লিখেছেন: রঞ্জন নন্দী

সুপ্রিয় দর্শক, চ্যানেল ফার্মার এর নতুন অনুষ্ঠান “কৃষক আমার ব্রো, কৃষাণী আমার সিস” এর প্রথম পর্বটি উপভোগ করার জন্য আমি আপনাদের সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি । বাংলাদেশের বিভিন্ন সিটি ও ভিলেজ থেকে এবং পৃথিবীর নানা ফরেন কান্ট্রি থেকে যারা আমাদের অনুষ্ঠান দেখছেন তাদেরকে ধন্যবাদ ।

আপনারা দেখতে [পাচ্ছেন আমি এখন একটি ভিলেজের ক্ষেতখামারের পাশে আইলের উপর দাঁড়িয়ে আছি । আমার সাথে আছেন ক্যামেরাম্যান কুদ্দুস । সংগতকারনেই আপনারা তাকে দেখতে পাচ্ছেন না । কুদ্দুসের ফ্যামিলি মেম্বারদের প্রতি জানাই সমবেদনা ।
আমার বামপাশে একটি শসাক্ষেত চোখে পড়ছে । সবুজের সমারোহে আমরা আপ্লুত । গ্রীন এভরিহোয়্যার । ঐ যে ওখানে একজন ব্রো এবং একজন সিসকে দেখতে পাচ্ছি শসায় হাত বুলাচ্ছেন । এটা সম্ভবত তাদেরই ক্ষেত । আসুন তাদের সাথে আলাপ করা যাক ।

-ব্রো, আপনার নাম?

-জ্বি, আমার নাম লিটন

-এই ক্ষেত কি আপনার?

-জ্বি, আমার

-ওহ, নাইস টু নো । আপনিই তাহলে এই প্রাউড ফার্মার । উনি আপনার স্ত্রী অনুমান করছি । আমাদের চ্যানেলের নতুন অনুষ্ঠান “কৃষক আমার ব্রো, কৃষাণী আমার সিস” এর পক্ষ থেকে আপনাদের একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার নিতে চাচ্ছি । আশা করি আপনাদের কোন আপত্তি নেই?

-না, না আপত্তি কিসের?

-থ্যাংকস । প্রথম প্রশ্ন, এই শসা কি দেশীয় শসা? দেখতে একটু অন্যরকম লাগছে ।

-জ্বি, এগুলো শসা না । এগুলি ঢেঁড়শ

-ওয়াও ! দর্শক, সরি ফর মিসটেক । এগুলি শসা নয়, ঢেঁড়শ । বেসিক্যালি আমি শহরের কিড, তাই ভেজিটেবলস ভালো চিনি না । আশা করি ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন । তো, লিটন ব্রো, কবে থেকে আপনি ঢেঁড়শ চাষ করছেন?

-এইবারই প্রথম, ভাইয়া

-এর আগে আপনি কী করতেন?

-জ্বি, ঢাকা শহরে আমার ফ্ল্যাট আছে । সেটা লাভারসদের কাছে ভাড়া দিতাম । এখনো দেই ।

-ওউ গ্রেট । আপনি তো এই যুগের ভ্যালেন্টাইন । দেখতে পাচ্ছি আমাদের কৃষাণী সিস একটু লজ্জা পাচ্ছেন । তা ব্রো, আপনি ঢেঁড়শ চাষে উৎসাহী হলেন কেন?

-আসলে ভাইয়া আমি নাটক বানাতাম । আমার হাতেই দেশে ভাষাবিপ্লব সাধিত হয় । এই যে আপনি ভাই, বোন না বলে “সিস” “ব্রো” বলছেন, বাংলা সেন্টেন্স-এ ইংলিশ মিশিয়ে দিচ্ছেন এই স্টাইলটা দেশে আমিই পপুলার করি ।

-বাহ ! তারপর?

-ভালোই ছিলাম । ঢেঁড়শ চাষে আসবো ভাবি নাই । কিন্তু এরপরই দেশে লেখক কুপানো শুরু হয় । তখন আমি তাদের লেখালেখি ছেড়ে ঢেঁড়শ চাষের পরামর্শ দেই ।

-আশ্চর্য ! এতো কিছু থাকতে ঢেঁড়শ কেন?

-ঢেঁড়শ আমার প্রিয় সবজি । কিন্তু দাম বেশি হওয়াতে ঢেঁড়শ কিনলেই বউয়ের বকা খেতাম । তাই চিন্তা করলাম দেশে যদি ঢেঁড়শ চাষীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তবে দাম কমবে । এইজন্যই ঢেঁড়শের নাম বলা ।

-গ্রেট ! তারপর?

-তারপর আর কী? যখন প্রায় সব লেখক মারা শেষ, তখন তাদের চোখ পড়লো নাটক আর সিনেমার দিকে । আমাকে বেনামে ফোন করে বললো, নাটক বানানো অধার্মিকের কাজ । আমার বউকে বললো অভিনয় করা যাবে না । তাদের কথা না শুনলে দুইজনরেই কুপায়া দিবে ।

-বলেন কী !

-জ্বি, তখন নাটক বানানো ছেড়ে দিব ভাবলাম । এরমধ্যে আমার পরামর্শে যে সব লেখক ঢেঁড়শ চাষে নেমেছিলো তাদের ঢেঁড়শ বাজারে আসলো । কিনতে গিয়ে দেখি সেগুলি ঢেঁড়শ নামের কলঙ্ক । সব বরবটির মতো চিকন । তাছাড়া পিছলা কম ।

-স্যাড ! তারপর?

-তখন নিজেই নাটক বানানো ছেড়ে ঢেঁড়শ চাষে নামলাম । দেখতেই পাচ্ছেন এখানেও আমি সফল । ঢেঁড়শের সাইজ হয়েছে শসার মতো ।

-ওহ গ্রেট ! ইউ আর আ প্রাউড ফার্মার ।

দর্শকমন্ডলী, আপনারা সফল ঢেঁড়শচাষী, প্রাক্তন নাট্যনির্মাতা, ভাষাবিপ্লবী এবং ফ্লাটমালিক লিটনের ইন্টারভিউ দেখলেন । এখন বিজ্ঞাপন বিরতি । কুদ্দুস ক্যামেরা অফ করো ।

(ক্যামেরা অফ হলো )

. ভাই, লিটন ভাই । আমারো একজন লাভার আছে । বুঝেনইতো ম্যারেড লাইফে কোন চার্ম নাই । আপনার ভাবীও আগের মতো রোমান্টিক নাই । তাই বুঝতে পারতাছেন …

. বুঝছি উপস্থাপক ভাই । নো প্রব্লেম । আপনার জন্য আমার ফ্লাটের ভাড়ায় টুয়েন্টি পার্সেন্ট ডিস্কাউন্ট । যে কোন সময় লাভার সহ আপনি আমন্ত্রিত । সাথে বোনাস হিসেবে ঢেঁড়শ ভাজি ফ্রি ।

ইউ আর গ্রেট লিটন ভাইয়া ! ইউ আর গ্রেট !!!