লিখেছেন: জুয়েল রানা

দেশের যে প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে পারলেই অনেকে বর্তে যান,সেই প্রতিষ্ঠান, বুয়েটের একজন শিক্ষক, একজন বায়ো মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার, একজন লেখককে কেন রাস্তায় খুন হয়ে পড়ে থাকতে হয়?

কেউ কি বলতে পারবেন, এই বইগুলোতে অভিজিৎ বিজ্ঞানের বাইরে,যুক্তি ও তথ্য উপাত্তের বাইরে একটি কথাও বলেছেন? কোন গোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ প্রকাশ করেছেন? তাহলে বিজ্ঞানের প্রতি, যুক্তির প্রতি ক্ষোভ কাদের? কারা তাকে হত্যা করলো? কেন তার হত্যার যথাযথ বিচার হয়না?

অভিজিৎ রায় নিজের ব্লগ মুক্তমনায় লেখালেখি ছাড়াও ১০টির মত বই লিখেছেন। বইগুলো হচ্ছে:

আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ (২০০৫)
মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে (২০০৭)
স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি (২০০৮)
সমকামিতা: একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান (২০১০)
অবিশ্বাসের দর্শন (২০১১)
বিশ্বাস ও বিজ্ঞান (২০১২)
ভালবাসা কারে কয় (২০১২)
শূন্য থেকে মহাবিশ্ব (২০১৪)
বিশ্বাসের ভাইরাস (২০১৪)
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো: এক রবি-বিদেশিনীর খোঁজে (২০১৫)

সম্প্রতি ৫ জন কে মৃত্যদন্ড এবং ১ জন কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারী হিসেবে কিন্তু ঐ ঘটনার আরেকজন ভিক্টিম অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী বন্যা আহমেদ অভিযোগ করেছেন, বিচার প্রক্রিয়ায় জড়িত বা তদন্তের সাথে জড়িত কেউ একবারের জন্যও তার মতামত জানতে তার সাথে যোগাযোগ করেননি! কেন এই লুকোছাপা? কাকে বাঁচাতে কাকে আড়াল করা? অভিজিৎ অশিক্ষা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লিখেছেন। সমাজে অশিক্ষা থাকলে, কুসংস্কার থাকলে কার লাভ হয়?

পানি পড়া,তেল পড়া,ঝাড়ফুঁকের গ্রাহক কারা? কোন উচ্চবিত্ত কি অসুখ হলে পানি পড়া খায় নাকি বিদেশ চলে যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য? মাদ্রাসার লক্ষ লক্ষ তরুণ কে কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অদক্ষ করে রাখলে কাদের লাভ হয়? কলেজ -ভার্সিটিতে দক্ষতা না বাড়ালে, হলে আবাসন সুবিধা না বাড়ালে কাদের লাভ হয়? মানুষের দারিদ্র্যতার জন্য দায়ী কারা?

যুগে যুগে শাসকই মানুষ কে শিখিয়েছে যে সব কিছুই ঈশ্বরের সৃষ্টি! আদতে ঈশ্বরকে সৃষ্টি করেছে শাসক নিজেই যাতে তাদের নিজের লোভ, অন্যায়, নিজেদের লুন্ঠনের দায় ঈশ্বরের ঘাড়ে চাপানো যায়! মানুষ কে লুন্ঠন করে, গরিব রেখে তাকে ধাপ্পা দিয়ে বোঝানো যায় যে তোমাকে গরীব বানিয়েছে ঈশ্বর!

এইসব সত্য কথা যুক্তি দিয়ে বিজ্ঞান দিয়ে যে খুব ভালো ভাবে বোঝাতে পারতো, তাকে হত্যা করা হয়েছে ৬ বছর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারিতে! ফেব্রুয়ারি এমনিতেই আমাদের জন্য শোকের মাস। ৫২’তে হারিয়েছি, ২০০৯ এ হারিয়েছি কিন্তু ২০১৫ সালে অভিজিৎ রায়কে। সেই সময়েই আরো অনেক মুক্তচিন্তার মানুষকে হত্যার মাধ্যমে এই দেশের যে ক্ষতি করা হয়েছে জাতিকে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে শত শত অশিক্ষিত, বর্বর লুন্ঠনকারীদের হাতে কু-শিক্ষিত ও শাসিত হতে হতেই!