লিখেছেন: সুমন চৌকিদার
সম্প্রতি জুলিয়ান ক্যাডম্যান নামে এই সাত বছরের নিষ্পাপ শিশু হত্যার শিকার হয় ইসলামি জিহাদিদের দ্বারা বার্সেলনায়
ধর্ম মানুষকে শুধু হিংস্র পশু বানানোর ক্ষমতাই রাখে না বরং পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দানবে পরিণত করার ক্ষমতাও রাখে। অথচ দুঃখের বিষয়, এসব দানবরাই বহু সাধারণ ধার্মিকসহ বিশিষ্ট ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি, উচ্চ শিক্ষিত, পেশাজীবি সম্প্রদায়, রাজনীতিবিদ… তথা কথিত খাঁটি ধার্মিদের কাছে মহামানব বা ধর্মগুরু হিসেবে প্রণামী পেয়েই মোটাতাজা হয়ে আসছে। উদাহরণস্বরূপ, বিশেষ তিনটি ধর্মের আদলে সৃষ্ট কাল্ট তথা দানব, রাম-রহিম-সিং (যদিও অন্যদের তুলনায় এ দানবটা শিশু)। এরা পশুর চেয়েও নিকৃষ্টতম ইতর জীব হলেও, এদের কারো কারো সহস্র-কোটি অনুসারী, কারো কারো মাথার উপর বড় বড় রাজনীতিবিদ ও ধর্মজীবিরাও আছে। আসলে সমস্যা যতোটা দানবদের নিয়ে তারচেয়ে কম নয় রাজনীতিবিদ ও উচ্চশিক্ষিত শ্রেণীর মানুষ নিয়ে! তবে জানি না, ধর্ম বিষয়ে বেশিরভাগ মানুষেরই মূর্খতার শেষ কোথায়?
যাহোক, হিংস্র পশুরাও আক্রান্ত না হলে আক্রমণ করে না; বিষধর সাপও অনর্থক ছোবল মারে না। কিন্তু ধর্মদানবগুলো বিনা কারণেও নারকীয় তান্ডব ঘটাতে পারে। যেমন ওদের কথিত ঈশ্বর! ঈশ্বরেরা (মূলত ঈশ্বর সৃষ্টিকারীরা) প্রায় বিনা কারণেই মানুষদের শাস্তির ব্যবস্থা করছে। যেমন, নিয়মিত পুঁজার্চনা না করলে কিংবা অন্য ঈশ্বরের পুঁজা বা তাকে বিশ্বাস করলে… ভয়ংকর শাস্তির বিধান। বাধ্য না থাকলে তাদের ধ্বংস চায়, অভিশাপ দেয়, নিজের অনুসারী বৃদ্ধির জন্য যুদ্ধ-দাঙ্গা চায়, দখলদারিত্ব চায়, প্রয়োজনে কাপুরুষের ন্যায় গোপন আক্রমণ করতে আদেশ দেয় (যা কথিত ধর্মসৈনিকদের অস্ত্র), বিধর্মীদের শত্রু ভাবে এবং কখনো কখনো সরাসরি হত্যার আদেশ দেয়… আবার এসব কাজ যারা করে, তাদের অকল্পনীয় সুন্দর ও বিভিন্নপ্রকারের পুরষ্কারের ব্যবস্থাও রেখেছে…। অতএব এসব নৃশংস্যতম বর্বরতার জন্য শুধুমাত্র দানব ধর্মানুসারীদের দোষ দেয়া যায় না! এর সাথে ধর্মের প্রায় সবকিছু এবং কথিত কিছু খাঁটি ধার্মিকও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী। তবে বিধর্মীদের উপর এদের ঘৃণা পর্বতসম। কারণ কম হোক বেশি হোক ধর্ম ঘৃণা করতে শিখায়। অতএব ধর্ম ঘৃণা করতে শিখায় না; ধার্মিক ও বিশিষ্টজনদের এমন বক্তব্য ঠিক নয়। কারণ ধর্মে হিংস্রতা ও ঘৃণার কাহিনী… ঐতিহাসিক সত্য এবং গ্রন্থসম্মত। বহু উদাহরণের অন্যতম- M.A. Khan-এর জিহাদ: জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও দাসত্বের উত্তরাধিকার।
যেহেতু ধর্মের ঘৃণা, ঈর্ষা, অহংকার… এসব ঐতিহাসিক এবং গ্রন্থসম্মত; সেহেতু এসব দানবরা নিষ্পাপ শিশুই নয়, আপন পিতা-মাতাকেও ঘৃণা কিংবা শত্রু মনে করতে দ্বিধাবোধ করে না। কারণ এ ঘৃণা মানব সৃষ্ট নয় বরং ঐশ্বরিক(!)। অতএব ঐশ্বরিক(!) যা কিছু তার পুরোটাই দানব এবং এর সমর্থকদের কাছে প্রিয় ও অবশ্যই পালনীয়! সেজন্যই হাসতে হাসতে এরা শুধু বিধর্মীই নয়, স্বধর্মী অথচ যারা ঐশ্বরিক(!) আদেশ মানে না, এমন যে কাউকে কথিত ঈশ্বরের নামে নৃশংস্যতার চরম উদাহরণ সৃষ্টি করে, হত্যা করতে পারে এবং উল্লাসে মেতে ওঠে। অর্থাৎ ওদের চোখে নিজদের সমর্থক এবং নিজেরা ছাড়া সবাই পাপী ও ঘৃণিত। বিধর্মীরা তো যারপর নাই ঘৃণিত, এর প্রমাণ গুলশান হত্যাযজ্ঞসহ বহু নৃশংস্যতা (খাঁচায় বন্দি করে পুড়িয়ে মারা, গাড়িচাপা দিয়ে বাটাবাটা করা, মৃতের মাথা দিয়ে ফুটবল খেলা, মৃত্যুর পরেও কুপিয়ে কিমা বানানো ইত্যাদি)। এমন নৃশংস্যতা, এমন ঘৃণা কেবল ধর্মদানবদের দ্বারাই সম্ভব। কারণ এরা অর্থের প্রয়োজনে এসব করে না, বরং ঈশ্বরদের প্রয়োজনেই করে। অর্থের প্রলোভনে করলে এতো জঘন্যতম ও নৃশংস্যতম হত্যাযজ্ঞ ঘটাতো না। উদাহরণস্বরূপ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন। এতে খুনিরা দ্রুত ও নিরবে খুন করেছিলো, উল্লাস করেনি, গর্বিত হয়নি বরং লুকিয়েছিলো এবং আজো বাঁচার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর গুলশানের খুনিরা, খুন করে উল্লাস করেছে, বিশ্বব্যাপী তা প্রচার করেছে, সারারাত বসে বিধর্মীদের লাশগুলো কুপিয়ে কিমা বানিয়েছে, আপন সৃষ্টিকর্তার গুণগান গেয়েছে, কথিত ঈশ্বরের মহানামে(!) শ্লোগান দিয়ে তাকে খুশি করেছে, পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাই করেনি, স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিয়েছে…। কারণ তথাকথিত ঈশ্বর নির্দেশিত ও সৃষ্ট প্রত্যেক জঙ্গিই খুন করার পর নৃশংস্যতা দেখাতে গর্ববোধ করে (যা ঐতিহাসিকই নয়, ঐশ্বরিক আদেশও বটে)। এতেই প্রমাণ হয়, ধর্মদানবরা তাদের ঈশ্বরের বাণী ও সম্মান রক্ষার জন্য কতোটা ভয়ংকর এবং ডেসপারেট থাকে। এ ব্যাপারে যদি সত্যিই ঈশ্বরের সমর্থন না থাকতো, তাহলে ওরা কখনোই এতো ভয়ংকর হতো না। কারণ ওরা এতোটাই খাঁটি ধার্মিক যে, কখনোই ধর্মের বাইরে গিয়ে কাজ করে না। বরং সাধারণ ধার্মিকরাই ঈশ্বরদের আদেশ-নির্দেশ সঠিকভাবে না জেনে কথা বলেন। এসব এ মূর্খের বক্তব্য নয়, খোদ ধর্ম অনুসারেই এসব দানবরা একেবারে খাঁটি ধার্মিক (প্রমাণ ধর্মপুস্তকের পাতায় পাতায়)।
অতএব, এসব দানবদের ব্যাপারে বিশষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য ডাহা-মিথ্যা। কারণ দানবরা প্রত্যেকেই সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত এবং ধর্মের নির্দেশানুসারেই কাজ করে। অথচ সাধারণ ধার্মিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বারবার একই মুখস্ত বুলি আওড়িয়ে ধর্মকে বাঁচিয়ে প্রকৃত সত্য এড়িয়ে যাচ্ছেন; যা পরোক্ষভাবে দানবদের পক্ষেই যাচ্ছে। কারণ বিশ্বের সবচাইতে দানবীয় ঘটনাগুলো ধর্মের নামেই ঘটছে। কারণ ধর্মে যা নেই তা জঙ্গিরা করে না, করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, ধর্মে যদি বিধর্মী কিংবা ধর্মত্যাগিদের ঘৃণা ও হত্যা করার কথা উল্লেখ না থাকতো, তাহলে অবশ্যই ওরা তা করতো না (প্রমাণ ধর্মপুস্তক)। অথচ এসব দানবদের বিপক্ষে যে জোরালো লড়াই প্রয়োজন, তথা ঈশ্বর ও ধর্মপুস্তকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রয়োজন… সেই ইচ্ছা/চেষ্টা কথিত প্রকৃত ধর্ম পালনকারী ও বিশিষ্টজন কিংবা কোনো জাতি-গোষ্ঠির মধ্যে আদৌ দেখা যাচ্ছে না। কথিত ধার্মিক বলছি কারণ, একই ধর্মের ও একই ঈশ্বরের অনুসারী হলেও বিভিন্ন গোত্রের কেউ কাউকেই ধার্মিক বলছে না, মানছে না, বরং একে অপরকে চরম অবিশ্বাস করছে, ঘৃণাও করছে, ভাবখানা এমন যেন পারলে খুন করে (প্রায়ই করেও)…। তথাপিও প্রত্যেকেই আপন গোষ্ঠির কাছে প্রকৃত ধার্মিক! অতএব তথাকথিত প্রকৃত ধার্মিক দাবিদার ও সমাজের সভ্য মানুষ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উচিত কথিত সত্যিকারের ধর্ম কোনটি এবং কথিত প্রকৃত/খাঁটি ধার্মিক কারা, তা নির্ণয় করা। নতুবা দানব সৃষ্টি কোনোদিনও বন্ধ হবে না। কারণ ধর্মে-ধর্মে শত্রুতার কারণেই কেবল নয়, একই ধর্মের বিভিন্ন গোষ্ঠিদ্বন্দ্বেও বিরামহীনভাবে ধর্মদানব সৃষ্টি হতেই থাকবে। মনে রাখবেন, ভূয়া চিকিৎসকের ন্যায় রোগ নির্ণয় না করে ওষুধ দিলে যেমন রোগ না সেরে বরং বাড়ে। কিংবা ক্যান্সার সারাতে প্যারাসিটিমল দিলে সাময়িক ব্যাথা কমতেও পারে কিন্তু ক্যান্সার সারে না।
অপরদিকে রাষ্ট্রনেতারা বিশেষ করে ধর্মরাষ্ট্রগুলোর নেতারা ধর্মসন্ত্রাস বা জঙ্গি তৈরির জন্য ধর্মের কোনো দোষ দেখে না, দেখে পুঁজিবাদিদের। তাদের বক্তব্য সত্য কিনা সে বিতর্কে যাচ্ছি না। পুঁজিবাদিরা জঙ্গি বানালেও, নিজেদের স্বার্থেই তা লালন-পালন করে কিন্তু প্রকৃত ধর্মরাষ্ট্র ও খাঁটি ধার্মিকরাই (এসবও ঐতিহাসিক ও গ্রন্থসম্মত)। সেহেতু ধর্মকে দায়ী না করে, পরিশুদ্ধ না করে, সন্ত্রাস বন্ধ করা শুধু হাস্যষ্করই নয়, পাগলের প্রলাপও বটে। অনেক ধর্মরাষ্ট্রই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যেমন মহাদানবগুলোকে লালন-পালন করছে, তেমনি অনেকেই আবার রাম-রহিমের ন্যায় ছোট ছোট দানব পুষছে এবং এদের অনেক অন্যায় বা মানবাধিকার বর্হিভূত দাবিগুলোর প্রায় সবটাতেই সমর্থ নিচ্ছে এবং মেনে নিচ্ছে। এছাড়া ধর্মকে সুরক্ষা দিতে মানবাধিকার সংস্থা, রাষ্ট্র ও সমাজ যেভাবে আইন-কানুন করে ধর্মত্যাগিদেরকে হুমকিতে রেখেছে তা পর্যালোচনা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সোজা কথা, মানবাধিকার থেকে ধর্মকে খারিজ করা একান্ত প্রয়োজন। কারণ ধর্ম তথা ধার্মিকরা এসব আইন-কানুনের দ্বারা রাষ্ট্র ও সমাজের উপর চাপ সৃষ্টি করে ধর্মের দোহাই দিয়ে নানারূপ কুসংস্কারকে জিইয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছে। হুমকি এবং চাপ সৃষ্টি ধর্মের বা ধার্মিকদের অন্যতম মারাত্মক অস্ত্র। উল্লেখযোগ্য, রাজনীতিবিদদের ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি, এতে তারাও ধর্মের বহু কুসংস্কার, কুপ্রথা সমর্থন করে, পালন ও রক্ষায় মরিয়া হয়ে থাকে।
ধার্মিকদের হুমকি যে কী ভয়ানক হতে পারে তা ধর্মরাষ্ট্রের নাগরিকদের দিকে তাকালেই প্রমাণ মেলে। সম্প্রতি ভারতের দুটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। তালাক প্রথা অবৈধ ঘোষণার প্রেক্ষিতে সাধারণ ধার্মিকদের মন্তব্যগুলো লক্ষ্যণীয়। যেখানে মি. হুসেইন নামের একজন চাপ দিয়ে হাইকোর্টের রায় বদলানোর কথা বলেছেন, মূলত ধর্মের বিরুদ্ধে (যতোই যুক্তিপূর্ণ/মানবিক হোক) কেউ কিছু বললে/করলে, চাপ ও হুমকি-ধামকি দিয়ে বা উত্তেজনা ছড়িয়ে এর সমাধানে ধার্মিকরা প্রচণ্ডরকমের মরিয়া। চাপে কাজ না হলে দাঙ্গা বাধিয়ে অন্যায় দাবি আদায়েও ধর্মের তথা ধার্মিকদের কোনো জুড়ি নেই। যুক্তি তারা মানবেই না! যার প্রমাণ রাম-রহিম-সিং… যদিও অতি ছোট এক ধর্মদানবের ঘটনা। তবে দেখা গেছে, চাপ প্রয়োগ ও উম্মাদনায় ধর্ম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল।
অথচ যুদ্ধ-দাঙ্গায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় নিজেরাই (সাধারণ ধার্মিক/নাগিরক)। তবে ধর্মযুদ্ধ/দাঙ্গা ঐতিহাসিকভাবে ধর্ম স্বীকৃত। কারণ ধর্ম যদি পুরোটাই মানবকল্যাণের জন্য হতো, তাহলে অন্ততপক্ষে যুদ্ধ-দাঙ্গার ইতিহাস এতে থাকতো না। সাধারণ মানুষ/সমর্থকরা ধর্মযুদ্ধ-দাঙ্গা চায় বলেই আজকের উন্নত প্রযুক্তির যুগেও মানব সমাজে এর প্রচলন একইপ্রকার। অতএব একথা বললে বোধকরি অতিরঞ্জিত হবে না যে, ধর্ম পুরোপুরি মানবিক বা মানবকল্যাণের জন্য নয়। ধর্মকে সম্পূর্ণরূপে মানবিক হতে হলে, প্রতিটি ধর্ম এবং প্রতিটি ঈশ্বরকেই যুদ্ধ-দাঙ্গার ও মানুষ (অপরাধী বা নিরাপরাধী) হত্যার দায় স্বীকার করে, নাকে খত দিয়ে দোষ স্বীকার করে বলতে হবে, হ্যাঁ- ধর্মে এই-এই ভুলত্রুটি আছে; এই-এই ফাঁকফোঁকড় আছে… ফলে একের পর এক দানব সৃষ্টি হচ্ছে এবং পুরো পৃথিবী জুড়ে হত্যাযজ্ঞ চলছে। ধার্মিকদেরকেও একযোগে বুঝতে ও বলতে হবে- ঈশ্বরদের এসব আদেশ-নির্দেশ সেকেলে এবং অমানবিক… অতএব এসব মানা যায় না, এসব সংশোধনের প্রয়োজন ইত্যাদি।
নাহ্! ধার্মিকরা মোটেও তা স্বীকার করবে না! প্রাণ দিবে তবু ধর্মের ভুল স্বীকার করবে না, কারণ এতে ধর্মের মানহানী হবে (তাদের ভাষায়)! ফলে একটি ভুল ঢাকতে ধর্ম তথা ধার্মিকরা বারবারই হাজারো ভুল করেই যাচ্ছে। একটু দেখা যাক ভারতের কোর্টের রায় নিয়ে ধার্মিকরা কী বলছে? লিংক
“তিন তালাক নিষিদ্ধ : কী বলছেন কলকাতার সাধারণ মুসলমানরো? …তিন তালাক প্রথা শরিয়তে রয়েছে আজ থেকে না, ১৪০০ বছর ধরে… এটা কোনও মানুষের তৈরি আইন নয়। সেটা কেউ বদলাতে পারবে না। গোটা পৃথিবীও যদি এক হয়ে গিয়ে চেষ্টা করে এই নিয়ম পাল্টাতে সেটা সম্ভব না। সে নিজে বদলে যাবে, তবুও শরিয়ত বদল করতে পারবে না কেউ। …বিজেপি সরকার কিছু কম বুদ্ধি সম্পন্ন- সভ্যতা ভব্যতা না জানা কিছু নারীকে জড়ো করে তাদের দিয়ে কিছু বলালো আর শরিয়তের আইন পাল্টে গেল- তা কিছুতেই হবে না। সুপ্রিম কোর্টকে এই রায় বদলাতেই হবে। চারদিক থেকে এমন চাপ তৈরি হবে- দেখবেন আদালত তার রায় বদল করতে বাধ্য হবে।” বলছিলেন মি. হুসেইন।
মি. হুসেইন নারীদের সভ্যতা ভব্যতাহীন বলেছেন। তবে আশ্চর্য! যে নারীদের স্বার্থে এই রায়, সেই নারী তথা এক কলেজ ছাত্রী বলছে- “শরিয়তের নিয়ম মুসলিম সম্প্রদায়ের ভালর জন্যই। তাঁর কথায়, আদালতের রায়কে অবমাননা করতে চাই না। কিন্তু শরিয়তকে অগ্রাহ্য করতে পারব না। তালাক নিয়ে কারও সমস্যা হলে মুসলিম পার্সোনাল ল’ কিংবা মৌলবির কাছে যেতে পারেন।’’
অর্থাৎ এসব নারীরা দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছে। তবে প্রশ্ন হলো- নিজে যদি এর শিকার হতেন, তখনও কী একই কথা বলতেন? অন্যান্য কলেজ শিক্ষার্থীরা বলছে, মৌলবি থাকতে কেনো কোর্টে যাওয়া। অর্থ খুব পরিষ্কার, তারা কোর্টে যাবে না, কোর্টের রায় মানবে না, যখন খুশি ধর্মীয় বিধান মতে তালাক দেবে, আবার নতুন বিবি নেবে…! তালাকের পর তালাক দেবে, নতুন নতুন বিবি নেবে, তা না হয় পুরুষদের নিকট লোভনীয় হতে পারে কিন্তু নারীদের কাছে কেনো?
মানুষ যদি এমন মূর্খবিশ্বাসী হয়, তাতে ধর্মের তথা ধর্মজীবি এবং মতলবাজ রাজনৈতিক নেতাদের দোষ কোথায়? দোষ যেহেতু ঈশ্বরদের সেহেতু মানুষ এসব দোষত্রুটিগুলোকেও মধুর-আদর্শ বলে গণ্য করে। মূলত এরাই প্রকৃত ধার্মিক। অর্থাৎ ধর্মে যা আছে তা ভালো কিংবা মন্দ সবটাই ঠিকঠাক থাকতে হবে, এতে কার কী ক্ষতি হচ্ছে বা হবে… তা মুখ্য নয়, বরং চিরকালই এসব রক্ষা করতে হবেই!
মূর্খবিশ্বাসী কেনো বলছি (সংবাদ অনুযায়ী)- শরিয়তে তিন তালাক সম্পর্কে ঠিক কী বলা আছে? প্রশ্ন এড়িয়েছেন অনেকেই। এতে কী বোঝা যায়, শরিয়তে তালাক সম্পর্কে কী বলা আছে, তা উত্তরকারীরা কেউ জানেই না। কারণ তারা কোনোদিনই তা পড়েনি শুধু শুনে বিশ্বাস করে আসছে। অথচ কোর্টের রায়কে অবজ্ঞা করছে, হুমকি দিচ্ছে! এর ফলাফল কখনোই যে ভালো হয় না বরং সাধারণ ধার্মিকদেরই প্রাণ ও সম্পদ দুটোই ধ্বংস হয়… এটাই ধর্মের চরম সার্থকতা। অতএব সাধারণ মানুষ যতোদিন ধর্মপুস্তক না পড়ে, না বুঝে এভাবে মূর্খবিশ্বাসীর মতো মেনেই যাবে, ততোদিন এ পৃথিবীকে বোকার স্বর্গ বানিয়ে রাখতে ধর্মজীবি এবং ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদদের কোনোই কষ্ট হবে না। অর্থাৎ মূর্খবিশ্বাসীরা যতোদিন আছে, পৃথিবীতে ধর্মসৃষ্ট নারকীয় তান্ডব ততোদিন বন্ধ হচ্ছে না। তথা জুলিয়ান ক্যাডম্যানরা অকালে প্রাণ হারাতেই থাকবে আর আমরা অসহায়ের মতো কেবল আফসোস করেই যাবো।
দানব কিংবা মহাদানবদের কথা বাদই দিলাম। সাধারণ ধার্মিকদের যে অন্ধবিশ্বাস, জন্মের পর সর্বপ্রথমেই যারা ধর্মের জন্য প্রাণ দিতে শিখেছে, তাদের রুখবে কে? অর্থাৎ ধর্মপুস্তকগুলো যে কথিত ঐশ্বরিক আইন নয়, বিভ্রান্তি ও ভুলে ভরা, মারাত্মক খারাপ ভাষা ও হুমকিতে ঠাসা (যে ভাষা মানুষ কর্তৃক লিখিত পুস্তকে নেই), তা তাদের বোঝাবে কে? যারা বোঝাতে পারতেন, জাতিসংঘসহ রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী ও সংস্থা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ… তারা নিজেরাই তো সত্য স্বীকার করতে এবং মানতে চাইছেন না। অতএব, নিষ্পাপ ও মায়াবী শিশু জুলিয়ান ক্যাডম্যানরা চিরকালই অনিরাপদ থাকবে।
এ লেখা যখন লিখছি তখন ধর্মের নামে ভারতে আরেক মহাতান্ডব ঘটে গেলো (যদিও ধর্মদানবদের তান্ডব এক সেকেন্ডের জন্যও থামছে না)।লিংক
কে এই রাম রহিম সিং? হরিয়ানা-পাঞ্জাবে অন্তত ৫ লাখ সরাসরি ভক্ত আছে গুরমিত রাম রহিমের। তাদের দাবি সারা বিশ্বে গুরু রাম রহিমের ৬ কোটি ভক্ত আছে। তাকে সবসময় ঘিরে থাকে সশস্ত্র ব্যক্তিগত রক্ষীর দল। শিখ, হিন্দু, মুসলিম সব ধর্মের চেতনার মিশেলেই তৈরি হয়েছে তার ধর্মীয় সম্প্রদায়।
তার বিরুদ্ধে সংক্ষিপ্ত অভিযোগগুলো।
১৯৯৮ সালে একটি শিশু ডেরার জীপে চাপা পড়ে যায়। ২০০২ সালে এক নারী ভক্ত গুরমিত রাম রহিমের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ Av‡b| …Gi দু’মাসের মধ্যেই পরিচালন সমিতির এক সদস্য রণজিত্ সিং খুন হন। ২০০২ সালে সিরসা থেকে প্রকাশিত সান্ধ্য দৈনিক ‘পুরা সচ’ (সম্পূর্ণ সত্য) এর সম্পাদক রামচন্দ্র ছত্রপতিকে গুলি করা হয়। পরে তিনি মারা যান। অভিযোগ ওঠে ডেরার দিকেই। ২০১০ সালে আশ্রমের সাবেক ম্যানেজার ফকির চাঁদকে গুম ও খুন করা হয়েছে। রাম রহিমই ওই গুম-খুনের আদেশ দিয়েছিলেন। হংসরাজ চৌহান নামের এক ব্যক্তি ২০১২ সালে হাইকোর্টে মামলা করেন এই অভিযোগে যে ডেরা প্রধান রাম রহিমের নির্দেশে আশ্রমের ৪শ’ সাধুকে নপুংসক করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ভারতের পত্রিকায় বহু বিশ্লেণের অন্যতম: ভক্তদের কাছে তিনি ভগবানের দূত ‘ইনসান’
যদিও বেআইনি অস্ত্র রাখা, ধর্ষণ, খুন, সাধুদের লিঙ্গচ্ছেদ— বহু অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। ২০০৮-এ ডেরা সচ্চার শোভাযাত্রায় বিস্ফোরণ ঘটায় খালিস্তান লিবারেশন ফোর্স। সেই থেকে ‘জেড প্লাস’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গুরমিতের। বুলেটপ্রুফ গাড়িতে যাতায়াত করেন।
সাধারণ জনগণ কতোবড় উম্মাদ ও অন্ধ সমর্থক হলে এতো অভিযোগের (সত্য বা মিথ্যা হোক) পরও এ দানবকে কথিত ভগবানের সমান মনে করে তার জন্য প্রাণ দিচ্ছে। তাছাড়া রাম-রহিমের প্রায় ৪’শ সহ-সাধু যারা লিঙ্গ হারিয়েছে বলা হলেও মূলত তারা নিজেদের লিঙ্গ গুরুর হাতে তুলে দিয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে নিশ্চয় বলবে, বাবার আদেশে লিঙ্গ দিয়েছি এতো মামুলি ব্যাপার, চাইলে স্ত্রী, মেয়ে ও যাবতীয় সম্পদও দিয়ে দেবো! আমাদের দেশেও ছোটবড় এরূপ বহু ভন্ড দরবেশ আছে। ধর্মের চাপ, হুমকি, দাঙ্গার ভয়ে এবং নগদ অর্থ ও ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার লোভে এসব নিয়ে ক্ষমতাশালীরা প্রায় নিরব থাকে। সেহেতু অনুসারীদের প্রচুর নগদ অর্থ, প্রচণ্ড সম্মান ও অন্ধভক্তি, ভয়ভীতি, হুমকি, দাঙ্গা-যুদ্ধ ইত্যাদিই প্রায় সব ধর্মেরই প্রধান ও বিশাল অস্ত্র বললে বোধকরি ভুল হবে না। কারণ ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, কথিত ধর্মযুদ্ধ বা ধর্মদাঙ্গায় একেকটা সাধারণ ধার্মিকেরও বুকের পাটা হিমালয়ের ন্যায় উঁচু হয়ে যায়; যা অন্য কোনো কারণে ও সময়ে হয় না। এই সেন্টিমেন্ট সৃষ্টিতেও ধর্ম এক’শতে এক’কোটি। প্রায় ধর্মই দাঙ্গা-হাঙ্গামানার ভয় দিয়ে, চাপ ও হুমকি-ধামকি দিয়ে, বহু অন্যায়কে ন্যায়ে (ধর্মের দৃষ্টিতে) পরিণত করে থাকে। অতএব মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর… উচিত তথাকথিত ধর্মের কুসংস্কার, দাঙ্গা-যুদ্ধ, অশান্তি সৃষ্টির মশলা, কথায় কথায় কাফের বা বিধর্মী হত্যার ন্যায় আদেশ, অসভ্যতা, বর্বরতা, এক ধর্মের সিম্বল (মূর্তি) দেখলে অন্যদের ধর্ম নষ্ট হওয়া… এসবের বিরুদ্ধে অধার্মিক বা নাস্তিকদের খোলাখুলি সমালোচনার অধিকার দেয়া। যাতে প্রকাশ্যে ও যুক্তিপূর্ণভাবে ধর্মগুলোর সমালোচনা করা যায় এবং তথাকথিত ধর্মের অধিকার লংঘনের পর্যায়ে না পড়ে, রাষ্ট্র যেন কালো আইন করে, হুমকি দিয়ে তা বন্ধ করতে না পারে (যেমন ৫৭ ধারা)… আন্তর্জাতিকভাবে সেই ব্যবস্থা তথা আইন করা।
যাহোক, প্রশ্ন হলো- ধর্মভাইরাস কী সত্যিই মানুষকে সুস্থ থাকতে দেয়? হয়তো সম্পূর্ণ অসুস্থ না করলেও কিছুটা তো করেই। কারণ ধর্ম নিজেই যখন ভাইরাসযুক্ত, সেহেতু আক্রান্তরা কমবেশি অসুস্থ হওয়াটাই স্বাভাবিক। অসুস্থ না হলে কী আর ধার্মিকরা বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখে? তবে ধার্মিকদের আর দোষ কী, ঈশ্বরেরাই তো হুকুম দিয়েছে পুরো পৃথিবী দখল করে স্বধর্ম কায়েম করতে। কারণ এর চেয়ে মহৎ নাকি আর কিছু নেই এবং এর জন্য যেসব মূল্যবান পুরষ্কারের লোভ তা সামলানো মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব (দেখুন ধর্মপুস্তক ও শুনুন নানান ধর্মজীবির অডিও/ভিডিও)। তবে বিশ্বজয় কী এতো সহজ। জয়ের জন্য চাই যুদ্ধ-দাঙ্গা, চাই রক্ত… সেই রক্ত শিশুর কিংবা নিরাপরাধ যে কারোই হোক না কেন এতে কথিত ঈশ্বরদের মোটেও অরুচি নেই। এছাড়াও প্রথম ঈশ্বর সৃষ্টির সময়কাল হতে আজ অবিধ বিশেষ বিশেষ ঈশ্বরেরা কেনো জানি না রক্ত খুবই পছন্দ করে? রক্তে কী স্বাদ, তা তারাই বলতে পারবে? কারণ তাদের উদ্দেশ্যেই রক্তপাত উৎসর্গ করতে বলা হয়েছে (পশুর কিংবা মানুষের)। যদিও মানুষ-বলি প্রথা প্রায়ই নেই, তথাপিও জুলিয়ান ক্যাডম্যানদের মতো নিরীহ, মায়াবী, নিষ্পাপ শিশু ও নারীসহ বহু মানুষকেই আজকাল পরোক্ষভাবে ঈশ্বরদের উদ্দেশ্যেই প্রতিদিনই বলি দেয়া হচ্ছে।
অতএব প্রশ্ন- ধর্ম প্রবর্তিত ও নির্দেশিত যুদ্ধ-দাঙ্গার ক্ষেত্রে (বিশ্বজয়ের জন্য ঈশ্বর অনুমোদিত খুন-খারাবি, বিধান…) হিংস্র পশুরা ভালো, নাকি মানুষ ভালো? কারণ পশুদের হিংস্রতা শুধু খাবার, সঙ্গম ও সীমানা নিয়ে, এ দু-তিনটে চাহিদা মিটে গেলে এরা প্রায় সবাই শান্তই থাকে। অথচ ঈশ্বরেরা কখনোই শান্ত হয় না! দেখেছেন কী কখনো তাদের শান্ত হতে? তারা সর্বদাই বলছে, আমার জন্য সমস্ত পৃথিবী জয় করো, সকলকেই আমার অনুসারী বানাও, সকলকেই আমার পুঁজা করতে বাধ্য করো/রাখে… নতুবা পুরষ্কার পাবে না বরং শাস্তি পাবে…। এসব কী ঈশ্বরদের জোরজবরদস্তি তথা জঙ্গিবাদ নয়? অতএব ঈশ্বরের/ধর্মের কারণেই কী কিছু মানুষের হিংস্রতা সীমাহীন নয়? ধর্ম এর দায় কীভাবে এড়াতে পারে? দায় এড়াতে চাইলেই কেনো ও কোন যুক্তিতে ধর্মকে এর দায় এড়াতে দেবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মাতুব্বরগণ এবং সংস্থাগুলো। কারণ এসব দানবদের কাছে হিংস্রতায় পশুরাও অতি শিশু। এর বহু উদাহরণ আছে, যার মধ্যে গুলশান হত্যাযজ্ঞ অন্যতম। অতএব জুলিয়ানদের বাঁচাতে প্রতিটি ধর্মের তথা প্রতিটি ঈশ্বর, প্রতিটি ঈশ্বর সৃষ্টিকারীর চরিত্র বা মুখোশ উম্মোচন অতীব জরুরি। নতুবা ধর্মত্যাগী প্রকৃত মানবাতাবাদিসহ খাঁটি মানুষদের মৃত্যু ও দুঃখ-কষ্ট চিরস্থায়ী।
অথচ অত্যন্ত দুঃখের ও পরিতাপের বিষয় যে, ধারাবাহিকভাবে যারপর নাই অমানবিক হত্যাযজ্ঞ দেখেও বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় নেতা ও মানবতাবাদিরা ধর্মকে দোষ দিতে চাইছে না বরং নিরাপদে রেখে সমস্যার সমাধান চাইছে। এ মূর্খের দৃষ্টিতে যা অত্যন্ত বোকামিপূর্ণ চিন্তাভাবনা। কারণ ধর্মকে যতো ছাড় দেবে, নিরাপদে থাকতে দেবে, ধর্ম ততো কামড়াবে। ধর্মের কামড়ের জন্য কোনো কারণ লাগে না। দুর্জনের যেমন ছলের অভাব হয় না তেমনি ধর্মেরও ছলের অভাব নেই। ধর্ম ছলেছুতায়, কলেকৌশলে, নানা অজুহাত নিজেই দাঙ্গা-যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তত করে নিতে অত্যন্ত পটু। উদাহরণস্বরূপ সকলের জানা ঈশপের গল্প- “তুই পানি ঘোলা করিসনি তো তোর বাবা করেছে।”
আরো প্রশ্ন- ধর্ম আমাদের কী এ শিক্ষা দেয় না, বিধর্মীদের দ্বারা স্বধর্মের কারো কোনো ক্ষতি হলে অবশ্যই এর প্রতিশোধ নেয়া পূণ্যির কাজ এবং একান্ত কর্তব্য? প্রয়োজনে এর জন্য জীবন বিসর্জন দেওয়া আরো পূণ্যির কাজ, নতুবা সে ধার্মিকই নয়? (এরূপ বহু বক্তব্য ইউটিউবে।) অত্যন্ত বেদনাদায়ক হলেও সত্য যে, সাত বছর বয়সী জুলিয়ান ক্যাডম্যানই শুধু নয়, এরূপ অনেক অসহায় বহু নারী-শিশুকেই অতি নৃশংস্যভাবে কথিত সুমহান(!) ঈশ্বরের নামে শ্লোগান দিতে দিতেই হত্যা করা হচ্ছে অথবা অত্যন্ত গর্বের সাথেই যৌনদাসীতে পরিণত করছে (এসবও ধর্মীয়ভাবে ঐতিহাসিক, যা এম.এ খানের লেখায় বিস্তারিত)। এছাড়া বর্তমান সময়ে ধর্ম তথা ধার্মিকরা যেভাবে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে (গাড়িচাপা) আত্মঘাতি হয়ে অতি সাধারণ ও নিরীহ মানুষসহ নারী-শিশু হত্যা করছে, যা কেবল কথিত এসব ধার্মিকদের দ্বারাই সম্ভব। পূর্বেও বলেছি, এসব ধার্মিকদের ছলনার অভাব নেই; কারণ নিজেরাই ধর্মের অবমাননা (তাদের ভাষায়) করে অন্যকে ফাঁসিয়ে দেয়ার ঘটনাও অজস্র-অগণিত। তাছাড়া ধর্মকে ব্যবহার করেই একের পর এক রাম-রহিম-সিংদের মতো ভণ্ডদানব জন্ম নিচ্ছে। অথচ এদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র, সমাজ, রাজনীতিবিদ, সাধারণ কী অসাধারণ কোনো নাগরিকই কখনোই কিছু বলে না বরং প্রায় সকলেই এদের চরণে প্রণামী দিয়ে নিজেদের ধন্য মনে করে। আর এরা সকলের সমর্থন নিয়েই অত্যন্ত ভয়ডরহীনভাবেই ধর্মব্যবসা চালিয়ে যায়। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এদের শতভাগই ভন্ডপ্রতারক অথচ কেউ কিছু বলতে পারছে না, কারণ ধর্ম জড়িত।
তবে যাদের কাছে শিশু ক্যাডম্যানের নিষ্পাপ, পবিত্র ও মায়াবী মুখের চেয়ে কথিত ধর্মের বাণী উত্তম(!), পবিত্র(!)… তারাই কেবল স্বর্গপ্রাপ্তি এবং আপন ধর্মকে সর্বশ্রেষ্ঠ বানানোর জন্য হাসতে হাসতে এমন দানবীয় হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। হলফ করে বলতে পারি, এ শিশুর মুখের চেয়ে ভয়ানক রাগী, নিত্য পুঁজার জন্য অত্যন্ত লোভী, তথাকথিত ঈশ্বরদের মুখমণ্ডল কখনোই ক্যাডম্যাদের নিষ্পাপ মুখের চেয়ে সুন্দর হতে পারে না। তবে কথিত ধার্মিকরা স্বীকার করুক বা না-ই করুক, এমন নৃশংস্যতা যে ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য এর প্রমাণ গ্রন্থেই রয়েছে! অতএব যারা এর প্রতিবাদ না করে, ধর্মের ভেতরে বিভ্রান্তিকর ও হিংস্রাত্মক বাণীগুলোকে অস্বীকার করে বলছেন ওরা ধর্ম জানে না; সেইসব জ্ঞানপাপীদের এবং জঙ্গিদের ধিক্কার জানাচ্ছি।
প্রিয় ক্যাডম্যান, জানি তুমি শোনা বা বলার উর্ধে। তবু বলছি, আমাদের ক্ষমা করো। অসভ্য ধর্মের কারণেই তোমাকে অসময়ে চলে যেতে হলো! এ লজ্জা কথিত ধর্ম কিংবা ধর্মসৃষ্টিকারী, ঈশ্বর কিংবা দানবসৃষ্টিকারী কারোই নয়, কারণ তাদের তো লজ্জাই নেই! কথিত ঈশ্বরেরা যতোটা না মানবিক, ততোটাই ভয়ংকর অর্থাৎ উলঙ্গ, নিষ্ঠুর, প্রতিশোধপরায়ন…। যেহেতু স্বার্থে আঘাত লাগলে তারা চরম অভিশাপ দেয়, দাঙ্গা-যুদ্ধ বাঁধায়… যাতে সাধারণ মানুষই বেশি আহত-নিহত ও ক্ষতিগ্রস্থ হয় অথচ এব্যাপারে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। অতএব লজ্জা কেবলমাত্র ধর্মত্যাগী কতিপয় অসহায় মানুষের। দানবদের তান্ডব দেখে ভরসা পাচ্ছি না, কবে সম্পূর্ণ ধর্মবিষমুক্ত একটি মানবিক পৃথিবী সৃষ্টি হবে, যেখানে তোমরা নিরাপদে থাকতে পারবে। ধর্ম সৃষ্ট দানবরা আমাদের ঘৃণা করে জানি, কিন্তু জানিনা, দানবশ্রেষ্ঠ ঈশ্বরগুলো তোমাদের মতো নিষ্পাপ/মায়াবী শিশুগুলোকে কী দৃষ্টিতে দেখে?
অভিজিৎ রায় যথার্থই বলেছিলেন যে, বিশ্বাস হচ্ছে একটা ভাইরাস। বিশ্বাসীরা এই ভাইরাস বহন করে চলেছে। প্রয়োজন শুধু উপযুক্ত পরিবেশ ও লালন-পালন, তাহলেই সংক্রমণ নিশ্চিত!
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। বোধহয় আফ্রিকা ও এশিয়াই এ ভাইরাস সংক্রমণের সর্বোত্তম স্থান।