জয় শ্রীরাম! দেশটা কি এবার হনুমানেরা চালাবে?

বিপ্লব পাল

ম্যাঙ্গালোরের এক পাবে ঢুকে-শ্রীরাম সেনা নামে এক জঙ্গী হিন্দুত্ববাদি সংগঠন, পাবে যেসব মেয়েরা এসেছিলেন, তাদের পিটিয়েছে। কারুর কারুর শ্লীলতাহানিও করেছে! তারপরে, শ্রীরাম সেনার প্রধান এক বীর হনুমান, প্রাসাদ আভভাতার বলেছেন-যেসব মেয়েরা “সনাতন শিষ্ঠাচার এবং ভারতীয়ত্ব” ভুলে পাবে মদ্যপান করতে ঢোকেন-তাদের তারা উচিত শিক্ষা দিয়েছেন। ভারতের নারীমন্ত্রী রেণুকা চৌধুরী অবশ্য খুবই কড়া হাতে পুলিশকে এদের গ্রেফতার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে গণতন্ত্রের প্রসব বেদনা-পুলিশের হাত এইসব হনুমানদের লেজ অব্দি পৌঁছাবে বলে মনে হয় না।

যাই হোক, প্রাসাদ আভভতারের সাথে তালিবানদের কোন পার্থক্য নেই সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে ধর্মের নাম ত ইসলাম বা হিন্দুত্ব হয় না। মানুষের আসল ধর্ম দুটি-পুরুষ এবং নারী। পুরুষের ধর্মের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে নারীর গর্ভের অধিকার সুরক্ষা করা। সেই গর্ভের দাবীর জন্যেই সমস্ত ধর্মের সৃষ্টি। ফলে নারী ফল খাবে না মদ খাবে, বোরখা পড়বে না বিকিনি পড়বে-তা ঠিক করে পুরুষ। আর বিবর্তনজনিত কারনে, মেয়েরা যেহেতু জানে, তারা নিজেরাই সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম, সেহেতু তারা পুরুষের আধিপত্য মেনে নিয়েছে আবাহমানকাল থেকে। মানে যথেষ্ঠ এগ্রেসিভ নয় মেয়েরা। সাধে কি মার্গারেট মিড বলেছিলেন-রেখেছ রমণী করে, কারন তুমি ভেবে বসে আছ কোন পুরুষ এসে তোমার জৈবিক উত্তরাধিকারের প্রোটেকশন দেবে। পুরুষ কি সেই সুযোগ ছাড়ে? কি সুন্দর ধর্ম ধর্ম ধূপ ছড়িয়ে মেয়েদের স্বাভাবিক অধিকারগুলো-যা পশুকূলেও স্বীকৃত। মানবকূলে নেই। কারন এখানে বাবারা নিশ্চিত করতে চান, সন্তান তার নিজের। এই হ্যাপাটা পশুকূলে নেই-মানব সমাজেও আগে ছিল না। কৃষিভিত্তিক সমাজে যবে থেকে পুরুষের এই ইচ্ছা চেপেছে, তবে থেকে ধর্মটা মেয়েদের গলার ফাঁস।

এই হনুমান শ্রেষ্ঠ প্রাসাদ আভভাতারের কথাই ভাবুন। কি সুন্দর বলে দিল ভারতীয় সনাতন ঐতিহ্যে মহিলারা মদ্যপান করে না-তাই যারা পাবে মদ্যপান করতে ঢুকেছিল তাদের পিটিয়েছে। তা ভারতের সনাতন ঐতিহ্যটা কি? ঋকবেদ? তাহলে ত বাপু, ওটা সুরাপান করে টালমাটাল হওয়ার বই। ওই বেদটির অনেক ছত্রেই পাওয়া যাবে নারীরা সুরাপান করে ইন্দ্রকে বলছে, তোমার মতন পুরুষ দাও! শুতে লাগবে! কি গেরোরে বাবা! ঋকবেদের মেয়েরা শুধু মদ্যপানেই থামে নি-মাল খেয়ে টসকে আবার সুন্দর পুরুষের শয্যাশায়ী হতে চেয়েছে! একদম খুল্লাম খুল্লা ওয়েস্টার্ন স্টাইল ভাই! আসলে তখনো আর্য্যরা ধান ক্ষেত দেখে নি-যাযাবরের জীবনে আছে। তাই যৌনতা আর মদ্যপান নিয়ে মেদেদের ওখানে কোন ইনহিবিশন নেই। কোন ছুৎমার্গ নেই।

কিন্ত এই শ্রীরাম সেনার আছে। আদের আদর্শ নারী সীতা। সতী সাবিত্রী সাদ্ধী। তখন আর্য্যরা কৃষিকাজ শিখে গেছে। জমি তার সম্মপ্তি। সেই জমির উত্তরাধিকার কে পাবে? সুতরাং সন্তান বিশুদ্ধ না হলে চলে কি করে? শুধু তার সাথেই শোবে-বাকীদের বেলায় মাটিতে চোখ রাখবে। স্বামী মারাগেলে চিতায় না গেলেও বিধবা থাকতেই হবে! কারন বিধবার বিয়ে হলে সম্পত্তি নিয়ে সমস্যা! ফলে মনুবল্লেন বিধবাকে ভোগ কর-কিন্তু বিয়ে করতে দিও না! যাইহোক এই সতী সাবিত্রীর পবিত্রতার মূল কথা হল-সম্পত্তির উত্তরাধিকারের বিশুদ্ধতা। তাই চাই বিশুদ্ধ পুত্র। এতেব নারীকে ঘরে ঢোকাও। ছেলেদের সাথে মদ্যপান ত অনেক দূর।

যতদিন না নারী বুঝবে এই পৃথিবীতে ধর্ম দুটি-পুরুষ আর নারীর ধর্ম। হিন্দু-ইসলাম [বা অন্য ধর্ম] আসলেই নারীকে দাবিয়ে রাখার জন্যে একটি ধর্মের দুটি নাম। সেটি পুরুষের ধর্ম। ততদিন এই শ্রীরাম সেনাদের হাত থেকে আমাদের মুক্তি নেই। কারন মেয়েদের একটা সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই, এই শ্রীরাম সেনারদের হাতে নিজেদের সমর্পিত সীতা বলে ভাবে। নারীর চেতনা আগে মুক্ত হৌক।


ড. বিপ্লব পাল, আমেরিকাতে বসবাসরত পদার্থবিদ, গবেষক এবং লেখক। এক সময় ভিন্নমতের মডারেটর ছিলেন, বর্তমানে www.fosaac.tv সম্পাদনার সাথে জড়িত।