লেখকঃ মেঘবতী রাজকন্যা
ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস তার ‘দ্য অরিজিন অব দ্য ফ্যামিলি, প্রাইভেট প্রোপার্টি অ্যান্ড দ্য স্টেট’ বইতে বলেছিলেন, “আধুনিক ব্যক্তিগত পরিবার নারীর প্রকাশ্য অথবা গোপন গার্হস্থ্য দাসত্বের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে……বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্তঃতপক্ষে বিত্তবান শ্রেণীগুলোর মধ্যে পুরুষই হচ্ছে উপার্জনকারী, পরিবারের ভরণপোষণের কর্তা এবং এইজন্যেই তার আধিপত্য দেখা দেয়, যার জন্য কোনো বিশেষ আইনগত সুবিধার দরকার পড়েনা। পরিবারে সে হচ্ছে বুর্জোয়া এবং নারী হচ্ছে প্রলেতারিয়েত।“ ১৮৮৪ সালে লেখা বইটির কথাগুলো আমাদের আজকের বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার সঙ্গে মিলে যায় কিনা? ভাবুন তো একবার, হ্যাঁ, মিলে যায়, অনেক মিলে যায়। বাংলাদেশের সমাজে নারীরা এখনো পুরুষদের অধীনেই রয়ে গেছে, বাংলাদেশ নারীদের জন্য অনেক চাকরির ব্যবস্থা করলেও তা দেশের নারীজনসংখ্যা অনুপাতে মোটেও যথেষ্ট নয়।
বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার ৭০ শতাংশের উপরে, এটা দেখে অনেকেই বলতে পারেন বাংলাদেশের শিক্ষা খাত এবং নারীসমাজের অনেক উন্নতি হয়েছে, আমি শিক্ষাখাতের ব্যাপারে যাচ্ছিনা, নারীসমাজের কথা বলছি; নারীসমাজের মোটেও উন্নতি হয়নি, নারীসমাজকে বলা যায় এখনো পশ্চাৎপদ অর্থাৎ পেছনে পড়ে থাকা। বাংলাদেশের সমাজে এখনো অধিকাংশ নারীর নিয়তি হচ্ছে একটি পুরুষকে বিয়ে করে তার অধীনে সংসার করা। নারীর জীবনের বিকাশ এই বিয়ের মাধ্যমেই থেমে যাচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের সমাজে, এখনো বাংলাদেশী পরিবারগুলো এই ধ্যান-ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি যে মেয়েদের বিয়েটা খুবই জরুরি। অনেক মেয়েই আমাদের সমাজে এখনো তার স্বামীর প্রথাগত স্ত্রীর ভূমিকা পালন করে এবং করছে, স্বামীর যৌন চাহিদা মেটানো সহ নিজেদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক নারী অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছে, এগুলো বাংলাদেশের সমাজ থেকে এখনো মোছেনি।
নারী-স্বাধীনতা বলতে আপনি কি বোঝেন? বা মানুষের স্বাধীনতা বলতে আপনি কি বোঝেন? বাংলাদেশের সমাজে নারী কি সত্যিকারের অর্থে স্বাধীন? এইসব প্রশ্নের উত্তর একেকজন মানুষ একেকভাবে দেবে, আমি বলবো, নারী-স্বাধীনতা বলতে আমি যেটা বুঝি সেটা বাংলাদেশের সমাজে এখনো আসেনি, নারীদের পুরুষদের মতো সত্যিকারের মানুষ হিসেবে স্বাধীনতা বাংলাদেশের সমাজে অনুপস্থিত, বাংলাদেশের সমাজে শুধু পুরুষেরাই স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র, যদিও এজন্যে পুরুষরা নিজেরাও অনেক সামাজিক অশান্তির ভেতর দিয়ে যায়, এখানে কপটতা রয়েছে, কষ্ট না করলে পুরুষরা নারীদের সঙ্গও পায়না, বাংলাদেশে টাকা আয় করা যেমন কঠিন ঐরকম বাংলাদেশে নারীসঙ্গ পাওয়াটাও কঠিন, বাংলাদেশের সমাজ এভাবেই তৈরি করা।
আমাদের বাংলাদেশের সমাজে কতোগুলো বিয়ে প্রেম করে হয় আর কতোগুলো বিয়ে অভিভাবক দ্বারা হয়, এটার যদিও কোনো পরিসংখ্যান নেই, হিসেব নেই কোনো, তাও বোঝা যায় অভিবাবক দ্বারা বিয়ের সংখ্যাই বাংলাদেশের সমাজে এখনো বেশি যেখানে নারীর ইচ্ছার চাইতে সামাজিক পুরুষতান্ত্রিক মতবাদের বিধান কাজ করে বেশি। মধ্যবিত্ত মেয়েদের জীবনে স্বপ্নের রাজকুমার পুরুষ আসি আসি করেও আসেনা, হঠাৎ চলে আসে পুরুষতান্ত্রিক ছেলে যে নারী-স্বাধীনতা সমর্থন করেনা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে করতে পারে তবে তা অনেক কম।
বৈবাহিক ধর্ষণ – এই শব্দটি আজকাল বাংলাদেশে ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয়ে গেছে, এবং আপনার কি মনে হয়না যে, বাংলাদেশের সমাজে বৈবাহিক ধর্ষণ হয়, অর্থাৎ বিয়ের পরে স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে স্ত্রীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে এবং স্ত্রী লোকলজ্জার ভয়ে কিছু বলতে পারছেনা, স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে একভাবে বাধ্য হচ্ছে, এরকমটা মনে হয়না? হ্যাঁ, বাংলাদেশের সমাজে এগুলো আসলে ভেতরে ভেতরে আছে, অনেক ঋণাত্মক জিনিস বাংলাদেশের সমাজে যেমন এখনো রয়ে গেছে, তেমন এই জিনিসটাও বাংলাদেশের সমাজে আছে। ধর্ষিত নারীর মন-মানসিকতায় কিরকম প্রভাব পড়ে সেটা বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কোনদিনো বোঝার চেষ্টা করেনা, সমাজ শুধু নারীদের পোশাকের উপর দোষ চাপায় ধর্ষণের জন্য, আর স্বামীর স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে জড়ানোর বিষয়ে সমাজে আলোচনাও নিষেধ যেহেতু সমাজ পুরুষতন্ত্রবাদী, এবং অনেক বিবাহিত বাংলাদেশী নারী যেখানে রাস্তায় বোরকা না পরে ঘর থেকে বেরই হতে পারেনা সেখানে স্বামীর ধর্ষণ নিয়ে সে কি বলবে, বললেও সেটা এই কথিত সুস্থ সমাজের ক’জন মানুষ বিশ্বাস করবে? বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়ার পেছনে পুরুষতান্ত্রিক বিধি-বিধানই দায়ী।
বাংলাদেশের নারীদের কি পোশাক পরার স্বাধীনতা আছে? বাংলাদেশের পুরুষরা তো ইচ্ছে মতো প্যান্ট-শার্ট পরে মোটর-সাইকেল চালিয়ে বেড়ায়, এগুলো বাংলাদেশের ক’জন নারী পারে এবং পারছে? বাংলাদেশের সমাজের নারীদের পোশাক পরার স্বাধীনতা সত্যিকার অর্থে নেই, একেবারেই নেই বলা যায়, সমাজের ধরাবাঁধা নিয়ম অনুযায়ী নারীরা পোশাক পরে, রক্ষণশীলতাবাদী পোশাক পরতে অনেক নারীও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন নিজের অজান্তেই কিছু না জেনে এবং না বুঝে। হিজাব-বোরকার প্রচলন বাংলাদেশের সমাজে অগ্রসরমান, ঢাকা শহরে রাস্তায় বের হলেই দেখতে পাওয়া যায় যে, হিজাব এবং বোরকার সমাহার, এই হচ্ছে বাংলাদেশের নারীসমাজের অবস্থা। বাংলাদেশের সমাজে ধর্ষিত হওয়াটা যেনো নারীরই অপরাধ, তাই তাকে বাধ্য করা হয় পুরুষতান্ত্রিক পোশাক বোরকা পরতে। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব চালু হবার আগ পর্যন্ত নারীরা বোরকা পরতোনা, পরলেও গণহারে পরতোনা, কিন্তু ইসলামী বিপ্লব নারীদের জন্য বোরকা-হিজাব বাধ্যতামূলক হিসেবে চালু করে দেয়। এখন ইরান সম্পর্কিত কোনো ভিডিও বা সংবাদ, চলচ্চিত্র ইত্যাদি দেখলে কি মনে হয়? ইরানি সব নারীদের মাথায় হিজাব দেখতে পাওয়া যায়, ইরানের নারীরা যদিও শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক এগোনো, কিন্তু তাও তাদের পোশাক পরার স্বাধীনতা নেই, হিজাব ছাড়া কোনো নারী ইরানে নেই, হিজাব পরার বিধান – এটা ইরানে রাষ্ট্রীয় ভাবে করা হয়েছে, কারণ ইরানের ইসলামী সরকার পুরুষতান্ত্রিক। বাংলাদেশে হিজাব কিংবা বোরকা পরা রাষ্ট্রীয় ভাবে বাধ্যতামূলক না হলেও বাংলাদেশের সমাজে বোরকা পরিহিত নারীর সংখ্যাধিক্য দেখে সামাজিক কিংবা পারিবারিক বাধ্যবাধকতা আছে – এমনটাই অনুভূত হয়।
বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীদের সংখ্যা কি পুরুষদের সমান? না, মোটেও না, পুরুষদের চেয়ে অনেক অনেক কম; ‘কর্মপন্থী নারী’ – এখনো বাংলাদেশের সমাজে ঋণাত্মক ভাবে চিহ্নিত; নারীরা পুরুষদেরকে বিয়ে করে তাদের সঙ্গে সংসার করবে, এই নিয়ম বাংলাদেশের সমাজ এখনো ভাঙেনি, বখাটে তরুণদের গাঁজার আসরের ব্যবস্থা আছে ঢাকা শহরের বিভিন্ন পাড়ায়, কিন্তু তরুণীদের জন্য কোনো আনন্দের ব্যবস্থা করা যেতে গিয়ে তরুণীরা যেভাবে সমাজের চোখ-রাঙ্গানির শিকার হয় বখাটে তরুণরা অতোটা হয়না, কারণ বখাটে তরুণরা পুরুষতন্ত্রবাদেরই একটি সৃষ্ট জিনিস যাদের কাছে নারী হচ্ছে শুধুই যৌন কামনার বস্তু, যেখানে নারী-যৌনতা নিষিদ্ধ অর্থাৎ যৌনতার ক্ষেত্রে নারীরা পরাধীন (পুরুষাধীন), তাদের যৌনতার ক্ষেত্রে কোনো স্বতন্ত্রতা আমাদের সমাজে নেই। বাংলাদেশের পরিবারগুলো এখনো পুরুষতান্ত্রিক, সমাজ পুরুষতান্ত্রিক পরিবার এখনো টিকিয়ে রেখেছে এবং টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষিত নারীরাও পুরুষতান্ত্রিক বিধি-বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করছে – এরকমটা বাংলাদেশের সমাজ থেকে কবে মুছবে কে জানে?
বাংলাদেশে নারীবাদী আন্দোলন দরকার, নারীদের কথা বলার স্বাধীনতা দরকার, পাকিস্তানে ‘Aurat March’ নামের একটি নারীবাদী আন্দোলন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে সম্প্রতি প্রতি বছরই যেখানে পাকিস্তানি নারীরা পুরুষতন্ত্রবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন, পাকিস্তান যদিও অনুকরণ করার মতো কোনো রাষ্ট্র নয়, আমি তেমনটা বলছিও না, তবে পাকিস্তানের মতো একটি ইসলামপন্থী রক্ষণশীল দেশে নারীবাদী আন্দোলন হলে আমাদের বাংলাদেশে হবে না কেন? পাকিস্তানে নারীরা এমন আন্দোলন করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তাও তারা আন্দোলন করার সাহস দেখিয়েছেন, বাংলাদেশে আজ অবধি ঐ রকম কোনো শক্তিশালী সংঘবদ্ধ নারীবাদী আন্দোলন বা মিছিল হয়নি, শুধু ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে, কিন্তু ধর্ষণ বাংলাদেশের সমাজ থেকে পুরোপুরি মোছেনি, আর নারীরাও বাংলাদেশের সমাজে সত্যিকারের স্বাধীনতা পায়নি।
তথ্যসূত্র:
সত্যিই মেয়েদের স্বাধীনতা নেই, ঢাকার পাড়ায় পাড়ায় ছেলেদের মাস্তানি দেখা যায়, ছেলেরা ক্রিকেট খেলে, ফুটবল খেলে, ব্যাডমিন্টন খেলে – এগুলো মেয়েদের জন্য নেই সমাজে।
লেখাটা আর একটু বিস্তারিত লিখলে ভালো হতো; আরো অনেক কিছু বুঝিয়ে দেওয়া উচিৎ ছিলো, বিয়ের ব্যাপারটা আরেকটু ভালো করে বলা উচিৎ ছিলো।
নারী যদি জানত কিছু কিছু পুরষরা তাদেরকে কেমন চোখে দেখে তাহলে নিজেদের লোহা দিয়ে মুরিয়ে রাখত।
পুরুষদের যৌন নজরের জন্য নারীরা পুরুষতন্ত্রের কাছে হার মানবে কেন?
বাংলাদেশের মেয়েরা স্বাধীন না, যদি সত্যিকারের স্বাধীনতার কথা বলি আর পুরুষদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমাজ সবসময়ই একই ধরণের সামাজিক বিধান চালু রেখেছে যে তারা রোজগার করবে এবং তাদের স্ত্রীরা হবে বেকার এবং বিয়ে করার ক্ষেত্রে পুরুষদের উপর কঠোর নিয়মের কোনো ব্যত্যয় নেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে নারীরা চাকরি করলেও সমাজের নিয়ম অনুযায়ী বেকার পুরুষদেরকে বিয়ে করার নিয়ম নেই, বাংলাদেশে পুরুষতন্ত্র আছে, নারীতন্ত্র কখনো দেখা যায়নি। নারীরা বেকার পুরুষদেরকে বিয়ে করলে পুরুষতন্ত্রবাদের গায়ে আঘাত লাগে।
নারীতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলেও নারীরা কখনো বেকার পুরুষ বিয়ে করবে না। সুইডেন, নরওয়ের সরকার খুবই নারীবাদী, কিন্তু ঐ দেশে কোন বেকার ছেলেকে নারীরা বিয়ে করে না। এটা নারীর বৈশিষ্ট্য, কোন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য না। আপনি কি কোন বেকার ছেলেকে বিয়ে করে খাওয়াবেন, আর তাঁকে হাউজ-হাজবেন্ড বানিয়ে রাখবেন? আমার তো মনে হয় না।
আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিবেন দয়া করে।
১) একজন নারীর জীবনের লক্ষ্য কি? সে জীবনে কি করতে চায়?
২) একজন পুরুষের মতো হতে পারলেই কি নারী স্বাধীন হয়ে যাবে?
৩) একজন নারীকে কেন পুরুষের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রয়োজন? যেমনঃ চাকরি, অর্থ উপার্জন বা অন্যান্য ক্ষেত্রে।
৪) একজন নারীর জীবনের স্বার্থকতা কিসে? একজন পুরুষের মতো হতে পারলেই কি সে জীবনে সফল?
৫) আপনি যে নারী স্বাধীনতার কথা বলছেন সেটার মানদন্ড কি? একজন নারীর আদর্শ কি একজন পুরুষ?
৬) বাংলাদেশে বা অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে যেখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেখানকার অধিকাংশ নারী কি নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হিজাব করে? without exception.
7) একজন নারী সত্যিকার অর্থে কি চায় বলতে পারেন?
সর্বোপরি একজন নারীকে কেন সবকিছুতে একজন পুরুষের মতো হতে হবে।একজন নারীর কি পুরুষের থেকে ভিন্ন কোনো চাওয়া পাওয়া হতে পারে না।
ধন্যবাদ।
একজন নারীর লক্ষ্য কি হওয়া উচিৎ? নারীরা মানুষ, পুরুষদের মতোই মানুষ, নারীদের সঙ্গে পুরুষদের শারীরিক পার্থক্য থাকলেও নারীদের মানুষ হিসেবে জীবনে পুরুষদের মতো সফল হওয়ার অধিকার আছে। আর পুরুষদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে মানুষ হিসেবে, নারী হিসেবে নয়, অর্থ উপার্জন, চাকরি, ব্যবসা পুরুষরা পারলে নারীরা পারবেনা কেন? আমি যে নারী-স্বাধীনতার কথা বলেছি সেটার মানদণ্ড হচ্ছে নারীদেরকে পুরুষদের মতোই স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র হতে হবে। আর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে সব নারী নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে হিজাব পরেনা। পুরুষদের নারীসঙ্গ দরকার পড়ে কিন্তু এক্ষেত্রে পুরুষরা জীবনে সফল না হলে নারীসঙ্গ পায়না কেন? আমাদের বাংলাদেশের সমাজ পুরুষতন্ত্রবাদী যেখানে সেজন্য পুরুষরা জীবনে সফল না হলে নারীসঙ্গ পায়না, অপরদিকে ব্যর্থ নারীদের জীবনে কিন্তু সফল পুরুষ চলে আসে।
মানুষ হিসেবে নারীদের স্বাধীনতা পাওয়াটা সময়ের দাবী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারীরা বাংলাদেশের নারীদের থেকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, আর বাংলাদেশের নারীরা এখনো অনেক পেছনে পড়ে রয়েছে; শিক্ষা দীক্ষা এবং আর্থনীতিক স্বাধীনতা নারীদের অর্জন করা জরুরি, এক্ষেত্রে নারীদেরকে পুরুষদের সমতা অর্জন করার জন্য লড়াই করতে হবে, সমাজের একটা বড়ো অংশ নারী, তারা পুরুষদের থেকে পেছনে থাকতে পারেনা।
আপনি যে রকম প্রশ্নগুলো করেছেন এগুলোর উত্তর আমি নিবন্ধটিতেই একভাবে বলে দিয়েছি; নারীদেরকে পুরুষদের সমকক্ষতা অর্জন করতে হবে – এর মধ্যে কোনো ঋণাত্মকতা বা নেতিবাচকতা নেই, কোনো সমস্যা থাকার কথা নয় যদি সমাজ নারীদেরকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে মেনে নিতে পারে এবং মনে করে। স্বেচ্ছায় যেসব নারী হিজাব পরেন তারা পুরুষতন্ত্রবাদের পদতলে আত্মসমর্পণ করেই করেন। একজন নারী সত্যিকারের অর্থে কি চায় সেটা আপনি নিজে নারীদের সঙ্গে মিশে দেখুন, মিশতে না পারলে বুঝতে পারবেননা, যদিও সব নারী একই রকম না।
আপনি কি বিয়ের বিরোধিতা করেছেন একভাবে? বাংলাদেশের সমাজে বিয়ে প্রথা উঠে গেলে সমাজের ক্ষতি হবে কিনা তা কি ভেবেছেন?
আমি বিয়ের বিরোধিতা করেছি তবে তা পুরোপুরি ভাবে না, বিয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের মেয়েরা পুরুষদের পরিচয়ে চলে (স্বামীর পরিচয়ে), স্বামী আয় করে, মেয়েরা সেটা খায় আর বাচ্চা হলে সেও স্বামীর পরিচয়েই চলে – এটা পুরুষতান্ত্রিক মতবাদ, আমি এই মতবাদের বিরোধিতা করেছি, নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছি যে, বিয়ের মাধ্যমে মেয়েদের জীবনের সামনে এগোনোর পথ থেমে যাচ্ছে, তারা আত্মনির্ভর হতে পারছেনা, স্বামীর টাকায় চলছে। আর বাংলাদেশের অনেক শিক্ষিত নারীও তাদের স্বামীদের আয়েই চলছে, যেভাবে তারা পুরুষতন্ত্রবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। বিয়ে নারী-অধীনতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, আমি মূলত এটাই বুঝাতে চেয়েছি; অন্যদিকে যদি বলেন সন্তান লালন-পালনের জন্য বিয়ে দরকার কিনা, এটা বাংলাদেশ যেহেতু এখনো ঐরকম উন্নত হয়নি যে নারীরা সর্বক্ষেত্রে স্বাধীন তাই এক্ষেত্রে এখনো বিয়েটা দরকার কিন্তু single mother বা lesbian mothers-এর ধারণাটা কিন্তু পুরোপুরি ঋণাত্মক নয়, এর জন্য শিক্ষার দরকার, এর জন্য বাংলাদেশকে অনেক অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশের নারীরা বাস্তব ক্ষেত্রে পরাধীন এবং পুরুষদের কাছে জিম্মি, সমাজে নারীর স্বাধীনতা নামে মাত্র আছে, নারীবাদী আন্দেলন কঠের করা ছাড়া নারীরা সত্যিকারের স্বাধীনতা পাবেওনা।
হ্যাঁ, বাংলাদেশে পুরুষরা পরিবারের কর্তা হয়, কিন্তু এটা কি বাংলাদেশের সমাজ থেকে দূর করা সম্ভব? আপনি পাকিস্তান সম্পর্কে যা বললেন তা দেখে আমি অবাক হয়েছি গুগলে সার্চ করার পর। সুন্দর লেখনী।
হ্যাঁ; পাকিস্তানে নারীবাদী আন্দোলন সত্যিই অবাক করার মতো 🙂