পাঁচ বছরের অধিক হয়ে গেল, এখনো ভাবি হয়তবা অভিদাকে একটা নক দেয়া দরকার। আনমনে মুক্তমনা খুলে তাকাই, অভিদা কি লিখেছেন কিছু। পরক্ষণেই স্মরণ হয়, এটা আর হবার নয়।
একাত্তরের ১২ সেপ্টেম্বর অভিজিৎ রায়ের জন্ম। সে হিসাবে আজ তিনি বেচে থাকলে মাত্র ৪৯ বছর বয়স হত তাঁর। কিন্তু তাঁকে হত্যা করা হল ৪৪ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই।
কী সম্ভাবনাময় হিসাবে অভিজিৎ রায় নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন সেটা ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। তিনি যখন ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ বইটি লিখেছিলেন তখনও আমি সম্ভবত ভার্সিটি শুরু করিনি। তিনি এরপর দেশে গেলেন, ফোন দিলাম। এটাই সম্ভবত তাঁর সাথে আমার প্রথম ফোনালাপ। তাঁর মধ্যে যে উচ্ছ্বাস এবং জীবনমুখী দর্শনের সন্ধান পেয়েছিলাম সেটা এক জীবন্ত অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
অভিজিৎ রায়কে কেন মরে যেতে হল? এটা নিয়ে সুস্থ মস্তিষ্কে ভাবার ক্ষমতা হয়ত কখনো হবেনা। কিন্তু তিনি নিজেই এর ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন। পুরো একটা বই রচনা করে গেছেন, বলে গেছেন কিভাবে বিশ্বাসের ভাইরাস কিছু মানুষকে খুনি ও নৃশংস করে তোলে।
অভিজিৎ রায় জন্ম নিয়েছিলেন একাত্তরে যখন আমাদের দেশের মানুষ জীবনপণ লড়াই করছে একটা মুক্ত সমাজের জন্য, যেখানে অর্থনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় নিপীড়ন থাকবে না। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমরা দেখতে পেলাম দেশটা ফের পাকিস্তান হয়ে উঠছে। কথা ছিল মাদ্রাসাগুলোকে মূল ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার, তিনি সেরকম কোন উদ্যোগই নেয়া হয় নি। অর্থাৎ ধর্মীয় বিষবৃক্ষকে তার আপন পরিবেশে লালন করতে দেয়া হয়। এর ফল পাওয়া যাচ্ছে এখন। ধর্মীয় উগ্রতা আর আদিম মূল্যবোধ মানুষের কণ্ঠ চেপে ধরেছে। প্রধানমন্ত্রীকেও নতজানু হতে হচ্ছে এমন এক আল্লামা শফীর কাছে যিনি নারীকে তেতুলের সাথে তুলনা দিয়েছেন, ক্লাস ত্রি পর্যন্ত পড়তে বলেছেন, গার্মেন্টে কাজ করা মেয়েদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পুরো দেশটা পরিণত হয়েছে এক মাদ্রাসায়, যেখানে আর কিছুনা, শুধু ধর্মানুভূতি লালন করা হয়। আপনি দেশের মধ্যে এমন এক টুকরো জায়গাও পাবেন না যেখানে ধর্মের উদার ব্যাখ্যাকে সহজভাবে দেখা হয়, ধর্মকে স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করা যায়।
কিন্তু একইসাথে বিশ্ব কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছে। নিত্য নতুন মানুষের জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে। ভবিষ্যত সময়টা ধর্মান্ধ-খুনি আর তার লালনকারীদের জন্য অত্যন্ত দূ্রহ হয়ে উঠছে। অভিজিত রায়কে হত্যার পর আমরা যেসব হায়েনাদের উল্লাস দেখেছি, সময়টা খুব প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে তাদের। সময় এসেছে, মানুষকে ফিরে আসতেই হবে জ্ঞানের কাছে, বিজ্ঞানের কাছে, ধর্মান্ধতাকে বিধায় জানিয়ে।
আলোর মশাল হাতে অভিজিৎ রায় আমাদের মধ্যে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন।
সৈকত দা আপনার লেখা আমার আপনার লেখা পার্থিব বইটি পড়েছি অনেক ভাল লেগেছে। আপনি নিয়মিত লেখেন না কেন?