লিখেছেন আসাদ নূর

ভিডিও দেখুন 

.
.
.
ধরেন আপনি খুব চালাক একজন মানুষ। আপনি চাচ্ছেন আপনার এলাকার মানুষদের নেতা হতে ও নিজের ইচ্ছামত তাদের ব্যবহার করতে।   এখন আপনি কী করতে পারেন?

এর সহজ একটা উপায় আছে। নিজেকে নবী ঘোষণা করা, দাবী করা – একেবারে আল্লার সাথে আমার ডাইরেক্ট কানেকশন আছে। কিন্তু লোককে আপনার কথা শোনাতে, তাদেরকে নানা কাজে ব্যবহার করতে কিছু জিনিস দরকার। এরা তো বিনা লাভে কিছু করতে যাবে না। মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় দুটি উপায়। এক হচ্ছে লোভ, আর আরেকটি হচ্ছে ভয়।   মানে জান্নাত আর জাহান্নাম।

এখন যদি আমি নিজেকে নবী ঘোষণা করে আপনাদেরকে আমার আদেশ পালন করতে বলি, জান্নাত-জাহান্নামের কথা বলি, তবে আপনারা কি বিশ্বাস করবেন? হ্যাঁ, দীর্ঘদিন লেগে থাকলে একসময় কিছু লোক করবেন। এরকম আহম্মকরা সবযুগে ছিল। শিক্ষার অভাবে একসময় বেশিরভাগ মানুষই ছিল এরকম। এর ফলেই জন্ম নিয়েছে নানান আজগুবী ধর্ম।  (মুহাম্মদের সময় অনেকে নিজেকে নবি বলে ঘোষণা করত, ব্যাপারটা একটা ফ্যাশনের মত ছিল) ।

ধর্মান্ধরা বিশ্বাস করে তারা মরার পর জান্নাতে গিয়ে মদ-নারীতে মত্ত হবে, ইচ্ছামত বিভিন্ন ফল খাবে, বিশাল বিশাল অট্টালিকায় থাকবে ইত্যাদি।  যদি খরগোশ জান্নাতে বিশ্বাস করত তবে কেমন হত দেখেন। ছবিটার দিকে তাকান। ছোট্ট খরগোশ বিশাল গাজরের স্বপ্ন দেখছে। হাহ হা।

এবার আসুন মানুষের কল্পিত জান্নাতে চলে যাই।

যারা ইসলামে বিশ্বাস করেন তাদের সকলের লক্ষ্য একটাই, আর তা হচ্ছে মৃত্যুর পর অনন্তকালের জন্য জান্নাত-বাস এবং জাহান্নাম থেকে নিজেকে রক্ষা। কিন্তু খুব অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে বন্ধুরা, এসব ধর্ম-বিশ্বাসিদেরকে যদি জিজ্ঞেস করেন জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে, তবে তারা খুব একটা কিছু বলতে পারেন না। ধর্ম ব্যবসায়ী মোল্লারাও ওয়াজ মাহফিলে খুব একটা বিস্তারিত বলেন না। এর কারণ হচ্ছে  জান্নাত ও জাহান্নামের ধারণা খুবই খুবই উদ্ভট ও হাস্যকর।  আচ্ছা, প্রথমেই তাহলে পরীক্ষা নেই।  বলেন তো জান্নাতে কয়টি ও কী কী নদী থাকবে?

জানি শতকরা ৯৯ জনও এর উত্তর পারবেন না। তাহলে আমি বলি। একটা আয়াত পড়ি-

পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। পরহেযগাররা কি তাদের সমান, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে? [সুরা মুহাম্মদ, ৪৭; আয়াত ১৫]

নহর মানে হচ্ছে নদী। অর্থাৎ জান্নাতে চারটি নহর বা নদী থাকবে
১। পানির নদী
২। নির্মল দুধের নদী
৩। সুস্বাদু মদের নদী
৪। পরিশোধিত মধুর নদী

কিন্তু শুধু এই চার নদী কেন?

পানি, দুধ, মদ, নদী এই চারটি দ্রব্যই মুহাম্মদের যুগে মক্কায় চরম আকাঙ্ক্ষার বস্তু ছিল। মরুভূমিতে পানির প্রয়োজন ছিল সব-সময়ই, তাই কল্পিত জান্নাতে একটা পানির নদী থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু অপর তিনটি লক্ষ করুন। কী কষ্ট-কল্পনা! দুধের নদী! দুধ আমরা পাই প্রাণী থেকে এবং সে দুধ প্রাণীরা তাদের বাচ্চাদের জন্য উৎপাদন করে, আমাদের জন্য নয়। তৎকালীন পশুপালক সমাজে দুধের প্রচণ্ড চাহিদা ছিল। কিন্তু পশু থেকে যে দুধ আহরিত হত তা সব সময়ই ছিল অতি অল্প। আধুনিক যুগের আগে একই অবস্থা ছিল সর্বত্র। ছাগল চরানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মুহাম্মদ এমন এক জান্নাতের কথা কল্পনা করলেন যেখানে গাভীর দুধ আসবে নদী দিয়ে, এমন প্রতিশ্রুতি শুনে আত্মঘাতী হামলায় নয় বরং হেসেই মরে যেতে ইচ্ছে হয়। আচ্ছা, এই এক নদী দুধ একজন মানুষ পান করবে কিভাবে? এর দরকার কী, দৈনিক এক লিটারই তো যথেষ্ট, তাই না? এত দুধ দিয়ে একজন জান্নাতি করবেটা কী? জান্নাতে না যা ইচ্ছে তা পাওয়া যায়, তাহলে আলাদা ভাবে এই লোভ দেখানোর মানে কী?

একই প্রশ্ন মধু আর মদ নিয়েও। দুধ, মদ আর মধু এর আগে ব্যবহৃত বিশেষণগুলো দেখেন। জান্নাতে নদী দিয়ে দুধ আসবে, সেটা যে নির্মল হবে, ভেজাল থাকবে না তা বলে দিতে হয়। মদ সুস্বাদু হবে, কিন্তু অন্যত্র বলা হয়েছে এটা পান করে নাকি কেউ মাতাল হবেনা! তাহলে সেটা আবার মদ হল কিভাবে? আর পরিশোধিত মধু! সর্বশক্তিমান, সবজান্তা আল্লাহপাক যিনি ‘কুন’ বললেই হয়ে যায় তিনি মধুর পরিশোধনাগার বসাবেন জান্নাতে। মধু তো থাকবে মৌচাকে। মৌমাছরা মধু আহরণ করে তাদের ছানাপোনাদের জন্য, মানুষের জন্য নয়। মানুষ মৌমাছিদের তাড়িয়ে-মেরে মধু সংগ্রহ করে। এই মধু নদী দিয়ে আসবে কেন? কয়েক চামচ মধুই যেখানে যথেষ্ট সেখানে মধুর স্রোতে ভাসিয়ে দেয়ার চিন্তাটা একেবারেই আজগুবি। একবার কল্পনা করেন, নদী দিয়ে মধু প্রবাহিত হচ্ছে! আবার ভেবে দেখেন নদী দিয়ে শুধু মদ আর মদ আসছে। কল্পনার একটা সীমা থাকা কি উচিত ছিল না?

একজন মানুষকে প্রতিদান হিসাবে পানি, মধু আর দুধের নহর দেয়া হচ্ছে সেটা অসুস্থ ও হাস্যকর চিন্তা। এখনকার কোনো একজন সুস্থ বুদ্ধির মানুষকে এরকম প্রতিদান দেয়ার কথা বললে সে কি তা গ্রহণ করবে? দেড় হাজার বছর আগে এসব দ্রব্যের অভাবে প্রবলভাবে ভোগা মরুভূমির মানুষগুলোকে ধোঁকা দেয়া হয়েছিল হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থে। আমাদেরকে মাথা খাটাতে হবে। বিরাট প্রতিদান শুনলেই মাথা খারাপ করা চলবে না। মানুষের অতি-লোভ তার স্বাভাবিক চিন্তা ভাবনার ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে। এজন্য প্রতারকরা মোবাইল ফোনে, ইমেইলে বিশাল অংকের লটারী বিজয়ের ভুয়া সংবাদ দিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয়।

আয়াতটির পরের অংশে আসি। বলা হচ্ছে, জান্নাতে ফলমূল থাকবে আবার সাথে থাকবে ক্ষমা। এখানে জান্নাতীরা কি পাপ করতে থাকবে যাতে মহান ক্ষমাশীল আল্লাপাক তাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন? জান্নাতে তো কোনো অপরাধ থাকার কথা না, তারপরেও এই ক্ষমার ব্যাপারটা এলো কোত্থেকে?

হাসি চেপে রেখে আপনাদেরকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি? জান্নাতের প্রথম খাবার কী হবে?

উত্তর জানতে হলে বুখারি ও মুসলিমের এই হাদিস পড়েন,

জান্নাতের সর্বপ্রথম আতিথ্য হবে তিমি মাছ ও বলদের কলিজার অতিরিক্ত অংশ দ্বারা। পৃথিবীর মাটি হবে রুটিরূপ খাদ্য। (বুখারী ৩৩২৯, মুসলিম ৩১৫নং)।

মরুভূমিতে বড় হয়ে উঠা মুহাম্মদ জানতেন না পৃথিবীতে কত রকম সুস্বাদু খাবার আছে। তাই জান্নাতেও প্রাণি নিধন করে এদের কলিজা আর মাংস খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

জান্নাতে আপনাদের সাইজ কতটুকু হবে জানেন? একটি হাদিস বলি

জান্নাতে প্রবেশকারী ১ম দলটির চেহারা হবে পূর্ণিমার রাতের উজ্জ্বল চাঁদের আলোর মতো। পরবর্তী দলগুলোর চেহারা হবে উজ্জ্বল জ্যোতিস্কের মতো। তাদের পেশাব-পায়খানা নাকের শ্লেষ্মা ও থুথু হবে না। চিরুনী হবে সোনারঘাম হবে মেশকের মতো সুঘ্রাণআগর কাঠের সুঘ্রাণযুক্ত ধোঁয়া বিতরণ করা হবেস্ত্রীরা হবে আয়াতলোচনাসবার চরিত্র এক ও অভিন্ন এবং আকৃতি হবে তাদের পিতা আদমের মতো ৬০ হাত লম্বা। (বুখারী৬২২৭ও মুসলিম২৮৪১)

 

হ্যাঁ, আপনার সাইজ হবে ৬০ হাত, আদম নাকি এই উচ্চতার ছিলেন। মানে মোটামুটি ৪ তলা দালানের সমান। তাহলে আপনার ও হুর-পরীদের হাত, পা, যৌনাঙ্গের সাইজ কেমন হবে একটু কল্পনা করেন।
.
সোনার চিরুনী দিয়ে আমরা জান্নাতে কী করব? এত উদ্ভট রুচি কেন আল্লাপাকের? এরকম পরিকল্পনা তো আগের যুগের রাজারা করত। ঘামে থাকে সুঘ্রাণ, ওয়াক!
.
যাই হোক, সোনা নিয়া কোরানের কয়েকটি আয়াত আছে। সুরা কাহফ এর ৩১ নম্বর আয়াতে আছে –
.
“এরাই তারা, যাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী জান্নাতসমূহ, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণের চুড়ি দিয়ে এবং তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু সিল্কের সবুজ পোশাক। তারা সেখানে (থাকবে) আসনে হেলান দিয়ে। কী উত্তম প্রতিদান এবং কী সুন্দর বিশ্রামস্থল !” 
.
বুঝলেন? জান্নাতে স্বর্ণের চুড়ি পরানো হবে আপনাকে। যারা তা পছন্দ করেন না তারা আমাদের দলে চলে আসেন। হাহ হা।  শুধু তাই না, স্বর্ণের থালা নিয়ে আপনাকে প্রদক্ষিণ করা হবে। আয়াতটি পড়ি –

“স্বর্ণের থালা ও পানিপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে; সেখানে রয়েছে সমস্ত কিছু, যা অন্তর চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয়। সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে।” [সূরা আয-যুখরুফ: ৭১]

আপনারা মুমিনরা বিভিন্ন ধর্মের আজগুবি জিনিস নিয়া ট্রল করেন, মূর্তিপূজা কিভাবে হাস্যকর এগুলো নিয়ে হুজুররা সারাদিন ওয়াজ করেন। কিন্তু আপনাদের ধর্মটা যে কী হাস্যকর, কোন লেভেলের ছেলে-মানুষী সেটা ভেবে দেখেছেন কখনো?
.
কোরানে যেভাবে জান্নাতের লোভ দেখানো হয়েছে তাতে মনে হয় মুমিনদের মগজ বলতে কিছুই নাই। একটা দেড় হাজার বছর আগের চতুর লোক বর্তমান যুগেও তাদেরকে লোভ দেখিয়ে চলেছে। দীনের নবী যদি একবার বেচে উঠতেন তবে এগুলো দেখে হেসে অস্থির হয়ে যেতেন।
.
সুরা ওয়াক্বিআহ নামে একটি বিনোদনমুখী সুরা আছে। জান্নাতের একটা বড়সর বিবরণ আছে এতে। শুনেন, বেশ মজা পাবেন –
.
আয়াত ১৫। (জান্নাতে) তারা স্বর্ণ খচিত খাটে থাকবে।
(আবার সোনা। এটা নিয়ে চিন্তা করেন তো কিছু সময়, কেউ কেউ সোনার জায়গায় লেখেছেন মণি-মুক্তা! যেন শিশুদের গল্প বলা হচ্ছে)
.
আয়াত ১৬। মুখোমুখী হয়ে হেলান দিয়ে থাকবে। কেউ কারো ঘাড়ের দিকে দেখবে না।
(ঘাড়ের দিকে তাকালে সমস্যা কী? এই ফালতু আয়াত দিয়ে আমরা কী করব বলেন )
.
আয়াত ১৭। তাদের চারপাশে ঘুর ঘুর করবে (সেবায় নিয়োজিত) চির কিশোররা।
(মানে গেলমান। এবার বুঝেছেন মাদ্রাসার হুজুররা ছাত্রদের গেলমান মনে করে কেন)
.
আয়াত ১৮। তারা এদের পার্শ্ব দিয়ে জান্নাতের অবারিত ঝর্না থেকে মদের কাপ, পেয়ালা ও বাটি নিয়ে প্রদক্ষিণ করবে।
(হাহ হা, আপনারা একেকজন হবেন একেকটা মধ্যযুগের বিলাসী রাজা।)
.
আয়াত ১৯। তা পানে না তাদের মাথা ব্যথা করবে, আর না তারা মাতাল হবে।
(মদ খাব আবার মাতাল হব না, এই মদ খেয়ে করবোটা কী? হাহ হাহ হা)
.
আয়াত ২০। এ সব কিশোররা তাদের সামনে তাদের পছন্দের ফলমূল নিয়ে ঘুরাফেরা করবে।
(এটা কি গেলমান রেস্টুরেন্ট?)
.
আয়াত ২১। তারা ওদের পছন্দের পাখীর মাংস নিয়ে ওদের সামনে ঘুরে বেড়াবে।
(পাখির মাংস! জান্নাতে! ফাজলামোর কোন সীমা নেই)
.
আয়াত ২২। আর তাদের জন্য থাকবে ডাগর চক্ষুবিশিষ্টা হূর
.
এবার পাইছেন হুর। হুরের সংখ্যা হবে ৭২ টা।  বুখারিতে আছে হুরদের পায়ের হাড়ের মজ্জা হাড় এবং মাংসের মধ্য দিয়ে দেখা যাবে।
.
আপনারা হয়ত ভাবছেন, জান্নাতে কেন এতকিছু দেয়া হবে। একটা প্রবাদ আছে না, মনে মনে যখন খাবে, জামমিষ্টিই খাব। মরার পরের মিথ্যা আশ্বাস বিশাল হলে তো কোন সমস্যা নাই। বেকুবদের আরো বেশি কাজে লাগানো যাবে)
.
এবার আসা যাক জান্নাতে কী কী ফল থাকবে। সুরা ওয়াক্বিয়ায় দেখি
.
সেখানে আছে কাটাহীন কুলগাছ। কাঁদি ভরা কলাগাছ। (ওয়াক্আিহঃ ২৭-২৯)
.
(নবিজী কিন্তু আবার সাবধান লোক। লোকে কুলের কাঁটা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার আগেই জানিয়ে দিচ্ছেন সেগুলোতে কাঁটা থাকবেনা।)
.
আর-রহমান সুরায় আছে- সেখানে রয়েছে ফলমূল খেজুর ও ডালিম। (রাহমানঃ ৬৮)
.
সুরা নাবায় আঙ্গুরের কথাও বলা হইছে।
এই গোটাকয়েক ফলমাত্র, মুহাম্মদ মরুভূমিতে থেকে শুধু এ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।। কোথায় আম, জাম, কাঁটাল, লিচু, আপেল, আনারস, পেয়ারা, কমলা।   নবিজি যদি আমাদের দেশে একটু বেড়াতে আসতেন তবে শুধু ফলমূল নিয়া একখানা সুরাই নাজিল করে ফেলতেন। সবাই বলেন সুভানাল্লাহ।
.
তিরমিযীর একটা হাদিস পড়ে মেজাজ বিগড়ে গেছে-
.
“জান্নাতের গাছের কাণ্ড হবে স্বর্ণের”। [তিরমিযী: ২৫২৫]
.
এসব গাছে আবার ধরবে সুমিষ্ট ফলমূল! গাজা না খেলে এগুলো বিশ্বাস করা যাবে না। আচ্ছা, এত সোনা দিয়া আমরা জান্নাতে করবটা কী? দুনিয়াবি সোনা-দানার লোভকে জান্নাতের কল্পনায় ব্যবহার করা হয়েছে।
.
 ইসলামি নির্বুদ্ধিতা নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেক লম্বা হয়ে যাবে। পরিশেষে সংক্ষেপে দুটা কথা বলে যাই
.
আমরা খাদ্য গ্রহণ করি পুষ্টি পাওয়ার জন্য। যে খাদ্যকে আমাদের দেহ যত বেশি পুষ্টিকর ও দেহের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করে সেটা তত বেশি মজাদার।  তবে এক্ষেত্রে দেহ ভুলও করে। খুব বেশি দরকারী খাদ্যকেও বিস্বাদ বলে মনে করে। এ ব্যাপারটা হাজার হাজার বছরের বিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত।  এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জান্নাতে খাবারের প্রয়োজন কী আর এটা সুস্বাদু কেন মনে হবে? যৌনতার ক্ষেত্রেও একই কথা। বাচ্চা জন্মদানের সাথে এর সম্পর্ক আছে বলেই এটা পৃথিবীতে উপভোগ্য। জান্নাতে এটা উপভোগ্য হবে কেন?
.
আমরা আমাদের বাস্তব জগতে মহান পরওয়ারদেগারের কার্যকলাপের নমুনা দেখি। অসংখ্য শিশু পুষ্টির অভাবে ভুগছে, মারা যাচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাব মতে প্রতিদিন খাদ্যের অভাবজনিত কারণে ১০ হাজার শিশুসহ ২৫ হাজার মানুষ মারা যায়। পৃথিবীতে ৮১ কোটিরও বেশি মানুষ ঠিকমত খাবার পাচ্ছেনা। নয় জনে একজন ক্ষুধার্ত অবস্থায় শোতে যায়।   যিনি সর্বোত্তম রিজিকদাতা বলে কোরানে লাফালাফি করছেন তিনি তো এমনকি শিশুদেরও বেচে থাকার খাদ্যটা পর্যন্ত দিতে পারছেন না, অসংখ্য শিশু সামান্য দুধটুকু পাচ্ছে না, কোলের শিশু থাকা অবস্থায় মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। আমরা চোখের সামনেই তা দেখতে পাচ্ছি।  অথচ জান্নাতে নাকি তিনি আমাদের পানি-দুধ-মদ-মধুর নদী দিয়ে ভাসিয়ে দেবেন একেবারে।  যিনি চোখের সামনেই ব্যর্থ, তাকে কেন অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন বলে বিশ্বাস করব?
.
আমরা তো মরুভূমির ডাকাতের মত এত উপভোগ করতে চাচ্ছিনা। তাই আমাদেরকে এসব জান্নাতের লোভ দেখিয়ে লাভ নাই। আর আপনারা মুমিনরা আর মানুষ হইয়েন না,  সামনে জান্নাতের গাজর রাখা গাধার মত জীবন যাপন করতেই থাকেন। তবে মনে রাখবেন, এটা মানুষের জীবন হওয়া উচিত নয়। একজন মানুষের বিবেক থাকবে, সে জান্নাতী গাজরের লোভে মত্ত গর্দভ হবেনা।