লেখক: ঘুণপোকা
বাঙালি কি একই সাথে বাঙালি এবং মুসলিম? নাকি যে কোন একটা, নাকি উভয়ই তার পরিচয়? এই আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগাটা বাঙালি-মুসলমানের সবচেয়ে বড় সমস্যা। মনে হয় না পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোন জাতি আছে যারা এ ধরণের মনোজাগতিক সঙ্কটে ভোগে এবং এটা নিয়ে এতো বেশি আলোচনা হয়।
এই সঙ্কটের শেকড়টা যে খুব বেশী গভীর, তা কিন্তু নয়। মধ্যযুগ থেকেই এখানে মুসলিম ধর্মমত টিকে আছে, মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আছে। সঙ্কট তখনো ছিল, কিন্তু এখনকার মত এতো তীব্র নয়। এখানে একটা বিষয় পরিস্কার করা প্রয়োজন, বাঙালি মুসলিম হওয়ার আগে তার ধর্মীয় পরিচয়ের সাথে জাতিসত্তার দ্বন্দ্ব ছিলনা, কারণ বাঙালির আদি ধর্মবিশ্বাসের গভীরে প্রোথিত ছিল তারই শত শত বছরের লালিত জীবনযাত্রার বিভিন্ন উপাদান। ধর্ম এখানে কখনো কখনো সংস্কৃতি হিসেবেই লালিত হয়েছে। কারণ বাঙালির প্রাচীন ধর্মবিশ্বাস এবং সংস্কৃতি একই মাটি হতে উদ্ভুত। তাই এখানে ধর্ম এবং জাতিসত্তার পরিচয় কখনো মুখোমুখি দাঁড়ায়নি বরং পরিপূরক হিসেবেই পাশাপাশি এগিয়েছে।
যেহেতু এখানকার মানুষের জীবনাচরণ, সংস্কৃতি, জলবায়ুগত সুবিধা-অসুবিধা আরবের মরুচারীদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন, তাই এই জলবায়ুতে বেড়ে ওঠা, এই মাটির সন্তানদের যাপিত জীবনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইসলামকে প্রবেশ করতে হয়েছে, টিকে থাকার প্রয়োজনে এখানকার ইসলাম প্রচারকদের নমনীয় হতে হয়েছে। মনে রাখা দরকার আরবের মুসলিমরা এখানে কিন্তু ব্যাপক আকারে মাইগ্রেট করেনি, হিন্দু কিংবা অন্যান্য ধর্মবিশ্বাস থেকে কনভার্ট করিয়ে আরবের মুসলিম দর্শন এখানে গেলানো হয়েছে। ইসলাম এবং আরব সংস্কৃতিও যেহেতু একই মাটি হতে উদ্ভূত এবং ইসলামে যা কিছু নিয়ম-কানুন তার প্রায় সব কিছুই আরব সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে, তাই আরবের ইসলাম মোটেই বিশ্বায়নের যোগ্য ছিল না; বিশেষকরে উপমহাদেশের মত এলাকায় । তাই এই অঞ্চলে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে সুফি ঘারানার যে সকল মুসলিম সাধক এসেছিলেন, তারাও এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই কাজ করেছিলেন। তাদের মরমী সুফি দর্শনের সাথে এখানকার মানুষের উদারবাদী দৃষ্টিভঙ্গি মিলে যায় বলেই তারা এখানে ধর্ম প্রচারে সফল হয়েছেন।
পাশাপাশি যেহেতু আরব অঞ্চলের সাথে আমাদের ভৌগলিক দূরত্ব অনেক বেশি তাই এখানকার হিন্দু বা বৌদ্ধদের কিন্তু কোরআন-হাদিস পড়ে কিংবা কাবা-রওজা দেখে ভক্তিতে বা বিশ্বাসে গদগদ হয়ে মুসলিম হওয়ার সুযোগ ছিল না এবং যেহেতু আরবি ভাষা যেহেতু এখানকার মানুষের ভাষা নয়, তাই সে ভাষার ধর্মগ্রন্থ পড়ে-বুঝে ঈমান আনাও সহজ ছিলনা। অর্থাৎ ইসলাম-আল্লাহ-নবীদের বিভিন্ন কেরামতি এই বিষয়গুলো সুফি-দরবেশদের মুখে মুখে বিভিন্ন কেচ্ছা-কাহিনি হিসেবে বর্ণিত হয়েই এখানে ইসলামে ঢুকেছে। সেই কেচ্ছা বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য তাদের স্থানীয় কিছু উপাদানও যোগ করতে হয়েছে। খোয়াজ-খিজির, কারবালার কাহিনি এখানকার ফ্লেভার মিশিয়ে পরিবেশিত হয়েছে, মানুষ গ্রহণ করেছে। তারা জাতপাতহীন উদার মানবিকতার গল্প শুনিয়েছেন, সেটাও মানুষ গ্রহণ করেছে। শুধু দোজখের ভয় বা বেহেস্তের লোভ দেখিয়ে অমুসলিমদের আকৃষ্ট করা সম্ভব ছিল না, তাই এসব কেচ্ছা-কাহিনি আর উদার জীবনযাত্রার কথাই মানুষকে আগ্রহী করেছে।
এর ফলেই আস্তে আস্তে সৃষ্টি হয়েছে একধরণের সমন্বয়। মনে রাখতে হবে এখানকার নিন্মবর্ণের হিন্দুরা কিন্তু বর্ণবাদ কিংবা ব্রাহ্মণদের কাছ থেকে মুক্তি চেয়েছে বলে ইসলামে এসেছে, কেউ কেউ অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার আশায় নিজের আদি ধর্ম ছেড়েছে, তাদের সংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে মুক্তি চাইতে কিন্তু নয়। বহু শতাব্দী থেকে এখানে আর্য-অনার্য আচার-সংস্কৃতি লালন করেছে সাধারণ মানুষ, ফলে হাজার মাইল দূরের ধর্মবিশ্বাস, জীবনযাত্রা গ্রহণ করা তাদের পক্ষে মোটেই সহজ ছিল না। এর ফলে আমরা দেখেতে পাই মাজার-খানকাভিত্তিক একধরণের প্রতিষ্ঠান, যেখানে সকল ধর্মের মানুষের অবাধ যাতায়াত। অন্যদিকে মনসা-সরস্বতী সহ বিভিন্ন পুজায় মুসলিমদের অবাধ অংশগ্রহণ। এই সমন্বয়ের ফলে ইসলাম ধর্ম এই জলবায়ুতে এক ভিন্ন রূপে আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয়, যাকে বর্তমান কট্টরপন্থী সালাফি-ওহাবিরা আসল ইসলাম বলে মানতে নারাজ।
এই সমন্বয়বাদী উদারপন্থী ইসলামের উপর নতুন করে তাহলে চরমপন্থার প্রলেপ পড়ল কিভাবে? এই সঙ্কট যে শুরু থেকেই ছিল না তা কিন্তু নয়, তবে এই অঞ্চলে মৌলবাদী ইসলামের প্রসার ঘটে আঠারো শতকের দিকে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের সুযোগে, যাতে প্রভাব ছিল ওহাবী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহহাব (১৭০৩-১৭৯২ খ্রি.)। ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসীদের মতে ‘সে যুগে যে ব্যাপকভাবে পীরপূজা, গোরপূজা, ব্যক্তিপূজা শুরু হয়ে গিয়েছিল এবং তুর্কী সুলতানরা ইসলামী আদর্শ থেকে দূরে সরে যেভাবে আয়েশী রাজা-বাদশাহর জীবন যাত্রা শুরু করেছিলেন।’ ফলে মুসলিমদের এ ধরণের ‘বেদাতি কাজ’ থেকে বাঁচানোর জন্য হাজী শরিয়তুল্লাহ এবং তিতুমীর সহ অনেক সমাজ সংস্কারকদের হাত ধরে মৌলবাদীরা এখানে শিকড় গেড়ে বসে।
হাজী শরিয়তউল্লাহ ১৭৯৯ সালে হজ পালনে মক্কায় যান এবং ১৮১৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। সেখানে তিনি ওহাবী মতাদর্শে অনুপ্রাণিত এবং দীক্ষিত হন, দেশে ফিরে তিনি ওহাবী আন্দোলনের অনুরূপ ইসলামি সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। যা পরবর্তীকালে ফরায়েজী আন্দোলন নামে পরিচিতি পায়। এখানকার সমন্বয়বাদী দর্শনের প্রবল বিরোধিতা করেন শরিয়তুল্লাহ। ‘হেদায়া’তে উল্লিখিত মুসলিম আলেমদের শরীয়া অনুসারে তিনি ব্রিটিশ ভারতকে ‘দারুল হারব’ (শত্রুরাষ্ট্র) হিসেবে ঘোষণা দেন। ফলে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে এখানকার মুসলিমরা। একদিকে তাদের ধর্মবিশ্বাস অন্যদিকে হাজার বছরে লালিত সামাজিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ফলে স্পষ্টতই দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে মুসলিম সমাজ।
এই বিভাজন চূড়ান্ত রূপ নেয় ব্রিটিশ শাসনের শেষদিকে। ভাষা, খাদ্যভ্যাস, সংস্কৃতি সহ কোন মিল না থাকা সত্ত্বেও যখন শুধুমাত্র ধর্মের খাতিরে হাজার মাইল ব্যবধানে থাকা দুটি ভূখণ্ডকে এক করে একটি অদ্ভুত রাষ্ট্র জন্ম নেয়; পাকিস্তান। একদিকে পাকিস্তানী শাসকদের এই বাঙলায় সাংস্কৃতিক দমন-পীড়ন, অপরদিকে ওহাবী-মউদুদিবাদের প্রসারে ক্ষত-বিক্ষত বাঙলা তেইশ বছর পর যখন নিজস্ব রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেল, ততদিনে বাঙালির নিজস্ব স্বকীয়তা যেটুকু ছিল সেটাও বিপন্ন হয়ে পড়ে। যদিও বাহাত্তরের সংবিধানে জোড়াতালি দিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদকে দমনের চেষ্টা করা হয়েছিল সেটাও সফল হয়নি।
এই মৌলবাদী ইসলামের পাশাপাশি এই ভূখণ্ডে উদার মতবাদে বিশ্বাসীদের অবস্থানও ছিল। চিরায়ত বাউল-সহজিয়াদের পাশাপাশি পীর-দরবেশ, সূফী-মাজারপন্থীগণও তাঁদের দর্শন প্রচার করে গেছেন। সমস্যাটা হয়েছে আসলে এখানেই। বাঙালি কি শুধুই ‘বাঙালি’, নাকি ‘মুসলিম’, নাকি দুটোর সমন্বয়?
সালাফি মোল্লা ঘোষণা দেয় গান হারাম, বাজনা হারাম, ছবি তোলা হারাম, ছবি, পহেলা বৈশাখ হারাম, মঙ্গল শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ, ভাস্কর্য রাখা যাবে না, নারীর ঘরের বাইরে যাওয়া হারাম, চাকরি করা হারাম, হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ বুকিশ ইসলাম। ধর্মীয় বইয়ে যা লেখা আছে অক্ষরে অক্ষরে সেটা মানা এবং অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া। অন্য অর্থে দেড় হাজার বছর আগেকার আরব্য সংস্কৃতি আনকোরা টিকিয়ে রাখা। একদিন দুইদিন না, বছরের পর বছর ওয়াজ-মাহফিল, জুমার খুতবায়, আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘হিন্দুয়ানি’ নাম দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কথা বলে গেছে ওহাবি মোল্লারা। কেউ বাধা দেয়নি।
অবস্থাটা এমন জায়গায় গেছে যে কেউ মুসলিম হলে সে আর বাঙালি হতে পারে না, আর বাঙালি সংস্কৃতি চর্চাকারী কখনো ‘সহিহ মুসলিম’ হতে পারে না। এসব প্রচার-প্রচারণার ফলাফল এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনেই। এমন একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে যারা না হতে পেরেছে আরবি মুসলিম, না হতে পেরেছে বাঙালি। শেষ কথা হচ্ছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুধু রাজনৈতিক অভীপ্সা পূরণের লক্ষ্যেই সংঘটিত হয়নি বরং বাঙালির স্বকীয় সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যেও পরিচালিত হয়েছে। সেই লক্ষ্য থেকে যত দূরে সরে যাবে, বাঙালির এই সঙ্কট ততবেশি ঘনীভূত হবে বলেই আশঙ্কা করি।
একজনের মন্তব্যের উত্তরে পশ্চিমবঙ্গে সমস্যা নেই এরকম মনে করবার কোন কারন নেই। আর্যসংস্কৃতি বঙ্গদেশে অন্তত দুহাজার বছর থেকে বঙ্গ সংস্কৃতির উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে, তাতে ধীরে ধীরে একটা মিশ্র সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। বাঙালী হিন্দু দের নাম বাংলা ভাষায় হওয়ায় নাম নিয়ে তাদের সমস্যা নেই। এখন বাংলাদেশে প্রচুর মুসলমান নাম বাংলায় হচ্ছে এবং দিন দিন হয়তো বৃদ্ধি পাবে। তুলনায় পশ্চিম বঙ্গের মুসলমানদের নাম বাংলায় এখনও কম, এটাও হয়তো আইডেনটিটি ক্রাইসিস থেকে হচ্ছে, অথচ বাংলায় নাম হলে বাঙালী পরিচয়ের ফলে হিন্দু মুসলমান ভেদাভেদ অনেকটা কমে যেতো।
ভাই আপনি তো বলছেন, মুসলীম না বাঙ্গালী। আমি মুসলমানদের মুখ থেকে বলতে শুনি, তিনি প্রথমত মুসলমান,দ্বিতীয়ত মানুষ।
মনে রাখতে হবে এখানকার নিন্মবর্ণের হিন্দুরা কিন্তু বর্ণবাদ কিংবা ব্রাহ্মণদের কাছ থেকে মুক্তি চেয়েছে বলে ইসলামে এসেছে
—-মুকি চেয়ে আর একটি জালে আটকে গেছে।
১. লেখকের মন্তব্য: ‘এখানে একটা বিষয় পরিস্কার করা প্রয়োজন, বাঙালি মুসলিম হওয়ার আগে তার ধর্মীয় পরিচয়ের সাথে জাতিসত্তার দ্বন্দ্ব ছিলনা, কারণ বাঙালির আদি ধর্মবিশ্বাসের গভীরে প্রোথিত ছিল তারই শত শত বছরের লালিত জীবনযাত্রার বিভিন্ন উপাদান। ধর্ম এখানে কখনো কখনো সংস্কৃতি হিসেবেই লালিত হয়েছে। কারণ বাঙালির প্রাচীন ধর্মবিশ্বাস এবং সংস্কৃতি একই মাটি হতে উদ্ভুত। তাই এখানে ধর্ম এবং জাতিসত্তার পরিচয় কখনো মুখোমুখি দাঁড়ায়নি বরং পরিপূরক হিসেবেই পাশাপাশি এগিয়েছে।’ লেখকের বক্তব্য মেনে নিলে প্রশ্ন দাঁড়ায়: ঘটনা যদি তেমনই হয় তবে বাঙালীর মুসলিম হওয়ার প্রয়োজন হলো কেন ? ‘বাঙালির আদি ধর্মবিশ্বাসের গভীরে প্রোথিত ছিল তারই শত শত বছরের লালিত জীবনযাত্রার বিভিন্ন উপাদান’- তাহলে কিসের অভাব হলো যে ‘জীবনযাত্রার সে মূল্যবান উপাদান’ -সেটি ফেলে মরূবাসীর ‘ধর্ম-সংস্কৃতি’ গ্রহণ করতে হলো। এবং মজার কথা সেটি বাঙালীর মেজরিটি অংশের?
২. লেখক বলছেন: ‘এই বিভাজন চূড়ান্ত রূপ নেয় ব্রিটিশ শাসনের শেষদিকে। ভাষা, খাদ্যভ্যাস, সংস্কৃতি সহ কোন মিল না থাকা সত্ত্বেও যখন শুধুমাত্র ধর্মের খাতিরে হাজার মাইল ব্যবধানে থাকা দুটি ভূখ-কে এক করে একটি অদ্ভুত রাষ্ট্র জন্ম নেয়; পাকিস্তান।’- হ্যা বাঙলিীর একটিপ অংম সে কাজটি করেছে তবে বাঙালীর আরেকটি অংশ যে একই ভাবে ‘ভাষা, খাদ্যভ্যাস, সংস্কৃতির মিল পেছনে ছুড়ে ফেলে ‘শুধুমাত্র ধর্মের খাতিরে’ ভারতের সাথে যোগ দিল তার কি হবে? সেটি কি ভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
৩. লেখকের মতে: ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুধু রাজনৈতিক অভীপ্সা পূরণের লক্ষ্যেই সংঘটিত হয়নি বরং বাঙালির স্বকীয় সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যেও পরিচালিত হয়েছে’। প্রশ্ন হলো ৭১ -এ বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যদি ‘বাঙালির স্বকীয় সাংস্কৃতিক মুক্তির’ বিষয়টি স্বাধীনতা যুদ্ধের পেছনে অন্যতম প্রধান ভুমকা পালন করতো তবে সেটি একইভাবে বাঙালীর অপর অংশ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও সত্যি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু, কই- আমরা তো তেমন কিছু পশ্চিমবঙ্গে দেখছি না। বাঙালীর ‘ভাষা, খাদ্যভ্যাস, অর্থনীতি, সংস্কৃতির সবকিছুই আজ সেখানে হারিয়ে যাওয়ার পথে- আমরা তো তার সেজন্য তারা স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষনা দিয়েছে!
আশা করবো লেখক এসব প্রশ্নের যুক্তসংগত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটি দেবেন!
বাঙালি মুসলমানরা প্রকৃত মুসলমান না। এইটাই আমার মনে হয়। এরা ধর্ম কর্ম, নাচা গানা, দুর্নীতি সব একসাথেই করতে চায়। মাঝে মধ্যে ধর্ম নিয়ে ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগলে মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতা করে আর সংখ্যালঘুদের বাড়ি পুড়িয়ে ঈমান চাঙ্গা করে নেয় আর কি।
সমস্যা টা পশ্চিম বাংলা তেও , বাঙালিত্ব বনাম হিন্দুত্বের সংঘাত এখানে দিনদিন বাড়ছে বিপজ্জনক ভাবে।
একটু ব্যাখ্যা করা যায়?
লেখাটি পড়ে আমার উপলব্ধিসমূহ :
১। বিষয়বস্তু অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, ভাষা সহজ, প্রকাশ চমৎকার;
২। আমার জানামতে, আরব থেকে ইসলাম সরাসরি এই অঞ্চলে আসে নি, তা এসেছে অনারব কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দেশ (যেমন : ইরান) থেকে; ইসলাম যখন আরব থেকে অন্যান্য জায়গায় (পারস্য, তুরস্ক) ছড়িয়ে পড়ে, তখনো আর সহি ইসলাম থাকে নি, ঐসব জায়গার সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো সে গ্রহণ করেছে – এই ব্যাপারটি একটু আলোচনা করলে প্রাসঙ্গিক হতো;
৩। সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান আমাদেরকে বলে যে, জাতি, ধর্ম – এসব ধারণা সদা পরিবর্তনশীল; বিশুদ্ধ জাতি ও ধর্মের অস্তিত্ব নেই বললেই প্রায় চলে, এসব বিষয় স্থান-কাল-পরিবেশ নির্ভর এবং ধ্রুব নয় – এই ব্যাপারটিও আলোচনার দাবি রাখে;
৪। বানান ও বাক্য গঠনে আরেকটু সচেতন হলে পাঠ আনন্দদায়ক হবে।
১।ধন্যবাদ!
২। আসলে এখানে ইসলাম এসেছে মুলতঃ ইরাক-ইরান অঞ্চল থেকে, সরাসরি বর্তমান সৌদি থেকে নয়। তৎকালে আরব মানে শুধু সৌদিই নয় মধ্যপ্রাচ্যকেই বোঝাতো। আমিও আরব বলতে শুধু মক্কা-মদিনা কেন্দ্রিক আরবের কথা বুঝাইনি।
৩। পরিবর্তনশীলতার বিষয়টি অস্বীকার করছি না, এটা নিয়ে বিস্তর আলোচনার সুযোগ আছে বলে মনে করি। আমি আসলে এখানে মৌলবাদের বিস্তার এবং সে প্রেক্ষিতে এখানকার বাঙালিরা কিভাবে পরিচয় সঙ্কটে পড়েছে সে বিষয়টি ফোকাস করার চেষ্টা করেছি। এই পরিবর্তনশীলতা আসলে আমাদের ভালো কিছু দিচ্ছে না সেটাই বলতে চেয়েছি।
৪। বানান ও বাক্য গঠন বিষয়ে ভবিষ্যতে আরও বেশি সতর্কতা থাকবে।
ধন্যবাদ! 🙂
কার একটা লেখায় পড়েছিলাম, পাকিস্তানের পক্ষে ভারতের সাথে বন্ধুত্ব করা সম্ভব নয়, কেননা ভারতবিরোধীতাই পাকিস্তানের অস্তিত্বের মূল। বাংলায় ইসলাম এসেছে স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে আপোষ করেই। এমন কি ভারতে যে মুসলিম শাসন, সেখানেও কিন্তু সুলতান বা সম্রাটগন স্থানীয় হিন্দু রাজা বা জমিদারদের সাথে শান্তি চুক্তির (নজরানার বিনিময়ে) মাধ্যমে তাদের দিয়েই দেশ চালিয়েছেন আর স্থানীয়দের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক জীবনে খুব বেশি হস্তক্ষেপ করেন নি, তা না হলে গণবিক্ষোভ নিঃসন্দেহে দেখা দিত, যেমন হয়েছে ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষে ৭০% হিন্দু জনসংখ্যা সেই কথাই বলে। ১৯৪৭ সালে বাংলার মুসলিম অভিজাতরাই পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়ায় আর তাদের সহায়তায়ই পাকিস্তান রাস্ত্রের জন্ম হয়। ১৯৭১ দেশ স্বাধীন হলে আরব বিশের (মুসলিম বিশ্বের) কাছে তারা আর পাক্কা মুসলিম বলে স্থান পায় না। ফলে আবার শুরু হয় আইডেন্টিটির দ্বন্দ্ব। তাছাড়া এটাও তো ঠিক, যে সাম্যের বানী নিয়ে ইসলাম এসেছিল আরবে, ভারত বর্ষে সেই সাম্য আর বজায় ছিল না। বরিরাগত মুসল্মান যেমন স্থানীয়দের সমান মরজাদা দিত না, কনভার্টেড হিন্দুরাও তাদের সাথে করে বর্ণভেদ নিয়েই এসেছিল। এছাড়াও দুশ বছর আগে যে রেনেসাঁ শুরু হয়েছিল বাংলায় – সেখানে ছিল হিন্দুদের ব্যাপক অগ্রাধিকার। যার ফলে যেমন বাঙ্গালী পরিচয়ে বাঙ্গালী মুসলমান বাঙ্গালী হিন্দুদের কাছে হেরে যাচ্ছে, মুসলমান পরিচয়ে সে একই ভাবে হেরে যাচ্ছে আরব বা পাকিস্তানের মুসলমানের কাছে। আর এজন্যই স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে চেষ্টা হয়েছে অপার বাংলা থেকে আলাদা একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলার, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে বেশি করে আরবী চেহারা দেবার। এই চেষ্টা এখন চলছে। মনে হয়না অদুর ভবিষ্যতে এর উত্তর আমরা পাব। আর যতদিন না পাচ্ছি, রাজা হরিশ্চন্দ্রের মতই বাঙ্গালী মুসলমানকেও ঝুলে থাকতে হবে।
খোলা মনের যে কোন বাঙালি মাত্র কয়েক মিনিটের একটু মনোযোগ দিয়ে ছোট্ট এই লেখাটা পড়ে নিলে অনেক প্রশ্নের উত্তর বা সূত্র পেয়ে যাবেন। ভালো মানুষ যারা তাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি লেখাটি পড়ে দেখতে।
চমৎকার লিখেছেন ঘুণপোকা। সহজ করে বুঝিয়ে বুঝিয়ে লিখে দিয়েছেন। কোন বিষয়কে লেখা হিসেবে খুব ম্যাচিউর করে উপস্থাপন করতেই হবে এমন কোন কথা নেই, ব্যাপারটা নিয়ে ভাবনার পথ দেখা গেলেই যথেষ্ঠ বলে মনে করি। যারা বিস্তারিত পড়বেন তাঁরা আরো খেটে আরো অনুসন্ধান করে পড়বেন; তাঁরা নিজ গরজেই পড়বেন।
কট্টরপন্হী মোল্লা’রা এইসব আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সৌদী আরব টাইপ দেশগুলোতে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশেও প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। প্রকাশ্যে গর্দান নেওয়া, হাত কাটা, পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা, চাবকানো, ইত্যাদি ইত্যাদি’ও সু প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবে মনে হচ্ছে। হেফাজতি শফি মোল্লাদের দাপট এবং শাসকের আত্মসমর্পণের চিত্র এমনটা’ই তো বলে দিচ্ছে।
বাঙালি’র সৌন্দর্য মাহাত্ম্য সারল্য সাফল্য সবকিছুই নির্ভর করবে বাঙালি কি বাঙালি হয়ে বাঁচবে না’কি মৌলবাদী হতে থাকবে? বাঙালির সংস্কৃতি’তে বাঙালি যদি ডালভাত বেগুন ভর্তা’র বদলে খেজুর খোরমা রুটি মেনে নেয় তা হলে তো বিপদ হবেই। সামান্য অপরাধে সামান্য শাস্তি; সংশোধন, না’কি কল্লা কেটে ফেলার শাস্তি হবে, হাত কাটা হবে, পাথর ছুঁড়ে মারা হবে তা বাঙালিকে নিজেদেরই ঠিক করতে হবে। মেয়েরা ঘরে আবদ্ধ হয়ে থাকবে না’কি সমান অধিকার নিয়ে সসম্মানে বাঁচবে তা বাঙালিকে নিজেদেরই ঠিক করতে হবে।
ধন্যবাদ।