেন না। আমি আপনাদের জমি নেব না। ভয় পাবেন না যে, জমি নিয়ে যাব। তা নয় পাঁচ বৎসরের plan এ বাংলাদেশে ৬৫ হাজার গ্রামে একটি করে co-operative হবে। প্রত্যেক গ্রামে এই co-operative। এর জমি মালিকের জমি থাকবে। কিন্তু ফসলের অংশ সবাই পাবে। প্রত্যেকটি বেকার, প্রত্যেকটি মানুষ – যে মানুষ কাজ করতে পারে, তাকে এই co-operative এর সদস্য হতে হবে। এগুলি বহুমুখী co-operative হবে। পয়সা যাবে তাদের কাছে, Work’s program যাবে তাদের কাছে। আস্তে আস্তে union council এ যারা টাউট আছেন, তাদের বিদায় দেওয়া হবে। তা না হলে দেশকে বাঁচানো যাবে না। এই জন্য village co-operative হবে। আমি ঘোষণা করছি আজকে যে, পাঁচ বৎসরের plan এ প্রত্যেকটি গ্রামে পাঁচ শত থেকে এক হাজার family নিয়ে compulsory co-operative হবে। আপনার জমির ফসল আপনি নেবেন, অংশ যাবে co-operative এর হাতে, অংশ যাবে government এর হাতে।
দ্বিতীয়তঃ থানায় থানায় একটি করে কাউন্সিল হবে। এই কাউন্সিলে রাজনৈতিক কর্মী বা সরকারী কর্মচারী যেই হন, একজন তার chairman হবেন। এই থানা কাউন্সিলে থাকবে বিভিন্ন department এর সরকারী কর্মচারী। তার মধ্যে আমাদের কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি থাকবে, যুব প্রতিনিধি থাকবে, কৃষক প্রতিনিধি থাকবে। তারাই থানাকে চালাবে।
আর, জেলা থাকবে না, সমস্ত মহকুমা জেলা হয়ে যাবে। সেই মহকুমায় একটি করে administrative council হবে। তার chairman থাকবে। সব কর্মচারীরা এক সঙ্গে তার মধ্যে থাকবে। এর মধ্যে people’s representative থাকবে। party representative থাকবে। সেখানে তারা সরকার চালাবে। এইভাবে আমি একটা system চিন্তা করেছি এবং করব বলে ইনশাআল্লাহ আমি ঠিক করেছি। আমি আপনাদের সাহায্য ও সহানুভূতি চাই।
যুদ্ধের মনোভাব দূর হোক
ভাই ও বোনেরা আমার, আজকে আর একটা কথা বলি। আমি জানি, শ্রমিক, ভাইয়েরা, আপনাদের কষ্ট আছে। কী কষ্ট, আমি জানি। তা আমি ভুলতে পারছি না। বিশেষ করে fixed income group এর কষ্টের সীমা নাই। কিন্তু কোথায় থেকে কী হবে? টাকা ছাপিয়ে বাড়িয়ে দিলেই তো দেশের মুক্তি হবে না। Inflation হবে। Production বাড়াতে পারলে তার পরেই আপনাদের উন্নতি হবে। না হলে উন্নতি হবে না। আমি এই-ই জানি। যেমন আমরা আজকে দেখছি।
কপাল, আমাদের কপাল! আমরা গরীব দেশ। আমাদের কপাল, – আমার পাটের দাম নাই, আমার চায়ের দাম নাই। আমরা বেচতে গেলে অল্প পয়সায় আমাদের বিক্রি করতে হয়। আর, আমি যখন কিনে আনি, যারা বড় বড় দেশ, তারা তাদের জিনিষের দাম অনেক বাড়িয়ে দেয়। আমরা বাঁচতে পারি না। আমরা এই জন্য বলি, তোমরা মেহেরবানি করে যুদ্ধের মনোভাব বন্ধ করো। Armament race বন্ধ করো। ওই সম্পদ দনিয়ার দুঃখী মানুষকে বাঁচাবার জন্য ব্যয় করো। তাহলে দুনিয়ায় শান্তি ফিরে আসবে। আজকে তোমরা মনে করেছ, আমরা গরীব, – আমাদের তাই কোন মূল্য নাই। কিন্তু-
হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ
অপমান
অপমান হতে হবে তাহাদের
সবার সমান।
তোমরা মনে করেছ আমরা গরীব, আমাদের তাই যে দামেই হোক, বিক্রি করতে হয়। কিন্তু এই দিন থাকবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষ। আমাদের মাটি আছে, আমার সোনার বাংলা আছে, আমার পাট আছে, আমার গ্যাস আছে, আমার চা আছে, আমার forest আছে, আমার মাছ আছে, আমার livestock আছে। যদি develop করতে পারি তবে ইনশাআল্লাহ্ এ দিন থাকবে না। তোমরা আজকে সুযোগ পেয়ে জাহাজের ভাড়া বাড়িয়ে দাও। আর তাই আমাদের কিনতে হয়। আমরা এখানে না খেয়ে মরি, আমাদের inflation হয়, আমরা বাঁচতে পারি না। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যাই, তোমরা কিছু খয়রাত দিয়ে একটু মিষ্টি হাসো। হাসো, হাসো, হাসো। দুঃখে পড়েছি, বিক্রীত হয়েছি। তোমাদের কাছে হাত পাততে হবে, হাসো। অনেকে হেসেছে, – যুগ যুগ ধরে হেসেছে। হাসো! আরব ভাইয়েরাও গরীব ছিল।
আরব ভাইদের সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করেছি। Palestine এর আরব ভাইদের ন্যায্য দাবী সমর্থন করে বাংলার মানুষ। আরব ভাইদের পিছনে তারা থাকবে Palestine উদ্ধার করবার জন্য। এও আমাদের পলিসি। সেখানে নির্যাতিত দুঃখী মানুষ, সেখানে আমরা থাকব।
শ্রমিক ভাইয়েরা, আমি শ্রমিক প্রতিষ্ঠান করছি। আপনাদের প্রতিনিধি industries department, labor department এর প্রতিনিধি বসে একটা plan করতে হবে। সেই plan অনুযায়ী কি করে আমরা বাঁচতে পারি তার বন্দোবস্ত করতে হবে।
ছাত্রদের মানুষ করতে হবে
ছাত্র ভাইয়েরা, লেখাপড়া করুন। আমি দেখে খুশী হয়েছি, আপনারা নকল-টকল বন্ধ করেছেন একটু। কিন্তু একটা কথা আমি বলব। আমি পেপারে দেখেছি যে এবারে প্রায় এক পার্সেন্ট পাশ, দুই পার্সেন্ট পাশ, তিন পার্সেন্ট পাশ। শিক্ষক সম্প্রদায়ের কাছে আমার আকুল আবেদন, ফেল করাবেন না। নকল বন্ধ করেছি। আপনাদের একটা কর্তব্য আছে, ছেলেদের মানুষ করতে হবে। ফেল করানোতে আপনাদের তেমন বাহাদুরি নাই, পাশ করালেই বাহাদুরি আছে। আপনাদের কর্তব্য পালন করুন। খালি ফেল করিয়ে বাহাদুরি নেবেন, তা হয় না। তাদের মানুষ করুন। আমি তো শিক্ষকদের বেতন দেব। আমরা সব আদায় করব। আপনারা লেখাপড়া শেখান, আপনারা তাদের মানুষও করুন। শৃংখলা ফিরিয়ে আনুন, রাজনীতি একটু কম করুন। তাদের একটু মানুষ করবার চেষ্টা করুন। একটু সংখ্যা বাড়ান শুধু এক পার্সেন্ট, দুই পার্সেন্ট, পাঁচ পার্সেন্ট দিয়ে বাহুদুরি দেখিয়ে বলবেন খুব strict হয়েছি? আমিও strict চাই। নকল করতে দেবেন না। তবে, আপনাদের কাছে আবেদন, আপনারা মেহেরবানী করে আপনাদের কর্তব্য পালন করুন। ছেলেদের মানুষ করবার চেষ্টা করুন পাশের সংখ্যা বাড়াবার চেষ্টা করুন। ওদের মানুষ হিসাবে তৈরি করুন। সেটাই ভাল হবে। রাগ করবেন না। আপনারা আবার আমার উপর রাগ করেন। আমি বুদ্ধিজীবিদের কিছু বলি না। তাঁদের সম্মান করি। শুধু এটুকুই বলি যে, বুদ্ধিটা জনগণের খেদমতে ব্যয় করুন। এর বেশী কিছু বলি না। বাবা, বলে কি মারা যাব! আবার কে বই লিখে ফেলবে। খালি সমালোচনা করলে লাভ হবে না।
আমার যুবক ভাইয়েরা, যে co-operative করতে যাচ্ছি গ্রামে গ্রামে, এর ওপর বাংলার মানুষের বাঁচা নির্ভর করবে। আপনাদের ফুলপ্যান্টটা একটু হাফপ্যান্ট করতে হবে। পাজামা ছেড়ে একটু লুঙ্গী পরতে হবে। আর, গ্রামে গ্রামে যেয়ে এই co-operative কে successful করবার জন্য কাজ করতে হবে। এ কাজে যুবক চাই, ছাত্র চাই, সকলকে চাই।
বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তন চাই
আর একটি কথা বলতে চাই। বাংলাদেশের বিচার ইংরেজ আমলের বিচার। আল্লাহর মর্জি যদি সিভিল কোর্টে কেস পড়ে, সেই মামলা শেষ হতে লাগে ২০ বছর। আমি যদি উকিল হই আমার জামাইকে উকিল বানিয়ে কেস দিয়ে যাই। ঐ মামলার ফয়সালা হয় না। আর যদি ক্রিমিনাল কেস হয়, তিন বছর, চার বছরের আগে শেষ হয়ে না। এই বিচার বিভাগকে নতুন করে গড়তে হবে। থানায় ট্রাইবুনাল করবার চেষ্টা করছি। সেখানে যাতে মানুষ এক বছর, দেড় বছরের মধ্যে বিচার পায়, তার বন্দোবস্ত করছি। আশা করি সেটা হবে।
এখন আমি আপনাদের কাছ থেকে একটি কথা জানতে চাই। এই যে চারটি program দিলাম, এই যে, আমি cooperative করব, থানা council করব, sub divisional council করব আর আমি যে আপনাদের কাছ থেকে double ফসল চেয়েছি, জমিতে যে ফসল হয়, তার double চাই, এই সম্পর্কে আপনাদের মত কী?
সরকারী কর্মচারী ভাইয়েরা, একটু discipline এসে গেছে। অফিসে যান, কাজ করুন। আপনাদের কষ্ট আছে আমি জানি। দুঃখী মানুষ আপনারা। আপনারা কাজ করুন। জনগণের পেটে খাবার নাই। তাদের ওপর tax বসিয়ে আমি আপনাদের পুষতে পারব না। production বাড়ালে আপনাদের এদের সঙ্গে উন্নতি হবে। এই যে কথাগুলি আমি বললাম, এতে আপনারা আমাকে সমর্থন করেন কিনা, আমার আমার উপর আপনাদের আস্থা আছে কিনা আমাকে দুই হাত তুলে দেখিয়ে দিন।
ভাইয়েরা, আবার দেখা হবে, – ইনশাআল্লাহ্ আবার দেখা হবে। আপনারা বহু দূর থেকে কষ্ট করে এসেছেন। গ্রামে গ্রামে ফিরে যান। যেয়ে বলবেন, দুর্নীতিবাজদের খতম করতে হবে। ক্ষেতে-খামারে, কলে কারখানায় production বাড়াতে হবে। সরকারী কর্মচারী ভাইয়েরা, আপনারাও কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের সদস্য হবেন। আপনারা প্রাণ দিয়ে কাজ করুন। ইনশাআল্লাহ্, বাংলাদেশ এসেছে, বাংলাদেশ থাকবে।
খোদা হাফেজ
জয় বাংলা
অসাধারণ একটি ঐতিহাসিক দলিল, এখান থেকেই বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু কতোটা গভীর হৃদয়চেতনাধারী ছিলেন।
আমার নেতা সহজ-সরল মহৎ প্রান। তিনি সরল বিশ্বাসে যেই কিছু চায় তাকে খুলে দিয়ে দেন। তার চারপাশের কুচক্রী চাটুকাররা তাকে ভুল বুঝিয়ে সকল অনিষ্ট সাধন করে। তার নিজের কোনো দোষ নেই। সরল মনে মানুষকে ভালোবাসাই তার দোষ।
অন্যদিকে বিরোধী পক্ষের নেতা সাক্ষাৎ শয়তানের মনুষ্য অবতার। তার মাথায় গিজ গিজ করছে শয়তানী বুদ্ধি। সে এতোই evil যে তার চারপাশের লোকজন শতচেষ্টা করেও তার একের পর এক শয়তানী কাজ ঠেকাতে পারছে না।
দারুণ একটি লেখা। এটা সবার জানা উচিত, শেয়ার করলাম।
ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা। বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় গুণ তিনি ছিলেন সত্যবাদী এবং যা বুঝতেন, তাই বলতেন। তবে মানুষকে বড্ডো ভালবাসতেন বলেই, বিশ্বাস করতেন বলেই হয়ত পনেরোই আগস্ট লেখা হয়েছে ইতিহাসে, কালো অধ্যায় হিসেবে।
@বিভা,
ধন্যবাদ আপনাকে। ঠিক বলেছেন। আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে যে কত দিন পিছিয়ে গিয়েছি তা বলে বুঝাতে পারব না।
এইগুনগুলোর জন্য তাকে মূল্য দিতে হয়েছে। সাময়িক এই মূল্য দেওয়ার পরও এই গুনগুলোই কিন্তু তাকে ইতিহাসে অমর করেছে। তাই এইগুলো আমাদেরকেও লালন করা উচিৎ। ভাল থাকবেন। (F)
@বিভা,
আর সবচেয়ে জঘন্য অনুভুতি হয় তখন, যখন একজন প্রধানমন্ত্রী শুধুই দলীয় বিদ্বেষ বশে ওই দিনটিকে তাঁর জন্মদিন হিসাবে পালন করেন। 🙁
আসলে আমি বঙ্গবন্ধু কে দলমতের উর্ধ্বে রাখতেই পছন্দ করি।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট। ইতিহাসের নানা বাঁক এখানে উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর মতো নেতার এমন একটি ভাষণ তুলে আনার জন্য ধন্যবাদ।
@মোমতাজ,
আপনাকেও ধন্যবাদ। (F)
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মানুষের এইসব অপপ্রচার সহ্য করতে পারি না। আমি মনে করি, আমাদেরকেই তার সৈনিক হয়ে তাকে প্রকৃত মর্যাদার আসনে বসাবার সংগ্রাম করতে হবে। দেখি সামনে এরকম আরো কিছু দেওয়া যায় কিনা। ভাল থাকবেন। (C)
অসাধারন জিনিস। বংগবন্ধুর মত জননেতার বিউটি এখানেই যে তারা সোজা সাপ্টা কথাই বলেন, সান্তনাসূচক কৃত্রিম কথাবার্তা বলেন না।
System পরিবর্তন করেছি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। system পরিবর্তন করেছি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবার জন্য। কথা হল, এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, অফিসে যেয়ে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যায়, sign করিয়ে নেয়। Free style! Factory তে যেয়ে কাজ না করে টাকা দাবী করে। sign করিয়ে নেয়। যেন দেশে সরকার নাই। আবার, শ্লোগান হল- বঙ্গবন্ধু কঠোর হও।
এই যুগের যে সরকারই ক্ষমতায় থাক এমন কথা বলবে না। দূর্নীতিতে ডবল হ্যাট্রিকের মত সংবাদ বার হলে তখন দেশাত্মবোধ চাগিয়ে উঠবে, অল্প কিছু দুর্নীতিবাজের জন্য পুরো জাতিকে অপমান করা যায় না গোছের রব শুরু হবে। তবে বংগবন্ধুর এই কথা আর এ জাতীয় আরো কিছু উক্তি থেকেও বোঝা যায় যে উনি নিজে আসলে ওনার প্রিয় দেশবাসীকে পুরো চিনে উঠতে পারেননি। আমরাও আজো নিজেদের চিনতে পারিনি।
তবে বংগবন্ধু যে কঠোর হবার কথা বলেছেন তা সিষ্টেম বদল করার আগে নিজের আশে পাশের লোকের ওপর প্রয়োগ করা শুরু করলে হয়ত ১৫ই আগষ্টের ট্র্যাজেডি অন্তত সেই সময়ের জন্য বন্ধ করা যেত। শুধু উন্নত সিষ্টেম (বাকশাল উন্নত কিনা তা বাদ থাক) দিয়ে কিছু হয় না, ব্যাবহারকারীদের মানের ওপর তার সুফল কতটা পাওয়া যাবে তা নির্ভর করে। স্বাধীনতা অর্জন থেকে গনতন্ত্র, প্রেসিডেন্টিশিয়াল গনতন্ত্র, সংসদীয় গনতন্ত্র তক্ত্বাবধয়ক সরকার কত রকমের পরীক্ষা নীরিক্ষা নিয়ত চলেছে সিষ্টেম উন্নত করার আশায়…
@আদিল মাহমুদ,
হম ঠিক ই বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কৃত্রিমতার লোক নন। আর এ জায়গাটায়ই অনেকে তাঁকে চিনতে ভূল করছেন। অনেকে মনে করছেন, তিনিই ‘৭২ থেকে ‘৭৫ পর্যন্ত চলা অরাজকতার জন্য দায়ী। এবং জেনে শুনেই এই অরাজকতা চালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তা ঠিক নয়। অনেকে মনে করছেন, ভেতরে ভেতরে তিনি দূর্ণীতি বাজ উপরে উপরে ভাল সাজছেন। এটা ভাবাটা আমার কাছে আমকে কাঠাল ভাবার মত। তার কথার অকৃত্রিমতা ও সরলতা বলে দেয় তিনি যা বলছেন তা মন থেকে বলছেন এবং সৎ থেকে বলছেন। অর্থাৎ তার কথার সাথে কাজের মিল আছে। কারন, তা যদি না হত তাহলে তিনি রেখে ঢেকে কথা বলতেন। এত উন্মুক্ত হতেন না।
বঙ্গবন্ধুর বড় ভূল ছিল তিনি এদেশের মানুষকে সন্দেহ করেন নি, নিজের কর্মী বাহিনীকে পরীক্ষায় ফেলেন নি, একেবারে বিনা বিচারে বিশ্বাস করেছেন। তবে এও দেখতে হবে যে, তিনি বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছেন, কারণ যাকেই দায়িত্ব দিয়েছেন সেই দুই নাম্বারি করেছে, তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে।
বাকশাল নিয়ে আমি একটা কথা বলব, আমি মনে করি তিনি বাকশাল দিতে বাধ্য হয়েছেন। কেন দিতে বাধ্য হয়েছেন তা এই জায়গায় পরিস্কার করে বর্ণনা দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে বাকশাল এর দর্শনটা উন্নত ছিল, কিন্তু এটা এদেশের কুলাঙ্গারদের জন্য কতটা উপযোগী তা পরীক্ষা করে তাকে নিতে হত।
@মুহাইমীন,
আপনার কথা মর্মে মর্মে সত্য। বংগবন্ধুর অনেক কাজকর্ম যেমন রক্ষী বাহিনী, বাকশালের আমি কড়া সমালোচক। তবে আমি বিশ্বাস করি না যে উনি এসব জেনে শুনে কোন বদ মতলবে করেছিলেন। ভুল সিদ্ধান্ত আর বদমতলব সম্পূর্ন ভিন্ন কথা। ওনার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা ছিল মানুষকে বড় বেশী ভালবাসা, এই গুন ধীরে ধীরে করে তুলেছিল ওনাকে শাসক হিসেবে দূর্বল। নিজের অজান্তেই ধীরে ধীরে স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি এসব দুর্নামের ভাগিদার হয়ে গেছিলেন, এসবের পূর্ন সুযোগ নিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র।
গনতন্ত্রে বিশ্বাস করলে একই সাথে বাকশাল কিভাবে সমর্থন করা যায় আমি ঠিক বুঝি না। বাকশালের সিদ্ধান্ত ওনার দীর্ঘদিনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সাথী তাজউদ্দিনও মেনে নিতে পারেননি, বার বার সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলেন যে এটাই হবে তার নিজ মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করা। কার্যত ফলেও গেছে তাই। ওনার চারদিকে ছিল কেবল চাটুকারের দল, ভাল পরামর্শক বলতে কেউই ছিল না।
@আদিল মাহমুদ,
সহমত 🙁
কিন্তু এই জায়গায় আমি মানতে পারি না। ওনার মত প্রজ্ঞাবান লোক কি করে এই মোটার মাথার মানুষগুলোর ষড়যন্ত্রে পড়ে। যিনি কিন্তু পাহাড় সম প্রজ্ঞা নিয়ে দেশ স্বাধীন করছেন। বড়ই কষ্ট হয় যখন দেখি ওনারই সামনে সব ষড়যন্ত্রগুলো ঘটছিল কিন্তু উনি ভাবলেন চরম বোকার মত ‘আমারে বাঙ্গালী মারবে না’!! :-Y 🙁 কান্নায় চোখ জুড়ে আসে…
তবে আমি মনে করি বাকশালের জন্যই বঙ্গবন্ধুকে মারা হয়েছে। কারণ হয়তো বাকশাল দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতি করার সুযোগ কমিয়েছিল আর জাতীয় ঐক্য তৈরী করছিল…
@মুহাইমীন,
বাকশাল নিয়ে আর একটা কথা। হয়তো মনে করছেন আমি বাকশালের ভাল কেন বলছি? আমি আসলে ভাল বলছি বাকশালের দর্শন অর্থাৎ বাস্তব প্রয়োগ যোগ্যতার ভালর কথা, কিন্তু এই বাকশালের বড় দূর্বলতা ছিল রাজনীতিকে এর সাথে যুক্ত করা।
যখন তিনি দেখলেন যে, তার কর্মীদের প্রায় সকলেই লোভী তখন কি করে তিনি তার কর্মী বাহিনীকে বাকশালে যুক্ত করলেন তা মাথায় ঢুকে না, অর্থাৎ তিনি যদি অরাজনৈতিক ভাবে একই কাঠামোর কোন প্রতিষ্ঠান করতেন তাহলে হয়তো এত দূর্নাম হত না।
@মুহাইমীন,
আমি মনে করিনা। বঙ্গবন্ধুকে মরতেই হতো। বাকশাল কী, কেন এবং কতদিন তার আয়ুকাল তা পরে প্রয়োজনবোধে আলোচনা করা যাবে। আপাতত নিচের লেখাটা গভীর মনযোগ দিয়ে পড়ুন।
@আকাশ মালিক,
সিরাজ সিকদার নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। কারণ হয়ত তা করার সময় নেই। তবে মনে করি, এই সব বামপন্থীদের থেকে উগ্রপন্থী পাকিস্তানী দালালদের হাতেই বঙ্গবন্ধু খুন হয়েছেন, তারা ক্ষমতার কাঙ্গাল ছিল, দেশে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগে তারা এই কান্ড ঘটায়।
@মুহাইমীন,
প্রতিটা জাতিরই উন্নতির জন্য একতা জরুরী, সেই একতা আনতে ও রক্ষা করতে হলে ভিন্ন মতের ভেতরেও ন্যূনতম কিছু সাধারন উপাদান লাগে যাতে প্রশ্নাতীত ঐক্য ছাড়া ছাড়া চলতে গেলে পদে পদে হোঁচট খেতে হয়। এর অন্যতম বড় উদাহরন পাকিস্তান নামক হযবরল রাষ্ট্র ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলার অভ্যূদয়।
তবে তাতেও আসলে সমস্যার পুরো সমাধান হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এর জনসাধারনের মধ্যে দেশ ঠিক কোন আদর্শে চলবে এ নিয়ে আছে চরম দ্বিধা বিভক্তি। কারো মতে সেক্যুলার ব্যাবস্থা, কারো মতে ইসলামী ব্যাবস্থা, কারো মতে আবার জগাখিচূড়ী (এই বিপদজনক ধারাই মনে হয় বাহ্যিক ভাবে এখনো বেশী। এই বিভাজনের ফল সুযোগ সন্ধানীরা ঠিকই বারে বারে নিচ্ছে। বংগবন্ধু ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেশে একটা বড়সড় ভোট ব্যাংক আছে। এর ভোট ব্যাংকের মূল কারন তাদের চোখে বংগবন্ধু সরকার ইসলাম বিদ্বেষী যেহেতু তারা ‘৭২ সালে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা চালু করেছিলেন (যদিও এটা প্রকৃত সেক্যুলারিজম ছিল না)। এই দলের অধিকাংশই অবশ্য বংগবন্ধু বিদ্বেষের কারন সরাসরি বলবে না, ৭২-৭৫ এর নানান খারাপ দিক ফলাও করে বলবে। বংগবন্ধু নিজেও এই ধারা সম্পর্কে সজাগ ছিলেন, উনিও এদের খুশী করতে কিছু কিছু কাজ করে ইসলাম বিদ্বেষী বদনাম ঘোঁচাতে চেয়েছেন, তবে তাতে কোন লাভই হয়নি। এই ধারার লোকে বংগবন্ধুর প্রয়ানে বেজায় খুশী হয়েছিল, আজো খুশী। জিয়া সাহেব এদের অকুন্ঠ সমর্থন পেয়ে ভালভাবেই আসন গেড়ে বসেছিলেন, এদের খুশী করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বর্জন করে যা করা যায় সবই করেছেন। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের ভুত মাথা থেকে না নামলে আমাদের কোন স্থায়ী সমাধান নাই।
বাকশাল জাতীয় কিছু দিয়ে বলপূর্বক ভাবে সবাইকে এক মঞ্চে আনা যায় না। এটা খুবই ভুল ধারনা। সম্ভবত ওনারা ততকালীন রুশ বা চীন জাতের সরকার গোছের কিছুর কথা চিন্তা করছিলেন। আদর্শিক দ্বন্দ বলপূর্বক কাটানো যায় না, এতে ঊল্টো ফলই হয়। বাকশাল গঠন করার ফলে বংগবন্ধুকে স্বৈরাচার প্রমান করা ষড়যন্ত্রকারীদের পক্ষে খুবই সহজ হয়ে হয়েছিল।
বংগবন্ধুর সমস্যা ছিল উনি চাটুকারদার দ্বারা চরম ভাবে পরিবেষ্টিত ছিলেন, ভাল পরামর্শ দেবার মত লোকদের নানান কারনে ঠেলে দিয়েছিলেন দূরে। এই চাটুকার কালচার আমাদের একটি বড় সংস্কৃতিগত সমস্যা, এটাও সহজে যাবার নয়। আজ যারা বাকশাল গঠনের জন্য বংগবন্ধুর সমালোচনা করেন সে সময় তাদের বেশীরভাগই বাকশালী আদর্শে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে বাকশালে যোগ দিতেন। সে সময়ের পত্রিকায় প্রতিদিন প্রথম পাতায় সচিত্র খবর থাকত দলে দলে নানান পেশাজীবি লোকদের বাকশালে যোগদান। বংগবন্ধুকে ডোবানোর কৃতিত্ব একা ওনার নয়।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার কথা গুলোর সাথে পুরোপুরি একমত। বাংলাদেশের মানুষের প্রধান সমস্যা হল এদেশের শিক্ষিত মানুষের অধিকাংশই আসলে হয় অশিক্ষিত না হয় অর্ধশিক্ষিত। তাই এরা ধর্মের ললিপপ মুখে না ভরে থাকতে পারে না… একারণেই এদেশে অনেকে উপরে উপরে বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসলেও ভেতরে ভেতরে এদেশটাকে পাকিস্তান আমলের সেই ধর্মীয় আবহে নিয়ে যেতে সংকল্পবদ্ধ ছিল। তাই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে এদেশে এতটা ষড়যন্ত্র হবার সুযোগ পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর একটাই ভূল ছিল উনি কঠোর হন নাই। তাকে বোঝা উচিৎ ছিল যে কুত্তার লেজ কখনো সোজা হয় না।
আর বঙ্গ বন্ধুর বাকশাল করার উদ্দেশ্য সৎ ছিল তিনি বলেছেন যে তিনি এটা করেছেন ঐক্য আনার জন্য। আমি মনে করি তিনি এটা অরাজনৈতিকভাবে করলে হয়তো এত জল ঘোলা হত না…
@মুহাইমীন,
ভুল। বাকশালের জন্য বঙ্গবন্ধুকে মারা হয়নি। উনি যদি বাকশালের বদলে ঘরে ঘরে টাকশালও বানিয়ে দিতেন , এরপরও উনাকে ঠিকই মারা হোত। ” রোমিও মা্স্ট ডাই !”
@সংশপ্তক,
ধন্যবাদ।
এটার তাৎপর্য তো বুঝলাম না মশায়… :-s
@মুহাইমীন,
অন্যদিন এটার তাৎপর্য বিস্তৃত আকারে ব্যাখ্যা করব, সম্ভবত প্রবন্ধাকারে। তবে , এখনকার মত ভাবনার খোরাকের জন্য শেক্সপীয়ারের ‘রোমিও এ্ন্ড জুলিয়েট’ থেকে বেনভলিওর একটা ছোট সংলাপ নিচে তুলে দিলাম :
@সংশপ্তক,
শেক্সপীয়ারের টেকস্টটাকে মডার্ণ ইংলিশে এনেও ‘রোমিও মাস্ট ডাই’ এর সাথে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সম্পর্ক বা তাৎপর্য উদ্ধার করতে পারিনি।
BENVOLIO
(to ROMEO) Come on, man. You can put out one fire by starting another. A new pain will make the one you already have seem less. If you make yourself dizzy, you can cure yourself by spinning back around in the opposite direction. A new grief will put the old one out of your mind. Make yourself lovesick by gazing at some new girl, and your old lovesickness will be cured.
সুতরাং প্রবন্ধাকারে বিস্তৃত ব্যাখ্যার আগে আপাতত সংক্ষিপ্তাকারে কিছুটা ব্যাখ্যা আমরা আশা করতেই পারি।
@আদিল মাহমুদ ,
ভাই ,এজন্যই মাঝে মাঝে মনে হয় যে বঙ্গবন্ধু যেমন মহান নেতা ছিলেন, সে তুলনায় কঠোর শাসক ছিলেন না। তিনি মানুষ কে সহজেই বিশ্বাস করতেন, আর মানুষ চিনতে ভুল করতেন। যেমন তাজউদ্দিন আহমদ কে সরিয়ে তিনি বেইমান মোশতাক কে নিজের কাছের মানুষ বানিয়েছিলেন।
@অচেনা,
এতে বঙ্গবন্ধুর দোষ নেই বলব। তার সততা ও সরলতার সুযোগে শয়তানগুলো ভাল মানুষগুলো থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল।
@মুহাইমীন,
জি ভাই একেবারে সঠিক কথাটা বলেছেন আপনি।
@অচেনা,
:))
ঘটনা সত্য হলেও এটা কিন্তু যে কোন প্রশাসকের জন্যই একটি দূর্বলতা বলতে হবে, তিনি বংগবন্ধুই হন আর যেইই হন। কোন রাষ্ট্রনায়কের এই দূর্বলতা থাকলে চুড়ান্তভাবে তার মাশুল কিন্তু জাতির ওপরই আসবে। ব্যাক্তিগত পরিচয়ের ধার না ধেরে নিরপেক্ষভাবে অধীনস্ত লোকদের যোগ্যতা যাচাই করে মূল্যায়ন যোগ্য প্রশাসকের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। আবেগ প্রবন হয়ে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া যায়, তবে যোগ্যতার মূল্যায়নে এটাকে অযোগ্য প্রশাসকের লক্ষনই বলতে হয়।
মোশতাকের মত পরীক্ষিত খলনায়ককে দুধ কলা দিয়ে পোষা হল এই জাতীয় কার্যকলাপের অন্যতম বড় উদাহরন।
ঐতিহাসিক একটি নথি। বাকশালী দাম্ভিকতার পুরোমাত্রাই রয়েছে বক্তৃতাটির ছত্রে ছত্রে। এই বক্তৃতাটিই বলে দিচ্ছে, সে সময় দেশ চালানোর সব রকম ব্যর্থতার উপাদানই শেখ মুজিব ও আওয়ামী শাসকগোষ্ঠির ভেতরেই ছিলো। সে সময়ের সরকারের কর্মসূচিটি যতোই গালভরা হোক না কেনো চাটুকারীতা, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিজম সর্ষের মধ্যে ভুত হয়ে জেঁকে বসেছিলো। ১৫ আগস্ট নির্মম সামরিক অভ্যূত্থানে পতন না হলেও মুজিব সরকারের দিন ক্রমেই ফুরিয়ে আসছিলো, তার জনপ্রিয়তা ঠেকেছিলো প্রায় তলানীতে।
অনেক ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান,
কিভাবে বলে দিচ্ছে তা তো পরিষ্কার হল না।
সহমত!!
🙁
@বিপ্লব রহমান,
একটু বুঝিয়ে দিলে সুবিধা হত, ধন্যবাদ।
সমাজ তন্ত্রের সমর্থক আমি না। কিন্তু পুঁজিবাদকে অপছন্দ করি তার থেকেও বেশি। মিশ্র অর্থনীতি টাকেই ওদুটোর থেকে ভাল মনে হয়। তবু কেন যেন মনে হয় যে পুজিবাদের থেকে সমাজতন্ত্র ঢের ভাল, যদি সেটা স্ট্যালিনের পুলিশী রাষ্ট্র না হয়।
ইউটিউবে এই ভাষনের একটা অংশ পেয়েছি অমি পিয়ালের তরফ থেকেঃ
httpv://www.youtube.com/watch?v=4BEgMGYFpcE&feature=plcp
ইউটিউবে ৭৫ এর ষড়যন্ত্র নিয়ে আব্দুল গফফার চোধুরীর করা একটা নাটক আছে। ওটা দেখতে পারেন…
httpv://www.youtube.com/watch?v=OlAvECgckEo
কিছুটা পড়েছি আপনার লেখাটা। পুরোটা পরে পড়ব। বুঝতে পারছি অসাধারন একটি জিনিস তুলে এনেছেন যা অনেকেই জানে না।
@অচেনা,
ধন্যবাদ আপনাকে। আশা করি পুরোটা পড়ে এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবেন। (F)
@মুহাইমীন, ভাই
শুধু এটুকু পড়লেই বোঝা যায় যে বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কি পরিমান মিথ্যাচার চলছে। বোল্ড গুলো তে স্পষ্ট করেই বলা আছে যে বঙ্গবন্ধু নিজেই ২৬ মার্চে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে যান গ্রেপ্তার হবার আগে। কাজেই তিনি স্বেচ্ছায় ধরা দিয়েছিলেন এমন যারা দাবি করেন তাদের কথাগুলোর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
পুরোটা কুওট করার দরকার নেই ,অনেক বড় হয়ে যাবে । তবে এই অংশটা অনেক কিছুই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে কেন বঙ্গবন্ধু ভুট্টোকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছিলেন ঢাকাতে। তিনি সত্যই বুঝতে পারেন নাই যে বেঈমান পাকিস্তানী জাত মানুষ হবার নয়।
ভাষণের বাকি অংশ নিয়ে বলব যে বঙ্গবন্ধুর মত মানুষের ভাষণের বাকি অংশ নিয়ে আর কিছু বলার নেই আমার শুধু মন্ত্র মুগ্ধের মত পড়ে গেলাম।
তবে হ্যাঁ যে কারনেই হোক বাকশাল সমর্থনযোগ্য নয়, কারণ এটা গণতন্ত্র না।
তবে ভুল মানুষের হয় আর মোটের উপর বঙ্গবন্ধু একজন মানুষই ছিলেন। কাজেই তাঁরভুল ত্রুটিগুলোর সমালোচনা অবশ্যই করতে হবে, তবে তাঁর অবদান অস্বীকার করার মত হীনরুচি আমাদের কারো থাক সেটা কাম্য নয়।
আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা ভাই পুরো ভাষণ টা এখানে লিখে পাঠানোর জন্য। (F)
মাঝে মাঝে শুনি যে বঙ্গবন্ধু নাকি ৩০ লাখ না বলে লক্ষ লক্ষ শহীদ বলেছিলেন। এটাও প্রমান হয়ে গেল যে কথাগুলো সঠিক না। উনি ৩০লাখ শহীদ আর লাখ লাখ মা বোনের ইজ্জতের কথা বলেছিলেন।
@অচেনা,
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মিথ্যাচার করে কেউ কোন দিন কিছু করতে পারবে না। সত্য তার আপন আলোয় উদ্ভাসিত হবে, হচ্ছে। হাজার হাজার নথি এখন প্রকাশিত হতে শুরু করেছে… মিথ্যা ষড়যন্ত্র সময়ের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়…
আমারও তো ভাই একই অনুভূতি। বঙ্গবন্ধু যে শব্দের যাদুকর ছিলেন তা নিঃসন্দেহে স্বীকার করে নিতে হবে।
হ্যা ঠিক আছে, তবে পরিস্থিতি বঙ্গবন্ধুকে এই সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিয়েছিল, কারণ এ দেশটা তখন গনতন্তের জন্য উপযোগী ছিল না…
তার অবদান অস্বীকার করতে পারে বেজন্মারাই।
আপনি পড়েছেন তাতেই আমি ধন্যবাদ পেয়েছি। আমি চাই বঙ্গবন্ধুর সঠিক মূল্যায়ন। তাকে ঘিরে করা শত অপপ্রচারের অবসান। ধন্যবাদ আপনাকে। (F)