লিখেছেন: রাজেশ পাল
উত্তাল মার্চ, ১৯৭১ সাল। ৭০ এর নির্বাচনে বিজয়ের পর হতেই বাঙালীর স্বাধীনতার স্পৃহা উঠে গেছে তুঙ্গে। সারা দেশ প্রকম্পিত হচ্ছে মিছিল আর শ্লোগানের গর্জনে।আর সমানতালে চলছে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার। অবশেষে এলো সেই অগ্নিঝরা দিন। ৭ই মার্চ, ১৯৭১। রেসকোর্স ময়দানে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত লাখো জনতার সামনে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠ ঘোষণা করলো বসন্তের বজ্র নির্ঘোষ।
“প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো,
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”
সেই ভাষণে যেন নবপ্রাণের সঞ্চার হলো টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া। রাজপথে নেমে এলো মানুষের ঢল।শহরগুলো পরিণত হলো এক একটি মিছিলের নগরীতে। গগনবিদারী শ্লোগান উঠলো , “তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা” “বাঁশের লাঠি তৈরী করো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো”। যেন ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে বেরিয়ে এলো চেপে রাখা ক্ষোভের উন্মত্ত লাভার উচ্ছ্বাস। শৃংখলমোচনের দূর্ণিবার আকাঙ্খা থেকে সৃষ্টি হলো গণজোয়ার। সে জোয়ারের ঢেউ এসে ধাক্কা দিলো সম্মানীপুরেও। সম্মানীপুর ঢাকা শহর থেকে ৩১৬ কিলোমিটার দূরে রংপুর জেলার কোতোয়ালী থানার অন্তর্গত একটি গ্রাম। একেবারে অজ পাড়াগাঁ বলতে যা বোঝায়, সম্মানীপুর ছিলো অনেকটা তারই প্রতিচ্ছবি। কিন্তু স্বাধিকারের ঢেউয়ের দোলা এসে ধাক্কা দিয়েছে এখানেও।
এই গ্রামেরই এক দরিদ্র কসাই শাহেদ আলী।নিতান্ত সাধারণ একজন মানুষ।অল্পবয়সেই পিতৃহারা হয়ে স্কুলের পড়াশোনার ইতি টানতে বাধ্য হন। আর পরিবর্তে ছয় সদস্যের পরিবারের মুখের গ্রাসাচ্ছদনের জন্য শুরু করেন জীবন সংগ্রাম। পেশা হিসেবে বেছে নেন কসাইয়ের কাজ। রাজনীতির মানুষ ছিলেননা কোনোদিন। ধারণা ছিলোনা ইতিহাস আর দর্শনের মোটা মোটা গ্রন্থের দাঁতভাঙা তত্বকথা নিয়েও। কিন্তু তাঁর মনেও এসে বাসা বেঁধেছিল স্বাধীনতার দূর্ণিবার আকাঙ্খা।
সম্মানীপুর গ্রাম থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট। ৭ই মার্চের পর থেকেই সেখানে অবস্থিত ২৯ ক্যাভলারী রেজিমেন্টের সৈনিকেরা খানাতল্লাশির নামে আশেপাশের গ্রামগুলোর উপরে শুরু করেছিলো ব্যাপক নির্যাতন, লুটপাট আর জ্বালাও পোড়াও। এসব দেখে রাগে আর ক্ষোভে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন শাহেদ আলী। সিদ্ধান্ত নেন বদলা নেয়ার। দলে জুটে গেলো আরো ১০ জন মুক্তিপাগল দামাল তরুণ।অত্যাধুনিক হাতিয়ার তাঁদের নেই, নেই কোনপ্রকার সামরিক প্রশিক্ষণও। শুধু রয়েছে বুকভরা দুর্জয় সাহস আর দেশপ্রমে উজ্জীবিত বিপ্লবী হৃদয়।
২৩ শে মার্চ, ১৯৭১। ক্যান্টনমেন্ট থেকে একটি জীপ আর ৫ জন পাকসেনা এগিয়ে যাচ্ছিলো লেঃ আব্বাসের নেতৃত্বে পার্শ্ববর্তী দামোদরপুর গ্রামের দিকে। উদ্দেশ্য গ্রামবাসীদের গরু ছাগল পেলে লুটপাট করা। শাহেদ আলী আর তাঁর সাথীরা লুকিয়ে পজিশন নিলেন রাস্তার দুপাশের ঘন ঝোপঝাড়ের আড়ালে। হাতিয়ার বলতে কসাইয়ের দোকানের ছুরি, দা আর বাঁশের লাঠি। নীরবে লুঙ্গিতে কাছা আর মাথায় গামছা বেঁধে অপেক্ষা করতে লাগলেন তাঁরা। পাকবাহিনীর জীপটি নাগালের মধ্যে আসতেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই উল্কার বেগে “জয় বাংলা” শ্লোগান দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তাঁরা। বিস্ময়ের ধাক্কা সামলে রাইফেল হাতে নেয়ার সময়টুকুও পেলোনা পাকসেনারা।ছুরি আর দায়ের আঘাতে জর্জরিত হয়ে লুটিয়ে পড়লো সবাই। শুধুমাত্র ড্রাইভার নুরুল ইসলাম বাঙালী বলে তাঁকে ছেড়ে দেন গেরিলারা। সৈন্যদের সাথে থাকা হাতিয়ারগুলো নিজেদের কুক্ষিগত করেন তাঁরা। এরপর জীপসহ পাকসেনাদের লাশগুলো দানজীরপাড় গ্রামের কাছে এক জলাভূমিতে ডুবিয়ে দেন। দানজীরপার গ্রামটি ছিলো সম্মানীপুর গ্রাম থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে।
পাকবাহিনীর উপরে এই হামলা ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি করে আশেপাশের গ্রামবাসীর মধ্যে। কারণ বিগত কিছুদিন ধরে পাকসেনাদের ক্রমাগত লুটপাটে একেবারেই অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করে ছিলো তাঁদের জন্য। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও তাদের পেট্রোল জীপটি ফিরে না আসায় তাদের সন্ধানে ২৯ ক্যাভলারী রেজিমেন্টের কমাণ্ডিং অফিসার লেঃ কর্ণেল শাহ মোহাম্মদ সগীর একটি ফাইটিং পেট্রোল পাঠান। পেট্রোলটি জীপ আর মৃত পাকসেনাদের লাশগুলো খুঁজে পায়। লেঃ আব্বাস তখনো জীবিত ছিলেন। কিন্তু পরদিন ২৪ শে মার্চ হাসপাতালে মারা যান। প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে পাকবাহিনী।
পরদিন ছিলো ইতিহাসের সেই ভয়ঙ্করতম কালোরাত্রি “ ২৫ শে মার্চ, ১৯৭১”। “অপারেশন সার্চ লাইটের” নামে বাংলার নিরস্ত্র মানুষের উপরে হিংস্র শ্বাপদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকবাহিনী। নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, বাঙালী পুলিশ, ইপিআর ,বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের উপরে। সূচনা করে পৃথিবীর অন্যতম নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের।
পাকবাহিনীর সহযোগী দালালেরাও শুরু করে তাদের কর্মকাণ্ড। কার ঘরের ছেলে মুক্তিবাহিনীতে নাম লিখিয়েছে, কার ঘরে পাওয়া যাবে সুন্দরী তরুণী, কিশোরী, গৃহবধুদের, কোথায় কোথায় রয়েছে হিন্দু বসতি, কে কে জড়িত আওয়ামীলীগের সাথে সব খবর নিয়মমাফিক পৌঁছে দিতে শুরু করলো পাকবাহিনীর ক্যাম্পে। এরকমই একজন ছিলো গাইট্টা আমজাদ। জাতিতে বিহারী এই লোকটি যুদ্ধকালীন সময়ে বাঙালীদের কাছে হয়ে উঠেছিলো মুর্তিমান আতংকের নাম।
আগে থেকে বিপদ আঁচ করতে পেরে শাহেদ আলী তখন সম্মানীপুর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন লালবাগহাটে। সেখানে তিনি কাজ করছিলেন কসাই হিসেবে। গাইট্টা আমজাদ পাকবাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয় সেদিনের জীপ আক্রমণের সাথে জড়িতদের নাম। আর সেই সাথে জানিয়ে দেয় শাহেদ আলীর বর্তমান অবস্থানও। ৭ই এপ্রিল, একদল খানসেনা নিয়ে গাইট্টা আমজাদ হাজির হয় লালবাগ হাটে শাহেদ আলীর কসাইয়ের দোকানে। শাহেদ আলী কিছু বুঝে ওঠার আগেই দোকানটি চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে খানসেনারা। পালাবার কোন পথ বাকি না থাকায় মনে মনে শেষ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে নেন শাহেদ আলী। দুজন পাকসেনা দোকানে ঢুকতেই দোকানে টাঙিয়ে রাখা গরু ছাগলের মাংসের আড়াল থেকে নিজের একমাত্র সম্বল কসাইয়ের ছুরিটি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। ছুরির আঘাতে ধরাশায়ী করেন দুজনকেই। কিন্তু তাদের পেছনে থাকা ওপর খানসেনা গুলি চালায় তাঁর উপরে। শরীরে বুলেটবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। অন্যান্য পাকসেনারাও বেয়নেটের উপর্যুপুরি আঘাতে জর্জরিত করে ফেলে তাঁর দেহ। মায়ের শৃংখল মোচনের পথে শহীদের খাতায় নাম লেখান শাহেদ আলী।
কাহিনীর এখানেই শেষ নয়। শাহেদ আলীর মৃতদেহ জীপের পেছনে বেঁধে গ্রামের পরে গ্রাম হেচড়িয়ে টেনে নিয়ে যায় পাকসেনারা।তাঁর স্বজনরা তাঁর মৃতদেহ আবিষ্কার করে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে লাহিড়ির হাটের কাছে একটি পুকুর থেকে। সেখান থেকে যখন তাঁর লাশ তাঁর নিজ গ্রাম সম্মানীপুরে দাফন হচ্ছিলো তখন আবারো রাজাকার গাইট্টা আমজাদের সাথে খানসেনারা চড়াও হয় সম্মানীপুরে। পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তাণ্ডব চালায় তারা। শাহেদ আলীর বাড়ীতে ঢুকে তাঁর প্রথম স্ত্রীর মাথায় রাইফেলের কুদো দিয়ে ভয়াবহ আঘাত করে তারা। বাদবাকি জীবনে সেই আঘাত থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি তিনি। প্রথম স্ত্রীর সন্তান না থাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন শাহেদ আলী যুদ্ধ শুরুর মাত্র কিছুদিন পূর্বে। প্রথম স্ত্রী আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যেতে দেখে ছুটে এসেছিলেন সেই দ্বিতীয় স্ত্রী। পাকসেনারা তাঁকে মাথার চুলে ধরে টানতে টানতে বাড়ীর ভেতরে নিয়ে যায় আর উপর্যুপরি গ্ণধর্ষণে মেতে ওঠে পৈশাচিক উল্লাসে। তাদের নির্মম নির্যাতনে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
শাহেদ আলীর মতো লাখো শহীদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। এদেশের আকাশে উড়ছে পতপত করে লাল সবুজের বিজয় নিশান। বড় বড় মানুষের ভীড়ে তাঁর কথা কেউ মনে রাখবেনা, কোনো কবি তাঁকে নিয়ে লিখবেনা কালজয়ী কবিতা। কিন্তু এই বাংলার আকাশে বাতাসে চিরকালই মিশে রইবে এই মৃত্যুঞ্জয়ী বীরের বীরত্বগাথা।
তথ্যসূত্রঃ
লেঃ কর্ণেল সাজ্জাদ আলী জহিরের “ First successful guerrilla leader: the story of Shahed ali” প্রবন্ধ থেকে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি। আন্দোলনকারীরা কিংবা পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা ভবিষ্যতের স্বাধীন রাস্ট্রের রূপরেখা নিয়ে হয়ত ভেবেছিলেন কিন্তু এর ধর্মীয় চরিত্রের কোন সুনির্দিষ্ট বিবরণ তৎকালীন নেতাদের কেউ দেন নি। মনে রাখতে হবে যে মুক্তিযুদ্ধের আগের আন্দোলন মূলত পাকিস্তানের কাছ থেকে দাবী আদায়ের আন্দোলন, কাজেই এই সময়ে স্বাধীন রাস্ট্রের গঠন সম্পর্কে প্রকাশ্য বিবরণ না থাকাটাই স্বাভাবিক। আর মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই যেহেতু বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হয়ে যান, তাই তাঁর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা আর আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করাই যুদ্ধকালীন নেতৃত্বের মূল উদ্দেশ্য হয়ে যায়। যেহেতু মুক্তিযোদ্ধাদের এবং নেতাদের বেশীরভাগই মুসলিম ছিলেন, সেহেতু তাঁদের নতুন রাস্ট্রের ধারনায় ধর্মের একটা স্থান থাকবে এমনটাই ধরে নিতে হবে। ধর্মহীন নয়, বরং একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের ভাবনাই তখন প্রচলিত ছিল বলে মনে হয়।
ইসলামিক দেশগুলোর সমর্থন পাওয়া ইসরাইল-বিরোধিতার উদ্দেশ্য হতে পারে। তবে কেউ ধর্মনিরপেক্ষ হলেই আর ইসরাইলের-বিরোধিতা করবে না এই ধারনা ভুল। যেভাবে একটা জনগোষ্ঠিকে উৎখাত করে ইসরাইল রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা অমানবিক। তবুও নাজিদের নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার ইহুদীদের একটা স্বাধীন দেশ হোক এই সহমর্মিতাবোধ থেকে ইসরাইল রাস্ট্রের সৃষ্টি মেনে নেয়া গেলেও রাস্ট্রটি নিজ সীমার বাইরে আরবভূমির যে অন্যায় দখল করে রেখেছে, এবং তা নিজেদের চিরস্থায়ী করে নেয়ার যে ষড়যন্ত্র করছে তা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
রক্ষীবাহিনীর অনিয়ম সম্পর্কে অনেক অভিযোগ আছে। তবে এধরনের বাহিনী অনেক সময়ই রাজনৈতিক নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণের বাইরের চলে যায়। কাজেই স্বাধীনতা পরবর্তী অস্থির সময়ে কেবল একটি বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের অন্যায় দিয়ে দেশ বা নেতৃত্বের বিচার করা উচিত না। বঙ্গবন্ধু নাস্তিক ছিলেন না, তবে নিশ্চিতভাবেই সাম্প্রদায়িকও ছিলেন না।
অর্নিশা জাহান স্বর্ণা /নরেন সাহা/নঈম মিয়া/ফেমিন খান/শামসুন্নাহার তুষার/বেগুন ভর্তা: ব্লগের নিয়ম মেনে এখানে অংশ নেবেন। এটি সতর্কতামূলক নোটিশ হিসেবে বিবেচনা করুন।
@নরেন সাহা,
ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন নিয়ে ডিটেইলস পড়াশোনা করেছেন এবং ইসরাইলি অবস্থানকে সমর্থন করেন, এমন মানুষ অনেকদিন ধরে খুজছিলাম। আপনি যেহেতু বিস্তারিত পড়াশুনা করেছেন, সুতরাং আমাকে এ বিষয়ে উপর কয়েকটা বইয়ের তালিকা দিয়ে সাহায্য করবেন প্লিজ?
@ নরেন সাহা,
শত বছর ধরে চলা ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত, সংকটের এই বিশাল ইতিহাস কোনো বই না পড়ে, কয়েকটা নিউজপেপার আর উইকিপিডিয়ার আর্টিকেল পড়েই বুঝে ফেলেছেন!!! ভীষণ মেধাবী লোক তো আপনি!
এ্যাথিজম দিয়ে কি আমাকে হাইকোর্ট দেখাতে চাইলেন নাকি? ইসরাইলের নাস্তিকদের পরিস্থিতি ভালো হলে কি বাকি সব কিছু নিয়ে চোখ বুজে রাখতে হবে?
প্যালেস্টাইনের মিডিয়া খারাপ, তাহলে কয়েকটার নাম দিলেন না, নাকি জানেন না?
উইকিপিডিয়ার লিংক কি কোনো বিশ্বাসযোগ্য রেফারেন্স? উইকিপিডিয়ার দুটি আর্টিকেল তুলনা করে আপনার কাছে যেটা ভালো মনে হয়েছে সেটাকে সত্য বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। একই যুক্তিতে উইকিপিডিয়ার বিবর্তন তত্ত্ব মিথ্যা দাবি করে যেই পেইজটা রয়েছে সেটা দিয়েই বিবর্তনকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করে দেয়া যায়।
আচ্ছা যে আর্টিকেলগুলোর নাম দিলেন, সেগুলো নিজেই পড়ে দেখেছেন কি? যেমন ধরুণ হিউম্যান রাইটস ইন ইসরায়েল পেইজটাতে ইসরাইলের ডেমোক্রেসি রেটিং কি দেয়া আছে, সেটা একবার চেক করে দেখুন তো?
গুগলে তো কোরানের অলৌকিকতা দাবি করে হাজারো ওয়েবসাইট আছে। সেগুলোও তো অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে পারে। প্যালেস্টাইনের সপক্ষেও তো ওয়েবসাইটের অভাবে নেই। তাহলে মানেটা কি দাঁড়ালো? আপনার কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা মানদণ্ডটা কি?
আমি তো কোথাও দাবি করিনি প্যালেস্টাইনকে সমর্থন করি ? আপনি যেহেতু ডিটেইলস পড়াশুনা করেছেন বলে দাবি করছেন, তাই আমি শুধু আপনার ইসরাইল প্রীতির পেছনের যুক্তিগুলো জানতে চেয়েছি।
যতদূর জানি উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলের সময়কার ভারতীয় নারীদের চেয়ে ব্রিটেনের নারীরা অনেক বেশি অধিকার ভোগ করতো। সতীদাহ প্রথার কথাই ধরুণ। তাহলে কি একই অজুহাতে দুইশ বছরের ব্রিটিশ শাসন আপনার যুক্তি অনুসারে হালাল হয়ে গেল?
আচ্ছা আপনার গুগলেশ্বরকে জিজ্ঞেস করে দেখুন তো বিকিনি-গার্ল গাল গাদোত কি ইসরাইলে বসে কোনো অ-ইহুদীকে ভালোবেসে বিয়ে করতে পারবে কিনা? ইসরায়েল এ ধরণের বিয়েকে অনুমোদন দেয় কিনা? কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বিকিনি পড়ার অধিকার? নাকি ধর্ম-গোত্র নির্বিশেষে ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করার অধিকার?
বিকিনি পড়ার সাথে যুদ্ধের কি সম্পর্ক? নারীর পোশাক দিয়ে সত্য মিথ্যা যাচাই করছেন দেখছি, আপনি তো মহাশয় ভীষণ সেক্সিস্ট?
এ তো দেখি ‘ক-অক্ষর গোমাংস’। ঐ যে বললাম, বই পড়েননি। গুগলেশ্বরই সার।
আচ্ছা আপনার ধারণা মতে, প্যালেস্টাইনি আরবদের সবাই মুসলিম? ওদের যে একটা বিশাল সংখ্যক ক্রিশ্চিয়ান মাইনরিটি রয়েছে আর ইসরাইল সম্পর্কে ওদের অবস্থান কি সেটা কি আপনার গুগলেশ্বর জানে না? এডওয়ার্ড সাইদের নাম শুনেছেন?
আপনার গুগল সার্চে কি কোনো ইসরাইলি ফিল্টার ব্যবহার করেন নাকি? আমি তো এক সার্চেই পেয়ে গেলাম।
আপনার কি মনে হয়, আপনার মতো বই-পত্র না পড়ে, ৪৮,৫৬,৬৭ আর ৭৩ এর যুদ্ধ, নাকবা, ফাতাহ, হামাস, ইন্তিফাদা,অসলো শান্তিচুক্তি কি তা না জেনে অনর্থক বিতর্ক করতে এসেছি?
নবির পিন্ডি চটকান, ইসলামের পিন্ডি চটকান, তাতে আমার কোনো আপত্তি নাই। তবে ইতিহাস না জেনে শুধু ধর্ম দেখে প্যালেস্টাইনিদের বিচার করবেন না। এটাকে ইংরেজিতে বলে-Bigotry। অর্থটা দেখে নিবেন না জানা থাকলে।
এতো যে ফ্রি উপদেশ দিচ্ছেন, আপনাকেও দুটো উপদেশ দেওয়া ফরজ হয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে যদি জানার আগ্রহ থাকে তাহলে এ সম্পর্কিত বই- একাডেমিক রিসার্চ জার্নাল পড়ুন। আপনার গুগলেশ্বর যদি না জানে তাহলে আমি বইয়ের লিস্ট দিয়ে সাহায্য করতে পারি। ভুল বুঝবেন না, বইগুলো কোনো মুসলিম লিখেনি, সবগুলো বই-ই ইহুদি নাসারাদের লিখা। তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নেবেন।
@নরেন সাহা,
ইসরাইল আসলেই ধর্মনিরপেক্ষ কিনা এবং ওদের দেশে সংখ্যালঘুরা কি পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করে তা না হয় একটু ডিটেইলস পড়াশুনাই করেই বুঝতে পারবেন। বইয়ের তালিকাটা দিয়ে দিলাম। ভালো থাকবেন।
The Question of Palestine by Edward Said
Fateful Triangle: The United States, Israel and the Palestinians by Noam Chomsky
The Ethnic Cleansing of Palestine by Ilan Pappé
The Arabs: A History by Eugene Rogan
Ten Myths about Israel by Ilan Pappé
Image and Reality of the Israel-Palestine Conflict by Norman G. Finkelstein
The Invention of the Jewish People by Shlomo Sand
The Invention of the Land of Israel: From Holy Land to Homeland
by Shlomo Sand
লেখা ভাল হয়েছে।