বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন হুজির রাজনৈতিক দল সৃষ্টির নেপথ্যে যে আর্মির গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত ছিল তা অজানা নয়। প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের মতন প্রথম সারির পত্রিকাগুলোও এই বিষয়ে দুই-একটা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। বছর দুয়েক আগে যখন ইস্টিশন ব্লগে ডিজিএফআই নিয়ে ব্লগ পোস্ট করি তখন সরকারের পক্ষ থেকে ইস্টিশন ব্লগ বন্ধ (ব্লক) করার জন্যে নির্দেশ দেওয়া হয়। তারিখটি ছিল ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬। বাংলাদেশের আইএসপি প্রোভাইডারদের সংগঠন আএসপিবিএ-এর সভাপতি আমিনুল হাকিম ডিডাব্লিউ-কে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন-এর (বিটিআরসি) লিখিত নির্দেশে সোমবার থেকে ইস্টিশন ব্লগ নামের ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দিয়েছি আমরা৷ ব্লগটির ওয়েব অ্যাড্রেসসহ সব ধরনের লিংক ব্লক করা হয়েছে৷ তবে বিটিআরসি আমাদের সাইটটি বন্ধ করতে লিখিত নির্দেশ দিলেও, কোনো কারণ জানায়নি৷’ ব্লগে এমন কোন নতুন তথ্য ছিল না যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পত্রিকায় কিংবা বইয়ে প্রকাশিত হয়নি। হ্যাঁ, প্রকাশিত দুটি ব্লগের মধ্যে একটি উইকিলিকসের ফাঁস হওয়ার একটি তারবার্তার বাংলা ভাষান্তর ছিল যা পূর্বে কেউ প্রকাশ করেনি। আগ্রহীরা পড়তে চাইলে পূর্বের দুটি ব্লগ পড়তে পারেন: হুজির রাজনৈতিক দল গঠনে দায়ী সাবেক ডিজিএফআই প্রধান এর অদূরদর্শিতা ও জঙ্গি সংগঠন হুজির রাজনৈতিক দল গঠনে নেতৃত্ব দেয় ডিজিএফআই অথবা ইংরেজী ব্লগটি DGFI helped militant group Huji form political party আরেকটা তথ্য পাঠকদের দিয়ে রাখি, ডিজিএফআই নিয়ে ডেইলি স্টার পত্রিকার কোন অনলাইন লিংক পাওয়া যায় না। সম্ভবত সবগুলো লিংকই মুছে দেওয়া হয়েছে।
১৯৯৬-২০০১ সাল-এর আওয়ামী শাসনামলে হুজির কর্তৃক জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলো উল্লেখ করা হল।
-৩ জুন, ২০০১: গোপালগঞ্জের বানিয়াচং গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত, আহত অর্ধশত। হামলা চালায় হুজি।
-২০ জানুয়ারি, ২০০১: সিপিবি’র মিটিংয়ে বোমা হামলায় ৫ জন নিহত। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।
-১৪ এপ্রিল, ২০০১: রমনা বটমূলে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।
-২০ জুলাই, ২০০০:গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভায় ৭৬ কেজি ওজনের পুঁতে রাখা বোমা উদ্ধার করা হয়। জনসভা শুরুর আগেই এই শক্তিশালী বোমাটি উদ্ধার হওয়ায় বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা থেকে বেঁচে যায় দেশ। জঙ্গি সংগঠন হুজি এতে জড়িত ছিল।
-১৮ জানুয়ারি, ১৯৯৯: কবি শামসুর রাহমানের উপর হামলা করে জঙ্গি সংগঠন হুজি।
-৬ মার্চ, ১৯৯৯: যশোরে উদীচী অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।
-৮ অক্টোবর, ১৯৯৯: খুলনা শহরে আহমদিয়া মসজিদে বোম হামলায় ৮ জন নিহত। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।
বিএনপি সরকারের আমলে হুজির উল্লেখযোগ্য হামলাগুলো:
২১ মে, ২০০৪: ২১ মে ২০০৪ সিলেটে হজরত শাহজালালের মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর আর্জেস গ্রেনেড হামলা। নিহত ২, হাইকমিশনারসহ আহত হয় ৭০। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।
২১ অগাস্ট, ২০০৪: বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলায় ২৩ জন নিহত আহত শতাধিক। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।
২৭ জানুয়ারি, ২০০৫: শাহব এএমএস কিবরিয়ার উপর হামলা চালায় ৫ জন নিহত। হামলা চালায় জংঙ্গি সংগঠন হুজি।
আগ্রহীদের জন্যে: টাইম লাইন: বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার
হুজি ছাড়াও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের নেতারা বর্তমানে রাজনীতিতে প্রবেশ করছে। ২০১৬ সালের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী দল থেকে সর্বমোট ৭ জনকে নমিনেশন দেওয়া হয় যাদের বিরুদ্ধে এমবি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার অভিযোগ ছিল এবং একাধিকবার আইন-শৃংঙ্খলাবাহিনীর হাতেও গ্রেফতাও হয়। যদিও নির্বাচনী প্রচারের শেষ মূর্হুত্বে বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জেএমবি সদস্য আবদুস সালামের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া রাজশাহীর বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেলেন জেএমবি নেতা আলমগীর সরকার। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ জেএমবির শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইয়ের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। তার বাড়িতে জেএমবির শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের ভিডিও চিত্র রয়েছে। যা গণমাধ্যমেও এসেছে। আলমগীর সরকার গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ পান। শেষ মূর্হুত্বে তাও নির্বাচনী প্রতীক বাতিল করে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক বাতাস বুঝে জেএমবি নেতারা এখন রাজনৈতিক দলগুলোতে যোগ দিচ্ছে বিশেষ করে গত উপ-নির্বাচনের আগে সাতক্ষীরা, সিলেট, জয়পুরহাট, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগে যোগদানের হিড়িক পড়েছে। দলগুলোতে জেএমবি সংস্যদের অবস্থান কেমন তা একটা ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়! ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবির তিন সদস্যের একজন হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসানকে ছিনতাই করা হয়েছে ভালুকা থানার যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান কামালের নির্দেশে। এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী কামাল হোসেন ওরফে সবুজ আজ বুধবার র্যাবের সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সূত্র: প্রথম আলো, ৩০ এপ্রিল ২০১৪
যাই হোক, আমরা আগের মূল ইস্যুতে ফিরে আসি। এই ব্লগে আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নিয়ে আরো দুটি তারবার্তার ভাষান্তর দেখব; যেখানে গোয়ান্দা সংস্থার প্রধান কীভাবে বিভিন্ন অযুহাতে হুজির রাজনৈতিক দল গঠনে সহায়তা করছেন অন্যদিকে সেনা প্রধানের কীভাবে হুজির রাজনৈতিক দল গঠন ব্যর্থ করে দিচ্ছে। উইকিলিকসে ফাঁস হওয়ার তারবার্তাগুলো তৎকালীন রাজনৈতিক ও ডিজিএফআই-হুজির ছিনালিপূর্ণ প্রেমের নাটকের জলজ্যান্ত প্রমাণ। মার্কিন তারবার্তার শিরোনাম লক্ষ্য করলে তার পরিষ্কার ঈঙ্গিত পাওয়া যায়। দুটো তারবার্তার কথা ও প্রসঙ্গ প্রায় একই রকম। তারপরও পাঠকের জন্যে দুটো তারবার্তারই ভাষান্তর করা হয়েছে।
AMBASSADOR WARNS BANGLADESH INTELLIGENCE HEAD TO END FLIRTATION WITH ISLAMIC DEMOCRATIC PARTY
১. বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত জেমস ফ্রান্সিস মরিয়ার্টি বাংলাদেশী গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল ফর ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) এর প্রধান গোলাম মোহাম্মদকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন চলতি বছরের শুরুর দিকে ডিজিএফআই এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হরকাতুল জিহাদ-ইসলামি বাংলাদেশের (হুজি-বি) নেতৃস্থানীয় সদস্যদের নিয়ে গঠিত ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রতিষ্ঠার তীব্র বিরোধিতা জ্ঞাপন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক ডিজিএফআই এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে নবগঠিত ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টিকে সমর্থন দিতে রাজি করানোর জন্য আওয়ামীলীগ প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনাকে চাপ দিতে থাকেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত গভীর হতাশা প্রকাশ করেন। গোলাম মোহাম্মদ রাষ্ট্রদূতকে জানান আমিনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। গোলাম মোহাম্মদ সাবেক ডিজিএফআই প্রধানের এহেন কাজের জন্য গভীর দুঃখপ্রকাশ করেন এবং রাষ্ট্রদূতকে আশ্বস্ত করেন কোনভাবেই ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ইলেকশন কমিশনে নিবন্ধিত হতে দেবেন না। গোলাম মোহাম্মদ রাষ্ট্রদূত এবং রিজিওনাল অ্যাফেয়ার্স কাউন্সেলর জেমস ফ্রান্সিস মরিয়ার্টিকে রাজনীতি এবং সমাজের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা হুজি-বি সদস্যদের একত্রিত করতে একটা পরিকল্পনা করার অনুরোধ করেন।
[ ওয়াশিংটনে হাসিনার আলাপ ]
২. ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর বিকেলে রাষ্ট্রদূত ডিরেক্টরেট জেনারেল ফর ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) এর পরিচালক মেজর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমাদুল হকের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদকে জানান ৩০ অক্টোবর ওয়াশিংটনে হাসিনা এবং রিচার্ড বাউচারের মধ্যে বৈঠকে জিহাদি জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ-ই-ইসলাম বাংলাদেশের (হুজি-বি) সাথে ঘনিষ্ট ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (আইডিপি) রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলাপচারিতায় হাসিনা বাউচারকে বলেন কাউন্টার টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিন তার সাথে যোগাযোগ করে অনুরোধ করেন- তিনি যেন আইডিপির নিবন্ধনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থন আদায়ে সুবিধা করে দেন। হাসিনা প্রথমে বাউচার এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টিকে বলেন, তিনি মনে করেন ২০০৪ সালে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত গ্রেনেড হামলার সাথে আইডিপি নেতাদের ঘনিষ্ট যোগসূত্র আছে। সেই হামলায় আওয়ামীলীগের উর্ধতন নেতা নেত্রীসহ ২৪ জন নিহত হন। আলোচনার সময় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল আইডিপির জন্য নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে সমর্থন আদায়ে কথা বলতে হাসিনা অস্বস্তিতে ভুগছিলেন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হাসিনা যখন জেলে বন্দি ছিলেন তখন তার ভুমিকার কথা স্মরণ করিয়ে কার্য হাসিল করার চেষ্টার জন্য এটিএম আমিনের উপর তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। হাসিনা আইডিপির রেজিস্ট্রেশন চান নি এবং তিনি সন্দেহ করেন আমিন নিজের ইচ্ছাতেই আইডিপির পক্ষে কাজ করছিলেন এবং সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন অনুমতি ছিল না অথবা এটিএম আমিনের উর্ধতন সামরিক অফিসাররাও তার পরিকল্পনার কথা জানতেন না।
[ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির নিবন্ধন ]
৩. রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি গোলাম মোহাম্মদকে জানান নভেম্বরের ৮ তারিখ তার সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মঈন উদ্দিন আহমেদের আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় মঈন উদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন আইডিপির নিবন্ধন বন্ধ করতে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। মোহাম্মদ রাষ্ট্রদূতের সাথে একমত হলেন আমিনের তৎপরতা মঈনের প্রচেষ্টাকে বাঞ্চাল করে দিতে পারে। গোলাম মোহাম্মদ ধারণা করেছিলেন জেনারেল মঈন সম্ভবত হাসিনার সাথে আমিনের আলোচনার খবর অবগত নন এবং আইডিপির পক্ষে আমিনের ক্রমাগত কাজ করে যাওয়াও সম্ভবত তার কাছে অজানা। আইডিপি প্রসঙ্গে আমিনের সাথে হাসিনার যোগাযোগের পরে বাউচারের সাথে আলোচনায় সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যকার সমন্বয়হীনতার জন্য গোলাম মোহাম্মদ গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। মোহাম্মদ ব্যর্থতার পুরো দায় নিজের উপর নেন এবং আইডিপি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে পারবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু মোহাম্মদ জানতেন আইডিপি ইতিমধ্যে তাদের গঠনতন্ত্র এবং সংবিধান সংশোধন করে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য ১১ নভেম্বর পুনরায় নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের সাংবিধানিক দলিল দাখিল করেছে। তাদের প্রত্যাশা ছিল এবার হয়ত নির্বাচন কমিশন তাদের আবেদন মঞ্জুর করবে এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারবে। মোহাম্মদ রাষ্ট্রদূতকে পুনরায় নিশ্চিত করেন আইডিপি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের পর্যবেক্ষণের সাথে ডিজিএফআই এবং সরকার পুরোপুরি একমত এবং তিনি কথা দেন সেনাপ্রধান এবং নির্বাচন কমিশনারের সাথে আলাপ করবেন যাতে আইডিপি নিবন্ধিত হতে না পারে।
[ আইডিপিঃ হুজি-বি সদস্যদের নতুন সংগঠন? ]
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদকে মনে করিয়ে দেন কিছু সংখ্যক আইডিপি সদস্য এখনো জিহাদি জঙ্গী সংগঠন বিশেষ করে হুজি-বি’র সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছে। রাষ্ট্রদূত যুক্তি দেখিয়ে বলেন দেশ স্থিতিশীল পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত আইডিপিকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হবে বাংলাদেশ সরকারের মস্তবড় ভুল সিদ্ধান্ত। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার আইডিপির কর্মকাণ্ডে প্রত্যাশা এবং সহ্যের সীমারেখা টেনে দিয়েছে।
৫. গোলাম মোহাম্মদ রাষ্ট্রদূতের যুক্তি এবং ব্যাখ্যায় স্বীকার করেন যে তিনি প্রথম দিকে হুজি-বি সদস্যদেরকে আইডিপি বা অন্যকোন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমিনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছিলেন। মোহাম্মদ বলতে চেয়েছিলেন, হুজি-বি সদস্যদেরকে রাজনৈতিক দলের আওতায় আনলে বাংলাদেশর গোয়েন্দা সংস্থা এবং নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষে আইডিপি’র হুজি নেতাদেরকে প্রয়োজনে গ্রেফতারকরা এবং হুজি-বি’র যেসব সদস্য এখনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে আছে তাদেরকে নজরদারি করা সহজ হবে। মোহাম্মদ ধারণা করেছিলেন হুজি-বি’র সংস্কারবাদীরা যারা আইডিপি’র কেন্দ্রীয় নেতা তারা রাজনীতির বাইরে থাকা হুজি-বি’র সদস্যদের ফের আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য করবে। মোহাম্মদ স্বীকার করেন, আইডিপি’র পরিকল্পনা যখন যথাযথভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন আইডিপি ব্যর্থ হয় এবং এখন তিনি আইডিপি’কে দেখছেন ঠিক রাষ্ট্রদূত যেমনভাবে বিবেচনা করেন সেই দৃষ্টিকোণ থেকে। মোহাম্মদ এখন রাষ্ট্রদূতের কাছে পরামর্শ প্রত্যাশা করেন আইডিপির সাথে কী কার্যপন্থা নির্ধারণ করা যায় এবং যদি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আইডিপির অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকে তবে হুজি-বি’র যেসব সদস্য জঙ্গীবাদ থেকে সরে আসতে চায় সমাজে তাদেরকে কিভাবে একীভূত করা যায়। (পাদটীকাঃ পরের সপ্তাহে আমরা ডিজিএফআই এর সাথে উগ্রবাদ নিরসনের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলাপ করব।)
[ মন্তব্য ]
৬. পরের সপ্তাহে সেনাপ্রধানের সাথে ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অঞ্চলের জেমস ক্লাডের সাক্ষাতকে সামনে রেখে আমরা আইডিপি প্রসঙ্গে আলোচনা করেছিলাম এবং আলোচনায় সাধারণ নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইডিপিকে রাজনীতিতে সক্রিয় রাখতে আমিনের ভূমিকা প্রাধান্য পেয়েছিল। মোহাম্মদের সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাসহ বাংলাদেশ সরকারের সবাই আমিনের সাথে আইডিপির সংশ্লিষ্টতায় বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং তারা সবাই আইডিপিকে সমর্থনদানের চেষ্টা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। সরকারের সবাই মিলিত সিদ্ধান্ত নেন ডিজিএফআই কে চাপ দিতে হবে এবং হুজি-বি নির্মূলে সরকার কার্যকরি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসবে।
BANGLADESH- (WIKI) DGFI became militants’ buddy, Amin tried to blackmail Hasina
Date:2008 November 17, 06:58 (Monday)
ডিজিএফআই প্রধান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিন ২০০৭ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একজন কূটনৈতিক ব্যক্তিকে বলেন তারা হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) জঙ্গিদের চিহ্নিত করছেন এবং নিশ্চিত করে জঙ্গিরা পশ্চিমা কোন স্বার্থে আঘাত করবে না। এবং ঠিক তার এক বছর পরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তার বার্তা ফাঁস হয়ে গেল দেখা যায় যখন ডিজিএফআই হুজি-বি’র উঁচু-স্তরের জঙ্গি নেতাদের সমন্বয়ে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি নামে রাজনৈতিক দল গঠনে সাহায্য তখন ডিজিএফআই প্রধান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিন আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে অন্যায়ভাবে চাপ দিতে থাকে যেন তিনি আইডিপিকে সমর্থন দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে রাজি করাতে পারেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১/১১ দিন গুলোতে আমিন দেশের বিভিন্ন জন-গুরুত্বপূর্ণ কাজে ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। সেই সুযোগে তিনি জঙ্গিদের সাথে মধ্যস্থতা শুরু করেন। পরে যখন গোলাম মোহাম্মদ ডিজিএফআই পরিচালক হন তখন ২০০৮ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস ফ্রান্সিস মরিয়ার্টির কাছে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তাকে নিশ্চিত করেন যে আইডিপি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হবে না।
২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস ফ্রান্সিস মরিয়ার্টির সাথে এক সাক্ষাৎকারে গোলাম মোহাম্মদকে সতর্ক করে বলেন তার সরকার বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর সহযোগিতায় জঙ্গিদের নিয়ে রাজনৈতিক দল আইডিপি গঠনের তীব্র বিরোধিতা করছে।
গোপন তথ্য ফাঁসকারী ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কূটনৈতিক তারবার্তায় অনেক অসঙ্গতি আছে কিন্তু রাতারাতি নামমাত্র রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়ে যাওয়া একটা সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের আশীর্বাদ আদায় করতে যেভাবে হাসিনার উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে সেটা খুবই চমকপ্রদ যারা কিনা অতীতে হাসিনাকেই হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা চালায়।
২০০৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাসিনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি রিচার্ড বাউচারের সাথে ওয়াশিংটনে আলোচনার খবর রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি ডিজিএফআই পরিচালককে জানান। বাউচারের সাথে সাক্ষাতে হাসিনা বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিন তাকে অনুরোধ করেছেন যেন তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাথে আইডিপিকে সমর্থন দিতে দেন-দরবার করেন। হাসিনা মনে করেন, আইডিপি সদস্যরা অতীতে তাকে এবং আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করতে প্রচেষ্টা ছালায়। হাসিনাও চান নি আইডিপি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হোক।
২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইডিপি গঠনে ডিজিএফআই’র সম্পৃক্ততার জন্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ২০০৯ সালের ১১ মে মরিয়ার্টি আকবরের বরাত দিয়ে এক তারবার্তা পাঠায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেজর জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবরকে সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই’র পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়ে বলেন কোন অবস্থাতেই যেন আইডিপিকে রাজনৈতিক অথবা অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য সমর্থন করা না হয়। তিনি আরও বলেন ২০০৮ সালের শেষ দিকে ডিজিএফআই’র প্রত্যক্ষ মদদে গড়ে ওঠে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি।
২০০৭ সালের ১৯ জুলাই ডিজিএফআই পরিচালক আমিনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য এফেয়ার্স গীতা পাসির সাক্ষাৎ হয়। সেখানে আমিন হুজি-বি থেকে কোন হামলার আশঙ্কা নাকচ করে দেন। আমিন বলেন, “হুজি-বি আমাদের হাতের নাগালে এবং তাদের তরফ থেকে পশ্চিমা কোন স্বার্থে হামলার সম্ভাবনা নেই।”
অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী-গোষ্ঠী জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নির্মূলে বাংলাদেশের সফলতার জন্য আমিনকে অনেক আশাবাদী দেখাচ্ছিল। আমরা বর্তমানে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের জন্য মধ্যস্থতা করছি। তারা যেন সাধারণ ক্ষমা পায় এবং সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত হতে পারে সেই ব্যবস্থা করছি। ২০০৭ সালের মে মাসে বাংলাদেশের তিনটি রেল স্টেশনে একযোগে বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে জাদিদ আল-কায়েদা (Zadid al-Qaeda) নামে আল-কায়েদার নতুন শাখা। কিন্তু আমিন এই হামলাকে তুচ্ছ এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেন এবং ভবিষ্যতে হামলার আশঙ্কাকে সামাজিক সমস্যা বলে দাবি করেন এবং তিনি বলেন হামলার পিছনে কারো ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে।
২০১২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার উইকিলিকস স্ট্রাটফর কোম্পানি তাদের টেক্সাসের “গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স” সদরদপ্তর থেকে গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স ফাইলস নাম দিয়ে প্রায় পাঁচ মিলিয়নের অধিক পরিমাণ ইমেইল জনসম্মুখে ফাঁস করে দেয়। ২০০৪ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ইমেইলগুলো আদান প্রদান হয়েছিল। তারা কোম্পানির মধ্যকার গোয়েন্দার ভূমিকায় কাজ করত কিন্তু অতি গোপনে বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানির কাছে গোয়েন্দা তথ্য পাচার করে দিতো। যেমন ভোপাল’স দাও কেমিক্যাল কোম্পানি, লকহীড মার্টিন, নরথ্রোপ গ্রুমান, রেথিওন এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থাও স্ট্রাটফরের তথ্য সেবা নিয়ে থাকে। স্ট্রাটফরের প্রতিটি ইমেইলে দেখা যায় গোয়েন্দা তথ্য দাতার নাম, তাদের পারিশ্রমিক কাঠামো, প্রাপ্ত বেতনের অর্থ পাচারের কায়দা এবং মনস্তাত্বিক প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশে যে এরকম ঘটনা ঘটেছে জানতাম না। ধন্যবাদ মুক্তমনা।
ব্লগ ব্লক করে কি আর কণ্ঠ রোধ করা যায়?
আজকাল কণ্ঠ রোধ করা না গেলেও সত্য প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ তো করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কি তাদের সৈন্য এবং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখে নাকি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মত ইসলামী মতবাদ দেয় সেটা লেখকের কাছে জানতে চাই।
বাংলাদেশের সেনা বাহিনীর সাথে পাকিস্তানের সেনা বাহিনীর মানসিকতা গঠনে তেমন কোন তফাৎ নেই। সেনা বাহিনী কর্তৃক পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রহত্যার ইতিহাস পাশাপাশি রাখলে এটি আরও স্পষ্ট হবে। দুই দেশের সেনা বাহিনী পাক্কা গণতন্ত্র হত্যাকারী এদের আলাদা করে ধর্মনিরপক্ষ হওয়ার কোন সুযোগ নেই।। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের সেনা বাহিনী, বিডিয়ারের মধ্যে হিজবুতপন্থী সদস্য বিদ্যমান। সেনা বাহিনীর আচরণ কী হবে সেটা মূলত রাষ্ট্র ও সংবিধানের উপর নির্ভর করে। রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু দূর্নীতিবাজ ও চরিত্রহীন সেহেতু সেনা বাহিনী এক্ষেত্রে তাদের থেকে বিভিন্ন ফায়দা নিচ্ছে; ব্যবসা করছে, বাজারে নিজের তৈরি আটা-ময়দা বিক্রি করছে, প্রতিবছর সরকারী বরাদ্দ বৃদ্ধি করছে।
সত্যকথন।