লিখেছেন: মোহাম্মদ রুবেল

ম্যাকিয়াভেলীর আর্শিরবাদপুষ্ট সমাজ ব্যবস্থায় লেখিকা মেরি শেলি কর্তৃক বিনির্মিত ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ চরিত্রটি খুবই প্রাসঙ্গীক। আমরা সকলেই জানি মেরির উপন্যাসে ‘ফাঙ্কেনস্টাইন’ নামটি হলো একজন বিজ্ঞানীর চরিত্র যিনি নিরলস সাধনার মাধ্যমে  মৃতদেহ হতে একটি দানব তৈরি করে ছিলেন। বিশেষ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞানী ফাঙ্কেনস্টাইন তার সৃষ্ট দানবের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করতে পেরেছিলেন। দেখতে কুৎসিত চেহারার দানবটি পরিণত বয়সে খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কিন্তু দানবটির মনে খুবই দুঃখ তার মনিবের প্রতি।তার দুঃখ এইজন্য যে,সে দেখতে কুৎসিত এবং ভদ্র সমাজে তার কোন অবস্থান নেই। দানবটি প্রায়শই দুঃখ করে বলতো, আমার মনিব তো ইচ্ছে করলেই আমাকে সুন্দর আবয়বে ভদ্রলোক হিসেবে সৃষ্টি করতে পারতো। এমন মানসিক যন্ত্রনা হতে দানবটা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং মানব হত্যা শুরু করে। এক পর্যায়ে দানবটি তার মনিবের সহকারীকে এবং তার ভাইকে হত্যা করে। এরপর নগরের অনেক লোকজনকে হত্যাকরার পর তার স্রষ্ঠা বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্কেনস্টাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর দানবটিও হারিয়ে যায়।

ফ্রাঙ্কেনষ্টাইন ছবি: ইন্টারনেট

বহুল কথিত এই কাহিনি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো,দক্ষিন এশিয়ার সমাজ ব্যবস্থায় বলবানরা তাদের প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য সামাজিকভাবে কিছু নির্বোদ,মাথামোটা এবং ব্যক্তি ইমেজে কুৎসিত কিছু যুবককে বেছে নেয়।বলবানরা মিষ্টি কথার ছলে কিছু চা- বিড়ির পয়সার বিনিময়ে ঐ নির্বোধ,মাথা মোটা ও ইমেজে কুৎসিত ছেলে গুলোর মাথা কিনে নেয়, যেমনটা ফস্টাসের আত্মা কিনেছিলো শয়তানরাজ লুসিফার।আস্তে আস্তে এই নির্বোধদের দানবে পরিণত করা হয়।কিন্তু বিপত্তি বেধে যায় যখন নির্বোধের বোধদয় হয়। কিন্তু বোধ জাগ্রত হলেও তখন আর কিছুই করার থাকে না, কারণ মানব একবার দানব হলে তার পক্ষে মানব হওয়া সম্ভব নয়। তখন দানবটি তার ন্যায্য হিস্যা চায়, কিন্তু পৃথিবীর কোন বলবান তার লাঠিয়াল বা আশ্রিতের বেলায় ন্যায্যতা বুঝতে চায়না, যেমনটি কাঁদিদকে বিতাড়িত করা হয়েছে জমিদার কন্যাকে ভালোবেসে চুমু খাওয়ার অপরাধে অথচ জমিদার মশাই তাকে ছেলের মতোই ভালোবেসে আশ্রয় দিয়েছিলো। দানবদের শেষ পরিণতি হলো,বিদ্রোহের শুরুতেই তার দাঁত ও নখ কেটে দেওয়া হয়। যেন সে কাউকে কামড়াতে বা আঁচড়াতে না পারে। প্রয়োজনে দানবটিকে পৃথিবীতে বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা দেওয়া হয়,নইলে একটু বিলম্ব হলে দানবের হাতেই তার বলবান মনিবকে মরতে হয়।

ছবি: ইন্টারনেট

ম্যাকিয়াভেলী তার প্রিন্স গ্রন্থে খুব কিউট করে বলেছেন, ‘শাসক নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে মাস্তানের খামার গড়ে তোলে মাস্তানি করার জন্য। কিছুকাল পরে এই মাস্তানদের জবাই করে শাসক জনতুষ্টিকর ত্রাতা হিসেবে বেরিয়ে আসেন। তখন সবদোষে মাস্তানরাই দোষী হয়, শাসক সাধু রয়ে যান।’বর্তমান সরকার শাপলা চত্বরে হেফাজতকে মাত্র দশ মিনিটে লন্ডভন্ড করে দেওয়া পর যদি দানব না বানিয়ে মানব বানাতো তাহলে দেশ অন্তত বিশ বছর এগিয়ে যেতো। তাদের প্রধান প্রধান মাদ্রাসাগুলোকে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করে আধুনিকতার সুযোগ দেওয়া হতো সমাজের গলিগুলো আলোকিত হয়ে যেতো।কিন্তু হবে কি করে! আমাদের রাজপরিবার গুলো তো সক্রেটিসের শিষ্য নন, ওনাদের ওস্তাদজী নিঃসন্দেহে ম্যাকিয়াভেলী মহোদয়। এখন দেখার বিষয় হলো সরকার মদদপুষ্ট এই দানবীয় শক্তিকে কতটুকু তারা বোতলবন্ধী করতে পারে, আবার এটাও দেখার বিষয় বলবানদের অবস্থা ফাঙ্কেনস্টাইনের পরিণতি হয় কিনা!