লিখেছেন: গাজী ইয়াসিনুল ইসলাম

ফ্রিডম্যান ও মহাবিশ্বের জ্যামিতিক গঠন :
আলেকজান্ডার ফ্রিডম্যান (Alexander Friedmann, ১৮৮৮-১৯২৫) ছিলেন রাশিয়ান গণিতবিদ ও পদার্থবিদ । তিনি আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরী অফ রিলেটিভিটি ব্যবহার করে একটি সমীকরণ দাঁড় করান যা ফ্রিডম্যান সমীকরণ নামে পরিচিত। এই সমীকরণ ব্যবহার করে তিনি দেখান যে মহাবিশ্বের তিনটি জ্যামিতিক পরিণতি হতে পারে-
ক. মহাবিশ্ব হতে পারে সমতল (Flat) : যদি মহাবিশ্বের গড় ঘনত্ব (ρ_ο) একটি ক্রিটিকাল ভ্যালুর (ρ_c) এর সমান হয় তবে মহাবিশ্বের ম্যাটার ডেনসিটি প্যারামিটার, Ω_M= 1 হয় । তখন মহাবিশ্ব হবে সমতল। এবং তা আজীবন সম্প্রসারনশীল থাকবে। মহাবিশ্ব হবে সীমাহীন।
খ. মহাবিশ্ব হতে পারে হাইপারবোলিক (Hyperbolic- ঘোড়ার জীনের মত অন্যদিকে বাকানো) মহাবিশ্বের গড় ঘনত্ব ক্রিটিকাল ভ্যালুর থেকে কম হলে Ω_M < 1 হয় । তখন মহাবিশ্ব হবে হাইপারবোলিক। মহাবিশ্ব আজীবন সম্প্রসারণশীল থাকবে। গ. মহাবিশ্ব হতে পারে গোলাকার (Spherical) : মহাবিশ্বের গড় ঘনত্ব ক্রিটিকাল ভ্যালুর বেশী হলে Ω_(M )>1 হয় । তখন মহাবিশ্ব হবে বদ্ধ (Closed) গোলকের ন্যায়। মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে হতে এক সময় আবার সংকুচিত হওয়া শুরু করবে এবং এক বিন্দুতে চুপসে যাবে
(Big Crunch)


ছবি-মহাবিশ্বের জ্যামিতিক গঠন
তখন মহাবিশ্বের ডেনসিটি প্যারামিটারের মান জানা ছিল না বলে মহাবিশ্বের প্রকৃত জ্যামিতিক গঠন বলা সম্ভব হয়নি। তবে এটা নিশ্চিত ছিল যে মহাবিশ্বের দুটি পরিণতি হতে পারে- মহাবিশ্ব আজীবন সম্প্রসারণশীল থাকবে অথবা সংকুচিত হয়ে চুপসে যাবে। যাই হোক না কেন মহাবিশ্ব স্থির (Static) নয়।

ফ্রিডম্যান ও বিগ ব্যাঙ্গ :
ফ্রিডম্যানের ধারনা মতে যদি মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল হয় তবে সব ছায়াপথ (Galaxy) একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সুতরাং কোন এক সময়, অনেক কাল আগে ছায়াপথ গুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব ছিল শূন্য।এই সময়কেই আমরা বলি বিশ্ব ব্যাঙ্গ । সুতরাং ফ্রিডম্যানের চিন্তা থেকেই বিগ ব্যাঙ্গ ধারনার উৎপত্তি। তার ধারনা ঐ সময়ের অনেকেই অনুধাবন করতে পারেননি। কিন্তু পরে তার চিন্তার যৌক্তিকতা সবাই বুঝতে পারে। তার সমীকরন এখনো কসমোলজিতে গুরুত্বের সাথে পড়ানো হয়। তিনি অতি অল্প বয়সে টাইফয়েড আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

আইনস্টাইনের সবচেয়ে বড় ভুল :কসসোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট
মহাবিশ্ব সম্পর্কে বহু ধারণারই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু একটি ধারনা সেই এরিস্টটল থেকে নিউটন, আইনস্টাইন পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন। তারা পরিবর্তনশীল মহাবিশ্বে বিশ্বাস করতেন না। তারা বিশ্বা করতেন মহাবিশ্ব সংকুচিত বা প্রসারিত হচ্ছে না। মহাবিশ্ব চিরকালই অপরিবর্তনীয় (Static)। কিন্তু জেনারেল রিলেটিভিটির ফিল্ড সমীকরণ থেকে এমন সিদ্ধান্তে যাওয়া যায় যে মহাবিশ্ব মোটেই অপরিবর্তনীয় (Static) নয়। মহাবিশ্ব হয় সম্প্রসারিত হচ্ছে নতুবা সংকুচিত হচ্ছে, স্থির নয়। আইনস্টাইন কুসংস্কার মুক্ত ছিলেন না। অপরিবর্তনীয় মহাবিশ্বের কুসংস্কার ধরে রাখতে তিনি তার সমীকরনে পরিবর্তন আনলেন। আইনস্টাইনের সমীকরনকে এইভাবে লেখা যায়-
মহাবিশ্বের জ্যামিতিক গঠন = পদার্থ (ভর) +শক্তি
আইনস্টাইন নতুন একটি ধ্রুবক সমীকরণে যোগ করলেন। এটি এন্টি গ্রাভিটি বল হিসাবে কাজ করে গ্রাভিটির আকর্ষনীয় বলকে প্রতিরোধ করে। ফলে মহাবিশ্ব অপরিবর্তনীয় থাকতে পারবে। আইনস্টাইন এর নাম দিলেন কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট এবং তাকে গ্রীক অক্ষর ল্যামডা, Λ, দিয়ে চিহিৃত করলেন। এখন Λ কে উপরের সমীকরণে বাম পাশে (জ্যামিতিক গঠন) রাখলে তা গাণিতিক ত্রুটি সংশোধনের জন্য ধ্রুবক বলেই মনে হয়। কিন্তু একে সমীকরণের ডান পাশে (ভর ও শক্তির সাথে) যক্ত করলে Λ কে মহাবিশ্বের ভর শক্তির আরেক উৎস বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে Λ মহাবিশ্বের শূন্য স্থানের সাথে সম্পর্কিত এক ধরনের (গ্রাভিটেশনালী) বিকর্ষিক বল হিসাবে প্রতীয়মান হয়। এই বল দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়।
আইনস্টাইনের ধারনা এই ছিল যে, ঐ বল গ্রাভিটির আকর্ষনকে প্রতিহত করে মাহবিশ্বকে একটি অপরিবর্তনীয় (Static) সাম্যবস্থায় রাখবে, ঠিক গ্যাসে/বাতাসে ভরা একটি টায়ারের মত। টায়ারের ভিতরের বাতাস বাইরের দিকে প্রেসার দিয়ে, সম্প্রসারিত রাবারের (রাবারের তৈরি টায়ার) ভেতরের দিকে দেওয়া বলকে প্রতিহত করে। ফলে তা নির্দিষ্ট আকার বজায় থাকে।
কিন্তু আইনস্টাইনের কনসোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট অপরিবর্তনীয় মহাবিশ্ব গঠন করতে পারল না। গ্রাভিটি দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে কমে এবং Λ দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে। ফলে মহাবিশ্ব অতি সামান্য বড় হলে Λ বাড়বে এবং গ্রাভিটি কমবে। Λ ও গ্রাভিটির সাম্য নষ্ট হবে এবং মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হবে। মহাবিশ্ব অতিসামান্য ছোট হলে তা সংকুচিত হতে শুরু করে। ফলে আইনস্টাইনের অপরিবর্তনীয় মহাবিশ্বের আশা গাণিতিক ভাবে আর ঠিকল না। তবে তিনি Λ কে সমীকরণ থেকে আর বাদও দিতে পরলেন না কারন Λ কে রেখে, তার মান শূন্য বা শূন্য না রেখে (Zero or Non zero) নানান মজার মহাবিশ্বের মডেল তৈরি করা গেল।
পরবর্তীতে হাবল সম্প্রসারনশীল মহাবিশ্বের ধারনা পর্যবেক্ষন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করলেন। আইনস্টাইন কসসোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টকে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল(Biggest Blunder) বলে আখ্যায়িত করলেন
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে গবেষণায় দেখা গেছে শূন্য স্থানের সাথে সম্পর্কিত একধরনের এন্টি গ্রাভিটি বল রয়েছে যা মহাবিশ্বকে আরো দ্রুত সম্প্রসারিত করছে। একে বলা হয় ডার্ক এনার্জি। তাহলে আইনষ্টাইনের ধারনা একেবারে ভুল ছিল না। এ সম্পর্কে পরে আলোচনা করব।
কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট ব্যবহার করে অনেকে মহাবিশ্বের বিভিন্ন মডেল দাড় করান। আইনস্টাইন-ডি সিটার (Einstein-de Sitter) মডেলে কসমোলজিক্যাল কনসাল্ট্যান্ট এর মান ধরা হয় শূন্য। এই মডেল অনুসারে মহাবিশ্বের জ্যামিতিক গঠন হবে সমতল এবং মহাবিশ্ব আজীবন সম্প্রসারণশীল থাকবে।

লেমেটারের আদি কণা:
১৯২৭ সালে জর্জ লেমেটার (Georges Lemaitre) একটি মডেল প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাব অনুসারে কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের মান একটি ক্রিটিক্যাল মানের থেকে সামন্য বেশী। এতে দেখা যায় মহাবিশ্বের জ্যামিতিক গঠন হবে গোলকাকার (Spherical) । মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল থাকবে এবং এক সময় তা স্থির হবে (Hovering) এবং স্থির কাল পার হয়ে আবার তা সম্প্রসারণশীল হবে। লেমেটারের মডেল অনুসারে মহাবিশ্ব অসীম ঘনত্বের (Infinite Density) একটি অবস্থা থেকে শুরু হয়। যাকে লেমেটার নাম দেন Primeval Atom বা আদি কণা। লেমেটার এই ধারনাটি গুরুত্বের সাথে প্রচার করেন। এই ধারণাই বিগ ব্যাঙ্গ থিওরী (Big Bang Theory) হিসাবে পরবর্তীতে প্রচার পায় । বিগ ব্যাঙ্গ শব্দটি ব্যবহার করেন Fred Hoyle । একটি অসীম ঘনত্বের এবং উচ্চতাপমাত্রার অবস্থান থেকে মহাবিশ্বের সূচনা এই ধারনাই বিগব্যাঙ্গ থিওরীর মূল কথা।

মহান বিজ্ঞানীদের কুসংষ্কার :
মহাবিশ্ব স্থির নয় বরং সম্প্রসারণশীল- এই ধারনা আইনস্টাইনের সমীকরণ থেকেই পাওয়া যায়। যা আলেকজান্ডার ফ্রিডম্যান দেখিয়েছেন। কিন্তু আইনস্টাইন নিজের সমীকরণকেই নিজেই বিশ্বাস করেন নি। তিনি নিজেকে কুসংস্কার মুক্ত করতে পারলেন না।
তিনি মহাবিশ্বকে স্থির (Static) রাখতে সমীকরণে পরিবর্তন করেন। কিন্তু ১৯২৯ সালে হাবলের আবিষ্কারের পর প্রমাণ হল মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল। আইনস্টাইন নিজেই এ কথা বলতে পরতেন তার সমীকরণ থেকে। এটি হতো মনব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ভবিষ্যবানী।
বিগ ব্যাঙ্গ থিওরীর মূল ধারনা ফ্রিডম্যান সমীকরণ থেকেই পাওয়া যায়। আমরা বিগ ব্যাঙ্গ থিওরীর প্রবক্তা হিসাবে লেমেটারের নাম জানি। ধারনা করা হয় ফ্রিডমানের কাজ সম্পর্কে লেমেটারের কোন ধারনা ছিল না। তারা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের ধারনা প্রকাশ করেন। ফ্রিডম্যান ছিলেন মুক্ত চিন্তার গবিতবিদ। তিনি তার সমীকরন বিশ্বাস করতেন। দুর্ভাগ্য তিনি অতিঅল্প বয়সে মারা যান। একজন ধর্মজাজক হিসাবে লেমেটার ও কুসংস্কার মুক্ত ছিলেন না। আমরা জানি একজন মুক্তাচিন্তায় মানুষ হয়েও আইনস্টাইন কুসংস্কার (নিজের সমীকরনের ফলাফল বিশ্বাস করেন নি -এই অর্থে) মুক্ত ছিলেন না ।

হাবল ও লাল বিচ্যুতি (Red Shift):
আলোর বিচ্ছুরণ:
নিউটন দেখিয়েছেন যে, আলোর যদি কোন ত্রিভুজ আকৃতির কাচের (প্রিজম) মধ্যে দিয়ে যায় তাহলে সেটি বর্ণালীতে ভাগ হয়ে যায়। বর্ণালীর একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ও কম্পাঙ্কের আলো মানুষের চোখ দেখতে পায়। যাকে আমরা বলি দৃশ্যমান বর্ণালী। এর এক দিকে আছে কম কম্পাঙ্কের (অর্থাৎ বেশী তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে; কারণ λ = 1/f এখানে λ =তরঙ্গদৈর্ঘ্য, f = কঙ্পাঙ্ক ) লাল আলো অন্যদিকে আছে বেশী কম্পাঙ্গের ( অর্থাৎ কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের) নীল আলো
নক্ষত্রের আলোর বিচ্ছুরণ:
নক্ষত্ররাজি আমাদের অনেক অনেক দূরে অবস্থিত। আমরা তাদের আকার আকৃতি কিছুই দেখতে পাইনা। তাদের শুধু বিন্দু বিন্দু আলোর কণা হিসাবে দেখতে পাই। আলোর তীব্রতা ও বর্ণালী বিচ্ছুরণ থেকে আমরা নক্ষত্রের দূরত্ব, বয়স, কী কী রাসায়নিক দিয়ে গঠিত তা জানতে পারি।

এডুইন হাবল :
আমেরিকান জ্যোতিষবিজ্ঞানী এভুইন হাবল ১৮৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন তার দুটি পর্যবেক্ষণের জন্য। ১৯১৯ সালে তিনি ক্যালিফোনিয়ার মাউন্ট ইউলসন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (Mount Wilson Observatory) যোগ দেন। ঐ বছরই সেখানে ১০০ ইঞ্চি হুকার টেলিস্কোপ বসানো হয়।
তিনি এই টেলিস্কোপ ব্যবহার করে সর্ব প্রথম ধারনা দেন যে মহাবিশ্বে শুধু মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সী নয় আরো অনেক গ্যালাক্সী আছে। পূর্বে ধারনা ছিল মিল্কিওয়েই একমাত্র গ্যালাক্সী এবং অনেক দূরের গ্যালাক্সীকে বিজ্ঞানীরা নেবুলা মনে করত। মহাবিশ্ব অনেক অনেক বড়, ধারণার থেকেও বড়, এটা বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করা শুরু করলেন।
হাবলের আরো একটি পর্যবেক্ষণ ছিল মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি টেলিস্কোপে দেখা বিভিন্ন গ্যালাক্সীর বর্ণালী পর্যবেক্ষণ করেন এবং আলোক তীব্রতা (Luminosity) থেকে তাদের দূরত্ব হিসাব করেন। তিনি দেখলেন যে গ্যালাক্সী গুলোর আলো বর্ণালীর লাল প্রান্তের দিকে বিচ্যুত হয় (Red Shift)। ১৯২৯ সাল পর্যন্ত তিনি ১৮ টি গ্যালাক্সীর দূরত্ব ও বর্ণালী পর্যবেক্ষণ করেন। সবগুলোর বর্ণালীই লাল বিচ্যুতি (Red Shift) দেখায় এবং তিনি আরো দেখলেন যে, যে গ্যালাক্সীর দূরত্ব যত বেশী তার লাল বিচ্যুতি তত বেশী।
লাল বিচ্যুতি ও ডপলার ইফেক্ট :
দূরবর্তী গ্যালাক্সী থেকে আস আলো কেন বর্ণালীর লাল দিকে বিচ্যুত হয়? ডপলার ইফেক্ট বিবেচনা করলে তা ব্যাখ্যা করা সহজ। রাস্তায় দাঁড়ালে দূরের কোন গাড়ির হর্ণ শোনা যায়। গাড়িটি যতই কাছে আসে। শব্দ ততই তীব্র হয়। আকার আবার ক্রস করে যখন দূরে যেতে থাকে তখন শব্দের তীব্রতা কমে আসতে থাকে। উৎস যতই নিকটে আসে শব্দের কম্পাঙ্গ ততই বাড়ে (তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ততই কমে, λ = 1/f) ফলে তীব্র থেকে তীব্রতর শব্দ শোনা যায়। উৎস যতই দূরে যেতে থাকে শব্দের কমাঙ্ক ততই কমে ফলে তীব্রতা কমতে থাকে। আলোও তরঙ্গের ন্যায় আচরণ করে। উৎস যদি নিকটে আসে তবে তার কম্পাঙ্ক বাড়বে এবং উৎস যদি আরো দূরে সরে যায় তাহলে কম্পাঙ্ক কমবে। দূরবর্তী আলোর উৎস যদি দূরে সরে যায় তাহলে তার কম্পাঙ্ক কমবে (তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বাড়বে) অর্থাৎ আলো বর্ণালীর লাল দিকে বিচ্যুতি দেখাবে। সুতরাং হাফলের প্রাপ্ত লাল বিচ্যুতি (Red Shift) মানে গ্যালাক্সী গুলো আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ডপলার ইফেক্ট দিয়ে লাল বিচ্যুতি ব্যাখ্যা সহজ হলেও তা সঠিক নয়।
কসমোলজিকাল রেডশিফ্ট:
লাল বিচ্যুতি ব্যাখ্যা করতে হলে আমাদের ধরে নিতে হবে মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। দূরবর্তী নক্ষত্র থেকে আলো (ফোটন) আমাদের দিকে আসছে। আলো মহাবিশ্বের মধ্যে দিয়ে নির্দিষ্ট গতিতে যাত্রা করে। যেহেতু মহাবিশ্বের প্রতিয়িনত সম্প্রসারিত হচ্ছে সেহেতু আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সম্প্রসারিত হবে। এই আলো যখন আমাদের চোখে পৌঁছায় তখন আমরা বেশী তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে দেখতে পাই যা লাল বিচ্যুত মনে হয়। আলো যত বেশী সময় (যত বেশী দূরত্ব অতিক্রম করে) নেয় দূরবর্তী তারা থেকে আসার জন্য তা তত বেশী লাল বিচ্যুতি দেখায়। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কারণে যে লাল বিচ্যুতি দেখা যায় তাকে কসমোলজিক্যাল রেডশিফট বলে (Cosmological Redshift)। এটি ডপলার ইফেক্ট নয় কারন ডপলার ইফেক্ট হয় কোন বস্তুর গতির কারনে এবং কসমোলজিক্যাল রেডশিফট হয় মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের ফলে।
সুতরাং হাবলের পর্যবেক্ষণের লাল বিচ্যুতির কারণ এই যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারনশীল এবং এ কারণেই গ্যালাক্সীগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এটি ছিল লক্ষ শতাব্দীর যুগান্তকারী আবিষ্কারের একটি। নিউটন, আইনস্টাইন যে অপরিবর্তনীয় (Static) মহাবিশ্বে বিশ্বাস করতেন তা ভুল প্রমাণিত হল ।

ছবি – কসমোলজিকাল রেডশিফ্ট
হাবল ল (Hubble Law)
যে গ্যালাক্সীর দূরত্ব যত বেশী তার লাল বিচ্যুতি তত বেশী। অর্থাৎ যে গ্যালাক্সী যত দূরে সে তত দ্রুত আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
V=H_0 d এখানে, V= গ্যালাক্সীর গতি, d = পৃথিবী থেকে দূরত্ত্ব, H_0= হাবল কনস্ট্যান্ট হাবল কনস্ট্যান্ট আসলে সত্যিকারের কোন কনস্ট্যান্ট নয় কারন মহাবিশ্ব সম্প্রসারনের হার সব সময় এক ছিল না।

কিছু প্রচলিত জিজ্ঞাসা ও ভুল ধারনা :
১. মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে এর অর্থ কী?
মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের অর্থ হল মহাবিশ্বের গঠন বা বুননের (Fabric of Cosmos) সম্প্রসারণ। একটা এনালজি ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা চকলেট চিপ কেক বা বিস্কিট খেয়েছি (কেকের মধ্যে চকলেটের দানা ডুবানো থাকে)। বেকিং এর সময় কেক বা বিস্কিট ফুলে যায় এর ফলে চকলেট চিপের দূরত্ব বাড়ে। তেমনি মহাবিশ্ব সম্প্রসারণে গ্যালাক্সী গুলোর দূরত্ব বাড়ে। ছবি-
অন্য একটি এনালজি ব্যবহার করা যেতে পারে বোঝানোর জন্য। ধরা যাক একটি রূমে ৩টি সারিতে, প্রতিটিতে ৪টি করে মোট ১২ টি চেয়ার আছে। এই রূমের মেঝে যদি সম্প্রসারিত হয় (সবদিকে এমন সমানভাবে) তাহলে চেয়ার গুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব বাড়বে। চেয়ার গুলোর দূরে সরে যাওয়া নিজেদের গতির জন্য নয় বরং মেঝের সম্প্রসারণের ফল। তেমনি গ্যালাক্সী গুলো মহাবিশ্বের বুননের (Fabric of Cosmos) সম্প্রসারণের কারনে দূরে সরে যাচ্ছে একে অপর থেকে। গ্যালাক্সীর গতির কারণ মহাবিশ্বের সম্প্রাসারণ তাদের নিজস্ব কোন মেকানিজম নয়।

২. গ্যালাক্সী ক্লাস্টার গুলো কী ছড়িয়ে যাচ্ছে?
গ্যালাক্সী সাধারণত একটি ক্লাস্টার বা গুচ্ছ গঠনর করে অনেকে একসাথে অবস্থান করে। প্রথমে সম্প্রসারিত মহাবিশ্ব ক্লাস্টারের গ্যালাক্সী গুলোকে একে অপর থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু গ্রাভিটির কারণে গ্যালাক্সী গুলো নির্দিষ্ট অবস্থায় বজায় রাখতে চায়। ফলে তারা নির্দিষ্ট আকারে মধ্যে স্থির হয়। ক্লস্টারে থাকা গ্যালাক্সী গুলোর পারস্পরিক গ্রাভিটির কারনে তাদের নিজস্ব গতি থাকে ।

৩. মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের ফলে কী সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব বাড়ছে?
এটা বোঝা গুরুত্ত্বপূর্ণ যে, মহাবিশ্বের সম্প্রাসরণ হয় মূলত গ্যালাক্সী ক্লাস্টার গুলোর মধ্যবর্তী বিশাল শূন্যস্হানে। এর ফলে গ্যালাক্সী বা গ্যালাক্সী ক্লাস্টার (Clusters) দূরে সরে যায়, তাদের মধ্যকার স্হান (Space) সম্প্রসারিত হয় কিন্তু গ্যালাক্সী বা গ্যালাক্সী ক্লাস্টার গুলো সম্প্রসারিত হয় না। যেমন উপরের এনালজিতে চকলেট চিপ বা চেয়ার সম্প্রসারিত হয় না, কেক বা রুমের মেঝে সম্প্রসারিত হয়। আইনস্টাইন ও অন্যান্যরা এটা প্রমাণ করেছেন যে, যে সকল বস্তু সমূহ নিজেদের গ্রাভিটির কারনে একটা অবস্থান তৈরি করে (যেমন- গ্যালাক্সী, গ্যালাক্সী ক্লাস্টার ), তারা সব সময় ঐ অবস্থান বজায় রাখে। মহাবিশ্বের ঐ ছোট জায়গাটুকু সম্প্রসারিত হয় না। গ্যালাক্সী গ্রাভিটি দ্বারাই এই অসম্প্রসারিত স্পেস তৈরি করে। এ কারণেই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের ফলে পৃথিবী থেকে সূর্য দূরে সরে যাচ্ছে না। পৃথিবী বা আমাদের দেহ প্রতিনিয়ত বড় হয়ে যাচ্ছেনা। কেবল অনেক দূরে থাকা গ্যালাক্সী গুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
৪. সব গ্যালাক্সীই কি দূরে সরে যাচ্ছে?
হবল ল নিয়ে প্রচলিত একটা ভুল ধারনা আছে। হাবল ল থেকে সহজেই মনে হতে পারে সকল গ্যলাক্সীই দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু এটা ক্লাস্টারে থাকা গ্যালাক্সী গুলোর জন্য সত্য নয়। ক্লস্টারে থাকা গ্যালাক্সী গুলোর পারস্পরিক গ্রাভিটির কারনে তাদের নিজস্ব গতি থাকেএবং একে অপরের সাপেক্ষে বেগবান হয়। নিকটবর্তী গ্যালাক্সীর ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব গতি মহাবিশ্ব সম্রসারনের গতি থেকে বেশ বেশী। এ কারনেই নিকটবর্তী আনেক গ্যালাক্সীই দূরে সরে যাচ্ছে না বরং কাছেই আসছে। এদের বর্ণালী নীল বিচ্যুতি (Blue Shift) দেখায়। যেমন- এণ্ড্রোমেডা গ্যালাক্সী (M 31) । কিন্তু বহু দূরে থাকা অন্য ক্লাস্টারের গ্যালাক্সী গুলোর নিজস্ব গতি মহাবিশ্ব সম্রসারনের গতি থেকে বেশ কম। তাই এদের নিজস্ব গতি পৃথিবীর দিকে হলেও মহাবিশ্ব সম্রসারনের অধিক গতির কারণে আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
৫. আমরা কী মহাবিশ্বের কোন বিশেষ অবস্থানে আছি?
দূরবর্তী সকল গ্যালাক্সী আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাহলে আমরা কী কোন বিশেষ অবস্থানে আছি? না – মহাবিশ্ব এমন ভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে, যতে যে কোন গ্যালাক্সীতে অবস্থানকারীরই মনে হবে অন্য সব গ্যালাক্সী তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এবং দূরবর্তী গ্যালাক্সী গুলো আরো দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে।
৬. মহাবিশ্ব কিসের মধ্যে সম্প্রসারিত হচ্ছে?
মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু কিসের মধ্যে এটি সম্প্রসারিত হচ্ছে? এ প্রশ্ন আপনি করতে পারেন যদি আপনি চকলেট চিপ কেকের এনালজি সত্য ভাবেন। কেক বাতাসের মধ্যে সম্প্রসারিত হয়, তাহলে মহাবিশ্ব কিসের মধ্যে সম্প্রসারিত হয়? কিন্তু আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে, সমস্ত স্পেসই (Space) মহাবিশ্বের মধ্যে। এর বাইরে কিছু নেই। আপনি কি উত্তর মেরুতে দাঁড়িয়ে উত্তর খুজে পাবেন? উত্তর মেরুতে দাঁড়িয়ে উত্তর খোঁজার মতই মহাবিশ্ব কিসের মধ্যে সম্প্রসারিত হচ্ছে তা খোঁজা বোকামি।
৭. মহাবিশ্বের বয়স কত?
হাবলের সূত্র ব্যবহার করে মহাবিশ্বের বয়স গণনা করা যায়। প্রথম দিকে হাবল কনস্ট্যান্টের মান সঠিক ভাবে বের করা যায়নি বলে মহাবিশ্বের বয়স ভুল গণনা হয়েছিল। এখন আমরা জানি মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর ( ১৩.৭৯৯+০.০২১ বিলিয়ন বছর)। আপনি বলতে পারেন আমি কেন অংকে বিশ্বাস করব? অংক মিথ্যা বলে না। মহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পুরাতন যে নক্ষত্র পাওয়া গেছে তার বয়স প্রায় ১৩.৪ বিলিয়ন বছর। মহাবিশ্বের বয়স তার থেকে কিছু বেশী তো হবেই।
৮. ব্যাঙ্গ অফ বিগ ব্যাঙ্গ :
মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা যদি সময়ে পেছনে ফিরে যাই তাহলে জেনারেল রিলেটিভিটি অনুসারে t = 0 সময়ে মহাবিশ্বের ঘনত্ব ও তাপমাত্রা ছিল অসীম। এই সময়ে পদার্থবিজ্ঞানের কোন তত্ত্বই খাটে না। একে আমরা বলি সিঙ্গুলারিটি (Singularity)। এ রকম অসীম ঘনত্বের ও তাপমাত্রার একটি ভয়ংকর অবস্থা থেকে মহাবিশ্বের যাত্রা শুরু। একেই আমরা বলি বিগ ব্যাঙ্গ। বিগ ব্যাঙ্গ থিওরীতে কোন ব্যাঙ্গ বা বিস্ফোরণ নেই। ব্যাঙ্গ/বিস্ফোরণ বলতে প্রাথমিক অবস্থা বোঝায় যার মধ্যে দিয়ে মহাবিশ্ব শুরু। বিগ ব্যাঙ্গ কোন নির্দিষ্ট অবস্থানে শুরু হয়নি। বরং বিগ ব্যাঙ্গের মধ্য দিয়েই স্থান ও কালের (Space Time) তথা মহাবিশ্বের যাত্রা শুরু।
৯. মহাবিশ্বের আকার কেমন?
আমরা আলেকজান্ডার ফ্রিডম্যানের সমীকরণ থেকে দেখেছি মহাবিশ্ব হতে পারে সমতল, গোলক (বা বার্তুলাকার) বা হাইপারবোলিক। পরবর্তীতে একবিংশ শতব্দীর শুরুতে স্যাটেলাইট পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে মহাবিশ্ব সমতল। সমতল মানে ত্রিমাত্রিক সমতল।

কোয়ান্টাম থিওরী :
মহাবিশ্বকে বোঝার জন্য দুটি তত্ত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি হল জেনারেল রিলেটিভিটি এবং অন্যটি কোয়ান্টাম থিওরী। মহাবিশ্বের সব বৃহৎ কাঠামো যেমন গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সী, নেবুলা, ব্লাকহোলের অস্তিত্ব ব্যাখ্যার জন্য জেনারেল রিলেটিভিটি যথেষ্ট। কিন্তু পরমাণু লেভেলে কী ঘটছে তা ব্যাখ্যার জন্য আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি বা নিউটনের গতি সূত্র কোনটাই কাজে লাগে না। পরমাণুর জগৎ সম্পূর্ণ আলাদা। পরমাণু এবং পরমাণু গঠনকারী মৌলিক কণা সমূহের আচরণ ব্যাখ্যার জন্য সম্পূর্ণ নতুন তত্ত্ব কোয়ান্টাম থিওরী তৈরি করা হয়। বহু বিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রায় ত্রিশ চল্লিশ বছর ধরে সম্পূর্ণ তত্ত্বটি গঠন করা হয়। আমরা দেখেছি ম্যাক্স প্লাঙ্ক কোয়ান্টাম হাইপোথিসিসের মাধ্যমে কীভাবে কোয়ান্টাম তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করেন। এ তত্ত্ব দাঁড় করাতে আইনস্টাইনও অনেক সাহাজ্য করেন। আমরা দেখবো ধীরে ধীরে কীভাবে থিওরীটি সম্পূর্ণভাবে গড়ে ওঠে।

পরমাণুর বিভিন্ন মডেল:
গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস প্রস্তাব করেন যে পদার্থ অবিভাজ্য কণা দ্বারা গঠিত। তিনি এই অবিভাজ্য কণার নাম দেন Atom বা পরমাণু। সহস্র বছর ধরে পদার্থের গঠন সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিল এতটুকুই। ১৮০৮ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন ডাল্টন পরমাণুর গঠন সম্পর্কে চারটি স্বীকার্য দেন। তিনি মনে করতেন পদার্থ পরমাণু নামক আণুবিক্ষণীক কণা দ্বারা গঠিত। একই পদার্থের সকল পরমাণু একই রকম এবং ভিন্ন পদার্থের পরমাণু ভিন্ন রকম।
১৮৯৭ সালে জে.জে.থমসন (J. J. Thomson) ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন। তিনি পরমাণুর অবিভাজ্যতার ধারণা প্রথম ভুল প্রমান করলেন। পরমাণু আরো ক্ষুদ্র কণিকা দ্বারা গঠিত। থমসন মডেল ‘রেজিন বান-Raisin Bun’ মডেল নামে খ্যাত। তিনি প্রস্তাব করলেন পরমাণু মূলত ধনাত্মক চার্জ যুক্ত কণা যার মধ্যে ঋণাত্মক চার্জ যুক্ত ইলেক্ট্রন ডুবানো থাকে।
১৯১১ সালে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড (Ernest Rutherford) পরমাণুর কেন্দ্রে ধনাত্মক চার্জ যুক্ত কণিকা আবিষ্কার করেন। তিনি এর নাম দেন প্রোটন এবং কেন্দ্রের নাম দেন নিউক্লিয়াস। তিনি বলেন যে, পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকে ধনাত্মক চার্জযুক্ত প্রোটন এবং এর বাইরে থাকে ইলেক্ট্রন।
১৯১৩ সালে নীলস বোর (Neils Bohr) রাদারফোর্ডের মডেল উন্নত করেন এবং বলেন যে, ইলেক্ট্রন নিউক্লিয়াসের চারপাশে বিভিন্ন কক্ষে ঘুরতে থাকে। অনেকটা সৌরজগতে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা গ্রহের মত।
১৯৩২ সালে জেমস, চ্যাডউয়িক (James Chadwick) নিউট্রন আবিষ্কার করেন। তখন থেকে পরমাণুর কেন্দ্রে ঋনাত্মক চার্জ যুক্ত প্রোটনও চার্জহীন নিউট্রন আছে বলে ধরা হয়।
ইলেক্ট্রনের তরঙ্গ-কণা দ্বৈত আচরণ (wave-particle duality) এবং গতিবেগ-অবস্থানের অনিশ্চয়তা (এ সম্পর্কে একটু পরেই আলোচনা করব) বিচার করে আধুনিক মডেলে ইলেক্ট্রনকে দেখা হয় নিউক্লিয়াসের বাইরে কুন্ডলী বা মেঘ রূপে। নির্দিষ্ট কোন কক্ষ পথে আবর্তনরত নয়।

ছবি-বিভিন্ন মডেলের তুলনা
তাহলে দেখা গেল পদার্থ পরমাণু দিয়ে গঠিত এবং পরমাণু ইলেক্ট্রন, প্রোটন,নিউট্রন নামের মৌলিক অবিভাজ্য কণা দ্বারা গঠিত। এ ধারনা অনেকদিন টিকে ছিল। ১৯৬৮ সালে কর্ক (quark) আবিষ্কারে পর প্রোটনও নিউট্রনের অবিভাজ্যতা ক্ষুন্ন হল। প্রোটনও নিউট্রন প্রত্যেকে তিনটি কর্ক দিয়ে গঠিত। পদার্থের মৌলিক কণা সম্পর্কে আমরা পরে আরো আলোচনা করব। ডেমক্রিটাস একেবারে ভুল ভাবেননি। পদার্থ ঠিকই অবিভাজ্য মৌলিক কনা দ্বারা গঠিত। আর এগুলোর উদাহরন হল কর্ক, ইলেক্ট্রন, নিউট্রিনো, মুওন, টাও ইত্যাদি।

আলোর কণা ও তরঙ্গ হিসাবে দ্বৈত আচরণ :
নিউটন বলেছিলেন আলো অসংখ্য কণার প্রবাহ। থমাস ইয়াং দ্বিচিড় (Double Slit) পরীক্ষা দ্বারা দেখালেন যে আলো তরঙ্গ হিসাবে প্রবাহমান হয়। ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন আলোকে অসংখ্য কোয়ান্টা (ফোটনের) প্রবাহ হিসাবে বিবেচনা করে ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্ট ব্যাখ্যা দেন। তাহলে আসলে আলো কী? কণা নাকি তরঙ্গ? বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন আলো কণা এবং তরঙ্গ উভয়ের মত আচরন করে। একে বলা হয় আলোর তরঙ্গ কণাদ্বৈত আচরণ (Wave Particle Duality)

ইলেক্ট্রনের তরঙ্গ কণা দ্বৈত আচরণ :
১৯২৩ সালে ফরাসী বিজ্ঞানী লুইস ডি ব্রগলি (Louis de Broglie) কোয়ান্টম হাইপোথিসিস আরো জোরালো করে তোলেন। তিনি বলেন তরঙ্গ কণা দ্বৈত আচরণ শুধু আলো নয় অন্যান্য কণার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তিনি যুক্তি দেন যে, আইনস্টাইনের সমীকরণ ভরকে শক্তির সাথে যুক্ত করে। প্লাঙ্ক ও আইনস্টাইন শক্তিকে তরঙ্গের (কম্পাঙ্ক/তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে) সাথে যুক্ত করেন (E=hf=hc/λ) । এই দুই সমীকরণ থেকে তিনি ভারকে তরঙ্গ আচরণের সাথে যুক্ত করেন। তার মতে কোয়ান্টম থিওরী যেভাবে আলোর তরঙ্গ কণা আচরণ ব্যাখ্যা করে ঠিক তেমনি ইলেক্ট্রন, যাকে আমরা কণা হিসাবে জানি, তারও তরঙ্গ আরচণ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
এর কয়েক বছর পর Davisson and Germer একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করেন ইলেকট্রন তরঙ্গ হিসাবেও আচরণ করে। পরীক্ষাটি ছিল অনেকটা থমাস ইয়াং এর দ্বিচিড় পরীক্ষার মত।

অন্যান্য কণার তরঙ্গ আচরণ :
একই রকম পরীক্ষা দ্বারা দেখানো যায় যে সব পদার্থেরই তরঙ্গ কণা দ্বৈত আচরণ বিদ্যমান। কিন্তু এ কথা কি আমাদের বাস্তব জগতের সব পদার্থের ক্ষেত্রে মিলানো যায়? না, অবশ্যই না। ডিব্রগলি সমীকরণ ব্যবহার করে দেখান যে কোন পদার্থের তরঙ্গের দৈর্ঘ্য প্লাঙ্ক ধুবকের সামানুপাতিক। যেহেতু প্লাঙ্ক ধ্রুবকের মান খুবই কম (10-34) তাই বাস্তব জীবনে পদার্থের তরঙ্গ আচরণ অনুধাবন করা যায় না।
আলোর গতির অতি উচ্চ মান যেমন স্থান কানের (Space Time) রিলেটিভিটি ধর্মকে বুঝতে দেয় না তেমনি প্লাঙ্ক ধ্রুবকের অতি ক্ষুদ্র মান পদার্থের তরঙ্গ ধর্মকে বুঝতে দেয়না।

সম্ভাব্যতা ও কোয়ান্টম থিওরী (Probability and Quantum Theory):
ইলেক্ট্রনের অবস্হান নির্ণের জন্য পরীক্ষা চালালে দেখা যায় ইলেকট্রনকে প্রতিবারই এক জায়গায় পাওয়া যায় না। ১৯২৬ সালে জার্মান পদার্থবিদ ম্যাক্স বরন (Max Born) প্রস্তাব করেন যে, ইলেক্ট্রনকে তরঙ্গ হিসাবে বর্ণনা করার সময় সম্ভাব্যতা বা Probability বিবেচনায় আনা উচিত। যেখানে তরঙ্গের আকার (Magnitude) বড় সেখানে ইলেক্ট্রন পাবার সম্ভাবনা বেশী এবং যেখানে আকার কম সেখানে পাবার সম্ভাবনা কম।


ছবি-ইলেক্ট্রন পাবার সম্ভাবনা

সম্ভাব্যতা দরকার হয় লটারীতে ভাগ্য গণনায়, খেলর ফলাফল বিবেচনায়, কিন্তু পদার্থবিদ্যায় অণু-পরমাণুর আচরণ বিবেচনায় এদের ভূমিকা কী? ইলেক্ট্রনের অবস্হান নির্ণের জন্য পরীক্ষা চালালে দেখা যায় ইলেকট্রনকে প্রতিবারই এক জায়গায় পাওয়া যায় না। কোন একটি স্থানে (পরমাণুর মধ্যে) ইলেকট্রনকে কতবার নিশ্চিত ভাবে পাওয়া যাবে তা ইলেক্ট্রনের প্রোবালিটি ওয়েবের আকৃতির উপর নির্ভর করে। অস্ট্রিয়ান পদার্থবিদ আরুয়িন স্রোডিঞ্জার (Erwin Schrödinger) একটি সমীকরণ দাড় করান যা প্রোবালিটি ওয়েবের আকৃতি ও বিবর্তন (Wave Function-ওয়েব ফাংশন) বর্ণনা করে। স্রোডিঞ্জানের সমীকরন ব্যবহার করে ইলেক্ট্রনের অবস্থানের ভবিষদ্বানী করা গেল। যা বিভিন্ন পরীক্ষায় নির্ভুল ভাবে প্রমাণিত হয়।
এর ফলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণা বদলে গেল। মাইক্রোসকপিক লেভেলে মহাবিশ্ব নির্ধারণশীল (Deterministic) নয় বরং তা সম্ভাব্যতার জালে জড়ানো। অনেক বিজ্ঞানী এই ধারনা মেনে নিতে পানেরনি। এদের একজন হলেন আইনস্টাইন। তিনি বললেন- স্রষ্টা মহাবিশ্ব নিয়ে ভাগ্যের খেলা খেলেন না- God does not play dice with the universe । তিনি মনে করতেন সম্ভাব্যতা পাশা খেলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে কিন্তু মহাবিশ্ব তৈরির ক্ষেত্রে নয়। তবে এটি ছিল তার ভুল ধারনা। [এখানে God মানে ঠিক স্রষ্টা নয়, প্রকৃতিকে বা মহাবিশ্ব গঠণকারী মূল নিয়ম গুলোকে বোঝানো হয়েছে। আইনস্টাইন ধর্মে বা স্রষ্টার বিশ্বাস করতেন না]

ইলেক্ট্রনের অবস্থান ও ভরবেগ নির্ণয়ে অনিশ্চয়তা :
বাস্তব জীবনে আপনি খুব সহজেই বলতে পারেন কোথায় আপনার বাড়ী, কলেজ, গাড়ি শপিংমল। কিন্তু মাইক্রোসকোপিক কণার ক্ষেত্রে এত সহজে তাদের অবস্থান জানা যায় না। ইলেকট্রন পরমাণুতে কোথায় অবস্থান করছে তা জানতে হলে দেখতে হবে ইলেক্ট্রনকে। ইলেকট্রন দেখতে হলে ইলেকট্রনের উপর আলো ফেলতে হবে। যখন ফোটন ইলেক্ট্রনকে আঘাত করে তখন ইলেক্ট্রন ফোটন থেকে শক্তি নিয়ে গতিবেগ ভরবেগ ও অবস্হান বদলে ফেলে । ফলে যখন ইলেকট্রন (বা কোন কণার) অবস্থান সম্পর্কে জানা যায় তখন তার ভরবেগ জানা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। যত সূক্ষ্মতার সাথে অবস্থান জানা যায় ভরবেগ পরিমাপ ততই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এর বিপরীত ও সত্য অর্থাৎ ভরবেগ যত সূক্ষ্মতার সাথে মাপা যায় অবস্থান নির্ধারণ ততই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তাহলে ইলেক্ট্রনের অবস্থান ও ভরবেগ এক সাথে মাপা সম্ভব নয় কেন? আমাদের পরীক্ষাগত সীমাবদ্ধতার কারনে? অবস্থান ও ভরবেগ মাপার জন্য ফোটন ব্যবহার করা হয়। ফোটন ইলেট্রনের অবস্থান ও গতিবেগের পরিবর্তন আনে। তাহলে এমন কোন শক্তি যা কীনা ইলেকট্রনের উপর প্রভাব ফেলে না, তা দিয়ে সঠিকভাবে একই সাথে অবস্থান ও ভরবেগ মাপা যাবে? না, কোন ভাবেই অবস্থান ও ভরবেগ এক সাথে মাপা সম্ভব নয়।

আনসার্টেনটি প্রিন্সিপাল বা অনিশ্চয়তার নীতি :
১৯২৭ সালে জার্মান পদার্থবিদ ভের্নার হাইজেনবার্গ (Werner Heisenberg) প্রস্তাব করেন যে, যত সূক্ষ্মতার সাথে কোন কণার অবস্থান জানা যায় তার ভরবেগ নির্ণয় ততই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এবং যত সূক্ষ্মতার সাথে ভরবেগ নির্ণয় করা যায় তার অবস্থান জানা ততই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এটিই আনসার্টেনটি প্রিন্সিপাল হিসেবে পরিচিতি পায়। এই অনিশ্চিয়তা পরীক্ষাগত ক্রুটির কারনে নয় বরং এই অনিশ্চয়তা প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা। অনু-পরমাণুর জগৎ এই ভাবেই পরিচালিত হয়। আপনি কোন কণার অবস্থান এবং ভরবেগ একই সাথে নির্ভুল ভাবে বলতে পারবেনা। আইনস্টাইন অনিশ্চয়তার এই ধারনা মেনে নেন নি। তার মতে এটা পরীক্ষাগত সীমাবদ্ধতা। পরে তিনি বুঝতে পারেন এটি প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা।

শক্তি ও সময়ের অনিশ্চয়তা :
অণু-পরমাণুর জগতে অবস্থান ও ভরবেগের অনিশ্চয়তার মত শক্তি ও সময়ের (Energy and Time) ক্ষেত্রে ও অনিশ্চয়তা দেখা যায়। আপনি কখনোই চরম সূক্ষ্মতার সাথে কোন সিস্টেমের শক্তি প্রতি মুহুর্তে মাপতে পারবেন না। খুব অল্প সময়ের মধে মাইক্রোসকোপিক লেভেলে শক্তির পরিমানে অনিশ্চয়তা দেখা যায়। অর্থাৎ
ΔE “x ” Δt= h/2π
ΔE= শক্তির অনিশ্চয়তা Δt= যে সময়ের পর্থকে শক্তি মাপা হয়

ভরের অনিশ্চয়তা ও স্বতস্ফূর্ত ভাবে পার্টিক্যাল তৈরি হওয়া :
আইন্টাইন অনিশ্চয়তার নীতি না মানলেও তার সমীকরন ব্যবহার করে দারুন সব ফলাফল পাওয়া গেল। E=mc^2, এখানে আলোর বেগ (c)ধ্রুবক, এটি নিয়ে কোন অনিশ্চয়তা নেই। সুতরাং কোন সিস্টেমে শক্তির অনিশ্চয়তা মানে ভরের অনিশ্চয়তা। তাহলে
ΔE= Δm “x ” c^2 উপরের সমীকরনের সাথে তুলনা করে
Δm “x” Δt= h/(2πc^2 )
এর অর্থ এই যে, খুব স্বল্প সময়ের জন্য (Δt) আমরা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি না মহাবিশ্বের কোন শূন্যস্থানের ভর (Δm) কত। খুব অল্প সময়ের জন্য শূন্য স্থান থেকে পদার্থ উৎপন্ন হয় এবং তা সাথে সাথে মিলিয়ে যায়। যত ভারী (Δm) পদার্থ তৈরি হবে তত দ্রুত (Δt) তা নিষ্ক্রিয় হয়ে মিলিয়ে যাবে। কিন্ত কোন পদার্থ স্বত:স্ফূর্ত ভাবে তৈরি ও ধ্বংস হয়ে যাওয়া কীভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে পল ডিরাকের কাছে।

পল ডিরাক ও এন্টিপার্টিক্যাল :
ইংলিশ পদার্থবিদ পল ডিরাক (Paul Dirac) কোয়ান্টম মেকানিক্স গঠন করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি একটি সমীকরণ (১৯২৮) দাঁড় করান যা ডিরাক সমীকরণ নামে পরিচিত এবং এটি পদার্থের মৌলিক কণার বৈশিষ্ট্য বর্ণনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার সমীকরনের একটি সাধারন ধারনা এই ছিল যে, প্রতিটি কণারই সমান ভর কিন্তু বিপরীত চার্জ বিশিষ্ট প্রতিকণা (Anti Particle) আছে । যেমন ইলেক্ট্রনের এন্টিপার্টিকেল হবে সমান ভর বিশিষ্ট কিন্তু ধনাত্মক চার্জ যুক্ত। প্রথমেই এই ধারনা মেনে নিতে অনেকেরই কষ্ট হয়। কিন্তু ১৯৩২ সালে কার্ল এন্ডারসন (Carl Anderson) ইলেক্ট্রনের ভারের সমান কিন্তু ধনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট কনা আবিষ্কার করেন। ঠিক যেভাবে ডিরাক ভবিষদ্বানী করেছিলেন। এই কণার নাম দেওয়া হয় পজিট্রন। পার্টিকেল -এন্ট্রিপার্টিকেল পরস্পরের সংস্পর্শে আসলে একে অপরকে নিষ্ক্রিয় করে গামারে উৎপন্ন করে ।
অনিশ্চিয়তার নীতি বা আনেসার্টেনটি প্রিন্সিপাল অনুসারে মহাবিশ্বে শূন্য স্থানে প্রতিনিয়ত পার্টিকেল এন্টিপার্টিকেল তৈরি হচ্ছে এবং তা অতি দ্রুত পরস্পরকে ধ্বংস করে ফেলছে। ভর যত বেশী হবে পার্টিকেল পেয়ার তত দ্রুত ধ্বংস হবে। যেমন- ইলেক্ট্রন ও পজিট্রন 6.43×10-22 সেকেন্ড সময়ের মধ্যে উৎপন্ন ও ধ্বংস হবে। প্রোটন ইলেক্ট্রনের তুলনায় ২০০০ গুণ ভারী। প্রোটন-এন্টিপ্রোটন পেয়ার উৎপন্ন হয়ে পরস্পরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে ইলেক্ট্রন-পজিট্রন পেয়ারের ও ১/২০০০ গুন কম সময়ের মধ্যে।

ভার্চুয়াল পেয়ার (Virtual Pair):
কোয়ান্টম মিকানিক্স অনুসারে শূন্য স্থান (Empty Space) মোটেও শূন্য (Empty) নয়। পার্টিকেল এন্টিপার্টিকেল জোড়া মহাবিশ্বের যে কোন স্থানে তৈরি হতে পারে এবং তা আবার পরস্পরকে নিষ্ক্রিয় করে মিলিয়ে যায়। এদের বলা হয় ভার্চুয়াল পেয়ার। কারন সাধারন পদার্থের মত দেখা বা ধরা যায় না। তবে এদের উপস্থিতি পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা সম্ভব।
ভার্চুয়াল পেয়ারের ধারনা অনেকের কাছে অবাস্তব মনে হতে পারে কিন্তু পরীক্ষাগারের প্রাপ্ত ফলাফল এর উপস্থিতি সমর্থন করে। হাইড্রোজেন অনু থেকে নিঃসৃত বর্ণালী (Spectrum of hydrogen) ডিরাক সমীকরন ব্যবহার করে (ভার্চুয়াল কণার উপস্থিতিতে বিবেচনা করলে) সম্পূর্ণ ভাবে (এক বিলিয়নের একভাগ সূক্ষ্মতার সাথে) ব্যাখ্যা করা যায়। ইতোপূর্বে হাইড্রোজেন বর্ণালী ব্যাখ্যায় সব চেষ্টাই বিফলে যায়। কোয়ান্টম মিকামিক্স বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও তা সত্য, চোখে দেখা না গেলেও উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। আইনস্টাইন কোয়ান্টম মিকানিক্সের ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করেন কিন্তু পরবর্তীতে অনেক স্বীকার্যই মেনে নেন নি। যা আমরা আলোচনা করেছি। পরীক্ষাগারে প্রমাণ হবার পর আইনস্টাইন তার ভুল বুঝতে পানের। আশা করব পাঠকরাও আইনস্টাইনের মত ভুল করবেন না।

কোয়ান্টম ফ্লাকচুয়েশন (Quantum Fluctuation):
কোয়ান্টম ফ্লাকচুয়েশন কী তা আমরা এত ক্ষনে আলোচনা করে ফেলেছি। এ কথাটি পরবর্তীতে বারবার আসবে তাই বুঝে নেওয়া ভাল। মাহবিশ্বের যে কোন শূন্য স্থানে আনসর্টেনটি প্রিন্সিপাল অনুসারে কোন সময়ের ব্যবধানে (Δt) শক্তির (ΔE) পরিমান সর্বদা পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনের সীমা আনসার্টেনটি প্রিন্সিপাল দ্বারাই নির্ধারিত। শক্তি থেকেই পার্টিকেল এন্টিপার্টিকেল জোড়া তৈরি হয় ( যাকে আমরা ভরের পরিবর্তন Δm বলছি) এই পার্টিকেল এন্টিপার্টিকৈল আবার পরস্পরকে নিষ্ক্রিয় করে গামারে উৎপন্ন করে শক্তি ফেরত দেয়। মহাবিশ্বের শূন্য স্থানে শক্তি (ΔE) এবং ভরের (Δm) সবর্দা পরিবর্তন কে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন বলে। এর ফলেই ভার্চুয়াল পেয়ার তৈরি হয়।

মৌলিক কণা ও প্রাকৃতিক বল :
মহাবিশ্ব গঠিত পদার্থ (Matter)ও বল (Force) দিয়ে। পদার্থ গঠিত পরমাণু দিয়ে আর পরমানু গঠিত মৌলিক কনা (Elementary particles যেমন- কর্ক, ইলেকট্রন) দিয়ে । পরমাণুর গঠন সম্পর্কে আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি। প্রকৃতিতে মৌলিক বল (Fundamental Force) মূলত চারটি গ্রাভিটি, তড়িৎ চৌম্বকীয় বল, Strong Nuclear Force বা সংক্ষেপে সবল বল, Weak Nuclear Force বা দুর্বল বল। সবল ও দুর্বল নিউক্লিয়ার বল সম্পর্কে আগে বলিনি। সবল নিউক্লিয়ার বল পরমাণুর কেন্দ্রে প্রোটন ও নিউট্রনকে ধরে রাখে। দুর্বল নিউক্লিয়ার বল তেজস্ক্রিয় বিকিরনের জন্য দায়ী। প্রতিটি মৌলিক বলই নির্দিষ্ট কণার আদান প্রদানের মাধ্যমে কাজ করে। যেমন- তড়িৎ চৌম্বকীয় বল ফোটনের আদান প্রদানের মাধ্যমে কার্যকর হয়।

মহাবিশ্ব গঠনকারী কণা সমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
(ক) বোসনস্ (Bosons): প্রাকৃতিক চারটি বল বহনকারী মৌলিক কণা সমূহকে বলা হয় বোসনস্ । এদর আমরা বল কণা বলতে পারি। এরা Integer Spin প্রদর্শন করে। অর্থাৎ এদের বা ঘূর্ণন একটি পূর্ণ সংখ্যা যেমন ১।
Spin বা ঘূর্ণন কী? মৌলিক কণার একটি বৈশিষ্ট্য হল Spin বা ঘুর্ণন। ঘুর্ণন বলতে কোয়ান্টাম মিকানিক্সে যা বোঝায় তা হল বিভিন্ন অভিমুখ থেকে কণাটিকে কীরকম দেখায় । Spin শূন্য মানে কণাটি একটি বিন্দুর মত। সবদিক থেকে দেখতে একই রকম। কোন কণার Spin 1 হলে এটি পূর্ন বৃত্তে (৩৬০° ডিগ্রি) আবর্তিত হলেই একই রকম দেখাবে। Spin 2 বিশিষ্ট কণা অর্ধবৃত্ত (১৮০° ডিগ্রি) আবর্তিত হলে একই রকম দেখাবে। Spin ½ হলে কণাটিকে দুইবার পূর্ণবৃত্তে ঘুরালে সেটি একই রকম দেখাবে।
খ) ফার্মিওন (Fermion) : পদার্থ গঠনকারী মৌলিক কণা সমূহ এই ভাগের অন্তর্গত। এদের পদার্থ কণা বলা যেতে পারে। এরা Half Integer Spin প্রদর্শন করে। ইলেক্ট্রন, কর্ক, নিউট্রিনো মেসন সবই ফার্মিওনের উদাহরণ। এদের Spin ½
কোন ধরনের বলের ক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে তার উপর ভিত্তি করে পদার্থ গঠনকারী বলা সমূহকে নিম্ন রূপে ভাগ করা যায়
A) লেপটন (Lepton): এরা দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের ক্রিয়ার অংশগ্রহণ করে। যেমন ইলেক্ট্রন, নিউট্রিনো, মুয়ন (Muon), টাওন (Taon)।
B) হেডরন (Hadron): এরা মূলত কর্ক দিয়ে গঠিত। এরা মৌলিক কণা নয়। এরা মূলত সবল নিউক্লিয়ার বলের ক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করে। এদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
a) ব্রায়ন (Baryon): এরা তিনটি কর্ক দ্বারা গঠিত। যেমন প্রোটন, নিউট্রন। এরা মূলত ফার্মিওন।
b) মেসন (Mesons): এরা মূলত বোসনস্ এবং দুটি কর্ক দিয়ে গঠিত। যেমন- Pion, Kaon

মৌলিক বল সমূহকে একীভূত করণ :
১৯৬৭ সালে প্রফেসর আব্দুস সালাম, স্টিভেন উইনবার্গ (Steven Weinberg) এবং শেলডন গ্যাশো (Sheldon Glashow) দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের আচরন বোঝার জন্য তত্ত্ব দেন। তারা প্রস্তাব করেন যে, তিন ধরনের ভেক্টর বোসনস্ (Intermediate Vector Bosons) দুর্বল নিউক্লিয়ার বল বহন করে। এরা হল W^+(ডাব্লিউ প্লাস), W^-(ডাব্লিউ মাইনাস) এবং Z^0 (জেড নট) । ১৯৮৩ সালে CERN (European Centre for Nuclear Research) এর বিজ্ঞানীরা এই কণাগুলোর অস্তিত্ব খুজে পান। তবে এর পূর্বেই ১৯৭৯ সালে এই তিন বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরস্পর দেওয়া হয়। সালাম-উইনবার্গ-গ্যাশো তত্ত্ব অনুসারে ১০০ GeVএর চাইতে বেশী শক্তিতে W^+ W^- Z^0 বোসনস্ এবং ফোটন একই রকম আচরণ করে (One GeV = 109 এক বিলিয়ন বা একশত কোটি Electron Volts)। আমরা জানি ফোটন প্রায় ভরহীন কণা। তড়িৎচৌম্বকীয় বল এই ভরহীন কণার মাধ্যমে অসীম দূরত্ব পর্যন্ত কার্যকর হয়। W^+ W^- Z^0 বোসনস্ কণা সমূহ ভারী ফলে দুর্বল বল স্বল্প দূরত্বে কাজ করতে পারে। কিন্তু ১০০ GeVএর চাইতে বেশী শক্তিতে W^+ W^- Z^0 বোসনস্ ফোটনের মত ভারহীন হয়ে পড়ে। এর ফলে দুর্বল নিউক্লিয়ার বল অনেক দূরত্ব পর্যন্ত কাজ করতে পারে। তখন দুর্বল নিউক্লিয়ার বলকে তড়িৎ চৌম্বকীয় বল থেকে আলাদা করা যায় না। অর্থাৎ এরা এই বল হিসাবে কাজ করে। একে বলা হয় Electro-Weak Force (ইলেক্ট্রো উয়ীক ফোরস্) বা তড়িৎ দুর্বল বল ।
তড়িৎ চৌম্বকীয় বলের সাথে দুর্বল নিউক্লিয়ার বলকে একীভূত করার পর সবল নিউক্লিয়ার বলকেও এদের সাথে একীভূত করার প্রচেষ্টা শুরু হয়।

আব্দুস সালাম, শেলডন গ্লাসো, হাওয়ার্ড গিওর্গি, জোগেশ প্যাটি প্রস্তাব করেন যে, 1014 GeV এর চেয়ে বেশী শক্তিতে তিন প্রকার মৌলিক বল – তড়িৎ চৌম্বকীয়, সবল ও দুর্বল নিউক্লিয়ার বল একীভূত হবে এবং একই বল হিসাবে কাজ করবে। একে বলা হয় গ্রান্ড ইউনিফাইড থিওরী (Grand Unified Theory) বা সংক্ষেপে GUT ।
অনেক পদার্থবিদই ধারনা করেন 1019 GeV এর বেশী শক্তিতে চারটি মৌলিক বলই একক বল হিসাবে কাজ করবে। গ্রাভিটিকে অন্য তিনটি বলের সাথে একীভূত করে যে তত্ত্বের ধারনা করা হয় তাকে বলা হয় থিওরী অফ এভ্রিথিং (Theory of Everything) বা সংক্ষেপে TOE ।
কিন্তু এখনো গ্রাভিটিকে অন্য বলের সাথে একীভূত করে তত্ত্ব দেওয়া সম্ভব হয়নি। TOE এখানো স্বপ্নই রয়ে গেছে। গ্রাভিটিকে অন্য বলের সাথে একীভূত করার প্রচেষ্টা থেকেই সম্পূর্ণ নুতন তত্ত্ব স্ট্রিং থিওরীর আর্বিভাব ঘটে। পরীক্ষাগারে ১০০ GeV শক্তিতে কণা সমূহের ক্রিয়া পরীক্ষা করে দুর্বল বল ও তড়িৎ চৌম্বকীয় বলের একীভূত করণের সত্যতা পাওয়া গেছে। কিন্তু GUT প্রমাণের জন্য 1014 GeV শক্তি পরীক্ষাগারে অর্জন করা সম্ভব নয়। সুতরাং বুঝতে পারছেন TOE প্রমানের জন্য পরীক্ষাগারে 1019 GeV শক্তি অর্জনও সম্ভব নয়।

স্বতঃস্ফুর্ত সিমেট্রি ভঙ্গ (Spontaneous Symmetry Breaking):
এমন ঘটনা কী ঘটতে পারে যখন 1019 GeV শক্তি উৎপন্ন হওয়া সম্ভব? – হ্যাঁ, বিগ ব্যাঙ্গ বা মহাবিশ্বের উৎপত্তিতে এমন শক্তিই কার্যকর ছিল। তাহলে মহাবিশ্বের শুরু সময়ে 1019 GeV বা তার বেশী শক্তিতে চারটি মৌলিক বলই একীভূত ছিল। তখন বল সমূহ একই বল হিসাবে আচরন করত। (যাকে বলা) হয় এদের মধ্যে Symmetry বা প্রতিসাম্য ছিল। কিন্তু যতই সময় বাড়ে, মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ হয়, ততই তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং কণাসমূহের গড় শক্তি হ্রাস পায়। 1019 GeV এর নিচে কণাগুলোর গড় শক্তি কমে যাবার সাথে সাথে গ্রাভিটি অন্যবল থেকে আলাদা হয়ে যায়। একে বলা হয় প্রথম স্বতঃস্ফুর্ত সিমেট্রি ভঙ্গ বা First Spontaneous Symmetry Breaking । 1014GeV এর নিচে সবল নিউক্লিয়ার বল ( Second Spontaneous Symmetry Breaking) এবং ১০০ GeV এর নিচে দুর্বল নিউক্লিয়ার বল পৃথক হয়ে বর্তমান হয়ে বর্তমান চারটি বল সৃষ্টি করে। মহাবিশ্বের সূচনা নিয়ে যখন আমরা আলোচনা করব তখন মৌলিক বল ও স্বতঃস্ফুর্ত সিমেট্রি ভঙ্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিগ ব্যাঙ্গ তত্ত্বের বিরোধিতা :
অনেকে বিজ্ঞানীই বিগ ব্যাঙ্গ তত্ত্বের ধারনা বা একটি অসীম ঘনত্ব ও তাপমাত্রার প্রথমিক অবস্থা থেকে মহাবিশ্বের সূচনা – এ ধারনা মেনে নিতে পারেননি। বিগ ব্যাঙ্গের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয় Steady Stateমডেল। ১৯৪৮ সালে হারম্যান বন্ডি (Hermann Bondi) ও থমাস গোল্ড (Thomas Gold) এই তত্ত্বের একটি ভার্সন এবং ফ্রেড হয়েল (Fred Hoyle) সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে আরেকটি ভার্সন দাঁড় করান। এই মডেল অনুসারে মহাবিশ্বে প্রতিনিয়ত নতুন পদার্থ তৈরি হচ্ছে Creation Field এর মাধ্যমে এবং মহাবিশ্বের শূন্য স্থানে নতুন গ্যালাক্সীর আর্বিভাব হচ্ছে।

গ্যামো ও নিউক্লিওসিনথেসিস : বিগব্যাঙ্গ নিউক্লিওসিনথেসিস :
১৯৪৮ সালে জর্জ গ্যামো (George Gamow) এবং তার সহযোগীরা বিশেষ করে রালফ্ আলফার (Ralph Alpher) এবং রবার্ট হারম্যান (Robert Herman) সর্বপ্রথম বিগ ব্যাঙ্গ নিউক্লিওসিনথেসিসের উপর গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন। তারা দেখান কীভাবে বিগ ব্যাঙ্গের পর উত্তপ্ত অবস্থায় প্রথম পরমানু তৈরি হতে পারে। আলফার ও হারম্যান পরে নিউক্লিওসিনথেসিসের উপর তত্ত্ব আরো শক্ত করে দাড় করানোর চেষ্টা করেন। তবে বিগব্যাঙ্গের পর হিলিয়ামের থেকে ভারী মৌল গুলো কীভাবে তৈরি হতে পারে তা তারা ব্যাখ্যা করতে পারেননি। এখন আমরা জানি পর্যায় সারণীর ভারী মৌল গুলো তৈরি হয় নক্ষত্রের মধ্যে ফিউশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। গ্যামো যখন তাদের গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন তখন লেখকের নাম দেন Aplher, Bethe, Gamow অনেকটা α,β,γ- গ্রীক বর্ণমালার প্রথম তিনটি বর্ণ। মহাবিশ্বের শুরুর ঘটনা নিয়ে গবেষণা পত্রের এ ধরনের নাম গ্যামোর বুদ্ধিমান ও রসিক মানসিকতার পরিচয় দেয়। তিনি রবার্ট হারম্যানকে তার নাম পরিবর্তন করে Delter রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
গ্যামোর সাফল্য এই যে তিনি মহাবিশ্বের শুরুতে অতি উত্তপ্ত অবস্থায় কীভাবে প্রথম মৌল গুলো (হাইড্রোজেন, হিলিয়াম) তৈরি হতে পারে তার ব্যাখ্যা দেন। গ্যামোর নিউক্লিওসিনথেসিস তত্ত্ব এক ধরনের রেডিয়েশনের (ফোটন) ধারনা দেয়। এই রেডেয়েশন বিগ ব্যাঙ্গের উচ্চ তাপমাত্রা অবস্থায় সৃষ্ট এবং তা এখনো মহাবিশ্বে আছে। এর তাপমাত্রাও তিনি উল্লেখ করেন ১০ K এর কাছাকাছি (আলফারও হারম্যান পরবর্তীতে আরো গবেষণার পর বলেন তাপমাত্রা হবে ৫ K এর কাছাকাছি)।

কসমিক মাইক্রোওয়েব ব্যাকগ্রাউড (CMB) :
১৯৬৫ সালে আর্নো পেনজিয়াস (Arno Penzias) এবং রবার্ট ইউলসন (Robert Wilson) নামে বেল ল্যাবোরেটরীর দুই বিজ্ঞানী মাইক্রোওয়েব ডিটেকটর নিয়ে কাজ করার সময় এক ধরনের রেডিয়েশন সনাক্ত করেন। এর উৎপত্তি সৌরজগতের বাইরে বলে মনে হয়। মাইক্রোওয়েব ডিটেকটর যে দিকেই ধরা হোক না কেন (সব দিকেই) এই রেডিয়েশন পাওয়া যায়। এই রেডিয়েশন অতিমাত্রায় লাল বিচ্যুতি (Red Shift) দেখায়। প্রায় একই সময়ে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ বব ডিক (Bob Dicke) এবং জিম পিবলস্ একই ধরনের রেডিয়েশন সনাক্ত করেন। এই রেডিয়েশন হল সেই রেডিয়েশন যা গ্যামো ধারনা করেছিলেন। একে আমরা এখন বলি কসমিক মাইক্রোওয়েব ব্যাকগ্রাউন্ড (Cosmic Microwave Background) বা কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন। এই রেডিয়েশনের ফোটনগুলি সেই মহাবিশ্বের প্রথম বয়সে উৎপন্ন। এরপর মহাবিশ্ব বহুগুন সম্প্রসারিত হয়েছে। ফলে ফোটন গুলি অতিমাত্রায় লাল বিচ্যুতি দেখায়।
১৯৮৯ সালে COBE (Cosmic Background Explorer) স্যাটেলাইট অতি সূক্ষ্মতার সাথে CMB এর তাপমাত্রা মাপে ২.৭২৫ K যা সব দিকে এবং সব স্থানে একই।
১৯৯৮ সালে বেলুনের সাহায্যে দুটি পরীক্ষা চালানো হয় BOOMERANG এবং MAXIMA. তবে CMB সম্পর্কে ভালভাবে বোঝা যায় ২০০১ সালে NASAর পাঠানো WMAP (পড়া হয় ডাবলিউ ম্যাপ, Wilkinson Microwave Anisotropy Probe) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। WMAP এর ডাটা থেকে জানা যায় CMB রেডিয়েশনের তাপমাত্রা সবদিকে এবং সব স্থানে প্রায় এক। স্থান ভেদ 200μk or 2×10-4 পর্যন্ত তাপমাত্রার পার্থক্য দেখা যায়। এই ক্ষুদ্র পার্থক্য টুকু মনে রাখা প্রয়োজন কারন এই পাথক্য মহাবিশ্বের গঠনে খুব গুরুত্ব বহন করে।
CMB রেডিয়েশনের গুরুত্ব:
১। এই রেডিয়েশনের অস্তিত্ব প্রমান করে মহাবিশ্ব ঠিকই উৎপ্ত একটি অবস্থা থেকে শুরু হয়েছিল। গ্যামোর নিউক্লিওসিনথেসিস তত্ত্বের ভবিদ্বানী সত্য হল। CMB বিগ ব্যাঙ্গের সবচেয়ে বড় প্রমান।
২। CMB নিয়ে গবেষণা মহাবিশ্বের উৎপত্তির জন্য খুবই জরুরী। কারণ CMB আমাদের সামনে ৩৮০,০০০ বছর বয়সী মহাবিশ্বকে উপস্থাপন করে। এটি যেন এক টাইম মেশিন সেই সময়কে বোঝার জন্য।

বিগ ব্যাঙ্গ থিওরীর সীমাবদ্ধতা :
ষাট ও সত্তরের দশকে বিজ্ঞানীরা হট বিগ ব্যাঙ্গের পক্ষে অনেক যুক্তি ও প্রমাণ পেয়ে যান। অতি উচ্চ তাপমাত্রা ও ঘনত্বের অবস্থা থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি, নিউক্লিওসিনথেসিন,CMB রেডিয়েশন, সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব সব মিলিয়ে বিগ ব্যাঙ্গ তত্ত্বের জয় জয়াকার। স্টিফেন হকিং এবং রজার পেনরোজ কিছু গাণিতিক প্রকৃয়ার মাধ্যমে বিগ ব্যাঙ্গের পক্ষে যুক্তি দেন। কিন্তু বিগ ব্যাঙ্গ নিজে মহাবিশ্বের অনেক ঘটনাই ব্যাখ্যা করতে পারেনা।
১। কেন মহাবিশ্ব বৃহৎ মানে(Large Scale) হোমোজেনাস এবং আইসোট্রপিক? অর্থাৎ কেন মহাবিশ্ব সব স্থানে এবং সবদিকে একই রকম? কেন CMB এর তাপমাত্রা সবদিকে (প্রায়) একই? কোন ক্লাসের পরীক্ষার্থীরা সবাই যদি একই উত্তর লেখে এবং একই নম্বর পায় তাহলে এটা ধরে নেওয়া স্বাভাবিক যে তারা পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ করেছে। (তেমনি) মহাবিশ্ব সবদিকে এবং সবখানে একই রকম এবং তাপমাত্রাও একই কেন? তাহলে কী মহাবিশ্বের শুরুতে সব স্থানের মধ্যে যোগাযোগ ছিল? কিন্তু বিগ ব্যাঙ্গ এবং পরবর্তী সম্প্রসারণ দ্বারা তা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। [কারন বিগ ব্যাঙ্গের পর আলোর এক স্থান থেকে দূরের অন্য অঞ্চলে যাওয়ার সময় ছিল না]
২। মহাবিশ্ব কেন এত সমতল?- মহাবিশ্বের আকৃতি কেমন? মহাবিশ্ব কী গোলাকার, বদ্ধ? নাকি সমতল, খোলা? নাকি হাইপারবোলা (গোড়ার জিনের মত বাঁকানো), খোলা? পর্যবেক্ষণ থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করেন মহাবিশ্ব বৃহৎমানে (Large Scale) সমতল (Flat- ত্রিমাত্রিক সমতল)। কিন্তু কনভেনশনাল হট বিগ ব্যাঙ্গ মডেল থেকে সে ধারনা পাওয়া যায় না।
৩। বৃহৎ মানে (Large Scale) বিবেচনা করলে মহাবিশ্ব হোমোজেনাস এবং আইসোট্রপিক। তাহলে কীভাবে মহাবিশ্বে বড় ধরনের কাঠামো- গ্যালাক্সী, গ্যালাক্সী ক্লাস্টার, নেবুলা তৈরি হল। মহাবিশ্ব যদি সবদিকে এবং সবস্থানে একই রকম হয় তাহলে বড় ধরনের কাঠামো তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। যদি স্হানে স্হানে ইনহোমোজেনেসিটি (Inhomogeneity) থাকে তাহলেই কেবল গ্যালাক্সী, গ্যালাক্সী ক্লাস্টার ব্যাখ্যা করা সম্ভব। কিন্তু এ ধরনের ইনহোমোজেনেসিটির জন্য প্রয়োজনীয় ঘনত্বের তারতম্য হট বিগ ব্যাঙ্গ থিওরী ব্যাখ্যা করতে পারে না।
৪। রেলিক (Relic) সমস্যা: GUT অনুসারে মহাবিশ্বে ভারী কণা থাকার কথা। এর মধ্যে একটি হল ম্যাগনেটিক মনপোল (Magnetic Monopole) । কিন্তু আমরা মহাবিশ্বে এমন কোন ম্যাগনেটিক মনপোল খুঁজে পাইনা। এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা বিগ ব্যাঙ্গ থিওরীতে নেই।

কসমিক ইনক্লেশন (Cosmic Inflation) :
প্রচলিত বিগ ব্যাঙ্গ থিওরীর সমস্যা গুলো সমাধানের জন্য MIT এর পদার্থবিদ এলান গথ্ (Alan Guth) ১৯৮০ সালে নতুন একটি ধারনা প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাব অনুসারে মহাবিশ্ব বিগ ব্যাঙ্গের কিছুক্ষণ পরেই সামান্য সময়ে (সেকেন্ডের ভগ্নাংশ কালের মধ্যে) বহু গুন সম্প্রসারিত হয়। একে তিনি নাম দেন Inflation-ইনফ্লেশন বা মহাসম্প্রসারণ। ইনফ্লেশন কীভাবে সংগঠিত হতে পারে তা আমরা পরে বিস্তারিত আলোচনা করব। ইনফ্লেশন থিওরীর মাধ্যমে হোমোজেনেসিটি ও আইসোট্রপি, ফ্লাটনেস সমস্যা (মহাবিশ্ব সমতল কেন), রেলিক সমস্যার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এত ক্ষুদ্র সময়ে মহাবিশ্ব মহাসম্প্রসারিত হওয়ায় সবদিকে এবং সবস্থানে একই রকম মনে হয় এবং তাপমাত্রাও (প্রায়) সমান। এই মহাসম্প্রসারনের কারনেই মহাবিশ্ব এত সমতল। এই মহাসম্প্রসারণের ফলে ম্যাগনেটি মোনপোল গুলো ডাইলুট হয়ে যায় এবং এখন আর এদের খুজে পাওয়া যায় না। মহাবিশ্বের গ্যালাক্সী গুলো কীভাবে তৈরি হল? এর একটা ব্যাখ্যাও এই তত্ত্ব থেকে পাওয়া যায়।
ইনফ্লেশন থিওরীর বেশ কিছু ত্রুটি রাশিয়ান পদার্থবিদ আন্দ্রে লিন্ড্ (Andrei Linde) এবং স্বাধীনভাবে পল স্টেইনহার্ট (Paul Steinhardt) ও এনড্রিয়াস এলব্রাখট (Andreas Albrecht) সংশোধন করেন। ১৯৮৩ সালে আন্দ্রে লিন্ড কেওটিক ইনফ্লেশন (Chaotic Inflation) প্রস্তাব করেন।

স্ট্রিং থিওরী :
প্রতিটি পদার্থ মৌলিক কণা দ্বারা গঠিত। মৌলিক কণা সম্পর্কে আমরা আগেই জেনেছি। কিন্তু মৌলিক কণা যেমন-কর্ক, ইলেক্ট্রন কী দিয়ে গঠিত? সাধারন তত্ত্ব গুলোতে মনে করা হয় মৌলিক কণা গুলো বিন্দুরমত (Point like) কণা দ্বারা গঠিত। গ্রাভিটিকে অন্যান্য মৌলিক বলের সাথে একীভূত কারনের ব্যর্থতা, অণুবীক্ষণীক লেভেলে কোয়ান্টম মিকানিক্সের ও জেনারেল রিলেটিভিটির দ্বন্দ্ব বিজ্ঞানীদের নতুন ভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করল। অনেকেই ভাবতে শুরু করলেন মৌলিক কণাগুলো বিন্দুর মত (Point Like) কনা দিয়ে গঠিত না হলে কী হবে? হতে পারে তারা নাগটের (Nugget) মত কণা দিয়ে গঠিত। অনেক পদার্থবিদের চেষ্টায় নতুন এক তত্ত্ব দাঁড় করানো গেল যেখানে পদার্থের মৌলিক কণা সমূহ একমাত্রিক সুতার (String) মত ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত। এটিই স্ট্রিং থিওরীর মূল ধারণা। সত্তর, বিশেষ করে আশি ও নব্বই দশক জুড়ে এই তত্ত্বে দাঁড় করানোর জন্য বহু পদার্থবিদ কাজ করেছেন। ছবি-পৃষ্ঠা-১৪
স্ট্রিং থিওরীর স্ট্রিং :
১। স্ট্রিং থিওরীর স্ট্রিং হতে পারে খোলা না বদ্ধ।
২। স্ট্রিং গুলোর বিভিন্ন রকমের কম্পনই বস্তুর ভর,শক্তি ও চার্জ নির্ধারন করে।
৩। প্রতিটি মৌলিক কণা একটি স্ট্রিং দিয়ে গঠিত অর্থাৎ এক মৌলিক কণা হল একটি স্ট্রিং এবং সকল স্ট্রিং ই একই রকম। মৌলিক কণা বিভিন্ন রকম আচরণ করে কারন তাদের স্ট্রিংগুলোর কম্পনের ধরন ভিন্ন (Different resonant vibrational pattern)
৪। স্ট্রিং থিওরীর স্ট্রিং গুলোর দৈর্ঘ্য গড়পত্তায় প্লাঙ্ক দৈর্ঘ্য (Plank Length) এর সমান অর্থাৎ 1.61×10-35মিটার। তাহলে সবচেয়ে শক্তিশালী যন্ত্র দিয়ে দেখলেও স্ট্রিং গুলোকে বিন্দুর মতই দেখাবে।
সুপারস্ট্রিং থিওরী :
মৌলিক কণাকে দুই বৃহৎ ভাগে ভাগ করা যায় বোসনস্ (Bosons) এবং ফার্মিওন (Fermion)। মৌলিক বলসমূহের মৌলিক কণা হল বোসনস্ যেমন : গ্রাভিটন, ফোটন। অন্যান্য পদার্থের মৌলিক কণা হল ফার্মিওন যেমন : কর্ক, ইলেক্ট্রন , নিউট্রিনো। স্ট্রিং থিওরীর প্রথম ভার্সন শুধু বোসনস্ নিয়ে আলোচনা করত এবং বলা হত বোসনিক স্ট্রিং থিওরী। এরপর প্রস্তাব করা হয় সুপারস্ট্রিং থিওরী যা বোসনস ও ফার্মিওন দুটো নিয়েই আলোচনা করে। এই তত্ত্ব সুপারসিমেট্রি নামের একটি ধারনা প্রবর্তন করে। সুপারসিমেট্রি বোসনস (শক্তি) ও ফার্মিওন (পদার্থ) কে একসাথে বর্ণনা করে। এ তত্ত্ব মতে সুপারপার্টনার নামক তত্ত্বীয় কণা বোসনস ও ফার্মিওনকে এক করে। এখনো CERN সুপার কলাইডারে তত্ত্বীয় সুপারপার্টনার কণার অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। যদি পাওয়া যায় তাহলে সেটি হবে স্ট্রিং থিওরীর সাপেক্ষে বড় প্রমান।
স্ট্রিং থিওরীর ডাইমেনশন সমূহ :
ক্যাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞানে মহাবিশ্ব ত্রিমাত্রিক (Three Dimensional)। আইনস্টাইন আরেকটি ডাইমেনশন যোগ করলেন- সময়। মহাবিশ্ব হল চারমাত্রিক, তৈরি হল স্থান(Space) ও সময় (Time)। কিন্তু স্ট্রিং থিওরী আরো কিছু ডাইমেনশন প্রস্তাব করে। স্ট্রিং থিওরীর গণনা অনুসারে মহাবিশ্ব দশমাত্রিক, নয়টি স্থান (Space) ও একটি সময় (Time) মোট দশটি। আমরা শুধু তিন ডাইমেনশনই বুঝতে পারি। তাহলে বাকি ছয় স্পেস ডাইমেনশন কই? স্ট্রিং থিওরীর ব্যাখ্যা অনুসারে বাকি ছয় স্পেস ডাইমেনশন একটি অতিক্ষুদ্র জায়গায় গাদাগাদি করে ঠাসা। অতিরিক্ত ডাইমেনশন গুলোর ঠাসা অবস্থার একটি মডেল হল Calabi-Yau Manifold.
বিশ্বাস করতে কষ্ঠ হলেও স্ট্রিং থিওরীর তাত্ত্বীকরা নানা ভাবে অতিরিক্ত ডাইমেনশন গুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এরকম একটি এনালজি হতে পারে একটি রশি। অনেক দূর থেকে দেখলে একটি রশিকে একমাত্রিকই মনে হবে। আবার কাছে থেক দেখলে ত্রিমাত্রিক। আবার কোন পিপড়া রশির উপর থাকলে তার কাছে রশিকে দ্বিমাত্রিক মনে হবে। মহাবিশ্বকে অনু-পরমানুতে চিরে ফেলে হয়তো অতিরিক্ত ডাইমেনশন গুলো পাওয়া যাবে। এখনো অতিরিক্ত ডাইমেনশন গুলোর পক্ষে প্রমান মেলেনি।
এম থিওরী :
স্ট্রিং থিওরীকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়- TypeІ ,TypeІІA ,TypeІІB ,হেটেরোটিক O, হেটেরোটিক E(Heterotic O & E)। এই পাঁচ প্রকার স্ট্রিং থিওরী আসলে একটি বৃহৎ তত্ত্বের অংশ যাকে নাম দেওয়া হয় M থিওরী। এখানে M এর একটি প্রস্তাবিত মানে হচ্ছে Mysterious । এম থিওরী অনুসারে মহাবিশ্ব এগারো ডাইমেনশন বিশিষ্ট। দশটি স্পেস ও একটি সময় ডাইমেনশন। গ্রাভিটিকে অন্যান্য মৌলিক বলের সাথে একীভূত করনের জন্য এম থিওরীই এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে ভাল থিওরী।

ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter)
বিজ্ঞানীরা এক সময় মনে করতেন পর্যায় সারণীর মৌল গুল দিয়েই সমগ্র মহাবিশ্ব গঠিত। কিন্তু তাদের এই ধারনা বদলে যেতে শুরু করে যখন বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন মহাবিশ্ব আমাদের ধারনার তুলনায় অনেক ভারী। মহাবিশ্ব গঠনকারী অনেক পদার্থই আমাদের অজানা। সত্তরের দশকে বিজ্ঞানীরা সর্পিলাকার গ্যালাক্সীর (Spiral Galaxy) গতি পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ ছিল গ্যালাক্সীর কেন্দ্রের দিকে অধিক নক্ষত্র থাকে, যে কারনে কেন্দ্র উজ্জ্বল ও ভারী। কেপলারের সূত্র অনুসারে গ্যালাক্সীর কেন্দ্র যদি ভারী হয় তবে ব্যাসার্ধ বাড়ার সাথে সাথে ঘুর্ণন বেগও কমে আসবে। কিন্তু তারা দেখতে পেলেন যে গ্যালাক্সীর প্রান্তীয় ঘুর্ণন গতি কেন্দ্রের মত একই, এমনকী কখনো বেশীও হয় । তখন বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন গ্যালাক্সীর মোট ভর শুধু দৃশ্যমান বস্তু দিয়ে গঠিত নয়। আরো কিছু আছে যা গ্যালাক্সী গুলোকে আরো ভারী করেছে এবং তা প্রান্তীয় ঘুর্ণন গতির জন্য দায়ী। আলোর সাথে এই সকল পদার্থের কোন ক্রিয়া হয় না বলে এদের আমরা দেখতে পাই না। এদের নাম দেওয়া হয় ডার্ক ম্যাটার। এরা গ্রাভিটেশনালি আকর্ষিক।
ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব বোঝার জন্য আরো বেশ কিছু প্রমান পাওয়া যায়। গ্যালাক্সী ক্লাস্টার গুলো ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বের প্রমান বহন করে। গ্যালাক্সী ক্লাস্টারের গ্যালাক্সী গুলো কখনোই এক সাথে থাকার কথা না যদি ডার্ক ম্যাটার তাদের ধরে না রাখে। ডার্ক ম্যাটারের গ্রাভিটিশেনাল পুলের কারনেই গ্যালাক্সী গুলো ক্লাস্টার গঠন করতে পারে। এ ছাড়াও ক্লাস্টারের মধ্যে গ্যালাক্সী গুলোর গতি ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব ছাড়া ব্যাখ্যা করা কঠিন।
X-ray স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায় গ্যালাক্সী ক্লাস্টারে প্রচুর X-ray বিকিরনকারী গ্যাস আছে। ক্লাস্টারের দৃশ্যমান ভর হিসাব করলে দেখা যায় ক্লাস্টারের গ্রাভিটি এত বেশী নয় যে তা X-ray বিকিরনকারী গ্যাস আটকে রাখতে পারবে। যদি ক্লাস্টারে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব বিবেচনা করা হয় তবেই কেবল ক্লাস্টারের গ্রাভিটি গ্যাসগুলোকে ক্লাস্টারে ধরে রাখতে পারে।
গ্রাভিটেশনাল লেন্সিং (Gravitational Lensing) থেকেও ডার্ক ম্যাটারের ধারনা পাওয়া যায়। আমাদের থেকে অনেক দূরে থাকা গ্যালাক্সী বা কোয়েসার (পরবর্তীতে আলোচনা করব) থেকে আসা আলো মধ্যবর্তী গ্যালাক্সী ক্লাস্টারের কারনে বাকিয়ে যায়। এই বাকানোর পরিমান গ্যালাক্সী ক্লাস্টারের গ্রাভিটি তথা ভরের উপর নির্ভর করে। দৃশ্যমান ভর দিয়ে বাঁকানোর পরিমান ব্যাখ্যা করা যায় না। যদি না আমরা ধরে নেই ক্লাস্টারে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব।
ডার্ক ম্যাটার আছে সত্য কিন্তু কী পরিমান? ঘনত্বের মাপ বিচারে, ক্লাস্টার ডাটা অনুসারে গ্যালাক্সী ক্লাস্টারের ঘনত্বের প্যারামিটার Ω_M≈0.1″থেকে” 0.03 । শুধুমাত্র দৃশ্যমান নক্ষত্রের ভর হিসাব করলে ঘনত্ব প্যারামিটার Ω_stars≈0.005 সুতরাং গ্যালাক্সী ও গ্যালাক্সী ক্লাস্টারের ভরের অধিকাংশই ডার্ক ম্যাটার।
এই রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার আসলে কী? বিজ্ঞানীরা নিম্নোক্ত পদার্থ গুলোকে ডার্ক ম্যটারের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী মনে করেন।
১। ব্রায়নিক ডার্ক ম্যাটার- ব্রায়নিক ম্যাটার (অর্থাৎ অনুসমূহ যা প্লোটন ও নিউট্রন দিয়ে গঠিত) ডার্ক ম্যাটার হিসাবে গ্যালাক্সীর ভর বৃদ্ধি করতে পারে। এরা থাকতে পারে গ্যাস, ধুলা, মৃত নক্ষত্র হিসাবে বা এক ধরনের তত্ত্বীয় পদার্থ MACHO (Massive Compact Halo Object) হিসাবে। বিভিন্ন হিসাব নিকাশ শেষে বিজ্ঞানীদের ধারনা ব্রায়নিক ডার্ক ম্যাটারের পরিমান মোট ডার্ক ম্যাটারের ১০% এর বেশী হবে না।
২। নিউট্রিনো- নন ব্রায়নিক ডার্ক ম্যাটারের হিসাবে প্রথম প্রস্তাব করা হয় নিউট্রিনো। নিউট্রিনোর তিনটি ধরন সম্পর্কে জানা যায়- ইলেক্ট্রন নিউট্রিনো, টাউ নিউট্রিনো, মুয়ন নিউট্রিনো । নিউট্রেনো সাধারণ পদার্থের সাথে সহজে কোন ক্রিয়ায় লিপ্ত হয় না বলে এদের সনাক্ত করা কঠিন। যদিও নিউট্রিনোর ভর খুবই কম তবুও এদের ডার্ক ম্যাটারের অন্যতম প্রার্থী মনে করা হয়।
৩। ব্রায়নিক ম্যাটার, নিউট্রিনো মিলেও ডার্ক ম্যাটারের মূল অংশ গঠন করতে পারে না। অনেক ধরনের তত্ত্বীয় পদার্থ যেমন- WIMP- Weakly Interacting Massive Particle কে ডার্ক ম্যাটারের অন্যতম প্রার্থী হিসাবে মনে করা হয়।
হট এবং কোল্ড ডার্ক ম্যাটার (Hot and Cold Dark Matter) :
যে সকল ডার্ক ম্যাটারের গতিবেগ আলোর গতির কাছাকাছি তাদের বলা হয় হট ডার্ক ম্যাটার। যেমন- নিউট্রিনো।
যে সকল ডার্ক ম্যাটারের গতিবেগ আলোর গতির তুলনায় অনেক কম তাদের বলা হয় কোল্ড ডার্ক ম্যাটার। যেমন- WIMP, এরা বেশ ভারী হয় তাই এদের গতিবেগ কম হয়।
এই ধরনের প্রকারভেদ মহাবিশ্বের বড় ধরনের কাঠামো গঠনের পদ্ধতি বোঝার জন্য জরুরী। যে সকল ডার্ক ম্যাটারের গতি কম ও ভারী তারা সহজেই গ্রাভিটেশনাল ক্লাম্প (clump) তৈরি করে গ্যালাক্সী গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। পরে আমরা এ সম্পর্কে আলোচনা করব।

ডার্ক এনার্জি (Dark Energy):
মহাবিশ্বের আকৃতি কেমন? আমরা আগেই বলেছি মহাবিশ্ব প্রায় সমতল (Nearly Flat) । BOOMERANG, MAXIMA এবং সবশেষে WMAP পরীক্ষার দ্বারা আমরা নিশ্চিত হয়েছি মহাবিশ্ব সমতল। মহাবিশ্ব সমতল হলে মহাবিশ্বের ডেনসিটি প্যারামিটার,Ω_0=1হবে। কিন্তু অংক কষে Ω_0=1 হয় না। আমরা নিজেরাই এই অংক দেখতে পারি। এ অংক এত কঠিন না।
গ্যালাক্সী ক্লাস্টার, ডার্ক ম্যাটার, রেডিয়েশন সব ধরে বর্তমান মহাবিশ্বে পদার্থের ঘড় ঘনত্ব পরিমাপ করা হয় 2.4×10-27 kg/m3(যার ১৫% অনিশ্চয়তা রয়েছে)। একটি হাইড্রোজেন পরমাণুর ভর 1.67×10-27 kg। অর্থাৎ মহাবিশ্বের প্রতি ঘন মিটারে গড়ে 1½ টি করে হাইড্রোজেন এটম আছে। আবার মহাবিশ্বের ক্রিটিকাল ডেনসিটি যার মান হাবল কনস্টান্ট ব্যবহার করে নির্ধারন করা হয় 1.0×10-26 kg/m3 । মহাবিশ্বের ডেনসিটি প্যারামিটার হবে = পদার্থের গড় ঘনত্ব ÷ ক্রিটিকাল ডেনসিটি। সুতরাং সহজ ভাগ করলে মহাবিশ্বের ডেনসিটি প্যারামিটার হয় 0.24 । কিন্তু মহাবিশ্ব সমতল হওয়ায় ডেনসিটি প্যারামিটার Ω_0=1 হবার কথা। তাহলে মহাবিশ্বের শক্তি ভরের 76% (1-0.24=0.76) কী দিয়ে গঠিত?
বিজ্ঞানীরা মনে করেন মহাবিশ্ব একধরনের অদৃশ্য শক্তিতে ভরপুর। যা ঐ শক্তির গ্রাভিটেশনাল ইফেক্ট বা নি:সৃত কোন রেডিয়েশন দিয়ে সনাক্ত করা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিলেন ডার্ক এনার্জি।
সুপারনোভা স্টাডি :
১৯৯৮ সালে দুটি গবেষণা দল মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ সম্পর্কে বুঝতে গবেষণায় নেমে পড়লো। মহাবিশ্ব কি আজীবন একই হারে সম্প্রসারিত হবে? যেহেতু মহাবিশ্ব পদার্থ দিয়ে পূর্ণ, এদের গ্রাভিটির কারনে মহাবিশ্ব এক সময় ধীর গতিতে সম্প্রসারিত হতে হতে থেমে যেয়ে সংকুচিত ও হতে পারে। গবেষণা দল দ্বয় Type Іa সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ শুরু করলেন। নক্ষত্র জীবনের শেষ দিকে বিস্ফোরণের মাধ্যমে আলো ছড়িয়ে দেয়। একে বলা সুপরনোভা। সুপারনোভা খুবই উজ্জ্বল হয়।
এই পর্যবেক্ষণের মূল ধারনা ছিল অনেকটা এই রকম- সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ করে দূরবর্তী গ্যালাক্সীর গতি বোঝা যায়। কোন সুপারনোভা ৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত মানে এটি থেকে আলো পৃথিবীতে আসতে ৫ মিলিয়ন বছর সময় লাগবে। সুতরাং আমরা যখন টেলিস্কোপে দেখব তখন তা ৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে কী অবস্থায় ছিল তাই দেখতে পাব। ৫ বিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরের কোন গ্যালাক্সীর বেগ পরিমাপ করা গেল মানে ৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে গ্যালাক্সীর গতিবেগ পাওয়া গেল। এইভাবে আরো দূরের সুপারনোভার লালবিচ্যুতি হিসাব করে গ্যালাক্সীর আরো অতীতের গতি বোঝা যাবে। গ্যালাক্সীর গতিবেগ থেকে মহাবিশ্বের সম্রসারণের গতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
দুই গবেষণাদল যখন তাদের রির্পোট প্রকাশ করল তখন আশ্চার্য হয়ে দেখা গেল মহাবিশ্ব আসলে পূর্বের থেকে দ্রুততার সাথে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আরো হিসাব নিকাশ করে বোঝা গেল মহাবিশ্ব প্রায় ৫ বিলিয়ন বছর পূর্ব থেকেই ত্বরান্বিত গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে। মহাবিশ্বের সম্প্রসারন সব সময় একই হারে হয়নি। এখনো পর্যন্ত যা বোঝা যায় তাতে মনে হয় মহাবিশ্বের সম্প্রসারন প্রথম অবস্থা থেকে এক সময় কমতে শুরু করে এবং ৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে (অর্থাৎ মহাবিশ্বের বয়স যখন ৯ বিলিয়ন বছর) থেকে সম্প্রসারনের গতি ত্বরান্বিত হতে শুরু করে এবং এখন দ্রুততার সাথে সম্প্রসারিত হচ্ছে। একটা এনালজি দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। মনে করেন আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন। দূরে ট্রাফিকের লাল বাতি দেখে ব্রেক কষে গাড়ির গতি কমাতে শুরু করলেন কিন্তু সিগনালে পৌছাবার পূর্বেই সবুজ বাতি জ্বলে উঠল। তখন আপনি গতি বাড়াতে শুরু করলেন এবং পূর্বের থেকে দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করলেন। ঠিক তেমনি মহাবিশ্ব সম্প্রসারন প্রথম অবস্থা থেকে কমতে কমতে এক সময় আবার বাড়তে থাকে এবং পূর্বের থেকেও দ্রুত গতিতে চলতে সম্প্রসারিত হতে থাকে (Accelerated Expansion) ।
ত্বরান্বিত সম্প্রসারণ ও ডার্ক এনার্জি :
কিন্তু মহাবিশ্ব কেন আরো দ্রুত গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে? বিজ্ঞানীরা বললেন কোন এক গ্রাভিটেশনালি রিপালসিভ শক্তির কারনে এমনটি ঘটছে। বিজ্ঞানীরা ডার্ক এনার্জিকে এ ধরনের বল বলে ধারনা করলেন। ডার্ক এনার্জি হল একটি এন্টি গ্রাভিটি [যা গ্রাভিটির মত মহাবিশ্বের সব কিছুকে আকর্ষণ করে না, বরং বিকর্ষণ করে] বল যা মহাবিশ্বের ত্বরান্বিত সম্প্রসারনের (Accelerated Expansion) জন্য দায়ী। আসলে কোন এক ধরনের এন্টি গ্রাভিটি বলের চিন্তা প্রথম করেছিলেন আইনস্টাইন। যাকে তিনি নাম দিয়েছিলেন কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট এবং একে গ্রীক অক্ষর Λ – ল্যামডা দ্বারা সমীকরনে প্রকাশ করেছিলেন। আইনস্টাইনের সম্মানার্থে ডার্ক এনার্জিকে Λ-ল্যামডা দিয়ে চিহিৃত করা হয়। যদিও আইনস্টাইন কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের ধারনাকে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হিসাবে বলেছিলেন। কিন্তু তার এই ভুল শুদ্ধ হয়ে আত্মপ্রকাশ করল এক সময়।

ডার্ক এনার্জি ও মহাবিশ্বের পরিণতি :
ডার্ক এনার্জি নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। এর ধরন বুঝতে বিজ্ঞানীদের সময় লাগবে। তবে ধারনা করা যায় এই এন্টি গ্রাভিটি বল দুইভাবে আচরন করতে পারে। মহাবিশ্ব কীভাবে শেষ হবে তা বুঝতে হলে ডার্ক এনার্জির ধরন বোঝা জরুরী ।
ক. ডার্ক এনার্জি যদি কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের মত কাজ করে
আমরা নিশ্চই আইনস্টাইনের থেকে বেশী বুদ্ধিমান নই। আইনস্টাইন মহাবিশ্বকে স্থির রাখতে কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের ধারনা প্রবর্তন করেন। কিন্তু তার এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়, যা আমরা আগে পড়েছি। কিন্তু ধারণাটি রয়ে গেছে । ডার্ক এনর্জির মত কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট ও এন্টি গ্রাভিটি বল। কিন্তু এ দুটি কী এক? আইনস্টাইনের মতে মহাবিশ্ব সম্প্রসারনের সাথে সাথে কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের ঘনত্বের পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হলে কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের মান ও বাড়ে, ফলে ঘনত্ব একই থাকে। ডার্ক এনার্জি যদি এই রকম হয় অর্থাৎ মহাবিশ্ব সম্প্রসারনের সাথে সাথে ডার্ক এনার্জির গড় ঘনত্ব একই থাকে তবে নিম্নের লেখা থেকে মহাবিশ্বের পরিণতি ব্যাখ্যা করা যায়-

মহাবিশ্বের শুরুতে পদার্থের গড় ঘনত্ব(ρ_m) ডার্ক এনার্জির গড় ঘনত্ব (ρ_Λ) থেকে অনেক বেশী ছিল। প্রায় ৯ বিলিয়ন বছর ধরে সম্প্রসারনের ফলে পদার্থের গড় ঘনত্ব হ্রাস পায় কিন্তু ডার্ক এনার্জির ঘনত্ব একই থাকে। এক সময় ডার্ক এনার্জির ঘনত্ব পদার্থের থেকে বেশী হয়ে যায় (৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে) তখন থেকে মহাবিশ্ব আরো দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হয়। এভাবে চলতে থাকলে এখন থেকে ৩০ বিলিয়ন বছর পর মহাবিশ্ব এতই সম্প্রসারিত হবে যে কেবলমাত্র হাজার খানেক গ্যালাক্সী দৃষ্টি সীমার মধ্যে থাকবে। অন্যান্য গ্যালাক্সী গুলো লালবিচ্যুত হয়ে দৃশ্যমান বর্ণালী থেকে দূরে সরে যাবে ফলে আমরা আর দেখতে পাবন।
খ. ডার্ক এনার্জি যদি কসমোলজিক্যাল কনস্টান্টের মত আচরণ না করে
কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন ডার্ক এনার্জি কসমোলজিক্যাল কনস্টান্টের মত আচরণ নাও করতে পারে । অর্থাৎ মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের সাথে সাথে ডার্ক এনার্জির গড় ঘনত্বও কমে যাবে। তারা মনে করেন ডার্ক এনার্জি এক ধরনের পদার্থের কারনে হয় যা গ্রাভিটেশনালি নেগেটিভ প্রেসার তৈরি করে। তারা এ পদার্থের নাম দিয়েছেন কুইন্টিসেন্স (quintessence) [এরিস্টটলের স্বর্গীয় পদার্থের নাম অনুসারে]। এ ক্ষেত্রে ডার্ক এনার্জির ঘনত্ব কীভাবে পরিবর্তন হবে তার উপর নির্ভর করে মহাবিশ্ব সম্প্রসারনশীলও থাকতে পারে বা সংকুচিত হতে পারে।ডার্ক এনার্জি এখন পদার্থ বিজ্ঞানে সবচেয়ে বড় রহস্য। তাই এটা গবেষনার সবচেয়ে বড় জায়গা। আমরা ভবিষ্য আরো জানতে পারব এ সম্পর্কে।
ডার্ক এনার্জিও ডর্ক ম্যাটার :
ডার্ক এনার্জি ও ডার্ক ম্যাটার সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। মিল হল নামে। এদের সম্পর্কে আমরা তেমন কিছু জানি না বলে ডার্ক নাম দেওয়া হয়েছে। ডার্ক ম্যাটার গ্রাভিটির মত আকর্ষিক এবং ডার্ক এনার্জি এন্টি গ্রাভিটি শক্তি এরা বিকর্ষিক। তবে এর কেউই আলোর সাথে ক্রিয়া করে না বলে এদের সম্পর্কে গবেষণা করা মুশকিল। বর্তমান মহাবিশ্বের শক্তি ভরের ৬৮% ডার্ক এনার্জি ২৭% ডার্ক ম্যাটারও ৫% অন্যান্য ম্যাটার। তাহলে মহাবিশ্বের প্রায় সবটাই অজানা।
বিজ্ঞানের ইতিহাস সম্পর্কে এত কিছু বলার পর মাঝি বলল, তোমার জীবন তো বার আনাই মিছে।