লিখেছেনঃ জিসান

জনাব আজগর আলি একজন উচু দরের সায়েন্টিস্ট। কিন্তু জাতি তাকে চিনলো না! একমাত্র তার নিজের ভাগনে টোপনই তার প্রতিভা জানেl সমস্যা একটাই, সে তাকে “অজগর মামা” বলে ডাকে। আজগর আলি একদিন একটা টাইম মেশিন তৈরি করে ফেললো। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ! প্রথম খবর দিল তার আপু জাহানারা বেগম কে,

– আপু দেখ আমি একটা টাইম মেশিন আবিষ্কার করে ফেলেছি ।

– ভেরি গুড ! এখন যা তো , তোর টাইম মেশিনে চড়ে আর পি গেট থেকে এক কেজি কাঁচা মরিচ নিয়ে আয়। খবরদার বাজে খরচ করবি না । একেই তো মাসের শেষ …

এর পরেও আপুর সাথে কথা বলার প্রশ্নই আসে না । কাজেই তিনি গেলেন দুলাভাই এর কাছে।

– কি খবর শালা বাবু ?

– দুলাভাই দেখুন আমি টাইম মেশিন আবিষ্কার করে ফেলেছি।

– তাই নাকি! ভেরি গুড ! টোপন কে দেখাও মজা পাবে, তুমি বললে আমি কত গুলো খেলনার ফ্যাক্টরির সাথে যোগাযোগ করি , তারা যদি রাজি হয় …

– দুলাভাই এটা খেলনা না । এটা একটা টাইম মেশিন …

দুলাভাই ঠিক শুনতে পেলেন না ,

– তোমার সাথে পরে কথা বলব, এখন খবর দেখছি । তোমার আপু কে বলো এক কাপ চা…

কাজেই শেষ উপায় টোপন। কিন্তু সে টোপনের মামা , একটা ভাব সাবের ব্যাপার আছে তাকে তো আর হ্যাংলার মতো নিজে থেকে কিছু বলা যায় না , পার্সোনালিটি ক্ষয়ে যেতে পারে! তাই বললেন,

– টোপন আমি কাজ করছি , এখন বিরক্ত করবি না …

টোপন মনোযোগ দিয়ে “সায়েন্স অব ষ্টুপিড” দেখছিলো, কাজেই সে কথাটা খেয়াল করলো না

– টোপন আমি কাজ করছি এখন বিরক্ত করবি না , কাজ প্রায় শেষ।

এবার সে শুনল । টোপন বুদ্ধিমান ছেলে, সে ভালোই বুঝতে পারলো অজগর মামা নিজে থেকেই তাকে কিছু বলতে চায় । কিন্তু সে সরাসরি কিছু বলল না , মামার মন খারাপ হতে পারে । সে ঠিক করেছে মামার মতো সায়েন্টিস্ট হবে। তাই চোখে আগ্রহ ফুটিয়ে বলল,

– কি কাজ মামা।

– (বিরক্ত হবার ভান করে) একটা টাইম মেশিন বানিয়ে ফেলেছি, ভাবছি অতীত থেকে একটু ঘুরে আসি!

টোপন সত্যি সত্যিই অবাক হল। তার মামা টাইম মেশিন বানিয়ে ফেলেছে। বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে বলল,

– তুমি কোথায় যাবে মামা?

-জার্মানিতে, হিটলারের জন্ম নেওয়া আটকাবো! এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে না ,পৃথিবীর উপকার হবে!

– জন্ম নেওয়া আটকাবে কিভাবে মামা?

আজগর অস্বস্তিতে পড়ে যায়,

-তুই তো আসলে ছোট ,বড় হলে বুঝবি! আপাতত দেখে যা!

ব্যাপারটা টোপনের একটু খুঁতখুঁতে লাগছিল, কিন্তু মামাকে কিছু বলল না।

-আমাকে নেবে মামা?

আজগর সাহেবের ভয় ভয় লাগছিলো, হাজার হোক একা এতটা সময় পেছন যাওয়া, ভাগ্নে যেতে চাওয়ায় সে খুশি ই হয়েছে , তবু (নকল) বিরক্তি ফুটিয়ে বলল,

-তুই কি করে যাবি, মাত্র ক্লাস সেভেন এ পড়িস, ভয় পাবি না?

– না ! আমি সাহসী ছেলে!

-চল তাহলে।

দুজনে টাইম মেশিনের ভিতরে বসল, মামা খানিকক্ষণ সত্যি সত্যি তার অতীতের দিকে আরম্ভ করলো। যা ভেবেছিল তাই হল, ঠিকমতো জার্মানিতে ,অতীতে , হিটলারের বাড়িতে পৌঁছে গেল।

হিটলারের বাবা হিটলারের মায়ের বানানো কফি খাচ্ছিলেন। আজগর কোন রকম ভাবে কফিতে বাইরে থেকে দুই চামচ চিনি দিয়ে দিল। মুখে দিয়েই হিটলার পিতা মুখ বিকৃত করে কিছু একটা বললেন! আজগর সাহেবের তৈরি ট্রান্সলেটর দিয়ে যা শোনা গেল,

– কফিতে এত চিনি দিয়েছো কেন?

– ঠিকই তো দিয়েছি!

-কচু ঠিক দিয়েছো, চিনি কি বাপের বাড়ি থেকে আনো?

-বাপ তুলে কথা বলবে না।

-100 বার বলবো ,হাজার বার বলবো, ভাগ … মেয়ে! (যন্ত্রটা তুই তুমি ঠিক দিতে পারে)

– এত বড় কথা ,তোমার বাড়িতে আমি আর থাকব না।

দুজনের তুমুল ঝগড়া হলো,কাজেই সে রাতে আর হিটলারের জন্ম প্রক্রিয়া শুরু হলো না। বিশ্ব বেঁচে গেলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে।

– অপারেশন সাকসেসফুল।

টোপন বুঝতে পারেনি সত্যি সত্যি অপারেশন সাকসেসফুল হবে, স্কুলের ইতিহাস বইয়ে এখন হিটলার সম্পর্কে কি লেখা আছে তা দেখার জন্য তর সইছে না। দুইজন ২০২০-এ ফিরে এলো। কোন গন্ডগোল এ একদিন পরে ফিরে এলো। তারা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলো, দুইদিন কোথায় ছিল এ নিয়ে বা দুলাভাই কোনো প্রশ্ন করল না। প্রথমেই টোপন ইতিহাস বই বের করল, অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো , সেখানে স্পষ্ট লেখা’ “এডলফ হিটলার ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম আন্দোলন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খলনায়ক ছিলেন”।

এর মানে কি? হিটলারের তো জন্ম নেয়ার কথা ছিল না! মামাতো বললো হিটলারের আর জন্ম হবে না!মামা কে সে সবটুকু খুলে বলল, মামাও অবাক হলো! টানা এক সপ্তাহ সে পড়াশোনা করল! এক সপ্তাহ পর মামার ঘরে টোপন এর ডাক পড়লো,

-ব্যাপারটা আমি বুঝতে পেরেছি?

-ব্যাপারটা কি মামা, হিটলার জন্মালো কিভাবে? – আমরা আসলে আমাদের অতীতে যাইনি, আমরা গিয়েছিলাম অন্য অতীতে!

-অন্য অতীত মানে?

-মানে প্যারালাল ইউনিভার্স, সমান্তরাল মহাবিশ্ব! আমরা যেমন আমাদের মহাবিশ্বে বসবাস করি তেমনই আরো অনেক মহাবিশ্ব আছে, আমরা তাদের কোন একটা মহাবিশ্বে গিয়েছিলাম! আমাদের মহাবিশ্বের অতীতে যাওয়া আমাদের সম্ভব নয়!

– সম্ভব নয় কেন মামা!

– ধর তুই অতীতে গিয়ে তোর বাবাকে মেরে ফেললি , যখন তোর জন্যই হয়নি, বাবা কে মারার কারণে তোর জন্ম হবে না, তোর জন্ম না হলে তুই কি করে তোর বাবাকে মারার জন্য গেলি?

সে ভাবার চেষ্টা করল।

-আরো উদাহরণ আছে, যেমন কেউ যদি অতীতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সাহায্য করার জন্য গীতাঞ্জলি দিয়ে আসে , রবীন্দ্রনাথ যদি তার নকল করে, তখন প্রশ্ন আসে গীতাঞ্জলি আসল লেখক কে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তো অন্য কেউ লেখাটা দিয়ে গেছে, সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ও তো অন্য রবীন্দ্রনাথ লেখাটা দিয়েছ… তাহলে গীতাঞ্জলি এলো কোত্থেকে?

-তাহলে আমাদের কি হয়েছিল মামা?

-আমরা অন্য মহাবিশ্বের হিটলারের জন্ম থামিয়েছি, সেই মহাবিশ্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে না। তার জন্য আমাদের মহাবিশ্ব এর ইতিহাস বই বদলাইনি। মনে কর আমরা যদি আমাদের হিটলারকে মারতাম, তাহলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ হতো না, কাজেই হিটলার কে কেউ চিনত না, তখন কেউ তাকে অতীতে মারতে যেত না । এভাবে একটা চক্রে আমরা ঢুকে পরতাম, বুঝতে পারছিস?

-মোটামুটি। তাহলে মামা আমরা যে একদিন পরে বাড়ি ফিরছিলাম তা নিয়ে কেউ চিন্তিত হলো না কেন?

– এটাও সহজ, আমরা অন্য মহাবিশ্বে যাওয়ার কারণে আমাদের মহাবিশ্ব ভর শক্তির নিত্যতা বজায় রাখার জন্য, সেই মহাবিশ্ব থেকে সেই মহাবিশ্বের টোপন আর আজগর তাদের টাইম মেশিনে আমাদের মহাবিশ্বে এসেছিল। কাজেই কেউ অবাক হয়নি।

এবার সে ব্যাপার টা বুঝতে পারে। তারা অন্য অতীত এ ঘুরে এসেছিল।

লেখক-
জিসান,
দশম শ্রেণি, ইকবাল সিদ্দিকী স্কুল অ্যান্ড কলেজ।