ছাত্রলীগ দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার নারী

বাঙালি লম্পট কে প্রভু বানায় আর নির্যাতিতা কে বেশ্যা বলে গালি দেয় ।

-বিশ্বাস হয় না ?

প্রমাণ দিচ্ছি, দশ বছর ক্ষমতায় থাকা আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্র প্রধান এরশাদের কথিত স্ত্রী হিসেবে মেরি, জিনাত মোশাররফ ও বিদিশা ইসলাম এর নাম পাওয়া যায়। এর মধ্যে বিদিশাকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু স্বার্থসিদ্ধির পর পচা কলার খোসার মত এনাদের ছুড়ে ফেলতে তার ন্যূনতম লজ্জাবোধ হয়নি। অথচ এই লোকটি এখনো বাংলাদেশে একটা শ্রেণীর কাছে জনপ্রিয় । এর মধ্যে নারীকুলের সংখ্যাও নেহায়েত কম না। একটা নিরেট চরিত্রহীন লম্পট লোক এই দেশের রাষ্ট্র প্রধান ছিল সেটা নিয়ে তার ভক্তকুলের কোন ধরনের আক্ষেপ নেই! অথচ তসলিমা নাসরিন স্বৈরাচার সরকার কিংবা লাম্পট্য না করেও সারা জীবন বেশ্যা গালি খেয়ে গেলেন। পুরুষ এবং রাজনীতিবিদ হলে পুরো চিত্রটাই পালটে যেত।

যাই হোক, রাজনীতিবিদদের যৌন কেলেঙ্কারি বিষয়ে লিখতে গিয়ে মনে পরে গেল নব্বইয়ের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২ তম রাস্ট্রপতি উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন এবং হোয়াইট হাউসের কর্মী মনিকার যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা ছিল বহুল আলোচিত। যদিও দুজনেই প্রাপ্ত বয়স্ক এবং আইন এর দৃষ্টিতে তারা অপরাধী ছিলেন না কিন্তু হিলারীর প্রতি অন্যায়টা মার্কিনীরা মেনে নেয়নি। এর ফলাফল এই একটা মাত্র ঘটনা কে কেন্দ্র করে ক্লিনটনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু ক্লিনটন-ই নন এই নামের লিস্টটা নেহায়েত ছোট নয় যেমন এই বছরে শুরুতেই যৌন হয়রানির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান জাতীয় অর্থ বিষয়ক কমিটির প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ক্যাসিনো মুঘল স্টিভ ওয়েন।

এই দিকে একই ধরনের অভিযোগ নিয়ে ব্রিটিশ সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় চলছে, সেখানে অন্তত ৪০ জন মন্ত্রী-এমপি’র বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে । অভিযুক্ত নেতাদের নিয়ে মিডিয়া আর ব্রিটেনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন উত্তপ্ত । এদের ক্যারিয়ার এর পালে যে আগুণ লেগেছে তার সমাপ্তি ছাই-এ গিয়ে-ই শেষ হবে।

কেন এতগুলো কথা বলতে হল এবার সেই প্রসঙ্গে আসি, ৭ ই মার্চের মিছিলে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া মেয়েদের সঠিক সংখ্যা হয়ত কখনো জানা যাবে না কিন্তু আমার চোখে আট থেকে নয়টা স্ট্যাটাস পরেছে, তাই ধরে নিচ্ছি সংখ্যাটা দশের মত। অদিতি বৈরাগী নামের কলেজ পড়ুয়া মেয়েটা কে ধন্যবাদ দেই, ও এই বিষয়টা না লিখলে, বঙ্গবন্ধুর সৈনিকও যে বরাহ গোত্রীয় হয় সেটা হয়ত আমার চোখ এড়িয়ে যেত। প্রথমে মেয়েটাকে পাগল প্রমাণের চেষ্টা করা হল কিন্তু পরবর্তীতে যখন ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেল তখন মেয়েটাকে গালিগালাজ করা হল, নানা ভাবে হুমকি দেয়া হল, সামাজিক ভাবে অপদস্ত করা হল। একটা বাচ্চা মেয়ের উপর দিয়ে যে ঝড় যাচ্ছে সেটা বুঝতে কষ্ট হবার কথা না।

ওর বাবা মামলা করেছেন জেনেছি কিন্তু বিচার হবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের অসংখ্য কারন দেখাতে পারব। এই যেমন , আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে সেটাই আশা করেছিলাম কিন্তু বর্তমান ছাত্রলীগের অবস্থান সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারনা হল যখন ওবায়েদুল কাদের সরাসরি বলে ফেললেন, এই দায় দলের না !

স্বভাবতই প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে ,
আচ্ছা বলেন তো , আপনার খোঁয়াড়ের ছাগল পাশের বাড়ির গোলাপ গাছ খেয়ে ফেললে দায় আপনার না, তবে কার ?

আচ্ছা আরও ভাল করে বলি, ধরেন আপনি সময়ের অভাবে নিমাঙ্গের চুল পরিষ্কার করেননি এবং এক সময় সেই চুল এক হাত লম্বা হয়ে গিট্টু লেগে গেল , এর দায় কি আপনার না ?

কতিপয় আওয়ামী নেতাদের বক্তব্য শুধু এই ধরনের ম্যা ম্যা বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও হত কিন্তু এদের লেজ যে সোজা হবার নয় তার প্রমাণ স্বরূপ চট্টগ্রামের মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল আজিম রনি সরাসরি নির্যাতিত মেয়েগুলো কে বেশ্যা লিখে তার স্ট্যাটাস প্রসব করলেন এবং সেখানে শতশত সম বরাহরা নিম্নাঙ্গ ঝাঁকিয়ে সহমত জানাল । সত্যি-ই কি বিচিত্র এই বরাহ সম্প্রদায়!

গত বছরের সেপ্টেম্বরে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডার মন্ট্রিয়লে গ্লোবাল ফান্ড সম্মেলনে গিয়েছিলেন এবং নারী নির্যাতনে বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান জিরো টলারেন্স বলে জানিয়েছিলেন। ওনার নিজ দলের নেতাকর্মীদের বক্তব্য এবং ওনার বক্তব্য শুনে বলতে ইচ্ছে করে,

মানুষ এত মিছা কথা কেমনে কয় ? চক্ষু লজ্জা থাকলে দল থেকে এদের বহিষ্কার করে ময়লা পরিষ্কার করেন প্লিজ।

২৫ বছর ধরে দেশের রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব চলছে, যেটা পাশ্চাত্যের অনেক দেশেই বিরল, অথচ এ দেশে খুব কম নারীই কাজ থেকে রাতে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারেন! রূপা খাতুনের মতো নাম না জানা অনেককেই কাজ থেকে ফেরার পথে ধর্ষণ এবং হত্যার শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গার খোলা মাঠে দিনের বেলায় জনসমক্ষে তরুণীরা যৌন হয়রানির শিকার হন। যৌতুক না দেওয়ার অপরাধে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নাজমা আক্তারের মতো অনেককেই জীবন্ত অবস্থায় জ্বালিয়ে হত্যা করা হয়। অধ্যাপক রুমানা মনজুরের মতো উচ্চশিক্ষিত নারীকেও স্বামীর নির্যাতনে দৃষ্টিশক্তি হারাতে হয়। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে ৭ই মার্চ কথাও নারী নির্যাতন থেমে নেই।

আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের জীবন বৃত্তান্ত ঘাঁটলে থলের বেড়াল মিউ মিউ করে জানিয়ে দেবে, মুখোশের আড়ালে কত নারী নির্যাতনকারী ঘাপটি মেরে আছে। সুযোগ পেলেই এরা শুয়োর হয়ে যায়, তবুও এরা নেতা থাকে, প্রভু থাকে, শ্রদ্ধেয় বড় ভাই থাকে! আর নির্যাতিত মেয়েগুলো হয়ে যায় বেশ্যা, মাগী । তখন কাপড় ঠিক ছিল না, চরিত্র ভাল না, রাত বিরাতে বের হলে তো এমন হবেই, মিছিলে গেল কেন, ভীরে গেছিল গা ঘেষতে, এমন অসংখ্য খিস্তি তাদের শুনতে হয় । বিচার চাইলে প্রতি পদে পদে নতুন করে নির্যাতিত হতে হয়। দিন শেষে দায় বর্তায় সেই নির্যাতিতার ঘাড়েই ।

এই কারনেই প্রথমে লিখেছিলাম, বাঙালি লম্পট কে প্রভু বানায় আর নির্যাতিতা কে বেশ্যা বলে গালি দেয় ।