ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার তান্ডবের ঘটনা যে ছবি পোষ্ট করা দিয়ে শুরু তার কালপ্রিট হিসেবে একজনের নাম মিডিয়ায় আসছে। নাম খুব বড় কথা নয়; একজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিহীন জেলে ফটোশপ কারিগরি করে এটা হজম করা বেশ কঠিন। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাতেও রোষ পূর্ন হয়নি। কারও কাণ্ডজ্ঞান কাজ করেনি, এমনও নয় যে অভিযোগ আসার পর রসরাজ অন্যান্য বহু মামলার আসামীর মত গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, পুলিশ তাকে ধরছিল না। হিংস্র হুংকার সহযোগে মিছিল মিটিং করে সত্যের সেনানীরা আহত অনুভূতি চিকিৎসার চেষ্টা করছিলেন, যার ফলশ্রুতি হিসেবে যা ঘটার ঘটেছে। নেপথ্যে সরকারী দলের স্থানীয় রাজনীতির নোংরা খেলা কাজ করেছে। কিন্তু ব্যাবহার করা হয়েছে সেই অতি পরিচিত ধর্মানুভূতি নামক পাশবিকতাকে। হাজার হাজার লোকে প্রকাশ্য দিবালোকে যা করে তাকে অল্প কিছু দুষ্ট লোকের আচরণ বা গোপন ষড়যন্ত্র বলা যায় না। স্থানীয় নোংরা পলিটিক্স পেছনে কাজ করলেও যারা সোৎসাহে সেদিন এই জান্তব উল্লাসে মেতে উঠেছিল তাদের বেশীরভাগই নিঃসন্দেহে ষড়যন্ত্রের খবর জানতো না (ষড়যন্ত্রের খবর কেউ হাজার হাজার লোকের কানে কানে বলে না), তাদের তাড়না ছিল একটাই, মালাউন ঠেঙ্গানো, মুফতে কিছু লুটপাট হল বোনাস। দরকার শুধু ধর্মানুভূতি আহত হবার যে কোন অজুহাত, যা তৈরী করে দেবার লোকের অভাব নেই। ইচ্ছে থাকিলে উপায় হয় বলে কথা।।
আচ্ছা, যারা রসরাজকে জেলে পুরেও মাইক সহকারে মিছিল মিটিং করে লোকজনকে উত্তপ্ত করেছিলেন (তাদের দাবীমত ধরে নিচ্ছি তারা কেউ আক্রমণে ছিলেন না) তাদের মধ্যে কি সামান্যতম কোন অপরাধবোধ এখন জেগেছে? যদি জেগে থাকলে তাহলে তার প্রকাশটা কোথায়? অনুভূতি আহত হবার প্রকাশ তো সারা দুনিয়া হাঁড়ে হাঁড়ে টের পায়। দুঃখিত হবার অনুভূতি জানা যায় না কেন? সেই ইউএনও সাহেব যিনি সরকারী কর্মচারী হয়েও এসব উষ্কানিমূলক সভা সমিতিতে ঈমানী জোশে সশরীরে যোগ দেন তিনিও কি আসল ঘটনা জানার পর ন্যূনতম কোন অপরাধবোধ অনুভব করছেন? ওনারা যদি অপরাধবোধে না ভোগেন তাহলে তার কারণ কি? কোন মসজিদে কি ক্ষতিগ্রস্থ হিন্দু পরিবারগুলির জন্য দোয়া চেয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়েছে? ধর্ম ছাড়া নাকি নৈতিকতাবোধ হয় না। এই ধরনের নৈতিকতাবোধ সম্পর্কে নিরপেক্ষভাবে কেমন মূল্যায়ন করা যায়?
এক সময় ইউরোপ আমেরিকায় উইচ হান্টিং এর নামে অসংখ্য নিরীহ মানুষ নির্মম অত্যাচার করে মারা হয়েছে। আধুনিক যুগে বিশেষ কিছু সমাজে একই কায়দায় উইচ হান্টিং চলছে। দরকার শুধু অভিযোগের (ডাহা মিছে হলেও কিছু যায় আসে না) ব্যাস, বাকি সব আপনা আপনিই ঘটতে থাকে। মধ্যযুগের উইচ হান্টিং এ অন্তত পরিবারের সদস্য বা পাড়া প্রতিবেশীর সাজা পেতে হত না, প্রহসনের হলেও একটা কেতাবি বিচার হত। আধুনিক যুগের উইচ হান্টিং এ ভুগতে হয় হাজারো মানুষকে। সবচেয়ে বিস্ময়কর হল যারা এসব ঘটায় কিংবা সমর্থন করে তাদের কোন রকম বিবেকবোধের পরিচয় পাওয়া যায় না, এবসোলিউটলি নো রিমোর্স। শুনতে খারাপ লাগলেও মূল কারণ হল তারা নিজেদের ঈশ্বর মনোনীত শ্রেষ্ঠ জাতির সদস্য হিসেবেদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বেহেশতে যাদের স্থান নির্দিষ্ট। দুই চার মালাউন বাই মিস্টেক ভুগলে তাদের দূঃখবোধের কোন প্রশ্ন সংগত কারনেই আসে না। হিংস্রভাবে ধর্মানূভূতির প্রকাশ ঘটিয়ে আল্লাহর অলি হওয়া দিয়ে কথা। হাঁকডাকের সাথে কাফের মুশরিকের সাথে জংগ জিহাদে সামিল না হলে আল্লাহপাক বান্দার অস্তিত্ব টের পাবেন কি করে? কাফের মুশরিকও চালাক হয়ে গেছে, তারা যে সব সময় যুদ্ধ করতে চাইবে এমন তো নয়, তাই নিজ দায়িত্বে যুদ্ধময় পরিস্থিতি বানিয়ে না নিলে উপায় কি?
যুদ্ধের যে মূল কাঁচামাল, অর্থাৎ শ্রেষ্ঠত্ববাদে ভোগার ধর্মীয় জোশ তা গোটা সমাজই ভালভাবে লালন পালন প্রচার পরিবেশনা করে, যদিও যুতমত যেভাবে বিলকুল কিছুই জানি না অভিনয় করতে পারে সেও এক দেখার মত দৃশ্য। ’৬৪ সালে ভারতের হযরতবাল মসজিদ থেকে নবীজির এক চুল চুরি যাওয়ার সংবাদে হাজার মাইল দুরের বাংলার মোমিনদের অনুভূতি আহত হওয়ায় প্রান যায় কয়েক হাজার হিন্দুর, ধর্ষিতা, নিরাশ্রয় হয় কত হাজার নিশ্চিত বলা যায় না – কারন হল ১৪০০ বছর আগে বিগত একজন মানুষের চুল চুরির সংবাদ। ভাবা যায়? এই অনুভূতিকে কিন্তু সম্মান জানাতে হবে, এই অনুভূতির বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যাবে না। হাজার হাজার লোকে এভাবে ছূতা বেছূতায় দিনে দুপুরে তান্ডব করতে পারে, কিন্তু এসবের মাঝে ধর্ম বা ধার্মিক কারোই কোন দায় খোঁজা যাবে না। সহি ইসলামে কোথাও কিছু নাই……সহি ধার্মিক এইসব করতেই পারে না। দূষ্ট লোকে নাস্তিক হয়ে গিয়ে লুটপাট চালায়। ব্যাস, মামলা খারিজ। যাবতীয় দায় রাজনীতির, সম্পদের লোভের, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের। ভাগ্য ভাল খুব বেশী দেশে নবীজির চুল নেই।
ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা এবং কুপিয়ে মানুষ মারার মাঝে কোন তফাত নেই জাতীয় বক্তব্য যারা নানান কায়দায় দিয়ে এই হিংস্র অনুভূতি বাড়াতে অজ্ঞাতসারেই ভূমিকা রেখেছিলেন তারাও কি কখনো বিবেকের তাড়না অনুভব করেন? নাকি এখনো শুধু ইহা সহি ইসলাম নহে, কোরানে এই লেখা নেই এই লেখা আছে, বিদায় হজ্জ্বের বানী কত মধুর এইসব বলে বলে বিবেকের দায় এড়াবেন এবং সাথে মুফতে জনপ্রিয়তাও কুড়াবেন? নির্মম সত্য হল অশিক্ষিত ধর্মব্যাবসায়ী, কাঠমোল্লা, মৌলবাদী হেনতেন বলে যাদের ওপর যাবতীয় দায় চাপানো হয় সেই শ্রেনীকে লালন পালন করেন এই এলিট ইন্টেলেক্ট শ্রেনীই। পাপ বাপকেও ছাড়ে না, এক সময় দেখা যাবে।
এই যুগ যে উইচ হান্টিং যুগ নয়, আধুনিক সভ্য জগতে এই রকম তুচ্ছ ছূতা বেছূতায় তান্ডব ঘটানো যে অসভ্য বর্বরতা সেটা কি ওনারা বোঝেন? গোটা দুনিয়া যেখানে জাত, পাত, বর্ন ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কমাতে সচেষ্ট সেখানে ওনারা আবেগ অনুভূতির আতিশায্যে মধ্যযুগীয় মূল্যবোধের যে জগত ফিরিয়ে আনার পায়তারা করেন তার পরিনতি কি কোনদিন চিন্তা করেন?
মনের মধ্যে একটা দুখঃ ও পরিতাপ হল, এইসব মানুষ কবে মানুষ হবে? ধর্মের জিগির তুলে মানুষ মেরে মানব ধর্ম পালন করে নাকি? এরা কারা ? আকাশে পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, চাঁদের কলঙ্ক কি ?
জানতে চাই
আমি ইউ টিউবতে আমি মাঝে মাঝে বাংলাদেশের নাটক/ টেলি ফিল্ম দেখি। কয়েকটি তো খুব ভালো। কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করেছি ওই নাটক গুলোতে ১) রবীন্দ্র নাথ কে খুব সুন্দর ভাবে প্রয়োগ করা হয় ২) পারিবারিক বন্ধনকে সব সময় মহিমান্বিত করা হয় এবং ৩) ধর্মনিরপেক্ষতাকে সবসময় আদর্শ করা হয় ।
ওই নাটক গুলো সর্বসাধারণের জন্য তৈরি করা হয় এবং টেলিভিশান তে দেখান হয়। তা হলে তার প্রভাব কেন সমাজ জীবনে পড়ে না । বা পড়লেও কতটা পড়ে ? যারা বিনা কারনে বা সামান্য কারনে পরধর্মকে অবমাননা করে, তাদের উপাসনা স্থান অপবিত্র করে তারা কি এই নাটক গুলো দেখে না? যারা এই গুলো দেখেও নিরব থাকে তারাও ওই নাটক গুলো দেখে না ?
আদিল ভাই, ‘দূখাঃনুভূতি ‘ এর কি কোন আলাদা অর্থ আছে? এ কি দুখা বা দুঃস্থ থেকে?
তবে উদাহরণ হিসেবে ধর্মানুভূতির প্লটগুলোর বাছাই প্রাসঙ্গিক । আমাদের দুঃখানুভূতি জেগেছে, কিন্তু দুঃখজনক হলো—– এ নিয়ে যাদের দুঃখানুভূতি জাগ্রত করতে চান তারা এ লেখা পড়বেই না।
যাহোক, দুঃখানুভূতি জাগানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।
মদিনা সনদের দেশে এর ব্যতিক্রম কিছুর স্বপ্ন দেখাও অসম্ভব।
সনদের সুবাস আসা সবে শুরু।
দিনশেষে সকল মুসলমান ধার্মিক হিপোক্রেট। হিন্দু রসরাজ ফটোশপ করলে এদের ধর্মের খুঁটি নড়বড়ে হয়ে যায়। মুসলমান ধার্মিক জাহাঙ্গীর করছে বলে এদের ধর্মীয় অনুভুতির খুঁটির পজিশন নড়বড়ে হয় না। মুসলমান জাহাঙ্গীরের ফটোশপ করা কাবার ছবিটি দিয়ে ফেসবুক সয়লাব করে দেওয়া হোক।
শ্রেষ্ঠত্ববোধের অহংকার ইন জেনারেল মানুষের সূস্থ বিবেকবুদ্ধি মানবিকতাকে অনেকাংশে ঢেকে রেখেছে।
আজকের বাংলাদেশের মানুষগুলো এই তো মাত্র কয়েক যুগ আগেও তো বেশ ভালোই ছিলো। কি হয়ে গেলো এদের? আগে তো এরা ধর্মের কারণে অন্তত পরস্পরকে ঘৃণা করতো না। বিদেশী অতিথিদের আদর যত্ন করতো। অথচ আজ চোখের সামনে বড় বড় অন্যায়গুলো নির্বিকারে কি করে এরা হজম করে ফেলে? গুলশানের হলি আর্টিজানে এতগুলো বিদেশী মানুষকে খুন জবাই করে ফেললো বাংলাদেশে জন্মানো ছেলেগুলো; কই আসলে কি বাংলাদেশের মানুষ মন থেকে নিন্দা করেছে? ওরা কি জানে বাংলাদেশ কি বিপুল পরিমান ঘৃণ্য হয়েছে সভ্য জগতের চোখে? বাংলাদেশ কি সত্যিই করেছে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ? এতো হিন্দু নাগরিককে মেরে-কেটে লুটেপুটে নিচ্ছে, তাড়িয়ে দিচ্ছে স্রেফ ইসলামী ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে? আসলেই কি বাংলাদেশের মানুষ এতটাই রোবট হয়ে গেছে যে তাদের যা শেখানো হয়, যা করতে বলা হয় তারা তা’ই করে চলে? তা’হলে এই চকমকে বাংলাদেশের কি কোন মূল্য আছে? বাংলাদেশের মানুষরা কি সত্যিই আর মোহমুক্ত হবে না?
কখন কি দেখা যাবে জানি না তবে এইটুকু জানি বাংলাদেশের মানুষ এখন যেন জাদুগ্রস্হ। ওরা এক একজন এখন দম দেওয়া এক একটা বিধ্বংসী টাইমবোম্ব; একসাথে ফেটে পড়বার অপেক্ষায় আছে মাত্র, যেমন ফাটছে আজ আফগানিস্তানে, পাকিস্তানে, ইরাক সিরিয়াতে।
উগ্র জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হলে এমনই হয়। একশনে হয়ত যায় অল্প কিছু লোক কিন্তু মৌন সমর্থন করে এক বড় পুপুলেশন। সবচেয়ে মারাত্মক হল যেহেতু মানসিকভাবে নৈকট্য বোধ করে না সেহেতু বড় পপুলেশন অন্য সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার নির্যাতন উদাস চোখে দেখে, বড়জোর কাগুজে বিবৃতি দিয়ে দায় সারে।
ব্রাম্মণবাড়িয়া রিলিফ দিতে গিয়ে সেখানকার ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করার দূর্ভাগ্য আমার হয়েছে। একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িও অবশিষ্ট নেই যেটির গায়ে হামলার চিহ্ন নেই। সর্বোপরি দেখেছি এলাকার অনেক সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষের তীব্র বিদ্বেষমূলক মনোভাব এই ছবিটিকে কেন্দ্র করে। একবার কেউ খবর নিয়ে দেখার চিন্তাও করলেন না ঘটনাটি সত্য কিনা মিথ্যা তা যাচাই করে দেখার্। দেখি এবার জাহাঙ্গীর এর ব্যাপারে উনাদের অনুভূতি আহত বা নিহত হয় কিনা। লেখাটির জন্য ধন্যবাদ আদিল ভাই।
——————————————————————-
“যুক্তির আকাশে উড়ুক মুক্তির বারতা”
উইচ হান্টিং আমলেও অবস্থা এমনই ছিল। অভিযোগের সত্যতা গুরুত্বহীন, অভিযোগ আসাই যথেষ্ট………কারো প্রতি মনে আন্তরিক ঘৃনা পুষে রাখলে এমনই হয়। রাস্তায় পায়ে পাড়া পড়লেও মনে হবে সে আমার জাতিগত শত্রু, ইচ্ছে করেই এমন করেছে।
এমন নৈতিকতার স্টাইলকে একশতে শূন্য দিয়ে মূল্যায়িত করা যেতে পারে।
অসভ্য বর্বরতার বিষয়টি উনারা কি বুঝেন? কি মনে হয় আপনার? বুঝেন?