পত্রিকার ভাষ্যমতে মানিক ছাত্রদলের সদস্য ছিল। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের তদন্তে ছাত্রদলে থাকা অবস্থায় যেসব অপকর্ম করেছে তাও উল্লেখ করা হয় (নিচের রিপোর্টে তার প্রমাণ)। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আত্মীয়ের হাত ধরে ছাত্রলীগে যোগ দেয়। সে নাট্যতত্ত্বের ছাত্র ছিল। ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। তার বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই ধর্ষণ, চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে মানিকের লোকজন বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে অপহরণও করে। পরবর্তীতে গনি আদমের ক্যাম্পাস : ১৯৯৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে একটি উপন্যাস রচিত হয় । আরো বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন অশুচি

 

উপরের  ছবিগুলো ৯৮ তে সংঘটিত আন্দোলন নিয়ে সংকলন ‘অশুচি ”’  থেকে নেওয়া।

 

১৭ই অগাস্ট মানবজমিন বিস্তারিতভাবে একটা রিপোর্ট করলে প্রশাসনের টনক নড়ে। রিপোর্টে বলা হয়; তিনটি ছাত্রীকে ছাত্রলীগের কর্মীরা ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে অন্যান্য পত্রিকা আরও বিস্তারিতভাবে রিপোর্ট প্রকাশ শুরু করে। ফলে অন্যটা বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই বিষয়ে তদন্ত করে।তখন অনেক ছাত্রীই মুখ খুলতে শুরু করে; রিপোর্টে অন্তত বিশটি ধর্ষণ এবং তিনশো যৌন নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া বলা হয়; ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপনে মানিক একটি ককটেল পার্টির আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলে। সেখানে মিষ্টি বিতরণও করা হয়।

 

মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন মানিক শুধু শিক্ষার্থী নয় শিক্ষিকাকেও লাঞ্ছিত করেছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রেহনুমা আহমদকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিক, ছাত্রলীগ নেতা হামিদুল হক, মাহমুদুল আলম বাবু, হাসিবুর রহমান বরকত ও মীর মেহেদী হাসান লিটুকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। (২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮, ইত্তেফাক)

মানিক

মানিকের তৎকালীন সহযোগী ও শিক্ষার্থী লাঞ্ছিত ঘটনায় অভিযুক্ত মীর মেহেদী হাসান টিটোর ২০১৮ সালে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল জোট’ থেকে সিনেট নির্বাচন করেন। ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন চলাকালে (১৯৯৮ সালের ২৩শে আগস্ট) ছাত্রলীগের মানিক ও টিটো নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদকে ছবি তোলার দায়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী লাঞ্ছিত ঘটনায় টিটোর সম্পৃক্ততা পায়নি বলে তার বিরুদ্ধে কোন অ্যাকশন নেয়নি। অথচ ২৭ অক্টোবর (১৯৯৮) বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট যখন সকল অভিযুক্তকে আসতে বলে তখন মানিকের সাথে টিটোও আসে নাই। অথচ কুকর্মের জন্যে ছাত্রলীগ মানিকের সাথে টিটোকেও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছিল।

২২ অগাস্ট ১৯৯৮, ইত্তেফাক পত্রিকায় বলা হয়, তিন ছাত্রীকে ধর্ষণের কোনর প্রমাণ পায়নি, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এমন কোন অভিযোগও করে নাই। তবে ঘটনা যাচাইয়ের জন্যে কমিটি গঠন করা হয়। মধ্য জুন হতে অগাস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ছাত্রী ধর্ষণের বিভিন্ন সংবাদ শোনা যেতে থাকে। তিনটি জাতীয় পত্রিকায় ধর্ষণ নিয়ে রিপোর্ট হল ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ২৭ অক্টোবর সিন্ডিকেট ১৩ ছাত্রকে (যারা ছাত্রলীগের সাথে জড়িতে) হাজির হতে বলে। সেখানে ৫ জন মাত্র হাজির হয়। মানিক, টিটোসহ আট ছাত্রের কেউ হাজির হয়নি। অভিযুক্তদের সবাই ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের কর্মী ছিল। তাই মানিক গ্রুপ যখন দৌড়ের উপর ছিল তখন ছাত্রলীগের অন্য গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখলে ব্যস্ত ছিল। তা পত্রিকায় বিস্তারিত লেখা আছে।

১৯৯৫ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে নাট্যতত্ত্বের গ্রিনরুমে ও বিভিন্ন গার্ডেনে এই ধরনের অপকর্ম বেশি সংগঠিত হয়। অনেক ছাত্রী বিভিন্ন সময় প্রোক্টরকে এই বিষয়ে অভিযোগ জানালেও কোন প্রতিকার পায়নি। প্রোক্টরের এমন গাফিলতিতে জাবির হলে প্রায় সময় এমন অপকর্ম সংগঠিত হচ্ছিল। এবং এসব অপ্রীতিকর ঘটনার সাথে সবসময় বহিরাগতদের সম্পর্ক ছিল।

অনেক মেয়ে লজ্জায়, ভয়ে এবং ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে এই ভেবে এসব নিপীড়নের ঘটনা চেপে গিয়েছিল। জাহানারা ইমাম হলের এক ছাত্রীর দুই বছর আগে বিবাহ হয়। পরবর্তী ক্যাম্পাসের এইসব ঘটনার কারণে তার বিয়ে ভেঙ্গে যায়। এক ছাত্রী রুদ্ধকণ্ঠে বলেন; “মেয়ে হইয়া বন্য এই ক্যাম্পাসে কতিপয় হিংস্র পশুর নিকট আমাদের জিম্মি হইয়া থাকিতে হয়।“

 

অথচ ক্যাম্পাসের তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন; কোন দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি নয়, অভিযুক্ত প্রমাণিত হইলেই শাস্তি প্রদান করা হইবে। তিনি বর্তমান পরিস্থিতিকে একটি মহলের ষড়যন্ত্র বলিয়া মন্তব্য করেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সভাপতি নুরুজ্জামান ও সাবেক সভাপতি মহিবুল্লাহ বলেন; কেবল ছাত্রলীগ নয়, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের যেসব নেতৃস্থানীয় ছাত্র বিগত সময় ছাত্রীদের সাথে অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মানিককে স্থায়ী ভাবে বহিষ্কার করলেও, বিশ্ববিদ্যালয়ের মান সম্মান, শিক্ষার্থীদের মানসম্মান নষ্ট করার জন্যে তার বিরুদ্ধে কোন পুলিশ কেস করা হয়নি (পত্রিকায় এমন কিছু পাইনি)। এরপর মানিকের কী হয়েছে তা জানা নেই। এতোটুকু জানি মানিক ইতালিতে চলে যায়।

মানিক নাকি প্লে বয় ছিল। এক সাথে অনেক নারীর সাথে সম্পর্ক রাখতো। জাবিতেই তার বিরুদ্ধে যখন তদন্ত শুরু হয় তখন তার অতীতের কুকর্মও সামনে চলে আসে। মানিক ১০০ নারীর সাথে সেক্স ও ধর্ষণ করে হলে পার্টি দিয়েছিল এই গল্পটা সবার জানা আছে। মানিক মোট কতোগুলো ধর্ষণ করেছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু তার পার্টির কারণে পরবর্তীতে তাকে ‘সেঞ্চুরিয়ান মানিক’ নামে ডাকা হতো। এই মানিকের কোন বিচার হয়নি। সরকারী সহযোগিতা ছাড়া মানিক যে ইতালিতে যেতে পারতো না এটা বুঝছে দার্শনিক হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। মানিকের ঘটনা আজ থেকে প্রায় ২৩ বছর আগে। অথচ দেশের পরিস্থিতি আজও সেই মানিকের সময়ে পড়ে আছে। আর এই মানিকের কারণে তৎকালীন সময় যেসব নারী জাবিতে পড়েছিল তাদের অনেকের বিয়ে হতে সমস্যা হয়েছিল, অনেকের সংসারও ভেঙ্গে গিয়েছিল।

মানিকই ছাত্রলীগের শেষ অপকর্ম নয়। ১৯৯৯ সালের থার্টি ফাস্ট নাইটে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের সময় বাঁধন নামের এক নারী প্রকাশ্যে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল। আর এই ঘটনা ঘটিয়েছিল ঢাবি ছাত্রলীগ। ঐ ঘটনার পর সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। এ নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখিও বেশ। মামলাও হয়। টিএসসির এই নারী নির্যাতনের ঘটনায় সরকারী দলের কর্মীরা শাওন আক্তার বাঁধনকেই দোষী হিসেবে বক্তব্য দিতে শুরু করে। বাঁধনের ঘটনায় দায়ের করা মামলা ১১ বছর চলার পর তিন আসামির সবাই খালাস পেয়ে যান। ২০১০ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার সবাইকে খালাস দেয়। আসামিরা ছিল-ফজলুল হক রাসেল, খান মেজবাউল আলম টুটুল ও চন্দন কুমার ঘোষ ওরফে প্রকাশ। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা উপস্থিত ছিলেন। রায়ে বিচারক বলেন, অভিযোগ সন্দেহাতীত প্রমাণ করতে না পারায় আসামিদের খালাস দেয়া হলো।

ছবিতে যে দুটো ছেলেকে সামনে দেখা যাচ্ছে তারা নির্যাতনকারী নাকি রক্ষাকারী তা নিশ্চিতভাবে জানা নেই। অনেক জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যায়। তবে মেয়েটি বাঁধন যাকে ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্যাতন করেছিল।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে বাঁধন তার বান্ধবী শীলা রহমান, শীলার স্বামী জিল্লুর রহমান ও তার বন্ধু জাহাঙ্গীর একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে টিএসসি এলাকায় ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন করতে আসেন। এ সময় ঐ  তিন জনসহ আরও ১০-১২ জন তাদের গাড়ি থামিয়ে বাঁধনকে নিয়ে টানাটানি শুরু করে। হামলাকারীরা বাঁধনের শ্লীলতাহানি করে।

এই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিলেটের এমসি কলেজে গণ-ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, বিএনপির আমলে সেই পূর্ণিমার মতন ভোটের পর বিএনপিপন্থী ভোটারকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর আজকে জানা গেল ৩২ দিন আগে যুবলীগের কর্মীরা এক নারীকে উলঙ্গ করে ধর্ষণ ও নির্যাতন করছে। মানিকের চেহারা আজ সবখানে আর বরাবরের মতন এরা সবাই রাজনৈতিক ক্ষমতার ছায়ায় এসব ধর্ষণ করে বেড়াচ্ছে। যেগুলো ফাঁস হচ্ছে সেগুলো আমরা জানতে পারছি আর হাজারো যৌন নিপীড়নের ঘটনা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। গত ১২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ শাসন করে আমাদের কী উপহার দিল তা স্বচক্ষে সবাই দেখতে পাচ্ছে। বর্তমান অনেক সময় অতীত বুঝতেও সাহায্য করে। এখন অবাক হয়ে ভাবি, একটি রাজনৈতিক দলের নেতা ও সরকার প্রধান একজন নারী হয়েও তিনি এই বর্বরতাগুলো কীভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন!