null

মাশাল খান ছিলেন ২৩ বছর বয়সী একজন মুক্তপ্রাণ চিন্তাবিদ পাকিস্তানী যুবক। এপ্রিলের ১৩ তারিখে তার বিশ্ববিদ্যালয়েরই সহপাঠী ছাত্ররা তাকে এক বিভৎস উন্মাদনায় পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। তার অপরাধ ব্লাসফেমি – ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা। ফেসবুকে মাশাল নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন মানবতাবাদী হিসাবে। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের আব্দুল ওয়ালী খান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে মাশাল খানের লেখা থেকে এটা প্রতীয়মান যে তরুণ প্রগতিশীল মাশাল মানবিক অধিকার, সামাজিক সমতা ও ভিন্ন চিন্তার প্রতি অসহিষ্ণুতা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতেন।

মাশালকে হত্যা করা হল তারই বিশ্ববিদ্যালয়ে যা কিনা একটা জ্ঞানের প্রতিষ্ঠান, যেখানে চিন্তার স্বাধীনতা বিকশিত হবার কথা, যেখানে মানুষের গবেষণা-লব্ধ কীর্তিকে সুরক্ষিত করার কথা, যেখানে মানুষকে ভাবতে শেখানোর কথা। কিন্তু আজ পাকিস্তানে কিংবা অন্য যে কোনো জায়গাতেও – বাংলাদেশসহ – আমরা দেখছি অন্যভাবে ভাবার চিন্তার প্রতি চরম অসহিষ্ণুতা, ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত আনার অভিযোগে হত্যা, হুমকি, নির্যাতন, জেল বা দেশছাড়া করার প্রক্রিয়া। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার এইসব দেশের সরকারি কর্মকর্তারা ও রাজনৈতিক নেতারা তাদের চরমপন্থীদের শাসন করার বদলে মুক্তচিন্তকদের কলমকে সংযত করতে বলেন। তাঁরা যখন ঘোষণা দেন যে তাঁরা কোনো ধরণের ব্লাসফেমি সহ্য করবেন না সেটা মাশাল খান বা অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীদের আরো উৎসাহিত করে। মাশাল খান এবং তাঁর একজন বন্ধুকে (যিনি কিনা এই আক্রমণে নিহত হন নি) যেভাবে ছেঁচড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে নেওয়া হল, গুলি করে, দেহের কাপড় খুলে ইঁট দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হল – এই পৈশাচিক প্রাচীন বর্বরতাকে ‘অনুভূতি’ বলে আখ্যা দেয়াকে আমাদের মানবিক সমস্ত ধরণের মূল্যবোধকে অস্বীকার করারই প্রচেষ্টা।

মাশাল এমন ভাবে খুন হবার ক’দিন আগেই পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ধর্মোন্মাদদের উৎসাহ জুগিয়ে বলেছিলো যে, ইসলামবিরোধী কর্মকান্ড ক্ষমার অযোগ্য আর এই কাজে জড়িতদের কঠিন সুকঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। বাংলাদেশের প্রধানও এই একই ধরনের কথা বলে বেড়াচ্ছেন। জ্ঞাতে অজ্ঞাতে মৌলবাদীদের মৌখিক সমর্থন যোগাচ্ছেন ধর্ম নামের আশ্রয়ে যে কাউকে খুন করে ফেলবার।

নাগরিকের সকল মৌলিক অধিকার ও সেই সব চর্চা এবং প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে আমরা। মুক্তমত প্রকাশের অধিকার, নাগরিকের কথা বলবার অধিকার হরণ করে যারা, তাদের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছে মুক্তমনা।

মাশাল খানের বর্বর হত্যাকাণ্ডে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত এবং এই ঘৃণ্য বেদনাদায়ক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ সহ বিশ্বজুড়ে মুক্তমনের মানুষদের যারা খুন করছে এবং করেছে, যারা এই সব নিরীহ মানুষদের খুন করতে সমর্থন এবং ইন্ধন যোগাচ্ছে তারা সবাই খুনের অভিযোগের আসামি। আমরা এদের বিচার ও শাস্তি দাবি করছি। আমরা অবিলম্বে ব্ল্যাসফেমি বা ৫৭ ধারার মত যে কোন অন্যায় ও কালো আইনের অবসান দাবি করছি।