লিখেছেন: সুমন চৌকিদার
যা জানা ও বোঝা কঠিন, কম বুদ্ধির মানুষ হিসেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন নেই। তবে সামান্য বুদ্ধি থাকলে এবং দু’একটা প্রশ্ন করলেই যা জানা ও বোঝা সম্ভব, কঠিন ভেবে তা থেকে বিরত থাকার চেয়ে, অধিক মূর্খতা আর কী হতে পারে? অর্থাৎ যা জানা ও বোঝা সম্ভব, তা জানতে না চাওয়াটাই- মূর্খতা। সেহেতু বলতেই পারি, মানুষ সব বিষয়ে জ্ঞানী হলেও- ধর্মমূর্খ! কারণ, শুধু কঠিনই নয়, মানুষের জানার তীব্র আকঙ্খা থেকেই কঠিনতম বিষয়গুলোও সহজ হচ্ছে, অথচ ধর্মগুলোকে প্রকৃতরূপে জানার ও বোঝার তেমন কোনো ইচ্ছা কিংবা আগ্রহ মানুষের আছে বলে প্রতীয়মান বা প্রমাণিত নয়। বরং এগুলোকে অযথাই কঠিন মনে করা হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হয়তো, আমরা ধর্মশিক্ষা পাই জন্মের সাথে সাথে, অন্য কোনো জ্ঞানার্জনের বহু পূর্বে এবং এ জ্ঞান জন্মে সম্পূর্ণরূপে অন্যের উপর নির্ভর করে, পড়েশুনে কিংবা যাচাই-বাছাই করে নয়। অথচ অতীব দুঃখের বিষয়, শুনে শেখা ধর্মের অতি সমান্য জ্ঞানটুকুই হয় আমাদের আজীবন চলার প্রধান ও সর্বসেরা জ্ঞান এবং সারাজীবনের পথপ্রদর্শক, এটাকে কী বলা উচিত- বুদ্ধিমান মানবজাতির চরম মূর্খতা ও পরম দৈন্যতা? যে জ্ঞান প্রশ্নহীন এবং নিজের বুদ্ধি-বিবেক দ্বারা চালিত, পরীক্ষিত বা প্রমাণিত সত্যও নয়, যার সবটাই অদৃশ্য ও কাল্পনিক, তা কীভাবে মানুষ আজীবন বংশানুক্রমে এবং অত্যন্ত ভক্তিভরে, প্রতিদিন একই সময়ে ও নিয়মে… পালন করছে??? হয়তো সর্ববিষয়ে মূর্খ, তাই ভেবে পাই না। যদিও অপরের সাহায্য ব্যতিরেকে সম্পূর্ণ নিজের বুদ্ধিতেই, অতি সামান্য চেষ্টাতেই ঈশ্বর ও ধর্মের প্রকৃত স্বভাব-চরিত্র, আচার-ব্যবহার, কার্যকলাপ, সত্য-মিথ্যা… ইত্যাদি সবকিছুই জানা ও বোঝা সম্ভব। কিন্তু আমরা অন্য সব বিষয়ের ন্যায় ধর্মের ব্যাপারে যতোটুকু জানি, তারচেয়ে একটুও বেশি জানতে আগ্রহী নই। ছেলেবেলা থেকে যা শিখি তাকেই মহাসত্য বলে আজীবন মাথানত করে মেনে চলি। এটাও শিখেছি, এসব বোঝার ক্ষমতা ঈশ্বর সাধারণদের দেয়নি, দিয়েছে বিজ্ঞ পণ্ডিতদের। তাও কেবলমাত্র ধর্মপণ্ডিতদের(!) অন্য পণ্ডিতদের নয়। অথচ ধর্মপণ্ডিতরা শুধুমাত্র ধর্মে পণ্ডিত হলেও, এরাই মানুষের সবচেয়ে প্রিয় ও সম্মানের পাত্র। আবার চেনেও বিশ্বব্যাপী। ধর্ম ছাড়া অন্য জ্ঞান এদের অত্যন্ত সীমিত হলেও নিজেদেরকে সর্ববিষয়েই মহাপণ্ডিত মনে করে! কিন্তু ভেবে দেখুন তো- আইনস্টাইনকে চেনে ক’জন? যদিও আইনস্টাইনের নাম শুনলে বেশিরভাগ ধর্মপণ্ডিতরাই হয়তো বলবেন- এটা কোন ধরণের জিনিস!
প্রায় সব মানুষই ধর্ম, ঈশ্বর, ধর্মজীবি, ধর্মপণ্ডিতদের… হিমালয়ের চেয়েও অনেক উপরে রেখেছে এবং অন্ধ আনুগত্যের কারণেই দৃঢ় ও অটল বিশ্বাস জন্মেছে যে, সন্তানের বিদ্যা-বুদ্ধি যা-ই হোক, ধার্মিক না হলে চলবেই না। অর্থাৎ ধার্মিক হওয়াই সর্বোত্তম। আবার ধামির্ক হয়েই মনে করে, তারা খাঁটি মানুষ হয়ে গেছে! এ যে কতোবড় শুভঙ্করের ফাঁকি তা সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্নরা তো বটে, পণ্ডিত এবং ধর্মপণ্ডিতরাও ভেবে দেখেন না। কেননা, পূর্বেও বলেছি- ধার্মিক হওয়া অতি সহজ, খাঁটি মানুষ হওয়া অতি কঠিন। তাই প্রায় সকলেই খাঁটি মানুষ হওয়ার চেয়ে ধার্মিক হওয়াটাই বেছে নেয়। অথচ একজন ধার্মিকের চেয়ে, একজন খাঁটি মানুষ সমাজের জন্য সহস্রগুণ বেশি উপকারী। যদিও ধার্মিক যতোটা সম্মান পায়, খাঁটি মানুষ তা পায় না। সেজন্যই ধর্মরাষ্ট্র ও ধর্মভীরু দেশগুলোতে ধার্মিকদের আষ্ফলন এবং দুর্নীতির সুনামি চলছে। অন্যদিকে, যে ধর্ম যতো বেশি এবং যত্রতত্র ব্যবহৃত হচ্ছে, সেই ধর্মই পুরো পৃথিবীর জন্য প্রচণ্ড হুমকির ও মারাত্মক হয়ে দেখা দিচ্ছে। অর্থাৎ ধর্মকে যেখানে রাখার কথা, সেখানে না রেখে, সবকিছুতেই ধর্মের ব্যবহার ও প্রয়োগ মানবজাতির অন্যতম- মূর্খতা। যেমন, চলাফেরা, কাজকর্ম থেকে খাওয়া-দাওয়া, পায়খানা-প্রস্রাব থেকে সেক্স… সর্বত্রই ধর্মমন্ত্র উচ্চারিত হওয়ায় ধর্মের গৌরব যতোটা না বাড়ে, তারচেয়ে অনেক বেশি গৌরবহানি ঘটে। বলছি, ধর্মকে অত্যাধিক প্রশ্রয় দেয়া, কাথায়-কথায়, যত্রতত্র, যেমন খুশি ব্যবহারের অর্থই এর মর্যাদাহানি ও নোংরা করা। যার ফলাফল কী তা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। কারণ যে ধর্ম মানুষের অন্তরে থাকার কথা, সেই ধর্মই যখন বাইরে (চেহারা, পোশাক-আশাক থেকে সেক্স পর্যন্ত) থাকে, তা কখনোই পবিত্র থাকতে পারে না! অথচ সীমাহীন মূর্খতার শিকার মানুষ একেই বলছে- মহাপবিত্র, সর্বশ্রেষ্ঠ, জীবনবিধান… ইত্যাদি।
বলতে পারেন, সন্ত্রাসী/চাঁদাবাজদের আর ঈশ্বরদের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য কী? একদলকে মানুষ চাঁদা দেয় অনিচ্ছায়, আরেকদলকে দেয় স্বইচ্ছায়। একদল অস্ত্র ঠেকিয়ে ভয় দিয়ে নেয়, অন্যদল পরোক্ষভাবে ভয় দিয়ে নেয় (নরকের)। তবে সন্ত্রাসীরা লোভ দেখায় না, ঈশ্বরেরা তাও দেখায় (স্বর্গের)। অতএব, মানুষের বুদ্ধির তারিফ না করে পারছি না। কারণ মানুষ বুঝতে চাইছে না যে, তাদের অর্থে যারা বাঁচে, তাদের কাছেই ভিক্ষামাগে! অর্থাৎ মানুষের চাঁদায়, দান-খয়রাতেই ধর্ম, ধর্মপ্রতিষ্ঠান, ধর্মগুরু এবং ঈশ্বরেরা বেঁচে আছে। অথচ ওই ধর্মগুরুর মাধ্যমেই ঈশ্বরের কাছে মানুষ করজোড়ে প্রার্থনা করছে, হে ঈশ্বর আমাকে বাঁচাও! আমাকে এটা দাও, ওটা দাও, ধন দাও, বিদ্যা-বুদ্ধি দাও, পরীক্ষায় পাস করিয়ে দাও, চাকরি দাও, ভালো স্ত্রী/স্বামী দাও, সুসন্তান দাও, গাড়ি/বাড়ি/সম্পদের হিমালয় বানিয়ে দাও… চাওয়ার কী কোনো শেষ আছে? জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শুধু চাই আর চাই। অথচ ধর্মের বিধান এমনই যে, না দিয়ে শুধু চাইলে হবে না। তাই তো প্রতিদিনই বহু ধর্মজীবিরা যেখান-সেখানে ঈশ্বরদের নামে বিভিন্নরকমের পসরা সাজিয়ে, বিভিন্ন মিষ্টিমিষ্টি ভাষণ (স্বর্গের লোভই বেশি) দিয়ে দান/চাঁদা আদায় করছেই। কি আশ্চর্য! মানুষ যাদের (ধর্মসৃষ্টিকারী, ধর্মজীবি ও ঈশ্বরদের), চাঁদা না দিলে যারা বাঁচতে পারে না, তাদের কাছেই আবার প্রার্থনা/ভিক্ষা চাওয়া! চাঁদা না দিলে যাদের নিত্যদিনের পুঁজা/দোয়া/প্রার্থনা, জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকীসহ নানান বার্ষিক অনুষ্ঠান হয় না; তাদের বংশ/গোত্রের বহুজনের নাম পর্যন্ত মুছে যায়; তাদের কাছেই সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান মানুষ কী-না ভিক্ষ/প্রার্থনা/দোয়া… চাইছে? এসব কী চাঁদাদানকারী তথা মানুষের মূর্খতা, নাকি বদান্যতা? যাদেরকে মানুষ নিজেদের টাকায় বাঁচিয়ে রাখছে, তাদের কাছেই হাত পাতা কী মানুষের শোভা পায়? চ্যালেঞ্চ দিয়ে বলছি, দান-খয়রাত, চাঁদা এসব বন্ধ করুন, দেখুন, ধর্ম কিংবা ঈশ্বরেরা কেউই এক বছরের বেশি বাঁচতে পারে কী-না???
আবারো বলছি, মানুষ ঈশ্বর ও ধর্ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী নয় বলেই, এব্যাপারে মূর্খতার সীমা-পরিসীমা নেই। ধর্মের ব্যাপারে যে মূর্খতা (পড়লে বুঝবো না), যে ভয়/হুমকি (না বুঝলে ঈশ্বর রাগ করবে ও ভয়ংকর শাস্তি দেবে), যে আতঙ্ক (নরকের বিষাক্ত সাপের কামড়সহ রক্ত-পুঁজ ও ফুটন্ত পানি খাওয়ানো…), যে নিষ্ঠুরতা (মুগুর দিয়ে পিটিয়ে ৭০ গজ মাটির নিচে ঢুকানো-তোলা, আবার ঢুকানে…; আগুনে পোড়ানো বা ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করা)… এটাও জানি, দুর্বল মনের মানুষদের হৃদয় থেকে এসব ভয়ংকর-ভীতি দূর করা সহজ না হলেও অসম্ভব নয়। এজন্য সমাজ সংস্কার নয়, চাই হৃদয়ের সংস্কার। অর্থাৎ সামান্য দুর্বল চিত্তের হলে চলবে না, অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তের না হলে ধর্ম এবং ঈশ্বর নিয়ে প্রশ্ন তোলা সম্ভব না। কারণ শিশুকাল থেকে মানুষ নিজ নিজ পরিবার কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পৃথিবীর সব বিষয়েই চ্যালেঞ্জ করতে শিখলেও, ধর্মকে চ্যলেঞ্জ করতে শেখে না বরং ভয় ও পুঁজা করতেই শেখে। আর এর সুযোগ নিয়েই, ধূর্ত সুবিধাবাদিরা (ধর্মব্যবসায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতিবিদ, পণ্ডিত…), ধর্মকে মহান ও খাঁটি সত্য বানিয়ে শিকেয় তুলেছে। ফলে এসব সুবিধাবাদিরা ধর্মের কোনো দোষত্রুটি খুঁজে পায় না, এও কী বিশ্বাসযোগ্য? যদি বিশ্বাস করি, তাহলে নিজের সাথেই প্রতারণা করা হবে! আসলে এরা ইচ্ছা করেই ধর্মের কোনো দোষ দেখে না বা ধরে না অথবা এরা বিদ্বান/পণ্ডিত/শিক্ষিত/বুদ্ধিজীবি/পেশাজীবি… এসব নামের কলংক এবং প্রধানত এরাই ধর্ম-মাতাল বা ধর্মমূর্খ। যারা প্রকৃতই সত্যবাদি, ধর্মের অপকারিতা নিয়ে অবশ্যই সোচ্চার হওয়া উচিত। হয় না বলেই, ধর্ম নিয়ে পৃথিবীর এতো দৈন্যদশা। সুবিধাবাদিদের বলছি- ধর্মের ভালো গুণটুকু যেমন খুশি লিখুন, বলুন আপত্তি নেই, কিন্তু খারাপগুলোরও সমালোচনা না করার অর্থ কী? কোনো বিষয়ের কেবল ভালোগুণ নিয়ে কথা বলবো, খারাপগুণের একটা কথাও বলবো না, এসব কী প্রকৃত সত্যবাদি, উঁচু মনের মানুষের পরিচয়? নাকি অন্যকিছুর পরিচয়…!
যদিও ধর্মের সাথে থাকার অসীম সুবিধা, না থাকলে অসীম দুর্ভোগ! অবিশ্বাসীদের যেমন প্রাণ হাতে নিয়ে থাকতে হয় (বিশেষ করে ধার্মিক রাষ্ট্রে ও সমাজে)। হয়তো সে কারণেই ধার্মিক দেশের বুদ্ধিজীবিরা ধর্মের কোনো দোষ দেখতে পায় না অথবা ধর্ম-মাতাল, তাই ধর্মের সবই তাদের চোখে ভালো! ভেবে দেখুন, পশুর ভালো-মন্দ বোঝার চিন্তাশক্তি নেই। কিন্তু মানুষের আছে, তাছাড়া মানুষ বহুরূপী চরিত্রের। যাহোক, পশু চিন্তা করতে পারে না বলে, তাদের ঈশ্বরও নেই, মানুষ পারে বলেই কী ঈশ্বর বানিয়েছে? তাও একটা-দুটা নয়, হাজার হাজার ঈশ্বর- কী মূর্খ এ মানবজাতি (ধর্মের বেলায়)! পশুর সাথে তুলনা করলাম, কারণ পশু আর যেসব বিষয় নিয়ে বিবাদ বা খুনাখুনি করুক, অন্তত ধর্ম, ধর্মাবতার এবং ঈশ্বর নিয়ে করে না; কিন্তু মানুষ করে এবং প্রতিদিন, প্রতিঘণ্টাতেই করে… (মনে হয় ধর্মদাঙ্গায় যতো মানুষ খুন হয়েছে এর অর্ধেকও রাজ্যের সীমানা বা অন্য কোনোকিছু নিয়ে হয়নি)। কারণ ধর্ম শিশুকালেই মনের গভীরে (কম/বেশি) হিংস্রতা ও ঘৃণার বীজ বপন করে রাখে, বড় হতে হতে যার কিছু হয় দানব বা মহাদানব, কিছু হয় প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সমর্থক, কিছু হয় কথিত ভ্রষ্ট/বিভ্রান্ত/কৌশলী মডারেট, কিছু হয় মৌনতার ভেকধরা (বুদ্ধিজীবি/বিদ্বান), অতি সামান্য দু’একটা (আমার মতো মহামূর্খ) হয় অবিশ্বাসী/সন্দেহকারী/নাস্তিক…। আর এই অতি অল্পসংখ্যক (১ বা ২%) মানুষের সামান্য সমালোচনায় ধার্মিকরা প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে তাদেরকে খুনের ফতোয়া দেয়, খুন করার জন্য ওৎ পেতে থাকে, যা ঈশ্বর এবং ধর্মের জন্য সত্যিই অত্যন্ত লজ্জার ও অমার্যদারও বটে। কারণ ঈশ্বরদের সম্বন্ধে ধার্মিকরা যা বলেন, তার একবিন্দু ক্ষমতা থাকলেও অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে ধার্মিকদের অস্ত্র হাতে নেয়ার প্রয়োজন নেই। অথচ সর্বশ্রেষ্ঠ ঈশ্বরের সন্তানরা যে পর্যন্ত অবিশ্বাসীদের হত্যা না করতে পারে, সে পর্যন্ত থামাথামি নেই!!! যাহোক, মনের মধ্যে যদি হিংস্রতা ও ঘৃণা থাকে, আচার-ব্যবাহর কথাবার্তায় তার কিছুটা হলেও প্রকাশ পায়। কিন্তু আমরা তা আমলে নেই না। অর্থাৎ ধর্ম যেসব হিংস্রতা ও ঘৃণার শিক্ষা দেয় তা মনের অজান্তেই ভালো বলে ধরে নেই অথবা এড়িয়ে যাই, কেননা ধার্মিকদের প্রতি সকলেরই একটা শ্রদ্ধাবোধ থাকে (যা অন্যতম মূর্খতা)।
যাহোক, সর্বসেরা বুদ্ধিমান (যদিও ধর্মমূর্খ) প্রাণী মানুষকে, যদি অন্য কোনো প্রাণী অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করে কিংবা হুমকি দেয় যে- তার কথা শুনতে ও মানতে হবে, তার আদেশ/বাণীই সর্বশ্রেষ্ঠ; না মানলে পরিণতি ভালো হবে না, চরম শাস্তি দেয়া হবে, রোগব্যাধিতে জর্জরিত করা হবে, অখাদ্য-কুখাদ্য খাওয়ানো হবে…। তাহলে, ওই প্রাণীকে মানুষ কী করবে? অথবা কোনো স্বৈরাশাসক/অত্যাচারি রাজা যদি একই কথা বলে, তখনই বা মানুষ কী করে? মৃত্যুভয়ে তাকে শ্রদ্ধা-সম্মান দেখালেও, মনে মনে নিশ্চয়ই তার অমঙ্গল কামনা করে, ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আন্দোলন বা কৌশলের আশ্রয় নেয়, এমনকি ঘৃণাও করে (উদাহরণ বহু)। অথচ স্বৈরাশাসকদের চেয়েও ভয়ানক হুমকিদাতাদের (ঈশ্বরদের) মানুষ বিনা বাক্যে মেনে নিয়ে, যুগযুগ ধরে পুঁজা করছে কোন যুক্তিতে এবং কেনো?
বলছি, কথিত ঈশ্বরদের কথিত সুন্দর সুন্দর বাণীগুলোর মধ্যে বহু অশালীন বাণী রয়েছে, যা ভদ্র মানুষ কর্তৃক ব্যবহার অযোগ্য। যা পাগল ছাড়া কোনো সভ্য মানুষ প্রকাশ করলে, অবশ্যই তাকে শাস্তি পেতে হতো। কিন্তু ঈশ্বরদের এরূপ বহু বাণীকে মানুষ পবিত্রই শুধু নয়, মহাপবিত্র বলে মেনে নিয়েছে, একে কী বলবেন? মানুষের বুদ্ধির দৈন্যতা, নাকি মূর্খতা? ভুল মতবাদ, ভুল দর্শন, ভুল বিশ্বাস, ভুল সিদ্ধান্ত… এসব একমাত্র মানুষই করে, পশুরা নয়। কারণ পশুদের চিন্তাশক্তি নেই। যদিও চিন্তাশক্তিসম্পন্নরা যেমন সঠিক কাজ করে, আবার ভুলও করে। তবে ভুল সংশোধন করে নেয়াই প্রকৃত মানুষের কাজ। কিন্তু মানুষ অন্য সব বিষয়ের ভুল সংশোধন করতে প্রস্তুত, একমাত্র ধর্মের ভুলগুলো ছাড়া; যা যুগযুগ ধরে ধর্মপুস্তকে থাকলেও সেটাকে নির্ভুল ও সঠিক বলতে হবে, মানতে হবে, মহাপবিত্র/সর্বশ্রেষ্ঠও বলতে হবে, পুঁজা করতে হবে… বুদ্ধিমান মানুষের এমন অসভ্যতা, মূর্খতা, পরাধীনতা… সত্যিই অসহনীয়। আবার কেউ ভুল প্রমাণ করে দেখালেও (দেখানোর প্রয়োজনই বা কী, নিজেরা পড়লেই বুঝতে পারে) তা মেনে তো নেবেই না বরং শোনামাত্রই তার গর্দান নিতে উঠেপড়ে লাগবে…। এসব মানুষদের কী করা ও বলা উচিত?
ধর্মজীবিসহ প্রতিটি ধার্মিকদের মুখে আরেকটি বক্তব্য শুনতে শুনতে ক্লান্ত। তাহলো- ধর্মপুস্তকের ন্যায় এতো পবিত্র পুস্তক কেউই লিখতে পারবে না। অনেকে বাড়িয়ে বলেন, লিখে দেখান না অমন একখানা পুস্তক! ধর্মের বেশিরভাগ মতের সাথে দ্বিমত থাকলেও, এব্যাপারে ধার্মিকদের সাথে এ মূর্খ সম্পূর্ণ একমত! গ্যারান্টিসহকারে বলছি, ঈশ্বর ছাড়া, সামান্য ভদ্রতাবোধ সম্পন্ন কোনো মানুষের পক্ষেই ওসব লেখা সম্ভব না। যদি লেখেন, তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্র তাকে কাঠগরায় তুলবেই, নতুবা ধার্মিকদের কাছে গর্দন দিতে হবেই। যদিও যৌনতা সম্পর্কিত কিছু অশ্লীল বই আছে, সন্দেহ নেই এর লেখকরা বিকৃত রুচির। তবে এগুলো নিষিদ্ধ। যা বলছিলাম, ধর্মপুস্তকের ন্যায় এমন বই কোনো ভদ্র মানুষ লিখতে পারবে না, কারণ এগুলোতে বহু নোংরা শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। যাকে ধার্মিকরা মহাপবিত্র ঈশ্বরদের বাণী বলছে এবং এ মূর্খ বলছে, এসবই মানুষের চরম নোংরামো এবং ক্ষমাহীন মূর্খতা। আবারো বলছি, এমন পুস্তক কোনো ভদ্র ও রুচিবান মানুষ লিখতেই পারে না। পাঠকদের প্রতি চ্যালেঞ্জ রইলো, নিষিদ্ধ চটি বই ছাড়া বাজারে প্রচলিত এমন কোনো বই দেখান, যেখানে কোনো লেখক তার কথামত না চললে, না মানলে, তাকে শ্রদ্ধা-ভক্তি না করলে… রক্ত-পুঁজ কিংবা ফুটন্ত পানি খাওবার হুমকি দিয়েছে? কিংবা বিষাক্ত সাপের কামড়ের হুমকি অথবা মুগুর দিয়ে পিটিয়ে মাটির নিচে ঢুকানোর হুমকি দিয়েছে…? যদি কেউ পারেন, তাহলে রাষ্ট্র এবং ধার্মিকদের দেয়া যেকোনো শাস্তি মেনে নেবো। তবে হ্যাঁ, কিছু বই আছে (যা নিষিদ্ধ), যেগুলোকে আমার ন্যায় অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত নয় বরং অতি উচ্চশিক্ষিতরাও ভুল করে লেখকের নিজস্ব মতামত ভাবছেন এবং লেখকের শাস্তি চাইছেন কিংবা সমালোচনা ও ঘৃণা করছেন…। কিন্তু না, ওসব বইতে ধর্মপুস্তকেরই উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন স্যার জাফর ইকবাল, শামসুদ্দোহা মানিকভাই কর্তৃক অনুবাদকৃত একটি বইয়ের ২/৪ লাইন অন্যের মুখে শুনেই রায় দিয়েছেন, অত্যন্ত অশ্লীল! কিন্তু তিনিও জানেন না, এসব মানিকভাইয়ের লেখা নয়, অনুবাদ করা, এমনকি মূল লেখকও এতে নিজের বাক্য প্রয়োগ করেননি, এতে ধর্মপুস্তকেরই উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই আমাদের প্রকৃত ধর্মশিক্ষা। ধর্মপুস্তকে যতো নোংরা বাণীই থাক, তা কেউ উদ্ধৃতি হিসেবে ব্যবহার করলে কিংবা ব্যাখ্যায় কিছুটা নিজের মতামত দিলেও ওইসব বই হয় নিকৃষ্ট এবং নিষিদ্ধ, লেখককের মস্তকের জন্য ঘোষিত হয় পুরষ্কার, জেলে-জরিমানা অনিবার্য, পারলে সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলাই উত্তম…। কিন্তু ধর্মপুস্তকের নোংরা বাণীগুলোই তাদের কাছে- মহাপবিত্র!! হায়রে উচ্চশিক্ষিত সমাজ!!! আমি যদিও মূর্খ, তথাপিও গর্ব করেই বলছি, এমন শিক্ষিত না হয়ে বুদ্ধিহীন কিংবা গণ্ডমূর্খ বা পশুর ন্যায় বোধ-চিন্তাশূন্য জীবন-যাপনই উত্তম।
এতো বেশি দোষত্রুটির পরেও, ধর্ম এর নিজের আত্মসমালোচনায় বিশ্বাসী নয়। ভুল স্বীকার ধর্মের তথা ধার্মিকদের ডিকশনারিতেই নেই। বরং আছে ভুলগুলোকে আরো জটিল করার প্রচেষ্টা। কারণ ধর্ম এতোই ঠুনকো জিনিস, ভুল স্বীকার ও আত্মসমালোচনা করলেই ধ্বংস! যদিও ভুল স্বীকার করে নিলে বহু সমস্যার সমাধান এক নিমেশেই সম্ভব। অথচ যা শিখেছি- ঠিক শিখেছি, যা বুঝেছি- ঠিক বুঝেছি, আর বোঝা ও শেখার প্রয়োজন নেই, অন্যের মতামতকে গ্রহণ করাও ধর্মের ডিকশনারিতে নেই…। ফলে নিজ নিজ ধর্ম ও ঈশ্বর নিয়ে ধার্মিকদের অহংকারের সীমা-পরিসীমাও নেই। এটাও দাবি, তারা যা বিশ্বাস করে, তা সকলকেই বিশ্বাস করতে হবে। সেহেতু পৃথিবীর কোথায়ও কোনো বিধর্মী ধর্মান্তরিত হলে, ধার্মিকরা যারপর নাই খুশিতে গদগদ হয়ে, পত্রিকায় বহু কলাম লেখে, তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতায় ভাসিয়ে দেয়, ধর্মের গুণগান বুকচিতিয়ে প্রকাশ করতেই থাকে…। আবার এর বিপরীত ঘটলে, তাকে হত্যার হুমকি ও মা-বোন তুলে গালিগালাজের ছড়াছড়ি, কেউ খুনের জন্য উৎসাহ দেয়, কেউ খুনের জন্য খোঁজে, সুযোগ পেলেই কেল্লা ফতে…। কী আশ্চর্য ধর্মের গুণ!! এর কারণ, ধার্মিকরা অন্যের বিশ্বাস যতোই যুক্তিপূর্ণ হোক, তা গ্রহণযোগ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, এক লোক বলছিলো, নীল আমস্ট্রং চাঁদে গিয়ে ফিরে এসে ইসলাম গ্রহণ করেছে…। বললাম, কে বলেছ? প্রমাণ কী? সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে বললো, হুজুররা। তারা কী না জেনে বলেছে? তাছাড়া পত্রিকায় লিখেছে… ইত্যাদি। তাকে বুঝাতে চেষ্টা করতেই রেগেমেগে চলে গেলেন। এরা এতোটাই অধৈর্য যে অন্যের কোনো যুক্তি মানা না মানা পরের ব্যাপার, শুনতেই চায় না (যা ধার্মিকদের বাস্তব রূপ)। এমন ধর্মমূর্খ দিয়ে যে দেশ ভরা, সে দেশে মুক্তমনের চাষ হবে কী করে? তার রাগের কারণ হয়তো আমি তার প্রিয় হুজুরের বিপক্ষে বলছি। যে দেশে (অনুমান) ৯৫% মানুষ ধর্মের কোনোকিছুই নিজেরা পড়ে বুঝতে চায় না, সীমিতবুদ্ধির ধর্মজীবিদের বক্তব্য শুনেই ধর্মবিশ্বাসী হয়, সেসব দেশে পরগাছার চাষই হয়, জাতির দৈন্যতাও ঘুচে না।
বিদ্বানরা বলেন, বুদ্ধি বাড়াতে হলে প্রশ্নের প্রয়োজন; অজস্র প্রশ্ন। কিন্তু প্রশ্ন যেখানে মরণফাঁদ, ঈশ্বর সেখানে ভয়ংকর শাসক, সেখানে প্রশ্ন তোলার সাহস কার? তাছাড়া ধর্মের রয়েছে প্রশ্নহীন-মোহাবিষ্ট করে রাখার ব্যাখ্যাতীত এক মহাশক্তি। ফলে (কেউ চাইলে), এ শক্তির সাহায্যেই ধর্মীয় ব্যাখ্যার মাধ্যমে, প্রায় সব ধার্মিককেই বিপথে তথা ধর্মসন্ত্রাসের পথে নেয়া কিংবা সমর্থক বানানো সম্ভব। সহজ বাংলায়- মগজ ধোলাই (যদিও শিশুকালেই করা হয়)। বলছি, মগজ ধোলাইয়ে বিভ্রান্ত হবে না, এমন ধার্মিক পাওয়া দুষ্কর (বহু প্রমাণের অন্যতম, শিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষতারাই রাজিব, ওয়াশিকুর, অন্তত, অভিজিৎসহ গুলশান হত্যাকাণ্ডের খুনি ও নেতা)। তফাৎটা হলো, কারো মগজ ধোলাইয়ে বেশি সময় কিংবা বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়, কারো জন্য ধর্মীয় আদেশ-নির্দেশ ও লোভ-লালসা ব্যতিরেকে তেমন কিছুরই প্রয়োজন হয় না। যদিও এদের বেশিরভাগই সরাসরি সন্ত্রাসের সাথে জড়িত হয় না, কিন্তু মগজ একবার ধোলাই হলে, নিরব সমর্থন দিতে একটুও কুণ্ঠাবোধ করে না। আর ধোলাইকার/শিক্ষক যদি হয় জাকির নায়েকের মতো মহাচতুর, বাকপটু ও ধূর্ত, তাহলে তো কথাই নেই। কারণ জাকিরদের মতো ধূর্তরাই পারে ধর্মের প্রতি মানুষের চরম দুর্বলতম স্থানটিতে সুরসুরি দিয়ে জাগাতে। তাছাড়া, ধার্মিকরা ধর্ম বিশ্বাসের বাইরে অন্য প্রায় সব বিশ্বাসকেই সন্দেহের চোখে দেখে এবং যতো যুক্তিযুক্তই হোক বিশ্বাস করতেই চায় না। অর্থাৎ যে ভুলভ্রান্তি রয়েছে তা দেখিয়ে দিলেও গ্রহণ করে না এবং কোনোরূপ বিচার-বিচেনাহীনভাবেই ধর্মবিশ্বাস অটল থাকে। এসবই ধর্মের সবচেয়ে বড় সুবিধা, যা ব্যবহার করেই রাজকীয় জীবনযাপন করছে ধর্মজীবিসহ ধূর্ত উচ্চশিক্ষিত রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবিরা…।
আবার অনেককিছুই আছে যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিন্তু ধর্মে নিষেধ, তাই অনেকই তা মানতে রাজি নয়। যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ধর্ম সমর্থন করে না। কেননা ধর্মের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- বেশি সন্তান জন্ম দিয়ে পুরো পৃথিবীতে ধর্মরাজ্য/খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা (যা ঐশ্বরিক হুকুম)। যেজন্য এখনো কোনো কোন ধার্মিক পরিবারে ৫/৬টির অধিক সন্তান দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপের আরবের অভিবাসী এবং রোহিঙ্গারা পরিবারগুলো। এক ডাক্তারের বক্তব্য, রোহিঙ্গারা জন্মনিয়ন্ত্রণে আগ্রহী নয়; একেকজন মায়ের নাকি ৬ থেকে ১৯টি পর্যন্ত সন্তান। কেন নয়? বহু সন্তান উৎপাদন এবং বহুবিবাহ তো ধর্ম অনুমোদিত। সেহেতু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি যারা ব্যবহার করেন, তারা ধর্ম লংঘনই নয় বরং স্বর্গে/বেহেশতের লোভনীয় পুরুষ্কারও হারাচ্ছেন। যদিও ধর্মে যা অনুমোদিত, মানবধর্ম কিংবা সুবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কখনো তা সমর্থন করে না। যদিও ধার্মিকদের সর্বপ্রধান উদ্দেশ্য হলো- সন্তান যেন ধার্মিক হয় অর্থাৎ ধার্মিকের সংখ্যা বৃদ্ধি করে সোয়াব কামানোর তীব্র বাসনা! অথচ সন্তান মানুষ হলো কী, হলো না, সেটা কোনো বিষয়ই নয়! ধার্মিক হলেই সন্তান যেন মানুষ হয়ে গেলো, এমনটাই বেশিরভাগ পিতা-মাতা, এমনকি বহু সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বপ্রধান ভাবনা ও নিরন্তর চেষ্টা। যেন মানুষ হওয়ার চেয়ে, ধার্মিক হওয়ার জন্যই মানব সন্তানের জন্ম।
যদি তর্ক এড়াতে ধরেও নেই যে, আমাদের যার যার ধর্মই সত্য ও নির্ভুল, কিন্তু ধারাবাহিকভাবে এবং প্রকাশ্যে কিংবা নিরবে ছোটখাটো যেসব ধর্মবিবাদ, বিতর্ক ও নির্যাতন-নিপীড়ন, সেসব বাদ দিয়ে শুধু ধর্মগুলোর তাণ্ডব তথা ধর্মদাঙ্গা-যুদ্ধ, যারপর নাই নৃশংস্যতম হত্যাযজ্ঞ… দেখেও শিক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত, বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবি… থেকে সামান্য বুদ্ধিসমপন্ন মানুষ, যে কী করে ধর্মকে প্রশ্ন না করে, তা সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে মানছে, সে বিষয়ে আমি অত্যন্ত শিশু। যদিও ধার্মিকদের দৃঢ় বিশ্বাস, নিজ নিজ ঈশ্বরদের ইচ্ছা ছাড়া গাছের একটি পাতা নড়ে না। সেহেতু ঈশ্বরদের ইচ্ছা ছাড়া সন্তান জন্ম নেওয়াটাও সম্পূর্ণ অসম্ভব। কিন্তু বিজ্ঞানের ইচ্ছানুসারেই আজকাল অনেকেরই সন্তান জন্মে, তাছাড়া জন্মের আগেই লিঙ্গ নির্ধারণসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এছাড়া নিজের ইচ্ছামত সময়েও সন্তান নেয়া নিশ্চিত। তাহলে- ঈশ্বরেরা কী বিজ্ঞানের কাছে পরিজিত? যা বিজ্ঞানীরা করতে পারছেন, তা কী ঈশ্বরদের সাধ্যের বাইরে নয়? কারণ এখন আর (চাইলেই) ঈশ্বরদের হুকুমে সন্তান জন্ম নেয় না, মানুষের হুকুমেই নেয়! যদি ঈশ্বরেরা বিজ্ঞানের কাছে পরাজিত না হতো, তাহলে অনুমান করছি পৃথিবীতে বর্তমানের চেয়ে কমবেশি ৩/৪ গুণ বেশি মানুষ থাকতো এবং নিজেরাই হয়তো নিজেদের মাংস খেতে বাধ্য হতো। এরপরও কী ধার্মিকরা ঈশ্বরদের দেয়া বিধান, বহুবিবাহ ও বহু সন্তান জন্মের থিওরি মেনে নেবেন?
কোনো গবেষণা বা পরিসংখ্যানের কথা জানা নেই, তবে অনুমান করতে পারি, ধার্মিকদের চেয়ে নাস্তিকদের দুর্নীতিসহ যে কোনো অন্যায়ের হার অতি নিম্ন। এর কারণ কী? যেহেতু ধার্মিক বারেবারে অন্যায় করলেও, তা ক্ষমা করার জন্য ঈশ্বর আছে, ধর্ম আছে, ধর্মজীবি আছে…! আর নাস্তিকের অন্যায় ক্ষমা করার কেউ নেই। যেমন অফিসে গিয়ে ধার্মিক দুর্নীতি, চুরিচামারি যা-ই করুক, রাত্রে প্রার্থনা করে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়ে অথবা ধর্মালয়ে গিয়ে ঈশ্বর কিংবা ধর্মজীবির কাছে অন্যায় স্বীকার করে, ধর্মালয়ে চাঁদা ও গবিরদের দান-খয়রাত দিয়ে… নিশ্চিন্ত হয় যে, তার আজাকের সব পাপ-অন্যায় ক্ষমা হয়ে গেছে এবং তিনি প্রশান্তিতে থাকেন। আবার পরের দিনই ওই একই অন্যায় করেন আবার একইভাবে ক্ষমা প্রর্থনা করেন…। এটাই কী ধর্মের অন্যতম বিধান নয়? হয়তো একারণেই ধার্মিকদের মধ্যে নাস্তিকদের চেয়ে দুর্নীতির হার অত্যন্ত বেশি। অপরদিকে একজন নাস্তিক কোথায় ক্ষমা পাবে, তার কোনো ঈশ্বর কিংবা প্রাতিষ্ঠান বা ধর্মগুরু নেই। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, নাস্তিকরা নিজের বিবেকের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে এবং আজ যে অন্যায় করেছে, কাল সেটা যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখে এবং লোভ-লালসা বিসর্জন দিয়ে সব অন্যায় থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে করতে, একসময় তার অপরাধ প্রবণতা শূন্যে নামে। এটাই ধার্মিক ও নাস্তিকদের মধ্যে বড় পার্থক্য। অর্থাৎ প্রায় সব নাস্তিকই জেনেশুনে অন্যায় করে না (নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি)। লোভ যে হয় না, তা নয় কিন্তু বেশিরভাগই তা সংবরণ করে চলে। এ মূর্খের কথা হয়তো ধার্মিকদের বিশ্বাস হবে না, হয়তো তারা গায়ের জোরে সবকিছুই অস্বীকার করবে। তাদেরকে সবিনয় অনুরোধ নাস্তিক ও ধার্মিকদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখতে পারেন। তবে অত্যন্ত বেদনার যে, ধার্মিকদের চেয়ে নাস্তিকরা যতোই সৎ (অনুমান ৯৫%) থাকুক কিংবা সমাজের জন্য যতোই মঙ্গলজনক হোক, এরাই বিশ্বব্যাপী চরম বৈষম্যের শিকার। অথচ ধার্মিকরা চরম দুর্নীতিবাজ হলেও সমাজে পূঁজনীয়, এমনকি বেশিরভাগই দেবতার আসনেই থাকে (প্রমাণের অভাব নেই)। অথচ নাস্তিকরা ধার্মিকদের চাইতে শতগুণ বেশি সৎ হলেও, একমাত্র অপরাধ তারা ঈশ্বর/ধর্ম মানে না, সেজন্যই দেশে দেশে তাদের অত্যাচার এবং খুনের মহাড়া চলছে কিন্তু রাষ্ট্র ও সমাজ নিরব। আইএইচইইউ এর প্রতিবেদন:- “যে সব মানুষ ধর্ম, সৃষ্টিকর্তা এসব মানে না, এসব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তাদের ওপর পৃথিবীর দেশে দেশে অত্যাচার, নির্যাতন, বৈষম্য বাড়ছে।”
তাছাড়া, ধর্মে গোজামিল দেয়ার মতো বহু পন্থা আছে বা ধার্মিকরা নিত্যনতুন বহু পন্থা আবিষ্কার করে, যাতে ধর্মকে সত্য বানানো ও টিকিয়ে রাখা যায়। এগুলো আবার একই ধর্মের বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। কিন্তু যা সত্য তাতে কেনো গোজামিল থাকবে? তাছাড়া ধর্মকে অতিমাত্রায় প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে, যা অন্য কোনো বিষয়কেও দেয়া হয় না। অর্থাৎ এর যা ভালো কেবল সেটুকুই মানুষ ব্যাখ্যা করতে পারবে, বলতে পারবে, খারাপ যা তা বলা নিষেধ। এতে সমাজের, রাষ্ট্রের বা কোনো ব্যক্তির কোনোপ্রকার ওজর-আপত্তি কিংবা যুক্তি থাকতে পারবে না। কী আশ্চর্য! পৃথিবীর যাবতীয় বিষয়গুলোকে কেটে-ছিঁড়ে, এফোঁড়-ওফোঁড় করুন কেউ কিছু বলবে না, শুধু ধর্মকে সামান্য টোকা দিলেই প্রায় সকলেই বলে ওঠে- না ঠিক হয়নি, কেনো সে ওমুকের ধর্মানুভূতিতে টোকা দেবে? তাকে এ অধিকার কে দিয়েছে? ইত্যাদি। অথচ আমরা কী দেখছি না, দিনরাত কোনো কোনো ধর্ম একই কাজ করছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না, বলার সাহাস পর্যন্ত পাচ্ছে না…। ধর্মকে কেনো এতো উচ্চতায় তোলা হয়েছে, সেটাই প্রশ্ন। ওটা কী এর যোগ্য? অথচ ধর্মকে গুড়িয়ে না দিলে, পৃথিবী জুড়ে যে দাবনীয় হত্যাযজ্ঞ চলছে, তা থামবে কীভাবে? সেটা বিজ্ঞজনেরা কেউ একবারও বলছেন না! ওটার দম্ভ, অহংকার, গর্ব, যা খুশি তাই করার স্বাধীনতার লাগম না টেনে ধরে শুধুমাত্র প্রশ্রয় দিলে, আরো হৃষ্টপুষ্ট হতেই থাকবে এবং মানবধর্ম ধ্বংস করে ফেলবে।
মানুষ জানে, ভাবে, মানে এবং প্রচণ্ডভাবে বিশ্বাস করে ধর্মের সবকিছুই ভলো, তাই এ নিয়ে তাদের কোনো প্রশ্ন নেই, খারাপ কোনোকিছু ঘটালেও তা নিয়ে আক্ষেপ বা ভ্রক্ষেপও নেই। কিন্তু মানুষ এটা জানে না, মানে না, দেখে না… যে ধর্মের মধ্যে কতোটা মানবতাবিরোধি (ধর্মদাঙ্গা, খুনাখুনি, দলাদলি, মামলা-মোকদ্দমা, চাঁদাবাজি…) রয়েছে। সমস্যা, একটি বিষয়ের দুটি দিক থাকলেও, মন্দগুলো যখন ভালো দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করা হয়, তখন নানা ছলনার আশ্রয় নিতে হয়, বহু মিথ্যা বলতে হয়। এটাও ধর্মের সুবিধা, কারণ ধর্ম ভালো করেই জানে, মানুষ যে করে হোক এর মর্যাদা রক্ষা করবেই। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি ভারতে এক মুসলিমকে লাভজিহাদের অভিযোগ তুলে এক হিন্দু মেরে ফেললো, এখন তাকে বাঁচাতে হিন্দুরা লাখ-লাখ টাকা চাঁদা তুলছে…। ধর্ম এটাও জানে, এর নোংরামি, ময়লা-দুর্গন্ধ নিয়ে অনুসারীরা ঘাটাঘাটি করলে নিজেরাই ছোট হয়ে যাবে এবং ভিন্নধর্মীদের কাছে অপদস্থ হবে! ফলে ধার্মিকরা এসব নোংরা-দুর্গন্ধের উপর ছাইচাপা দেয়ার চেষ্টায় সর্বক্ষণ নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখে।
এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের হাতে মরছে, আর মানবতা কাঁদছে। অথচ ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না, এমন অসভ্য একটি মানুষও যতোদিন পৃথিবীতে থাকবে, ততোদিন মানবতার চরম শত্রু এবং কলঙ্ক যাবে না। আবার এক ধর্মানুসারীরা যখন অন্য ধর্মানুসারীদের উপর অত্যচার চালায়, অন্যায় জেনেও কথতি মডারেট ধার্মিকরা প্রায়ই চুপ করে থাকে (মারাত্মক কিছু না হলে)। যদিও ধর্মের ভালো বিষয় নিয়ে বিষদ আলোচনা হয়, গবেষনা হয়, প্রচার-প্রচারণা চলে, বইপুস্তক লেখা হয়… কিন্তু খারাপ দিক নিয়ে কেউ গবেষণা করে না, বইপুস্তক লেখে না। যারা দু’চারজন লিখতে চেষ্টা করে, তাদের ঘাড়ে পড়ে চাপাতি। এমনকি, ধর্ম যে ভুল ও অন্যায় করে, কেউ তার প্রমাণ দিলেও, ধার্মিকরা মুখে কিংবা লেখায় কোনোকিছুর জবাব দিতে অভ্যস্ত নয়। এ বিষয়ে প্রায় সকলেই চিৎকার করে ওঠে, ধর্ম নিয়ে বাড়িবাড়ি করছো কেনো! অর্থাৎ বিদ্বান ব্যক্তিরাও চাপাতির উত্তরই বেশি পছন্দ করেন। আবার এটাও স্বীকৃত যে, ধার্মিকরা একটুও যুক্তি দিয়ে ধর্মরক্ষার চেষ্টা করে না, বরং উম্মাদনার মাধ্যমেই ধর্মরক্ষায় বিশ্বাস। তারা ভদ্রতায় বিশ্বাসী নয়, লুটপাট ও জ্বালাও-পোড়াওয়ে বিশ্বাসী। ধর্মে সহসশীলতা থাকলে এসব করতো না। যদি ধর্মের সবটাই ভালো ও সত্য হতো, তাহলে অত্যাচার-নিপীড়ন, লুটপাট, খুন, ধর্ষণ কিংবা পরসম্পদের লোভ একেবারেই থাকতো না। সেহেতু ধর্মের ভালো দিকগুলোর সাথে এর সকল প্রকার কুপ্রথা, কুশিক্ষা নিয়ে অবশ্যই গবেষণা ও প্রচার থাকা উচিত। তাছাড়া অবশ্যই অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় ধর্ম সমালোচনার পূর্ণ অধিকার ও স্বাধীনতা সব মানুষের থাকা উচিত। তাহলে মানুষ ধর্ম গ্রহণ কিংবা বর্জনের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে এবং মানবিকতারও উন্নতি ঘটবে। কারণ শান্তিময় পৃথিবীর জন্য ধার্মিকতার চেয়ে মানবিকতা কোটি-কোটি গুণ বেশি প্রয়োজন। কেননা, ধর্ম শান্তি চাইবে, অথচ শান্তির জন্য একফোঁটাও সহনশীল হবে না, তাহলে শান্তি আসবে কীভাবে?
এ দেশের বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবি, রাজনীতিবিদ, উচ্চশিক্ষিত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের… ধর্মের প্রতি অন্ধ আনুগত্য, আকাশচুম্বি ও আমৃত্যু ভক্তিশ্রদ্ধা দেখে চরম হতাশ, আশার কোনো আলোই এ জাতির নেই। এ জাতির জন্য কবিগুরুর এই উদ্ধৃতিটিই সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য:-
[পশু বলছে, “সহজধর্মের পথে ভোগ করো।” মানুষ বলছে, “মানবধর্মের দিকে তপস্যা করো।” যাদের মন মন্থর— যারা বলে, যা আছে তাই ভালো, যা হয়ে গেছে তাই শ্রেষ্ঠ, তারা রইল জন্তুধর্মের স্থাবর বেড়াটার মধ্যে; তারা মুক্ত নয়, তারা স্বভাব থেকে ভ্রষ্ট। তারা পূর্বসঞ্চিত ঐশ্বর্যকে বিকৃত করে, নষ্ট করে।]
চরম সত্য কথা। অর্থাৎ এ দেশের প্রায় সবাই সহজধর্মের পথে ভোগ করেই চলেছেন, মানবধর্মের তপস্যা করছেন না। সকলেই ধর্মের ভালো দিকগুলো নিয়েই লেখে ও বলে, কুপ্রথা ও কুশিক্ষার কথা উল্লেখ করে না, দোষ-ত্রুটি শুধরানোর চেয়ে, ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতেও এদের জুড়ি মেলা ভার। কেননা আমাদের বুদ্ধিজীবিরা ভারতের বুদ্ধিজীবিদের ন্যায় অধার্মিক নয়। উদাহরণস্বরূপ, গরুর মাংস রাখার কথিত অভিযোগে যখন এক বৃদ্ধ মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করলো হিন্দু মৌলবাদিরা, তখন ভারতের বুদ্ধিজীবিরা (প্রায় শতভাগ হিন্দু) রাস্তায় নেমে গরুর মাংস খেয়ে প্রতিবাদ করলেন। অথচ এদেশে রামু-উখিয়া থেকে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মতো নৃশংস্যতম ঘটনাগুলো একের পর এক চোখের সামনে ঘটমান থাকলেও, আমাদের বুদ্ধিজীবি-বিদ্বানগণ শুধু একটু উহু-আহা ছাড়া তেমন কোনো প্রতিবাদ করেছেন বলে প্রমাণ নেই। এর কারণ যা-ই বলুন, ওনারা প্রায় সকলেই সহজধর্মের দাস এবং কথিত ধর্মানুভূতি দ্বারা চালিত। অতএব কবিগুরুর কথাই ধ্রুব সত্য, এদেশের বেশিরভাগ মানুষ (অশিক্ষত থেকে বুদ্ধিজীবি)- মুক্ত নয় এবং খাঁটি মানবীয় স্বভাব থেকে ভ্রষ্ট, যারা জন্তুধর্মের স্থাবর বেড়ার মধ্যেই আছে এবং কথিত ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে মানবধর্মের ঐশ্বর্যকে নষ্ট করছে।
কথায় আছে, সব মানুষকে সব সময় এবং একই সঙ্গে বোকা বানানো যায় না। যা ধার্মিকরা মানতেই চায় না। এর কারণ ধর্ম যুগযুগ ধরে প্রায় সকলকেই বোকা বানিয়ে রাখছে। এরপরও দু’একজ যে এর চালাকি ধরতে পারবে না, সেটা ভাবা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। যদিও জোরজবরদস্তি ও প্রাণনাশের হুমকি, নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, রাষ্ট্রের প্রচণ্ড সমর্থন ও ধর্মের প্রতি চরম দুর্বলতা… এসব করে অবিশ্বাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। কিন্তু এভাবে আর কতোকাল, একদিন না একদিন মানুষ ধর্মের সব ফাঁকিই বুঝতে পারবে। আর সেটা সম্ভব কেবল ধর্মপুস্তক পড়ার মাধ্যমেই। অতএব, সংশয়বাদি বা আস্তিক কিংবা নাস্তিক সকলকেই পড়ার অনুরোধ রইলো। কারণ, শুনে শেখায় ভুল-ভ্রান্তি ও মূর্খতা থাকতেও পারে, কিন্তু পড়ে শেখায় তা প্রায় নেই বললেই চলে। অর্থাৎ পড়ার কোনো বিকল্প নেই। নতুবা সামপ্রদায়িকতার হাত থেকে কারোই মুক্তি নেই, এমনকি ভবিষ্যতে স্বধর্মীরাও মুক্তি পাবে না।
Mr Choukidar, you wrote:
সেহেতু বলতেই পারি, মানুষ সব বিষয়ে জ্ঞানী হলেও- ধর্মমূর্খ! কারণ, শুধু কঠিনই নয়, মানুষের জানার তীব্র আকঙ্খা থেকেই কঠিনতম বিষয়গুলোও সহজ হচ্ছে, অথচ ধর্মগুলোকে প্রকৃতরূপে জানার ও বোঝার তেমন কোনো ইচ্ছা কিংবা আগ্রহ মানুষের আছে বলে প্রতীয়মান বা প্রমাণিত নয়।' and my point is did you really read the holly book of religion, did you know what are really written there? I doubt,,,,, Quran says :
তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও, আর নিজেদেরকে বিস্মৃত হও ? অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন কর। তবে কি তোমরা বুঝ না ?’ (২ঃ৪৪)Secondly, do you believe : `Truth is good’ ? or Telling truth is good? How do you know that, could you please prove it ?
I believe you wrote a long article, so you are not mind a short note for me on the issue… I have been waiting for your answer — Thanks
আলম সাহেব,
প্রথমত আমি ইংরেজিতে পাকা নই, তাই সব বুঝতে পারিনি (বাংলায় লিখলে ভালো হয়)। তবে যেটুকু বুঝি, আপনি প্রশ্ন করেছেন, আমি পবিত্র(!) ধর্মপুস্তক সত্যিকারেই পড়েছি কিনা এবং তাকে কী লেখা আছে বুঝেছি কিনা? এর উত্তর হ্যাঁ পড়েছি এবং বুঝেছি। আমার লেখার মধ্যেই বলা আছে। ধর্মগুলোতে অনেক ভালো ভালো কথা/বাণী আছে তা নিয়ে কোনোকিছু বলার নেই। কিন্তু যা পবিত্র(!) তার মধ্যে যদি হুমকি-ধামকি ও নোংরা বাণী/বাক্য থাকে তাহলে তা কীভাবে পবিত্র হতে পারে, তার ব্যাখ্যা কী? যেমন এ লেখায় বলেছি, ‘‘…(পড়লে বুঝবো না), …(না বুঝলে ঈশ্বর রাগ করবে ও ভয়ংকর শাস্তি দেবে), …(নরকের বিষাক্ত সাপের কামড়সহ রক্ত-পুঁজ ও ফুটন্ত পানি খাওয়ানো…), …(মুগুর দিয়ে পিটিয়ে ৭০ গজ মাটির নিচে ঢুকানো-তোলা, আবার ঢুকানে…; আগুনে পোড়ানো বা ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করা)…।” সঠিকভাবে পড়েছি বলেই তো জেনেছি যে এসব কোনো মহান ব্যক্তির বাণী/বাক্য হতে পারে না বা হওয়া উচিতও নয়। যতোদিন পড়িনি ততোদিন বিশ্বাস ছিলো যে ধর্ম পবিত্র! তাই মাঝে মাঝে মনে হয় এসব না পড়াই ভলো, না পড়ে যা জানি, তা-ই ভালো ছিলো, কেনো যে নিজে পড়তে গেলাম, বুঝতে গেলাম…!
দ্বিতীয়ত বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি কিনা যে, `Truth is good’ ? or Telling truth is good? এর অর্থ কী, ‘সত্যই ভালো’ অথবা, ‘সত্য বলাই ভালো?’ ঠিক বুঝলাম না। তাই এর উত্তর দিতে পারলাম না। আমার লেখাতে ধর্মপুস্তক সঠিকভাবে পড়ার ও জিজ্ঞাসা করার অনুরোধ থাকে। যেমন বলেছি, ‘‘সামান্য বুদ্ধি থাকলে এবং দু’একটা প্রশ্ন করলেই যা জানা ও বোঝা সম্ভব, কঠিন ভেবে তা থেকে বিরত থাকার চেয়ে, অধিক মূর্খতা আর কী হতে পারে? অর্থাৎ যা জানা ও বোঝা সম্ভব, তা জানতে না চাওয়াটাই- মূর্খতা।” কারণ মানুষ ধর্ম সম্পর্কে জন্ম থেকে যা জানে, তার বেশি জানতে ও বুঝতে চায় না। এসবই আমার লেখার মূল বিষয়। আশা করি আমার লেখাকে সন্দেহ করে ধর্মপুস্তক পড়বেন, দেখবেন এগুলোতে অজস্র বাণী/বাক্য আছে, যা মানুষ লিখলে নিষিদ্ধ করা হতো এবং সভ্য মানুষ তা কখনোই লিখতেই পারে। অথচ ঈশ্বরেরা (মূলত ধর্মসৃষ্টিকারীরা) লিখেছে ও বলেছে, আদেশ-নির্দেশ দিয়েছে, যা অক্ষরে অক্ষরে মানুষ পালনও করছে। সেহেতু বলেছি, মানুষ অন্য কোনোকিছুতে মূর্খ না হলেও ধর্মমূর্খ।
ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।
মিস্টার চৌকিদার,
অনেক ধন্যবাদ,
প্রথমেই আমি দুঃখিত। হ্যা, আমার মাতৃভাষা ইংরেজী নয়। সুতরাং দুঃখিত ইংরেজীতে কয়েকটি বাক্য লেখার জন্য। ‘আপনি ইংরেজী জানেন না’, নিশ্চয়ই আমি তা মনে করি না। সম্ভবত আমার ইংরেজীতে কোন ভুল হয়ে থাকবে, এ কারণে হয়তো অর্থ স্পষ্ট হয়নি। আসলে বাধ্য হয়েই ইংরেজী শব্দগুলো লিখেছিলাম। আপনি খেয়াল করবেন বাংলা বাক্যগুলো আপনার লেখার হুবুহু তুলে দিয়েছি আর কুরআনের আয়াতটি আমার কাছে আগেই বাংলায় লেখা ছিল, সেখান থেকে তুলে দিয়েছি। আমি বিজয় ব্যতীত ট্ইাপ জানি না। আমার ডেক্সটপে বাংলা লেখা একটু কঠিন, অন্য প্রোগ্রামে যেতে হয়। ফলে দ্রুত লিখতে যেয়ে ইংরেজী লিখেছি। ভুল হলে দঃখিত। ক্ষমা প্রার্থী।
আমার উচিত ছিল আপনাকে প্রথমেই ধন্যবাদ জানিয়ে তারপর শুরু করা। বিশেষ করে আপনার রচনার শিরোনাম এবং তৃতীয় পর্বের শেষ প্যারাগ্রাফটির জন্য। অবশ্যয়- এ বক্তবে আমি আপনার সাথে পূর্ণ একমত। অবশ্যয় পড়তে হবে। ধর্ম অস্বীকার করলেও পড়ে দেখতে হবে –এবং যারা ধর্ম মানেন তাদেরও পড়তে হবে। আমি কি বর্জন করছি, সেটি না জেনে তা বর্জন করা যেমন মূর্খতা তেমন আমি কি গ্রহণ করছি- সেটি না জেনে গ্রহণ করা মূর্খতা। এবং এই জানার জন্য ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। সহজ বিষয়, সে গ্রন্থের নির্দেশ মানলে ধর্ম পালন আর না মানলে ধর্ম অস্বীকার।
তবে আপনি যা বলেছেন, ‘‘সামান্য বুদ্ধি থাকলে এবং দু’একটা প্রশ্ন করলেই যা জানা ও বোঝা সম্ভব, কঠিন ভেবে তা থেকে বিরত থাকার চেয়ে, অধিক মূর্খতা আর কী হতে পারে? অর্থাৎ যা জানা ও বোঝা সম্ভব, তা জানতে না চাওয়াটাই- মূর্খতা” – আপনার এ বক্তব্যের সাথে আমি মোটেও একমত নই। সম্ভবত ধর্ম নিয়ে বর্তমানে যে মূল সমস্যা সেটির মুল হচ্ছে এই ‘ধর্ম সম্পর্কে সামান্য জানা’। এবং একারণেই আমি আপনাকে আমার সন্দেহের কথা বলেছিলাম।
আপনি ধর্ম গ্রন্থ পড়েছেন, আপনাকে ধন্যবাদ। বর্তমানে সবচয়ে ‘আলোচিত’ বা ‘বিতর্কিত’- যাই বলেন ধর্ম গ্রন্থ কুরআন। আপনি দীর্ঘ তিনটি পর্বে একটি আর্টিকেল লিখেছেন। ‘জানতে হবে’। ঝুরআন এই কথাটি সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে মাত্র কয়েকটি বাক্যে বুঝিয়ে দিয়েছে। তার একটি বাক্য আমি উল্লেখ করেছিলাম। দেখুন নীচের আয়াতগুলো- আপনার রচনার সবটুকু এখানে কি পাওয়া যায় কি না?
“বল যাহারা জানে এবং যাহারা জানে না –তাহারা কি সমান ? বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।” ৩৯ঃ ৯)
“তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও, আর নিজেদেরকে বিস্মৃত হও ? অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন কর। তবে কি তোমরা বুঝ না ?”
“বল, মন্দ ও ভালো এক নয়; ———–।” (৫ঃ ১০০)
“সমান নহে অন্ধ ও চক্ষুস্মান,
আর না অন্ধকার ও আলো,
আর না ছায়া ও রৌদ্র,” ( ৩৫ঃ ১৮-২১)
কেউ যদি সে গ্রন্থের নির্দেশ বা উপদেশ না মেনে যদি বলে আমি ধার্মিক সে একজন প্রতারক মাত্র। কোন প্রতারককে উদাহরণ হিসাবে টেনে ধর্ম আলোচনা করলে সে আলোচনা মূর্খতা।
কুরআন একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। সুতরাং এই গ্রন্থে একটি দর্শন আছে, পরস্পর সংযুক্ত আয়াত আছে। আমি উপরে যে আয়াত দিয়েছি তাও অনেকটা বিচ্ছিন্ন। এ আয়াতের সাথে বহু আয়াত যুক্ত। আলোচনা করতে গেলে বিশাল একটি গ্রন্থের আকার নিতে পারে। সুতরাং কুরআনের বিচ্ছিন্ন আয়াত তাও আবার বিকৃতভাবে উপস্থাপনা আসলে কোন অর্থ বহন করে না। তারপরও আলোচনার জন্য আপনার বর্ণনা- “(পড়লে বুঝবো না), (না বুঝলে ঈশ্বর রাগ করবে ও ভয়ংকর শাস্তি দেবে), (নরকের বিষাক্ত সাপের কামড়সহ রক্ত-পুঁজ ও ফুটন্ত পানি খাওয়ানোৃ) (মুগুর দিয়ে পিটিয়ে ৭০ গজ মাটির নিচে ঢুকানো-তোলা, আবার ঢুকানেৃ; আগুনে পোড়ানো বা ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করা)ৃ।” -এগুলোর সুত্র উল্লেখ করলে ভাল হত।
‘পড়লে বুঝবে না;- এটা কোথায় পেয়েছেন আমি সন্দিহান। বরং কুরআন পাঠ করার উপদেশ বুঝে পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। এই বুঝে পাঠ করা, কিভাবে পাঠ করলে বুঝবে তার কৌশল, কুরআনের ব্যাখ্যা কেবলমাত্র কুরআন- এ সম্পর্কে কুরআনে শতাধিক উপদেশ আছে তার মধ্যে কয়েকটি:
“আমি কুরআন সহজ করিয়া দিয়াছি উপদেশ গ্রহনের জন্য; অতএব ইপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছে কি?” (৫৪ঃ৩২)
“—-; তাহাদের হৃদয় আছে কিন্তু তদ্দারা তাহারা উপলদ্ধি করে না, তাহাদের চক্ষু আছে তদ্দারা তাহারা দেখে না এবং তাহাদের কর্ণ আছে তদ্দারা শ্রবণ করে না–ইহারা পশুর ন্যায়,——।” (৭ঃ১৭৯)
আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম জীব সেই, বধির ও মুক যাহারা কিছুই বোঝে না। (৮:২২, ৫৫)
“তবে কি উহারা কুরআন সম্পর্কে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা করে না? না উহাদের অন্তর তালাবদ্ধ?” (৪৭ঃ২৪)
“ইহাতে উপদেশ রহিয়াছে তাহার জন্য যাহার আছে অন্তকরণ অথবা যে শ্রবন করে নিবিষ্ট চিত্তে।” (৫০ঃ ৩৭)
কুরআনে শাস্তির কথা বলা আছে, কি কি কাজ করলে শাস্তি তার বিস্তারিত বর্ণনা আছে। কিন্তু আপনি যেভাবে বর্ণনা দিয়েছেন- ‘মুগুর দিয়ে পিটিয়ে ৭০ গজ মাটির নিচে ঢুকানো-তোলা’- একটু সুত্র দিলে ভাল হয়।
হ্যা, ‘অগ্নিতে দ্বগ্ধ’, ‘ফুটন্ত পানি পান করানো’ –ইত্যাদি করআনে বলা আছে- এ বিষয়গুলো যদি কুরআনের মুল দর্শনের সাথে সমন্বয় করে পড়েন, তবে তার অর্থ আপনার কাছে সম্ভবত স্পষ্ট হবে। আর কুরআনের মুল দর্শন জানতে হলে অবশ্যয় আপনাকে কুরআন আদ্যেপ্রান্ত অন্তত কয়েকবার খুবই মনোযোগের সাথে পড়তে হবে। বিচ্ছিণœ আয়াত বা কারো কাছে শুনে বা দেখে তা উদ্ধার আদৌ সম্ভব নয়। এ কারণেই কুরআন সয়ং কুরআন বুঝে পাঠে কি পরিমান গুরুত্ব আরোপ করেছে করআন পাঠ করে আপনি নিজেকেই জেনে নিতে হবে।
আগুনে হাত দিলে হাত পুড়ে যাবে এটি তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া এবং তা আগুনের দোষ নয়। মিথ্যে কথা বললে, তার কুফল তাৎক্ষনিক নয়। তা আমরা হয়তো চোখেও দেখতে পাই না। কিন্তু এমন যদি আমাদের অভিজ্ঞতা বা প্রকৃতির নিয়ম হতো, যে মিথ্যে বললে, কাউকে প্রতারিত করলে, কারো কিছু কেড়ে নিলে তাৎক্ষনিক শরীর অগ্নিদগ্ধ হবে- তবে কি আমরা তাকে নৃশংশতা বলতাম?
ধর্ম আমাদের অভিজ্ঞাতায় নেই এমন কিছু অদৃশ সংবাদ আমাদের অবহিত করছে। সেটি খুব বিস্তারিত নয়- কুরআনের ভাষায় কিছু ‘দৃষ্টান্ত বা ধারণা’ দেওয়া হয়েছে মাত্র। কুরআন বলে, প্রকৃতই সেটি কেমন কেবল পরম সত্ত্বাই জানেন। তবে মিথ্যে বললে, প্রতারণা করলে- সেটি ঘটবে। যে বিশ^াস করে- করবে- যে না করে তার পরিণতির জন্য সেই দায়ী। পরম সত্ত্বা বিধানটি কেবল জানিয়ে দিয়েছেন। যেমন আগুনে ঝাঁপ দিলে অগ্নিদগ্ধ হবে- এটি প্রকৃতিরই বিধান। কেউ আগুনের বিধানটি যদি না জেনে আগুনে ঝাঁপ দেন আগুন কি তাকে ছেড়ে দেবে? কেউ যদি মিথ্যার বিধান না জেনে মিথ্যা বলেন, তার দায়িত্বও তারই।
কাফির শব্দটি কুরআনের সর্বাপেক্ষা ‘আলোচিত বা বিতর্কিত’ শব্দ। তবে কারো ব্যাখ্যা সে নিজেকে ধার্মিক নেতা হিসাবে দাবী করুক বা অবিশ^াসী স্কলার হোক -সেটি ত্যাগ করে কুরআন যে ব্যখ্যাটি দিয়েছে- সে ব্যাখ্যাটি কুরআন থেকে নিজে জেনে নিন- দেখবেন আপনার রচনায়- যারা ‘পড়ে না- জানে না’ বা ‘বোঝে না’ অথবা ‘বোঝার চেষ্টা’ করে না কিন্তু নিজেদের জ্ঞানী হিসাবে জাহির করছেন, দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন- তাদের সাথে এই ‘কাফির’ শব্দটির কতো সামঞ্জস্যতা! এগুলো অবশ্য বিশদ আলোচনার বিষয়- দুঃখিত আপনার কয়েকটি বক্তব্যেও প্রেক্ষিতে উত্তরটি একটু বিস্তারিত হয়ে গেল।
তবে শেষ বিষয় ইংরেজী। আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম: আপনি কি বিশ^াস করেন, ‘সত্য উত্তম’ অথবা ‘সত্য বলা ভাল কাজ’ ? যদি আপনার উত্তর ‘হ্যা’ হয়, আপনি কিভাবে বুঝলেন যে ‘সত্য বলা ভাল’। যদি তা ‘ভাল’ হয় নিশ্চয় আপনার কাছে তার পক্ষে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে। আপনি কি দয়া করে আমাকে এই তথ্য-প্রমাণ বিষয়ে একটু সাহায্য করবেন।
একইভাবে মানুষেরটি ‘জোর করে কেড়ে নেওয়া’, ‘প্রতারণা করা’, ‘হত্যা করা’, ঘুষ খাওয়া, ‘মূর্খ থাকা এবং এই মূর্খতা নিয়ে বড়াই করা’- ইত্যাদি বিষয়গুলো যদি মন্দ হয়- তবে সে সম্পর্কে আপনার কাছে নিশ্চয়ই বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমান আছে। আমার প্রতি একটু দয়া করবেন?
আবারও ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।
ভাই, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনি বলেছেন, ‘আলোচতি’ বা ‘বতির্কতি’- যাই বলনে ধর্ম গ্রন্থ কুরআন। তবে আমি মনে করি শুধু কুরআন নয়, সব ধর্ম গ্রন্থই বিতর্কিত। সত্য বিতর্কিত নয়, যা মিথ্যা তা নিয়ে বির্তের শেষ নেই, যেমনটা বলেছেন শ্রদ্ধেয় আরজ আলী মাতুব্বর।
তিনি বলেছেন,
“…কোন বিষয় বা কোন ঘটনা একাধিকরূপে সত্য হইতে পারে না। একটি ঘটনা যখন দুই রকম বর্ণিত হয়, তখন হয়ত উহার কোন একটি সত্য অপরটি মিথ্যা অথবা উভয়ই সমরূপ মিথ্যা; উভয়ই যুগপৎ সত্য হইতে পারে না হয়ত সত্য অজ্ঞাতই থাকিয়া যায়। …জগতে এমন অনেক বিষয় আছে, যে সব বিষয়ে দর্শন, বিজ্ঞান ও ধর্ম এক কথা বলে না। আবার ধর্মজগতেও মতানৈক্যের অন্ত নাই যেখানে একইকালে দুইটি মত সত্য হইতে পারে না, সেখানে শতাধিক ধর্মে প্রচলিত শতাধিক মত সত্য হইবে কিরূপে? যদি বলা হয় যে, সত্য হইবে একটি; তখন প্রশ্ন হইবে কোনটি এবং কেন? অর্থাৎ সত্যতা বিচারের মাপকাঠি (Criterion for truth) কি? সত্যতা প্রমাণের উপায় (Test for truth) কি এবং সত্যের রূপ (Nature of truth) কি? …এই কল্পিত ধর্মের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই দেখা দিল উহাতে মতভেদ। ফলে পিতা-পুত্রে, ভাইয়ে-ভাইয়ে এমন কি স্বামী-স্ত্রীতেও এই কল্পিত ধর্ম নিয়া মতভেদের কথা শোনা যায়। এই মতানৈক্য ঘুচাইবার জন্য প্রথমত আলাপ আলোচনা পরে পরে বাক-বিতণ্ডা, শেষ পর্যন্ত যে কত রক্তপাত হইয়া গিয়াছে, ইতিহাসই তার সাক্ষী। কিন্তু ধর্ম সম্পর্কে বিশ্বমানব একমত হইতে পারিয়াছে কি?”
তাঁর লেখা পড়া অনুরোধ রইলো। যেখানে ধর্মের প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন। লিংক: http://www.arojalimatubbar.com/2015/12/sotter-sondhane.html
আরো পড়তে পারেন: Islamic scholar ‘says Allah allows Muslim men to RAPE non-Muslim women to humiliate them’
http://www.express.co.uk/news/world/635942/Islam-Scholar-Saud-Saleh-Cairo-Slavery-Muslim-Women-Pagan-ISIS-Al-Azhar-University-Egypt
ধর্মগ্রন্থে বহু ভালো কথা আছে সন্দেহ নেই, যা নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ ধর্মপুস্ত না পড়েই পালন করতে পারে। কিন্তু প্রচুর খারাপ বাণী/কথাও আছে, সেটাই লেখার মধ্যে বলা হয়েছে। সমস্যা হলো যারা ধর্মন্থকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও মহাপবিত্র মনে করে তারা ওইসব খারাপ বাণী/বাক্যগুলো পড়েই না। কোনোকিছু মহাপবিত্র বা সর্বশ্রেষ্ঠ হতে হলে যেসব গুণ থাকতে হয় এর কতোটুকু ধর্মপুস্তকে আছে সেটা কেউ বিবেচনায় নেয় না।
সূত্র চেয়েছেন, অনেকে পাবেন ইউটিউবে (বড় বড় ধর্মজীবির ব্যাখ্যায়)। মনে রাখবেন, যা সত্য তা নিয়ে এতো বিতর্ক ও এতো বিভক্তি হতে পারে না। কারণ সত্য একটাই দুটো হলেই তা আর সত্য থাকে না বিভ্রান্ত হয়ে যায়। যা সত্য তা মানতে ভয়ভীতির প্রয়োজন হয় না, যা মিথ্যা তা মানতেই ভয়ভীতির প্রয়োজন হয়। তাই বহু ধর্ম কখনোই সত্য নয়। সেজন্য একই ধর্মের বহু ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তকর বক্তব্য পাবেন। এই একটায় ঢুকলে, পাশে অনেকেরই বক্তব্য পাবেন:
https://www.youtube.com/watch?v=EAk-6waQki8&feature=youtu.be
https://www.youtube.com/watch?v=1aL3BEhNe2k
আপনি অনেককিছু বলেছেন, যার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা সংক্ষেপে দেয়া সম্ভব নয়। যাহোক বলেছেন, “কেউ যদি সে গ্রন্থের নির্দেশ বা উপদেশ না মেনে যদি বলে আমি ধার্মিক সে একজন প্রতারক মাত্র। কোন প্রতারককে উদাহরণ হিসাবে টেনে ধর্ম আলোচনা করলে সে আলোচনা মূর্খতা।”
আমি কোনো প্রতারককে উদাহরণ হিসেবে টেনে আনিনি বরং বলেছি, ধর্মপুস্তকের বাণী/বাক্যগুলোর কথা, ওর মধ্যে যা আছে তাতে এবং সমাজে প্রচলিত ধর্মশিক্ষায় যে কেউ অতি সহজেই প্রতারণার শিকার কিংবা প্রতারক হতে পারে। যেমন আমাদের চারদিকেই আছে। তা না হলে কী করে শতভাগ ধার্মিক এই দেশে, প্রায় শতভাগই দুর্নীতিবাজ, ঘুষঘোর, প্রতারক… ব্যক্তি দিয়ে ভরা?
“আপনি কি বিশ্বাস করেন, ‘সত্য উত্তম’ অথবা ‘সত্য বলা ভালো কাজ?” কিভাবে বুঝলাম? ভাই, এসব বুঝতে ধর্মের উপদেশের প্রয়োজন নেই, নিজের বিবেক-বুদ্ধিতেই মানুষ এসব বুঝতে পারে।
যাহোক, কিছু আয়াত সংক্ষেপে দিলাম পুরোটা পড়ে নিবেন। হয়তো অন্যান্যদের মতো বলবেন, আগে-পরে না পড়লে এর অর্থ বোঝা যাবে না। কিন্তু তা আমি বিশ্বাস করি না। যেমন, যুদ্ধ করার উপেদেশ, বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব না করার উপদেশ ইত্যাদি। এর আগের আয়াত বা পরের আয়াতে যা-ই থাকুক, কোনো মহান ব্যক্তিই যুদ্ধ করার উপদেশ কিংবা বন্ধুত্বের বিরোধিতা করতে পারে পারে না। কারণ যুদ্ধ করা কিংবা শত্রু কখনো শান্তি বয়ে আনে না। আমার লেখায় বলেছি, এমন হুমকি ও প্রলোভন সব ধর্মেই আছে। কোনো মহাপবিত্র ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিংবা কোনো সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশক্তিমান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এমন হুমকি দিয়ে কোনো পুস্তক রচনা করলে তাকে মানুষ কী করতো? কেনোই বা সর্বশক্তিমানদের এসব হুমকি ও প্রলোভন দেয়ার প্রয়োজন হলো, যারা কিনা হ্যাঁ বললেই সব হয়, যাদের অনুমতি ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না…!!!!! আর অবিশ্বাসী/বিধর্মীদের প্রতি যেসব হুমকি দেয়া হয়েছে তা কোনো সর্বশক্তিমানের নিম্ন মানসিকতার পরিচয় ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছি না। এসবই বোঝার ও জানার বিষয়। যা জানতে ও বুঝতে স্কলার হওয়ার প্রয়োজন নেই, সামান্য জ্ঞানেই বোঝা সম্ভব। দয়া করে আরজ আলী পড়বেন সব উত্তর পাবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে সব সময় মনে করি কোনো সর্বশক্তিমানই যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতেই হোক প্রলোভন, হুমকি, কিংবা যুদ্ধের উৎসাহ দিতেই পারে না, কারণ এসব লোভ, ভয় আর যুদ্ধ মানেই কান্না ও রক্তপাত, ধর্ষণ, জঘন্যভাবে হত্যা ইত্যাদি। অথচ প্রতিটি ধর্মেই যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে যা অত্যন্ত অমানবিকই শুধু নয় প্রচণ্ড জঘন্যও বটে।
দয়া করে পড়বেন:
সূরা ৫:৫১ হে বিশ্বাসীগণ! ইহুদী ও খৃস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না,। ৯: ২৯ তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। সূরা ২:১৯১ আর যেখানে পাও, তাদের হত্যা কর, এবং যেখান থেকে তোমাদের বের করে দিয়েছে, তোমরাও সেখান থেকে তাদের বের করবে। …তোমারা তাদের হত্যা করবে, এটাই তো অবিশ্বাসীদের পরিণাম। সূরা ৯:১২৩ হে বিশ্বাসগণ! অবিশ্বাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী তাদের সাথে যুদ্ধ কর এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখুক…। সূরা ৯:৫ অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে অংশীবাদীদের যেখানে পাবে বধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকবে, * (অংশীবাদী অর্থাৎ যারা প্রতিমাপূজক)। সূরা ২:১৯৩ আর তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাক, যতক্ষণ না (তাদের) ধর্মদ্রোহিতা দূর হয় এবং আল্লাহ্র দ্বীন (ধর্ম) প্রতিষ্ঠিত না হয়। সূরা ৯:২ …আল্লাহ্ অবিশ্বাসীদের লাঞ্ছিত করে থাকেন। সূরা ১৪: ১৬ তাদের (অবিশ্বাসীদের) প্রত্যেকের জন্য পরিণামে জাহান্নাম রয়েছে এবং প্রত্যেককে গলিত পূঁজ পান করান হবে। সূরা ২:২১৬ তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হল। যদিও এ তোমাদের কাছে অপছন্দ, সূরা ৪৭:৪ অতএব যখন তোমরা অবিশ্বাসকারীদের সাথে যুদ্ধে মোকাবিলা কর তখন তাদের গর্দানে আঘাত কর, সূরা ৮:১২ …তাদের স্কন্ধে ও সর্বাঙ্গে আঘাত কর। সূরা ৯:৭৩ … অবিশ্বাসী ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কর এবং তাদের প্রতি কঠোর হও। সূরা ৫৬:১৯ তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে চির-কিশোরেরা, পানপাত্র, কুঁজা ও প্রস্রবণ-নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে, সেই সুরাপানে তাদের শিরঃপীড়া হবে না, তারা জ্ঞানহারা হবে না। সূরা ৭৬:১৯-২২ তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে চির কিশোরগণ, তাদের দেখে মনে হবে তারা যেন বিক্ষিপ্ত মুক্তা, তুমি যখন সেখানে দেখবে, দেখতে পাবে ভোগ-বিলাসের উপকরণ সূরা ৫৬:৬৭-৭৫ সেখানে (স্বর্গে) রয়েছে …সুশীলা ও সুন্দরী রমণীগণ, …সুলোচনা ও তাঁবুতে অবস’ানকারিণী এ সকল রমণী, …এদের ইতিপূর্বে মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি।
আরো পড়তে পারেন:
সূরা ৫৬:২০-২৪ ও ৩৪ থেকে ৩৭ আয়াত: সূরা ৫:১০ সূরা ৯:২৩ সূরা ৫:৩৩ সূরা ২২: ১৯-২২ সূরা ২৫:৬ সূরা ৪৮:১৩ সূরা ৬৯:৩০-৩৭ সূরা ৬৬:১০ সূরা ২:২২২-২২৩ সূরা ২:২৮২ সূরা ৪:৩ সূরা ২:২১৬ সূরা ৯:১২৩ সূরা ৬৬:৯ সূরা ৯:৭৩ সূরা ৮:৬৫ সূরা ৪৯:১৫ সূরা ৮:৫৯-৬০ সূরা ৯:২-৩ সূরা ৯:১৪ সূরা ৪:৯৫-৯৬ সূরা ৩:১৪২ সূরা ৬০:৪ সূরা ৫৮: ২২-২৩ সূরা ৩: সূরা ৯৮:৬ সূরা ৫:৩৬ঃ- সূরা ৩:৮৫
একটি খসড়া হিসাব অনুযায়ী বিগত ১৪০০ বছরে (যদিও চলমান) ধর্মের হাতে খুন হয়েছে ২৭০,০০০,০০০ (দুই কোটি সত্তর লক্ষ) মানুষ! লিংক এখানে: https://www.politicalislam.com/tears-of-jihad/
তাহলে কী করে বলবো ধর্ম কেবল মানুষের ভালোর জন্য। যুদ্ধ কখনোই ভালো নয় কিন্তু তা-ই ধর্মে স্বীকৃত।
আমার পূর্বের কোনো এক লেখায় কবি রজ্জবের একটি উক্তি আছে,
“সব সাঁচ মিলৈ সো সাঁচ হৈ না মিলৈ সো ঝুঁঠ। জন রজ্জব সাঁচী কহী ভাবই রিঝি ভাবই রূঠ॥” অর্থাৎ সব সত্যের সঙ্গে যা মেলে তাই সত্য, যা মিলল না তা মিথ্যে; রজ্জব বলছে, এই কথাই খাঁটি, এতে তুমি খুশিই হও আর রাগই কর।
কবি রজ্জাবের উপরোক্ত উক্তির বিষয়ে কবিগুরুর ব্যাখ্যা (হুবহু তুলে দিলাম, চিন্তা করলেই বুঝবেন তাঁরা কী বলছেন)।
“…এ কথায় রাগ করবার লোকই সমাজে বিস্তর। তাদের মত ও প্রথার সঙ্গে বিশ্বসত্যের মিল হচ্ছে না, তবু তারা তাকে সত্য নাম দিয়ে জটিলতায় জড়িয়ে থাকে– মিল নেই ব’লেই এই নিয়ে তাদের উত্তেজনা উগ্রতা এত বেশি। রাগারাগির দ্বারা সত্যের প্রতিবাদ, অগ্নিশিখাকে ছুরি দিয়ে বেঁধবার চেষ্টার মতো। সেই ছুরি সত্যকে মারতে পারে না, মারে মানুষকে। তবু সেই বিভীষিকার সামনে দাঁড়িয়েই বলতে হবে — সব সাঁচ মিলৈ সো সাঁচ হৈ না মিলৈ সো ঝুঁঠ।” (সব সত্যের সঙ্গে যা মেলে তাই সত্য, যা মিলল না তা মিথ্যে)
অতএব, ধর্ম সব সত্যের সাথে মিলে না। যদি মিলতো, ৪ হাজারের অধিক ধর্ম, ঈশ্বর এবং ধর্মসৃষ্টিকারী… এসব থাকতো না, ধর্ম হতো একটিমাত্র।
কবিগুরু আরো বলেছেন,
“…মানুষের উপলব্ধি সর্বত্র সমান নয় ও অনেক স্থলে বিকৃত ব’লেই সব মানুষ আজও মানুষ হয় নি। …জল দিয়ে কেবল দেহেরই শোধন হয়, মনের শোধন হয় সত্যে…। …পাপ করে সন্তপ্ত হলে সেই সন্তাপ থেকেই পাপের মোচন হয়, “এমন কাজ আর করবনা’’ বলে নিবৃত্ত হলেই মানুষ পবিত্র হতে পারে…।”
জাতীয় কবি নজরুল বলেছেন,
“মানুষেরে ঘৃণা করি
ও কারা কোরাণ, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি, মরি,
ও মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে
যাহারা আনিল গ্রন্থ কেতাব সেই মানুষেরে মেরে
পূঁজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল! মুর্খরা সব শোনো
মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনে নি মানুষ কোন।”
তিনি আরো বলেছেন, “…যিনি সকল মানুষের দেবতা, তিনি আজ মন্দিরের কারাগারে, মসজিদের জিন্দানখানায় গির্জার gaol-এ বন্দি। মোল্লা-পুরুত, পাদরি-ভিক্ষু জেল-ওয়ার্ডের মতো তাহাকে পাহারা দিতেছে। আজ শয়তান বসিয়াছে স্রষ্টার সিংহাসনে। ”
আমার মতের সাথে একমত না হতে পারেন, তথাপিও আমি আপনার মতামতকে শ্রদ্ধা করি। কারণ প্রত্যেকেরই নিজস্ব মতামত ও চিন্তার স্বাধীনতা থাকতে হবে। মতামত ও বিশ্বাস সকলের সাথে একইরকম হবেও না কোনোদিন। যেমন আমার পিতা-মাতা যা বিশ্বাস করে আমি তা বিশ্বাস করি না (যদিও এক সময়, না বুঝে করতাম)। (সময় অভাবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে না পারার জন্য দুঃখিত, লেখার মধ্যে ও রেফারেন্সের মধ্যে কিছু আছে। তাছাড়া শ্রদ্ধেয় আরজ আলীর বই পড়লে সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন, আমার মতো মূর্খের উত্তর যথার্থ হতে নাও পারে)।
বলতে পারেন, ধর্মের কোন ভালো দিকটি আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে? সবাই তো দেখছি, ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের অপরাধ ঢাকছে অর্থাৎ প্রতারণা করছে! যা সত্য তা ভেঙ্গে যায় না, বিভক্ত হয় না, কারণ সত্য একটাই হয়, বহু হয় না। যা সত্য তা প্রয়োগ করে জাল-জালিয়াতি, জোচ্চুরি করা যায় না। অথচ ধর্মের নামে সবই হয়।
ভালো থাকুন, ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিন।
মিস্টার চৌকিদার,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। বিস্তারিত একটি উত্তর দেওয়ার জন্য। মুক্তচিন্তার জন্য মুক্ত আলোচনা অপরিহার্য। কুরআন আমাদের শিক্ষা দেয়, তর্ক করিবে উত্তম পন্থায়।
‘আমার বান্দাদের যাহা উত্তম তাহা বলিতে বল। নিশ্চয়ই শয়তান উহাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উসকানী দেয়, শয়তান তো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।’ (১৭ঃ৫৩)
‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং ইহাদের সঙ্গে তর্ক করিবে উত্তম পন্থায়। ‘ -১৬: ১২৫
তবে যখন কোন বিতর্ক বিদ্রুপ, বিতন্ডা, গালাগালির পর্যায়ে চলে যায় তখন কুরআন বলে, তুমি তাদের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে অন্তত সেই সময়ে আর কথা বলবে না।
‘তুমি যখন দেখ, তাহারা আমার আয়াতসমূহ সম্মন্ধে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন হয় তখন তুমি তাহাদের হইতে সরিয়া পড়িবে যে পর্যন্ত না অন্য প্রসঙ্গে প্রবৃত্ত হয়—’ (৬: ৬৮)
উল্লেখিত বিষয়ে আরো আয়াত আছে, আমি দুটি মাত্র উল্লেখ করলাম।
আমার মনে হচ্ছে আমাদের বিতর্ক এখন পর্যন্ত সঠিক পথে চলছে। এ জন্য আরো একদফা আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রথমত: আরজ আলী মাতবর প্রসঙ্গ। হ্যাঁ-আমি একমত। সত্যের রূপ একটিই, অনুমান ও অসত্য হাজাররকম হতে পাওে কিন্তু সত্য কেবল একটিই। আমিও তাই বলছি। তবে আরজ আলী মাতবর একটু ভিন্নভাবে এই কথাটি বলেছেন, বিংশ শতাব্দিতে আর কুরআন বলেছে ৭ম শতাব্দিতে।
অথচ এই বিষয়ে তাহাদের কোন জ্ঞান নাই, উহারা তো কেবল অনুমানেরই অনুসরণ করে; কিন্তু সত্যেও মুকাবিলায় অনুমানের কোনই মূল্য নাই। (৫৩ঃ ২৮)
—– ও সত্যা-সত্যের পাথর্ককারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হইয়াছে।——। —–। (২ঃ১৮৫)
আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি ———-। (৪ঃ১০৫)
সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়া তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ, ———(৬ঃ১১৫)
‘তোমার পূর্বেও অনেক রাসুলকে অবশ্যয় মিথ্যাবাদী বলা হইয়াছিল এবং তাহাদেরকে মিথ্যাবাদী ও ক্লেশ দেওয়া সত্ত্বেও তাহারা ধৈর্য ধারণ করিয়াছিল—– (৬: ৩৪)
নিশ্চয়ই সত্য একটি তবে সে সত্য কোনটি, আপনি যা বলছেন সেটি, আমি যা দাবী করছি সেটি, কুরআন যা দাবী করছে তাই নাকি আর যে সব ধর্ম, মতবাদ বা দর্শন দাবী করছে –তারা? আমরা এই যে বিতর্ক করছি- আসলে সেটি করছি এজন্য আমরা আসলে প্রকৃত সত্যটি জানার চেষ্টা করছি।
তবে আরজ আলী মাতবর সত্যেও খোঁজে যে ইদাহরণ ও ব্যখ্যা দিয়েছেন আমার কাছে যা তা যুক্তিসংগত মনে হয়নি। আমরা অনেকেই ভলি করে ফেলি যে ফিজিক্যাল সায়েন্স, স্যোসাল সায়েন্স, ন্যাচারাল সায়েন্স- সব এক বিষয়। বাস্তবে ফিজিক্যাল সায়েন্সর বিষয়সমূহ ল্যারেটারীতে অংকের ধাঁচে ফেলে প্রমান করা হয় কিন্তু অন্য সায়েন্সগুলো যুক্তি, অভিজ্ঞতা, উপলদ্ধির মাধ্যমে প্রমান করতে হয় আবার এই বহুকিছু এভাবেও প্রমান করা যায় না। আমরা সবাই জানি সত বলা ভাল কাজ কিন্তু আপনি কি সেটি অংক কষে, তথ্য প্রমান দিয়ে প্রমান করতে পারবেন। এখস পর্যন্ত বিশ্বেও সুষ্টি সম্পর্কে যে সব বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আছে, সে গুলো বর্ণনা করতে লেখা হয়, সায়েন্টিস্ট বিলিভ——।
দ্বিতীয় প্রসঙ্গ আপনার উল্লেখিত আয়াত। আমি আগেই বলেছি কুরআনের কোন এক বিষয়ের একটি বিচ্ছিন্ন আয়াত কোন অর্থ বহন কওে না। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বহু আয়াত রয়েছে তার কয়েকটি:
‘এইভাবে আমি আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি, আর ইহাতে অপরাধীদের পথ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।’ (৬ঃ ৫৫)
(বল), —, এই কিতাব প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের নিকট হইতে, ইহার আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট, সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাবে বিবৃত———- (১১:১)
—–। যাহারা উপদেশ গ্রহণ করে আমি তাহাদের জন্য আয়াতসমূহ (নিদর্শন) বিশদভাবে বিবৃত করিয়াছি। (৬ঃ ১২৬)
কোন বিষয়ে যখন বিস্তারিত বলা হয় তখন সেখান থেকে বাকী সব ফেলে দিয়ে কেবল একটি বাক্য তুলে নিয়ে নিজের মত ব্যাখ্যা দেওয়া চরম প্রতারণা মাত্র। যেহেতু কুরআন নিজেই দাবী করেছে এ গ্রন্থে সুস্পষ্ট বিস্তারিত বলা হয়েছে সুতরাং কোন বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে হলে কুরআনে ঐ সম্পর্কে যে সব আয়াত আছে তার সবগুলো পাঠেই ঐ বিষয়টি কেবল অনুধাবণ সম্ভব।
আপনি কুরআনের বিচ্ছিন্ন বহু আয়াত উল্লেখ করেছেন। যেহেতু এগুলো অনুবাদ সুতরাং প্রতিশব্দের ব্যবহার একটি বড় বিষয়। একটু সর্বজনগ্রাহ্য অনুবাদ হলে ভাল হয়। এক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাত কুরআনুল করিম আমি এখানে ব্যবহার করছি। বলা হচ্ছে, বাংলাভাষায় এটিই এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ অনুবাদ।
তবে আপনি যে আয়াতগুলো উল্লেখ করেছেন, খুব ইন্টারেস্টিং যে এই ‘বিচ্ছিন্ন আয়াতগুলোর’ ব্যবহার খুব বেশী দেখা যায়। এর একটি নিয়ে আলোচনা করতে বিস্তর সময়ের প্রয়োজন। এই পরিসরে তো মোটেও সম্ভব নয়। তারপরেও সামান্য একটু আলোচনা না করলেই আমাদেও ভুল ধারণা হতে পারে।
কুরআনের বেহেশতের যে বর্ণনা আপনি উল্লেখ করেছেন আপনি ঠিকই আছেন। তবে আপনার যেখানে সীমাবদ্ধতা তা হল কুরআনে বলা হয়েছে এই বর্ণনা দৃষ্টান্ত মাত্র। ঐ বিচ্ছিন্ন আয়াতগুলোর সাথে যদি নীচের আয়াতগুলো যুক্ত করেন তবে আপনার ধারণা কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে:
‘মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হইয়াছে তাহার ‘উপমা’ এইরূপ: উহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, —–(১৩: ৩৫)
‘কেহই জানে না, তাহাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কী লুক্কায়িত রাখা হইয়াছে তাহাদের কৃতকর্মের পুরস্কার সরূপ।’ (৩২ঃ ১৭)
সুতরাং কুরআনে এই বেহেশতের যে রূপ বলা হয়েছে তা ধারণা মাত্র।
দ্বিতীয়ত বেহেশতে হুর, নারী-ইত্যাদি সম্পর্কে ভাষার ব্যবহার প্রসঙ্গ। এই বর্ণনায় মনে হতে পাওে এটা যেন পুরুষদের সেক্স সংক্রান্ত ভোগের রগরগে বর্ণনা। কিন্তু আপনার উল্লেখিত আয়াতের সাথে যদি নি¤েœর আয়াতগুলো যোগ করেন তাহলে কিছুটা উদার ধারণার অধিকারী আমরা হতে পারে। কুরআন বলছে:
‘মু’মিন হইয়া পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করিবে তাহাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করিব এবং তাহাদের কর্মেও শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করিব।’ (১৬: ৯৭)
‘দানশীল পুরুষগণ এবং দানশীল নারীগণ এবং যাহারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কওে তাহাদিগকে দেওয়া হইবে বহুগুণ বেশী এবং তাহাদেও জন্য রহিয়াছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (৫৭: ১৮)
‘ইহা এইজন্য যে তিনি মু’মিন পরুষ ও মু’মিন নারীগণকে দাখিল করিবেন জান্নাতে যাহার নি¤œদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে এবং তিনি তাহাদের পাপ মোচন করিবেন; ইহাই আল্লাহর দৃষ্টিতে মহাসাফল্য।’ (৪৮: ৫)
দেখা যাচ্ছে কুরআনের বর্ণনা অনুয়ায়ী বেহেশত নারী পুরুষ উভয়ের জন্য কিন্তু বেহেশতের যে বর্ণনা সেটি কেবল পুরুষের নারী ভোগের দৃষ্টান্ত। এটা সহজেই অনুমেয় ভাষার দূর্বলতার কারণে কুরআনের বেহেশতের দৃষ্টান্তের বর্ণনাটি আমাদের কাছে ‘টাবু’ মনে হচ্ছে।
এই দূর্বলতা সব ভাষাতেই আছে। ইংরেজীতে ম্যান, হিউম্যানসহ বহু শব্দ আছে যা মনে হতে পারে পুরুষবাচক। কিন্তু মানবজাতির মধ্যে শুধু পুরুষ নয়- নারীরাও আছে।
তৃতীয়ত: আপনার উল্লেখিত কাফির, যুদ্ধ, হত্যা -ইত্যাদি সম্পর্কিত কয়েকটি বিচ্ছিন্ন আয়াত। আপনার কাছে অনুরোধ একটু কষ্ট হলের এই আয়াতের পূর্বাপর আয়াতসমূহসহ এ সম্পর্কিত কুরআনে উল্লেখিত সবগুলো আয়াত একত্রে পাঠ করুন দেখবেন বর্তমানে এই আধূনিক সভ্যতার সার্বজনীন মূল্যবোধে সেগুলো কতটুকু সামঞ্জস্যতাপূর্ণ।
কারা কাফির, কোন কাফিরদের কি কারণে হত্যার কথা বলা হচ্ছে, কেন যুদ্ধ কখন যুদ্ধ- কেন হত্যা, কথন সন্ধি, কাকে হত্যা-কারা মুসলিম, কারা বিশ্বাসী কিন্তু মুনাফিক এবং নিকৃষ্ট জীব –সব কিছুরই বিস্তারিত বর্ণনা কুরআনে পেয়ে যাবেন এবং এর প্রত্যেকটি আয়াত একটির সাথে আরেকটি সম্পর্কিত।
সর্বশেষ ইসলামিক স্কলার প্রসঙ্গ।
কুরআন মূহাম্মদকে বলতে বলছে: —— এই কুরআন আমার নিকট প্রেরিত হইয়াছে যেন তোমাদেরকে এবং যাহার নিকট ইহা পৌছিবে তাহাদেকে এতদ্দ্বারা আমি সতর্ক করি।——-। ( ৬: ১৯)
সুতরাং কুরআনই আমাদের বলছে যা বলার। এই কুরআনই যিনা, অশ্লীলতা -ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছে। সুতরাং একজন ধর্ষনকামী ব্যক্তি স্কলার হিসাবে দাবী করে কি বলল তাতে কি কুরআনের কিছু যায়-আসে?
আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মিস্টার চৌকিদার,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। বিস্তারিত একটি উত্তর দেওয়ার জন্য। মুক্তচিন্তার জন্য মুক্ত আলোচনা অপরিহার্য। কুরআন আমাদের শিক্ষা দেয়, তর্ক করিবে উত্তম পন্থায়।
‘আমার বান্দাদের যাহা উত্তম তাহা বলিতে বল। নিশ্চয়ই শয়তান উহাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানী দেয়, শয়তান তো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।’ (১৭ঃ৫৩)
‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং ইহাদের সঙ্গে তর্ক করিবে উত্তম পন্থায়। ‘ -১৬: ১২৫
তবে যখন কোন বিতর্ক বিদ্রুপ, বিতন্ডা, গালাগালির পর্যায়ে চলে যায় তখন কুরআন বলে, তুমি তাদের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে অন্তত সেই সময়ে আর কথা বলবে না।
‘তুমি যখন দেখ, তাহারা আমার আয়াতসমূহ সম্মন্ধে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন হয় তখন তুমি তাহাদের হইতে সরিয়া পড়িবে যে পর্যন্ত না অন্য প্রসঙ্গে প্রবৃত্ত হয়—’ (৬: ৬৮)
উল্লেখিত বিষয়ে আরো আয়াত আছে, আমি দুটি মাত্র উল্লেখ করলাম।
আমার মনে হচ্ছে আমাদের বিতর্ক এখন পর্যন্ত সঠিক পথে চলছে। এ জন্য আরো একদফা আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রথমত: আরজ আলী মাতবর প্রসঙ্গ। হ্যাঁ-আমি একমত। সত্যের রূপ একটিই, অনুমান ও অসত্য হাজাররকম হতে পারে কিন্তু সত্য কেবল একটিই। আমিও তাই বলছি। তবে আরজ আলী মাতবর একটু ভিন্নভাবে এই কথাটি বলেছেন বিংশ শতাব্দিতে আর কুরআন বলেছে ৭ম শতাব্দিতে।
‘অথচ এই বিষয়ে তাহাদের কোন জ্ঞান নাই, উহারা তো কেবল অনুমানেরই অনুসরণ করে; কিন্তু সত্যের মুকাবিলায় অনুমানের কোনই মূল্য নাই।’ (৫৩ঃ ২৮)
‘—– সত্যা-সত্যের পাথর্ককারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হইয়াছে।——। —–।’ (২ঃ১৮৫)
‘আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি ———-।’ (৪ঃ১০৫)
‘সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়া তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ, ———’(৬ঃ১১৫)
‘তোমার পূর্বেও অনেক রাসুলকে অবশ্যয় মিথ্যাবাদী বলা হইয়াছিল এবং তাহাদেরকে মিথ্যাবাদী ও ক্লেশ দেওয়া সত্ত্বেও তাহারা ধৈর্য ধারণ করিয়াছিল—– (৬: ৩৪)
নিশ্চয়ই সত্য একটি তবে সে সত্য কোনটি: আপনি যা বলছেন সেটি, আমি যা দাবী করছি সেটি, কুরআন যা দাবী করছে তাই নাকি আর যে সব ধর্ম, মতবাদ বা দর্শন দাবী করছে –তারা? আমরা এই যে বিতর্ক করছি- আসলে সেটি করছি এজন্য আমরা আসলে প্রকৃত সত্যটি জানার চেষ্টা করছি।
তবে আরজ আলী মাতবর সত্যের খোঁজে যে উদাহরণ ও ব্যখ্যা দিয়েছেন আমার কাছে তা যুক্তিসংগত মনে হয়নি। আমরা অনেকেই ভুল করে ফেলি যে ফিজিক্যাল সায়েন্স, স্যোসাল সায়েন্স, ন্যাচারাল সায়েন্স- সব এক বিষয়। বাস্তবে ফিজিক্যাল সায়েন্সর বিষয়সমূহ ল্যারেটারীতে অংকের ধাঁচে ফেলে প্রমাণ করা হয় কিন্তু অন্য সায়েন্সগুলো যুক্তি, অভিজ্ঞতা, উপলদ্ধির মাধ্যমে প্রমান করতে হয়। আবার বহু কিছু এভাবেও প্রমান করা যায় না। আমরা সবাই জানি, সত্য বলা ভাল কাজ কিন্তু আপনি কি সেটি অংক কষে, তথ্য প্রমাণ দিয়ে ল্যবরেটারীতে প্রমাণ করতে পারবেন? এখন পর্যন্ত বিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে যে সব বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আছে, সেগুলো বর্ণনা করতে লেখা হয়, সায়েন্টিস্ট বিলিভ——।
দ্বিতীয় প্রসঙ্গ আপনার উল্লেখিত আয়াত। আমি আগেই বলেছি কুরআনের কোন এক বিষয়ের একটি বিচ্ছিন্ন আয়াত কোন অর্থ বহন করে না। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বহু আয়াত রয়েছে তার কয়েকটি:
‘এইভাবে আমি আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি, আর ইহাতে অপরাধীদের পথ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।’ (৬ঃ ৫৫)
(বল), —, এই কিতাব প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের নিকট হইতে, ইহার আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট, সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাবে বিবৃত———- (১১:১)
—–। যাহারা উপদেশ গ্রহণ করে আমি তাহাদের জন্য আয়াতসমূহ (নিদর্শন) বিশদভাবে বিবৃত করিয়াছি। (৬ঃ ১২৬)
কোন বিষয়ে যখন বিস্তারিত বলা হয় তখন সেখান থেকে বাকী সব ফেলে দিয়ে কেবল একটি বাক্য তুলে নিয়ে নিজের মত ব্যাখ্যা দেওয়া চরম প্রতারণা মাত্র। যেহেতু কুরআন নিজেই দাবী করেছে এ গ্রন্থে সুস্পষ্ট বিস্তারিত বলা হয়েছে সুতরাং কোন বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে হলে কুরআনে ঐ সম্পর্কে যে সব আয়াত আছে তার সবগুলো পাঠেই ঐ বিষয়টি কেবল অনুধাবণ সম্ভব।
আপনি কুরআনের বিচ্ছিন্ন বহু আয়াত উল্লেখ করেছেন। যেহেতু এগুলো অনুবাদ সুতরাং প্রতিশব্দের ব্যবহার একটি বড় বিষয়। একটু সর্বজনগ্রাহ্য অনুবাদ হলে ভাল হয়। এক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ কুরআনুল করিম আমি এখানে ব্যবহার করছি। বলা হচ্ছে, বাংলাভাষায় এটিই এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ অনুবাদ।
তবে আপনি যে আয়াতগুলো উল্লেখ করেছেন, খুব ইন্টারেস্টিং যে এই ‘বিচ্ছিন্ন আয়াতগুলোর’ ব্যবহার খুব বেশী দেখা যায়। এর একটি নিয়ে আলোচনা করতেই বিস্তর সময়ের প্রয়োজন। এই পরিসরে তা মোটেও সম্ভব নয়। তারপরেও সামান্য একটু আলোচনা না করলেই আমাদের ভুল ধারণা থেকে যেতে পারে।
কুরআনের বেহেশতের যে বর্ণনা আপনি উল্লেখ করেছেন আপনি ঠিকই আছেন। তবে আপনার যেখানে সীমাবদ্ধতা তা হল কুরআনে বলা হয়েছে, এই বর্ণনা দৃষ্টান্ত মাত্র। ঐ বিচ্ছিন্ন আয়াতগুলোর সাথে যদি নীচের আয়াতগুলো যুক্ত করেন তবে আপনার ধারণা কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে:
‘মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হইয়াছে তাহার ‘উপমা’ এইরূপ: উহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, —–(১৩: ৩৫)
‘কেহই জানে না, তাহাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কী লুক্কায়িত রাখা হইয়াছে তাহাদের কৃতকর্মের পুরস্কার সরূপ।’ (৩২ঃ ১৭)
সুতরাং কুরআনে এই বেহেশতের যে রূপ বলা হয়েছে তা ধারণা মাত্র।
দ্বিতীয়ত বেহেশতে হুর, নারী-ইত্যাদি সম্পর্কে ভাষার ব্যবহার প্রসঙ্গ। এই বর্ণনায় মনে হতে পারে এটা যেন পুরুষদের সেক্স সংক্রান্ত ভোগের রগরগে বর্ণনা। কিন্তু আপনার উল্লেখিত আয়াতের সাথে যদি নি¤েœর আয়াতগুলো যোগ করেন তাহলে কিছুটা উদার ধারণার অধিকারী আমরা হতে পারে। কুরআন বলছে:
‘মু’মিন হইয়া পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করিবে তাহাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করিব এবং তাহাদের কর্মেও শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করিব।’ (১৬: ৯৭)
‘দানশীল পুরুষগণ এবং দানশীল নারীগণ এবং যাহারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কওে তাহাদিগকে দেওয়া হইবে বহুগুণ বেশী এবং তাহাদেও জন্য রহিয়াছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (৫৭: ১৮)
‘ইহা এইজন্য যে তিনি মু’মিন পরুষ ও মু’মিন নারীগণকে দাখিল করিবেন জান্নাতে যাহার নি¤œদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে এবং তিনি তাহাদের পাপ মোচন করিবেন; ইহাই আল্লাহর দৃষ্টিতে মহাসাফল্য।’ (৪৮: ৫)
দেখা যাচ্ছে কুরআনের বর্ণনা অনুয়ায়ী বেহেশত নারী পুরুষ উভয়ের জন্য কিন্তু বেহেশতের যে বর্ণনা সেটি কেবল পুরুষের নারী ভোগের দৃষ্টান্ত। এটা সহজেই অনুমেয় ভাষার দূর্বলতার কারণে কুরআনের বেহেশতের দৃষ্টান্তের বর্ণনাটি আমাদের কাছে ‘টাবু’ মনে হচ্ছে।
এই দূর্বলতা সব ভাষাতেই আছে। ইংরেজীতে ম্যান, হিউম্যানসহ বহু শব্দ আছে যা মনে হতে পারে পুরুষবাচক। কিন্তু মানবজাতির মধ্যে শুধু পুরুষ নয়- নারীরাও আছে।
তৃতীয়ত: আপনার উল্লেখিত কাফির, যুদ্ধ, হত্যা -ইত্যাদি সম্পর্কিত কয়েকটি বিচ্ছিন্ন আয়াত। আপনার কাছে অনুরোধ একটু কষ্ট হলের এই আয়াতের পূর্বাপর আয়াতসমূহসহ এ সম্পর্কিত কুরআনে উল্লেখিত সবগুলো আয়াত একত্রে পাঠ করুন দেখবেন বর্তমানে এই আধূনিক সভ্যতার সার্বজনীন মূল্যবোধে সেগুলো কতটুকু সামঞ্জস্যতাপূর্ণ।
কারা কাফির, কোন কাফিরদের কি কারণে হত্যার কথা বলা হচ্ছে, কেন যুদ্ধ কখন যুদ্ধ- কেন হত্যা, কথন সন্ধি, কাকে হত্যা-কারা মুসলিম, কারা বিশ্বাসী কিন্তু মুনাফিক এবং নিকৃষ্ট জীব -সব কিছুরই বিস্তারিত বর্ণনা কুরআনে পেয়ে যাবেন এবং এর প্রত্যেকটি আয়াত একটির সাথে আরেকটি সম্পর্কিত।
আপনার উল্লেখিত আয়াত অবিশ্বাসীদের লাঞ্ছনা প্রসঙ্গ। যদি সত্যিই পরম সৃষ্টিকর্তা থেকে থাকেন তাহলে কেবল লাঞ্ছনার বিষয়টি আসতে পারে। তিনি না থাকলে লাঞ্ছনারও কিছু নেই। ধরা যাক, সত্যিই তিনি আছেন, কিন্তু অবিশ্বাসীরা বলছেন তিনি নেই। তাহলে নিশ্চিত অবিশ্বাসীরা অসত্য বলছেন সেই সাথে এই অসত্যেও মাধ্যম মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। সুতরাং কেউ যদি মিথ্যা বলেন এবঙ মানুষকে বিভ্রান্ত করে থাকেন তাহলে তাকে লাঞ্ছনা করা কি অযৌক্তিক বা অন্যায়? সুতরাং কুরআন যখন বলে:
‘————-। সুতরাং যে ব্যক্তি অজ্ঞনাবশঃত মানুষকে বিভ্রান্ত করিবার জন্য আল্লাহ সম্মন্ধে মিথ্যা রচনা করে তাহার চেয়ে অধিক জালিম আর কে।——। (৬ঃ১৪৪)- এটা কি অযৌক্তিক কিছু?
তবে তিনি যদি সত্যিই না থেকে থাকেন তবে এই লাঞ্ছনার প্রশ্নও আসছে না-সত্য মিথ্যার পার্থক্যও থাকছে ন্ াকারো কোন কর্মের জন্য বিচারের প্রশ্নও নেই। তখন তো ফ্রি স্টাইল!
সর্বশেষ ইসলামিক স্কলার প্রসঙ্গ।
কুরআন মূহাম্মদকে বলতে বলছে: —— এই কুরআন আমার নিকট প্রেরিত হইয়াছে যেন তোমাদেরকে এবং যাহার নিকট ইহা পৌছিবে তাহাদেকে এতদ্দ্বারা আমি সতর্ক করি।——-। ( ৬: ১৯)
সুতরাং কুরআনই আমাদের বলছে যা বলার। এই কুরআনই যিনা, অশ্লীলতা -ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছে। সুতরাং একজন ধর্ষনকামী ব্যক্তি স্কলার হিসাবে দাবী করে কি বলল তাতে কি কুরআনের কিছু যায়-আসে?
তবে আমাদেও যখন কোন বিষয়ে প্রমাণিত জ্ঞান না থাকে তখন সে বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করে জ্ঞানের অন্বেষণে না থেকে আমরা এতবেশী অনুমানে ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে তখন বিভ্রান্তির সমুদ্রে পড়ে শুধু হা হুতাশ করি। সম্ভবত এই কারণেই করআন বলে:
‘যে বিষয় আপনার জ্ঞানায়াত্ত নহে সে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করিবেন কেমন করিয়া।’ ( ( ১৮ঃ ৬৮)
আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ।