আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস – পৃথিবীর সকল নারী এবং তাদের পথচলার বন্ধুদের জন্য রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা।
এই নারী দিবসের গুরুত্ব কী? পৃথিবীতে এতরকমের বৈষম্য রয়েছে সেখানে আলাদা করে নারী দিবস কেন পালন করতে হবে? আমি মনে করি, সব বৈষম্য নিয়েই কথা বলা দরকার, প্রতিরোধ সৃষ্টি করা দরকার – এই প্রতিবাদ/প্রতিরোধের কোনটাকেই ছোট করে দেখা ঠিক না। অনেকেই বলে থাকেন শ্রেণী বৈষম্য দূর না হওয়া পর্যন্ত লিঙ্গ-বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়। হতে পারে। তবে পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যার সমানাধিকার লাভের আন্দোলনটা মনে হয় কোনভাবেই ছোট করে দেখা সম্ভব নয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই নারী অধিকারের প্রশ্নটি সবসময়েই অন্যান্য অনেক ইস্যুর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল। সব অন্যায় এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারার মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানব সভ্যতার সামনে এগোনোর ব্লুপ্রিন্ট। অসংখ্য সংখ্যাগত পরিবর্তনও কখনো কখনো গুণগত পরিবর্তনের নিয়ামক হয়। আজকাল মাঝেমাঝে আমার পুরুষ বন্ধুদের কাছ থেকে শুনি – “বোঝোইতো, মি-টুর দিন এখন, এক্সট্রা সাবধান থাকতে হয় সবকিছুতে!” কে ভেবেছিল এই ‘সামান্য’ মি-টু আন্দোলন পুরুষদের এভাবে সাবধান হতে বাধ্য করবে? মানব ইতিহাসে আর কখনও কি তাদের এই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছিল? এর উত্তর অবশ্য আমাদের এখনো জানা নেই।
কিন্তু এই ১১০ বছর ধরে পালিত এই নারী দিবসের সূচনা হয়েছিল কোথায়? কিভাবে? এর সমাজতান্ত্রিক পটভূমি থেকে জাতিসংঘ পর্যন্ত যাত্রার ইতিহাসটাই বা কী?
১৯০৮ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি প্রায় ১৫০০০ নারী শ্রমিক অমানবিক কাজের অবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে নেমে আসেন নিউ ইয়র্কের রাস্তায়। তাঁদের দাবি- কাজের সময় কমাতে হবে, বেতন বাড়াতে হবে, কাজের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে!
পরিচিত লাগছে? হ্যাঁ, একশ’ বছর আগে আমাদের দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের মতই অবস্থা ছিল আমেরিকার নারী শ্রমিকদেরও।
ক্লারা লেমলিচ নামে একজন আমেরিকান (ইউক্রেনে জন্মানো এই নারী আমেরিকার নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ছিলেন) নারী এর নেতৃত্ব দেন। তখন নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং ফিনল্যান্ড ছাড়া পৃথিবীর আর কোন দেশে মেয়েদের ভোটাধিকার ছিল না (নিউজিল্যান্ড প্রথম ১৮৯৩ সালে মেয়েদের ভোটাধিকার দেয়, আর সম্ভবত সৌদিআরব দেয় সর্বশেষ ২০১১ সালে!)। এর পরের বছর আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক পার্টি এই দিনটি জাতীয় নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়।
১৯১০ সালে বিখ্যাত মার্ক্সিস্ট নারী আন্দোলনকারী ক্লারা জেটকিন এটা আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান। ডেনমার্কে ১৭টি দেশ থেকে আসা ১০০ নারী কর্মীদের সম্মেলনে এই প্রস্তাব পাশ হয়। ১৯১১ সালের ১৯শে মার্চ প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিকভাবে নারী দিবস পালিত হয়। জাতিসংঘের হিসেব মতে সেদিন দশ লাখ নারী এবং পুরুষ এই র্যালিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল নারীদের জন্য ভোটাধিকার, কর্মাধিকার, পেশামূলক ট্রেনিং এবং কর্মস্থলে লিঙ্গ বৈষম্যের ইতি টানা।
১৯১১ থেকে ১৯১৭ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে মার্চের বিভিন্ন দিনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার নারীরা ১৯১৭ সালের ৮ ই মার্চে (জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দিনটি ছিল ২৩ শে ফেব্রুয়ারি কিন্তু এখন সব দেশেই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়) প্রবল খাদ্যসংকট এবং মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে ‘রুটি এবং শান্তি’ নামে আন্দোলনে নামে। এর কয়েকদিন পরেই জারের পতন হয় এবং নতুন সমাজতান্ত্রিক সরকার নারীদের ভোটাধিকার দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এর পর থেকেই বিশ্বজুড়ে ৮ই মার্চে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করার চল শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ এই দিনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
নারীদের অধিকার নিয়ে এ ধরনের টাইমলাইন দেখলে আমার সবসময়েই পরস্পরবিরোধী দুটো কথা মনে হয়:
প্রথমতঃ, মাত্র একশ’ বছর আগে নারীদের অবস্থা কী ছিল! ভাগ্যিস আগে জন্মাই নাই!
দ্বিতীয়ত, এখনো মেয়েদের অবস্থা এত খারাপ কেন? কতোটা পথই না জানি বাকি পড়ে আছে…! আজ আমেরিকার মেয়েরা পথে নামবে পুরুষতন্ত্রের বিনাশ এবং প্রজননাধিকারের নিশ্চয়তার জন্য।
#নারী_দিবস
প্রতি বছর হাজারো নারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়ে বের হচ্ছেন। দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী হিসেবে উচ্চতর জীবনদর্শন ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এই নারীগণ দেশে ও বিদেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রেবিশেষে যথেষ্ট অবদান রেখে চলেছেন। এই গৌরবময় ইতিহাসের সূচনা যার হাত ধরে, নারী দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রথম ছাত্রীর ব্যক্তিগত ও সংগ্রামী জীবনের উপর কিছুটা চোখ বুলিয়ে নিই।
http://boierferiwala.com/leela-nag-roy/
হুম। অনেক কিছু জানলাম।
মাঝে মধ্য চিন্তায় পড়ে যাই। আমরা যেসব ভুল করি সেই সব কি কখনই বন্ধ হবে না!
দেশি-বিদেশি দাতাগোষ্ঠীর অর্থ পুষ্ট এনজিও কোং এর খপ্পর থেকে বাংলাদেশের নারী মুক্তির আন্দোলনকে মুক্ত করা না গেলে এ দেশের নারীর মুক্তি নাই। নারী মুক্তি আন্দোলন একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি, এটি রাজনৈতিক দলেরই এজেন্ডা, ফেয়ার এন্ড লাভলির বিষয় নয়।
বন্যা আপাকে ইতিহাস মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সবার প্রথমে আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে দুনিয়ার সব শ্রেণীর নারীকে জানাই সংগ্রামী অভিনন্দন।
@ বন্যা আহমেদ, আপনার প্রজ্ঞার অনেক পরিচয় পেয়েছি। তাই আপনাকে সমীহ করি। আবার সেই জন্য প্রশ্রয় আশা করি বোকার মত প্রশ্ন করলে ক্ষমা পাব বলে। তাই কয়েকটি কথা সম্পর্কে, প্রশ্ন নয়, জানতে চাই আপনার মতামত।
যেখানে ক্ষমতাবানরা ধর্ষণ ও খুন করেও রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থের জোরে পার পেয়ে যায়, যেখানে ধর্ষণের শিকার হয়েও থানায় গেলে পুলিশ তাদের অভিযোগ পর্যন্ত নথিবদ্ধ করতে চায় না সেখানে শুধু মাত্র ” অভিযোগ করলেই গ্রেফতার” করার মত আইন করে সরকার অতি সক্রিয় হওয়ার কারন কি? মি টু কি শুধু মাত্র সমাজের উচ্চ শ্রেণীর নারীদের আন্দোলন ?
@ সুভাষ দেয় ও বিদেশ মণ্ডল , আমিও ঠিক এই কথাটা ভাবছিলাম। কেন্দ্রিয় , রাজ্য সরকার থেকে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা NGO সবাই খুব চিন্তিত কি ভাবে নারীর আরও ক্ষমতায়ন করা যায়। যে সরকার এবং কর্পোরেটরা কখনো সাধারণ কর্মচারীদের, এমন কি শিশু শ্রমিকদের ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনা করে না তারাই আবার নারীর ব্যপারে এত চিন্তিত কেন? দেখা যাচ্ছে যেখানে সরকারী নারী কর্মচারীদের দের মাতৃত্ব কালীন সুবিধা শিশুর ১৮ বছর পর্যন্ত ২ বছর সবেতন ছুটি মঞ্জুর করেছে তারাই আবার অসংগঠিত নারী কর্মচারীদের নুন্যতম সুবিধা দেওয়ার ব্যপারে কোন উৎসাহ দেখায় না, সে ব্যপারে কোন চিন্তা ভাবনা করে না। ভারতের মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট পিছিয়ে পড়া মানুষদের সংরক্ষণের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে যারা ইতিমধ্যে সুবিধা প্রাপ্ত তাদের ‘ক্রিমি লেয়ার’ বলে অভিহিত করেছিল এবং তাদের কি ভাবে সংরক্ষণ থেকে বাদ দেওয়া যায় সেই সম্পর্কে আইন প্রনয়ন করা যায় কিনা সে ব্যপারে সরকারকে চিন্তা ভাবনা করতে বলেছিলেন। এখানেও নারীদের মধ্যেও এক শ্রেণীর ‘ক্রিমি লেয়ার’ সৃষ্টি হয়েছে। যারা সরকারের বিভিন্ন নারী বিষয়ক সুবিধা পুরটাই শুষে নিচ্ছে।
আবার কিভাবে কাজের ক্ষেত্রে নারীর যোগদান আরও বাড়ানো যায় সেই ব্যপারে বিভিন্ন রকম ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারীরা তাদের নিজের যোগ্যতায় কাজ পাবে ভালো কথা। কিন্তু এর দ্বারা সমগ্র নারী জাতির কি সুবিধা হবে ভেবে পাই না। ধরা যাক ১০০ টি চাকরি আছে। এবং ধরা যাক ১০০ টি ছেলে ও ১০০ টি মেয়ে আছে। যদি ৩০ টি চাকরি মেয়েরা অধিকার করে (তাদের যোগ্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই) তা হলে ওই ৩০ টি মেয়ে ৭০ টি ছেলের থেকেই বিবাহ করবে( কারন মেয়েরা সাধারনত বেকার বা আধা বেকার ছেলেকে বিবাহ করে না) তা হলে বাকি ৭০ টি মেয়ের জন্য ৪০ টি ছেলে থাকল। যদি বিবাহ যোগ্য ছেলের মেয়ের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে এই ভারসাম্যের অভাব থাকে তা সমগ্র নারী জাতির পক্ষে কি ভাবে মঙ্গল হবে? বরং এর ফলে স্বামী স্ত্রীর যৌথ আয়ের সংসারের সংখ্যা বাড়বে ও সামাজিক বৈষম্য আরও প্রকট হবে।
সরকারের ও বিভিন্ন কর্পোরেট দের এই অতি সক্রিয়তা দেখলে একটা কথাই মনে হয়, অতি ভক্তি চোরের লক্ষন নয় তো?
আন্তর্জাতিক শ্রমজীবি নারী দিবস হলেই ভালো হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কথাটা ঠিক নয়–এটা হওয়া উচিত আন্তর্জাতিক শ্রমজীবি নারী দিবস।তাহলে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বউ থেকে নীতা আম্বানি,বলিউডী তারকা ইত্যদিরা যেভাবে hijack করে নিয়েছে সেটা অন্ততঃ বন্ধ হবে।