(১)
ভাবুন এমন এক দেশের কথা যাদের তেলের রিসার্ভ পৃথিবীর বৃহত্তম। অধিকাংশ লোকের বাড়িতে গাড়ি আছে, মাথা গোঁজার জায়গা, টিভি ফ্রিজ, আধুনিক কিচেন সবই আছে। কিন্ত বাড়িতে খাবার নেই!

দোকানেও খাবার নেই। প্রাইস কন্ট্রোল এবং দাঙ্গার কারনে দোকানিরা দোকান ছেড়ে পালিয়েছে। কৃষকদের পেটেও দানাপানি নেই। কারন বীজ আমদানি করতে হয়-আমদানি করার ডলার নেই। সব থেকে বড় কথা হুগো শাভেজের জমানায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করতে বড় খামার ভেঙে দেওয়া হয়। তাতে অসুবিধা হওয়ার কথা না-কিন্ত চাষীরা চাষ করা বন্ধ করে দেয়। কারন উৎপাদিত দ্রব্যের দাম সরকার নিয়ন্ত্রন করে-এবং সেই দামে ফসল বিক্রি করে লাভ নেই।

ভেনেজুয়েলার বাম গনতান্ত্রিক বিপ্লব এতটাই জ্যাকশিট, নির্ধারিত দামের অত্যাচারে চাষীরা পশুখাদ্য তৈরী করে খাচ্ছে। কারন পশুখাদ্যের দাম নির্ধারিত না!

ক্ষুদা এখন এত প্রবল ভেনেজুয়েলাতে, অধিকাংশ ফ্যামিলি ছেলেমেয়েদের খেতে দিতে পারছে না বলে ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনাতে তাদের বেচে দিচ্ছে। গত বছর প্রায় ১১,০০০ শিশু মারা গেছে। হাসপাতালে ওষুধ নেই। বিদ্যুৎ নেই । কারন ভেনেজুয়েলার উৎস জলবিদ্যুৎ। খরা কারনে ড্যামে জল নেই। ফলে বিদ্যুৎ ও নেই। সরকারি অফিস চালু আছে সপ্তাহে দুদিন।

কখনো সখনো দুদিন দুইরাত র‍্যাশনে লাইন দিলে একদিনের খাবার মিলছে!

কিন্ত এতকিছুর পরেও প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। টুইটারে তার বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই সাইবার সন্ত্রাসের জন্য জেলে। অধিকাংশ বিরোধিদের জেলে পাঠিয়ে স্বৈরচারি শাসন কায়েম করেছেন মাদুরো। ক্যারাকাসের বৃহত্তম জেল যেখানে মোটে ৪০০০ কয়েদি রাখার ব্যবস্থা, সেখানে এখন প্রায় ত্রিশ হাজার বিরোধি জেল খাটছে। সঙ্গত কারনেই মাদুরোর বিরুদ্ধে স্যাংশন ঘোষনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা।

ক্ষিদের চোটে গ্রামের দিকে শুধু ঘাস খেয়ে মৃত্যুর দিন গুনছে অধিকাংশ গ্রামবাসি। তাদের কাছে রেশন ও পৌছাচ্ছে না।

(২)
প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এই সমাজতান্ত্রিক নরকে পৌছল ভেনেজুয়েলা?

এর জন্য ফিরে যেতে হবে ১৯২৬ সালে। ওই সময় ভেনেজুয়েলাতে আবিস্কৃত হয় তেলের খনি। তেলের জোরেই ভেনেজুয়েলাতে গড়ে ওঠে আধুনিক অর্থনীতি। কিন্ত তেলের টাকার জন্য, খাদ্য বা অন্য ব্যবসায় ইনভেস্ট করে নি ভেনেজুয়েলা। হুগো শাভেজের বহুদিন আগে থেকেই ভেনেজুয়েলাতে লোকজন অলস-তেলের টাকায় খেতে পড়তে অভ্যস্ত। ফলে কৃষি থেকে শিল্প, কোন কিছুই ঠিক ঠাক ভাবে চালাতে অভ্যস্থ না ভেনেজুয়েলার লোকেরা। অনেকটা আরবের লোকেদের মতন। তেলের টাকায় অভ্যস্ত অলস লোকজন।

এমন অলস মস্তিস্কে বাম সমাজতন্ত্রের ফ্রি লাঞ্চ ভালো খাবে তা বলাই বাহুল্য। ফলে ১৯৯৯ সালে খাবার থেকে খামার-সব কিছুর সমাজতান্ত্রিককরনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে যখন শাভেজ ক্ষমতায় আসেন তাতে কেউ অবাক হৌন নি। তেলের দাম যখন এত বেশী-সেই বর্ধিত তেলের টাকায় খাবার আমদানি করে জনগনকে খাওয়ালে কি ক্ষতি?

সমস্যা এখানেই যে হুগো শাভেজ যে অর্থনীতি গড়ে তুললেন প্রাইভেট ব্যবসা ধ্বংশ করে, তা সম্পূর্ন তেল নির্ভর। কৃষির উৎপাদন ক্রমাগত কমেছে-কারন জনগনের কাছে জনপ্রিয় হতে গিয়ে উনি জোর করে উৎপাদিত পন্যের দাম কমিয়েছেন। ফলে চাষীরা চাষ করাই ছেড়ে দিয়েছে। কিন্ত তাতে কি? তেলের দামে বাইরে থেকে খাবার কম দামে কিনে জনগনকে খাইয়েছেন!!

এবং বাংলা সহ পৃথিবীর নির্বোধ বামপন্থীরা দুহাত তুলে শাভেজ শাভেনিজম বলে নেচেছে। বামেরা এত পন্ডিত একবারো প্রশ্ন করে নি তেলের দাম কমে গেলে শাভেনিজমের কি হবে? লোকে কি খাবে?

এবার তেলের দাম যেই তলানিতে ২০১৪ সাল থেকে, ভেনেজুয়েলা না কিনতে পারছে খাবার, না চাষীরা চাষ করতে উৎসাহিত। তার ওপরে আমেরিকার স্যাংশন। একমাত্র ভরসা চীন। তারাও কি কম সুবিধাবাদি? ভেনেজুয়েলাকে ধার দেওয়ার বিনিময়ে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তৈলক্ষেত্রে দখল এখন চীনের তেলের কোম্পানী গুলির। এ যেন উনবিংশ শতাব্দির গ্রাম বাংলার কৃষক। ঋণের দায়ে একমাত্র গাই গরুটিও জমিদারের কাছে বন্দক!

ফল এই যে ভেনেজুয়েলাতে বাড়িতে টিভি ফ্রিজ গাড়ি সব আছে-খাবার নেই। ওষুধ নেই। বিদ্যুৎ নেই। জল নেই।

আছে রোজ রোজ খাবার নিয়ে দাঙ্গা। পুলিস বনাম জনগণের হাতাহাতি রেশনের সামনে।

হুগো শাভেজকে নিয়ে মাতামাতি দেখলে আমার জ্যোতি বসুর কথা মনে আসে। হুগো শাভেজ যেমন ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি ধ্বংশ করে সমাজতান্ত্রিক নরকের জন্ম দিয়েছেন, ঠিক তেমনি জ্যোতিবসুর মধ্যম মেধা এবং জনগনতান্ত্রিক বিপ্লবের ফলে শিল্প শ্মশানে পরিনত হয় পশ্চিম বঙ্গ। ফ্রি লাঞ্চের মোহ জনগনের মধ্যে যদ্দিন থাকবে, জ্যোতিবসু বা হুগো শাভেজের মতন নির্বোধ নেতারা তদ্দিন জননায়কের মত পূজিত হবেন।