আমাদের জাতীয়তা , দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রেতাত্মা এবং একটি প্রস্তাবনা
মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীর
বিগত প্রায় সাড়ে তিন দশক যাবত একটি নষ্ট বিতর্ক বাংলাদেশের রাজনীতি গ্রাস করে রেখেছে। কোন কোন মানুষের ব্যক্তি জীবনে যেমন শনির দশা সহজে কাটতে চায় না ঠিক তেমনি আমাদের জাতীয় জীবনেও এ বিতর্ক প্রসূত সংকটের সুরাহা এখনো হয় নি। বিতর্কটির নেপথ্যে রয়েছে ছোট্ট এক প্রশ্ন, কি হবে আমাদের জাতীয় পরিচিতি? বাঙালী অথবা বাংলাদেশী? এই বিতর্কটি এখনো জীইয়ে রাখা হয়েছে এক বিশেষ ¯^v_©‡š^lx গোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রাণ কাঠি হিসাবে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর এবং পচাঁত্তরের পটপরিবর্তন পূর্ব রাজনীতিতে আমাদের জাতীয় পরিচিতি নিয়ে কোন প্রশ্ন ওঠেনি। বরং সে সময়ে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছের প্রতিফলনে রচিত সংবিধানে স্পষ্টত:ই ঘোষিত হয়েছিলো বাংলাদেশ সীমানা অর্ন্তভূক্ত জনগোষ্ঠীর পরিচিতি হবে বাঙালী হিসাবে এবং বাঙালী জাতীয়তাবাদই হবে সদ্য ¯^vaxbZv প্রাপ্ত বাংলাদেশের সংবিধানে অন্যতম স্তম্ভ। বস্তুতঃ পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন এবং শোষণ বাঙালী জাতীয়তাবাদ জাগরণে প্রেরণা যুগিয়েছে এবং একাত্তরের আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বাঙালী জাতীয়তাবাদই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী সমরাস্ত্র। নৃতাত্বিক দৃষ্টিকোণে পাক-ভারত উপমহাদেশে বাঙালী এক পৃথক জাতিসত্ত্বা। বাঙালির রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং একটি পূর্ণাঙ্গ জাতি হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার অপরাপর উপাদান সমূহ। বং থেকে বাংলা নামক যে জনপদের উদ্ভব ( সূত্র: রিজিয়া রহমান, বং,থেকে বাংলা, ১৯৮৩ মুক্তধারা প্রকাশনী ঢাকা) সে জনপদে আবহমানকাল থেকে যে প্রধান জনগোষ্ঠী বাস করে আসছে, যাদের রয়েছে সাধারণ শারীরিক, চারিত্রিক, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যাবলী তারাই বাঙালী জাতীয়তাবাদের ধারক এবং বাহক। ঐতিহাসিক গবেষণায় জানা যায় খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের পূর্ব থেকেই বঙ্গদেশ এবং বাঙালী জাতির অস্তিত্ব ছিল। এই বাঙালীর চিন্তা-চেতনা মনন ক্রমশঃ বিকশিত হয়ে বিশ্বদরবারে বাঙালী আজ এক উল্লেখযোগ্য জাতি। তবুও আমরা যারা সন্দেহাতীতভাবে বাঙালী, তাদের মধ্যেও কেন জাতীয় পরিচিতি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব? কেউ কেউ, বিশেষতঃ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ এক গোষ্ঠীর অনুসারীরা নিজেদেরকে বাঙালী হিসেবে পরিচয় প্রদানে গর্বিত না হয়ে কৃত্রিম জাতীয়তা বাঙলাদেশী হিসাবে পরিচয় প্রদানে আশ্বস্ত হয়। এই বিশেষ গোষ্ঠীর এ মনো:স্তাত্বিক আচরণের কার্যকারণ পুরোটাই রাজনৈতিক এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নামক ষঢ়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক মতবাদটি হচ্ছে বাংলাদেশের জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার বড় এক হাতিয়ার।
বাঙলীর আত্মপরিচিতিতে এই উদ্দেশ্যপূর্ণ বিভ্রান্তি সৃষ্ট করার মূল কৃতিত্বের দাবীদার প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়া। সামরিক লেবাসে রাজনীতি অঙ্গনে পর্দাপণের প্রথমভাগেই তিনি সদম্ভে বলেছিলেন, “I shall make politics difficult for politicians“. ধূর্ত জিয়া সুচতুর ভাবেই তা করতে পেরেছিলেন বাঙালী জাতির মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি করে। জিন্নাহ্ যেমন তার রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার দূরভীসন্ধীতে সর্ব ভারতীয় রাজনীতিতে প্রবর্তন করেছিলেন দ্বিজাতিতত্ত্বের ঠিক তেমনি জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবর্তন করেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। জিন্নাহ সাহেবের দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং জিয়ার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ দুটোরই মূল লক্ষ্য রাষ্ট্রিয় তথা রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উচ্চভিলাসের পূর্ণতা অর্জন করা। সবচেয়ে ধবংসাত্মক বিষয় হচ্ছে জিয়া প্রবর্তিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নেপথ্যে ক্রিয়াশীল দ্বিজাতিতত্বের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা। মূলতঃ হিন্দু প্রধান পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের সাথে মুসলিম প্রধান পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশের বাঙালীদের পৃথকীকরণ করার লক্ষ্যেই তথাকথিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের উন্মেষ।
জিন্নাহ সাহেবের ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ দ্বিজাতিতত্ত্বের মূলে তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ছাড়া যে অন্য কোন দর্শন ছিল না তা তার রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে স্পষ্টত:ই প্রতীয়মান হয়। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত জিন্নাহ সাহেব তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ছিলেন ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতির কট্টর সমর্থক। জিন্নাহ্ সাহেবের ব্যক্তিজীবনে ইসলামের কোন প্রতিফলন ছিল না। নামাজ, রোজা, হজ্ব, ইসলামের ইত্যাদি মৌলিক অনুশাসনের প্রতি জিন্নাহ্ সাহেবের অনুরক্তি পরিলক্ষিত হয়নি কখনো। (সূত্র: কার্ল পোজে, টাইম ম্যাগাজিন. ১৬ই wW‡m¤^i, ১৯৯৬) কার্ল পোজে কর্তৃক গবেষনাপত্রে জানা যায় ১৯৩২ সাল পর্যন্ত জিন্নাহ্ সাহেব ছিলেন ভারত বিভক্তির ঘোর বিরোধী। তবুও কেন পরবর্তীতে তিনি সর্বভারতীয় রাজনীতিতে ভারত বিভাজনের বড় অস্ত্র দ্বিজাতিতত্ত্বের আমদানী করলেন? এর বড় কারণ তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের রাজনীতিতে গান্ধী, নেহেরু , মৌলানা আজাদ, সুভাষ বসু-প্রমূখ শক্তিশালী ও মেধাবী নেতাদের পাশে জিন্নাহ্ সাহেবের অবস্থান ছিল ম্লান এবং চতুর জিন্নাহ্ অনুভব করতে পেরেছিলেন প্রাগুক্ত মেধাবী নেতাদের সাথে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় তিনি সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মূল নেতা হতে পারবেন না কোনদিন। তাই জিন্নাহর্ রাজনীতিতে প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল দ্বিজাতিতত্ত্ব নামক অবৈজ্ঞানিক এক মতবাদ, যেখানে জাতীয়তার সংজ্ঞা বর্হিভূতভাবে ভারতবর্ষের হিন্দু ও মুসলমানকে দুটি পৃথক জাতিসত্তা হিসাবে বিধৃত করা হয়েছে। দ্বিজাতিতত্ত্বের ব্রীটিশদের আর্শীবাদ থাকায় জিন্নাহ্র পক্ষে রাতারাতি মুসলমানদের নেতা বনে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল এবং সবচেয়ে বড় বিষয়ে ব্যক্তি জিন্নাহ্র উচ্চাভিলাষ একটি রাষ্টের নেতা হওয়া সম্ভব হয়েছিল এই দ্বিজাতিতত্ত্বের মাধ্যমেই।
অবশ্য দ্বিজাতিতত্ত্ব যে এক ভিত্তিহীন দর্শন সে বিষয়ে এর উদ্ভাবক জিন্নাহ্ সাহেবের পাকিস্তান সৃষ্টির অব্যাহতি পরই এর কবর রচনা করে গেছেন। এই প্রস্তাবনা সমর্থিত হয় পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে জিন্নাহ্ সাহেবের উদ্বোধনী ভাষণে। এ ভাষনে তিনি স্পষ্টতঃই বলেছিলেন পাকিস্তান রাষ্ট্রিয় কাঠামোয় হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানের কোন ব্যবধান নেই, সবারই জাতীয়তা হবে পাকিস্তান । তাঁর এ বক্তেব্যেই দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর রচিত হয়ে সমর্থিত হয় ধর্মনিরপেক্ষতার মূলবাণী। শুধু এতোটুকুই নয়, বরং পরবর্র্তী জীবনে তিনি তার প্রচারিত দ্বিজাতিতত্ত্বে সংশয় প্রকাশ করেন এবং জানা যায় মৃত্যুশয্যায় জিন্নাহ্রএক উচ্চারণ ছিল “পাকিস্তান দি বিগেষ্ট ব্লান্ডার অব মাই লাইফ” (সূত্র: কার্ল পোজে, টাইম ম্যাহাজিন, ১৬ই wW‡m¤^i, ১৯৯৬ইং)
¯^vaxb বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিন্নাহ্ কর্তৃক আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রেতাত্মাকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ মোড়কে আমদানী করলেন জেনারেল জিয়া। জিয়া নিজে একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে বাঙালী জাতীয়তাবাদকে ভিত্তি করেই সংঘটিত হয়েছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত তিনি সচেতন ছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও জিন্নাহর্ মতই জেনারেল জিয়া তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পূরণে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের আশ্রয় নেন। পঁচাত্তরের পটপরিবর্তন যে মূলত: পাকিস্তানপন্থীদের ষড়যন্ত্র ছিল তা আজ ক্রমশ: প্রকাশিত। মুজীব হত্যার অন্যতম নায়ক ফাঁসীর আসামী কর্নেল ফারুকের প্রদত্ত জবানবন্দীতে জানা যায় মুজীব হত্যার বিষয়ে জিয়া পূর্বাহ্নেই অবহিত ছিলেন এবং মুজীব হত্যার সংশ্লিষ্ট, সামরিক অফিসারদের প্রতি তার যে আর্শীবাদ ছিল সে বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। পরবর্তীতে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই জিয়া পাকিস্তানপন্থী সামরিক বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের প্ররোচনায় এবং নিজের রাজনৈতিক শক্তি সুসংহত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবর্তন করলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের শ্লোগান। চতুর জিয়া জানতেন ধর্মপ্রাণ বাঙালী মুসলমানদেরকে ধর্র্মীয় সুড়সুড়ি এবং ভারতবিরোধী শ্লোগান দিয়ে নেতৃত্বশূণ্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহজেই সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করা যাবে। জিয়ার ধর্মভিত্তিক এ জাতীয়তাবাদে মদদ যোগায় একাত্তরের পরাজিত শক্তিবর্গ এবং পাকিস্তানপন্থী কতিপয় বুদ্ধিজীবি।
অনেকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের অপরিহার্যতার সপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি প্রদর্শন করে থাকেন। তাদের প্রধানতম যুক্তি হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালী হতে বাংলাদেশের বাঙালীকে পৃথকীকরণের জন্যই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আবশ্যিকতা রয়েছে। কিন্তু এ যুক্তি ধোপে টিকে না। কারণ নৃতাত্বিক সংজ্ঞানুযায়ী কোন ব্যক্তি জন্মসূত্রে প্রাপ্ত জাতীয়তা পরিত্যাগ করতে পারে না। তাই ¯^fveZtB প্রশ্ন জাগে, একজন বাঙালী কিভাবে তার জন্মসূত্রে প্রাপ্ত বাঙালিত্ব পরিত্যাগ করে বাংলাদেশী জাতিতে পরিণত হবে? বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সম্পূর্ণ কাল্পনিক কারণ বাংলাদেশী জাতি বলে কোন জাতির অস্তিত্ব নেই। এ ছাড়া পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীরা জাতি হিসাবে বাঙালী পরিচয় প্রদানে বাঁধা কোথায়? উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া দুদেশের অধিবাসীদেরই জাতীয়তা কোরীয়-তাতে তো কোন রূপ সমস্যার সৃষ্টি হয় বলে জানা যায়নি। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের সপক্ষে আরো একটি যুক্তি হচ্ছে বাঙালী হিসাবে বাংলাদেশের সকলকে নাগরিকের পরিচিতি হলে অপরাপর অবাঙালী ( যেমন চাকমা, গারো, সাঁওতাল, বিহারী, ইত্যাদি)দের প্রতি অবিচার করা হবে। হ্যাঁ এ যুক্তিটি অবশ্যই সমর্থনযোগ্য। যদিও সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবাঙালীরা নগন্য ( ০.৬%, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) তবুও তাদের জাতীয়তা, সাহিত্য, সংস্কৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের দায়িত্ব বর্তায় সংখ্যাগুরু বাঙালীদের উপর। তাই সংখ্যালঘুদের জাতিসত্ত্বার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা গ্রহণ করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় পরিচিতি বা নাগরিকত্ব হবে বাংলাদেশী। উল্লেখ্য বাংলাদেশী প্রতিবাচ্য দ্বারা জাতীয়তা বা ন্যাশনালিটি বুঝাবে না বরং তা বুঝাবে নাগরিকত্ব বা সিটিজেনশীপ।
একজন মানুষের জাতীয়তা জন্মগত এবং তা বর্জন কিংবা অর্জন করা সম্ভব নয়। একজন বাঙালী কখনো বাঙালীত্ব পরিহার করে বিহারী বা পাঞ্জাবী জাতিতে পরিবর্তিত হতে পারবে না। তবে নাগরিকত্ব বা সিটিজেনশীপ গ্রহণ কিংবা বর্জন করা সম্ভব। একজন বাঙালী বৃটেনের কিংবা অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তার পক্ষে মূল জাতীয়তা বাঙালীত্ব বর্জন করা কখনো সম্ভবপর নয়। এই দর্শনের আলোকে বাংলাদেশের সকল নাগরিক যে যার নিজস্ব জাতিসত্ত্বার ভিত্তিতে জাতীয়তার পরিচয় প্রদান করতে পারবে। উল্লেখ্য বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর জাতীয়তা বাঙালী। অপরাপর যে সব সংখ্যালঘু জাতি বা উপজাতি বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানার অধিবাসী তাদেরও নিজস্ব জাতীয়তায় পরিচিতি পেতে কোনরূপ বিধি নিষেধের সম্মুখীন হবে না।
যেহেতু আমাদের মুক্তি সংগ্রামে বাঙালী জাতীয়তাবাদ ছিল মূল চালিকা শক্তি এবং বাংলাদেশের জনসংখ্যা ৯৯% ভাগের বেশী সংখ্যক অধিবাসী বাঙালী সেহেতু বাংলাদেশের সংবিধানের মূল স্তম্ভ হবে বাঙালী জাতীয়তাবাদ।
জাতীয়তাবাদ সংশ্লিষ্ট বর্তমান সংকট নিরসনের লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবিসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ঐক্যমত্যে আসা আবশ্যক। বিশেষতঃ এই অহেতুক বির্তকটি নিয়ে বর্তমানে দেশে যে বিভ্রান্তি রয়েছে তা মোটেই কাঙ্খিত নয়। আশা করা যায় উপরোক্ত প্রস্তাবনা কার্য্যকরী করলে “বাঙালী বনাম বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” নামক নষ্ট বিতর্কের অবসান হয়ে আমাদের জাতীয় পরিচিতির সংকট কেটে ওঠবে।
লেখাটা ভাল হয়েছে।আমাদের জাতীয়তাবাদ এই নিয়ে কোন বিতর্ক হতে পারেনা।রাজনীতিতে অপরাধীরা জায়গা করে নিতে এ তত্ব বের করেছে এ বলার অপেক্ষা রাখেনা।বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তারা তাদের ধান্দাবাজী নিজেদের কথায় প্রমান করে দিচ্ছে। তারা নিজেরাই পার্বত্য অঞ্চলে খুদ্র জাতিগোষ্ঠিকে “পাহাড়ী” আর আত্বপরিচয়ে “বাঙ্গালী” বলে। এ পর্যন্ত কখনো শুনলামনা “পাহাড়ী- বাংলাদেশি” বলতে।তারা নিজেরাই প্রতিনিয়ত “পাহাড়ী -বাঙ্গালী” বলে গলাবাজী করছে। আসলে এসব মতলব বাজরা দরকারে নিজেকে গবাদি পশু বলতেও দ্বিধা করবেনা।
মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীরকে ধন্যবাদ। সবার প্রতি আনুরুধ আমাদের আরও কঠোর ভাষায় এর প্রতিবাদ করা উচিত। এ আমাদের পরিচয়,অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন। আমারা প্রতিনিয়ত মতলব বাজদের কাছে হার মানে নিচ্ছি ভদ্রতার আজুহাতে।পৃথিবীর উন্নত জাতিরা(জার্মান উদাহরন হতে পারে) বিশাল বাধা ভেঙ্গে এক হচ্ছে আত্ব পরিচয় রক্ষা করতে। আত্বসমর্পিত বাঙ্গালী হয়ে আমাদের লজ্জাই পেতে হবে।
বঙ্গালী জাতি আর এদের বাংলাদেশ কে নিয়ে খুনশুটি তো আজকের নয়, যুগ যুগের পুরানো প্রথা। তবে ভাবতে ভালো লাগে কি জানেন, বার বার বাঙ্গালী কিন্তু প্রমান করেছে যে তারা বাঙ্গালী। তারা মননে চেহারায়, আচারে, বিচারে, প্রথায়, সংস্কৃতিতে, আগা-পাছতলা ষোলআনাই বাঙ্গালী। বাঙ্গালী তার শীতলায় যেমন করে শান্তি দিয়েছে বিশ্বরে একসময়, তেমনি অযাযিতের অর্ধচন্দ্রও কিন্তু করেছে নিশ্চিন্ত। ঐ সব দ্বিজাতি, ত্রিজাতি, শতজাতিতেও কাজ হবে না। এর সত্যতা পুরাণে, পুঁথিতে যেমন তেমনি ইতিহাসের কথ্য কথনেও অবধারিত ভাবে সহজ লভ্য। নটরডেম কলেজে যখন পড়েছি, অধ্যাপক খাজা গরীব নেওয়াজ ক্লাশ নিতে নিতে বলেছিলেন, “কে বলে যে, রামায়ন মহাভারত হিন্দুদের? ও হিন্দুদের নয় ও বাঙ্গালীর।“ সেই বাঙ্গালী যখন তার রামায়ন, মহাভারতের অধিকার ছেড়ে দিতে প্রস্তুত (আমার সন্দেহ আছে) তখন তার জন্মকালীন প্রসববেদনার চিৎকার, তার স্লোগান, তার জন্মকালীন স্তুতি-গান যে ভুলে যাবে (আসলেই কি ভুলে যাবার কথা? নাকি সম্ভব?) কি সন্দেহ তায়?
বাঙ্গালীর প্রিয় খেলা কিন্তু হাডুডু! অনাহুত যখন ঘরে ঢোকে বলে হাডুডুডু………, বাঙ্গালীও তখন সমস্বরে বলে হাডুডুডু………! এ বাঙ্গালীর আত্মবিষর্জন কিংবা আত্মবিস্মৃতি নয়, অতীথি নারায়নের সেবা! অনাহুত যখন উদ্দীপিত হয়, চোখ রাঙ্গায়, মারতে চায়; বাঙ্গালী নারায়নের অমঙ্গল করেনা, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তবুও, কোর্টের শেষ দাগে হাত রেখে নিজেরে সামলায়, তীক্ষ্ম নজর রাখে, রচনা করে বুহ্য! নারায়ন হয় নরঘাতক, ক্ষয়-খতি হয় বাঙ্গালীর, তবুও দিশে হাড়ায় না। আরোও মজবুত হয় বুহ্য! ঘাতক বীর দর্পে ভেতরে এগিয়ে আসে অসুরের বেশে (কপাল!)। আর যাবি কোথায়! ফুঁসে ওঠে বাঙ্গালী। শুরু হয় অসুর নিধন পালা, নরমেধ যঞ্জ! বাঙ্গালী পরিস্রুত হয় রক্তস্নান শেষে। নতুন দিনে নতুনেরে টেনে বুকে বিজয়ের গান গায়! উড়ায় নিশান। ইতিহাসে আছে, এইতো সেদিন ’৭১-এ দেখলাম, আগামীতেও…..
পাকি ভাবধারা উজ্জীবিত করা ছিল একটা লক্ষ্য, আরেকটা লক্ষ্য ছিল খুব চতূরতার সাথে সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষের মধ্যে একটা বিভেদের রেখা তুলে দেওয়া। বলতে লজ্জা লাগে, এ কাজে তারা পুরো সফল। নাহলে কিভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিক জয়বাংলা কে আনঅফিসিয়ালি নিষিদ্ধ ঘোষনা করতে পারে? তাদের এই সাধারন বোধটা কি ভাবে হারিয়ে গেল যে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে হলে স্বাধীনতা যুদ্ধের মূলনীতিগুলি বিসর্জন দিতে হবে? জয়বাংলা বললে আওয়ামী বিরোধিতা করা যায় না?
সুন্দর লেখা হয়েছে। আদিল মাহমুদের পয়েন্টটাও ভেবে দেখার মত।
“বাংলাদেশ জিন্দাবাদ” এর সাথে “পাকিস্তান জিন্দাবাদ” এর মিল কি আসলেই কাকতালীয়?
আসলে এটা কোন বিতর্কই নয়।পুরোটাই মতলব বাজি।এই ভূখন্ডের নাগরিকেরা সবাই বাংলাদেশি।আর বাংলাদেশের ৯৯%+ নাগরিক হচ্ছে বাঙ্গালী।
অনেক ব্যাপারে রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকাতে পারে কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরে জাতীয়তা নিয়ে বিতর্ক থাকাটা খুবি লজ্জার একটা ব্যাপার। এটা বন্ধ হওয়া জরুরী।
৭৫ এর পর থেকে খুব সূচতুরভাবে আমাদের মাঝে বিভক্তি তৈরী করা হয়েছে। অস্ত্র হিসেবে জাতীয়তা,ধর্ম এমনকি স্লোগান পর্যন্ত বদল করা হয়েছে। চিন্তা করা যায় যে জয়বাংলা স্লোগানে উজ্জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছে আজ স্বাধীন বাংলাদেশে সেই জয়বাংলা হল “দলীয়” স্লোগান। এর কি ব্যাখ্যা হতে পারে? বংবন্ধু সরকার খারাপ বা ব্যার্থ বলে জয়বাংলা বদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ আমদানী করতে হবে?
দূঃখের বিষয় হল এ দেশেরই একটা খুব বড় সংখ্যক মানুষ এভাবেই চিন্তা করে। যদিও এ বিভক্তি সৃষ্টি করেছে কিছু মানুষ যাদের একটা রাজনৈতিক পরিচয় দরকার ছিল। বংগবন্ধুকে সপরিবারে, ৪ নেতাকে জ়েল এ হত্যা করে বলতে গেলে পূরো আওয়ামী লীগের কোমর ভেঙ্গে দিয়েও এরা স্বশ্তি পাচ্ছিল না।
ফলাফল? চমতকারভাবে একটি বিভাজিত জাতি যারা কোন ব্যাপারেই একমত হতে পারে না। ৭১ এর মত একতা আর কোনদিনই সম্ভব হবে না।