প্রতিটা সার্থক প্রেমের গল্পের চেয়ে ব্যতিক্রম কোন গল্প ছিল না পল্লবী রায়ের। সময়টা ছিল বসন্তের। প্রকৃতিতে প্রেম আর স্নিগ্ধতার নুতুন আবেশ নিয়ে সেবার এসেছিল একটা অদ্ভুত বসন্ত। সেই বসন্তের এক পড়ন্ত বিকেলে কলেজ থেকে ফেরার পথে রাস্তার মোড়ে পল্লবীর সামনে দাঁড়িয়েছিল সুরুজ। একটা গোলাপের তোড়া এগিয়ে দিয়ে হাটু গেঁড়ে রীতিমত সিনেমাটিক ষ্টাইলে বলেছিল সেই চিরচেনা সংলাপ -আই লাভ ইউ পল্লবী। হতভম্ভ পল্লবী সে যাত্রায় একটা মিষ্টি হাসি দিয়েই পার পেলেও সুরুজের প্রেমের সম্মোহনী দৃষ্টি তাকে খুঁজে ফিরতো সবসময়, হোক না সেটা কলেজের গেট কিংবা বাসার বারান্দা। মেয়েরা ক্ষমতাবান পুরুষদের প্রেমিক হিসেবে দেখতে পছন্দ করে। আমাদের সুরুজও ক্ষমতাবান পুরুষ। সুযোগ্য পিতার সুযোগ্য সন্তানও বটে। সুরুজের পিতা সরতাজ উদ্দীন কদমপুরীর নামের আগে মাওলানা থাকলেও তিনি এখন লীগ পার্টির উপজেলা কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক। এক কালে দল পার্টি করেছেন, এখন লীগ পার্টি করেন। যৌবন কালে কিছুদিন রাজাকারিও করেছেন বলে এলাকায় প্রচার আছে। উপজেলার সরকারী কলেজের ছাত্র নেতা হলেও প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার অধিকারী বলে সুরুজের সুনাম আছে। একাধারে শিল্পকলা একাডেমীর সহ সম্পাদক ও উপজেলা নাট্য সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাদের সুরুজ দেখতে শুনতেও মন্দ নয়। এমন ক্ষমতাবান কোন সুদর্শন পুরুষকে প্রেমিক হিসেবে পেলে যে কোন মেয়েরই বর্তে যাওয়ার কথা। পল্লবীর ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। ধর্মের পার্থক্য ভুলে তাই খুব অল্প দিনেই সুরুজের প্রেমে একেবারে গলে পড়েছিল পল্লবী। সুরুজের ডাকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রাস্তার মোড়ে ফুচকা খাওয়া থেকে শুরু করে পার্কের ঝোপের আড়ালে পরষ্পরকে ঘিরে জড়াজড়ি করা, আহা! কী সব দিনই ছিল সেসব! মাঝে মধ্যে প্রবল আবেগে পল্লবীকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী গলায় বলত সুরুজ-জানপাখি, তুমি আমারে বিয়া করবা তো?
সুরুজের আহ্লাদকে কয়েক গুণ স্ফীত করে উত্তর দিত পল্লবী-করুম মানে একশ এক বার করুম।
-কও তাহলে একবার আই লাভ ইউ?
আই লাভ ইউ ,আই লাভ ইউ, একশ এক বার আই লাভ ইউ বলে হি হি করে হেসে উঠতো পল্লবী। পল্লবীর হাসির ধ্বনি প্লাবিত নদীর ঊথাল ঢেউয়ের মত করে সুরুজের হৃদয়ে আঘাত হানতো, জন্ম দিত সুখ দুঃখের মাঝামাঝি একটা অদ্ভুত চেতনা বোধ। অনন্তকাল সেই হাসিতে মাখামাখি হয়ে থাকতে চাইতো সুরুজ। সুরুজের মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে পল্লবী সেদিন বলেছিল- আচ্ছা জান, তোমার আমার বিয়া কি আমাগো পরিবার মাইনা নিব?
-আব্বায় মানে কিনা এইটাই হল সমস্যা। আর তোমার বাপে না মাইনা যাব কই, কাইটা নদীত ভাসায় দিমু না?
-ছি জান এগুলান কি কও? হাজার হলেও তোমার শ্বশুর লাগে না?
-হ শ্বশুর! আর কেউ মানুক কিংবা না মানুক তোমারে আমি বিয়া করুম এইটাই হল ফাইনাল। সুরুজ মিয়া কারো ধার ধারে না।
সুরুজ মুখ থেকে বের হওয়া এই কথা টিকে কোন অমৃত বানীর চেয়ে কম বলে মনে হয় না পল্লবীর। সুরুজের ভালবাসায় নিজের জীবনের পরম সার্থকতা খুঁজে পায় পল্লবী। তাইতো প্রবল আবেগে কান্না ভেজা স্বরে তার কন্ঠে উচ্চারিত হয়-এই জন্যই তো তোমারে আমি এত ভালবাসি জান।

এভাবেই দিনের পর দিন মাসের পর মাস পল্লবী ও সুরুজ তাদের সোনালী স্বপ্নের জাল বুনত যে বুননের প্রতিটা সুতোর জোগান দিত মুঠোফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথোপকথন। গ্রীষ্মের ক্লান্ত দুপুর গড়িয়ে বর্ষার সিক্ত সন্ধ্যা নামতো, শরতের শোভিত বিকেল শেষে আসতো শীতের হিম তবুও থামতো না সুরুজ পল্লবীর প্রাগৈতিহাসিক যুগের কথোপকথন। ঘটনাটা ঘটেছিল এক শ্রাবণের বর্ষায় । বর্ষার এক ভেজা বিকেলে স্কুল ঘরের পিছনে তাদের চিরচেনা অভিসারের জায়গাটিতে পরষ্পরের মুখোমুখি হয়েছিল পল্লবী ও সুরুজ। মাথাটাকে খানিকটা নিচু করে ম্রিয়মান কন্ঠে সুরুজ বলেছিল- জান পাখি তোমার আমার বিয়া তো আব্বা জীবনেও মাইনা নিব না।
সুরুজের বাবা মাওলানা সরতাজউদ্দীন কদমপুরী যে কোন হিন্দু ঘরের মেয়েকে ঘরের বউ হিসেবে মেনে নিবে তা এত কাল ভাল করেই জানতো পল্লবী। সে শুধু অবাক হয়েছিল সুরুজের অজানা অচেনা ম্রিয়মান কন্ঠে। অবাক ভঙ্গীতে বলেছিল- হু, তো এখন কি করা যাবে?
-শুধু একটা শর্তেই আব্বা বিয়াটা মাইনা নিতে পারে।
-কি শর্ত ?
-যদি তুমি হিন্দু ধর্ম ছাইড়া মুসল মান হও, চিন্তা করো এতে আমাগো বিয়াটাও হইলো আর তুমিও কুফরী ধর্ম ছাইড়া সত্য ধর্মের পথে আসলা। তোমারে মুসলমান বানাইতে পারলে আমারও জান্নাত মোটামুটি কনফার্ম।
– এই কথা কইতে তোমার লজ্জা লাগে না? ভালবাসা কি আমরা ধর্ম বুইঝা করছি ? আমি কি কখনো কইছি তোমারে হিন্দু হইতে তাইলে আমি ক্যান মুসলমান হমু ?
পল্লবীর অগ্নিমূর্তিতে হতভম্ভ হয় সুরুজ। এক দৃষ্টিতে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে এ কোন পল্লবী? এমন পল্লবীকে তো সে দেখেনি কখনো আগে? মফস্বল শহরের সহজ সরল মেয়ে পল্লবীর যে এমন রুপ আছে সেটাই বা কে ভেবেছিল? তবে কি পল্লবীকে চিনতে তার কোন ভুল হয়েছিল? পল্লবীর কন্ঠে সেদিন দ্রোহের সুর। যে দ্রোহ প্রবল শক্তিতে চ্যালেঞ্জ করে আমাদের আবহমান পুরুষতান্ত্রীক সভ্যতার প্রতিটা কঠিন বাস্তবতাকে, ভাংতে চায় সংকীর্ণতার দীর্ঘ দেয়াল। নিমেষেই ছুঁড়ে ফেলতে চায় আমাদের সহস্র বছরের লালিত পুরনো পুরুষতান্ত্রীক মুল্যবোধগুলোকে। পল্লবীর করা একটা প্রশ্নই সেদিন সহস্র প্রশ্নরুপে পুরুষতান্ত্রীকতার মুখোমুখি দাঁড়ায়। পুরুষতন্ত্র এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না, উত্তরও দিতে চায় না, সে শুধু চায় তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে। অস্তিত্বই তার কাছে পরম ধর্ম। দিন শেষে আমাদের সুরুজও তো পুরুষতন্ত্রের অংশ ফলে স্বভাবতই পল্লবীর করা প্রশ্ন “ভালবাসা কি আমরা ধর্ম বুইঝা করছি তাইলে আমি ক্যান মুসলমান হমু” আঘাত হানে তার পুরুষতান্ত্রীক অহংবোধে। ক্ষ্রিপ্ত গলায় সে শুধু বলে- এই ছেমড়ি, যা কইতাছি শোন। না হলে কিন্ত…
– নাহলে কি?
-না হলে আজ থেকে তোর লগে আমার রিলেশন ব্রেক আপ ।
-ঠিক আছে, ব্রেক আপ কইলে ব্রেক আপ।

২)
আজকালকার ছেলে মেয়েদের ব্রেক আপের দুঃখ ভুলতে সময় লাগেনা, পল্লবীরও লাগেনি। পরদিন স্বাভাবিক ভাবেই কলেজে গিয়েছিল সে। ক্লাসের এক ফাঁকে সে আবিস্কার করে ক্লাসের ছেলে মেয়ে সবাই যেন কেমন নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করছে। আচ্ছা ফিসফাসটা কি তাকে নিয়েই হচ্ছে? ক্লাসের বিরতিতে বাথরুমে যাবার কথা বলে বান্ধবী সোমা তাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল এক কোণায়। মুঠোফোনে একটা ষ্টিল পিকচার বের করে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে সে বলেছিল -দেখ তো পল্লবী এইটা কি তুই?
সে ছবির দিকে হু হু করে কেঁদে ফেলেছিল পল্লবী। কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল – বিশ্বাস কর, এইটা আমি নই। কেউ ফটোশপ কইরা আমার ছবি লাগাইছে।
-কিন্ত কে করলো এই কাম?
-জানি না।
-ঠিক আছে তোর আর ক্লাস কইরা কাম নাই। বাড়ি চইলা যা।

সে রাতে ঘরে ফিরে দরজা বন্ধ করে অঝোরে কাঁদার সময় দু একবার আত্নহত্যার ভাবনা মাথায় এসেছিল পল্লবীর। কিন্ত কেন আত্নহত্যা করবে সে? কি তার অপরাধ? যদি তার কোন অপরাধ নাই থেকে থাকে তবে অন্যের অপরাধে কেন সে নিজেকে শাস্তি দেবে? কান্নায় ভিজে সে রাতে দৃঢ থেকে দৃঢতর হয়েছিল পল্লবীর আত্নমর্যাদাবোধ। যারা এই অপরাধ করেছে তাদের একটা বিহিত করবেই সে। পরদিন সকালে নিজে একা থানায় চলে গিয়েছিল পল্লবী। সেদিন থানার দায়িত্বে ছিলেন সদ্য চাকরীতে যোগ দেয়া দারোগা কামরুল। দারোগা সাহেব বয়সে তরুণ, রক্ত গরম। বাংলা সিনেমার আদর্শ পুলিশ অফিসার হবার স্বপ্ন তার বহু দিনের। সিনা টান করে নায়কোচিত ভঙ্গীতে তিনি বললেন -আপনি কোন টেনশন কইরেন না আপা। হারামজাদা যতই পাওয়ার ফুলই হোক দুই দিনের মধ্যে ওকে যদি জেলের ভাত না খাওয়াইছি তাহলে আমার নাম কামরুল না, আমার না জামরুল।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি ঠিকই দুই দিনের মধ্যে সুরুজকে জেলে পুরলেন। এদিকে ঘটনার নিয়ন্ত্রণ ততক্ষণে চলে গেছে ওসি মোতালেবের কাছে। মোতালেব সাহেবের খাদ্যে অরুচি নাই, ঘুষের কথা তাই বলাই বাহুল্য। ঘটনা জেনেই পল্লবীর বাবা যোগেশ রায়কে ফোন করে থানায় ডেকে তিনি বললেন -দেখেন মেয়ে তো আপনার ,মেয়ের বিয়ে দিতে হবে না। ওনারা পাওয়ারফুল লোক। এই থানা পুলিশ আর কোর্ট কাচারি কইরা আপনার কোন ফায়দা আছে? ওরা কিছু টাকা পয়সা দিতে চায়। আপনারা আপস রফা কইরা ফেলেন।

যাই হোক, ওসি মোতালেবের মধ্যস্থতায় সুরুজের সঙ্গে আপস রফা হলে পাড়া প্রতিবেশী আর বন্ধু বান্ধবের তীব্র কটাক্ষের সঙ্গে তো আর পল্লবীর আপস হয় নাই। তাই রাস্তায় বের হলেই “পুরাই পাংখা মাল”, “কিরে কত নিবি” টাইপের মধুর বাণী তার দিকে ঠিকই ভেসে আসতো। ফোনটাকেও তাই দিনের অধিকাংশ সময় বন্ধ করে রাখা ছাড়া উপায় ছিল না। মাঝে মধ্যে অন করলে তাতে ভেসে উঠত সুরুজের ম্যাসেজ- “আমি তো তোর লগে লাভ জিহাদ করছি কিন্ত তুই শালী সেটা বুঝলি না। আমার মান ইজ্জত ডুবাইছ। এর পরিনাম তোরা গুষ্ঠী শুদ্ধা ভুগবি, শালী মালাউনের বাচ্চা”।

এই সব হুমকি ধামকিকে পাত্তা দেওয়ার কোন কারণ নেই আর মেয়েদেরও অভিযোজন ক্ষমতার কোন তুলনা নেই। আমাদের পল্লবীও তাই খুব অল্প দিনেই এই সব গালি গালাজ আর তীব্র কটাক্ষের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেল। একটু আকটু পড়া শোনা আর অনেক বেশি ষ্টার জলসাকে কেন্দ্র করে তার দিন গুলো বেশ ভাল ভাবেই কেটে যেতো। এদিকে আর তর সইছিল পল্লবীর পিতা যোগেশ রায়ের। কুমারী মেয়ে ঘরে বেশি দিন রাখলে নাকি সংসারের অমঙ্গল হয় আর তার উপর মেয়ের যে বদনাম তাতে এই মেয়েকে বিয়ে করবে কে? অবশেষে অনেক কষ্টে পাঁচ লাখ তাকা যৌতূকে এক শুভ লগ্নে মধ্যবয়সী এক কাপড় ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে ঠিক হয় পল্লবীর। প্রথমে না না বললেও বাবা মার মুখের দিকে তাকিয়ে কিংবা প্রতিবাদের অক্ষমতায় বিয়েতে হ্যা বলা ছাড়া আর উপায় ছিল না পল্লবীর। ঠিক এরই মধ্যে এক দিন সরকার পাড়ার লোকজন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আবিস্কার করে তাদের পাড়ার শ্রী শ্রী জগত জ্যোতি মন্দিরের বিখ্যাত কালী মূর্তিটি মাথা বিহীন অবস্থায় সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। মাথাটা যে পাওয়া যায়নি তা নয়, পাওয়া গিয়েছিল মন্দির থেকে দশ হাত দুরের এক পচা নর্দমায়। নর্দমার কালো জলে ডুবে কৃষ্ণ থেকে কৃষ্ণতর হয়ে ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় সে তার সর্বময় ক্ষমতার জানান দিচ্ছিল। ঘটনার আকস্মিকতায় সেদিন বিকেলে যোগেশ রায়ের বাড়িতে পাড়ার লোক জনের মিটিং বসেছিল। রমেশ সরকার বলেছিল- কি ব্যাপার যোগেশ দা, এইটা কিসের আলামত? আগে তো কোনদিন এই জিনিস দেখি নাই।
ভবেশ পাল বলেছিল -আজ মূর্তি ভাংছে, কাল যে আমাগো ঘরবাড়ি ভাংবো না তার কি কোন গ্যারান্টি আছে?
রামচন্দ্র বলেছিল- এই খানে বউ বাচ্চা নিয়া আমরা ঠিকমত থাকতে পারুম তো?
লোকজনের ক্রমাগত ফিসফাসকে ঠান্ডা করতে এগিয়ে এসেছিল যোগেশ সাহা। দরাজ কন্ঠে বলেছিল – ভাই লোক এত দুশ্চিন্তা নেওনের কিছু নাই। ভাংলে তো একটা মূর্তিই ভাংছে। মূর্তি আমি গইড়া দিমু। মাথার উপর ভগবান আছে না, কি আর হইবো?

মাথার উপর ভগবান থাকুক বা না থাকুক কিছু একটা সেবার ঠিকই ঘটেছিল। এক বিকেলে বান্ধবী সোমার বাড়ি থেকে ফেরার পথে পল্লবীকে খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না। যোগেশ রায় পাগলের মত আত্নীয় স্বজনের বাড়ি থেকে থানা পুলিশ সব জায়গায় ছোটাছুটি করেছিল কিন্ত না কোথাও পল্লবী নেই। সে রাতে পুরোনো এক স্কুল ঘরের অন্ধকার কুঠরীতে এক ঝাক হিংস্র শরীর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পল্লবীর শুভ্র শরীরের উপর। অনেক শরীরের ভিড়ে একটা শরীর চিনতে সেদিন মোটেও অসুবিধা হয়নি পল্লবীর, যে শরীরের মায়াবী স্পর্শ পাবার জন্য এক সময় সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো, যে দেহের প্রখর মাদকতা ময় গন্ধ এক সময় তার শরীরের প্রতিটা শিরায় উপশিরায় যোগাত প্রেমের অদ্ভুত শিহরন। সেই শরীর, আজ ঠিক কতদিন পর!

পরদিন সকালে এক ধান ক্ষেতের পাশে লোকজন খুজে পায় পল্লবীর রক্তাক্ত নিথর দেহ। কি আশ্চর্যের ব্যাপার! সেটাও ছিল ঘাসের কোণায় শিশির জমা বসন্তের এক অলস সকাল। না, পল্লবী মরেনি। জীবন্মৃত হয়ে কোন রকমে বেঁচে গিয়েছিল তবে যোগেশ রায় এবার আর কোন ভুল করেনি। সব সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে তল্পি তল্পা গুছিয়ে পরিবার নিয়ে চলে গিয়েছিল জলপাইগুড়ি, এক পিষীর বাড়ি। আর ভাল কথা, সেই বসন্তে কিন্ত ফুল ফুটেছিল। পাখিরা গান গেয়েছিল। কবিদের উপচে পড়া আবেগ ঠাই নিয়েছিল দিস্তার পর দিস্তা কাগজে। অন্তত একদিনের জন্য বাসন্তী সাজের তরুণীদের দখলে গিয়েছিল নগরের রাজপথ, সব নুতনত্বের উন্মাদনাকে উপেক্ষা করে নগরের ব্যস্ত মানুষ মেতেছিল যাপিত নাগরিক ব্যস্ততায়। শুধু কোন এক পল্লবীর জীবনের বসন্তটা সেবার দীর্ঘ হয়েছিল, সেটা ছিল রক্তিম বিষাদ মাখা একটা অবাক বসন্ত …