পৃথিবীর কোনো প্রাণী আর্টিফিশিয়াল পোশাক পরিধান করে না কারণ সূর্যের উত্তাপ ও শীতলতা থেকে প্রিজার্ভ করার জন্য তাদের শরীরে ন্যাচারাল লেয়ার আছে। শিম্পাঞ্জি অথবা বনবো পোশাক পরে না তার কারণ এই নয় যে তারা অসভ্য ও নিন্মমাত্রিক জীব। তারা পোশাক পরিধান করে না কারণ তাদের পশম আছে, তাদের জন্য পোশাকের দরকার নেই। একটি থিওরি অনুসারে, আজ থেকে ৪-৭ মিলিয়ন বছর পূর্বে আমাদের পূর্বসূরি আর্ডিওপিথিকাসরা বৃক্ষ থেকে মাটিতে নেমে যায়। এ সময় তাদের কাছে কোনো আগুন ও অস্ত্র  ছিল না। চাকুর মত দন্তবিশিষ্ট মেগানটেরোন, স্মাইলডন,হোমোথেরিয়াম, হিংস্র নেকড়ে অথবা নেকড়ে সদৃশ ক্ষিপ্র ও দ্রুতগামী ঈগলের ধারালো থাবা থেকে নিষ্কৃতির জন্য  মায়োসিন থেকে পাইলোসিন  যুগ পর্যন্ত  আমাদের পূর্বসূরি আর্ডিওপিথিকাস, অস্ট্রোলোপিথিকাস, অরোরিয়ন ও স্যাহলেনথ্রপাস-এর মতো পূর্বসূরিরা সংগ্রাম করেছিল। এ সময় তাদের স্কিনে প্রচণ্ড ঘাম সৃষ্টি এবং পশম হারানোর পক্ষে একটিভ প্রেসার শুরু হয়।  কিন্তু তখনও আমরা সম্পূর্ণরূপে আমাদের ন্যাচারাল লেয়ার হারাইনি। আজ থেকে দুই মিলিয়ন বছর পূর্বে আমাদের পূর্বসূরি হোমো ইরেক্টাসরা আগুন আবিষ্কারের পর শিকার থেকে শিকারিতে পরিণত হয়েছিল। তারা আফ্রিকার সাভানায় উন্মুক্ত সূর্যের রেডিয়েশনে শিকারের জন্য যুদ্ধ করেছিল ঘন্টার পর ঘন্টা।
            অধিকাংশ গবেষক মনে করেন,তাদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ অথবা থার্মোরেগুলেশনের জন্য বিবর্তনের একটি পর্যায়ে শরীরের সুইট গ্ল্যান্ড বৃদ্ধি পায় ও পশম হ্রাস পেতে শুরু করে। অন্যদিকে ডারউইন বলেছিলেন, আমরা পশম হারিয়েছি প্যারাসাইট থেকে দেহকে প্রোটেক্ট করার জন্য। যাদের দেহে পশম কম ছিল তারা প্যারাসাইটকে কার্যকরী উপায়ে প্রতিহত করতে পারত এবং সঙ্গীর নিকট তারা ছিল সেক্সচুয়ালি আকর্ষণীয়। আমাদের পূর্বসূরি হোমো ইরেক্টাসরা আনুমানিক ২ মিলিয়ন বছর পূর্ব থেকে পশম হারাতে শুরু করে। যদি সরলভাবে বলতে যাই,  থার্মো রেগুলেশন অথবা  প্যারসাইট থেকে নিষ্কৃতি পেতে আমরা আমাদের বডি হেয়ার হারিয়েছি, এজন্য আমাদের দেহের স্কিন খুবই সংবেদনশীল ( অনেকগুলো হাইপোথিসিস আছে)। সূর্যের তীব্র আলো থেকে চোখকে প্রোটেক্ট করতে যেজন্য আমরা সানগ্ল্যাস পরিধান করি, ঠিক একই কারণে তাপমাত্রার বিভিন্ন পরিবর্তনের সাথে আমাদের বডিকে সমন্বয় করার জন্য ( থার্মোরেগুলেশন) আমরা আমাদের দেহের চারপাশে আর্টিফিশিয়াল লেয়ার তৈরি করি (ধুলোবালিও একটা ফ্যাক্ট )। আমাদের পূর্বসূরিরা চাইলেও তাদের ন্যাচারাল লেয়ার দেহ থেকে খুলে ফেলতে পারত না, সারাজীবন তারা একই আবরণ পরে থাকত,আমরা আজ আমাদের আর্টিফিশিয়াল লেয়ার চাইলে খুলে ফেলতে পারি, পরিস্কার করতে পারি, এক একটি তাপমাত্রায় আমরা এক এক প্রকার লেয়ার যুক্ত  করতে পারি, আমরা আর্টিফিশিয়াল লেয়ারের মাধ্যমে প্যারাসাইটের বিপক্ষে স্ট্রং প্রোটেকশন তৈরি করতে পারি।
এ ধরণের আর্টিফিশিয়াল লেয়ার কাপড়ের তৈরিও হতে পারে আবার এ ধরণের আর্টিফিশিয়াল লেয়ার ইট, বালি, সিমেন্ট ও লোহার তৈরি বিশাল বিশাল টাওয়ারও হতে পারে।
              শিম্পাঞ্জির কোনো বিল্ডিং নেই, পৃথিবীর আর কোনো প্রাণী তাদের দেহকে উত্তাপ ও শীতলতা থেকে প্রোটেক্ট করার জন্য মানুষের মতো বিরাট বিরাট ভবন বা পোশাক তৈরি করে না। কিন্তু নারীর স্কিনের প্রতি আমাদের গ্রহে এত এক্সট্র্যা-কেয়ার কেন? তার কারণ আমার কাছে ঠিক স্পষ্ট না। কেন কেবল তাদেরকে যেকোনো তাপমাত্রায় বিশালাকৃতির জামা পরিধান করতে হবে, ঘরের ভেতর অবরুদ্ধ থাকতে হবে? কেন তাদের মস্তিষ্কের উপর এ অমানবিক নির্যাতন? এটা কী শরীর নাকি কোনো সুকঠিন মেটাল?
               যদি ছোট পোশাক পরিধান করলে আমরা অন্যের প্রতি সিডিউস হই তবে শিম্পাঞ্জি,বনবো অথবা অন্যান্য অ্যাপসদেরও উলঙ্গ নারীর প্রতি সিডিউস হওয়ার কথা। কিন্তু তাদের মধ্যেও এস্ট্রাসের পূর্বে  কোনো উদ্দীপনা দেখা যায় না তেমন। আমরা কার প্রতি সিডিউস হব সেটা ডিপেন্ড করছে মস্তিষ্কের নিউরোকেমেস্ট্রির উপর। আপনি যদি নিয়মিত সেক্স করার সুযোগ পান তবে আপনার সামনে যদি কেউ উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েও থাকে আপনার ব্রেন তার প্রতি গ্র্যাভিটি অনুভব করবে না।
          পৃথিবীর সকল প্রাণীই উলঙ্গ কিন্তু তারা কেন অসীমভাবে একে অন্যের প্রতি সিডিউস হচ্ছে না? জৈব রসায়নের তো একটা সীমা আছে, তাই নয় কী? নিউরোকেমিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে, সেমি নুড পিকচার ফুল নুড থেকে বেশি আকর্ষণীয়। কারণ সেমি নুড আমাদের ব্রেনকে বলে এখানে একটি হিডেন বিউটি আছে। আর ডোপামিন সিক্রেট উন্মোচন করতে বেশি উদ্দীপিত হয়। যেখানে কোনো হিডেন বিউটি নেই সেখানে কল্পনা ও সৃষ্টিশীলতারও কোনো সুযোগ নেই। ফুল নুড অ্যারোটিক কিন্তু অ্যাট্রাক্টিভ নয়। একজন উলঙ্গ নারীর প্রতি আমাদের ব্রেন খুব একটা আকর্ষণ অনুভব করে না, আমরা তখনই আকৃষ্ট হই যখন তার শরীরের কিছু অংশ আবৃত করে দেয়া হয় কারণ আমাদের ব্রেন সিক্রেট উন্মোচন করতে পছন্দ করে। পর্নোভিডিয়ো যেগুলো একদম খোলামেলা সেখানে আমাদের ব্রেন আনএক্সপেক্টেড রিওয়ার্ড পায় না যেজন্য সেখানে ডোপামিন থ্রিল নেই। মানুষ টিকেই আছে প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির জন্য, এটাই তার জেনেটিক্যাল লজিক, আপনি কীভাবে পোশাক দিয়ে তার ব্রেন থেকে সম্মোহন মুছে ফেলতে পারেন? আবার যদি বলেন উন্মুক্ততা মস্তিষ্কের আসক্তির সার্কিটকে ডেস্ট্রোয় করে দেয় তাহলে কেন পৃথিবীর অন্যান্য জীবদের আসক্তির সার্কিট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে না? আপনার ক্ষুদ্র সিমেন্স রিজার্ভর বা অণ্ডকোষে কতটুকু সিমেন্স রিজার্ভ করা সম্ভব যে আপনি মিলিয়ন মিলিয়ন উলঙ্গ নারীর প্রতি সিডিউস হয়ে মাস্টারবেট করবেন? ব্যাপারটা কী একেবারেই হাস্যকর নয়? কারও অণ্ডকোষ তো আর হোল ইউনিভার্সের সমান নয় আর খুলির ভেতর কোনো পুরুষেরই মিলিয়ন মিলিয়ন ম্যাট্রিক টন ডোপামিন নেই, তাই নয় কী?
          আমাদের পূর্বসূরিদের মধ্যে আমাদের কাজিন নিয়ান্ডারথাল ও আমাদের অ্যানসেস্টর ক্রোম্যাগনরা পোশাক পরিধান করেছিল বলে জানা যায় । কিন্তু তাদের পোশাক ছিল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শর্ট। প্রশ্ন হলো, আমাদের পূর্বসূরি পুরুষরা কেন ছোট পোশাক পরিধান করার কারণে নারীর প্রতি সিডিউস হয়ে, র্যাপ করে ,পিটিয়ে ও খুন করে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি? এমন কোনো সায়েন্টিফিক রিসার্চ পেপার দেখানো সম্ভব কী বিরাট পোশাক পরিধান করার কারণে নারীর প্রতি ধর্ষণ হ্রাস পেয়েছে, তাদের শারীরীক ও মানসিক বিকাশ সুস্থ্য ও সুন্দরভাবে ঘটেছে?
শালীনতা নির্ভর করে একটি সমাজে শালীনতার ডেফিনেশনের উপর। আমরা যখন সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত কোনো একটি নর্মের বিপক্ষে কাজ করি , আমরা এক্সিসটেন্সিয়াল আনসার্টেইনটি অনুভব করি, আমাদের মস্তিষ্কের লজ্জা ও অনুতাপের সাথে সম্পৃক্ত নিউরোকেমিক্যাল ট্রিগ্যার হয়। বাংলাদেশের একজন নারীর মস্তিষ্কের নিউরোকেমিক্যাল যে পোশাকের কারণে উদ্দীপিত হবে, একজন অ্যামেরিকান নারীর নিউরোকেমিক্যাল একই পোশাকের কারণে উদ্দীপিত হবে না। অতএব এখন এটাও পরিস্কার যে পোশাকের মধ্যে শালীনতা নেই, শালীনতা হলো একটি সমাজের পারসোনালিটি। যে সমাজের পারসোনালি যত উন্নত তাদের শালীনতার ডেফিনেশনও তত উন্নত হবে।
যুগ যুগ ধরে নারীদের উপর অন্যায়ভাবে যে সকল সামাজিক নর্ম চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, আমাদের এখন সময় হয়েছে সেগুলো থেকে বেরিয়ে আসার। আমাদেরকে প্যারাসাইটিক থট থেকে বেরিয়ে এসে বুঝতে হবে পোশাকের জৈবিক উপযোগিতা ও অনুপযোগিতা। আমরা পোশাক পরিধান করব আমাদের পরিবেশগত প্রভাবের সাথে নিজের দেহকে সমন্বিত করার জন্য। মনে রাখতে হবে, নারীর শরীর কোনো ধর্ম ও রাজনৈতিক মতাদর্শের পতাকা হতে পারে না !!
( ফিচার ছবিটি জার্মানির কলনার ডোমে ইরানের হিজাব বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইরানি নারী মেলিকা আহমাদির ।)