নিজে কানা পথ দেখে না / পরকে ডাকে বারংবার
(এ কানার দলে আমি প্রথমেই সামি আহমেদ আনন্দকে অন্তর্ভূক্ত করে এ লেখাটা আমি স্নেহ ভরে তাকে উৎসর্গ করছি। সামি , যিনি ঈশ্বরহীন নামে মুক্ত-মনায় লিখতেন এবং স্বেচ্ছায় এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন ।)
এক ভদ্রলোক নিজেকে বেশ জ্ঞানী গুণী মনে করেন। জ্যামিতিক জ্ঞান তার প্রখর। গজ,ফুট ও ইঞ্চির হিসাব তার কাছে হাতের মাপ। স্কেল লাগে না। হাত আর আঙ্গুলের কর থাকতে স্কেলের প্রয়োজন কেন?
তার ঘরের জানালার কপাট কতটুকু প্রস্থ্য হবে এর পরিমাপ দুই হাত দিয়ে মেপে হাত দুটোকে উঁচু করে ধরে কাঠমিস্রির কাছে যাচ্ছিলেন। বৃষ্টির দিন। রাস্তা পিচ্ছিল। ভারসাম্য না রাখতে পেরে আছাড় পড়েছেন। আছাড় পড়লেও তিনি উঠার চেষ্টা করছেন না, বরং হাত দুটোকে উঁচু করেই ধরে আছেন।
আরেক পথচারী জিজ্ঞেস করছে, ভাই আপনি উঠছেন না কেন? আপনাকে কি ধরে উঠাব? আর হাত দুটোই বা উঁচুতে ধরে রাখছেন কেন?
লোকটি উত্তর দিল, ভাই, আমাকে তো হাতে ভর দিয়ে উঠতে হবে। আমি হাত দিয়ে আমার ঘরের জানালার কপাট বানানোর জন্য পরিমাপ নিয়ে কাঠমিস্ত্রির কাছে যাচ্ছিলাম। এখন হাতে ভর দিয়ে উঠতে গেলে আমার পরিমাপ চলে যাবে। আর পরিমাপ আনতে আবার বাড়ি যেতে হবে।
পাঠক, আমি কি বুঝাতে পেরেছি যে ভদ্রলোকের জানালার কপাটো বানানোর প্রয়োজন নেই। এখনও মনের জানালাই বানাননি। পরে তো কপাট।
আমরাও অনেকে নিজেকে খুব জ্ঞানী গুণী, মানী, দামী মনে করি।ভাবি, নিজের এত বেশি দর্শন ও বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় জ্ঞান এবং তা এত আলো ছড়াচ্ছে যে স্কেলের সাহায্য ছাড়াই শুধু হাত দিয়েই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডকে মাপতে পারি।
হাতে পরিমাপ নিয়ে হাঁটতে গেলে তো বটেই, আছড়ে পড়লে যে হাতের মাপটি বিচ্যুত হয় সে জ্ঞানটুকুও নেই।
তেমনি অনেকে নাস্তিক বলে পরিচয় দিয়ে নিজেকে জ্ঞানী হিসেবে প্রমাণ করতে চায়।
মুক্ত-মনা ও নাস্তিক কি সমার্থক শব্দ? এ প্রশ্নের উত্তর ও সংশয় কাটাতে আনুসঙ্গিক আরও কিছু প্রশ্ন ও সংশয় স্বাভাবিকভাবেই মনে ভীড় করেছে। যেমনঃ
আস্তিকদের নিজেকে প্রগতিশীল হিসেবে দাবি করা কি যৌক্তিক?
অনেকের মতের সাথে আমিও একমত যে আস্তিকদের নিজেকে প্রগতিশীল হিসেবে দাবি করা মোটেই যৌক্তিক নয়। কারণ একজন হিন্দু বা মুসলিমের পক্ষে মনুসংহিতায় বা কোরাণের পাশাপাশি নারী মুক্তিকে সমর্থণ করা স্ববিরোধী কথা। সোনার পাথর বাটি বা কাঁঠালের আমসত্ত্বের মত অসম্ভব ধারণা ? আর সমাজ ও সংস্কৃতিতে নারীর অবস্থান প্রগতিশীলতা নির্ণয়ের বড় মাপকাঠি।
একজন আস্তিক আল্লাহ বিশ্বাস করে, তার অনুগত পথে চলে। আবার মানবতাবাদী বলেও নিজেকে দাবি করে। কীভাবে সম্ভব? অমুসলিম মানেই তো মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের বাইরে। বহু ইফতার পার্টিতে গিয়ে বিব্রতবোধ করি যখন ইফতারের মাঝখানে নামাজ পড়ে দোয়া করে মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনা করে ও মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করে। একবার তো আমি বলেই বসলাম, আমাদের জন্যও কিছু বলুন।
আর আস্তিক বলে যারা দাবি করে তারা সব সময় আস্তিক নয় বা মোটেই আস্তিক নয়। যেমনঃ একজন চোর বা একজন ঘুষখুর সরকারী কর্মকর্তা পাঁচওয়াক্ত নামাজ পরলে বা নিয়মিত প্রাত্যহিক সন্ধ্যা আহ্নিক-পূজা অর্চনা করলেই কি তার আস্তিকতার প্রমাণ মিলে? সে তো ধর্মের মূল চেতনা (spirit) বলে যা দাবি করা হয় তা ই মানছে না।
নাস্তিক মানে কি প্রগতিশীল? অথবা ঈশ্বরবিহীন হলেই কি অনৈতিক? এ সম্বন্ধে অবশ্য অনেক লেখা ( মুক্ত-মানায়ও ) আছে। আর আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে একজনও সম্পূর্ণ আস্তিক বা পরিপূর্ণ নাস্তিক মানুষ পাইনি।
সব সংশয়বাদী। “ ক্ষণেক দেখি দেখি শূন্যে ভাসে , ক্ষণেক দেখি জলে।”
বিভিন্ন ব্লগে নাস্তিক ও আস্তিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে বা অন্য কোন কোন বিষয়ে — যেমনঃ মোঃ ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংক,রবীন্দ্র নাথ বা পহেলা বৈশাখ বিষয়ে কেউ কেউ এমন সব অযৌক্তিক যুক্তি দেয়, একজন আরেকজনকে এমনভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে যে তাদেরকে মুক্ত মনা তো দূরে থাক, শুধু বদ্ধ মন নয়, তালাবদ্ধ মন বললেও কম বলা হবে। মন একেবারে সীলগালা করা।
মুক্ত মনা মানে তো শুধু অলৌকিক শক্তিতে অবিশ্বাস নয়, বিজ্ঞানের জয়গান গাইতে গাইতে উন্মাতাল হয়ে পথ চলতে গিয়ে দুর্বলকে পায়ের নীচে পিষ্ট করে ফেলা নয়। তাকে অন্যের মতামত শুনে তা যুক্তি দিয়ে খন্ডন করতে হবে।
পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে। এ সত্যকে যদি আমি না মানি তবে আমাকে মূর্খ বলে বকাবকি করলে মুক্ত –মনাদের দল বাড়বে না। আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে, শিখিয়ে দিতে হবে কীভাবে হল। কয়েক শত বছর আগে মীমাংসিত সত্যে যদি আমার আস্থা না থাকে তা আমার সীমাবদ্ধতা। যদি আমি না বুঝি বা না বুঝতে চাই তবে নতুন কোন পদ্ধতি বা কৌশল আবিষ্কার করতে হবে আমাকে বুঝাবার জন্য। আমি মূর্খ। আমি কুসংস্কারাচ্ছন্ন। আমি অন্ধবিশ্বাসী। আমি বোকা, আমি জ্ঞানপাপী, আমার মাথায় ঘিলু নেই। আমি আস্তিক। সবই সত্য। কিন্তু এ সত্য যদি সত্যই থাকে তবে তো মুক্ত মনাদের আসল সত্য আমার মনের দরজা ভেদ করতে পারবে না। আমি কি বলি তা শুনে সে মোতাবেক মুক্ত-মনাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। অধৈর্য হয়ে, অন্যকে খাটো করার মনোবৃত্তি নিয়ে আর শুধুমাত্র ব্লগে ব্লগে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করে মুক্ত-মনাদের দল ছড়াবে না।
পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য করে রাখা, সমাজকে সংস্কারমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখা,ব্যক্তিগত সম্পর্কের পরিসরকে জটিলতা মুক্ত ও সংবেদনশীল রাখাও একজন মুক্ত-মনার বৈশিষ্ট্য বলে আমি মনে করি।
অনেকেই ব্যক্তি ধর্ম, নাস্তিক্যবাদ, আস্তিক্যবাদ, বিজ্ঞানের সাথে প্রচলিত মূল্যবোধের সম্পর্ক, আধুনিকীকরণের নামে শিশু শিক্ষার সাথে নৈতিক জীবন যাপনের দ্বন্ধ্ব সৃষ্টি করছে। অন্য আরেক গোষ্ঠি ধর্মকে আঁকড়ে ধরে মধ্যযুগীয় জীবন যাপনে বাধ্য করানোর জন্য রাজনীতিসহ সর্বত্র হিংসার পথকে পূঁজি করছে।
ঈশ্বর, স্বর্গ ও পরকাল ভিত্তিক ধর্মীয় জীবন যাপনে অভ্যস্ততা নয়, নয় আধুনিক জীবন যাপনের নামে অনৈতিক জীবন যাপন। আবার দুটোর সংমিশ্রণে জগাখিচুরিও কাম্য নয়।
কাম্য কি তবে সহনীয়, মধ্যপন্থী, আপোষ করা মনোভাব? না, তা ও নয়।
কাম্য মুক্ত জীবনযপন। স্বাধীন জীবনবোধ। মুক্ত –মনা। মুক্ত চিন্তা, মুক্তান্বেষা। মুক্ত বুদ্ধি। প্রচলিত অচলায়তনকে অস্বীকার করে সামনে এগিয়ে চলা । জীবনকে নিজের ইচ্ছেমত থামিয়ে দেওয়া নয়?
আমাদের ছোটবেলা আদর্শলিপি পড়তে হত। অ তে অসৎ সঙ্গ ত্যাগ কর। আ তে আলস্য দোষের আঁকর। ঈশ্বরকে বন্দনা করিও। উর্ধ্বমুখে পথ চলিও না। ঝগড়া করিলে বিপদ ঘটে। ঠককে বিশ্বাস করিও না। ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রত্যেকটি বর্ণ দিয়ে একটি করে আদর্শিক বাক্য তৈরি। আর শ্লেটে মাটির পেন্সিল দিয়ে লেখা শিখেছি। ঈশ্বরকে বন্দনা করিও শিখলেও ঈশ্বর বলতে মানস পটে কোন সাকার মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অথবা নিরাকার কোন অস্তিত্ব নিয়েও ভীতির সৃষ্টি হয়নি। ঈশ্বর মানে স্বর্গে যাওয়ার মাধ্যম নয়। ঈশ্বরবোধ মানে ছিল সত্যবাদিতা ও মানবতাবোধের অনুশীলন।
উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৭২-৭৩ সালে বঙ্গ ভারতের ইতিহাস বইয়ে ধর্ম নির্বিশেষে গৌতম বুদ্ধের জীবনী পড়তে হত; যার মূল বিষয় ছিল তার অষ্ট মার্গের কথা। সৎ কাজ, সৎ চিন্তা। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূর জীবনীও ছিল। কলসীর কান্দার বাড়ি খেয়েও ভালবাসার কথা, প্রেমের বিলানোর কথা বলা।আরও ছোট ক্লাসে বাংলা বইয়ে হযরত মোহাম্মদের পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত যে বুড়ি একদিন কাঁটা না দেখে বুড়ির বাড়ি গিয়ে বুড়িকে সেবা করার কাহিনী। যদিও বিশেষ ধর্মীয় পুরুষদের গল্প। কাহিনী। ঘটনা। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা।তবে তা সর্বজনীনরূপে উপস্থাপিত হয়েছিল। আর এগুলো পড়ে বিশেষ ধর্ম নয়, পারলৌকিক সুখ নয়, অলৌকিক শক্তির মাহাত্ম্য নয় — নিজের ছোট জীবনকে আদর্শিক ভাবে গড়ে তোলার প্রেরণা ছিল। লৌকিক জীবন সুন্দর করার মন্ত্র ছিল। আজ এ মন্ত্র ছড়ানো প্রয়োজন।
ভালো লাগলো চিন্তার বহুমুখী প্রতিফলন দেখে।
সমাজকে সংস্কারমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তো ময়লাকে ‘ময়লা’ই বলতে হবে এবং তা ঝেঁটিয়েই বিদায় করতে হবে। সেক্ষেত্রে কারো কারো গায়ে আঘাত তো লাগতেই পারে।
আমার কেনো যেনো মনে হয় শুধু মানবিক আচরণ ই যথেষ্ট নয়। মানবিক আচরণের পেছনে “উদ্দেশ্যের সততা ” থাকা প্রয়োজন। ধরুন গন মাধ্যমের কারনেই হোক বা যে কারোনেই হোক রক্ত দেয়া মানবিক কাজ জেনে কেউ রক্ত দান করেন কিন্তু তার উদ্দেশ্য যদি হয় বন্ধু বান্ধবের প্রশংসা পাওয়া অথবা তার প্রয়োজন হলে রক্ত দান কেন্দ্র তাকে রক্ত দিতে বাধ্য থাকবে এটি নিশ্চিত করা তবে সেই মানবিক , সৎ কাজের উদ্দেশ্য যে সঠিক নয় তা বলাই বাহুল্য।
গীতা দি, চিন্তা জাগানো লেখার জন্যে ধন্যবাদ।
@কেয়া রোজারিও,
রক্ত দেয়ার উদ্দেশ্য সৎ,যদি সে আত্মীয়, রক্তীয় নির্বিশেষে দান করে।সেখানে এ কাজ দেখে কেউ প্রশংসা করতেই পারে। কেয়া, চিন্তা জেগেছে জেনে ভাল লাগল।
লেখা বেশ ভালই লেগেছে দিদি। কিছুটা আত্ম সমালোচনার ইঙ্গিত আছে। সেটা অবশ্যই দরকার। নাস্তিক হওয়ার পরে প্রথম প্রথম মনে করতাম আস্তিকরা মহা খারাপ, এরা ভণ্ড, এদের দ্বারা সমাজের কোন উপকার হবে না আর নাস্তিকরা সব বিশাল মানবতাবাদী, দেশ ও সমাজের চিন্তায় সদা উৎকণ্ঠিত। এখন সময়ের সাথে সাথে বুঝেছি আস্তিকতা নাস্তিকতা খুব বড় কোন ফ্যাক্টর না। ভাল মন্দ হওয়ার সাথেও এগুলোর খুব একটা সম্পর্ক নেই। কে ভাল আর কে মন্দ হবে এটা আলটিমেটলি নির্ভর করে ব্যাক্তির উপর। তবে হ্যাঁ, নাস্তিকের যেহেতু নির্দিষ্ট কোন গ্রন্থ বা সিস্টেমের প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য নেই তার পক্ষে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ও প্রগতিশীল চিন্তা ধারণ করা তুলনামূলক ভাবে সহজ। নতুন জ্ঞানের সন্ধানও সে সহজে করতে পারে। আপনার একটা কথার সাথে পুরোপুরি সহমত যে পূর্ণাঙ্গ আস্তিক বা নাস্তিক পাওয়া কঠিন। সবাই আসলে কম বেশি সংশয়বাদী। এটাই স্বাভাবিক। জ্ঞানের সঙ্গী সংশয়। সংশয় ছাড়া নতুন জ্ঞানের জন্ম হয় না। আর আস্তিক নাস্তিক বড় কথা না। চণ্ডীদাস বহু আগেই সব কথার শেষ কথা বলে গেছেন-
” শুনহ মানুষ ভাই
সবার উপরে মানুষ সত্য
তাহার উপরে নাই।”
@আলোকের অভিযাত্রী,
সহমতের জন্য ধন্যবাদ।
খুব ভালো লাগলো। আপনার এই লেখাগুলো চালিয়ে যান।
@আফরোজা আলম,
চালিয়ে যাবার চেষ্টা করছি।
পর্যবেক্ষক নির্ভর এই পৃথিবীতে , দুই ভিন্ন পর্যবেক্ষক কোন বিষয় বা বস্তুকে ভিন্ন ভাবে দেখবে এটাই স্বাভাবিক বা সত্য।(স্টিফেন হকিংসের সর্বশেষ তত্ব অনুযায়ী) সেখানে “আস্তিকদের নিজেকে প্রগতিশীল হিসেবে দাবি করা কি যৌক্তিক?” এই
প্রশ্ন করা বা এর সাথে একমত হওয়াটাই তো অযৌক্তিক, মুক্তমনা চেতনার পরিপন্থি। মুক্তমনার কাছে ধ্রুব সত্য বলে কিছু নেই। অসম্ভবকে যৌক্তিকভাবে মেনে নেয়ার জন্য মনকে প্রস্তুত বা খোলা যে রাখে , সেই তো মুক্তমনা। তেমনটিই আমি বুঝি।
@ফারুক,
আমি স্পষ্টতই বলেছি যে অনেকের মতের সাথে আমিও একমত যে আস্তিকদের নিজেকে প্রগতিশীল হিসেবে দাবি করা মোটেই যৌক্তিক নয়। কারণ একজন হিন্দু বা মুসলিমের পক্ষে মনুসংহিতায় বা কোরাণের পাশাপাশি নারী মুক্তিকে সমর্থণ করা স্ববিরোধী কথা। সোনার পাথর বাটি বা কাঁঠালের আমসত্ত্বের মত অসম্ভব ধারণা ? আর সমাজ ও সংস্কৃতিতে নারীর অবস্থান প্রগতিশীলতা নির্ণয়ের বড় মাপকাঠি।
কাজেই আমার এ প্রশ্ন মোটেই অযৌক্তিক ও মুক্তমনা চেতনার পরিপন্থি নয় বলেই আমি দাবি করছি।
@ফারুক,
আরে আরে একি! ফারুক ভাই যে? গীতাদি’ রেও কোয়ান্টাম দেহাইতাসেন দেহি। পারেনও মিয়াঁ। এই যে হুনেন, বিজ্ঞানির নাম কিন্তু স্টিফেন হকিং, স্টিফেন হকিংস না :))
হে-প্পি নিউ ইয়ার (D)
@কাজী রহমান, ক্যান, গীতাদিরে কোয়ান্টাম কোয়ান্টাম দেহানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি হইছে নাকি?
হকিং সাহেবের নাম ঠিক মতো লিখিনি বলে কি তিনি মনোক্ষুন্ন হয়েছেন? ঠিক আছে ভাই , আবারো তার নাম নেয়ার সুযোগ পেলে , সঠিক ভাবেই লিখব।
আপনাকেও হে-প্পি নিউ ইয়ার (C)
@কাজী রহমান,
কোয়ান্টাম দেখানো মানে কী? কোয়ান্টাম মেকানিক্স?
প্রগতিশীল ব্যাপারটা আমার কাছে অনেক আপেক্ষিক মনে হয়। কিন্তু সে আরেক আলোচনা।
আস্তিকরা প্রগতিশীল কিনা এটা চিন্তা করতে গিয়ে মনে হল, আস্তিকরা আসলে উদার কিনা।
আমার মনে পরলো আমি একবার একজন হিন্দু প্রতিবেশীকে সালাম দিচ্ছিলাম, পরে আরেকজন প্রতিবেশী সেটা শুনতে পেয়ে আমাকে বললো অমুসলিমদের আদাব দিতে হয়। আমি বুঝলাম না আমি কেন একজন হিন্দু মানুষের উপর শান্তি বর্ষিত হক এমন প্রার্থণা কেন করতে পারবো না! অনেক উদার মুসলিম সর্বোচ্চ যেটা করেন, প্রথমে মুসলিম উম্মাহ এবং তারপর সকল মানুষ জাতির জন্য প্রার্থনা করেন। তারমানে আপনি যদি একজন অমুসলিম ওখানে থাকেন, আপনি অটমাটিক্যালি দ্বিতীয় সারির মানুষ। এ কেমন উদারতা! আমি আমরা আগে, তুমি তোমরা পরে। এ না উদারতা, না প্রগতশীল!
(L)
@নির্মিতব্য,
সমাজে ভাল মানুষ তৈরি করার কারখানা যে নেই বললেই চলে।
বেশ কিছু দিন পরে গীতাদি কে পাওয়া গেল। 🙂
এদেরকে আমার মূর্খ মনে হয়। কারন নাস্তিকতার সাথে জ্ঞ্যানী হবার কোন সম্পর্ক আছে বলে তো মনে হয় না। নাস্তিকতা মানে ঈশ্বর নামে যে মহাপুরুষটা আছে শুধু মাত্র তাতে অবিশ্বাস করা। জ্ঞ্যানের অন্যান্য শাখার বিন্দু মাত্র খবর না রেখেও নাস্তিক হওয়া সম্ভব। এমন নাস্তিক আমার পরিচিতির গন্ডির ভেতরেই আছে।
না। একজন নাস্তিক শুধু ঈশ্বর সম্পর্কিত ব্যাপারে মুক্ত-মনা হয়ে অন্যান্য ব্যাপারে স্রেফ ছাগল হতে পারে। কিন্তু মুক্তমনা বলতে আমরা বুঝি এমন একজন মানুষ যে কিনা সমস্ত ব্যাপারেই মুক্তমনা।
এখানে আস্তিক এবং প্রগতিশীলতার সংজ্ঞা পরিষ্কার করাটা দরকার মনে করছি। আস্তিক মানে এমন একজন মানুষকে বোঝায় যিনি ঈশ্বরে বিশ্বাসী। কেউ একজন মুসলমান, হিন্দু অর্থাৎ কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে অবিশ্বাসী হয়েও আস্তিক হতে পারে।
প্রগতিশীলতা মানে সময়ের গতিশীলতায় কোন নতুন এবং যৌক্তিক ঘটনার সাথে নিজের সম্পৃক্ততা ঘোষনা করা।
সংজ্ঞা দুটো মাথায় রেখে মনে হয় বলা যায় একজন আস্তিক যৌক্তিক ভাবেই প্রগতিশীল হতে পারে।
নাস্তিক মানেই প্রগতিশীল নয়। কারন নাস্তিকতার সাথে প্রগতিশীলতার শতকরা হিসাবে হয়ত ১০ভাগ সম্পর্ক আছে। কথাটা এভাবে বললে হয়ত সঠিক হত যে, একজন যুক্তিবাদী মানুষ প্রগতিশীল কি না। তাহলে নিঃসন্দেহে উত্তরটা হত, হ্যা।
আপনি ধরে নিচ্ছেন যথেষ্ট পরিমান বুঝিয়ে সবাইকে মুক্তমনা বানানো সম্ভব। এটা মনে হয় সঠিক নয়। আপনার কি মনে হয় জাকির নায়েককে বুঝিয়ে আপনি মুক্তমনা বানাতে পারবেন? 🙂
আমি যতটুকু বুঝতে পারছি আপনি ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করার বিপক্ষে। একজন মানুষ হিসেবে যদি আপনার বিরোধিতা করার অধিকার থেকে তাহলে আমারও মানুষ হিসেবে সমর্থন করার অধিকার আছে।
আরেকটু খুলে বলি, বাঙলাদেশের রাজনীতিকদের নিয়ে কোন ব্যঙ্গ করে কোন কার্টুন ছাপালে কি আপনি বিরোধিতা করবেন? করবেন না। কারন আপনি বুঝতে পারছেন তারা জনগনের সাথে স্রেফ মামদোবাজী করছে। আবার সেই আপনিই ধর্মের কার্টুনাইজেশনকে খারাপ বলছেন। 🙂
আপনার এই কথাটাই কিন্তু আগের কথাটাকে কন্ট্রাডিক্ট করছে। ধর্মের বা আস্তিকদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের বিরোধীতা মানেই হল আপোষ। আবার আপনিই বলছেন আপোষ করা যাবে না। মুক্ত জীবন চালাতে হবে। 🙂
এইসব আদর্শলীপিগুলোকে আমার কাছে স্রেফ গার্বেজ মনে হয়। আপনিই বলেন এই পড়ে যদি আসলেই শিশু মনে ঝড় তুলে সব আদর্শ মানুষ বানানো সম্ভব হত তাহলে বাঙলাদেশের আজকে এই অবস্থা হয়? একটা বাচ্চা ছেলেকে তার প্রকৃত জ্ঞ্যান হবার আগেই এসব নৈতিকতার(??) শিক্ষা দেওয়া মানে মানবিকতার অপমান। কী দরকার এসবের? একটা বাচ্চা ছেলে কেন এসব শিখবে? আপনিই বলেন এসব শিখে আমরা একেকটা আমরা কাঠের ঢেকি ছাড়া আর কী প্রসব করেছি। বাচ্চা কালে শিখবে সদা সত্য কথা বলবে আর বড় হয়ে যখন বিবিএ মার্কেটিং-এ পড়বে তখন দেখবে মিছা কতা না কইলে ভাত পাইব না। কী দরকার এসব সুশিলগীরির? আমি বুঝি না।
@সাইফুল ইসলাম,
মুক্ত জীবনবোধ মানে অন্য অনেক বৈশিষ্ট্যের সাথে অন্যকে অহেতুক খোঁচানো নয় বলেই আমার মতামত ছিল।
বুঝতে হবে।না হলে তো নতুন ভাবে শিখতে হবে, মিথ্যা বলা মহা লাভ।
আস্তিকতা নাস্তিকতা মূল্যহীন যদি না স্বার্থপরতাহীনতা মানবতা নৈতিকতা থাকে।এগুলা সামাজিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল।তাই সর্বোপরি বলতে চাই, বিবেকবোধই আসল তবে একে ধর্মের সমতুল্য করার যৌক্তিকতা নাই।
@ডেথনাইট,
বিবেকবোধ নির্ধারণের মাপকাঠিটি অবশ্যই হতে হবে মানবিকবোধে সমুজ্জ্বল।
দাবী করা যৌক্তিক কি-না সেটা বিতর্কিত ব্যাপার। তবে আস্তিক হয়েও প্রগতিশীল হওয়া সম্ভব। আমার ম্নে হয়, আস্তিকতা নাস্তিকতা কিংবা প্রগতিশীলতার বিচার কর্মে, মুখে কি বললো সেটাতে নয়।
অনেককেই দেখেছি, আকণ্ঠ মদ্যপানে ডুবে আছে, বিশবছরে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়েনি, যাচ্ছেতাই জীবন-যাপন করছে। তথাকথিত, কবীরা না কি সব বড় বড় গুণাহ আছে, ওইসব করে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু যখনই গড্ এর প্রশ্ন আসছে সাথে সাথে হুজুর হয়ে গেলো। যেন তাঁর চেয়ে বড় আস্তিক হওয়া সম্ভব নয়। কি দাম আছে এই আস্তিকতার? জিনিসটা এই জন্যই বলছি যে, এর উল্টোটাও সত্যি। অর্থাৎ, আস্তিক দাবী করেও প্রগতিশীল হতে পারেন। সেক্ষেত্রে, দাবীটা অমূলক। কিন্তু, আমাদের সমাজে আস্তিক নাস্তিক মুখের বুলি ছাড়া কিছুই নয়। তাই, আস্তিক-নাস্তিক দাবী করলেও তাদের কর্মকাণ্ড ভিন্ন। অতএব, কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে যে কেউ যেকোনো কিছুই হতে পারেন। সর্বোপরি বলতে চাই, বিবেকের চেয়ে বড় কোনো ধর্ম নেই।
@মইনুল রাজু,
সমাজ ও ব্যক্তির বিবেককে সৎ পথে পরিচালিত করার মানসিকতা অর্জন করার জন্য চাই বিভিন্ন কর্মসূচি।
সকলই গরল ভেল
সুখের লাগিয়ে এ ঘড় বাঁধিনু
অনলে পুড়িয়া গেল।
বাল্যকালে পড়া ,ভাবসম্প্রাসারন করতে দেয়া হত। কি লিখতাম তা আর মনে নেই।তবে আস্তিক/নাস্তিক উভয়ই আগুন নিয়ে খেলা করে।কেউ দুনিয়ায় ,কেউ দোজখে। নাস্তিক শব্দ টা ছোটবেলায় আমার কাছে ভয়াবহ শব্দ ছিল। যখন হাফ প্যান্ট পড়তাম তখন আমি প্রথম নাস্তিক দেখি আমার বন্ধুর বাবাকে।বন্ধুই বলেছিল তার বাবা নাস্তিক,ভদ্রলোক ছিলেন প্রচন্ড বদমেজাজী, বন্ধূকে বেদম পেটাতেন পান থেকে চুন খসলে আমাদের সামনেই। আরেক বন্ধুর গৃহ শিক্ষক ছিলেন নাস্তিক , ঈশ্বর কে ব্যাঙ্গ করতেন বেচারা অকালে মারা যান।পাড়ার বন্ধু ইকবালকে দেখেছি ঘোর নাস্তিক এবং মাস্তান,হটাৎ দেখা গেলো ইকবাল দাড়ি টুপি পড়ে মসজিদ এ যাচ্ছে।কি ব্যাপার?,আমি নিজেই জিজ্ঞেস করলাম ইকবাল উত্তর দিয়েছিল, হটাত একদিন ঘুম থেকে উঠে মনে হোল ,এই যে হাজার হাজার প্রতিদিন মারা যায়?,এরা কোথায় যায়?।এদের মাঝে কেউ হিন্দু ঘড়ের ,কেউ মুস্লিম,কেউ খ্রিস্টান। তাই পাক্কা মুসলিম হয়ে গেলাম। কিন্তু মূল কারনের সাথে আমি দাড়ি,টুপি , মসজিদের সম্পর্ক বের করতে পারি নাই,চেস্টাও করি নাই।কারন ইকবাল বেপরোয়া। সংশয়বাদিতা মানে সংশয় প্রকাশ করা। প্রতিষ্ঠিত সত্যের ব্যাপারেও সংশয় করা, তার মানে ত এই নয় যে সত্যকে অস্বীকার করা। প্রতিষ্ঠিত সত্যের ফাক ফোঁকর থাকলে পুরন করা এই যা। তবে সংশয়বাদিতার নামে পলায়নবাদী হওয়া নিজেকে ফাকি দেয়া।যা নেই তা ত নেই ই ,সংশয় আবার কিসের?। আর যদি থাকেই প্রমান পাওয়া গেলে না হয় দেখা যাবে… এই ত, এত আছে আর নেই এর খেলা আমরা খেল্ব কেন?।মধ্যম পথ অবলম্বন করা ত সংশয়বাদিতা নয়। তবে তা উত্তম !!, গুরুজনেরা বলেন। আস্তিকতায় ফাকি থাকে থাকবেই ,কারন আস্তিকতা মানসিক আশ্রয় দেয়, নাস্তিক আশ্রয়হীন। নাস্তিকের হাতে একটিমাত্র অস্র আছে। ম্রিত্যু ভয় নেই। পরকালে শাস্তির ভয় নেই। ভাল মানুষ হওয়া টা চর্চার ব্যপার,এখানে আস্তিক/নাস্তিক অবান্তর। আত্মহত্যা আস্তিক/নাস্তিক দুজনেই করে। কানাডাতে সিগারেট এর প্যাকেট এর গায়ে স্টাটিক্সটিক্স কানাডার পরিসংখ্যান আছে এখানে সরবচ্ছ মৃত্যুর কারন তামাক দ্বিতীয় আত্মহত্যা । মানুষ কেন আত্মহত্যা করে তার কারন বহুবিধ। এর সাথে কোণ নির্দিষ্ট কারন কে চিহ্ণিত করা মুশকিল, যদি না তীব্র মানসিক সমস্যা না থেকে থাকে। অনেক মানসিক সমস্যা আছে যার যন্ত্রনা এতটাই তীব্র যে মানুষ আত্মহনন এর পথ বেছে নেয়। আনন্দ এর বড় ভাই ও তাই করেছিল। যেহেতু আমরা নিশ্চিত না আনন্দ কেন এ পথ বেছে নিয়েছিল তাই আনন্দের জন্য এ আশাবানী ই ব্যাক্ত করি , আনন্দ দোজখে অন্তত যাবে না। কারন যদি থাকে তবে বেহেশত ই শুধু আছে,দোজখ যে নেই আমি নিশ্চিত,কারন কে জানে হয়ত আনন্দের জন্য প্রিথীবিটাই দোজখ ছিল। ঈশ্বর যদি থেকে থাকেন তবে যে মহাবিস্ফরনের মাধ্যমে এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তার বিপরীতে আমি শীতল বেহেশত ছাড়া ত আর কিছুর অস্তিত্ব পাই না।
@সপ্তক,
এজন্যেই তো নাস্তিককে হতে হবে পৃথিবীটাকে সুন্দর রাখার সৈনিক।
লিখাটা ভালো লেগেছে।
একমত…তবে –
আপনি কোন অর্থে বলেছেন যদিও বুঝতে পেরেছি তবুও একটি কথা না বলে পারছিনা। পাশ্চাত্যের এমন এক দেশে আছি যেখানে সবাই স্বাধীন ভাবেই জীবন যাপন করছে। কারো কিছুতেই কারো কিছু যায় আসেনা। সড়ক দুর্ঘটনা দেখেও গাড়িকে চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে না থামিয়ে। সহকর্মী চুরি করছে দেখেও তাকে নাকি কিছু বলতে পারবোনা। “নীতির বুলি” আওড়াতে গেলে শুনতে হয় “কোম্পানীর এত টাকা তাও তুমি কোম্পানীকে ডিফেন্ড করছ কেন?”
এই কথা শুনে মনে হয় কাকে কি বলছি। ম্যানেজার চোর, কর্মচারী চোর, আবার এটা নিয়ে অনেক গর্ব! আমাদের মাঝে চুরি শব্দটি যে কত বড় ভয়ানক ব্যাপার এখানে তা নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় এখানকার মানুষের মাঝে মরাল ভ্যালুর প্রচন্ড অভাব তার শুরুটা কোথা হতে?
ধর্মের অভাবে? আমরা কিন্তু ছোটবেলায় “আল্লাহ গুনাহ দেবে” “আল্লাহ আগুনে ফেলে জালিয়ে দেবে” এসব ভয়ে অন্যের জিনিসে হাত দিতাম তো নাই, তার উপর থাকতো বাবা মায়ের হাতে প্রচন্ড মার খাবার ভয় আর লজ্জা। এখানে মা তার সাত আট বছরের সন্তানকে নিয়ে চুরি করতে যায় (ফ্রি ট্রেইনিং ছোটবেলা হতে) তাহলে কি পরিবার দায়ী? নাকি শিক্ষা ব্যবস্থা?
আমাদের মতন অমন শিক্ষা এদেশের বাচ্চা দের হতে অনেক দুরত্বে।
অন্য প্রসঙ্গে –
মুক্তমনা ও নাস্তিক সমার্থক শব্দ কিনা তা জানার সাথে সাথে মুক্তমনারা অথবা মুক্তমনা কি জিনিস তাও জানা নিশ্চয়ই প্রয়োজন। অন্য অনেক কিছুর মতন আজকাল এটাও শুধুই একটি খেতাবে পরিণত হয়েছে। উদাহরণ? চারপাশে ভুরি ভুরি… আঙ্গুল দিয়ে কাউকে আর প্রকাশ নাইবা করলাম।
আমরা প্রতিনিয়ত শিখছি, জানছি। গেল বছর একটি ব্যাপারে যা মনে হত এ বছর হয়ত তার উলটো মনে হয়। কারণ মানুষ হিসেবে আমাদের বিকাশ প্রতিনিয়ত ঘটছে, এবং তাই বাঞ্চনীয়। একটা সময় মনে হত নাস্তিক অর্থেই ভালো মানুষ, আর আস্তিক মাত্রই খুনি। জীবনের এ প্রান্তে এসে বুঝলাম আস্তিক, নাস্তিক, মুক্তমনা, এসব কিছুই নয়। একজন ভালো মানুষ হওয়াটাই একান্ত জরুরী। মানবতা বোধ যার মাঝে থাকবে সে যতই ঈশ্বর ভক্ত হোক না কেন মানুষের অকল্যান তার দ্বারা হবে না। ধর্মগ্রন্থ যতই বলুক না কেন ঈশ্বর সবার উপরে, একজন ধার্মিক মানুষের মাঝে যদি মানবিকতা থাকে তবে সে ওই কথা বিশ্বাস করবে ঠিকই তবে কাজে বরাবরই স্থান দেবে মানুষের। মানবতা বোধই তাকে ধিরে ধিরে টেনে বের করে নিয়ে আসবে আরো শেখার, জানার আর বোঝার প্রচেষ্টায়।
অন্য দিকে একজন নাস্তিক যদি অমানবিক হয় তবে তার কাছে “আমি আমি আমি” ছাড়া আর কিছুই মুল্যবান নয়।
জানিনে অপ্রাসঙ্গিক কিনা, তবে সব ক্ষেত্রেই মানুষের মনকেই আমি প্রাধান্য দিয়ে এসেছি। মন যদি কুমন হয় তখন চিন্তার ধারা কুদিকেই যাবে। মেধা, প্রতিভা, এবং অনেক জ্ঞান ধারণ করার ক্ষমতা নিয়ে অনেকেই জন্মায়, কজন জন্মায় একটি বিশাল মন নিয়ে? তাই মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তি কেমন তাই দিয়েই তাকে বিচার করা উচিত বোধ হয়।
“সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।”
যতই আমরা ভাষণ দেই ধর্ম নিয়ে, বিজ্ঞান নিয়ে, নাস্তিকতা, আস্তিকতা আর মুক্তমনা নিয়ে। মানুষ ছাড়া ধর্ম যেমন কিছুই নয়, তেমনি মানুষ ছাড়া বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিও কিছুই নয়। তাই যা কিছুই ভাবা হোক যেভাবেই ভাবা হোক তা যেন শুধুই মানব জাতির কল্যাণেই হয়।
***কেউ একজন “ঈশ্বরহীন” কে সুন্দর করে স্মরণ করেছেন দেখে ভালো লাগল।***
@ছিন্ন পাতা,
সে বিশাল মন সৃষ্টির জন্যইতো আমাদের এত উদ্যোগ।
সত্যি, ছোটবেলায় পড়া কাহিনীগুলোই শেষ পর্যন্ত আমাদের জীবনটাকে গড়ে দেয়। এগুলো কেবল ধর্মীয় কাহিনী হয়, জীবন নির্মাণের কাহিনী। এমন একটা গল্প আমার জীবনের একরকম আদর্শই হয়ে আছে। গল্পটা আপনার জানা থাকার কথা – ‘বিবেকের বাণী’।
@প্রতিফলন,
‘বিবেকের বাণী’ মনে করতে পারছি না এ মূহুর্তে। একটু ইঙ্গিত দিলে হয়তো বা মনে পড়ত।
@গীতা দাস,
চরিত্রগুলোর নাম ঠিক মনে নেই। তবে ঘটনাটা এরকম। এক মুনি তার আশ্রমে বসেছিল। একসময় দেখলো এক লোক দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে হন্তদন্ত হয়ে তার আশ্রমে এসে লুকিয়েছে। কিছুক্ষণ পরে এক দল দস্যু এসে সেই লোকের খোঁজ করছিল। মুনিকে জিজ্ঞেস করছিল – ওখানে কেউ এসেছে কিনা। মুনি পড়েছে বিপদে – এখন যদি সত্য কথা বলে তাহলে ঐ লোকের প্রাণ যাবে, আর মিথ্যা বললে পাপ হবে। এ বিষয়ে আগে কে কি করেছে তাও জানা ছিল না। ঐ মুহূর্তে মুনির বিবেক বলেছিল, পাপের চিন্তা করার চেয়ে লোকটার প্রাণ বাঁচানোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই মুনি মিথ্যা করে বলেছিল যে, না, কেউ আসেনি।
অর্থাৎ, ধর্মবিধানের চেয়ে বিবেকের বাণী বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
@প্রতিফলন,
গল্পটি মনে পড়ে গেল। মূল কথা ছিল—- অপ্রিয়ে সত্যি কথা বলিতে নাই।