পর্ব দুই: সুলতান মাহমুদ গজনী’র ভারত আক্রমণ
পর্ব তিন:মুহম্মদ ঘুরীর দিল্লী দখল
পর্ব চার: কুতুব উদ্দিন আইবেকের শাসনামলের শুরু; হত্যা, দাসত্ব এবং মন্দির ধ্বংসের মাত্রা
হিন্দুরা সুদূর অতীত থেকে ঐতিহাসিকভাবে এবং বর্তমানেও প্রতিনিয়ত শুধুমাত্র ধর্মবিশ্বাসের কারণে পুরো ধর্মীয় সম্প্রদায় নিশ্চিহ্নকরণ এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার। হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায় নিশ্চিহ্নকরণের শিকার হয়েছে কয়েকটি পদ্ধতিতে সংক্ষেপে বললে বলা যায় বাধ্যতামূলক ধর্মান্তরকরণ, হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে গণহত্যা, হিন্দুদের মন্দির, মন্দিরের মূর্তি ধ্বংস করে মসজিদে রূপান্তর এবং মন্দিরের বিগ্রহ, স্বর্ণালংকার, অর্থ-সম্পত্তি-জমি দখল করে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে।
প্রাচীন আর্যদের বৈদিক সাহিত্য এবং সংস্কৃতিকে ধারণ করে বেড়ে ওঠা ধর্মটির ঐতিহ্য যেমন সুপ্রাচীন তেমনি এই ধর্মের অনুসারীরা আক্রমণের শিকারও হয়েছিল অতীতকাল থেকেই বিশেষত ইসলামের আগমনের সাথে সাথে। ৮শ শতক থেকেই আফগানিস্তানের গিরিপথ পার হয়ে দলে দলে মুসলিম সেনা, ধর্মপ্রচারক, সুফি আসতে থাকে ভারতীয় উপমহাদেশের এই বিস্তৃত অঞ্চলে। এই অঞ্চলের প্রধান সুবিধা এবং সমস্যা হলো উর্বর জমি, নির্বিঘ্নে বসবাসের উপযোগী ভূপ্রকৃতি, আরামদায়ক জলবায়ু, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি। এতসব সুবিধার কারণেই এই লোকেরা কিছুটা অলস, যুদ্ধবিদ্যায় অনভিজ্ঞ এবং তাদের জীবনযাত্রা সহজ সরল। ইসলামের আগমনের আগে এই বিশাল অঞ্চলের সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশ কেমন ছিল তার দিকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিপাত অত্যন্ত আবশ্যক। হিন্দু ধর্ম তখন থেকে প্রচণ্ড ব্রাহ্মণ্যবাদী আর বর্ণের অন্ধকারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। নিজ ধর্মের মধ্যেই ঘৃণাকে হিন্দুরা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। যার প্রভাব এখনো এই আধুনিক সমাজেও প্রবলভাবে বিদ্যমান। উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের এত অত্যাচার, নিপীড়ন করত যে, যখন কোন মুসলিম বাহিনী আক্রমণ করে তখন ক্ষেত্রবিশেষে আক্রমণকারীকে স্বাগত জানায় শুধু অত্যাচার থেকে মুক্তির আশায়। ছোট ছোট সামন্ত রাজন্যবর্গ আন্তঃ-কলহে এত ব্যস্ত ছিল যে বহির্শক্তির আক্রমণ থেকে রক্ষার ন্যুনতম প্রস্তুতিও তাদের ছিল না। কিন্তু সাধারণ হিন্দুদের কপালে সুখ নাই, ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজাদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে ধর্মান্তরিত কিংবা মুসলিম শাসনের অধীনে আসলেও সামাজিক জীবনে তাদের অর্থনৈতিকভাবে কোন পরিবর্তন আসেনি।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আবির্ভাব, রাজ্যবিস্তার নিয়ে লিখিত সবথেকে নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র পার্সিয়ান ভাষায় লিখিত চাচনামা/ ফতেহ নামা সিন্ধ এবং তারিখ আল-হিন্দ ওয়া আস-সিন্ধ (সিন্ধু বিজয়ের কাহিনী) গ্রন্থ থেকে জানায় যায় খলিফা উমাইয়ার নিয়োজিত মেসোপটেমিয়ার (বর্তমান ইরাকের) গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ভাতিজা/জামাতা সেনাপতি মুহম্মদ বিন কাশিম ৬০০০ সিরিয়ান সৈন্য নিয়ে ৭১২ সালে সিন্ধু আক্রমণ করে। সিন্ধু যে একেবারে বিনা বাধায় মুসলিমরা জিতে নিয়েছিল তা কিন্তু নয়, ইতিপূর্বে তিনবার আক্রমণ হয়েছিল। কিন্তু ১৭ বছরের তরুণ মুহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধুর রাজা দাহিরকে পরাজিত করে প্রতিবেশী বিভিন্ন শহর যেমন দেবল (করাচি), নিরুন, রেওয়ার, ব্রাহ্মণাবাদ (মনসুরাবাদ), আলোর, মুলতান দখলে নিয়ে প্রথমবারেরমত ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের চানতারা পতাকা তুলে ধরতে সক্ষম হয় এবং তারা সমগ্র অঞ্চলে তাদের প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হবে। যুদ্ধে পরাজিত সব সৈন্যদেরকে একবারে হত্যা করা হয় এবং নিহত সৈনিকদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদেরকে দাস হিসেবে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে ইরাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সাধারণত রাজ্য জয়ের সপ্তাহ থেকে মাস খানেকের মধ্যে মুহম্মদ বিন কাশিম শহরের গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক, ব্যবসায়ীদের ডেকে ট্যাক্সের হার নির্ধারণ এবং ব্যবসা বাণিজ্য পুনরায় স্বাভাবিক করতে চুক্তির ব্যবস্থা করত। চুক্তিতে নগরবাসীর জন্য কয়েকটি সুযোগ আছে যেমন সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামের কাছে আত্মসমর্পণের জন্য আদেশ দেয়া হয়, অথবা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করো, অথবা যুদ্ধে জিতলে বা মরলে তো ভালো কথা কিন্তু হারলে দাস হয়ে যাও। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ জামাতা কাশিমকে একটা চিঠি লিখে নির্দেশ দেন যারা অস্ত্র বহন করবে (আহি-আল-হার্ব) তাদের সবাইকে হত্যা করো, অস্ত্রধারীর স্ত্রী সন্তানদের বন্দী করে দাস বানাও, যারা যুদ্ধ করেনি সাধারণ নাগরিক তাদেরকে ধর্ম রক্ষার কর (ধিম্মাহ) প্রদানের চুক্তিতে ছেড়ে দাও। কিন্তু রাজ্য জয়ের কাশিমের বাহিনী স্থানীয় হিন্দু, বৌদ্ধদেরকে দুইটা সুযোগ দিলো, হয় প্রাণ বাঁচাতে ইসলাম গ্রহণ করো না হয় তরবারির নিচে মাথা পেতে দাও।
কাশিম যেসব অঞ্চলে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়, মুসলিম-বাহিনীর সৈন্য-ক্ষয়ের সম্ভাবনা ছিল সেখানে অবরোধ আরোপ করে আস্তে আস্তে ক্ষমতা নগর দখলের চূড়ান্ত মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করত। অবরোধ কৌশলের কারণেই মুসলিম-বাহিনীর তেমন সৈন্যক্ষয় ছাড়াই আরমাবিল, নিরুন, আলোর দখল করতে সক্ষম হয়। চাচ নামা গ্রন্থে বলা হয়েছে মুহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধু অববাহিকার প্রায় ৬০% নগর দখল করতে পেরেছিল অবরোধ রণনীতির কারণে। যদিও হাজ্জাজ বিন ইউসুফ জামাতা কাশিম যথেষ্ট নির্দয় না হওয়ার কারণে দুর্বল হৃদয়ের মানুষ বলে তিরস্কার করে। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ দেবল (করাচি) দখলের পর কড়া নির্দেশ দেয় একটা বয়স্ক পুরুষও যেন বেঁচে না থাকে।
সিন্ধু জয়ে মুহম্মদ বিন কাশিমের নিজের কৃতিত্ব থেকেও বেশি কৃতিত্ব স্থানীয় অত্যাচারী রাজা দাহিরের নিপীড়নের শিকার নিম্নবর্ণের হিন্দু এবং বৌদ্ধ প্রজা। স্থানীয় বিদ্রোহী জাট এবং মেধ সৈন্যরা অতিষ্ঠ হয়ে রাজা দাহিরকে পরাজিত করতে কাশিমের সাথে যোগ দেয়। মুহম্মদ বিন কাশিমের সহজেই সিন্ধু জয়ের আরও কিছু কারণ আছে যেমন-
১. উন্নত সমরাস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম (কাশিম বাহিনীর কাছে দুর্গের শক্ত দরজা ভাঙার যন্ত্র এবং আধুনিক তীর ধনুক ছিল)
২. সৈন্যদের মাঝে কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা এবং সময়োপযোগী নেতৃত্ব
৩. মুসলিম সৈন্যদের উজ্জীবিত করেছিল জিহাদের ধারণা। তাদেরকে বলা হয়েছিল বেঁচে থাকলে তারা হবে গাজী, ভোগ করতে পারবে অবাধ নারী লুণ্ঠিত ধনরত্ন সামগ্রী। (ঘুচে যাবে তাদের অভাব, কারণ সিরিয়ান সৈন্যদের বেশিরভাগই ছিল দারিদ্রে কোনমতে দিনাতিপাত করা ভবঘুরে দস্যু।)
৪. সিন্ধু অঞ্চলে আগে থেকেই ইসলামের দিগ্বিজয়ের গুজব বাতাসের মত ছড়িয়ে পড়েছিল।
৫. অধিকাংশ বৌদ্ধ, হিন্দুরা যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানায়, যুদ্ধে নরহত্যার থেকে আত্মসমর্পণ শ্রেয় মনে করে।
৬. প্রজাদের রাজা দাহির এবং তার মন্ত্রী আমলাদের সীমাহীন অত্যাচার, নিপীড়ন।
৭. নিম্নবর্ণের হিন্দু ও বৌদ্ধদের সাথে সামাজিক বৈষম্য।
ইতিহাসবিদ স্যার হেনরি মিলার ইলিয়ট তার History of India ইতিহাস বইতে অন্যান্য মুসলিম আক্রমণকারীদের তুলনায় কাশিমকে কম ধ্বংসাত্মক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যদিও মন্দির ধ্বংস, লুট এবং স্থানীয় হিন্দুদেরকে হত্যা থেমে থাকেনি। সিন্ধুর সব অধিবাসীদেরকে বলপূর্বক ধর্মান্তর করা হয়। বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত উপেন্দ্র ঠাকুরের Sindhi Culture বইতে সেই সময়টাকে অন্ধকার ইতিহাস বলে চিহ্নিত করেন। সিন্ধুতে গণ ধর্মান্তর করার সময়ে মন্দির ভাঙা হয়েছে যেখানে যা পাওয়া গেছে সব এবং ধর্ম ত্যাগ করতে অস্বীকার করায় হিন্দু বৌদ্ধ সবাইকে জবাই করে হত্যা করে। রাজা দাহিরের ‘গো হত্যা’ নিষিদ্ধের প্রতিশোধ হিসেবে দেবলের (করাচি) ব্রাহ্মণদের জোরপূর্বক খতনা করানো হয়। সিন্ধু বিজয়ের পরে মুহম্মদ বিন কাশিম তার সংক্ষিপ্ত শাসনামলে হানাফি এবং শরিয়া আইন বলবত করে হিন্দু, বৌদ্ধদেরকে জিজিয়া করের বিনিময়ে স্বধর্ম পালনের সুযোগ দেয়।
সিন্ধু আক্রমণের মধ্য দিয়েই ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের যাত্রা শুরু। এরপরেই দলে দলে আক্রমণকারী, পর্যটক, সুফি, ধর্মপ্রচারক আসতে লাগল এই অঞ্চলে, শুরু করল স্থায়ী বসবাস। পাকিস্তানের জনক মুহম্মদ আলি জিন্নাহ পাকিস্তান আন্দোলনের সময় বলে, যেদিন মুসলিমরা প্রথম সিন্ধুর মাটিতে পা রেখেছে সেদিনই ভারতে ইসলামের প্রবেশ পথ রচিত হয়েছে।
[…] পর্ব: মুহম্মদ বিন কাশিমের সিন্ধু আক্রমণ পর্ব দুই: সুলতান মাহমুদ গজনী’র ভারত […]
ধন্যবাদ বিকাশ দা, লেখাটি খুব ভালো লাগলো
মুক্তমনায় আপনারা যারা লেখালেখি করেন তাদের লেখাগুলি পড়লে ইতিহাস বিষয়ে অনেক কিছু জানা যায়, বুঝা যায়। কষ্ট করে আর ইতিহাস ঘাঁটতে হয় না। আপনারা এত কষ্ট করে এত সুন্দর করে এমনভাবে ইতিহাস বিষয়ক লেখা গুলি সহজভাবে উপস্থাপন করেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ি আর ভাবি আমরা কত পিছিয়ে আছি আমাদের অস্তিত্ব বিলীনের পথে শুধু ধর্মীয় গোঁড়ামির জন্য।
ভারতবর্ষে হিন্দুরা রাজা অশোকের সময় হতে নির্যাতিত।
হিন্দু ধর্মের বিবর্তনের ইতিহাস পর্যালোচনার যা প্রয়াস লেখক করেছেন টা আট স্বল্প পরিসরে এক সম্ভব না। তায় সংক্ষেপে আমার মতামত-
ভারতবর্ষের মাটিতেই হিন্দু ধর্মের পরাজয়ের উপকরন লুকিয়ে আছে। এখানকার সংস্কৃতি (বৈদিক সভ্যতা) মানুষকে কোমল হৃদয় করে গড়ে তোলে। কার্ল মার্ক্স বলেছেন প্রাচ্যে ইউরোপিয়ানদের বিজয়ের মুলে আছে তাদের নৃশংসতা। ভারতে মুসলমানদের বিজয়ের কারন তাই। আলেকজান্ডার পুরুকে পরাজিত করার পর প্রশ্ন করে ছিলেন যে সে তার কাছে কি রকম ব্যবহার আশা করে। পুরু উত্তর দিয়েছিলেন, “এক রাজা আর এক রাজাকে যেমন ব্যবহার করতে পারে তেমন ব্যবহার “। এখানকার রাজারা যতই অন্তরকলহে লিপ্ত থাকুক না কেন বিজয়ীরা পরাজিতদের প্রতি নির্দয় আর অমানবিক ব্যবহার করেছে এমন কথা ইতিহাসে পাওয়া যায় না। কিন্তু এই দেশে মুসলমান আক্রমণকারীরা তাদের বিজিতদের প্রতি একটিই ব্যবহার করত, তা হল মৃত্যু ও অপমানজনক ও নিষ্ঠুর মৃত্যু। এটা মুলত আরবের অসভ্যদের সংস্কৃতির মানসিকতা।
মুসলমান বিজয়ীদের আর একটি ঘৃণ্য মানসিকতা হল পরাজিতদের নারীদের প্রতি অসভ্য ব্যবহার। বিজতদের নারীদের তারা লুটের মাল হিসাবে ব্যবহার করত। ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজও তাই চলেছে। পূর্ব পাকিস্থান তথা বাংলাদেশেও তাই হয়েছে। (আমার পরিবারেও তাই হয়েছে)। যাদের হারিয়ে দিলাম, তাড়িয়ে দিলাম তাদের তাদের নারী বড় লোভনীয়! বিশেষ করে বিজিতরা যদি শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে বিজয়ীদের থেকে এগিয়ে থাকে তা হলে তাদের নারী হরন করতে পারলে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম জিনগত ভাবে এগিয়ে থাকবে, হয়ত এই মানসিকতা থেকেই তারা এই কাজ করেছে। আজও অসভ্যস্থান (পাকিস্থানে) তাই নিয়মিত হয়ে চলেছে। আই এস রাও ইয়েজেদি নারীদের তাই করছে।
হিন্দুদের বনাশ্রম প্রথা একটি ঘৃণ্য প্রথা। কিন্তু এই প্রথা দুর করার চেষ্টা মন মুসলমান রাজারা করে নি। ইউরোপিয়ান রেনেসাঁসের প্রভাব ইংরাজের হাত ধরে এই দেশে প্রবেশ করে। ফলে শ্রী চৈতন্য, রাম মোহন, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ , নজরুল, ও রবীন্দ্রনাথদের আমরা পেয়েছি। তাই বর্ণাশ্রমের কঠোরতা যেটুকু কমেছে তাতে মুসলমান শাসকদের অবদান সামান্যই।
আজ ভারতে যে হিন্দু জাগরন হচ্ছে তার কারন মুলত ধর্ম নিরপেক্ষতার ও সাম্যবাদের ব্যর্থতা। প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলে হিন্দুরা ধর্ম নিয়ে এত চিন্তিত হত না বলেই মনে করি। আই এস , আল কায়দা, বকো হারাম, হুজি, অসংখ্য ইসলামি সংগঠনের কথা হিন্দুরা যত জেনেছে তত নিজেরা একত্রিত হয়েছে। আর সাম্যবাদ দর্শন হিসাবে যতদিন না আবার জনপ্রিয় হবে ততদিন ভারতে হিন্দুত্ববাদই একমাত্র বিকল্প হয়েই থাকবে।।
আমাদের উপমহাদেশের মানুষ বেশ আরামপ্রিয়, ইতিহাস খুব একটা জানতে চায় না বলেই স্বপ্রণোদিত হয়ে জ্ঞানার্জনের তথ্যসূত্রগুলোও ধরতে আলসেমি করে। এই ধরনের লেখা, সহজ করে সূত্র ধরিয়ে দেবার মত চেষ্টার জন্য লেখা, সেজন্য লেখাটি বেশ ভালো লাগলো। বিকাশ মজুমদারকে ধন্যবাদ।
এই মন্তব্যে কিছুটা দ্বিমত আছে, আমরা জানি এরও অনেক আগে এমনকি মোহাম্মদের জীবদ্দশাতেই ভারতে ইসলামের প্রচার হয়েছিল। ৬২৯ সালে মুহাম্মদের মৃত্যুর ২ বছর আগে ভারতে প্রথম মসজিদ স্থাপিত হয়। চেরামন পেরুমল নামে জনৈক ধর্মান্তরিত মুসলমানের নির্দেশে কেরলের ত্রিসূর জেলায় মালিক বিন দিনার এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। উল্লেখ্য, পেরুমলকেই প্রথম ভারতীয় মুসলমান মনে করা হয়। তবে রাজনৈতিক বা দখলদারি ইসলামের কথা যদি বলেন, তাহলে মোহাম্মদ বিন কাশেমই উপমহাদেশে ইসলামের ‘প্রথম বিজেতা’
ভারতের কেরালার মালাবার বন্দরের কাছে এই মসজিদটির নাম ‘চেরামন জুমা মাসজিদ’। কথিত আছে যে এটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ৬২৯ সালের দিকে। অনেকেই বলেন যে কেরালার ওই এলাকার সেই সময়কার শেষ ‘চেরা’ রাজা ছিল চেরামন পেরুমল (Cheraman Perumal) এবং তার নির্দেশেই পারস্য থেকে আগত মুক্ত দাস মালিক দিনার (Malik Deenar) এই মসজিদটি তৈরির দ্বায়িত্ব পায়। এই দাস মালিক দিনার’ই সম্ভবত সেই আরব বণিক হিসেবে পরিচিত যে কি না রাজা পেরুমল’কে সেই চাঁদ দু টুকরো হয়ে যাবার গপ্পো শোনায় এবং তাঁকে মুসলমান হতে উৎসাহ যোগায়। বিভিন্ন ইতিহাসবিদদের মতে ঘটনা যা’ই হোক, ওই সময়ে প্রভাব প্রতিপত্তিশালীদের কেউ কেউ ধর্মান্তরিত হয়েছিল। কেরালা পুরোনো ভারতে ঐতিহাসিক ভাবেই গুরুত্বপুর্ণ আর ব্রাহ্মণ্য, ‘পুরান’ ও সংস্কৃত চর্চা ইত্যাদিও এখানে যথেষ্ঠ হয়েছে। চট করে অল্প কথায় প্রাচীন বা পুরোনো দিনের ভারতকে বলে ফেলা মোটেও সম্ভব নয়।