শেষ পর্ব।
বলেছিলাম সুরমা মার্কেট পয়েন্টে একদিন এক মারাত্বক ঘটনা ঘটেছিল। তা ছিল ১৯৮০/৮১ সালের ঘটনা। ইংল্যান্ড থেকে প্রথম বাংলাদেশে এসেছি। বিগত ৫ বছরে আমার মাদ্রাসার ও স্কুলের অনেক সহপাঠী বন্ধু বান্ধব, পাড়ার আত্মীয় স্বজন ও অনেক পরিবার গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গেছেন। গ্রামে যারা আছেন লক্ষ্য করলাম তারা যেন কেমন হয়ে গেছেন, জীবনের স্বাদ নেই, স্বপ্ন নেই, চোখে যেন তারা সব সময় কবরের জীবন পরকাল দেখতে পান। গ্রামের আগের সেই চঞ্চলতা নেই, কোলাহল নেই, এখন রোদেলা দুপুরে কোথাও বাঁশি বাজেনা নিশীত রাতে কেউ গান গায় না। সন্ধ্যার পাখিরা শান্ত হওয়ার আগেই মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। আছে দিনে পাঁচ বার একসাথে চার পাঁচটা মাইক থেকে আজানের বিকট চিৎকার আর রাতে কারো না কারো বাড়ির মাইক থেকে ওয়াজের ঘ্যানঘ্যানানী। আধমরা গ্রামে আর থাকতে ভাল লাগলোনা, ক’দিন পর আমাদের সিলেটের বাসায় চলে গেলাম।
বড় ভাই নতুন একটা সাইকেল কিনে দিলেন। সিলেটের নাটক আর গানের জগতের কিছু মানুষের সাথে পরিচয় ছিল আমার ইংল্যান্ড আসার আগেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরেই সাইকেল নিয়ে বের হয়ে যেতাম। সারাদিন গ্রাম থেকে আসা সকল আত্মীয়ের ব্যবসা-বাড়ি, রেডিও ষ্টেশন, সারদা হল ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ে কিছুক্ষণ তারপর সিলেট রেষ্ট হাউসে শিল্পী শফিকুন্নুরের রুমে আড্ডা, আর বৃহস্পতিবার রাতে শাহজালালের মাজারে বাউল শিল্পীদের গানের আসরে যোগদান, এই ছিল সপ্তাহের প্রাত্যহিক রোটিন। মাজারের ভিতরে যেখানে বিশাল পিতলের ডেকসি রাখা আছে তার পাশেই একটি ঘর আছে সেখানে প্রতি বৃহস্পতিবার বাউলদের আসর বসে। শাহ আব্দুল করিম, আমিরুদ্দিন, শফিকুন্নুর, আব্দুল হামিদ প্রমুখ শিল্পীগণ আসরে গান গাইতেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছিলাম, এত্তো বড় ডেসকি ভরা টাকা কোথায় যায়, কী হয় কীভাবে হয়। এ এক বিরাট কর্পোরেট বিজনিস। এমন কি মাজারের পাশের ভিক্ষুকেরা একটা কর্পোরেট নিয়ম মেনে চলে। ভক্তদের দান আগর বাতি, মোম বাতি, গোলাপ জল চার ভাগের এক ভাগ মাজারে ব্যবহার হয় আর বাকি তিন ভাগই আবার দোকানে ফেরত চলে চায়।
এক রাতে শাহ আব্দুল করিম সাহেব শারিরীক অসুস্ততার কারণে আসরে আসলেন না, আমি তাকে দেখতে তার রুমে চলে গেলাম। আলাপচারীতার এক পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম-
– চাচা, আপনার জুনিয়র, আপনার শিষ্যরা গান গেয়ে এতো টাকা রোজগার করছেন গরিব থেকে ধনী হয়ে যাচ্ছেন, আপনার তো কোনো পরিবর্তন দেখছিনা ব্যাপারটা কী?
– গান গেয়ে টাকা রুজী করবো সেই নিয়তে গান শিখি নাই গান গাইও না।
– তো গান লিখেন কেনো আর গান কেনো?
– গান লিখি মানুষের জন্যে আর গাই নিজের জন্যে। আমি মানুষের কথা গানে লিখি আমি গণজাগরণের গান গাই।
– গণজাগরণের গান? সেটা কী রকম?
– যেমন ধরো, ‘লাউ কুমড়া লাগাইও গো, ওগো ভাবী সময় আইছে’। এটি হলো কৃষি বিপ্লবের আহবান।
– আচ্ছা, আর কী লিখেছেন?
– ঐ যে, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এটি একটি অসাম্প্রদায়ীক চেতনার গান।
– এই গানে ‘অসাম্প্রদায়ীক চেতনার’ কথা কোন লাইনটায় আছে?
– ‘গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান/ মিলিয়া সকলে বাউলা গান গাইতাম’। এর পরে আছে, ‘হিন্দু বাড়িনতো, যাত্রা গান অইতো/ নিমন্ত্রণ দিতো, আমরা যাইতাম’। এখন তো হিন্দু বাড়িও নাই, যাত্রা গানও নাই। একদল মানুষ উঠে পড়ে লেগেছে হিন্দুদেরকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে। মানুষকে বুঝাতে হবে জাত-পাত বলতে কিছু নাই আমরা সবাই এক মায়ের সন্তান।
আরেকদিন আসরে গান শুরু হওয়ার আগে, সিলেটের বাউল জগতে রাতারাতি জনপ্রীয়তার শীর্ষে ওঠা তার এক শিষ্যকে তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘ভাতিজা, সুর চুরি করেছো তো করেছো এক্কেবারে গানের কথাগুলোও প্রায় নকল করে নিজের নামে চালিয়ে দিলে, এ কেমন চুরি’? ওস্তাদ যেমন সাগরিদও তেমন। শিষ্য উত্তর দেন, ‘চাচা, চুরি করলে তো বড় লোকের ঘরেই চুরি করা ভাল, কিছু দামী মাল টাল পাওয়া যাবে’। করিম সাহেব হেসে বললেন, ‘আচ্ছা অন্তত বলে কয়ে চুরি করলে হয় না?
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সাইকেল নিয়ে বের হতে যাবো, বড় ভাই নিষেধ করলেন বের হওয়া যাবেনা কারণ শহরের অবস্তা ভাল না। দূরে মাইকিং এর আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। খবর পেলাম আমাদের তাঁতি পাড়া বাসার পাশেই অবস্থিত ‘সিলেট সমাচার’ পত্রিকার অফিস মোল্লারা আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছে। আমার এক আত্মীয় ছোট ভাই তখন এম সি কলেজে পড়ে এবং পার্ট টাইম ‘সমাচার’ পত্রিকায় কাজ করে। ব্যাপারটা কী জানতে তাকে ফোন করলাম। সে বললো, ‘এখন টেলিফোনে কিছু বলা সম্ভব নয় আগে স্যারকে বাঁচাতে হবে, আজ রাতের মধ্যেই তাকে বর্ডার পার করে দিতে হবে’। সন্ধ্যার আগেই লিফলেট পোষ্টার ছাপা হয়ে গেছে, ‘আগামীকাল শহরে সকাল সন্ধ্যা হরতাল, সমাচার পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল আর এম সি কলেজের অধ্যাপক নাস্তিক আলাউদ্দিনের ফাঁসি চাই’। নাস্তিকদের বিরোদ্ধে জিহাদের ডাক দিয়েছেন কাজির বাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান বুলবুলি। তিনি তখন খেলাফতে মজলিসের সিলেট শাখার আমীর। ইতিমধ্যে মউলানা মউদুদীর ‘খেলাফত ও মুলকিয়াত’ বইয়ের সমালোচনা করে ‘সত্যের সন্ধানে’ নামে একটি বই লিখে প্রচুর সুনাম অর্জন করে নিয়েছেন। তসলিমা নাসরিনের মাথার দাম ৫০ হাজার টাকা ঘোষণা দিয়েছিলেন বিন লাদেনের সৈনিক এই আফগান ফেরত মৌলানা হাবিবুর রহমান। মাদ্রাসায় থাকতে তাকে আমি খুব নিকটে থেকে দেখেছি, ইংল্যান্ডেও দেখেছি আমার এক আত্মীয়ের বাসায়। যতদূর মনে পড়ে অধ্যাপক আলাউদ্দিন তার সেই প্রবন্ধে লিখেছিলেন- ‘ কোরআন আল্লাহর কালাম নয়,বরং এটা মানব রচিত পুস্তক। মুহাম্মদ তার অসাধরণ বুদ্ধি বলে মানুষকে হাসাইয়া কাঁদাইয়া,পাগল বানাইয়া একটি অদ্ভুত বই রচনা করেছিলেন’।
একজন আত্মীয় জামাতিকে জিজ্ঞেস করলাম তারা এই জিহাদে আছেন কি না? তিনি বললেন, ’বুলবুলি হুজুর যেখানে আছেন জামাত সেখানে নেই’। একাত্তরে সিলেট অঞ্চলে যত জায়গায় গনহত্যা হত্যা হয়েছে তার অনেকগুলোই করেছিল দেওবন্দী সিলসিলার ততকালীন জমিয়তে ইসলাম তথা কওমি মাদ্রাসার উস্তাদ ও ছাত্ররা। বাহাত্তরে তারা আত্মগোপনে চলে যায়, পরবর্তিতে খেলাফতে মজলিস ও হেফাজতে ইসলাম নাম ধারন করে। জমিয়ত, খেলাফত ও হেফাজত একই দলের ভিন্ন নাম।
রাত বারোটার মধ্যেই অনুমান করা গেল আগামীকাল সিলেট শহর কারবালার রুপ ধারণ করতে পারে। রাতের মধ্যেই দূর দূরান্তের কওমি মাদ্রাসার ওস্তাদ ছাত্রদের কাছে সংবাদ পৌছে যায়। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে সকাল আটটায় বাসার যুবক কর্মচারি আদিলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি শহরের অবস্তা জানতে। তখনো শহর পুরোপুরি জেগে উঠেনি, রাস্তায় মানুষের চলাচল নেই, গাড়ি রিক্সাও নেই। ধীরে ধীরে পায়ে হেটে জিন্দাবাজার পেরিয়ে হাসান মার্কেটের নিকটে এসে দেখি দলে দলে মাদ্রাসার ছাত্ররা শ্লোগান দিয়ে আসছে, তালতলা, কাজির বাজার ও কিন ব্রিজের দক্ষিন দিক থেকে। সাড়ে নয়টার মধ্যে সমস্ত সিলেট শহর হাজার হাজার মাদ্রাসার ছাত্রদের দখলে চলে যায়। ছাত্ররা ট্রাকে বাসে করে এসেছে বিশ পঁচিশ মাইল দূরের জগন্নাথপুর, রাণীগঞ্জ, শেরপুর এলাকার কওমি মাদ্রাসা থেকে। শান্তিপূর্ণ মিছিল চলছে ধীর গতিতে, কোথাও কোনো বাঁধা নেই বিশৃংখলা নেই। লক্ষ্য করলাম কিছু কিছু ছাত্র রাস্তায় পড়ে থাকা ইট পাথরের টুকরো তুলে নিয়ে লম্বা পাঞ্জাবীর পকেটে ঢুকাচ্ছে। কারো কারো পকেট বেশ বড় দেখাচ্ছে। পরে জানতে পেরেছি বড় বড় ইটের টুকরো আর মাঝারি ধরনের পাথর তারা নিজ নিজ মাদ্রাসা থেকেই পকেটে করে নিয়ে এসেছিল। হঠাৎ একটি মিছিল থেকে বেরিয়ে দুইজন ছাত্র হেসে হেসে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। আশ্চর্য, এরা এসেছে আমার গ্রামের মাদ্রাসা থেকে, যে মাদ্রাসায় আমি জীবনের মূল্যবান বেশ কয়েকটি বছর কাটিয়েছি। আমাকে চিনতে পেরে তারা খুশি। বাল্যকালের মাদ্রাসা জীবনের স্মৃতি মনে পড়ে যায়। খুব সরল সহজ এই মানুষগুলো। আমার দিকে এমন ভাবে তাকায় যেন আমি তাদের বহুদিনের হারানো আপন ভাই। ছোট্ট শিশুর মতো জিজ্ঞেস করে আমি দেশে কোন দিন এসেছি, কেমন আছি ইংল্যাংন্ড দেখতে কেমন ইত্যাদি। আমি বললাম এই সাত সকালে বাড়ি থেকে এসেছো নাস্তা টাস্তা কিছু করেছো? শরিফুল বলে, ধুর নাস্তা, পেটের ভুকে কলিজা জ্বলে যাচ্ছে’। আমি জানি এরা দুজনই গরিব পরিবারের সন্তান। বললাম চলো আমরা বন্দর বাজারের দিকে সরে যাই। মুজাক্কির সেই ছোটবেলায়ই একটু পাগলাটে ধরনের ছিল। আমার কানের কাছে এসে আস্তে করে বলে, ‘লন্ডনী আতর মাখানো সুগন্ধি সিগারেট আছে’? বন্দর বাজারের চিপা গলিতে রতন দা’র মিষ্টির দোকান, বাহির থেকে বুঝা যায় না খোলা আছে। নাস্তা খেতে খেতে মুজাক্কির বলে ‘সার্থক হইছে সিলেট আসা, এমন নরম নরম পরোটা আর গরম গরম রসমালাই দিয়ে নাস্তা জিন্দেগীতেও খাই নাই। আল্লাহর কাজে বাইর হইলে আল্লায় কী না খাওয়াইতে পারে। হঠাৎ শরিফুল জিজ্ঞেস করে-
– ভাইয়া তোমাদের বাসায় ভাঙ্গা ইট পাথর আছে?
– কেন?
– শয়তান মারবো শয়তান।
– শয়তান তো মক্কায় থাকে, হাজীরা সেখানে শয়নতাকে পাথর মারে, এখানে শয়তান পাবে কোথায়?
– আরে ঐ আলাউদ্দিন শয়তান, এম সি কলেজের প্রফেসর আলাউদ্দিন।
– তোমরা খামোখা কষ্ট করে এতোদূর এসেছো, আমি শুনেছি উনি এখন দেশের ভিতরে নেই, কাল রাতেই ইন্ডিয়া চলে গেছেন।
সম্ভবত তখন ঘড়ি দশ কি সাড়ে দশটা হবে। আমরা তখন সুরমা মার্কেট ট্রাফিক পয়েন্টের সামনে দাঁড়িয়ে। একটি পুলিশ ভর্তি ট্রাক সার্কেট হাউসের গেইটের সামনে অবস্থান করছে। বেশ কিছু মাদ্রাসার ছাত্র এখানে জড়ো হয়ে গেছেন আরো কিছু ট্রাক ভর্তি ছাত্র দক্ষিণ থেকে ব্রিজ পার হয়ে এদিকে আসছে। ভিড় থেকে হঠাৎ একজন ছাত্র পুলিশের ট্রাকের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারে। সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর ছাত্র ইট পাটকেল মারতে থাকে সরাসরি পুলিশের উপর। প্রচন্ড বেগে একটি ইট এসে পড়লো একজন পুলিশের মাথার বাম পার্শে। নিজের চোখের সামনে দেখলাম পুলিশের মাথা বেয়ে রক্ত ঝরছে, এক পর্যায়ে উনি আর খাড়া থাকতে পারলেন না। আচমকা বিদ্যুত বেগে শহরের চেহারা বদলে যায়। চতুর্দিক থেকে পুলিশের হুইসেল, সার্কেট হাউস আর কুদরত উল্লাহ মার্কেটের দিক থেকে গুলির শব্দ শোনা গেল। আকাশে বাতাসে বৃষ্টির মতো গুলির ছোঁড়াছুড়ি, মানুষ ছত্রভঙ্গ হয়ে যে যে দিকে পারে দৌড়াতে থাকে। আমার গৃহকর্মী আদিল আমাকে ছেড়ে যায়নি সে আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। সে জানে আমাদের বাসায় তার বয়স পাঁচ বছর আর আমার বয়স দুই মাস। জীবনে সান্ধ্য আইন কাকে বলে বাস্তবে দেখিনি, বন্দুকের গুলি আর টিয়ার গ্যাস কেমন হয় চোখে দেখিনি এই প্রথম দেখলাম একটি গুলি আমার পায়ের কাছে আগুনের ফুলকির মতো জ্বলে উঠলো। আদিল কীভাবে আমাকে টেনে হেঁচড়ে সার্কেট হাউসের সম্মুখ থেকে তালতলা হয়ে মির্জা জঙ্গলের কারো বাসার সামনে দিয়ে কারো বাড়ির পেছন দিয়ে, রিকাবি বাজার পেরিয়ে সাগর দিঘীর পাড়ে আমাদের এক আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে এলো তা একমাত্র সে’ই জানে। আমাকে এখানে রেখে সে একাই আমাদের বাসায় চলে যায় আমার জীবীত থাকার সুসংবাদ দিতে। রাত দশটায় সংবাদ এলো শহরে সান্ধ্য আইন জারী আছে বাসায় ফেরা যাবেনা। পরের দিন খবর বেরুলো, গতকাল জিন্দাবাজার এলাকায় একজন হিন্দু পথচারী পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়েছেন আর পঞ্চাশ জনের মতো মুসলমান আহত হয়েছেন।
কাজির বাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মউলানা হাবিবুর রহমানকে আমার কোনোদিনই ভাল লাগতোনা। চেহারায় চোখের চাহনীতে একটা সন্ত্রাসীভাব, কথাবার্তায় খুবই এরোগ্যান্ট দাম্ভিক বেয়াড়া টাইপের মানুষ মনে হতো। আওয়ামী লীগের বিরোদ্ধে রাতদিন বিষোদাগার করতেন। জামাতীদেরকে মুনাফেক বেদাতী বলে গালাগালি করতেন। অথচ আওয়ামী লীগ যখন নৌকার টিকেট দিবে বলে ক্ষমতার মূলা দেখালো তিনি তার মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার প্রচলন শুরু করে দিলেন। পরবর্তিতে আবার তার জানের শত্রু জামাতীদের সাথে লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে তাকে একই মঞ্চে দেখা গেলো। বেশ কয়েকবার ইংল্যান্ডে তার সাথে দেখা হয়েছে কোনোদিনই নীরবে একা পাইনি। বড় সাধ ছিল তাকে জিজ্ঞেস করার, সেদিন সিলেটে একজন পুলিশ মারাত্বকভাবে জখম হলেন তার অপরাধটা কী ছিল, একজন পথচারী হিন্দু মারা গেলেন তিনি হয়তো তার পরিবারের একমাত্র রোজগার ছিলেন, দিন আনে দিন খায় রিক্সাওয়ালাদের সারা দিনের রুজী বন্ধ হলো, দোকানদারদের দোকান পাট বন্ধ রইলো তাদের ব্যবসার ক্ষতি হলো, যানবাহনের কারণে রুগীরা কষ্ট পেলো, পঞ্চাশজন নিরপরাধ মানুষ আহত হলো, এতে কার কী লাভটা হলো, এর জন্যে দায়ী কে, এ নিয়ে তার অভিমতটা কী? দূর্ভাগ্য তাকে আর কোনোদিন প্রশ্নগুলো করা যাবেনা, কিন্তু তার দল তার খেলাফত জমিয়ত হেফাজতীরা আছেন তারা কেউ কি বলতে পারবেন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কী?
ঘটনা কি ২০০৬ সালের দিকে? জানতে চাই। প্রফেসর আলাউদ্দিন স্যার এখন কোথায় থাকেন?
ঘটনার সময়টা জানতে চাই। প্রফেসর আলাউদ্দিন স্যার এখন কোথায়?
১৯৮১ সালের ঘটনা। সম্ভবত দিনটি ছিল ২রা মার্চ মঙ্গলবার। প্রফেসর আলাউদ্দিন এখন কোথায় আছেন জানিনা।
@ আহমেদ শাহাব,
” একাত্তরে সিলেট অঞ্চলে যত জায়গায় গনহত্যা হত্যা হয়েছে সবগুলোই করেছিল দেওবন্দী সিলসিলার ততকালীন জমিয়তে ইসলাম তথা কওমি মাদ্রাসার উস্তাদ ও ছাত্ররা।” মন্তব্যটি সর্বাংশে সত্য নয় “।
সহমত, ‘সবগুলো’ লেখা ঠিক হয়নি, বাক্যটি এডিট করে দিয়েছি। শ্রীরামিসির গনহত্যায় গহর পুরের মুহাদ্দিসের সাথে হবিব পুরের জামাতী আহাদও ছিল। গহর পুরের মুহাদ্দিস নুরুদ্দীন, শের পুরের কালা মউলুভি, কাতিয়ার মউলানা আমিন উদ্দীন এবং আমার দেখা পরিচিত কউমি মাদ্রাসার ওনেক ওস্তাদ ছাত্রদের জানি যারা রাজাকার ছিলেন এবং পাকিস্তানিদের পথ প্রদর্শক ছিলেন। এরা যদি বাঙ্গালি হত্যার উদ্যোগ না নিতেন পাকিস্তানিরা গ্রামাঞ্চলে যেতেই পারতোনা। আপনার দীর্ঘ মন্তব্য থেকে অনেক তথ্য জানা গেল, এ নিয়ে কোনো লেখা আপনার আছে?
না,কোনো লেখা আমার নেই তবে খুব ইচ্ছে আছে শ্যামাপ্রসন্ন দাশগুপ্ত মৌলান ইসমাইল এবং সৈয়দ কামরুল হাসানের প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু লেখার।আমি কতকগুলো তথ্য পাওয়ার প্রতিক্ষায় আছি।তথ্য পেলেই লিখব।ধন্যবাদ।
আপনার ” একাত্তরে সিলেট অঞ্চলে যত জায়গায় গনহত্যা হত্যা হয়েছে সবগুলোই করেছিল দেওবন্দী সিলসিলার ততকালীন জমিয়তে ইসলাম তথা কওমি মাদ্রাসার উস্তাদ ও ছাত্ররা।” মন্তব্যটি সর্বাংশে সত্য নয়।তাছাড়া গণহত্যা কোনো মাদ্রাসা শিক্ষক বা ছাত্র করেনি করেছে হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যরা, দালাল ও রাজাকারগণ সহযোগিতা করেছে।আর এই সহযোগিতার কাজটি শুধু কওমীপন্থীরা করেছে একথা ঢালাওভাবে বললে সত্যের অপলাপ হবে এবং তাতে অনেক জামাতি এবং আহলে সুন্নতপন্থী কার্লপ্রিটদেরকে কালিমামুক্ত করার প্রয়াস হিসেবে সমান নিন্দিত হবে। এখানে দু একটা দৃষ্টান্ত দেয়া প্রয়োজন মনে করছি। আহলে সুন্নত জামাতের বড় গুরু ফুলতলির মৌলানা আব্দুল লতিফ একজন কুখ্যাত রাজাকার ছিলেন। তার এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা যায় প্রতিটি আর্মি অপারেশনে এই মৌলানা হানাদারদের জীপে সামনের সিটে বসে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করতেন।তার সহকারী নবীগঞ্জের মৌলানা ইসমাইল নবীগঞ্জের গণহত্যার প্রধান হুতা ছিলেন।এই মৌলানা ইসমাইলই হবিগঞ্জ থেকে নৌকা বোজাই হানাদারদের পথপ্রদর্শক ছিলেন।স্বাধীনতার পর এই দুই কার্লপ্রিটকে দালাল আইনে বন্দি করা হয়েছিল এবং সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে এক কামরায় অনেকদিন কাটিয়েছিলেন।পরিতাপের বিষয় বন্দি থাকা অবস্থায় এদেরকে দেখতে আসা ভক্তদের আনা পান সুপারি ও ফল ফলাদির স্তুপ জমে যেত। কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর মৌলানা ইসমাইল গুরুকে ত্যাগ করে জামাতে ইসলামে যোগদান করেন।
হবিগঞ্জের সৈয়দ কামরুল হাসান নেজামে ইসলাম থেকে ১৯৭০এর নির্বাচনে এম এন এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। স্বভাবতই তিনি পাকিস্তনপন্থী কোলাবরেটর ছিলেন আবার এই কামরুল হাসানই যুদ্ধের সময় শত শত হিন্দু পরিবারকে আশ্রয় দিয়ে হাজার হাজার সংখ্যালঘুর জীবন রক্ষা করেন।কিন্তু স্বাধীনতার পর দালালীর ঢালাও অভিযোগে তিনিও দালাল আইনে বন্দি হন। সৈয়দ কামরুল হাসানকে দালাল আইনে বন্দি করার ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি নবীগঞ্জের প্রখ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামা প্রসন্ন দাশগুপ্ত ওরফে বিধুবাবু।তিনি এতে এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে কামরুল হাসানের পক্ষে তদ্বির করার জন্য তিনি ঢাকা ছুটে যান এবং স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ পর্যন্ত করেন। এটা সত্যি এক বিরল ঘটনা। এই কথাগুলো জানি কেউ লিখবেনা এখানে প্রসঙ্গক্রমে সত্যের পেছনের কয়েকটি সত্য উল্লেখ করলাম। মুক্তিযুদ্ধ একটি সেন্সিটিভ ব্যাপার এবং এর ইতিহাসও অনেক জটিল।এখানে একটি ভুল উক্তি বা তথ্য নিরপরাধ কারো জীবনকে যেমন ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করতে পারে তেমনি কোনো অপরাধীকেও দায়মুক্তি দিয়ে দিতে পারে যার কোনোটিই কাম্য নয়।তাই মুক্তিযুদ্ধে ব্যক্তি সংঘটন বা গোষ্টির ভূমিকা চিহ্নিত করতে হলে আমাদিগকে অতি সতর্কতার সাথে অগ্রসর হতে হবে। আপনার স্মৃতিচারন ভাল লেগেছে এজন্য ধন্যবাদ নেবেন।
@ কাজী রহমান,
সকল পর্বের লিংক যুক্ত করে দিয়েছি দাদা।
ছবির মত বর্ণনা। আগের পর্বগুলোর লিঙ্কগুলো দিয়ে দিলে ভাল হাত, একসাথে পড়া যেত সব।