করোনা ভাইরাস এখন “বিশ্বাসের ভাইরাস”-কে ছাপিয়ে সারা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আকাশ -জল-স্থল সব বন্ধ হয়ে গেছে সারাবিশ্বে। “বিশ্বাসের ভাইরাস” আক্রান্ত যে মানুষ মন্দির -মসজিদ-গীর্জা-প্যাগোডায় মাথা ঠুকতেন প্রায় প্রতিদিন, তারা ভয়ে ওদিকে পা দিচ্ছে না। অর্থ্যাৎ মানুষ বাঁচার জন্য ঈশ্বরের কাছে নয়, চেয়ে আছে বিজ্ঞানের দিকে, মানুষের দিকে। কবে কখন এই ভয়ঙ্কর ভাইরাস থেকে মুক্তি দেবে বিজ্ঞানীরা? বিশ্বাস নামক অলৌকিক ভাইরাস এখন মৃত; মৃত বিশ্বাসীর ঈশ্বরও।
অথচ একথা অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এখনো পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই ভিন্ন ভিন্ন রূপে অলৌকিক শক্তিধর ঈশ্বরে বিশ্বাস করে থাকেন। শুধু ঈশ্বরে বিশ্বাসই নয়, জাগতিক সুখ-সমৃদ্ধি-সমাধান-সমর্থনের জন্যে ঈশ্বরের কৃপা লাভ করতে চান। এ জগতে তো বটেই মৃত্যুর পরে আরও বেশী সুখী হতে চান। এ পৃথিবীর অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চান মৃত্যুর পরে। এক কথায় সুখের সাগরে অনন্তকাল ভাসতে চান। আর তার জন্যে উপায় যার যার ঈশ্বরের কৃপা পাওয়া। ঈশ্বরের কৃপা লাভের জন্যে যুক্তি-তর্ক এমনকি কান্ডজ্ঞান বিসর্জন দিতেও মানুষের কমতি নেই।
এ সুযোগে কিছু মানুষ নিজের কিংবা নিজেদের মতো ক’রে ঈশ্বরতুষ্টির উপায় বাতলে দিয়ে গেছেন সাধারণের কাছে; যার অন্য নাম প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস। কেউ কেউ বা কোনো কোনো ধর্মবিশ্বাসীরা হয়ত সেই অতীতের ঈশ্বরতুষ্টির উপায় একটু সংস্কার ক’রেছেন।
ঈশ্বরের বিমূর্ত ধারণাকে দর্শন কিংবা যুক্তির প্রলেপে মুড়ে দেয়ার চেষ্টা করে ধর্মবিশ্বাসের বিধিনিষেধের বাতাবরণকে একটু আলগা করেছেন। আর কেউ এখনো আঁকড়ে ধরে আছেন, আদিম বা মধ্যযুগের সেই বাতলে দেয়া ঈশ্বরতুষ্টির রীতি-নীতি বা বিধিবিধানকে।
আমরা চাই বা না-চাই, বিশ্বাস করি বা না-করি এ পৃথিবী থেকে অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস, যাকে আমরা ঈশ্বর, আল্লাহ, ভগবান, গড –যা বলি না কেন, সেখানে থেকে এতো সহজে মুক্তি নেই।
জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-যুক্তির উৎকর্ষ সত্বেও মানুষের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবে, থাকবে কিছু অজানা-অচেনা অসহায়ত্ব। সেই সাথে রাজনীতি, বৈষম্য, বিভাজন কিংবা অন্যকে শোষণ করার ইচ্ছে তো আছেই। আর এ সবের জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস কখনো আসবে সহজাত হিসেবে আবার কখনো ধর্মবিশ্বাসকে নিজ নিজ স্বার্থে ব্যবহারের মাধ্যমে।
তবে একথাও সত্য যে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মানুষের মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা যতো বাড়বে, অলৌকিক শক্তিধর ঈশ্বর, আল্লাহ, ভগবান, গড-এর প্রতি মানুষের বিশ্বাসও ততো কমবে। আর ঈশ্বরের অস্তিত্বে আস্থাহীন মানুষের ঈশ্বরতুষ্টির সাধনা,যার প্রচলিত নাম ধর্মবিশ্বাস, সে সবের প্রয়োজনও আস্তে আস্তে ফুরিয়ে যাবে।
এবারের করোনা ভাইরাস মানুষের প্রচলিত ঈশ্বরের অসারত্ব যেমন প্রমান করে দিয়েছে; তেমনি আশা করা যায় যে, মানুষকেও মুক্তি দেবে “বিশ্বাসের ভাইরাস” থেকে। মানুষ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নতির চেয়ে নিজেদের বেঁচে থাকার জন্যই বিজ্ঞানাগার ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করবে, সে প্রত্যাশা করাই যায়।
চিনের মানুষ ইসলামের প্রতি ঝুঁকছে এমন হাস্যকর দাবির জবাব চাই।
আপনার লেখা খুব সুন্দর।আপনার ভাল ভাল আর্টিকেল উপহার দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
পৃথিবীতে যতগুলো খারাপ কাজ হয় সবই আমাদের কৃতকর্মের ফল। আমাদের হাতের ই কামায় করা।
আমাদের সমাজে করোনার ভয়ে সকল মানুষ টাটকা ইমানদার হয়ে গেছে। করোনা ভাইরাসকে আল্লার গজব বলছে ওরা। সবার মুখেই এখন আল্লার নাম। কিন্তু আমি এই গজব নামক গুজবে বিশ্বাস করি না।
“তবে একথাও সত্য যে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মানুষের মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা যতো বাড়বে, অলৌকিক শক্তিধর ঈশ্বর, আল্লাহ, ভগবান, গড-এর প্রতি মানুষের বিশ্বাসও ততো কমবে।” -একদম সঠিক কথা।