হিজড়া, প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালের এক দুর্ভাগা শিকার !
রণদীপম বসু
স্মৃতি হাতড়ালে এখনো যে বিষয়টা অস্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে, শৈশবের অবুঝ চোখে সেইকালে বুঝে উঠতে পারতাম না, কারো বাড়িতে সন্তান জন্ম নিলে শাড়ি পরা সত্ত্বেও বিচিত্র সাজ-পোশাক নিয়ে কোত্থেকে যেসব মহিলা এসে নাচগান বা ঠাট্টা-মশকরা করে তারপর বখশিস নিয়ে খুশি হয়ে চলে যেতো, এদের আচার আচরণ ও বহিরঙ্গে দেখতে এরা এমন অদ্ভুত হতো কেন ! শৈশবের অনভিজ্ঞ চিন্তা-শৈলীতে পুরুষ ও নারীর পার্থক্যের জটিলতা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা না জন্মালেও স্বাভাবিকতার বাইরে দেখা এই অসঙ্গতিগুলো ঠিকই ধরা পড়েছে, যা প্রশ্ন হয়ে বুকের গভীরে জমে ছিলো হয়তো। পরবর্তী জীবনে তা-ই কৌতুহল হয়ে এক অজানা জগতের মর্মস্পর্শী পীড়াদায়ক বাস্তবতাকে জানতে বুঝতে আগ্রহী করে তুলেছে। আর তা এমনই এক অভিজ্ঞতা, যাকে প্রকৃতির নির্মম ঠাট্টা বা রসিকতা না বলে উপায় থাকে না !
অনিঃশেষ ট্র্যাজেডি
দেহ ও মানসগঠনে পূর্ণতা পেলে প্রাণীমাত্রেই যে মৌলিক প্রণোদনায় সাড়া দিয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়, সেটা যৌন প্রবৃত্তি। অনুকুল পরিবেশে এই প্রবৃত্তি চরিতার্থ করা যেকোন স্বাভাবিক প্রাণীর পক্ষেই অত্যন্ত সাধারণ একটা ঘটনা। মানব সমাজের প্রমিত বা ভদ্র উচ্চারণে এটাকেই প্রেম বা প্রণয়ভাব বলে আখ্যায়িত করি আমরা। পুরুষ (male) ও স্ত্রী (female), লিঙ্গভিত্তিক দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়া প্রাণীজগতে এই মৌলিক প্রণোদনার সমন্বিত সুফল ভোগ করেই বয়ে যায় প্রাণীজাত বংশধারা। অথচ প্রকৃতির কী আজব খেয়াল ! কখনো কখনো এই খেয়াল এতোটাই রূঢ় ও মর্মস্পর্শী হয়ে উঠে যে, এর কোনো সান্ত্বনা থাকে না। মানবসমাজে প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালের সেরকম এক অনিঃশেষ ও দুর্ভাগা শিকারের নাম ‘হিজড়া’(hijra)। সেই আদি-প্রণোদনায় এরা তাড়িত হয় ঠিকই, কিন্তু তাদের জন্মগত লিঙ্গ-বৈকল্যধারী অক্ষম ক্লীব (neuter) বা নপুংশক দেহ যা তৃপ্ত করতে সম্পূর্ণ অনুপযোগী ! এরা ট্রান্সজেন্ডার (trans-gender), না-পুরুষ না-স্ত্রী। অর্থাৎ এমন এক লৈঙ্গিক অবস্থা যা দৈহিক বা জেনেটিক কারণে মেয়ে বা ছেলে কোন শ্রেণীতেই পড়ে না।
আমার অফিস পাড়ায় সপ্তাহের একটা নির্দিষ্ট দিনে দেখি সালোয়ার-কামিজ বা শাড়ি পরিহিত তরুণীর মতো এদের কয়েকজন এসে প্রতিটা দোকান থেকে অনেকটা প্রাপ্য দাবির মতোই ঠাট্টা-মশকরা করতে করতে দু’টাকা-চার টাকা-পাঁচ টাকা করে স্বেচ্ছা-সামর্থ অনুযায়ী তোলা নিয়ে যায়। এই তোলাটুকু দিতে কোন দোকানির কোনো আপত্তিও কখনো চোখে পড়েনি। বরং সহযোগিতার মায়াবি সমর্থনই চোখে পড়েছে বেশি। পুরনো কৌতুহলে আমিও তাদের সেই রহস্যময় গোপন জগতের সুলুক-সন্ধানের চেষ্টা করি। তাদের নীল কষ্টগুলো সত্যিই নাড়া দিয়ে যায় কোন এক কষ্টনীল অনুভবে।
মুছে যায় পুরনো পরিচয়
জন্মের পর পরই যে ত্রুটি চোখে পড়ে না কারো, ধীরে ধীরে বড় হতে হতে ক্রমশই স্পষ্ট হতে থাকা সেই অভিশপ্ত ত্রুটিই একদিন জন্ম দেয় এক অনিবার্য ট্র্যাজেডির। সমাজ সংসার আত্মীয় পরিজন পরিবার সবার চোখের সামনে মুছে যেতে থাকে একটি পরিচয়। আপনজনদের পাল্টে যাওয়া আচরণ, অবহেলা, অবজ্ঞাসহ যে নতুন পরিচয়ের দুঃসহ বোঝা এসে জুড়তে থাকে দেহে, তাতে আলগা হতে থাকে পরিচিত পুরনো বন্ধন সব, রক্তের বন্ধন মিথ্যে হতে থাকে আর ক্রমেই মরিয়া হয়ে একদিন সত্যি সত্যি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পরিবার থেকে সে। অভিশপ্ত নিয়তি এদের ফেরার পথটাও বন্ধ করে দেয় চিরতরে। কারণ অভ্যস্ত সমাজের বাইরে তার একটাই পরিচয় হয়ে যায় তখন- হিজড়া !
কই যায় সে ? সেখানেই যায়, যেখানে তাদের নিজস্ব জগতটা নিজেদের মতো করেই চলতে থাকে, বেদনার নীল কষ্টগুলো ভাগাভাগি করে নীল হতে থাকে নিজেরাই। হিজড়া পল্লী। কেননা পরিবারের মধ্যে থেকে বড় হতে হতে তার যে পরিবর্তনগুলো ঘটতে থাকে, তা অন্য কারো চোখে স্পষ্ট হয়ে ওঠার আগেই ধরা পড়ে যায় ভ্রাম্যমান অন্য হিজড়াদের চোখে। তাদের দুর্ভাগ্যের আগামী সাথী হিসেবে আরেকটা দুর্ভাগা প্রাণীকে তারা ভুলে না। এরা উৎফুল্ল হয় আরেকজন সঙ্গি বাড়ছে বলে। একসময় এরাই তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় তাদের নিজেদের পল্লীতে। পল্লী মানে সেই বস্তি যেখানে সংঘবদ্ধ হয়ে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বাস করে হিজড়ারা। যেখানে তাদের নিজস্ব সমাজ, নিজস্ব নিয়ম, নিজস্ব শাসন পদ্ধতি, সবই ভিন্ন প্রকৃতির।
অন্য জীবন
যে সমাজ তারা ছেড়ে আসে সেই পুরনো সমাজ এদের কোন দায়-দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নয়, তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে প্রস্তুত নয় কিংবা সামাজিক স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছুক নয় বলে তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হয়ে যায় মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে সাহায্য ভিক্ষা করা। এভাবে অন্যের কৃপা-নির্ভর বেঁচে থাকার এক অভিশপ্ত সংগ্রামে সামিল হয়ে পড়ে এরা। স্বাভাবিক শ্রমজীবীদের মতো উপার্জনের কাজে এদেরকে জড়িত হতে দেখা যায় না। নিজস্ব পদ্ধতিতে হাটে বাজারে তোলা উঠানোর পাশাপাশি বিনামূল্যে ভোগ্যপণ্য সংগ্রহ করেই এরা জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৌতুককর মনোরঞ্জনকারী হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে নাচগানে অংশ নিয়ে থাকে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বিকৃত যৌনপেশাসহ নানান অপরাধের সাথেও জড়িয়ে পড়ে।
হিজড়াদের সমাজে প্রতিটা গোষ্ঠীতে একজন সর্দার থাকে। তারই আদেশ-নির্দেশে সেই গোষ্ঠী পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে হিজড়াদের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ বলে জানা যায়। তবে এই ক্ষেত্রে হিজড়াদের প্রকৃত জনসংখ্যা নিয়ে কিছুটা ধুয়াশা থেকেই যায়। কারণ নিজেদেরকে আড়ালে রাখা অর্থাৎ বহিরঙ্গে অপ্রকাশিত হিজড়াদের পরিসংখ্যান এখানে থাকার সম্ভাবনা কম। বাইরে থেকে যে চেহারাটা প্রকট দেখা যায় সেই লিঙ্গে আত্মপ্রকাশ করে এই বিরূপ সমাজে অনেকেই নিজেদেরকে সযত্নে ঢেকে রাখেন বলে বাইরের মানুষ তা জানতে পারে না। যে ক্ষেত্রে এই বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট অর্থাৎ ঢেকে রাখার মতো নয় এবং বাইরে থেকে বুঝা যায়, কেবল সেক্ষেত্রেই মানুষ নিজেকে হিজড়া হিসেবে প্রকাশিত করে এবং পরিবার থেকে বের হয়ে যায়। রাজধানী ঢাকাতে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় পনের হাজার। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানরত হিজড়ারা পাঁচ থেকে পঞ্চাশজন হিজড়া সর্দারের নিয়ন্ত্রণে গোষ্ঠীবদ্ধ রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের তথ্য। সর্দারদের নিজস্ব এলাকা ভাগ করা আছে। কেউ অন্য কারো এলাকায় যায় না বা তোলা ওঠায় না, এমনকি নাচগানও করে না। একেকজন হিজড়া সর্দারের অধীনে অন্তত অর্ধশতাধিক হিজড়া রয়েছে। হিজড়া সর্দারের অনুমতি ছাড়া সাধারণ হিজড়াদের স্বাধীনভাবে কিছু করার উপায় নেই। এমনকি সর্দারের আদেশ ছাড়া কোন দোকানে কিংবা কারো কাছে হাত পেতে টাকাও চাইতে পারে না এরা। সর্দারই ৫/৬ জনের একেকটি গ্রুপ করে টাকা তোলার এলাকা ভাগ করে দেয়। প্রত্যেক সর্দারের অধীনে এরকম ৮ থেকে ১০ টি গ্রুপ থাকে। প্রতিদিন সকালে সর্দারের সঙ্গে দেখা করে দিক নির্দেশনা শুনে প্রতিটি গ্রুপ টাকা তোলার জন্য বের হয়ে পড়ে। বিকেল পর্যন্ত যা টাকা তোলা হয়, প্রতিটি গ্রুপ সেই টাকা সর্দারের সামনে এনে রেখে দেয়। সর্দার তার ভাগ নেয়ার পর গ্রুপের সদস্যরা বাকি টাকা ভাগ করে নেয়।
প্রতি সপ্তাহে বা নির্দিষ্ট সময় পর পর হিজড়াদের সালিশী বৈঠক বসে। ১৫ থেকে ২০ সদস্যের সালিশী বৈঠকে সর্দারের নির্দেশ অমান্যকারী হিজড়াকে কঠোর শাস্তি দেয়া হয়। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় বেত দিয়ে পেটানোসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক নির্যাতন এবং কয়েক সপ্তাহের জন্য টাকা তোলার কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। কখনো কখনো জরিমানাও ধার্য্য করা হয় ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। দণ্ডিত হিজড়াকে তার নির্ধারিত এলাকা থেকে তুলে এই টাকা পরিশোধ করতে হয়। এই শাস্তি হিজড়ারা মাথা পেতে মেনে নেয় এবং কেউ এর প্রতিবাদ করে না।
হিজড়া কেন হিজড়া ?
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের জন্মপরবর্তী লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়, মূলত তারাই হিজড়া। জীবনের স্বাভাবিক আনন্দ থেকে বঞ্চিত হিজড়াদের কামনা বাসনা আছে ঠিকই, ইচ্ছাপূরণের ক্ষেত্রটা নেই কেবল। এদের শারীরিক গঠন ছেলেদের মতো হলেও মন-মানসিকতায় আচার আচরণে সম্পূর্ণ নারীর মতো (she-male)। তাই তাদের সাজ-পোশাক হয়ে যায় নারীদের সালোয়ার কামিজ কিংবা শাড়ি। অনেকে গহনাও ব্যবহার করে। কৃত্রিম স্তন ও চাকচিক্যময় পোশাক ব্যবহার করতে পছন্দ করে এরা।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, হিজড়াদের নাকি বৈশিষ্ট্যগতভাবে দুইটি ধরন রয়েছে, নারী ও পুরুষ। নারী হিজড়ার মধ্যে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য থাকলেও স্ত্রীজননাঙ্গ না থাকায় তার শারীরিক গঠন অস্বাভাবিক। পুরুষ হিজড়াদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তবে হিজড়ারা নারী বা পুরুষ যাই হোক, নিজেদেরকে নারী হিসেবেই এরা বিবেচনা করে থাকে। সারা বিশ্বে প্রকৃতি প্রদত্ত হিজড়াদের ধরন একইরকম। শারীরিকভাবে পুরুষ, কিন্তু মানসিকভাবে নারীস্বভাবের হিজড়াদেরকে বলা হয় ‘অকুয়া’। অন্য হিজড়াদেরকে বলা হয় ‘জেনানা’। এছাড়া সামাজিক প্রথার শিকার হয়ে আরব্য উপন্যাসের সেই রাজ-হেরেমের প্রহরী হিসেবে পুরুষত্বহীন খোজা বানানো মনুষ্যসৃষ্ট সেইসব হিজড়াদেরকে বলা হয় ‘চিন্নি’।
হিজড়া থেকে কখনো হিজড়ার জন্ম হয় না। প্রকৃতিই সে উপায় রাখে নি। কুসংস্কারবাদীদের চোখে একে সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ কিংবা পিতামাতার দোষ বা প্রকৃতির খেয়াল যাই বলা হোক না কেন, আধুনিক বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা অন্যরকম। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী মাতৃগর্ভে একটি শিশুর পূর্ণতা প্রাপ্তির ২৮০ দিনের মধ্যে দুটো ফিমেল বা স্ত্রী ক্রোমোজোম এক্স-এক্স প্যাটার্ন ডিম্বানু বর্ধিত হয়ে জন্ম হয় একটি নারী শিশুর এবং একটি ফিমেল ক্রোমোজোম এক্স ও একটি মেল বা পুরুষ ক্রোমোজোম ওয়াই মিলে এক্স-ওয়াই প্যাটার্ন জন্ম দেয় পুরুষ শিশুর। ভ্রূণের পূর্ণতা প্রাপ্তির একটি স্তরে ক্রোমোজোম প্যাটার্নের প্রভাবে পুরুষ শিশুর মধ্যে অণ্ডকোষ এবং মেয়ে শিশুর মধ্যে ডিম্বকোষ জন্ম নেয়। অণ্ডকোষ থেকে নিঃসৃত হয় পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেন এবং ডিম্বকোষ থেকে নিঃসৃত হয় এস্ট্রোজন। পরবর্তী স্তরগুলোতে পুরুষ শিশুর যৌনাঙ্গ এন্ড্রোজেন এবং স্ত্রী শিশুর যৌনাঙ্গ এস্ট্রোজনের প্রভাবে তৈরি হয়। ভ্রূণের বিকাশকালে এই সমতা নানাভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। প্রথমত ভ্রূণ নিষিক্তকরণ এবং বিভাজনের ফলে কিছু অস্বাভাবিক প্যাটার্নের সূচনা হতে পারে। যেমন এক্স-ওয়াই-ওয়াই অথবা এক্স-এক্স-ওয়াই। এক্স-ওয়াই-ওয়াই প্যাটার্নের শিশু দেখতে নারী-শিশুর মতো। কিন্তু একটি এক্সের অভাবে এই প্যাটার্নের স্ত্রী-শিশুর সব অঙ্গ পূর্ণতা পায় না। একে স্ত্রী-হিজড়াও বলে। আবার এক্স-এক্স-ওয়াই প্যাটার্নে যদিও শিশু দেখতে পুরুষের মতো, কিন্তু একটি বাড়তি মেয়েলি ক্রোমোজম এক্সের জন্য তার পৌরুষ প্রকাশে বিঘ্নিত হয়। একে পুরুষ হিজড়াও বলে।
প্রকৃতির খেয়ালে হোক আর অভিশাপেই হোক, এই হিজড়াত্ব ঘোচাবার উপায় এখন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের নাগালে। চিকিৎসকদের মতে শিশু অবস্থায় চিকিৎসার জন্য আনা হলে অপারেশনের মাধ্যমে সে স্বাভাবিক মানুষের মতো পরিবারের মধ্যে থেকেই জীবন-যাপন করতে পারে। হয়তো সে সন্তান ধারণ করতে পারবে না, কিন্তু পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে পড়বে না হয়তো। দেখা গেছে যে অসচ্ছল নিম্নশ্রেণীর পরিবার থেকেই বাইরে বেরিয়ে যাবার প্রবণতা বেশি। তখন তাদের জীবনধারা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এরা না পারে নারী হতে, না পারে পুরুষ হতে। ফলে অন্যান্য অনেক অসঙ্গতির মতো হোমোসেক্স বা সমকামিতায় অভ্যস্ত হয়ে যায়।
হিজড়া কি মানুষ নয় ?
মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা হলো- দাসত্ব থেকে মুক্তির অধিকার, ভোটের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, কাজের অধিকার, মানসম্মত জীবন-যাপনের অধিকার, আইনের আশ্রয় ও নির্যাতন থেকে মুক্তির অধিকার এবং বিবাহ ও পরিবার গঠনের অধিকার। এইসব অধিকার পরিপন্থি কর্মকাণ্ডকে প্রতিরোধের জন্য আরো বহু চুক্তি ও সনদও রয়েছে। কিন্তু এসব অধিকারের ছিটেফোটা প্রভাবও হিজড়াদের জীবনে কখনো পড়তে দেখা যায় না। মানবাধিকার বঞ্চিত এই হিজড়ারা তাহলে কি মানুষ নয় ?
মানুষের জন্মদোষ কখনোই নিজের হয না। আর হিজড়ারা নিজেরা বংশবৃদ্ধিও করতে পারে না। এ অপরাধ তাদের নয়। স্বাভাবিক পরিবারের মধ্যেই অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে তাদের জন্ম। তবু প্রকৃতির প্রহেলিকায় কেবল অস্বাভাবিক লিঙ্গ বৈকল্যের কারণেই একটা অভিশপ্ত জীবনের অপরাধ সম্পূর্ণ বিনাদোষে তাদের ঘাড়ে চেপে যায়। প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালে একটা মেয়ে যদি ছেলে হয়ে যায়, কিংবা একটা ছেলে ঘটনাক্রমে মেয়ে হয়ে গেলেও এরকম পরিণতি কখনোই নামে না তাদের জীবনে, যা একজন হিজড়ার জীবনে অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়। খুব অমানবিকভাবে যৌনতার অধিকার, পরিবারে সম্মানের সঙ্গে বসবাসের অধিকার, চাকরির অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার ইত্যাদি মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে যায় এরা। কিন্তু এসব অধিকার রক্ষা ও বলবৎ করার দায়িত্ব ছিলো রাষ্ট্রের। কেননা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযাযী রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে- ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতৃপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আওতাধীন কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার’ প্রতিষ্ঠা করা। আদৌ কি কখনো হয়েছে তা ? অথচ পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া হিজড়ারা প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তার অভাবে পৈতৃক সম্পত্তির বা উত্তরাধিকারীর দাবি প্রতিষ্ঠা থেকেও বঞ্চিত থেকে যায়। এমন বঞ্চনার ইতিহাস আর কোন জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের হয়েছে কিনা জানা নেই।
প্রকৃতির নির্দয় রসিকতার কারণে হিজড়াদের গতানুগতিকতার বাইরে ভিন্ন পদ্ধতির অনিবার্য যৌনতাকেও ইসলাম প্রধান দেশ হিসেবে সহজে মেনে নেওয়া হয় না। এমনকি ব্রিটিশ আমলেও এদেশে হিজড়াদের বিতাড়িত করা হয়েছে বলে জানা যায়। যৌনতার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ভারতীয় আইনে হিজড়াদের যৌনতাকে ‘সডোমি’ অর্থাৎ অস্বাভাবিক ও অনৈতিক হিসেবে চিহ্ণিত করে পেনাল কোড (১৮৬০) এর ৩৭৭ ধারায় এটাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মানবাধিকার রক্ষাকল্পে রাষ্ট্রীয় কোন উদ্যোগ কখনো হাতে নেয়া হয়েছে বলে শোনা যায় নি।
তাই বিবেকবান নাগরিক হিসেবে এ প্রশ্নটাই আজ জোরালোভাবে উঠে আসে, হিজড়ারা কি তাহলে রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিক নয় ? রাষ্ট্রের সংবিধান কি হিজড়াদের জন্য কোন অধিকারই সংরক্ষণ করে না ?
তবে খুব সম্প্রতি গত ০২ জুলাই ২০০৯ ভারতে দিল্লী হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ যুগান্তকারী এক রায়ের মাধ্যমে ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে সমকামী সম্পর্ক’ ফৌজদারী অপরাধের তালিকাভুক্ত হবে না বলে ঘোষণা করেছে। ভারতের নাজ ফাউন্ডেশনের দায়ের করা এই জনস্বার্থমূলক মামলাটির রায়ে আদালত সমকামীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির অপপ্রয়োগকে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি, গণতন্ত্রের পরিপন্থি এবং অসাংবিধানিক বলে অভিমত দিয়েছে। আদালতের মতে এই প্রয়োগ ভারতীয় সংবিধান স্বীকৃত কয়েকটি মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি, যেগুলো হলো- আইনের দৃষ্টিতে সমতা (অনুচ্ছেদ ১৪), বৈষম্যের বিরুদ্ধে সুরক্ষা (অনুচ্ছেদ ১৫), জীবনধারণ ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার (অনুচ্ছেদ ২১)। রায়টির অব্যবহিত পরেই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রায়টিকে স্থগিত করার জন্য সুপ্রীম কোর্টের কাছে আবেদন করা হয় যা মঞ্জুর হয়নি (সূত্রঃ) । এই রায় ভারতের হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য এক বিরাট আইনি সহায়তার পাশাপাশি আমাদেরর দেশের জন্যেও একটা উল্লেখযোগ্য নমুনা হিসেবে উদাহরণ হবে। কেননা সেই ব্রিটিশ ভারতীয় এই আইনটিই আমাদের জন্যেও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি হয়ে এখনো কার্যকর রয়েছে।
তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি নয় কেন ?
যুগ যুগ ধরে ফালতু হিসেবে অবজ্ঞা অবহেলা ঘৃণা টিটকারী টিপ্পনি খেয়েও বেঁচে থাকা ছোট্ট একটা বঞ্চিত জনগোষ্ঠী এই হিজড়াদের জন্য রাষ্ট্রের কোন বাজেট বা কোন পুনর্বাসন কার্যক্রম আদৌ হাতে নেয়া হয় কিনা জানা নেই আমাদের। আমরা শুধু এটুকুই জানি, পরিবার ও সমাজের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া হিজড়ারা বেঁচে থাকার তাগিদেই দলবদ্ধভাবে বসবাস করে বা করতে বাধ্য হয়। মানুষ হিসেবে তাদেরও যে অধিকার রয়েছে, তা সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে হিজড়াদের উন্নয়নে হাতে গোনা কয়েকটি সংগঠন খুব ছোট্ট পরিসরে হলেও মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। বন্ধু সোস্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, সুস্থ জীবন, বাঁধন হিজড়া সংঘ, লাইট হাউস, দিনের আলো ইত্যাদি সংগঠনের নাম কম-বেশি শোনা যায়। এদের কার্যক্রম ততোটা জোড়ালো না হলেও এইডস প্রতিরোধসহ কিছু উন্নয়ন কার্যক্রমে এরা যুক্ত রয়েছে বলে জানা যায়। সেখানে রাষ্ট্রের কোন অনুদান নেই। তাই রাষ্ট্রের কাছে হিজড়াদের প্রধান দাবি আজ, তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি। কেননা এই লিঙ্গস্বীকৃতি না পেলে কোন মানবাধিকার অর্জনের সুযোগই তারা পাবে না বলে অনেকে মনে করেন।
তবে আশার কথা যে, এবারের ভোটার তালিকায় এই প্রথম হিজড়াদেরকে অন্তর্ভূক্ত করার প্রশংসনীয় একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ বিবেকবান মানুষের সমর্থনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থারও প্রশংসা কুড়িয়েছে। আমরাও এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবু প্রায় এক লাখ হিজড়াকে এবারের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা এখনো রয়ে গেছে বলে জানা যায়। কেননা তাদেরকে তাদের নিজের পরিচয় হিজড়া হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি বা করা যায়নি। হয়েছে ছেলে বা মেয়ের লিঙ্গ পরিচয়ে, যেখানে যা সুবিধাজনক মনে হয়েছে সেভাবেই। ফলে এতেও হিজড়া হিসেবে সবকিছু থেকে বঞ্চিত এই সম্প্রদায়ের আদতে কোন স্বীকৃতিই মেলেনি। ফলে হিজড়াদের প্রাপ্য অধিকার ও মানুষ হিসেবে পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ আইনের দরকার হয়ে পড়েছে আজ, যেখানে যৌক্তিক কারণেই তাদের হোমোসেক্স বা সমকামিতার অধিকার প্রতিষ্ঠাও জরুরি বৈ কি। আর এজন্যেই আজ অনিবার্য হয়ে উঠেছে হিজড়াদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মানবিক দাবিটাও।
প্রিয় পাঠক, আপনার স্বাভাবিক কর্মব্যস্ততার ফাঁকে হঠাৎ করেই কোন হিজড়ার সাথে দেখা হয়ে গেলে হয়তোবা স্বতঃকৌতুহলি হয়ে ওঠবেন আপনি। এই কৌতুহলের মধ্যে অজান্তেও কোন কৌতুক মেশাবার আগেই একটিবার অন্তত ভেবে দেখবেন কি, এই না-পুরুষ না-স্ত্রী সত্তাটি আপনার আমার মতোই সবক’টি নির্দোষ দৈহিক উপাদান নিয়েই কোন না কোন পারিবারিক আবহে জন্মেছিলো একদিন। মানবিক বোধেও কোন কমতি ছিলো না। কিন্তু প্রকৃতি তাকে দিয়েছে ভয়াবহ বঞ্চনা, যা আপনার আমার যে কারো ক্ষেত্রেই হতে পারতো ! অসহায় পরিবার ত্যাগ করেছে তাকে, অবিবেচক সমাজ করেছে প্রতারণা। নিয়তি করেছে অভিশপ্ত, আর রাষ্ট্র তাকে দেয়নি কোন সম্মান পাবার অধিকার। কোন অপরাধ না করেও ভাগ্য-বিড়ম্বিত সে কি আপনার আমার একটু সহানুভূতি থেকেও বঞ্চিত হবে ?
|তথ্য-কৃতজ্ঞতা: হিজড়া সম্প্রদায় তৃতীয় লিঙ্গ নয় কেন/ঝর্ণা রায়/সাপ্তাহিক ২০০০,বর্ষ১১ সংখ্যা২৭, ১৪ নভেম্বর ২০০৮|
আমরা যাদের হিজড়া বলে জানি বা চিনি তারা কি আসলেই হিজড়া? দেহাকৃতি হিজড়ার মতো হলেও তাদের অধিকাংশই এক সময় সাধারণ মানুষ ছিল। কিন্তু লিঙ্গ কর্তনের মধ্য দিয়ে হিজড়ার খাতায় নাম লেখায়।
রাজধানীর শ্যামলী, ঢাকা জেলাধীন ধামরাই ও খুলনার ফুলতলায় কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিকে পেশাদার ও ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের দিয়েই পুংলিঙ্গ কেটে হিজড়া তৈরি করা হয়। এসব ক্লিনিক যেন এক একটি হিজড়া তৈরির কারখানা। হিজড়া নামের আড়ালে লিঙ্গ কর্তন করা হাজার হাজার পুরুষ ঢাকাসহ সারাদেশে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, খুন-খারাবিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। চাঁদাবাজির টাকায় গড়ে তুলেছে বাড়ি-গাড়ি। অঢেল সম্পদ। ঢাকায় বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় এই হিজড়ারা নিয়োগ দিয়ে রেখেছে নিজস্ব সোর্স। ওই সোর্সের মাধ্যমেই কোনো নবজাতক জš§গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তারা খবর পেয়ে যায়। আর সে তথ্যের ভিত্তিতে বেঁধে দেয় চাঁদার পরিমাণ। তারা দলবদ্ধভাবে নবজাতকের পরিবারের উপর হামলে পড়ে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোন চক্রের খপ্পরে পড়ে বা স্বেচ্ছায় লিঙ্গ কর্তনকারী হিজড়াদের সঙ্গে অপরাধীদেরও যোগসাজশ রয়েছে। হিজড়া পরিবারের কাছে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার এলাকার লোকজনও তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। ফলে এরা একবার যখন বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে, তখন আর ফেরার উপায় থাকে না। এ কারণে বিভিন্ন চক্রের সঙ্গে মিশে যে কোন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। পতিতাবৃত্তির সঙ্গেও তাদের অনেকে জড়িয়ে পড়েছে। লিঙ্গ কাটা হিজড়াদের তাণ্ডবে জš§গতভাবে পৃথিবীতে আসা হিজড়ারাও কখনওবা অসহায় হয়ে পড়ে। সরকারের বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনীও তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আবার হিজড়াদের অসহায় জীবন নিয়ে তারা নিজেরাও খুব যে সুখী তা নয়। চক্রের পেছনে পড়ে তারা নিজেরাও সমাজ-সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন। না বলা কষ্টও রয়েছে তাদের। যুগান্তরের দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তাদের বিষয়ে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুংলিঙ্গ কর্তন করে হিজড়ায় পরিণত করার বিষয়টি লিঙ্গ কর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সার্জিক্যাল চিকিৎসকরাও স্বীকার করেছেন। সার্জিক্যাল ক্লিনিকে পুংলিঙ্গ কেটে বিশেষ বিশেষ ওষুধ সেবনের মধ্য দিয়ে তাদের লিঙ্গ কর্তন এবং শারীরিক অবয়বে পরিবর্তন আনা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, লিঙ্গ কর্তনকারী হিজড়াদের মধ্যে খোদ রাজধানীতেই রয়েছে প্রায় ২০ হাজার। রাজধানীসহ সারাদেশে অশিক্ষিত, অভাবী ছেলেদের পাশাপাশি যেসব ছেলের একটু মেয়েলি ঢং রয়েছে এবং যেসব ছেলে বা পুরুষ সমকামিতায় আসক্ত তারা নানা ফাঁদে পড়ে বা প্রলুব্ধ হয়ে হিজড়ার খাতায় নাম লেখায়। তাদের সংগ্রহের জন্য রয়েছে দালাল চক্র। আবার চিহ্নিত কিছু হিজড়া নেতাও ওইসব ছেলেদের হিজড়া বানাচ্ছে। যারা হিজড়া হচ্ছে তারা সবাই ৩০ বছর আগেই এই অপকর্ম সেরে ফেলছে। যেসব হিজড়া পুরুষাঙ্গ কেটে হিজড়া হয়েছে, তারা সবাই হিজড়া হওয়ার পর পাল্টে ফেলে বাবা-মায়ের দেয়া নাম। হিজড়ার এ তালিকায় থাকা অনেকের স্ত্রী-সন্তান, পরিবার-পরিজন থাকলেও সহজ পথে, অল্প সময়ে এবং নিরাপদে অর্থ আয়ের জন্য এ পথ বেছে নিয়েছে। তবে তাদের অনেকেই এখন অনুতপ্ত। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চাইলেও আর সম্ভব নয়। তাদের নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংগঠন, সমাজবিজ্ঞানী ও হিজড়া সংগঠনের কর্মকর্তারাও এসব ঘটনা স্বীকার করেছেন। এমনকি লিঙ্গ কর্তনকারী চিকিৎসকরাও যুগান্তরের কাছে এসব নির্মম ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন।
আপন, রহিমা, নাছিমা, জনা ও জয়াদের হিজড়া হওয়ার পেছনের কথা : জনার আগের নাম ছিল জাহাঙ্গীর। মানিকগঞ্জ জেলাধীন দৌলতপুর থানার দৌলতপুর পিএস পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র। দেখতে বেশ সুন্দর। নাদুস-নুদুস চেহারা। হঠাৎ করে একদিন নিখোঁজ। তার বাবা-মা দিশেহারা হয়ে পড়লেন ছেলে কোথায় গেল। সব আÍীয়-স্বজনের বাসায় খোঁজ করা হল। কিন্তু সন্ধান মেলে না। থানায় দায়ের করা হলো সাধারণ ডায়েরি। কিন্তু পুলিশও তার কোন হদিস পায়নি। আড়াই বছর আগের ঘটনা। এক রাতে জাহাঙ্গীর মানিকগঞ্জের ধনাই গ্রামে বাবার বাড়ি এসে হাজির। কান্নাকাটি জুড়ে দিল। তার কান্না থামতেই চায় না। তাকে অনেক বুঝানোর পর সে জানায়, হিজড়াদের একটি চক্র তাকে স্কুলের সামনে থেকে ফুসলিয়ে খুলনা ফুলতলা নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাকে একটি ক্লিনিকে ঢোকানো হয়। চিকিৎসকের হাতে অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি। জাহাঙ্গীর আঁতকে ওঠে। তাকে উলঙ্গ করে অস্ত্রোপচার বেডে চিৎ করে শোয়ানো হয়। জাহাঙ্গীর বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ডাক্তারের হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে। কিন্তু হিজড়া বাহিনী পিছু ছাড়ে না। তারা চাপ দেয় ডাক্তারকে। ব্যস। জাহাঙ্গীরের পুংলিঙ্গ কাটা পড়ল। সে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। জ্ঞান ফেরার পর তাকে কিছুদিন চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর তার নামকরণ করা হল জনা। সেই থেকে সে জনা হিজড়া। জাহাঙ্গীরের এক ভাই কাইয়ুম। থাকেন ঢাকায়। কাজ করেন ১৯২, ফকিরাপুলের একটি ছাপাখানায়। সেখানে গিয়ে কাইয়ুমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি যুগান্তরকে বলেন, জাহাঙ্গীরের বয়স যখন ১৪ বছর তখন সে একটি চক্রের খপ্পরে পড়ে হিজড়াদের খাতায় নাম লেখায়। আমাদের ভাইদের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট। সবার আদরের। কিন্তু তার লিঙ্গ কেটে হিজড়া হওয়ার পর সে আর বাড়িমুখী হয়নি। মাঝে মাঝে রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়িতে আসে। মা-বাবাকে এক নজর দেখে আবার চলে যায়। তার জন্য আমাদের পুরো পরিবারকে আজ চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। জাহাঙ্গীরের সঙ্গে একই শ্রেণীতে পড়তো শাওন। সে জানায়, জাহাঙ্গীর ভালো ছাত্র ছিল। সে হিজড়া হয়েছে এটা শুনে আমরা সবাই খুব দুঃখ পেয়েছি। জাহাঙ্গীর এখন জনা হিজড়া নামে পরিচিত। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সে নিজের ছবি পত্রিকায় না দেয়ার শর্তে যুগান্তরকে বলে, এটা আমার ভাগ্যে ছিল। পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলার কারণে আমার এই জীবনের আর কোন মূল্য নেই।
আপন হিজড়া : সোহেল মাহমুদ। এখন আপন হিজড়া। বয়স ২৭ বছর। তার পিতার নাম সিরু খাঁ। গ্রামের বাড়ি ভোলায়। বর্তমানে তার বাবা-মা ও ভাইবোন থাকেন দক্ষিণখান থানার ফায়দাবাদ এলাকায়। সে থাকে শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পেছনে বাউনিয়া এলাকায়। ফায়দাবাদ এলাকার জয়নাল মাতব্বরের বাড়িতে ১ বছর আগে ভাড়ায় থাকত আপনরা। গত ১৫ মার্চ ফায়দাবাদের ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় এলাকার আবদুস সালাম, লাইলী বেগম ও রেহেনাসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা যুগান্তরকে জানান, আপনরা দুই ভাই ও ৪ বোন। তার বড় ভাই সুজন গাড়িচালক। এক বোন রেনু ৮ মাস আগে লেবাননে গেছে। আপন (সোহেল) যখন ৮ম শ্রেণীতে পড়তো, তখন সে হিজড়াদের সঙ্গে মেশা শুরু করে। লাইলী বলেন, একদিন আমার মেয়ে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে সোহেলকে হিজড়াদের সঙ্গে নাচতে দেখে আমাকে এসে ঘটনা বলে। সে দিনই আমি জানলাম সে হিজড়াদের সঙ্গে চলাফেরা করে। মাঝেমধ্যে হিজড়াদের বাসায় নিয়ে আসত। আমরা তখনও বুঝেনি সে হিজড়ার খাতাই নাম লেখাবে। প্রায় ৮/৯ বছর আগে সোহেল হিজড়া হয়েছে। হিজড়া হওয়ার পর সে বাড়ি থাকত না। হিজড়াদের সঙ্গে থাকত। মাঝেমধ্যে বোরকা পরে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসত। এখন আর আপনকে দেখি না। কারণ তার মা-বাবা এলাকা ছেড়ে দিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, আপনের বাবা-মা লোকলজ্জার কারণে ফায়দাবাদের অন্য একটি বাড়িতে ভাড়া নেয়। ৪২ নং ফায়দাবাদের ওই বাড়িটি আরিফ নামের এক ব্যক্তির। সেখানে গিয়ে জানা যায়, আপনের কারণে তার বাবা-মা সেখান থেকে বাসা পাল্টিয়ে আবদুল্লাপুর আদম আলী মার্কেটের কাছে ভাড়া নিয়েছে।
অনুসন্ধানকালে আপনের সন্ধান পাওয়া যায়। তখন তারা ৭/৮ জন মিলে চাঁদার টাকা সংগ্রহ করে বাসায় ফিরছিল। ১৫ মার্চ দুপুরের ঘটনা। উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের জহুরা মার্কেটের সামনে কথা হয় আপন হিজড়ার সঙ্গে। সে যুগান্তরকে জানায়, বাউনিয়া এলাকায় একসঙ্গে তারা প্রায় ১৫ জন হিজড়া থাকে। তার দেয়া তথ্যমতে, একসঙ্গে থাকা সবাই লিঙ্গ কেটে হিজড়া হয়েছে। সে জানায়, আমিও ছেলে হয়েই জšে§ছিলাম। আমি আবদুল্লাহপুর মালেকাবানু আদর্শ বিদ্যা নিকেতনে পড়তাম। সেখান থেকে এসএসসি পাস করেছি। ২০০১ সালে আমি বাড়ি ছেড়ে হিজড়াদের সঙ্গে চলে আসি। এরপর ২০০৪ সালের দিকে খুলনার ফুলতলার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে লিঙ্গ কেটে ফেলি। এখন আমি পুরোপুরি হিজড়া। তবে আমার বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গে এখনও সম্পর্ক আছে। আমার আয়ের একটা বড় অংশ বাবা-মাকে দিই। আপন বলে, রাস্তায় আমার মায়ের সঙ্গে দেখা হলে মা কথা বলে না। আমাকে দেখলে কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুখ লুকায়। আমি হিজড়া হয়েছি এতে আমার মা-বাবা লজ্জা পায় সমাজে। আমার এক বোন লেবাননে থাকে। আরেক বোন উত্তরায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে। এসব বলতে বলতে চোখের পানি ছেড়ে দেয় আপন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাই রাতে। তাও আবার বোরকা পরে। মানুষ আমাকে দেখলে বাসায় এসে ভিড় জমায়। মা-বাবা, ভাই-বোনের সঙ্গে খোলামেলা মিশতে, তাদের সঙ্গে থাকতে খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু এই ইচ্ছা আর পূরণ হওয়ার নয়।
রহিমা হিজড়ার কথা : নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মিজমিজি গ্রামে বাড়ি ছিল রহিমের। তারা দুই ভাই আর এক বোন। বেশ কয়েক বছর আগে রহিম থেকে রহিমা হয়ে যায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে। এখন পুরোদস্তুর মেয়ের মতো দেখালেও রহিমা লিঙ্গ কর্তন করা একজন হিজড়া। রহিম থেকে রহিমা হিজড়া। এরপর সে আর বাড়ি যায় না। থাকে রাজধানী সংলগ্ন কাঁচপুরে। গত ১০ মার্চ রহিমার সঙ্গে কথা হয়। রহিমা জানায়, বাবা-মায়ের ছোট ছেলে ছিলাম আমি। আমার নাম ছিল রহিম। শখ ছিল পাখি শিকারের ও নাচ-গানের। তরুণ বয়সেই আমি সমকামিতায় আসক্ত হয়ে পড়ি। তখন আমার বয়স ১৫ কি ১৬ বছর। নারায়ণগঞ্জের খালেক নামের এক হিজড়ার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরিচয়ের অল্পদিনের মধ্যে তার সঙ্গে অনেক বেশি অন্তরঙ্গ হয়ে পড়ি। আমাকে হিজড়া হওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে লাগল খালেক। আমিও তার কথায় রাজি হয়ে যাই। সেই থেকে হিজড়া। সে জানায়, ভারতের বিহার প্রদেশের পাটনা-ছাপড়া এলাকায় গিয়ে সে তার লিঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে এসেছে। সেই সময় সে প্রচুর পরিমাণে ওষুধ সেবন করেছে। সে যুগান্তরকে জানায়, পরবর্তীতে আমি ভারতে গিয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় অপারেশন করে স্ত্রী লিঙ্গ বানিয়ে নিয়ে এসেছি। জীবনের এ পর্যায়ে এসে আজ আমি অনুতপ্ত। যে ভুল করেছি তার মাশুল দিতে হচ্ছে সারাজীবন। এখন আমি মা-বাবা, ভাই-বোন, আÍীয়-স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন। না আছে সংসার, না আছে আÍীয়-স্বজন।
নাছিমা হিজড়ার কথা : বাবা-মায়ের দেয়া নাম আসিফ। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে। দুই ভাই, দুই বোন। বাবা দরিদ্র কৃষক। সংসারের অভাব ঘুচাতে ২০০১ সালে ঢাকায় আসে। তখন বয়স ছিল ১৬ বছর। কাজ নেয় ফকিরাপুলের একটি ছাপাখানায়। নাছিমা বলে, ছাপাখানায় কাজ করার সুবাদে পরিচয় হয় আরিফা নামের এক হিজড়ার সঙ্গে। আরিফা আমাকে নিয়ে যায় তাদের গুরু মায়ের কাছে। গুরু মা আমাকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে প্রেসের কাজ ছেড়ে হিজড়া সম্প্রদায়ে আসতে বলে। আর এজন্য তিনি সব খরচ বহন করবেন বলে জানায়। ২০০৩ সালের শুরুর দিকে গুরু মা আমাকে খুলনার ফুলতলার একটি ক্লিনিকের কর্মচারী রফিকের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে একটি ক্লিনিকে ঢুকানো হয়। ডাক্তার ইনজেকশন দিয়ে আমাকে অজ্ঞান করে। জ্ঞান ফেরার পর দেখি পুরুষাঙ্গ নেই। ব্যান্ডেজ করা। এরপর গুরু মা আমার নাম দেয় নাছিমা। বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে আমি স্তন বড় করেছি। নাছিমা এখন মতিঝিল এলাকার হিজড়া। যাত্রাবাড়ী এলাকার হিজড়াদের নেতা দিপালীর এক শিষ্য বৃষ্টি। সেও গত ফেব্র“য়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় ধামরাই রোম আমেরিকান হাসপাতাল থেকে লিঙ্গ কাটায়।
আবুল হিজড়া : যাত্রাবাড়ী ধলপুর লিচুবাগানে থাকে আবুল হিজড়া। সে যাত্রাবাড়ী এলাকার হিজড়াদের দলনেতা। আবুল হিজড়ার ভাগ্নে রবিন যুগান্তরকে জানায়, আবুল হিজড়া আমার ছোট মামা। আমার আম্মার কাছে শুনেছি, মামা ২০ বছর বয়সে লিঙ্গ কেটে হিজড়া হয়ে যায়। এ কারণে মামা বিয়ে করতে পারেনি। একটি মেয়ে ও একটি ছেলে দত্তক নিয়ে মানুষ করছে। মনু হিজড়ার খপ্পরে পড়ে আবুল হিজড়া হয়েছে বলে জানা যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, স্ত্রী-সন্তান রয়েছে এমন হিজড়ার সংখ্যাও কম নয়। তাদেরই একজন মগবাজার এলাকার হান্নান। এমন আরেকজন হলো বাড্ডা এলাকার পলি হিজড়া। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। সেখানে তার স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। বনশ্রী এলাকার বিউটি হিজড়ার আসল নাম ফালা হোসেন। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে। সেখানে তার এক ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। বিউটি হিজড়া স্ত্রীর কাছে প্রতিমাসে টাকা পাঠায়। বরিশাল জেলার রাজ্জাক। কামরাঙ্গীরচর এলাকার রিজিয়া হিজড়া। তার দুই ছেলে আছে। গাজীপুর বোর্ডবাজার এলাকার লাইলীও স্ত্রী-সন্তান রেখে হিজড়ার খাতায় নাম লিখিয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। সেখানে তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে থাকে।
হিজড়াদের সঠিক পরিসংখ্যন নেই : হিজড়াদের কাজ করেন এমন সংগঠন বা সমিতির কাছে এমনকি রাষ্ট্রের কাছেও হিজড়াদের কোন পরিসংখ্যন নেই। হিজড়াদের সংগঠন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ এমএসএম (পুরুষ সমকামী) রয়েছে। সারাদেশে হিজড়ার সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ হাজার। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে ৫০ হাজার হিজড়া রয়েছে। অন্যদিকে সমাজ বিজ্ঞানী ড. আমানুল্লাহ ফেরদৌস যুগান্তরকে জানান, ডেমোগ্রাফি সূত্র অনুযায়ী বাংলাদেশে সমকামী ও হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। এর মধ্যে ঢাকায় হিজড়ার সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। ঢাকায় সমকামীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ।
যেখানে কাটাকাটি হয় : ঢাকা জেলার ধামরাই এলাকার রোম আমেরিকান হাসপাতাল নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে প্রতিমাসে ৪/৫ জনকে পুরুষাঙ্গ কেটে হিজড়া বানানো হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীর শ্যামলী ও খুলনার ফুলতলার কয়েকটি ক্লিনিকেও লিঙ্গ কেটে হিজড়া করা হয়। হিজড়াদের দলনেতারা নানা প্রলোভন দেখিয়ে উঠতি বয়সের ছেলেদের ওইসব হাসপাতালে নিয়ে তাদের হিজড়া বানিয়ে নিজেদের দল ভারি করছে। রোম আমেরিকান হাসপাতালে পুরুষাঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে হিজড়া বানানো হয় এমন অভিযোগ পেয়ে যুগান্তরের পক্ষ থেকে ওই হাসপাতালে অনুসন্ধান চালানো হয়। ১২ মার্চ ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডের কাছে গিয়ে জানা যায় লোমহর্ষক এ ঘটনার সত্যতা। থানা বাসস্ট্যান্ডে থেকে ৫০ গজ দূরে মানিকগঞ্জ-ঢাকা প্রধান সড়কের পাশেই ‘রোম আমেরিকান হাসপাতাল’ অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই হাসপাতালের মালিক ডাক্তার গোলাম রহমান শাহজাহান নিজেই হিজড়া বানান। কর্মচারী মোশারফ যুগান্তরকে জানান, প্রায়ই এ হাসপাতালে ছেলেরা এসে কিসব অপারেশন করে। এ জন্য ডাক্তার ১৫/২০ হাজার টাকা নেয়। হিজড়ারা তাদের নিয়ে আসে। গত ফেব্র“য়ারির মাঝামাঝিতে হিজড়াদের একটি গ্র“প একজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে আরেক গ্র“প এসে মারামারি করে। প্রায় ৫০/৬০ জন হিজড়া সেদিন হাসপাতালে এসেছিল। পরে জানা যায়, ওই ছেলেটির নাম রাখা হয়েছে বৃষ্টি। জানা যায়, ডা. গোলাম রহমান শাহজাহান গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। চাকরির পাশাপাশি এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। এলাকাবাসী মানিক জানান, ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে এ হাসপাতালটি থানা রোডের লুৎফর নায়েবীর ৩ তলায় শুরু করেন ডা. গোলাম রহমান শাহজাহান। আনিছ নামের এক ব্যক্তি জানান, ওই ক্লিনিকে সাধারণ কোন রোগী যান না। মূলত লিঙ্গ কেটে হিজড়া তৈরিই ওই ডাক্তারের মূল কাজ। সূত্র জানায়, একই কায়দায় খুলনা ফুলতলার একটি ক্লিনিকে লিঙ্গ কেটে হিজড়া বানানো হয়। এছাড়া রাজধানীর শ্যামলী এলাকায়ও একটি ক্লিনিক রয়েছে। সেখানে লিঙ্গ কাটতে গিয়ে এক যুবকের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। তবে ওই ক্লিনিকটি কিছুদিন আগে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে রোম আমেরিকান হাসপাতালের কর্ণধার ডা. গোলাম রহমান শাহজাহান যুগান্তরের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি তো জোর করে কারও পুংলিঙ্গ কাটি না। ছেলেরা ইচ্ছাকৃতভাবেই এসে পুরুষাঙ্গ কাটতে বলে। তিনি নিজেই কিছু তথ্য দেন। তিনি জানান, প্রতিমাসে ৩/৪ জন ছেলেকে অপারেশনের জন্য হিজড়ারা ধরে নিয়ে আসে। এরা আমার কাছে রোগী। কত দিন ধরে এ ধরনের কাজ করছেন এবং এ পর্যন্ত কতজনের পুরুষাঙ্গ কেটেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা থেকেই পুরুষাঙ্গ কাটা হয়। প্রতিমাসে রোগী আসে। তবে এর সঠিক হিসাব জানা নেই। এসব অপারেশন করতে ১০ হাজার টাকা নিই। লিঙ্গ কাটতে গিয়ে কেউ মারা গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার হাসপাতালে কেউ মারা যায়নি। শ্যামলীর একটি ক্লিনিকে পুরুষাঙ্গ কাটতে গিয়ে একজন মারা গেছে।
পুলিশের ভাষ্য : ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলাম অভিনব পন্থায় হিজড়া তৈরির খবর শুনে বিস্মিত হন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, পুংলিঙ্গ কেটে হিজড়া বানাচ্ছে এ ধরনের কোন অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারও অঙ্গহানি করা পেনালকোডে ৩২৬ ধারায় অপরাধ।
বিশেষজ্ঞদের কথা : হরমোন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোঃ হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, পুরুষাঙ্গ কেটে হিজড়া হলে তাদের জীবনে ভয়াবহ ঝুঁকি থাকে। দেহের হাড় ক্ষয় হয়, শারীরিক শক্তি কমে যায়। এছাড়া নানা রোগের সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে হিজড়া বলতে তাদের বোঝায় যারা শারীরিকভাবে পুরুষ কিন্তু মানসিকভাবে নিজেদের মেয়ে ভাবে, মেয়েদের পোশাক পরতে ও মেয়েদের মতো ব্যবহার করতে পছন্দ করে। এটা হরমোনজনিত বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, জাতীয় এইডস বিশেষজ্ঞ ও সমাজ বিজ্ঞানী ড. আমানুল্লাহ ফেরদৌস যুগান্তরকে বলেন, লিঙ্গ কাটলে তাদের হিজড়া বলা যাবে না। তারা হল বিকলাঙ্গ। লিঙ্গ কাটার কারণে ওই ব্যক্তি পারিবারিক সমস্যা, সামাজিক সমস্যা, সাাংস্কৃতিক সমস্যা ও হীনমন্যতায় ভুগবে। সমাজ তাকে দূরে রাখবে। লিঙ্গ কাটা সমাজে মারাÍক ধরনের অপরাধ। এর সঙ্গে যে দুষ্টচক্র জড়িত তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল হওয়ার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে দুষ্টচক্রটি। রাষ্ট্রকে এর বিহিত করতে হবে, নইলে সমাজ অধপতনের দিকে ধাবিত হবে।
পুংলিঙ্গ কেটে হিজড়া হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মহাসচিব অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা যুগান্তরকে বলেন, তার জানামতে, অনেক ছেলে স্বেচ্ছায় হিজড়া হচ্ছে। জয়া হিজড়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ছেলে জয় পুংলিঙ্গ কেটে এখন জয়া। তাকে নিয়ে আমি টেলিভিশনে একটি প্রোগ্রামও করেছি। পরে জেনেছি তার হিজড়া হওয়ার কাহিনী। তাদের নিয়ে আলাদা কোন আইন নেই।
-বকুল আহমেদ। যুগান্তর
————————————————————————–
এটা অনেক অন্যায় ও ইসলামিক দিক থেকে মারাত্মক অপরাধ। জীবিকার জন্য এ কাজ করা মোটেও উচিত না। আল্লাহ অনেক আগে থেকে মানুষের জীবিকা নির্ধারণ করেছেন।
আল্লাহ আমাদের সমাজকে হেফাজত করুন।
চমৎকার মন্তব্যগুলো এই পোস্টটাকে দারুণ সমৃদ্ধ করেছে। সবাইকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বিশেষ করে ‘আকাশ মালিক’ ভাই’র মন্তব্যে জবাব নেই ! তাঁকে সেল্যুট ।
কি হইল? কি হইল?
যেই লাউ সেই কদুই রইল।
ফুয়াদ ভাই রা চান্স পাইলেই বিজ্ঞানরে ভাল মতন ধোলাই দেন। কিন্তু এইটা নিয়া তাদেরকে দুটা কথা কইতে বলছিলাম, তাদের আর পাত্তাই নাই!!একদম চুপচাপ!!
হায়রে দুনিয়া, হায়রে আমার ধর্ম!!
আদমরে বানাইলো মাটি দিয়া, হাওয়ারে বানাইলো আদমের হাড্ডি দিয়া।তাইলে হিজড়া বানাইলো কইত্থিকা?
হিজড়ারা প্রকৃতির নয় বরং আমাদের সমাজের বিচিত্র খেয়ালের দুর্ভাগা শিকার।
অসাধারণ আর্তি। খুবই হৃদয়গ্রাহ্য। সত্যিই অসাধারণ।
প্রকৃতি তাকে ভয়াবহ বঞ্চনা দিয়েছে কিনা জানি না তবে আমার কাছে এটা প্রকৃতির পরীক্ষা, প্রকৃতি দেখতে চায় এরকম ব্যতিক্রম মানুষকে কারা অমানুষ মনে করে আর কারাই বা মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তার বা তাদের মানবিকতার প্রকাশ ঘটায়। এটা এক ধরনের বিচার। হিজরা জন্ম নেবার পক্ষে পিতামাতার কোনও শারীরীক-মনস্তাত্বিক কারণও থাকতে পারে, জানিনা।
@মুহাইমীন,
ভাইয়া রে এ আপনার কেমন বিচার? আপনি এত সহজে এই ব্যাপারের সমাধান দিয়ে দিলেন? এই কস্টের ভার একটা মানুষকে সারা জীবন বইতে হবে। তার কোন পরিবার হবে না।কোন সন্তান হবে না। কেউ তাকে মা/বাবা কিছু বলেই ডাকতে পারবে না। ব্যাপারটা আপ্নার কাছে এতই সহজ লাগে?
প্রকৃতি কি এতই রূর যে আপনার আমার মত সাধারন মানু্ষদের পরীক্ষা করার জন্য অন্য এক মানুষএর জীবনের সে বারোটা বাজাবে?
এটা কি তার আত্নহত্যার জন্য যথেস্ট নয়? তবুও তারা বেচে থাকে জীবনের মায়ায়।
এই ব্যাপার কে আপ্নি এত সহজ সমাধান দিয়ে আপনার মনের দৈন্যতারই প্রকাশ ঘটালেন।
@তানভী,
আমার কথার ভুল মানে হয়ে গেছে মনে হয়। আমি বোঝাতে চেয়েছি এসব মানুষের সম-অধিকার দেবার দায়িত্ব আমাদেরই, আমরা যদি না দেই এখানেই আমাদের মানবিকতার একটা পরীক্ষা হয়ে যায়। প্রকৃতি তাকে একটা পরীক্ষণীয় বস্তু করেছে একথা আমি বোঝাতে চাইনি। প্রকৃতি কিন্তু তাকে অন্য সব মানুষের মত একটা মন ঠিকই দিয়েছে। তাই আর সবার মত তাদেরও মানবিক অধিকার সমান।
এটা প্রকৃতির দোষ না, দোষ মানুষের। প্রকৃতি ঠিকই তাকে সকল মানবিক অধিকার সম্পন্ন করে তৈরী করেছে( একটু চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন)। দোষটা মানুষেরই। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী, অজ্ঞতা, অমানবিকতার কারনেই তাদের এই বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে এই হোমোসেক্সুয়ালিটি কিন্তু স্বাভাবিক; মানুষই একে অস্বাভাবিক রায় দিয়ে বঞ্চনা সৃষ্টি করেছে।
@মুহাইমীন,
“প্রকৃতি ঠিকই তাকে সকল মানবিক অধিকার সম্পন্ন করে তৈরী করেছে( একটু চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন)।”
আপনি ইকটু বুঝায়ে বলেন দেখি।
তাদের সাথে প্রকৃতি আমাদের একটা গ্যপ সৃস্টি করে দিয়েছে। প্রকৃতি তাকে যথাযথ মানবিক অধিকার দেয় নি।
আর এই গ্যাপটুকু আমাদেরকেই ভরাট করতে হবে। সেখানেই মানুষএর সার্থকতা।
>>এই ব্যাপার কে আপ্নি এত সহজ সমাধান দিয়ে আপনার মনের দৈন্যতারই প্রকাশ ঘটালেন। >>
এটা দৈন্যতানা, হবে সীমাহীন দৈন্যতা।
এরজন্য কৈফিয়ত না, ভাল হতো মন্তব্যটা প্রত্যাহার করলে।
মুক্ত মনার সকল পাঠকদের প্রতি,
এটা নিয়া ধর্মবাদীরা কোন আওয়াজ দিল না কেন?
তাদের ঈশ্বর কেন এহেন ফালতু মানসিকতার পরিচয় দিয়ে হিজড়া নামক এই অনাকাঙখিত মানব সৃস্টি করল তা নিয়ে তাদের কি মতামত?
নাকি এটাকে ঈশ্বরের ভুল বলে চালিয়ে দেয়া হবে?
ঈশ্বরের সব কাজের পিছনেই তো তারা যুক্তি খুঁজে পান। তবে এই হিজড়া সম্প্রদায় সৃস্টির পিছনে তাদের যুক্তি কি?
আমি সকল ঈশ্বর বাদীদের কাছ থেকে এর উত্তর চাই।
তারা তো এক অর্থে নারী ও না পুরুষ ও না। তবে ধর্মে তাদের জন্য কি বিধান আছে? তারা কই যাবে? বেহেস্ত না দোযখ? তাদের নামাজ পড়ার নিয়ম কি হবে ?
যারা ধর্মবাদী তারা প্লীজ ভনিতা না করে সরাসরি উত্তর দেবেন।
@তানভী,
আমিও এ বিষয়ে ধর্ম সম্পর্কে যারা জানেন তাদের বক্তব্য শোনার ব্যাপারে খুব আগ্রহী। বিশেষ করে কোরান যা নারী পুরুষের আইন কানুন বেশ কড়াভাবে ভাগ করে দিয়েছে। হিজড়া, ট্রান্সসেক্সুয়াল যারা বায়োলজিক্যালি পুরুষ নারী কোন শ্রেনীর মাঝেই পড়ে না তাদের ব্যাপারে ইসলামী আইন কেমন হবে? পর্দা, সম্পত্তি ভাগাভাগি…। বহু ইস্যু আসবে।
@আদিল মাহমুদ, ভাইয়া
আমার ভয় হচ্ছে অন্যান্য কমেন্টের ভীড়ে না আবার আমাদের এ ভাবনা টা হারিয়ে যায়।
@তানভী,
চিল্লাতে থাকুন, হারাবে না।
@ হ্যা ভাইয়া আমি আবার ‘ হাল ছেড়োনা বন্ধু বরং কন্ঠ ছাড়ো জোরে’ টাইপের কিনা। :-))
@তানভী,
বেশ সুন্দর মন্তব্য করতেছেন। আন্তরিক ধন্যবাদ।
@তানভী,
বড়ই পরিতাপের বিষয় যে এই বিশাল পৃথিবীর ধর্মবাদীরা কেউ আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে পারলেন না। মুসলমানদের কাছে আপনার প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক উত্তর বা বিশ্লেষণ যে নেই তাদের নীরবতাই এর প্রমাণ। অনেক দিন অপেক্ষা করার পর ভাবলাম জেনেশুনে এতোবড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করতে পারলে বিবেকের কাছে দায়ী থাকব। আপনার প্রশ্নগুলো যেহেতু মুসলমানদেরকে উদ্দেশ্য করে তাই অন্যান্য ধর্মগুলো এ নিয়ে কি মাতামাতি করলো তা উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করিনা।
হিজড়াদেরকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় ডাকা হয় যেমন- Hijra(বাংলা/উর্দু) Hermaphrodite (ইংরেজী্/গ্রীক) Shikandi (পাঞ্জাবী) khusra (উর্দু্/ফার্সী) mukhannath/ muhannas (আরবী) । আপনি প্রশ্ন করেছেন- ঈশ্বর কেন এহেন ফালতু মানসিকতার পরিচয় দিয়ে হিজড়া নামক এই অনাকাঙখিত মানব সৃস্টি করল?’ অনাকাঙখিত মানব বলে, ইসলামের দৃষ্টিতে প্রশ্নের মধ্যেই আপনি ভুল করে ফেললেন। আল্লাহ নিজের আকাঙ্ক্ষায়, নিজের ইচ্ছায়, যে রূপে, যে আকৃতিতে, যে ভাবে চান ঠিক সেই ভাবে সবকিছু সৃস্টি করেন। অন্যের আকাঙ্ক্ষার কথা ভেবে আল্লাহ কিছু করেন না। আল্লাহ ও আল্লাহর সৃস্টি নিয়ে কোন প্রশ্ন করার পূর্বে আপনাকে যুক্তিহীন এবং নিঃশর্তভাবে মেনে নিতে হবে, স্বর্গে মর্ত্যে, আকাশে পাতালে সকল সৃস্টির স্রস্টা তিনি আল্লাহ, তিনিই সকল সার্ব্বভৌমত্বের মালিক। তার সকল সৃস্টির পেছনে যুক্তি আছে, ফালতু মানসিকতা আল্লাহর কোনদিনই ছিলনা এখনো নেই। দেখা যাক ইসলাম এ ব্যাপারে কি বলে। তবে বলে রাখা ভাল মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরান হিজড়াদের সৃস্টির (বায়োলজিকেল/ জেনেটিকেল) ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। একই মায়ের গর্ভ হতে একটি মানুষ কিভাবে একই অংগে নারী পুরুষের দুই লিংগ নিয়ে, অর্ধেক পুরুষ অর্ধেক নারী, বাইরে নারী আর ভিতরে পুরুষ, ভিতরে পুরুষ আর বাইরে নারী, আবার পুরুষও নয় নারীও নয় এমন ভাবে জন্মিতে পারে, কিংবা একজন মানুষ শৈশবে পুরুষ যৌবনে নারী, আর শৈশবে নারী যৌবনে পুরুষ কিভাবে হয় তা বুঝার জ্ঞান তখনকার মানুষের ছিলনা যখন কোরান হাদিস রচনা করা হয়েছিল। সুতরাং আজিকার যুগের সম-সাময়ীক ইসলামী চিন্তাবিদগণ যা কিছু বলেছেন বা বলবেন তা তাদের নিজস্ব চিন্তা বা বিবেকতাড়িত মন্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়। ডঃ মুহাম্মদ আবু লায়লা (Professor of the Islamic Studies & Comparative Religions, Al-Azhar University) শেখ আলী জায়দুল হক (প্রাক্তন প্রধান মুফতী, আল-আজহার ইউনিভার্সিটি) শেখ এম এস আল-মুনাজজিদ ( A prominent Saudi Islamic lecturer and author) এবং শেখ আব্দুল করিম আল কুদায়ের, হিজড়াদের ব্যাপারে শরিয়তের বিধান ও আল্লাহর হিজড়া সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে- আল্লাহর অপার মহিমা, আসীম কুদরত, সৃস্টির কৌশল প্রকাশ ও বুদ্বিমত্তার প্রমাণ স্বরূপ সৃস্টি করেছেন হিজড়া সম্প্রদায়। আল্লাহ তার পবিত্র বই কোরানে লিখেছেন- ইন্নাল্লাহা কা’না আলীমান হাকীমা। -নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ। (সুরা নিসা, আয়াত ১১) সৃস্টির সকল রহস্য বুঝার ক্ষমতা আল্লাহ মানুষজাতিকে দেন নি। হিজড়া সম্প্রদায় সৃস্টি করার পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য ও হেকমতগুলি নিম্নরূপ-
(১) সৃস্টিতে তার সামর্থ্য, সাধ ও সাধ্যের অসীম ক্ষমতা প্রদর্শন করা। আল্লাহ বলছেন- হুয়াল্লাজি বিসুরুকুম ফিল আরহামি কাইফা য়্যাশা।- তিনিই সেই স্বত্তা যিনি তোমাদের আকৃতি গঠন করেন মাতৃগর্ভে, যেভাবে চান সেই ভাবে। (সুরা ইমরাণ, আয়াত ৬)
(২) হিজড়া সৃস্টি করে আল্লাহ তাদের প্রতি বিশেষ করুণা করেছেন। যাদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ করুণা বা ভালবাসা থাকে, আল্লাহ তাদের জন্যে বেহেস্তের পথ সুগম করার লক্ষ্যে দুনিয়ায় তাদেরকে বিশেষ কষ্ট ও যন্ত্রণাদায়ক পরীক্ষার সম্মুখীন করে দেন। আল্লাহ বলেছেন- আমি নিশ্চয়ই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে, সম্পদ ও প্রাণের ক্ষতি করে, ফল ও ফসল বিনষ্ট করে। (সুরা বাকারা আয়াত ১৫৫)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর রাসুল বলেছেন – মুমিনদের জন্যে ইহজগতে যত বড় কষ্ট, যত বেশী পীড়াদায়ক পরীক্ষা, পরকালে তত বেশী সুখ তত মহাপুরুষ্কার। (আল-তিরমিজী শরীফ)। হিজড়াগণ (পুরুষও নয় নারীও নয়) সারাজীবন কাটাবে আল্লাহর প্রশংশা ও গুণ কীর্তন করে করে, এটাই আল্লাহর হিজড়া সৃষ্টির মহান হেকমত।
(৩) আল্লাহ যে ইচ্ছা করলে পুরুষের পুরুষাংগ তার মুখে স্থাপন করতে পারতেন কিংবা নারীর যোনী নারীর কপালে দিয়ে দিতে পারতেন, সেই ক্ষমতা দেখানোর জন্যেই তার এই বিচিত্ররূপী সৃস্টি। এটা স্বরণ করে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ অন্যান্য বিশ্বাসী মানুষেরা আল্লাহর সামনে মাথা নত করবে, তা’ই আল্লাহর হিজড়া সৃষ্টির অন্যতম কৌশল।
হিজড়াদেরকে শরিয়তের আইন মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনগুলো নিম্নরুপ-
(১) হিজড়াগণ অন্যান্য নারী কিংবা পুরুষদের সাথে বসবাস করতে পারবেনা। সমাজে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে তাদেরকে বিশ্বস্ত মুসলিম ডাক্তারের কাছ থেকে নিজেকে নারী অথবা পুরুষ হিসেবে যে কোন একটি সনদ বা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। এবং সেভাবেই নারী অথবা পুরুষ যে কোন একটি হয়ে জীবন কাটাবে।
(২) বিশ্বস্ত মুসলিম ডাক্তার কর্তৃক সার্টিফাইড নারী-হিজড়া শরিয়তের নির্ধারিত নারী বিষয়ক, (নারী-বস্ত্র, নারী-অলংকার পরিধান) পর্দা, নামাজ, রোজা ইত্যাদি এবং পুরুষ-হিজড়া পুরুষ বিষয়ক আইন মেনে চলবে।
(৩) একইসাথে নারী ও পুরুষের যৌনাংগ নিয়ে জন্মধারী শিশুর মাতা-পিতা মুসলিম ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সার্জারী বা অপারেশনের মাধ্যমে সন্তানের যে কোন একটি লিংগ কেটে ফেলতে হবে। অন্যতায় বড় হয়ে সেই সন্তানকে এ কাজটি করতে হবে।
এখানে আপনি হয়তো প্রশ্ন করে বসবেন, নবী মুহাম্মদের (দঃ) সময়ে কোন্ হাসপাতালে কতজন ‘Intersexes’ বা হিজড়া অপারেশন থিয়েটারে ভর্তি হয়েছিলেন। আর আল্লাহর সৃষ্টিতে ছুরি চাকু চালিয়ে যে কাজটি করা হবে, তা কি শয়তানের হুকুম পালন করা নয়? সাংঘাতিক গুরুতর প্রশ্ন। আল্লাহর মান-ইজ্জতের ব্যাপার। এ নিয়ে পত্রের শেষভাগে আলোচনা করবো।
ইসলামে নারী ও পুরুষ ব্যতিত তৃতীয় কোন লিংগ নেই, থাকতে পারেনা। এ কথা কোরানে বহুবার বলা হয়েছে। মুহাম্মদ (দঃ) মনে করতেন, মানুষের মাঝে Transsexualism, Homosexuality, Bisexuality, এ সকল শয়তানের সৃষ্টি, বিকৃত মানসিকতা। তাই বলেছেন, আল্লাহ যখন শয়তানকে অভিশাপ দিয়েছিলেন, শয়তান বলেছিল- আমি নিশ্চয়ই তোমার আদমকে আদেশ করবো, তারা তোমার সৃষ্টি বদলায়ে দেবে।(সুরা নিসা, আয়াত ১১৯)। সমকামীদের ব্যাপারে বাইবেলে বর্ণীত বিষয়াদী ইহুদী-খ্রীষ্টানদের কাছ থেকে শুনে মুহাম্মদ (দঃ) কোরানে লিখলেন বেশ কিছু বাক্য;
সুরা আরাফ ৭, আয়াত ৮০/৮১- আমি লুতকে প্রেরণ করিয়াছি। যখন সে তাহার স্বীয় সম্প্রদায়কে বলিলঃ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করিতেছ, যাহা তোমাদের পূর্বে জগতের কেউ করে নাই? তোমরা তো কামবশতঃ নারীদেরকে ছাড়িয়া পুরুষদের কাছে গমন করো, তোমরা বরং সীমা অতিক্রম করিয়াছ।
সুরা আশ-শুয়ারা ২৬, আয়াত ১৬৫/১৬৬- তোমরা দুনিয়ার পুরুষদের সাথে কু-কর্ম করো? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য যে স্ত্রীগনকে সৃষ্টি করিয়াছেন তাহাদেরকে বর্জন করো?
সুরা নমল ২৭, আয়াত ৫৫- তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছাড়িয়া পুরুষে উপগত হইবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়।
সুরা আনকাবুত ২৯, আয়াত ২৮/২৯- লুত তাহার সম্প্রদায়কে বলিলঃ তোমরা এমন সব অশ্লীল কাজ করিতেছ, যাহা তোমাদের পূর্বে জগতের কেউ করে নাই। তোমরা কি পুংমৈথুনে লিপ্ত আছ, রাহাজানি করিতেছ এবং নিজেদের মজলিসে গর্হিত কর্ম করিতেছ? উত্তরে তাহার সম্প্রদায় শুধু বলিল, আমাদের উপর আল্লাহর গজব নিয়া আস যদি তুমি সত্যবাদী হও।
এখানে মুহাম্মদ (দঃ) স্বীকার করে নিলেন যে, লুত সম্প্রদায়ের আগে কেউ সমকামী ছিলনা, আর সে সময় হতে মানুষের মাঝে বিকৃত যৌনপ্রবৃত্তির শুরু। অথচ মানুষ সহ জীবজগতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। এবার মুহাম্মদের (দঃ) সময়ের কিছু ঘঠনার প্রতি আলোকপাত করবো।
মুহাম্মদের (দঃ) স্ত্রী উম্মে সালমার (রাঃ) ঘরে একজন হিজড়া-ক্রীতদাস থাকতো। একদিন সে উম্মে সালমার (রাঃ) ভাই আব্দুল্লাহ বিন আবি উমাইয়াকে বললো- আগামীকাল যদি আল্লাহর হুকুমে তোমরা তায়েফ শহর দখল করে নিতে পারো, আমি তোমাকে গালিয়ানের মেয়েকে বিয়ে করার পরামর্শ দেবো। মুহাম্মদ (দঃ) এ কথা শুনে তাকে বললেন- ‘তুমি এ বাড়িতে আর কোনদিন আসবেনা’। (সহিহ বোখারী শরীফ, ভলিউম ৭, বুক ৬২, নাম্বার ১৬২)। মুহাম্মদ (দঃ) জানতেন এই মানুষটি হিজড়া, (নারীও নয় পুরুষ নয়) নারীর প্রতি তার কোন আকর্ষণ থাকতে পারেনা। তখনকার সময়ের আরবের প্রথানুযায়ী মেয়েদের ঘরে সেই সকল পুরুষেরা চাকুরী করতে পারতেন, নারীদের প্রতি যাদের কোন আকর্ষণ ছিলনা অর্থাৎ যারা হিজড়া-পুরুষ। হজরত আয়েশা (রাঃ) সহ কয়েকজন মহিলা নবীর কাছে এই বলে প্রতিবাদ করলেন যে, হিজড়াগনকে এভাবে তাড়িয়ে দিলে তারা কোনদিন কারো বাড়িতে চাকুরী বা ভিক্ষা করতে পারবেনা, তারা উপোস মরবে। নবীজী বললেন, তারা সপ্তাহে শুধু একদিন ভিক্ষা করতে পারবে। উল্লেখ্য, তখনকার আরবের মহিলাগন হিজড়াদের প্রতি অত্যন্ত সহানুভুতিশীল ভুমিকা পালন করতেন। তাদের কোন সন্তানের বিয়েতে বা জন্মদিনে হিজড়াগন আসলে শুন্যহাতে ফিরিয়ে দিতেন না। অবশ্য তাদের মাঝে এই ভয়ও ছিল যে, শুন্যহাতে ফিরিয়ে দিলে হিজড়াগন অভিশাপ দিতে পারে এবং তাদের গর্ভে হিজড়া জন্ম নিতে পারে।
Homosexuality, Bisexuality, pederasty (sex with boys) আর Sodomy (penetration of “males”) এসব বিষয়ে মুহাম্মদের (দঃ) ধারণা বা আগ্রহ যে ছিল তার প্রমান কোরানেই রয়েছে। যেমন;
– আর তাহাদের প্রদক্ষিন করিবে চিরস্ফুটিত কিশোরগন, তোমরা যখন তাহাদিগকে দেখিবে মনে করিবে তাহারা যেন ছড়ানো মুক্তা।(সুরা আল ইনসান ৭৬, আয়াত ১৯)
– আর তাহাদের চারিদিকে ঘুরিবে কিশোরেরা, তাহারা যেন সুরক্ষিত মুক্তা। (সুরা আত তুর ৫২, আয়াত ২৪)
বর্তমান যুগের ইমাম বা মুফতিগন ফতোয়া দিলেন যে, অস্বাভাবিক যৌনাংগের মানুষ বা হিজড়াগনকে প্রয়োজনবোধে অস্ত্রপাচার করেও যে কোন একটি লিংগে আসতে হবে। ইনটেলিজ্যান্ট ডিজাইনার আল্লাহ তার ডিজাইনে ভুল করেও যদি একজন মানুষকে পুরুষের লিংগ আর নারীর স্তন দিয়ে, অর্ধেক পুরুষ আর অর্ধেক নারী করে কিংবা নারী-পুরুষ কোনটাই নয় এমনভাবে সৃষ্টি করে ফেলেন, আমরা কোন্ অধিকারে তার ভুল ডিজাইন মেরামত করবো, তার সৃষ্টি বদলানোর অধিকার কি আমাদের আছে? শরিয়ত কি মানুষকে সেক্স চেইঞ্জ করার অধিকার দিয়েছে? এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর ধর্মবাদীদের কাছে নেই। চক্ষু বন্ধ করে পাহাড়ের গুহায় বসে ধর্মগ্রন্থ রচনা করা যায়, বিজ্ঞান লিখা যায়না। ধর্ম হিজড়াদের মানবিক অধিকার কোনদিনই স্বীকার করবেনা। সেই দিন আর কোন হিজড়া-শিশু মায়ের মমতা বাবার আদর ভাইয়ের স্নেহ ত্যাগ করে ঘর ছেড়ে চলে যাবেনা, যে দিন মানুষ এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর খোঁজে পেয়ে যাবে- ‘আমরা আল্লাহর সৃষ্টি না প্রকৃতির’?
@আকাশ মালিক,
অনেক ধণ্যবাদ আপনাকে এই মহামূল্যবান পোষ্টের জন্য। আমি এ বিষয়ে ধার্মিক, বিশেষ করে কোরানিক দৃষ্টিভংগী জানার ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিলাম। তবে দূঃর্ভাগ্যবশতঃ আর কেউ এখনো এগিয়ে আসেননি, তবে মুক্তমণায় নিঃসন্দেহে ধর্মবাদীরা অনেক কম, তাই তাদের নিরবতা মানেই জবাব নেই ধরে নেওয়াটা ঠিক নয়। মুক্তমণার অনেক লেখারই পালটা সমালোচনা মুক্তমনাতে বের না হলেও অন্য কোথাও বেরোয়। এবার আমি নিজেই আশা করব ওনারা এ বিষয়ে কিছু লেখেন।
তবে আপনার ইসলাম বিষয়ে পান্ডিত্য (কিছু লোকের অন্যরকম ধারনা আছে যদিও) দেখে আমি সবসময়ই মুগ্ধ হই। একদিন মনে হয় বলেছিলেন যে আপনি আরবী ভাষাও জানেন।
তবে হিজড়া বিষয়ক শরীয়তি আইন পড়ে আমার মনে হচ্ছিল যে আপনি এবার মনে হয় মশকরা করছেন। আমাদের বোকচন্দর পেয়ে যা তা বুঝাচ্ছেন।
আমার এতদিন ধারনা ছিল হিজড়া ব্যাপারটাই কোরান হাদীসে অনুপস্থিত। সমকামিদের কথা আছে, অনেক নেগেটিভ কথাবার্তা শুনি, কিন্তু আলেম মোল্লা কারো থেকে হিজড়াদের ফর্মান শুনিনি। তবে সমকামিতা বা পেডোফািলের সাথে হিজড়া এক করে দেখা মনে হয় ঠিক না।
@আদিল মাহমুদ,
“তবে হিজড়া বিষয়ক শরীয়তি আইন পড়ে আমার মনে হচ্ছিল যে আপনি এবার মনে হয় মশকরা করছেন। আমাদের বোকচন্দর পেয়ে যা তা বুঝাচ্ছেন”
কে জানে!
তবে উনার ব্যখ্যা পড়ে আমার হাহাপগে অবস্থা! :-))
আহা! “যত বেশি পড়ে ,তত বেশি জানে, তত কম মানে”- সত্যজিৎ রায়ের এই উক্তি উনি একদম সত্য প্রমাণ করে ছেড়েছেন। যত বেশি জানা থাকে তত কঠিন বাম্বু দেয়া যায়!!
তবে এটা স্বাভাবিক যে আমি ধর্ম ও ধর্মবাদীদের থেকে এর থেকে মানবীয় কিছু আশা করতে পারিনা। তারা নিজেদের সীমানার বাইরে যা আছে তার সবটুকুর জন্যই চরম অমানবিক।
@আকাশ মালিক,
” ইনটেলিজ্যান্ট ডিজাইনার আল্লাহ তার ডিজাইনে ভুল করেও যদি একজন মানুষকে পুরুষের লিংগ আর নারীর স্তন দিয়ে, অর্ধেক পুরুষ আর অর্ধেক নারী করে কিংবা নারী-পুরুষ কোনটাই নয় এমনভাবে সৃষ্টি করে ফেলেন, আমরা কোন্ অধিকারে তার ভুল ডিজাইন মেরামত করবো, তার সৃষ্টি বদলানোর অধিকার কি আমাদের আছে? শরিয়ত কি মানুষকে সেক্স চেইঞ্জ করার অধিকার দিয়েছে? এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর ধর্মবাদীদের কাছে নেই।”
বাস্তব সত্য। তারা কোন প্রশ্নের উত্তরই দিতে পারেনা।সব কিছুতেই গোঁজামিল করে দেয়।
সহানুভূতি আর সহমর্মিতায় ভরা অসাধারণ একটি লেখা।কাজেই খুব টেকনিক্যাল তথ্য এড়িয়ে যাওয়াতে ভালোই হয়েছে।পাঁচ তারা! 🙂
[…] [khabor.com] [mukto-mona] […]
রণদীপম বসু,
Thanks for your informative writing. Salute you and Avijit Bhai. Posting such writings Mukto-Mona adding some intangible value on development of this country. Wish one day all Hijras [Apologies to all for using this word] in Bangladesh will receive the equal rights on daily life.
অসাধারণ!
পশ্চিমের জ্ঞ্যান না হলে পূর্ব বহু ক্ষেত্রেই অচল।
সমকামকে অসংগতি,উভলিঙ্গ মানুষকে প্রকিৃতির….শিকার বলে আমরা পূর্বভাগের প্রগতিশীলরাও কাগজে সদাসর্বদা লিখে যাচ্ছি।
তাছাড়া,কেনো মানুষকে সেই কবেকার ১নং ২নং ৩নং শ্রেণীকরণ করতে যাবো?
পশ্চিমে যা স্বাভাবিক পূর্বে আজও তা প্রকৃতির ভয়াবহ বঞ্চনা হয়েই রইল।
প্রাকৃতিক ভয়াবহতা আসলে আমাদের এক মধুর অজ্ঞতার একরূপ।
আমরা তবো সমাজ বিবর্তন চাই।
বসুকে অনেক ধন্যবাদ!
রণদীপম,
পোস্টটি দিয়ে আমাদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করে রাখলেন। অসাধারণ পোস্ট। পোস্টে ৫ তারা।
হিজড়েদের নিয়ে বাংলাভাষায় খুব বেশী ভাল লেখা নেই। এটি আমি বুঝতে পেরেছিলাম মুক্তমনায় এবং সচলায়তনে সমকামিতা বিষয়ক সিরিজটি শুরু করার পরে। এখনও আমি এটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। পরের বইমেলায় হয়ত বই আকারে আসতে পারে। সেখানে হিজড়েদের নিয়ে বড় একটা অংশে আলোচনা থাকবে।
হিজড়াদের ইংরেজীতে অভিহিত করা হয় হার্মফ্রোডাইট হিসেবে। সোজা বাংলায় উভলিংগ। উভলিঙ্গত্বকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয় – প্রকৃত উভলিঙ্গত্ব এবং অপ্রকৃত উভলিঙ্গত্ব (pseudo-hermaphrodite)। প্রকৃত উভলিঙ্গ হচ্ছে যখন একই শরীরে স্ত্রী এবং পুরুষ যৌনাঙ্গের সহাবস্থান থাকে। তবে প্রকৃতিতে প্রকৃত উভলিঙ্গত্বের সংখ্যা খুবই কম। বেশী দেখা যায় অপ্রকৃত উভলিঙ্গত্ব। সাধারণতঃ পাঁচ ধরণের অপ্রকৃত উভলিঙ্গত্ব দৃশ্যমান – ক্লাইনেফেল্টার সিনড্রোম, XXY-Male, XX Male এবং টার্নার সিন্ড্রোম। ক্রোমজমের বৈসাদৃশ্যতা ছাড়াও বিশেষ কিছু হরমোনের অভাবে উভলিঙ্গত্ব প্রকাশ পেতে পারে। উভলিঙ্গত্বকে অস্বাভাবিক বলে মনে করা হলেও আমাদের মনে রাখতে হবে যে, প্রানীজগতের একেবারে গোড়ার দিকে কিছু পর্ব হল – প্রটোজোয়া, পরিফেরা, সিলেনটেরেটা, প্লাটিহেলমিনথিস, অ্যানিলিডা, মোলাস্কা ও কর্ডাটা। এই সমস্ত প্রাণিদের বেশিরভাগই উভলিংগ বা হার্মাফ্রোডাইট (Hermaphrodite), কারণ এদের শরীরে স্ত্রী ও পুরুষজননাঙ্গের সহবস্থান লক্ষ্য করা যায়। এদের জন্য উভলিঙ্গত্ব কোন শারীরিক ত্রুটি নয়, বরং এটি পুরোপুরি ‘প্রাকৃতিক’। প্রকৃতিতে এখনো পালমোনেট, স্নেইল এবং স্লাগেদের অধিকাংশই হার্মাফ্রোডাইট। তবে মানুষের সমাজে যেহেতু জেন্ডার ইস্যু খুব প্রবল সেহেতু উভলিংগ মানবদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তারপরেও ধ্যান ধারণা সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা পাল্টেছে। পশ্চিমা বিশ্বে শেরিল চেজ, এরিক শেনিগার, জিম সিনক্লায়ারের মত ইন্টারসেক্স -সেলিব্রিটিরা বহাল তবিয়তে বাস করেন। ভারতে ‘শবনম মৌসি’ নির্বাচিত প্রতিনিধি হতে পেরেছেন। সত্যই – বাংলাদেশেই বা হিজড়ারা তৃতীয় লিঙ্গ বলে বিবেচিতা হবে না কেন – যুগের দাবীর প্রেক্ষাপটে এ অতি স্বাভাবিক প্রশ্ন। আমার কাছে তো এরা দুই সত্ত্বার সম্মিলনের এক পরিপূর্ণ মানুষ, আমরাই বোধ হয় ‘অসম্পুর্ণ’ 🙂 ।
তবে একটি জিনিস পরিস্কার করা দরকার। সেক্সচেঞ্জ অপারেশন করলেও হিজড়ারা সন্তান ধারণ করতে পারে না বলে যে মন্তব্য করা হয়েছে তা সবক্ষেত্রে ঠিক নয়। অনেক ক্কেত্রেই সন্তানের জন্ম দিতে পেরেছেন উভলিংগ মানবেরা। যেমন Munich University তে এক সময় ২৮৩ জন উভলিংগ মানুষের উপর গবেষণা চলে। এদের মধ্যে ১০ জন সন্তান উৎপাদনে সক্ষম বলে ঘোষিত হয়। আমার বইয়ে আরো কিছু থাকবে এ নিয়ে…