অর্ধেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

“যার আনন্দ নেই সে নির্জীব একথা যেমন সত্য, যে নির্জীব তারও আনন্দ নেই, সে কথাও তেমনি সত্য। আমাদের শিক্ষাই আমাদের নির্জীব করেছে। জাতির আত্মরক্ষার জন্য এ শিক্ষার উলটো টান যে আমাদের টানতে হবে, এ বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ”।
-প্রমথ চৌধুরী

আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে মানুষ পেয়েছিল পাঠের অধিকার ও একই সঙ্গে উত্তরাধিকার । মানুষের বোধিবৃক্ষটি যেহেতু কিউমুলেটিভ জ্ঞানের চেতনায় টলটল করে, আর তাই সেখান থেকেই এক ধাপ এক ধাপ করে আরও গভীর লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হয়, থেমে গেলে হয় না । এরই নাম জীবন । অর্থাৎ, মানুষের প্রথম সংকেত-পাঠের ইতিহাস থেকে কিউনিয়েফর্ম এবং সেখান থেকে প্যাপিরাস হয়ে গুটেনবার্গের পরে আজকের ই-বুকের দিকে তাকালে পাঠ্যাভ্যাসরীতির এই অনবদ্য বিপ্লবী জীবনের কাহিনীটি পড়া যায় । অথচ এই বিপ্লবের মধ্যেই যেন আজ একটি পরাজয়ের সুর সারা পৃথিবীকে বিষাদময় করে তুলেছে । সেটি যে কী, সকলের অন্তরালয় দিব্যু জানে, তবুও না জানার মিছে ভান করে ।

অনন্ত মহাবিশ্বের দিকে মুহূর্তকাল তাকিয়ে থাকলেই মানুষের জীবন তথা সভ্যতা যে কতটা ক্ষুদ্র তার অনুভূতি সটান হৃদপিঞ্জরে এসে ধাক্কা দেয় । সম্বিৎ ফিরে পেলে, চারপাশের অতল সময়দেশের কোন স্থানিক বিন্দুতে অবস্থান এই সচেতনতার, তাকে টের পাইয়ে দেওয়াই হল পাঠতন্ত্রের অভিধা। ইতিহাসের অধ্যাপক ডেভিড ক্রিশ্চিয়ান বেশ কিছু বছর আগে তেমনটাই হয়তো পেয়েছিলেন । আর তাই, তিনি এবং বিল গেটস পরবর্তীকালে তথাকথিত ইতিহাসচর্চার বীথিকা ছেড়ে বৃহৎ-ইতিহাসবোধের সূচনা করেছিলেন । নাম দিয়েছিলেন, “Big History: The Big Bang, Life on Earth, and the Rise of Humanity” । তথাকথিত ইতিহাসচর্চার সঙ্গে এর মূল পার্থক্যটি হল সময় অক্ষের নির্বাচনে । অর্থাৎ, যেখানে সাধারণ ইতিহাস নিজেকে শুরু করে ১০০০০ বছর আগে থেকে, সেখানে বৃহৎ-ইতিহাস শুরু হয় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে । এছাড়া বৃহৎ-ইতিহাস কেবলমাত্র প্রাপ্ত ঐতিহাসিক দলিলদস্তাবেজের ওপরে নির্ভরশীল নয় । এটি বিজ্ঞান ও দর্শনকে একীভূত করে জীবনের ব্যখ্যা দেয় । ডেভিড, বিগ ব্যাং-এর পর থেকে আজও অব্দি প্রকৃতির পরিবর্তনের যে ইতিহাস, তার ব্যখ্যা দিতে গিয়ে দুটি অনবদ্য ধারণার কথা বলেছেন । একটি হল, গোল্ডিলক কন্ডিশন ও আরেকটা হল থ্রেশোল্ড বিন্দু । গোল্ডিলক কন্ডিশন হল এমন এক সঠিক পরিবেশ যা প্রকৃতিকে সতত জটিল হবার প্রস্তাবনায় উস্কানি দিয়েছে । যেমন – পৃথিবীতে যখন কিচ্ছু ছিল না, তখন থেকে আজকের জটিল প্রাণের অবস্থায় পৌঁছনোর জন্য উপযুক্ত সঠিক তাপমাত্রাটি সৃষ্টি করেছিল এই গোল্ডিলক কন্ডিশন । আর এই গোল্ডিলক অবস্থার ফলেই জন্ম নিয়েছিল একেকটা থ্রেশোল্ড বিন্দু যা সভ্যতাকে নানারকম ধাক্কা দিতে দিতে এগিয়ে দিয়েছে একটার পর একটা অগ্রগতির ধাপে। আর, প্রত্যেকটা অগ্রগতি মানেই তো আরও জটিলতার ব্যপ্তি । ডেভিড এরকম আটটি থ্রেশোল্ড বিন্দুর কথা বলেছেন যা আজকের সভ্যতার জন্য দায়ী । সেগুলি হল, “১) The Big Bang and the creation of the Universe about roughly 14 billion years ago, ২) The creation of the first complex objects, stars, about 12 billion years ago, ৩) The creation of chemical elements inside dying stars required for chemically-complex objects, including plants and animals, ৪) The formation of planets, such as our Earth, which are more chemically complex than the Sun, ৫) The origin and evolution of life from roughly about 4.2 billion years ago, including the evolution of our hominine ancestors, ৬) The development of our species, Homo sapiens, about 250,000 years ago, covering the Paleolithic era of human history, ৭) The appearance of agriculture about 11,000 years ago in the Neolithic era, allowing for larger, more complex societies, ৮) The “modern revolution”, or the vast social, economic, and cultural transformations that brought the world into the modern era” । এবং সর্বশেষে, তিনি একটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন পরবর্তী থ্রেশোল্ড বিন্দু সম্পর্কে যা আমাদের ভবিষ্যতের আরও জটিলতার পথে এগিয়ে দেবে, “What will happen in the future and predicting what will be the next threshold in our history” । এই থ্রেশোল্ড কবে আসবে এমনটা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না । বরং সেটা যাপিত হতে হতে বোঝা যায় যে সেই বিন্দু অতিক্রম করা হয়ে গেছে । পরিসরকে ক্ষুদ্র করে নিলে বলা যায় যে, ইতালির রেনেসাঁস ছিল তেমনই একটা থ্রেশোল্ড । তাহলে, বিশ শতকের একটা থ্রেশোল্ড বিন্দু কি সেই হিসেবে কম্পিউটারের আবিষ্কার নয়, যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল গোল্ডিলক কন্ডিশনটি ? অবশ্যই হ্যাঁ এবং সেই থ্রেশোল্ড বিন্দুর একটি প্রভাব দেখা যাচ্ছে একুশ শতকে, যা একেবারেই উপেক্ষা করার মত নয় । বলা ভাল, এই অবশ্যম্ভাবী প্রভাবটি এত দ্রুততার সঙ্গে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র করোনা অতিমারীর কারণে, এটাই হল আজকের গোল্ডিলক কন্ডিশন এবং এই ক্রমে একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে যে নতুন জটিল যুগের সূর্যোদয়টি দেখা যাচ্ছে তার নাম – আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, একে আরেকটি থ্রেশোল্ড বিন্দুও বলা যায়। আর এর মূল বৈশিষ্ট্য হিউম্যানিজম নয়, বরং ট্রান্সহিউম্যানিজম । এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যে প্রভাবটি সর্বাধিক গাঢ় হয়ে দেখা যাচ্ছে তা হল, শিক্ষাতন্ত্রের খোলনলচে বদলে যাওয়ার নিশ্চিত সংকেত। তদুপরি মানুষের পাঠ্যাভ্যাসকেও এটা নতুন করে ধাক্কা দেবার একটা অনুরণনে ক্রমাগত ধ্বনিত হচ্ছে । পাঠতন্ত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দরুন উদ্ভূত এই জরুরি অবস্থাটিকে কিছুতেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না, গেলে তা জাতির অস্তিত্বকে একদিন বিপন্ন করে তুলবেই । তাই এই অমোঘ ও নিশ্চিত ভবিতব্যে ভারতীয় তথা বাঙালির অবস্থান ঠিক কোন মেরু-স্থানাঙ্কে, সেটাকে যাচিয়ে-বাজিয়ে দেখতেই হয় ।

পাঠের উত্তরধিকারটিকে রক্ষা করতে না পারার ব্যর্থতা তো সকলের জীবনেই ঘুণপোকার মত ঢুকে পড়েছে । আর এর লক্ষনগুলিও আজ স্পষ্ট । তাই একে অস্বীকার করা অর্থহীন । মনে রাখতে হবে যে, যে-কোন সভ্য দেশের পাঠ্যভ্যাসকে মূলত দুটি সচেতনতার স্তরে ভাগ করা যায় – এক, সরকার কর্তৃক প্রাথমিক শিক্ষার আয়োজন ও দুই, সাধারণ নাগরিকের গ্রন্থপ্রীতি । দুটি সচেতনতা যেন একে অপরের পরিপূরক। তবে একথাও ঠিক যে, প্রাথমিক শিক্ষা গ্রন্থপ্রীতির আবশ্যিক শর্ত হলেও তা মোটেই যথেষ্ট নয় । আর তাই-ই, একুশ শতকে ক্ষমতার একটি অনিয়ন্ত্রিত অশ্ববাহিনী গোপন উদ্দেশ্যে দুটি চেতনাকেই একেবারে সমূলে উৎপাটিত করতে বদ্ধপরিকর । তা সে উন্নত দেশ হোক বা উন্নয়নশীল দেশ সর্বত্রই একই অবস্থা ক্রমশ নিজেকে উন্মোচিত করছে ।

একদিকে, একটি রিপোর্ট বলছে যে,

“According to the National Center for Educational Statistics (NCES), 21 percent of adults in the United States (about 43 million) fall into the illiterate/functionally illiterate category. Nearly two-thirds of fourth graders read below grade level, and the same number graduate from high school still reading below grade level. This puts the United States well behind several other countries in the world, including Japan, all the Scandinavian countries, Canada, the Republic of Korea, and the UK” ।

আমেরিকার অবস্থা যদি এই হয় তবে ভারতের অবস্থাটা বলাইবাহুল্য । ভারতে পাঠ্যাভ্যাস বলতে ধরে নেওয়া হয়েছে লিটেরেসি রেট বা সাক্ষরতার হারকে, যাকে ক্রমবর্ধমান দেখাতে পারাটাই আসল উদ্দেশ্য । এখানে সাক্ষরতার পরিমাপ করা হয় একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞা মেনে, সেটি হল, কোনও একজন মানুষ যদি যে-কোনও একটি ভাষা লিখতে, পড়তে ও বুঝতে (তিনটি গুণ একত্রে থাকতে হবে) পারে তবেই তাকে সাক্ষর বলা হবে । কিন্তু জনগণনার সময়ে যে বিষয়টি সবচেয়ে উপেক্ষিত হয় তা হল, গণনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাটি প্রায়শই পরীক্ষা করেই দেখেন না যে পরিবারের প্রধান প্রদত্ত মৌখিক তথ্যটি আদৌ সঠিক কিনা অর্থাৎ যাকে সাক্ষর হিসেবে গণনা করা হচ্ছে সে বাস্তবিক পড়তে, লিখতে ও বুঝতে পারে তো নাকি কেবলই নিজেকে সাক্ষর দেখানোর অভিসন্ধিতে ছবির মত করে শেখা নাম-সই করতে পারাটাকেই সে শিক্ষা ঠাহরেছে ! এ প্রসঙ্গে ব্রিজ কোঠারি ও তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের একটি গবেষণাপত্র “Can India’s “literate” read?”-এ লিখেছেন,

“A literacy policy focused on increasing the self-reported literacy rate, but not equating literacy with ability to decode, much less comprehend, creates conditions in which a large number of so-called “literates” remains or returns to being lifelong non-readers. India, unfortunately, is home to millions of lifelong literates who are also, somewhat confusingly, lifelong non-readers (who cannot read and not because they do not want to)”

অর্থাৎ, একজন মানুষ সই করতে পারলেই এদেশে ধরে নেওয়া হয় সে সাক্ষর, কিন্তু আদতে সে কোনও ভাষ্য পড়ে মর্মোদ্ধার করে কথাগুলিকে নিজের ভাষায় লিখতে পারছে কিনা, কেউ যাচাই করে না । কেউ কেউ বলবে, সর্বশিক্ষা অভিযান থেকে মিড-ডে মিল সবই তো আছে, সরকারি প্রচেষ্টার অভাব নেই । এপ্রসঙ্গে সাম্প্রতিককালে, টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি নিবন্ধ, “India has 3 times more schools than China, but they are a mess”-এ বলছে যে,

“Today, India has almost 3-4 times the number of schools (15 lakh) than China (nearly 5 lakh) despite a similar population. Nearly 4 lakh schools have less than 50 students each and a maximum of two teachers” ।

এছাড়া অন্য তথ্য বলছে যে, সাক্ষরতার ছাপের জন্য এদেশে ৯৭% শিশু বিদ্যালয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করায় ঠিকই কিন্তু মাত্র ৩০% উচ্চমাধ্যমিক অব্দি টিকে থাকে । স্কুল ড্রপআউটের এখানে একটি ভয়াবহ সমস্যা, তারপরেও যারা টিকে গেল তাদের ভবিতব্য কি কিছু আহামরি? একেবারেই নয় । কেননা, শুধু স্কুলে থেকে গেলে তো হয় না, লেখা-পড়া শেখানোর জন্য দরকার উপযুক্ত শিক্ষকের । টাইমস অফ ইন্ডিয়ারই আরেকটি রিপোর্ট “Over 1 lakh schools in India have just 1 teacher” –এ স্পষ্ট করে লেখা হয়েছে যে

“A solitary teacher is running the show in as many as 1,05,630 government elementary and secondary schools in the country, with MP emerging as the worst state where 17,874 of the institutions have just one teacher each. UP has the second-highest number of elementary and secondary schools- 17,602-where single teachers are performing the role of educators for multiple classes. UP is followed by Rajasthan (13,575), Andhra Pradesh (9,540) and Jharkhand (7,391), according to the annual report (2014-15) of the HRD ministry that was tabled by junior minister Upendra Kushwaha”

অর্থাৎ ভারতের অবস্থা কিছুটা সেরকমই, যেমনটা মালিনী ঘোষ একবার বলেছিলেন, যে, “In the absence of a literate environment the investments made in making people literate is as good as providing water in leaking glasses” । এই হল মোটের ওপর সভ্য দেশগুলির পাঠ্যাভ্যাস প্রস্তুতির প্রতি মনোভঙ্গি । সেখানে দ্বিতীয় সচেতনতা অর্থাৎ গ্রন্থপ্রীতির প্রত্যাশা করা মূর্খামি । আর তাইতো অন্যদিকে, আমেরিকাতে ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ জানাচ্ছে যে, “Roughly a quarter of U.S. adults (27%) say they haven’t read a book in whole or in part in the past year, whether in print, electronic or audio form, according to a Pew Research Center survey conducted Jan. 8 to Feb. 7” । ভারতবর্ষের কাছে এই ধরণের তথ্য-সংগ্রহ দুরাশার সামিল, তবে এদেশের বই বিক্রির খতিয়ান থেকে সে ধারণা পাওয়া কষ্টকর নয় । ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও জার্মানির একটি সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, ভারতে প্রতিবছরে গড়ে প্রায় ৯০ হাজার বই প্রকাশিত হয়, মোট ২৪টি ভাষায় (ইংরেজি সহ) । তার মধ্যে একাডেমিক বই প্রায় ৪০ শতাংশ, বাচ্চাদের বই ৩০ শতাংশ এবং বাকি ৩০ শতাংশ অন্যান্য বইপত্র । এর মধ্যে ২৬ শতাংশ হিন্দি ও ২৪ শতাংশ ইংরেজি বই আছে । নন-একাডেমিক বইয়ের ক্ষেত্রে ২০০০ কপি বিক্রি হলেই নাকি যথেষ্ট হয়েছে বলে এদেশের প্রকাশকরা মনে করেন । আর বেস্ট সেলার বই বলতে মেরেকেটে ১০ হাজার অব্দি পৌঁছয়। কিছু ক্ষেত্রে যেমন হ্যারিপটার কিংবা টোয়ালাইট বা চেতন ভগত মোটের ওপর ১ লক্ষ কপি মত বিক্রি হয় । সুতরাং, ১৩৫ কোটির দেশে ২০০০ বইতেই সাফল্যের বিচার সাক্ষ্য দেয় ভারতীয় নাগরিকের গ্রন্থপ্রীতির । সুতরাং, দুনিয়াব্যাপী পাঠতন্ত্রের বর্তমান অবস্থানের ভিত্তিতে, একুশ শতকের যে থ্রেশোল্ড বিন্দুতে দুনিয়া পৌঁছে যাচ্ছে, গেছে, সেখানে এটা কিন্তু শুধুমাত্র একটি পরাজয় নয়, একটি বিরাট কালব্যাপী দাসত্বের কাছে আত্মসমর্পনের ইঙ্গিতও । পৃথিবীর পাঠতন্ত্রের এই দুরাবস্থা নতুন যুগে কেবলমাত্র ধনী-দরিদ্রের দূরত্ব বাড়াবে তাই-ই নয়, একটি অবিনশ্বর কতিপয়তন্ত্রের সূচনাও করবে । কীভাবে ও কত দ্রুত, সেটাই দেখার ।

পাঠতন্ত্রের আঙ্গিকে কী এই নতুন যুগের সম্ভাবনাগুলি, এবার সেইটে দেখার পালা । নতুন যুগটি প্রায় আড়মোড়া ভেঙে ফেলেছে । এই যুগে অপার্থিব অস্তিত্বই নির্ধারণ করছে বাস্তবের নির্মানকে – প্রতিদিন প্রায় ৩২০ বিলিয়ন ই-মেল, ৫০০ মিলিয়ন ট্যুইট, প্রতি ঘন্টায় ফেসবুকে ৩১৭০০০টি স্ট্যাটাস আপডেট, ১৪৭০০০ ছবি আপলোড এবং ৫৪০০০ লিংকের শেয়ারের মাধ্যমে । হোয়াটস অ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জার মিলিয়ে মানুষ এখন ৬০ বিলিয়ন মেসেজ প্রতিদিন করে । এছাড়া প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয়ে তথ্যও প্রকাশিত হয় উইকিপিডিয়ার পেজে যেখানে বর্তমানে ৬১৬৫৭৪৩টি ইংরেজি প্রবন্ধ আছে, এছাড়া অন্যান্য সব ভাষা মিলিয়ে প্রায় ৫৪ মিলিয়ন প্রবন্ধের দেখা পাওয়া যায় । ইউটিউবে প্রতিদিন প্রায় ৫ বিলিয়ন ভিডিও দেখা হয় । অর্থাৎ, ডাকবাক্স-এনসাইক্লোপিডিয়া-ক্যালাইডোস্কোপের যুগ যে অতীত হয়ে গেছে কবেই সেটা এখন আর অস্পষ্ট নয় এবং তার বদলে মানুষ প্রবেশ করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার, ত্রি-ডি জমানাতে । তানিয়া মাথিয়াস এই জমানা সম্বন্ধে বলেছেন যে, “Science fiction is slowly becoming science fact, and robotics and AI look destined to play an increasing role in our lives over the coming decades”

এমতাবস্থায়, যেখানে শিক্ষাকে এতদিন জীবিকা-নির্বাহের একটি উপায় হিসেবেই ঠাহরানো হয়েছিল এবং যে কারণে তাও লোকে পড়াশুনো করত, সেটাও এখন বাতিল হয়ে যাওয়ার পথে । কেননা, এই নতুন দুনিয়াতে শ্রমিকজীবনের ওপরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জাঁকিয়ে বসেছে । এখন মানুষের প্রায় সব কাজই মেশিনের দ্বারা আরও নিখুঁতভাবে ও কম সময়ে করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে । ফলে পড়াশুনো করে মানুষের করার মত সত্যিই আর কিছু অবশিষ্ট নেই । এটার বিরুদ্ধে আন্দোলন, অনশন, দাবিদাওয়া হতেই পারে কিন্তু এই ভবিতব্যকে আটকে রাখা যাবে না । তাহলে মানুষ করবে কী, শিখবে কী, পড়বে কী ? বলতে গেলে প্রায় কিছুই নয় । অর্থাৎ যে জ্ঞানভাণ্ডার মানুষকে এতদিন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের সক্ষমতা দিয়েছিল, সেটাই যদি মেশিনের দ্বারা করে ফেলা সম্ভব হয় তবে মানুষের জন্য তো কিছুই বাকি থাকে না । যা জানতে চাওয়ার সবই গুগল বা অন্যকিছু(যেমন –সিরি) উত্তর দিয়ে দেয় আর যন্ত্র-মানব-মানবী সেই জ্ঞানকে ও ইতিহাসকে (ডিপ লার্নিং-এর মাধ্যমে) কাজে লাগিয়ে অপটিমাইজড ডিসিশন দেয় আরও দ্রুত এবং তা হয় মানুষের থেকে ঢের বেশি নিখুঁত । এই অবস্থাতে আন্দোলন-বিক্ষোভের পাশাপাশি মানুষকে আরও উন্নতধী হতে হবে । অর্থাৎ, মাথিয়াসেরই কথায়,

“We have to educate people to go beyond [what computers can do]. Otherwise you are redundant”

একেই বোধহয় মানুষের মধ্যে থেকে “rise of the useless class”-এর সম্ভাবনা বলে । রিচার্ড সাসকাইন্ড ও ড্যানিয়েল সাসকাইন্ডের বই ‘The Future of the Professions’ এপ্রসঙ্গে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ।

অর্থাৎ, যে শিক্ষা এতদিন চাকরি দিত বা ব্যবসা করে টিকে থাকার সক্ষমতা দিত, সেটাই এখন অবলুপ্তির পথে । আর এর সবচেয়ে বড় কারণ এই যে, এই শিক্ষার দ্বারা অর্জিত জ্ঞান শিক্ষার্থী জীবনের এক কিংবা দেড় দশক পরেই মূল্যহীন হয়ে যায় । কেননা ততদিনে নতুন ধারার প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সমাজে চলে আসে । ২০১০ সাল ও ২০২০ সালের প্রযুক্তির মধ্যেই যে ব্যবধান সুতীব্র । ফলে নিজেদের কর্মক্ষমতা বজায় থাকলেও, দেখা যায় যে, মানুষটি তার কর্মদক্ষতায় প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছে । এটা এযুগে টিকে থাকার পক্ষে অনুপযুক্ত ও প্রতিকূল অবস্থা । আর সেজন্যেই রোজ নিজেকে একটু একটু করে আপডেট করে বিবর্তনের মধ্যে রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে । আর সেটাই নিয়ন্ত্রণ করবে ব্যক্তির কাজের নিরাপত্তাটিকে, আন্দোলন একাকী কিছুই পারবে না । ফলে প্রথমে শিক্ষার এই নতুন দিকটিকে স্বীকার করা জরুরি, তবেই কাজেরও নিরাপত্তা বজায় থাকবে । চেলসা চেন, যিনি ইমোটেকের সহ-উদ্ভাবক, বলেছেন যে,

“Humans should not worry too much about replacement, but need to find new ways to work together with AI. Any job which is highly relevant to people will be really hard to replace”

আর এরকম ক্ষেত্রগুলি বলতে উনি বলেছেন শিক্ষাদান, চিকিৎসা ইত্যাদির কথা । কিন্তু করোনাকালেই দুনিয়ার মানুষ সাক্ষী হয়েছে রোবোটিক নার্সের । তাছাড়া এখন মেশিনের দ্বারা অস্ত্রোপচারও সম্ভব হচ্ছে । তাই, ডাক্তারিই যদি মেশিনের দ্বারা সম্ভবপরতার বিন্দু ছুঁয়ে ফেলে তবে শিক্ষকের জায়গায় যেতে বেশি সময় লাগবে কি? লাগবে না । এখনই অনলাইন ক্লাসের শুরু হয়ে গেছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতাও দেখা দিচ্ছে যে যদি শিখতেই হয় তবে দুনিয়ার সেরা শিক্ষকের কাছেই শেখা উচিৎ যখন স্থান ও কালের বাধা নেই । এখন যদি সাধারণ শিক্ষকরা নিজেদের উন্নত না করেন তবে তাদের কাজের নিরাপত্তা থাকবে না । মেশিনকে নিউরাল নেটওয়ার্ক, ডিপ লার্নিং ও শেষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা শিক্ষকের সমস্ত গুণগুলি অর্থাৎ সৃষ্টিশীলতা, অন্তর্দৃষ্টি, সমানুভাব ও মননতন্ত্রের উন্নতিসাধনের দিকগুলিও শিখিয়ে দেওয়া খুব দ্রুত সম্ভব হবে । মার্ক হঅ, এরকম একটি আশঙ্কার কথাই বলেছেন,

“Forget robo-lecturers whirring away in front of whiteboards: AI teaching will mostly happen online, in 24/7 virtual classrooms. AI machines will learn to teach by ferreting out complex patterns in student behaviour – what you click, how long you watch, what mistakes you make, even what time of day you work best. This will then be linked to students’ “success”, which might be measured by exam marks, student satisfaction or employability”

ইত্যবসরে, হঅ সাহেবের আশঙ্কা ঘোর বাস্তবে পরিণত হয়ে গেছে । চিনদেশের স্কুইরেল এআই, যার ৭০০ শহরব্যাপী বিস্তৃত ২৬০০টি সেন্টারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ২ মিলিয়ন ছাত্রছাত্রী, সেখানে ইতিমধ্যেই ‘সুপার-টিচার’-এর ধারণাকে বাস্তবায়িত করা হয়েছে । এটাও মনে রাখা জরুরি যে এসব ক্ষেত্রেই পুঁজিপতিরা এখন অজস্র বিনিয়োগ করছে । শিক্ষাদানের মত ব্যবসা যে আর কিছুই নেই – এতে একদিকে নিজেদের কোম্পানির উপযুক্ত শ্রমিকও তৈরি করে নেওয়া যায় আর তাদের নিয়ন্ত্রণ করার যাবতীয় মগজ-ধোলাইটিও অল্পবয়স থেকে চালু করার সুযোগ থাকে । আর কয়েকবছরের মধ্যে অনলাইন শিক্ষাই যে একমাত্র উপায় সেটাও প্রতিপন্ন করার জন্য সারাদিনব্যাপী বিজ্ঞাপন শুরু হবে, হয়েও গেছে । ‘WhiteHat Jr’ ইত্যাদি কোম্পানিগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আসন্ন যুগের জন্য বাচ্চাদের কোডিং শেখানোর বিজ্ঞাপন ইতিমধ্যেই ফেসবুক, টেলিভিশন সর্বত্র দিচ্ছে । এ ব্যাপারে শুধু চিনদেশ নয়, সিলিকন ভ্যালিতে ‘Knewton’ কিংবা ‘Alt School’, ইউরোপে ‘Century Tech’ ইত্যাদিও একইধরণের পন্থার অবলম্বন করেছে । পক্ষান্তরে ভারতেও সেগুলির নানা ধারার আগমণ দেখা যাচ্ছে । উদাহরণ হিসেবে বললে প্রথমেই যার নাম করতে হয় সেটি হল শাহরুখ খান দ্বারা বিজ্ঞাপিত ‘বাইজুস’(যা এখনই ৬ বিলিয়ন ডলারের একটি সংস্থায় পরিণত হয়েছে, এবং একে ফেসবুক ও টেন্সেন্ট সাহায্য করছে নানাভাবে) । এছাড়াও এরকম বহু নতুন কোম্পানির বিজ্ঞাপন এখন দেখা যায় ।

কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন এই যে, এর মধ্যে কি কোনও নৈতিকতা আর অবশিষ্ট থাকবে ? নাকি মানুষ হারাবে যাবতীয় মানবিকতার অধ্যায়গুলিকে । এ বিষয়ে Institute for Ethical AI in Education (IEAIED) কয়েকটি সাবধানতা অবলম্বন করার প্রস্তাব দিয়েছে, বলেছে যে,

“First, we must not accept that machine learning systems have to be block-boxes whose decisions and behaviours are beyond the reach of human understanding. Explainable AI (XAI) is a rapidly developing field, and we encourage education stakeholders to demand and expect high levels of transparency. There are also further means by which we can ethically derive benefits from machine learning systems, while retaining human responsibility. Another approach to benefiting from AI without being undermined by a lack of human oversight is to consider that AI is not bringing about these benefits single-handedly. Genuine advancement arises when AI augments and assists human-driven processes and skills. Machine learning is a powerful tool for informing strategy and decision-making, but people remain responsible for how that information is harnessed”

এই হল ভবিতব্য, যেখানে বর্তমানে ৭৪% সাক্ষরতার হারের দেশে বেশিরভাগটাই পড়তে অক্ষম, সেখানে অনলাইন শিক্ষা ও কোডিং – ধনীদরিদ্র বৈষম্য ও অপরাজেয় কতিপয়তন্ত্রের ইঙ্গিত ছাড়া আর কী ? ‘এলিজিয়ম’ চলচ্চিত্রটির কথা নিশ্চয় মানুষ বিস্মিত হয়নি । তাহলে, কোনও উপায় কি নেই ? আছে, নিশ্চয় আছে । মানুষের মধ্যে পাঠের প্রবণতাকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না বলে বদ্ধপরিকর কিছু মানুষ আজও আছে, যারা নীরবে পাঠতন্ত্রকে জিইয়ে রাখার জন্য অক্লান্ত লড়ছে। কথায় বলে পড়াশোনা, অর্থাৎ পাঠের দুটি ভাগ এক, পড়তে পড়তে পাঠটিকে শোনা বা প্রাথমিক শিক্ষাতন্ত্র ও দুই, নিস্তব্ধ পাঠ বা গ্রন্থপ্রীতি । এই দুটি দিককে টিকিয়ে রাখতে উল্লেখযোগ্য দুটি মানুষ অনবরত যুদ্ধ করে চলেছেন । একজন হলেন অ্যারন ফ্রিডল্যান্ড ও অন্যজন পল ক্যামেরন । অ্যারন, যিনি ২০১৬ সালে ‘Next Einstein’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন, যিনি, ‘SIMBI’ নামের একটি সংস্থার জন্ম দিয়েছেন । সিম্বি হল একটি চলন্ত বিদ্যালয় । অর্থাৎ স্বামীজীর কথায়, “যদি পর্বত মহম্মদের নিকট নাই আসে, তবে মহম্মদকেই পর্বতের নিকট যাইতে হইবে । দরিদ্র লোকেরা যদি শিক্ষার নিকট পৌছিতে না পারে (অর্থাং নিজের শিক্ষালাভে তৎপর না হয় ), তবে শিক্ষাকেই চাষীর লাঙ্গলের কাছে, মজুরের কারখানায় এবং অন্যত্র সব স্থানে যাইতে হইবে” । সিম্বি ঠিক এটাই করে । যেসব দেশের প্রান্তিক মানুষজনেদের কাছে শিক্ষার সামান্য সুযোগটুকুও নেই সেখানে এই স্কুলবাস পৌঁছে যায় এবং পৌঁছে দেয় শিক্ষার অধিকারটিকে । সিম্বিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে দেওয়া হয় একটি বই, এবং কানে লাগানো যন্ত্রে সেটির পাঠ চলতে থাকে । চোখ যেমনভাবে নড়াচড়া করে পাঠের ওপরে উচ্চারণও সেরকমভাবেই হতে থাকে । পড়ার সঙ্গে শোনার এই সঙ্গতিটুকু বজায় থাকলে মনঃসংযোগ বৃদ্ধি পায় । দেখা গেছে, এর দ্বারা শিক্ষার্থীরা অনেক দ্রুত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করে । একে অডিও-বুক বলে নামাঙ্কিত করা হয়েছে । অন্যদিকে পল ক্যামেরন, যিনি ‘Booktrack’-এর উদ্গাতা, তিনি ই-বুকের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন সঙ্গীত আবহ । সেই আবহ সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য সঙ্গীতকার ও বিশারদ । সেখানেও দেখা গেছে যে যদি একটি উপন্যাসে ঘটনার আবহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সঙ্গীলহরি বাজান যায় তবে পাঠসুখ আরও মনোরম হয়ে উঠছে । ফলে উপন্যাসের দুঃখের সময়ে দুঃখের সঙ্গীত, ভয়ের সময়ে ভয়ের সঙ্গীত, আনন্দের সময়ে উচ্ছ্বাসের সঙ্গীত ইত্যাদি যখন বাজতে থাকে তখন মনঃসংযোগ ও পাঠের গভীরতর সুখের অনুভূতি সৃষ্টি হয় । মানুষ গ্রন্থপাঠে আকৃষ্ট হয় । পলের এই কোম্পানি এখন সেরা ২০টির তালিকায় চলে এসেছে । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে এভাবেই তো বাঁচানো যেতে পারে পাঠের উত্তরাধিকারকে ।

এক্ষণে বাঙালির অবস্থান কোথায় ? বাঙালি জাতে বুদ্ধিমান, পাঠশ্রেষ্ট বলে অহংকার করে থাকে । কিন্তু বাঙালির সংকীর্ণতাবাদের লক্ষনও কিছু কম নয় । এককালে এদেশের প্রাচীন পুঁথিগত প্রথাগত শিক্ষা তুলে দিয়ে ইউরোপীয় ধারার শিক্ষার প্রচলনে বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্তকে প্রায় যুদ্ধই করতে হয়েছিল, সে ভূমিকার সাক্ষী সারা বাংলা । অথচ, সেই বাংলায় বাম-আমলে ঠিক যেন নব্য-রক্ষনশীলতা আবার দেখা গেল । উনিশ শতকে ছিল পুরোহিততন্ত্রের বিপক্ষে ইউরোপের জুজু, আর বাম দশকে যা পরিণত হল আমেরিকার পুঁজিবাদের জুজুতে । সেজন্যই, কম্পিউটার শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার প্রবণতা বাম-আমলে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল । অথচ, বিধাতার কী পরিহাস, আজ বাংলাতে বামপন্থাই টিকে আছে কম্পিউটারের পর্দায় । তাও আবার, কোনও এক পুঁজিপতির প্রদত্ত বিরাট আন্তর্জালিক সমারোহে । এই রক্ষণশীলতার দ্বারা ভবিষ্যতকে কি আটকানো গেছিল, যায় নি । অথচ এর ফল হয়েছে ভয়ংকর । কয়েকটা প্রজন্ম কম্পিউটারের শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়ে রয়ে গেছে যাদের ভিড় আজও দেখা যায় ব্যাঙ্কের বই আপডেট করার লাইনে কিংবা ছোট ছোট আধার-প্যান পরিষেবার দোকানগুলিতে । তারা বুঝতেই পারে না মোবাইল পালটানো আর সিম পালটানো দুটো আলাদা ব্যাপার । সুতরাং আজকে যদি বাংলা আবার সেই একই ভুল করে অর্থাৎ, চেষ্টা করে অনলাইন শিক্ষা ও কোডিং শিক্ষাকে অস্বীকার করার, তবে বর্তমান প্রজন্মের অবস্থাও আজকের বেশিরভাগ পঞ্চাশোর্ধদের মত হবে কয়েক বছর পরে । তারাও বুঝতে পারবে না নিল হার্বিসন, মুন রিবাস, রব স্পেনস ও কেভিন ওয়ারিকদের দর্শনকে । সিবিএসই সাম্প্রতিককালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছে । এদিকে চেয়ে না দেখলে বাংলার ভবিষ্যৎ অন্ধকার । বাংলা ভাষাটাকেও আর টিকিয়ে রাখা যাবে না সেক্ষেত্রে, বাংলা-মাধ্যম স্কুলগুলির মত সেটাও উঠে যাবে ।

মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর মুহূর্তকাল মানুষের জীবনের পক্ষে উদ্বায়ী। সেখানে শুধুমাত্র জয়ী কিছু মন্থিত সময়যাপন । সেই সময়ের পরিভাষা অনুযায়ী(GMT বা IST ইত্যাদি) ভারতবর্ষের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সময়ে কিছু রদবদল দেখা যায় । ভারত কোথাও এগিয়ে আবার কোথাও পিছিয়ে থাকে । সমাজ-প্রগতির ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি । নবজাগরণ-উত্তর ইউরোপে যখন প্রথম গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল তখন ভারতবর্ষে আধুনিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছিল, অর্থাৎ ভারত ছিল এক্ষেত্রে পিছিয়ে । একুশ শতকে এই পিছিয়ে থাকার অর্থ কিন্তু বাতিল হয়ে যাওয়া । সেই ঝুঁকি কি নেওয়া উচিৎ হবে ? পাশ্চাত্য এগিয়ে যেতে থাকলে, তার ধাক্কা এসে পিছিয়ে থাকা দেশগুলির ওপরে পড়বেই, কেননা এই যুগ যে উদার-অর্থনীতিবাদের । সেখানেই শুরু হবে একটি টানা ও পোড়েন । তাতে যতদ্রুত অগ্রসরমানতাকে গ্রহণ করা যাবে ততই সাম্য বিস্তৃত হবে, নইলে অবশ্যম্ভাবী পশ্চাদপসারণ । যদি মানুষ নিজের বুদ্ধিকে এই যুগে শাণিত করতে না পারে তবে মেশিন তাকে শাসন করবেই একদিন । আসলে, এই যুগ বুদ্ধিমত্তার যুগ – এই লড়াই বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার লড়াই। আর সেখানেই আছে পাঠতন্ত্রের ভবিষ্যতের উদযাপিত অধ্যায়টি বা মেরু-স্থানাঙ্কটির অস্তিত্ব ।

তথ্যসূত্রঃ
1. https://www.theguardian.com/technology/2016/oct/12/schools-not-preparing-children-to-succeed-in-an-ai-future-mps-warn
2. https://www.theguardian.com/education/2019/sep/06/will-ai-replace-university-lecturers-not-if-we-make-it-clear-why-humans-matter
3. https://www.theguardian.com/technology/2020/mar/19/can-computers-ever-replace-the-classroom
4. https://www.theguardian.com/technology/2019/sep/30/the-benefits-of-ai-and-machine-learning
5. https://www.theguardian.com/education/2019/apr/17/its-an-educational-revolution-how-ai-is-transforming-university-life
6. https://www.the-tls.co.uk/articles/should-robots-replace-teachers-by-neil-selwyn-book-review/
7. https://indianexpress.com/article/education/indian-schools-have-long-way-to-go-in-using-artificial-intelligence-microsoft-tech-officer-6048334/
8. https://www.theguardian.com/business-to-business/2019/jul/18/automatic-for-the-people-experts-predict-how-ai-will-transform-the-workplace
9. https://timesofindia.indiatimes.com/india/india-has-3-times-more-schools-than-china-but-they-are-a-mess/articleshow/68616961.cms#:~:text=%E2%80%9CToday%2C%20India%20has%20almost%203,study%20in%20such%20unviable%20schools.
10. https://timesofindia.indiatimes.com/Over-1-lakh-schools-in-India-have-just-1-teacher/articleshow/53608274.cms
11. https://www.springwise.com/wise-words-paul-cameron/
12. https://www.omnicoreagency.com/facebook-statistics/
13. https://www.theverge.com/2016/4/12/11415198/facebook-messenger-whatsapp-number-messages-vs-sms-f8-2016#:~:text=Zuckerberg%20also%20said%20that%20activity,day%20compared%20to%2020%20billion.
14. https://www.omnicoreagency.com/youtube-statistics/
15. অন্যান্য