মাননীয় রাষ্ট্রদূত
পঞ্চাশ বছর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি কালে আমাদের সবুজ পাসপোর্ট থেকে ইসরাইল ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞামুলক দুটি শব্দ তুলে নেয়ায় আপনি খুবই মর্মাহত হয়েছেন এবং এ নিয়ে প্রকাশ্যে উষ্মাও প্রকাশ করেছেন। কষ্ট পাওয়াটা অবশ্য স্বাভাবিক কিন্তু এভাবে উষ্মা প্রকাশটি কূটনৈতিক শিষ্টাচার মুলক নয়। তবু বহু বিচিত্র জাতি হিসেবে ক্ষুদ্র ইস্যুতে উত্থাল হওয়া আর বৃহৎ ইস্যুতে চোখে গাঢ় চশমা আর কানে কোলা বেঁধে তা চেপে যাওয়া আমাদের মজ্জাগত বলে আপনার এই শিষ্টাচারবর্জিত মন্তব্য আমাদেরকে তেমন বিচলিত করবেনা। আপনারা যারা এদেশে কূটনৈতিক হিসেবে আসেন তারা অনেকটা সাত জন্মের পূণ্যের ফল হিসেবে এদেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। আপনাদের নিজ নিজ দেশে আপনারা হয়তো সাধারণ একজন কেরানী দপ্তরীরও সমান মর্যাদা পাননা কিন্ত বাংলাদেশে আসা মাত্রই আপনাদের কপাল খুলে যায়। আপনাদের সাথে দরবার করে আমাদের জাঁদরেল মন্ত্রীরা ধন্য হন। মন্ত্রী আমলারা আভ্যন্তরীন সমস্যা সমাধানে আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ প্রার্থনা করেন।বিরুধীদলের অভিযোগ জানাবার মোক্ষম জায়গাটিই হলো আপনাদের দূতাবাসগুলি। আপনারা রাস্তায় বেরিয়ে গলাটি একটু উঁচু করলেই শয়ে শয়ে সাংবাদিক ফটোসাংবাদিক আপনাদিগকে ঘিরে ধরেন। আপনাদের মুখ নিসৃত বাণীগুলি পত্রিকার লিড নিউজ হিসেবে ছাপা হয়। টিভি সংবাদের প্রধান শিরোনাম হয়। টকশো পন্ডিতদের সারগর্ভ বক্তব্যের মূল্যবান রেফারেন্স হয়ে যায়। সুতরাং এ রকম দুচার পাঁচটা লাগামছাড়া বক্তব্য আপনারা দিলেও আমাদের কিছু আসে যাবেনা। এক অদ্ভুত এবং বিচিত্র জাতি আমরা।
মাননীয় রাষ্ট্রদূত
প্যালেস্টাইনী নির্যাতিত মানুষের পক্ষে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট কেননা আপনাদের মতো আমরাও এককালে নির্যাতিত ছিলাম। আপনাদের মতো আমাদেরও মুক্তির পেছনে একটি তিক্ত গল্প আছে। তাহলে চলুন সংক্ষিপ্তাকারে একটু ইতিহাস পর্যালোচনা করি। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্টিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আপনাদের কতজন লোক এই অভিশপ্ত ইহুদি জাতী কর্তৃক নিহত হয়েছে বলতে পারেন ? এক পরিসংখানে দেখেছি ১৯৪৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ৪৭৯১ জন প্যালেস্টাইনী নাগরিক ইসরাইলী নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা নিহত হয়েছেন বাকি ছয় বছরে এর সাথে যদি আরও দু তিন হাজার যোগ করা হয় তবে এ সংখ্যা হয়তো দশ হাজারের কাছাকাছি হবে।এই বিপুল সংখ্যক নিহত মানুষের জন্য আমরা অনুতাপ প্রকাশ করছি। ইহুদি সেনাবাহিনীর বর্বর সেনা কর্তৃক আপনাদের কতজন নারী ধর্ষিতা হয়েছেন সে হিসাব অজ্ঞাত অর্থাৎ তেমন অভিযোগ খুব একটা শুনা যায়না এ দিক দিয়ে আপনাদেরকে কিছুটা ভাগ্যবান বলাই যায়। কেন ভাগ্যবান বলছি তা আমাদের সেই তিক্ত ইতিহাসের একটি পরিসংখ্যান শুনলেই বুঝতে পারবেন। মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের আইকনিক রাষ্ট্র পাকিস্তানী ইসলামী সেনা কর্তৃক এদেশের ত্রিশলাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। পথে ঘাটে মানুষের লাশ পঁচেছে। শিয়াল শকুনের খাবার হয়েছে। কোনো রকম শেষকৃত্য ছাড়া আবর্জনার মতো নিহত মানুষের শত শত লাশকে এক গণকবরে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। নিজের কবর নিজেকে দিয়ে খনন করিয়ে সেই কবরের উপরই গুলি করে হত্যা করে লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। আর ধর্ষণ ? সংখ্যা শুনে ইহুদিরা নিজেদেরকে নপুংশক ভেবে লজ্জা পাবে। দুই থেকে আড়াই লাখের মতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছিল পাকিস্তানী খাঁটি ইসলামী সেনারা। বাংলাদেশের সেই ভয়াল দুঃসময়ে আপনারাও পি এল ও এর নেতৃত্বে যুদ্ধরত ছিলেন। বাংলাদেশ তখন আশা করেছিল মুক্তিকামী জাতী হিসেবে ফিলিস্তিন আরেক মুক্তিকামী জাতীর পাশে দাঁড়াবে। না, কোনো সামরিক সাহায্য নয় নৈতিক সমর্থনটুকুই আমাদের কাম্য ছিল। দিয়েছিলেন সেই সমর্থন? না স্যার, উল্টোটি করেছিলেন। ১৮ এপ্রিল ১৯৭১ প্যালেষ্টাইন মুফতি ই আজমের সংগঠক আমিনুল হোসাইনী এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের আভ্যন্তরিন বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের নিন্দা করেছিলেন। আর পি এল ও প্রধান ইয়াসির আরাফাত এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলেন, ইতিহাসের এক ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা তাকে একটুও স্পর্শ করেনি। বিচলিত করেনি। এবার আসুন আমাদের আসমানী কিতাবের ফরমান অনুযায়ী অভিশপ্ত বলে খ্যাত ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের ভূমিকা প্রসঙ্গে। আমরা প্রায়শ ইসরাইলকে আমেরিকার পোষ্যপুত্র, জারজসন্তান, তাবেদার ইত্যাদি বলে গালমন্দ করে থাকি। শব্দগুলি অপ্রমিত এবং অশালীন হলেও বাস্তবে এগুলির কিছুটা সত্যতা আছে কেননা কারো দ্বারা ইসরাইল আক্রান্ত হলে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রই তার পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। আমেরিকার সমর শক্তিতে ইসরাইল বলীয়ান তাই আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আমেরিকার বিপক্ষে স্ট্যান্ড নেয়া ইসরাইলের পক্ষে কার্যত অসম্ভব কিন্তু বিষ্ময়কর সত্য হলো বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ইস্যুতে এই পুঁচকে ইসরাইল কিন্তু আমেরিকার বিপক্ষেই অবস্থান নিয়েছিল। তৎকালীন নিক্সন প্রশাসন এই যুদ্ধকে অনেকটা প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে গ্রহণ করেই পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। এমনকি পূর্বপাকিস্তানে গণহত্যার ভয়াবহতা অনুধাবন করে যখন মার্কিন কংগ্রেস পাকিস্তানকে অস্ত্র সাহায্য বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে ভোট দেয় তখন নিক্সন প্রশাসন কৌশল করে গোপনে সৌদি আরব জর্ডান ইরান লিবিয়া তুরস্কের মাধ্যমেও পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠানো অব্যাহত রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের এই চ্যালেঞ্জিং যুদ্ধে ইসরাইল দাঁড়িয়েছিল এর বিরুদ্ধ পক্ষে অর্থাৎ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। তারা জুলাই মাসে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি এবং সামরিক সাহায্যের প্রস্তাব পাঠায় কিন্তু এতে মুসলিম বিশ্ব বিগড়ে যাবার ভয়ে মুজিবনগর সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে যদিও পুরো মুসলিম বিশ্ব প্রথম থেকেই একপায়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। আমাদের এককোটির মতো শরনার্থী নিয়ে তৎকালীন দারীদ্রপীড়িত ভারত যখন হিমসিম খাচ্ছিল ক্যাম্পের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কলেরা মহামারিতে হাজার হাজার মানুষ মরছিল তখন খাদ্য এবং চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে মুষ্টিমেয় কিছু দেশ ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল আর সেই দেশগুলির অন্যতম একটি ছিল ইস্রাইল। কোনো মুসলমান দেশ একটাকা দিয়েও আমাদিগকে সাহায্য করেনি। বরং প্রকাশ্যে বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। অর্থ দিয়ে অস্ত্র দিয়ে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরমে কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে সমানে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে।
মাননীয় রাষ্ট্রদূত,
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা স্বাধীন হলাম। আর স্বাধীন হয়েই আমরা আপনাদের ভূমিকার নতুন মূল্যায়ন করলাম। মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের নেতিবাচক ভূমিকাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই নিলাম। আপনাদের মুক্তিসংগ্রাম চলে এলো আমাদের একনম্বর প্রায়োরিটিতে। আর বেচারা ইস্রাইল, মুক্তিযুদ্ধে আমাদিগকে সাহায্য সহায়তা করেও চলে গেল ব্রাত্যের কাতারে। ব্রাত্য হলেও বোধহয় ইহুদীদের প্রতি কিছুটা নমনীয়তা বুঝাতো কিন্তু ব্রাত্য থেকে চলে গেল একেবারে জন্মশত্রুর পর্যায়ে। আমরা মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েই একটি দেশকে নিষিদ্ধ শত্রুর দেশ বলে গন্য করলাম। না আমাদের গণহত্যাকারী দেশকে নয় তৃতীয় আরেকটি দেশকে আর সে দেশটি হলো ইসরাইল। আমাদের সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভ ধর্মনিরপেক্ষতা স্বাধীনতার প্রথম প্রহরেই বড় একটি হোঁচট খেল। আমাদের পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম অঙ্গীকার কারো সাথে শত্রুতা নয় নীতি কার্যত স্ববিরুধী হয়ে গেল। তারচেয়েও বড় কথা “ A friend in need is a friend indeed প্রবাদটির অভূতপূর্ব বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখালাম আমরা। কৃতজ্ঞতা চক্ষুলজ্জা বিবেক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে গেল আমাদের মজ্জার ভেতরে জমা ইহুদীবিদ্বেষ। আর এই বিদ্বেষটি এতই প্রখর প্রবল এবং অবিনাশী যে ত্রিশলাখ বাঙালিকে হত্যা আর আড়াইলাখ বাঙালি রমনীকে ধর্ষণ করেও পাকিস্তান আমাদের বন্ধু হতে পারে কিন্তু ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল এখনও আছে শত্রুর একনম্বর সিরিয়েলে। পঞ্চাশ বছর পর আমাদের পাসপোর্ট থেকে আপত্তিকর দুটি শব্দ ডিলিট করে ফেলার অনুশোচনা থেকেই কি না কে জানে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেন-আমরা ইস্রাইল রাষ্ট্রকে স্বীকার করিনা তখন বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় প্রবাদটিই আমাদের আশ্রয়ের অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়।
মাননীয় রাষ্ট্রদূত,
যে দেশের মুক্তিযুদ্ধের বি্রোধিতা করার পরও দেশটি আপনাদিগকে এত দিল, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইসরাইলের স্বতপ্রনোদিত স্বীকৃতি এবং সামরিক সাহায্য প্রত্যাখ্যান করলো, আধা শতাব্দী ধরে তাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন না করে রাষ্ট্রের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ক্ষতি করলো, অথচ মুসলিম বিশ্বের অর্থনৈতিক সামরিক এবং ধর্মীয় মোড়লপনায় শীর্ষ দেশ সৌদি আরব তুরস্ক ইত্যাদি ইসরাইলের সাথে যথারিতি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে সেই বেনিফিট নিচ্ছে। বাঁশের চেয়ে বড় হয়ে যাওয়া এই কঞ্চিটি আপনাদিগকে রাজা বাদশাহর মতো বসবাসের জন্য দূতাবাসের জায়গা দিয়েছে শুধু তাই নয় শুনা যায় এই দেশের বেকুব পাবলিক আবেগের ঠ্যালায় প্যালেস্টাইন যুদ্ধের জন্য ডকুমেন্টস বিহীন বিপুল চাঁদা আপনাদের দূতাবাসে পাঠাচ্ছে যা নিয়ে কি না আপনার দেশের মানুষই ক্ষুব্ধ হয়ে টুইট করছে কারণ তারা মনে করে এই পাবলিক সাহায্য আপনারা দূতাবাসে বসে বসে আরামসে ভোগ করছেন। করুন। করতে থাকুন ভোগ। কারণ এমন আজব দেশ আর জাতি বিশ্বের আর কোথাও খুঁজে পাবেননা। পরিশেষে কৌতুকছলে গ্রাম বাংলার একটি প্রবাদ শুনিয়ে দিই- যার মরা সে খায় মাছে ভাতে, কাইন্দা মরে যোগীর সাতপুতে। অবশ্য এই আন্তর্জাতিক যোগীর সাত পুত নয় এক পুতই আছে আর সেটি এই বাংলাদেশ। পৃথিবীতে এমন নির্বোধ যোগীপুত্র আর দ্বিতীয়টি নেই যে। ইতি
বিনীত
আহমেদ শাহাব
কিশোরের চোখে দেখা মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রত্যক্ষদর্শী
মুসলমানরা অন্ধ ধর্মীয় আবেগ দ্বারা চালিত হয়, বাস্তবতা ও যুক্তি দ্বারা নয়।
ধর্মান্ধতা এর মত দলীয় অন্ধতা জঘন্য। এত সরলীকরণ লেখা নিকট ভবিষ্যতে পড়ি নাই।পাকিস্তানের গনহত্যার দায় ফিলিস্তানের উপরেও বর্তায় কারণ তারা মুসলিম। চরম ধর্মান্ধ মোল্লা ও বোধহয় এরকম নির্লজ্জভাবে সব কিছুর মধ্যে ধর্ম টেনে আনে না।ফিলিস্তান সামগ্রিক ও নৈতিক ভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল।তখন বেশিরভাগ আরব দেশই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করায় ইয়াসির আরাফাত নিরপেক্ষ ভূমিকা নেন কিন্তু ফিলিস্তানের জনমত ও পত্রিকা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল।মুক্তিযুদ্ধের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রধান অতিথি ছিলেন ইয়াসির আরাফাত। তো আপনার মতামত হল হাসিনা সরকার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধি পক্ষকে নিমন্ত্রণ করছিল??
ইসরাইলের স্বীকৃতি কোন মানবিক কারনে ছিল না,শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু—এই ছিল নীতি।ইসরায়েল সাহায্য বা স্বীকৃতি বংগবন্ধু নিজে বাতিল করে দিছে, ইভেন পাসপোর্ট এর বিষয়টি ও বঙ্গবন্ধু সরকার নিজে করছে।আচ্ছা এখন পাসপোর্ট এর “এক্সেপ্ট ইসরাইল” বাদ দেওয়ায় বঙ্গবন্ধুর চেতনায় আঘাত লাগে নাই বা চীন/আমেরিকা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করছে তাদের ব্যাপারে আপনার কি ফতোয়া
আপনি নিজেই যে একটি রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিশ্বাসের অন্ধ পূজারী তার প্রমাণ আমার লেখায় দলানুগত্যের আবিষ্কার। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ৭১ এ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মুজিব নগর সরকার এবং স্বাধীনতা উত্তর সময়ে পাসপোর্টে ইসরাইল ভ্রমনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু সরকার সুতরাং এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলে সেই দুই সরকারের বিরুদ্ধেই যায় আপনি এতে দলপ্রীতি বা দল বিদ্বষের কী দেখলেন? হাঁ, আমার লেখাটি খুব সরলীকরণই হয়ে গেছে। একাত্তরে শরনার্থী শিবিরের বুভুক্ষু ক্ষুধার্ত মানুষজন তা্দের চরম দুঃসময়ে যে দুমুটো খেয়ে জীবন বাঁচিয়েছিল, অসুস্থ শরনার্থী যে ওষুধ নিয়ে বা খেয়ে জীবন রক্ষা করেছিল অথবা আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত একটি ঘাতক বাহিনীর বিরুদ্ধে যে অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাগণ বীর বিক্রমে লড়াই করে দেশকে স্বাধীন করেছিল এরা সবাই যখন জানতে পারেন সেই খাদ্যে সেই ওষুধে সেই অস্ত্রে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলেরও কিঞ্চিত অবদান আছে তখন সে দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোটা তাদের বা তাদের উত্তর পুরুষের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। এটি একটি সরল সমীকরণ এবং একে যারা গরলীকরণ করতে চান এরাই একাত্তরের ঘাতক বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের উত্তরপুরুষ।
কী অদ্ভুত যুক্তি ! ইসরাইল শত্রুর শত্রুকে সাহায্য করতে বা স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিল বলে তা হারাম ছিল। এই দৃষ্টিতে বিবেচনা করলেতো ভারতের সাহায্য নেয়াও আমাদের জন্য হারাম হওয়ার কথা। ভারতওতো শত্রুর শত্রুর পক্ষেই দাঁড়িয়েছিল। ভূ রাজনীতিতে এটিতো এক কমন ফ্যাক্টর। বৃহৎ তথা সকল রাষ্ট্রের প্রতিটি আন্তদেশীয় পদক্ষেপেই নিজ দেশের স্বার্থচিন্তা থাকে সবার আগে। এটাইতো ষ্ট্র্যাটেজি। ভারত শত্রুর শত্রুকে সাহায্য করেছিল এতে যেমন তাদের নিজেদেরও স্বার্থ ছিল আমরাও আমাদের নিজেদের স্বার্থেই শত্রুর শত্রু ভারত থেকে সাহায্য নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছি। শত্রুর মিত্র চীন যুক্তরাষ্ট্র এবং মুসলিম দেশগুলির সাহায্য নিয়ে কি একহাজার বছরেও দেশকে স্বাধীন করা যেতো যা আমরা মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে অর্জন করেছি ? আসলে এইসব কুযুক্তির বা ত্যানা প্যঁচানোর একটাই উদ্দেশ্য ইসরাইল ইহুদি রাষ্ট্র কোনো ভাবেই তাকে তার কাজের স্বীকৃতি দেয়া যাবেনা আর প্যালেস্টাইন মুসলমান রাষ্ট্র সুতরাং এদেরকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনকারী বানাতেই হবে।
ফিলিস্তিনের জনমত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ছিল এটা আপনি কোনসূত্রে জানলেন? ইস্রাইলের প্রকাশিত সাহায্য আপনাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় অথচ ফিলিস্তিনিদের মনের খবর আপনাদের গোচরে এসে গেল ?
শেখ হাসিনা স্বাধীনতার রজত জয়ন্তি অনুষ্টানে ইয়াসির আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বলে কি একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতা প্রশ্নে আরাফাতের ভূমিকা পাল্টে যাবে ? যেখানে স্বাধীনতাযুদ্ধে মৌন ভূমিকা পালনকারী ফিলিস্তিনিদের স্বার্থে ভূমিকা রাখা ইস্রাইলকে শত্রু ঘোষণা করে নিষিদ্ধ দেশ বানিয়ে ফেলা হয় সেখানে স্বাধীনতার রজত জয়ন্তি অনুষ্টানে আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানানোটাইতো স্বাভাবিক ছিল।
ওয়াও!!! চমৎকার লেখা বিশেষ করে অপ্রকাশিত তথ্য, যা এতদিন আমজনতা জানতোই না তা উন্মোচিত করার জন্য ধন্যবাদ। মসজিদে মসজিদে জুমার পরে দোয়া হয় ফিলিস্তিনের জন্য অথচা তারাই কি না আমাদের মুক্তি সংগ্রামে একবারেই চুপ ছিল। ভাবতেই কেমন যেন লাগছে!!! ফিলিস্তিনিরা কি ভাবে আশা করে…অন্যেরা তাদের সমর্থন করবে। সময় হয়েছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার।
এখানে যারা লিখেছেন মন্তব্য করেছেন সবাইকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই কারন হুজুরদের আবেগের এবং রাজনৈতিক মিথ্যে অভিনয় এর বাইরে এসে বুদ্ধিমানের মতন যৌত্যিক ও বাস্তব আলোচনা করেছেন। সত্য ও বাস্তব তুলে ধরার জন্য আবারো সেলুট।
একটি বিষয় এখন আমি আর বলিনা সেটা হলো এিশ লক্ষ শহীদ ও আরাই লক্ষ মা বোনের ইজ্জত এর বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা, যদিও বঙ্গবন্ধু নিজে একথা বলে গেছেন, আসলে এ এবিষয়ে অধীকাংশ সচেতন মানুষের অত্যন্ত ঘোরোয়া সমালোচনা আছে, এটি একটি কথার কথা, বঙ্গবন্ধু আমাদের মুক্তি যুদ্ধ কালীন সময়ে পাকিস্তানি কারাগারে বন্দি ছিলেন, ফিরে আসার পরে হয়তোবা কোন এক অতি উৎসাহী নেতা তার কানে এটা দিয়েছিলেন, এ সম্পরকে কোন প্রামাণিক দলিল গভেষনা আছে কিনা জানিনা।
যাক এবার আসি মূল আলোচনায়, আমাদের দেশের প্রায় সব জনগন জানে ও প্রায়শই বলে ইহুদী নাসারা খীষ্টান, কিন্তু যা জানেনা ইহুদী ও খ্রিষ্টান এর মদ্ধে বিরাট পারথ্যক এদেশের সকল প্রচার মাদ্ধমের কল্যানে ইহুদী ও ইসরাইল দেশের প্রতি একটা অতি অবাস্তব বেহুদা ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের জনগন জানেনা ফিলিস্তিনিদের সবই মুসলিন নয় অনেকেই খীষ্টান তারা জানেনা ইসরাইল এর একটি রাজনৈতিক দল আরব মুসলমান এবং তারা বরতোমান ইসরাইল এর কোয়ালিশন সরকারের একটি দল। আমাদের জনগন জানেনা ইসরাইল রাষ্ট্র হিসাবে কতখানি মানবিক, প্রতিবার গাজায় বিমান হামলার পূরবে তারা সাধারনত রেডিও ও ফোনে যতদূর সম্ভব সাধারণ লোকদের টার্গেট এরিয়া থেকে সরে যেতে বলে, ফিলিস্তিন জনগনের জন্য খাবার ঔষধ বিদ্যুৎ জালানি সব ইসরাইল দেশ থেকে সরবরাহ হয়। পৃথীবির যে সকল দেশে ফিলিস্তিন দূত আছেন তারা সমগ্র মুসলিম দেশের চাঁদা র উপর ফুটানি করে আর এই অর্থে ইসরাইল এ রকেট ও বোমা বেলুন ছোরে। কোনদিন শুনিনি ইসরাইলি সেনারা ফিলিস্তিন মেয়েকে রেপ করেছে। আমার দৃঢ বিশ্বাস শেখ হাসিনা সব জানেন ও বুঝেন তিনি ভুলে যাননি ইসরাইল আমাদের দেশকে প্রথমদিকেই স্বিকৃতি দিয়েছিল ও সাহায্যদানে আগ্রহী ছিল। ইসরাইলি টেকনোলজি ও সামরিক বেসামরিক যন্এপাতি দি বেষ্ট। ইহুদী নাসারাদের সব টেকনোলজি যদি আমরা পাই তবে আমরা যে কি লাভবান হব তা জননেএী শেখ হাসিনা জানেন। আজ আরব বিশ্ব ইসরাইল এর সাথে ব্যাবসা করতে আগ্রহী আমরা কেন নয়? আসলে এসব কথা ও বিষয় সরকার সব জানেন ও বুঝেন কিন্তু ঐ রাজনীতি। আবারো সবাইকে ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ লেখাগুলোকে এতো সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করার জন্য
আপনারা তো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতকেও ছাড়িয়ে গেলেন ।
বাহঃ, সুন্দর লিখেছেন। ইতিহাসের এদিকটা বাংলাদেশের কজন ভেবে দেখেছেন! এদিকে আপনাদের দেশের নেটিজেনরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবং প্যালেস্টাইনের পক্ষে ফেসবুক কমেন্ট করে ফাটিয়ে দিচ্ছে।