আমরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেভেন মার্ডারের কথা জানি।  ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭জন ছাত্রলীগ নেতা খুন হয়। সাত খুনের মামলার প্রধান আসামী আর কেউ নয়; তিনি তৎকালীন ছাত্রলীগ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান! প্রতিপক্ষ গ্রুপকে খায়েল করতে শফিউল বেছে নেয় খুনের রাজনীতি। শফিউল ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৩-৭৪ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আজকে আমরা কথা বলবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোর মার্ডার নিয়ে। অনেকে এটাকেও ছাত্রলীগের মার্ডার হিসেবে উল্লেখ করেন থাকেন।

মহসীন হলে সাত ছাত্রলীগ কর্মী খুনের কয়েক মাস আগে ১৯৭৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একই সঙ্গে আসাদ, শহীদ, মিন্টু ও মোশতাক নামে চার যুবককে হত্যা করা হয়েছিল। এরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল না। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তখন ঢাবি’তে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছি। পুলিশ বলছে ঢাবিতে যেন অস্থিরতা বজায় থাকে তার জন্যে  ঢাবিতে এনে তাদের হত্যা করা হয়।

৪ খুন যেখানে করা হয় সেই একই জায়গায় মানে জগন্নাথ হল ও শামসুন্নাহার হলের এই জায়গায় আরেক জন খুন হোন তিনি হলেন ছাত্রলীগের জনপ্রিয় নেতা মনিরুজ্জামান বাদল। ১৯৯২ সালের ৯ই জানুয়ারিতে খুন হন বাদল। সেই সময় পত্রিকায় পাতায় বাদলকে নিয়ে কী কী লেখা হয়েছি তা পড়া যাবে এখানে- দলীয় কোন্দলে খুন হন মনিরুজ্জামান বাদল 

যাই হোক, ফিরে আসি আমাদের ফোর মার্ডার বিষয়ে। পুলিশ জানাচ্ছে এই নিহতের মধ্যে তিনজনের নামে আগে থেকে মামলা ছিল। একজনের নামে ছিল ডাকাতি মামলা। বেঁচে যাওয়া একজন বলছে- তাদের পাঁচজনকে হাত পা বেঁধে প্রথমে ধানমন্ডির একটি বাড়িতে রাখা হয়। পরবর্তীতে রাত সাড়ে দশটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জগন্নাথ হলের পাশের গলিতে এনে স্টেনগান দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে খুনিরা গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। জগন্নাথ হলের কয়েক জন শিক্ষার্থী বলছে- এদের সবার হাত-পা, চোখ বাধা ছিল। তারা আরও জানায় যে, স্টেনগানের শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। ঘটনার আগে হেডলাইটবিহীন মোটর সাইকেলে দুইজন ছেলে এই এলাকায় টহল দিচ্ছিল। বিশ্ববিদ্যারয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন, এরা কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন তবে তিনি গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। এগুলোকে আবার অনেকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলতে নারাজ। এদের মতিঝিল থেকে ধরে এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যা করার উদ্দেশ্যের পেছনে ব্যক্তিগত শক্রুতা কিংবা অতীত অপরাধের কারণ থাকতে বলে অনেকে মনে করছেন।

এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে একটা লেখা প্রায় সময় ফেসবুকে দেখা যায়-“এই তরুণরা খুন হন শামসুন্নাহার হলের পার্শ্ববর্তী শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায়। এ ঘটনায় চারজন মারা গেলেও ইদ্রিস নামে একজন আহত অবস্থায় বেঁচে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. বি ওয়ালিউর রহমানের স্ত্রী বিলকিস রহমান, যিনি তখন দ্য মর্নিং নিউজ পত্রিকায় কাজ করতেন, তিনি ছিলেন উল্লিখিত ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী! ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে পত্রিকায় মতামত প্রকাশের কারণে সরকারি চাপে তিনি মর্নিং নিউজ থেকে চাকরীচ্যুত হয়েছিলেন। তবে ১৯৭৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সেই রাতের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আহত ইদ্রিসের জবানীতে দ্য মর্নিং নিউজে এই হত্যাকাণ্ডের নায়কদের সম্পর্কে ইঙ্গিত-পূর্ণ অনেক তথ্য প্রকাশিত হয়ে পড়লে তা সেই সময় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অনেকের জন্য বিব্রতকর হয়ে ওঠে।

এই তথ্য কোন বইতে আছে কিনা আমার জানা নেই। কেউ জানলে প্লিজ জানাবেন। এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ছিল জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা। বিলকিস রহমান প্রত্যক্ষদর্শী কিনা তা গুরুত্বপূর্ণ নয় তবে তার চাকরীচ্যুত ঘটনা সত্য কিনা তা জানা জরুরী। অনেকে এই নিহত চারজনকে ছাত্রলীগ কর্মী বলে থাকেন তবে পত্রিকায় এমন কথা লেখা দেখতে পাইনি। তবে সরকারী দলের সাথে যুক্ত থাকা অস্বাভাবিক কিছু হতো না। পুলিশ বলছে; নিহতদের ৩ জন দাগী আসামী সাদেক (ফেরারী) দলের লোক। জীবিত ইদ্রিসের বিরুদ্ধেও থানায় মামলা রয়েছে। অপরাধ সংক্রান্ত বিরোধেই এই হত্যাকাণ্ড বলছে পুলিশ।