আমার বয়েস তখন ১২-১৩, এইটে পড়ি। সেদিন ছিল শুক্রবার। বৃষ্টি হচ্ছে অঝোরে, ঝড় বইছে দমকা এলোমেলো। শুক্রবার তাই স্কুল বন্ধ আমার ও আমার পিঠাপিঠি ছোটভাই শুভর। আমাদের মা প্রাইমারি স্কুল মাস্টার। তারও ছুটির দিন। রান্নাঘরে রান্নার জোগাড় চলছে। বাসায় কোনো গৃহকর্মী নেই। রান্নার জোগাড়পত্র করছি মা আর আমি। আমি সন্দ্বীপে বড় হয়েছি। তখন সন্দ্বীপে দরিদ্র মানুষেরা সামান্য একটু ভাতের বিনিময়ে অবস্থাপন্ন গৃহস্থদের সব গৃহকর্ম করে দিতো। কিন্তু আমার মা সমস্ত কাজ আমার হাতেই করাতো, কোনো গৃহকর্মী নিতে চাইতো না। আমি কাজ করতে করতে আধমরা হয়ে যদি কাকুতিমিনতি করতাম কাউকে কাজের সাহায্যের জন্য ডাকতে তখন তার এককথার জবাব–ফকিরের বাচ্চারা ভাত বেশি খায় বড়লোকেদের বাড়িতে কাজ করতে এলে। আর তোকেই বা আমি বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবো কেন অন্য কাউকে ভাত খাইয়ে কাজ করিয়ে? তোকে বিনা কাজে বসিয়ে খাইয়ে তোর শরীরে চর্বি করে দিয়ে আমার লাভ কী?
কচুমুখী আর কচুর লতি রান্না হবে সেদিন; কী যেন মাছ দিয়ে। মাছ কোটার পরে আমি কচুমুখী আর লতি কুটছি। কাটাকোটা শেষ হলে খোসাগুলি ফেলতে আমি রান্নাঘরের দরজার বাইরে বের হলাম। রান্নাঘরটি দক্ষিণদুয়ারী। রান্নাঘরের বেড়ার বাইরে চালের নিচেই চিকন বারান্দার মতো টানা জায়গা। সে পথ দিয়ে হেঁটে আমরা রান্নাঘরের পশ্চিমদিকে অনেকখানি লাগোয়া টয়লেটে যাই। টয়লেটের সামান্য পশ্চিমেই একটা পুকুর। পুকুরটা অনেকটা পরিত্যক্ত। আমি প্রতিদিনের ঘর ও রান্নাঘরের উঠোন ঝাঁট দেওয়া ময়লা এবং মাছ-তরকারি কোটা ময়লা সেই পুকুরের পাড়ের ভেতরের দিকে ফেলি। সেদিন ময়লা ফেলতে পুকুরপাড়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে দেখি, বৃষ্টি বাদলে অবস্থা ভয়াবহ। রান্নাঘরের পশ্চিমের কোণ ঘেঁষে একটা পেয়ারাগাছ। আমি পেয়ারাগাছের গোড়ার দিকে লক্ষ্য করে তরকারির খোসাগুলি ছুঁড়ে ফেলি। আমার মা তা দেখতে পেয়ে আমাকে আকাশ-পাতাল গালাগাল ও অভিশাপ দিতে শুরু করে। আমাকে এলোপাথারি লাথি মারতে থাকে। আমি বলার চেষ্টা করি, বৃষ্টি ও ঝড়ের জন্য আমি পুকুরপাড়ে গিয়ে ময়লাগুলি ফেলতে পারিনি। বৃষ্টি থেমে গেলে ঝাঁট দিয়ে দেবো। তাতে সে আমার আরো বেশি প্রবলবেগে মার, অভিশাপ ও গালি দিতে থাকে।
এরপর আরো বেশি ক্রুদ্ধমূর্তি ধারণ করে বলে, এবার দেখবি আসল মজা। তোর নাগরকে ডেকে এনে এখন তোকে উচিত শিক্ষা দেওয়াবো। আমার নাগর মানে আমার পিতা। পিতা বসে ছিল মেইন ঘরের বারান্দায়। সে পোস্টমাস্টারের চাকরি করতো। তারও আজ ছুটির দিন। আমাদের ঘরে টিনের চাল। টিনের চালে প্রচণ্ড বৃষ্টির আওয়াজ ও ঝড়ের শোঁ শোঁ শব্দের কারণে পিতা রান্নাঘরের আরো প্রচণ্ড মার গালি ও অভিশাপের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিল না। মুহূর্তেই মা পিতাকে সামনের ঘরের বারান্দা থেকে হাত ধরে টেনে এনে আমার সামনে হাজির করে। পেয়ারাগাছের নিচে তরকারির খোসাগুলির দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, এই মাগী ওই যে ওইখানে তরকারির খোসা ফেলেছে। পিটিয়ে এর যোনি থেতলিয়ে দাও। পিতা বলে, তথাস্তু। মায়ের হুকুম তামিল করতে সাথেসাথে হুংকার দিয়ে পিতা আমার গায়ে উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমাকে শূন্যে তুলে আছাড় মারে রান্নাঘরের মেঝেতে কয়েকবার। আমাকে মেঝেতে শুইয়ে আমার শরীরের উপর পাড়াতে থাকে প্রবলভাবে। চোখ দিয়ে তার দাউদাউ আগুন বের হতে থাকে জিঘাংসা আর ক্রোধের। মুখ দিয়ে উগড়াতে থাকে জ্বলন্ত লাভা; ঘৃণ্য সব গালির লাভা। চ-বর্গীয় গালিসহ অন্যান্য বর্গীয় গালির অন্তহীন স্রোত অবিরাম বের হতেই থাকে। এবার সে একটা দা হাতে তুলে নেয়। যে দা দিয়ে আমি তরকারি কুটেছিলাম সেই দা-টা। দা আমার গলায় বসিয়ে দেয়। জবাই করে দিতে চায় আমাকে। তারপর তার একটা পা দিয়ে আমার এক পা পাড়িয়ে চেপে ধরে রেখে অন্য পা শূন্যের দিকে টেনে টেনে আমাকে ছিঁড়ে ফেলতে চায় এবং দা-টা আমার যৌনাঙ্গের মধ্যে ধরে বলতে থাকে, এই দা এখনই তোর যোনি দিয়ে ঢুকায়ে দেবো। আমি চিৎকার করে কাঁদি। কাতর হয়ে বলি, আব্বা, আব্বার গো, আর করবো না জীবনে। মাফ করে দেন। এবার সে আরো ভয়ানকমূর্তি ধারণ করে বলে, পেয়ারাগাছের নিচ থেকে সমস্ত তরকারির খোসা একটা একটা করে তোর মুখ দিয়ে কামড়ে কামড়ে পুকুরপাড়ে নিয়ে ফেলবি এখনই।
আমাদের অনেক হাঁসমুরগি ছিল। বৃষ্টি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সবাই এসে আশ্রয় নিয়েছে আজ পেয়ারাগাছের নিচে। ডালপালা পাতার কারণে গাছের নিচে বৃষ্টির পানি পড়ে কম। ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওরা দিনভর বিষ্ঠাত্যাগ করেছে। গাছের তলটা তাই আজ জলকাদা আর হাঁসমুরগির বিষ্ঠায় সয়লাব। তার এই হুকুম শুনে আমি অসহায় করুণ মিনতির চোখে মায়ের দিকে তাকাই। আমি আশা করি, মা আমাকে এই শাস্তি থেকে রক্ষা করবে। তাকে বলি, মা, আর করবো না। মায়ের মুখে সন্তুষ্টি আর তৃপ্তির হাসি। আমাকে বলে, এখনই যা, মাগী, খোসাগুলি একে একে মুখ দিয়ে কামড়ে পুকুরপাড়ে ফেল, নইলে অবস্থা আরো খারাপ করিয়ে দেবো। আমার ছোটভাই শুভ চলমান ঘটনায় খুবই মজা পাচ্ছে। ফিকফিকিয়ে হেসে বলছে, ফেল মাগী, ফেল। এবার পিতা সর্বশক্তি দিয়ে আমার নিতম্বে লাথি মারে। আমি নিজেকে পেয়ারাগাছের নিচে উপুড় আবিষ্কার করি। আমার মুখ আর চুল হাঁসমুরগির বিষ্ঠা আর জলকাদার মধ্যে ডুবে আছে, আমার গায়ে এসে পড়ছে ঝড়বৃষ্টির ছাঁট। হাঁসমুরগিরা আমার দিকে কৌতুকের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পিতা হাতে দা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রান্নাঘরের দুয়ারে, তার পাশে মা আর ছোটভাই শুভ। তিনজনই সুর মিলিয়ে বলছে, ফেল, মাগী ফেল, কামড়ে কামড়ে ফেল। আমি হাঁসমুরগির বিষ্ঠা আর জলকাদার ভেতর থেকে কামড়ে কামড়ে একটা একটা করে লতি আর কচুমুখীর খোসা পুকুরপাড়ে নিয়ে ফেলতে থাকি হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে। ঝড়ের কারণে খোসাগুলি একটু চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল ফেলার সময়। আমি চোখ দিয়ে খুঁজতে থাকি এদিক-ওদিক আঁতিপাতি, আর কোথাও কোনো খোসারর চিহ্ন আছে কি না। বৃষ্টির ছাঁট এসে লাগে আমার চোখে। নিজের চোখের বৃষ্টি তো আছেই। আমার দৃষ্টি জলে ডোবা ঝাপসা। আমি চোখে ভালো দেখতে পাই না। চোখমুখে বিষ্ঠায় কাদায় মাখামাখি হয়ে আমি মায়ের দিকে তাকাই কাতর চোখে। সে আমায় দেখিয়ে দেয়, ওই যে ওই দূরে আরো কয়েকটা দেখা যাচ্ছে খোসা! আমি ছুটে যাই, হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে একে একে সবকটি খোসা কামড়ে কামড়ে নিজের মুখে তুলে নিয়ে ফেলে দিয়ে আসি পুকুরপাড়ে। আমার মুখের ভেতরে দাঁত জিহ্বা সব বিষ্ঠাময়। আমার চুল মুখমণ্ডল হাত পা পুরো শরীর বিষ্ঠায় মাখামাখি।
আপনারা ভাবছেন, বিষ্ঠায় কামড় দিয়ে দিয়ে আমি খোসা তুললাম কীভাবে? আমার কি বিবমিষা লাগেনি? না। জীবন বাঁচাতে তখন আমি আরো ঘৃণ্য কিছু করতেও পিছ পা হতাম না। জীবন এমনই জিনিস! আমি এই হুকুম পালন না করলেই তো সাথেসাথে কোপ বসিয়ে দেবে। আমার তখন মান-অপমান বোধ নেই। আমার জিহ্বা বিষ্ঠার স্বাদ উপভোগ করতে ভুলে গেছে। ঘ্রাণেন্দীয় ভুলে গেছে বিষ্ঠার গন্ধ উপভোগ করতে। শরীর ভুলে গেছে ব্যথা পেতে। আমি রান্নাঘরের সামনে এসে দাঁড়াই। আমার পিতামাতা ও ভাইয়ের মুখ তখন পরিতৃপ্ত ও খুসিখুসি। শুভ, আমার ভাই, মাকে বলে, মা, আমি এখন থেকে ওকে হাঁওরা ডাকবো, কেমন? মা তার ছেলেকে বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আদুরে করে বলে, তুমি আজকে থেকে একে অবশ্যই হাঁওরা ডাকবে, বাছা। হাঁওরা হচ্ছে কোদালের মতো একটা জিনিস। আকারে কোদালের চেয়ে কিছুটা বড়। মানুষে মাটি কাটা ও ময়লা আবর্জনা ফেলার কাজে ব্যবহার করে। আমি আজ পিতামাতার সম্মিলিত হুকুমে নিজের মুখে কামড়ে বিষ্ঠা ফেললাম। আমি হাঁওরাই তো! সেদিন থেকে আমার বিয়ের আগ পর্যন্ত আমার ভাই আমাকে হাঁওরা ডেকেছে অন্যান্য খারাপ নামের সাথে। নানান খারাপ নাম উপাধি খেতাব ইত্যাদি তো আমি পেতামই প্রতিদিন আমার পিতামাতা ও ভাইদের কাছ থেকে।
গল্প?
খুব ভালো লাগলো, আরো অনেক লিখুন, অপেক্ষা করতে ভালো লাগে না। ধন্যবাদ।
আসলে সন্তানের মঙ্গল যে কিসে সেটাই জানেনা আমাদের দেশের বেশির ভাগ মা-বাবা। আর যা জানেই না তা অনুশীলন করবে কিভাবে? বাচ্চা-কাচ্চা প্রতিপালন এবং এদের যে অধিকার ও স্বাধীনতা দেয়া দরকার সে সম্পর্কে সচেতন করে তুলার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
এটা নিয়ে বিতর্ক আছে যে সন্তানদের মা-বাবার কাছে রেখে নাকি সন্তান প্রতিপালনের উপর যারা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত তাদের কাছে রেখে মানুষ করা উচিত। উভয় পক্ষেই অনেকগুলো যুক্তি আছে। কেউ মা-বাবা হলেই সন্তানদের মন-মানসিকতা, বিকাশ আর গড়ে তোলার ব্যাপারে সচেতন হবেন তার গ্যারান্টি দেয়া মুশকিল। কিন্তু তারপরেও এর সমাধান ঐ কথিত প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের উপর দেয়া যায় না সংগত কারণেই। তাই উন্নত বিশ্বে সন্তান মানুষ করার মূল দায়িত্ব স্কুল নিয়ে নেয়।
এবার আসি আপনার ঘটনায়। পুরো ঘটনায় বেশ কিছু ঝামেলা আছে, সেগুলো ও কিছু প্রশ্ন
১। আপনার মা-বাবা-ভাই সবাই কি কোনো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন? সমষ্টিগতভাবে পরিবার বা কোনো এক দলের মানসিক সমস্যা হওয়া অসম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আপনার মা-বাবার এই আচরণ থেকে কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়া ঠিক হবে না, কারণ তারা তো স্বাভাবিক না।
২। বাচ্চারা কোমল মনের হয়। তারা নিজস্ব কল্পনাপ্রবণতায় কাল্পনিক বাস্তবতা তৈরী করে যা পরবর্তীতে স্মৃতিতে গেঁথে থাকে। আমি ছোট বেলায় (হয়ত স্বপ্ন বা কল্পনায়) দেখেছিলাম বিশাল দেহের একটা কালো প্রাণী হেলেদুলে হাঠছে। এটি বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত স্মৃতি থেকে বাদ দিতে পারি নি যদিও স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি এ ধরণের প্রাণী বাস্তবে নাই।
৩। বিভিন্ন কারণে আমরা মা-বাবার উপর ক্ষিপ্ত হই। কারণ তাদের সাথেই তো আমাদের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতা থাকে। খুব বেশিদিন মা-বাবার সাথে এক সংসারে থাকার ফলে ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠে না এবং অতিরিক্ত ঘনিষ্ট সম্পর্কের ফলে শিশুসুলভ বৈশিষ্ট্যগুলো দূর হয় না। শেষে এক সময় বাধ্য হয়ে মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন হলে বয়স্কদের মধ্যেও বৈকল্য দেখা দেয়। এটেনশন সিকের অংশ হিসাবে নিজে নিজে গল্প বানিয়ে নিজেই বিশ্বাস করে বসে থাকে।
৪। লুৎফুর রহমান রিটন তার এরকম এক ব্যক্তিগত হৃদয় বিদারক কাহিনী বলেছিলেন। কিভাবে পরিবার থেকে তিনি বাধ্য হয়ে চিরদিনের জন্য চলে আসেন, তার মা তার স্ত্রীর উপর যেসব অমানবিক নির্যাতন করেছেন এগুলো। স্বভাবতই আমি নিশ্চুপ ছিলাম। ভাল করে স্টাডি না করে এগুলো নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়।
৫। আপনার এ কাহিনীর যে ঝামেলা তা হচ্ছে
প্রথমত, আপনার মা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। একজন স্কুল শিক্ষকের একেবারেই কমন সেন্স থাকবে না সেটা আশা করা মুশকিল। তিনি এরকম ব্যবহার স্কুলে করলে এলাকার মানুষ হৈ চৈ করে চাকরি থেকে বের করার ব্যবস্থা করে দিত। আপনার বয়স ১২ বা ১৩ হলে আপনি তো আহামরি বড় হয়ে যান নি, আপনার মা আপনাকে মারতে চাইলে মারতে পারতেন, কিন্তু বাবাকে ডাকলেন কেন?
দ্বিতীয়ত, আপনার মা বললেন আর অমনিতেই আপনার বাবাও রেগে গিয়ে একদম দা হাতে নিয়ে আপনার যৌনাঙ্গের মধ্যে ধরে বলতে থাকে, এই দা এখনই তোর যোনি দিয়ে ঢুকায়ে দেবো। এটা মানসিকভাবে সুস্থ কারো পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব। আপনি যা করেছেন মানে খোসাটা গাছের নিচে ফেলেছেন, সেটা এতই তুচ্ছ যে বেশির ভাগ মা-বাবা তাতে এমনকী রাগও করবেন না। অথচ এখানে হচ্ছে কী, আপনার মা আপনার বাবাকে বললেন, ওর যোনী থেতলে দাও আর আপনার বাবা সত্যি সত্যি তা-ই করতে নেমে গেলেন! আপনার বাবা পোস্ট মাস্টার ছিলেন। এভাবে রেগে গিয়ে চিটি পত্র কোথাও ফেলে দেয়ার ঘটনা কয়বার ঘটিয়েছেন আর এতে তার চাকরি কি বহাল ছিল? বলছি না যে পেশাগত জীবনে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও তিনি পারিবারিক জীবনে সহিংস হবেন না, কিন্তু তাই বলে এতটা?
তৃতীয়ত, আপনার ছোট ভাইও মা-বাবার সাথে যোগ দিয়েছে। আপনি যদি ৮ম শ্রেণীতে পড়েন তবে সে আরো ছোট। এতে আমার সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে যে আপনি হয়ত একটি ছোট ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাত পেয়ে একে কল্পনার জগতে বড় করে তুলেছেন। আপনি আবার লেখেছেন, ‘মা তার ছেলেকে বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আদুরে করে বলে’। তার মানে আপনার মা পুরোপুরি ডাইনি ছিলেন না, তিনি বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে জানেন।
৬। শেষাংশ – আপনাকে মুখ দিয়ে খোসা তুলতে বাধ্য করা। হরর ছবি হয়ত এমন হয়।
৭। এরকম পরিবেশে লেখাপড়া থেকে আরম্ভ করে বাদবাকি সব এগুলো সম্ভব হল কিভাবে? (ব্যক্তিগত প্রশ্নগুলোর উদ্দেশ্য ভিন্ন, উত্তর দিতে হবেনা।)
সবশেষে যা বলব তা হচ্ছে, মা-বাবা সন্তানদের প্রতি স্নেহশীল হবেন-ই। এর বাইরে যা হবে সেটা ব্যতিক্রম, এবং এই ব্যতিক্রমের জন্যও একটা ব্যবস্থা থাকা উচিত সমাজে। তবে আপনার ব্যক্তিগত ঘটনা থেকে কিছুই নেয়ার নেই, কারণ এটি মানসিকভাবে সুস্থ কেউ করতে পারে বলে মনে হচ্ছেনা। ঘটনা সত্য হলে তাদের চিকিৎসা দরকার, আপনারও ডাক্তারের সহযোগিতা দরকার এই ট্রমা থেকে বের হওয়ার জন্য।
সৈকত, আপনার প্রশ্নগুলি এই পোস্টের ভিত্তিতে প্রাসঙ্গিক ও যৌক্তিক। ধন্যবাদ আমার লেখাটি মন দিয়ে পড়ে প্রশ্নগুলি করার জন্য। আপনার প্রতিটি প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দিতে আমার আকুল আগ্রহ হচ্ছে। কিন্তু তা করতে গেলে একটা বই লিখে ফেলতে হবে। কিছুটা বলার চেষ্টা করছি।
১, আমার বাবামার মানসিক সমস্যা ছিল কিনা, জানি না। তবে আমার ভাই যা করেছে সেদিন ও অন্যান্য সময় তা বাবামার কাছে থেকে দেখে দেখে। ও আমাকে বিয়ের আগ পর্যন্ত হাঁওরা মুখে ডেকেই ছেড়ে দেয়নি। মুখ দিয়ে কাড়মে কামড়ে বিষ্ঠা থেকে খোসা ফেলার অভিনয়ও করে দেখাতো প্রতিবার অতি আনন্দের সাথে। আমার বুক ভেঙে যেত অপমান ও কান্নায়। মাকে বলতাম, ওকে একটু থামান। মা আরো উস্কে দিতো। ও ছোট মানুষ ভালো মন্দ বোঝার তো বয়েস হয়নি। আর ছোটদের চেয়ে সবসময় বড়রাই ত অন্যায় বেশি করে। ওর তখনকার আচরণটা আমি অন্যায় হিসেবে এখন আর ধরি না।
পয়েন্ট ৫-এর উত্তর – স্কুল শিক্ষক এমন কি ইউনিভার্সিটি শিক্ষক হলেই যে কমন সেন্সসম্পন্ন হয় তা নয় কিন্তু। আমরা শিক্ষকদের অনেক বাজেকর্মের ইতিহাস জানি। আমাদের হাই স্কুলে প্রতিদিনই দুই একজন করে ছেলেমেয়ে অজ্ঞান হতো শিক্ষকদের হাতে মার খেয়ে। কতটুকু মার খেলে প্রতিদিন মার খেয়ে অভ্যস্ত একটা মানুষ অজ্ঞান হতে পারে, ভাবুন! স্কুলের মাঠে বের করে পুরো পৃথিবীকে দেখিয়ে দেখিয়ে আমাদের হেডস্যার ছেলেদের মারত মামুলি কারণে। ছেলে অজ্ঞান হয়ে মাঠে পড়ে গেলে রিকশায় করে আরেকটা ছেলেকে সাথে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিত। মেয়েদেরও তাই করতো। কোনো অভিভাবক অভিযোগও করত না। আর আমার মা যে স্কুলে মাস্টারি করত সেটা আমার প্রপিতামহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে সরকারি হয়। স্কুলের মাস্টার ছিল আমার মা, আমার বাবার এক জেঠাত ভাই ও আরেক জেঠাত ভাইয়ের বৌ। সবাই পরিবারের মানুষ। বাইরের কেউ আসলে বেশিদিন টিকতে পারত না। স্কুলে কোনো পড়ালেখা ত হতো না। আমার মা অনেক সময় অনেকদিনের দস্তখত একবারে করে দিয়ে চিটাগাং বেড়াতে চলে যেতো। স্কুলে গিয়ে কাঁথা শেলাই করত। আমার জেঠা জেঠিরাও তাই করত। আমাদের এলাকায় আমাদের পরিবারটি ছিল তখন সবচেয়ে বেশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও প্রতাপশালী। আশেপাশের লোকজন দরিদ্র নিরিক্ষর ও এদের ভয়ে সদা ভীত। স্কুলে গিয়ে দরিদ্র ছেলেমেয়েদের ‘ফরিকের বাচ্চারা স্কুলে আসিস কেন রে’ বলে গালাগাল ও মার দেওয়া ছিল এদের প্রধান কাজ। এই মাস্টাররা সবাই স্কুল থেকে ছেলেমেয়ে ধরে এনে বাড়িতে কাজ করিয়ে নিত। স্কুলের সরকারি টেবিল চেয়ার টুল ইত্যাদি ভাগাভাগি করে বাড়িতে নিয়ে এনে ব্যবহার করতো চিরতরে। স্কুলে কোনো পরিদর্শক এলে ভয়ে ভাল রিপোর্ট লিখতো। আমার পাড়ারই একজন ছিলেন স্কুল ইনসপেক্টর। তিনি একবার স্কুলে এসে বলেছিলেন, তোমরা ত ছলেমেয়েদের পড়াশোনা কিছুই করাও না। আমার যে জেঠিও সেই স্কুলে মাস্টারি করত তার স্বামী সেই ইনসপেক্টরকে পিটিয়েছিল সেজন্য।
আমার মা ত সবসময়ই আমাকে মারতো। কিন্তু মারের ব্যপারে আমার বাপ আরো বেশি পিশাচ ছিল। তাই তার হাতে বড় বড় মারগুলি খাওয়াতো। অনেক সময় মিথ্যে বলেও মার খাওয়াতো।
খোসা ফেলার জন্য এমন মার ও গালি দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হলো কীভাবে! ১০ বছর বয়েসে একবার বাড়ির সামনে বেরিয়েছিলাম। আমার সমবয়েসীরা সবাই খেলছিল। আমারও ইচ্ছা হলো। সেজন্য আমার বাপ আমাকে বেদমভাবে পিটিয়ে ও কদর্যভাবে গালি দিয়ে তারপর শীতের রাতে পুকুরে মাঝখানে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল সারারাত। আমার বাপমার বিয়ের অনেক আগে ৭৪ সনে যখন দেশে দুর্ভিক্ষ, আমাদের এক হতদরিদ্র প্রতিবেশী বেচনকে পান চুরির সন্দেহে আমার বাপ পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল জনসমক্ষে। আমাদের এক প্রতিবেশীর মুরগি আমাদের ঘরে ঢুকেছিল বলে আমার বাপ মুরগিটিকে ধরে সাথে সাথে ছিঁড়ে কয়েক টুকরো করে ফেলে দিয়েছিল। প্রতিদিনই সে মানুষ পিটাত শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই রেহাই পেতো না। মানুষকে খুব জঘন্য ভাষায় গালি দিত। এদের দুজনের মত এত বাজে গালি আমি জীবনে আর কাউকে দিতে শুনিনি। নিত্যনতুন গালি আবিষ্কার এদের উৎসব ছিল। কখনো কাজের মানুষ নিলে আমার মা তাদের খেতে দিত না, পারিশ্রমিক তো দূরের কথা। বাপ মানুষের ছালগ তার জায়গায় আসলে ছাগলের হাতপা ভেঙে দিয়ে পুকুরের মাঝখানে ছুঁড়ে মারত। গরুকে পিটিয়ে পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলত। মানুষের ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের মেরে আগাগোড়া ফাটিয়ে ফেলোতো, গলা টিপে দিত, শূন্যে তুলে আছাড় মারতো। তাদের অপরাধ; কেউ হয়ত মাঠে খেলছে। খেলবে কেন? ধরে মার। কেউ হয়ত তার জমির পাশ দিয়ে হেঁটে গেছে। ধরে মার। আমাদের কলাগাছের নিচে এসে দাঁড়িয়েছিল একটা ৫-৬ বছরের ছেলে। কলা চুরি করতে এসেছে সন্দেহ করে তাকে মেরে পুরো শরীর ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছিল। হয়ত এসেছিল বাচ্চাটি কলা নিতে। তাতে কী হয়েছে? এজন্য এভাবে মারতে হবে তাকে? আমার মা শীতের সকালে ঘুমন্ত আমার গায়ে এক জগ পানি ঢেলে দিত। আর আমার ভাইদের গায়ে লেপ জড়িয়ে দিত। একজনের ধান চুরি করেছে সন্দেহে এক লোককে সারা মেরে ভর্তা বানানোর পর তার প্রতিটি আঙুলের নখের ভেতরে সুই ঢুকিয়ে দিয়ে তারপর তার গায়ের উপর পাটা দিয়ে তাকে চাপা দিয়ে রেখেছিল। সে লোক কয়েকদিন পর মারা যায়। মিলিয়ন মিলিয়ন আছে এরকম ঘটনা। আর কত বলবো। সব লেখার ইচ্ছে আছে।
চাঁদের দুই পৃষ্ঠা দুরকম। আমার মারও তাই। আমার ভাইদের জন্য তার জান হাজির। ওদের কোনোদিন ফুলের আঘাত দেয়নি। আর আমাকে বলত, আমার জন্ম নাকি কুমুহূর্তে, আমার জন্য তাদের ঘরে রহমতের ফেরেশতা ঢোকে না। আমার বুক ও যোনির চর্বি দেখে ওরা লানত দিতে দিতে চলে যায় ফিরে। আমার চেহারা কুৎসিত। এত কুৎসিত যে কোনো কুকুরও আমাকে বিয়ে করবে না। কোনো সন্তান কি কখনো কোনো মায়ের কাছে বিশ্রী হতে পারে? কোনো বাচ্চা কি কারো কাছেই বিশ্রী হতে পারে? আমার কাছে তো পৃথিবীর সব বাচ্চাকেই ফুলের মতো সুন্দর লাগে। তার ছেলেদের তো কোনোদিন সে বিশ্রী বলেনি!
সৈকত চৌধুরী, ‘স্কুল শিক্ষক’ শুনেই আপনি ধরেই নিয়েছেন এমন কিছু হতে পারে না। আপনার ভাবনা চিন্তা এখনও গতানুগতিক ভাই। এটা বদলানো জরুরী। শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে বাস্তবতা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে।
আমি যাকে বিয়ে করতে চাই সেই মেয়ের বাবা বাংলাদেশের সুনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদধারীও বটে। উনার ছাত্র-ছাত্রীরাও উনার প্রশংসা করে। অথচ সে একটা পশু। এটা আমার কথা না। উনার মেয়েরই কথা। উদাহরণ দিলে বুঝবেন। আমার প্রেমিকা ছেলে না হয়ে মেয়ে হল কেন এ জন্য উনি জন্মের পর দেখতে পর্যন্ত যায়নি তার মেয়েকে। ছোট বেলায় কোলেও নিতো না। স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় উনি আর উনার স্ত্রী গত ২৫ বছর ধরে আলাদা বিছানায় ঘুমান। তাদের এই একটাই সন্তান। বউকে পিটাতে পারতো না তাই এই মেয়েকে যখন তখন পিটাতো। যেমন- উনার ভাইয়ের ছেলে হয়েছে এই রাগে কোন কারণ ছাড়াই উনি অমানুষের মত পিটিয়েছেন নিজের মেয়েকে। এসএসসির সময় ছোট খাটো ভুলের জন্য গায়ের উপর উঠে পা দিয়ে পিষেছেন সর্বশক্তি দিয়ে। মেয়ে মাস্টার্স পাস করেছে একবছর হল। গালি আর মাইর এখনও দেয়। গালি কেমন সেগুলোও আপনাকে বুঝানোর জন্য বলছি- বেশ্যার মেয়ে, বান্দীর মেয়ে এ ধরণের গালি খুব স্বাভাবিকভাবেই দেয়। আর জুতা দিয়ে মারে যখন তখন। মেয়েকে ভার্সিটিতে রিক্সা ভাড়া ছাড়া আর একটাকাও দিতো না। চাইলে বলতো নষ্টামি করবে কি না ওই টাকা দিয়ে।
কথাগুলো এলোমেলো ভাবেই বললাম। আশা করি বুঝবেন তবুও। এমন মানুষ থাকে ভাই। আমার বাবাও কথায় কথায় আমার মাকে গালাগালি করতো, মায়ের বংশ নিয়ে খোটা দিতো, মাকে মারতো। আমি ছোট বেলায় এসব দেখতাম আর কাঁদতাম। সময় পেলেই মানুষের সমালোচনা করতো বাবা মা। এসব কারণে আমাদের ভাইবোনের মাঝে মানসিক সমস্যা তৈরী হয়েছে এটা এখন আমি বুঝি। আমার প্রেমিকার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সেও অনেকটাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
বমার বাবা আর আমার প্রেমিকার বাবা কিন্তু আমাদের পড়ালেখার জন্য কোন কমতি করেনি। কিন্তু তারা এই যে আমাদের, আমাদের মা দের খাওয়ায়, কাপড় আর লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছে এসব নিয়ে সবসময় খোটা মারে।
সবকথার মূল যেটা বলতে চাইছি। এমন অনেক বাবা মা ই আছে আমাদের চারপাশে। শুধু তাদের কথা আমাদের কানে আসেনা এই যা। গত দুইবছরে বাংলাদেশেই নিজের বাবা কতৃক মেয়ে ধর্ষণের অন্তত চারট-পাঁচটি ঘটনা পত্রিকায় পড়েছি আমি। তাই, কোন কিছুই শুধু অনুমান থেকে বলিয়েন না ভাই। ভালো থাকব।
নিষ্ঠুর এবং রেপিষ্ট বাবার অনেক কাহিনী শোনা যায়। কিন্তু এরকম নিষ্ঠুর মায়ের কথা শুনিনি। সব মা যে “মমতাময়ী মা” নয়, লেখাটা তাই বলে।
একটা ভালো লেখা হিসেবেই নেবো। এর মধ্যে একটা কণা পরিমান সত্য হলেও সন্তানদের জন্য দু:সহ যন্ত্রনাদায়ক।
সব সত্য, দাদা!
নিলাঞ্জনা আপু,আপনি কার আদর পেয়ে বড় হয়েছেন? এই পরিবেশ এ কেউ ত আপনাকে এক টু ভালবাসত।সেই মানুষ টা কে ছিল?
আপনার অটোবায়োগ্রাফি পড়ে সত্যি খুব খারাপ লাগছে।বাবা মা এরকম হতে পারে এটা ছিল সম্পূর্ন আমার জানার বাইরে। আচ্ছা আপনার বাবাকি এলাকায় কোন রাজনীতি করতেন? এছাড়াতো এতো প্রভাবশালী হোয়াইট সম্ভব. ন্য।