জন্ম আমাদের মুসলিম পরিবারে। তখন বয়েস আমাদের ৮-১০ বছর। আমাদের বাড়ির কাছাকাছি বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়ি ছিল। আমাদের বাড়ি থেকে সবচেয়ে কাছের হিন্দু বাড়িতে চাপাকল ছিল না। পুকুর ছিল ওদের। আমরা গাঁয়ের লোকেরা পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে নেমে গোসল করতাম, সাঁতার কাটতাম, পানকৌড়ি-পানকৌড়ি খেলতাম ডুব দিয়ে দিয়ে। এছাড়াও পুকুরের পানিতে আমরা বাসনকোসন হাঁড়িপাতিল ধুতাম, কাপড় ধুতাম, সকাল-সন্ধ্যা হাত-মুখ-পা ধুতাম, মাছ মাংস আনাজপাতি ধুতাম, ভাত রান্না করার জন্য চাল ধুতাম। গরু গোসল করাতাম, গরুর জন্য মাঠ থেকে কচি ঘাস তুলে ধুতাম। সমস্ত রান্নাবান্না হতো পুকুরের পানিতে। কিন্তু পুকুরের পানি আমরা পান করতাম না। পান করতাম চাপাকলের পানি।
আমাদের প্রতিবেশী যে হিন্দু বাড়িতে চাপাকল ছিল না, ওরা আসতো আমাদের বাড়িতে চাপাকল থেকে পানীয় জল নিয়ে যেতে। আমাদের বয়েসী ছেলেমেয়েরাই আসতো বেশিরভাগ সময়। জল ভরে নিয়ে যেতে ওরা আনতো মাটির কলসী। কেউ বা আনতো এলুমিনিয়ামের কলসী, কেউ আনতো এলুমিনিয়ামের জগ। তখন আমরা ভালো মানুষের বেশ ধরে ওদের আশেপাশে গিয়ে দাঁড়াতাম, ঘুরঘুর করতাম ওদের কাছাকাছি বিশেষ উদ্দেশ্য মনে নিয়ে। ওরা চাপাকলের হাতল ধরে বানরের মতো ঝুলতে ঝুলতে চাপ দিতো। আর সেই বানর-ঝুলন্ত ছোট ছোট মানুষগুলির চাপে অল্প অল্প শীতল রূপালী জলের ধারা বেয়ে পড়তো ওদের পাত্রে। ওরা ঝুলতে থাকতো। আস্তে আস্তে জলে ভরে উঠতো ওদের পাত্র। ওরা নিজ নিজ জলভরা পাত্র ওদের কাঁখে তুলে নিতো। অমনি আমরা হুড়মুড়িয়ে পড়ি-মরি করে গিয়ে ওদের কাঁখে নেওয়া জলভরা পাত্রটি আমাদের হাত দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিতাম। ছুঁয়ে দিসি, ছুঁয়ে দিসি বলে বনে বাদাড়ে দিতাম ছুট।
ওরা আঁৎকে উঠতো ওদের জলভরা পাত্রের গায়ে আমাদের হাতের মৃদু ছুঁয়ে দেওয়া দেখে। সমবেত করুণকণ্ঠে আর্তনাদ করে প্রতিবাদের ঝড় তুলতো, ছুঁয়ে দিলি! দিলি ছুঁয়ে! ছুঁয়ে দিলি আমাদের জলের পাত্র! এতক্ষণ ধরে এত কষ্ট করে বানরের মতো ঝুলে ঝুলে কল চেপে চেপে বিন্দু বিন্দু জল তুলে পাত্র ভরলাম বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সবাই খাবো বলে। আর তোরা আমাদের এত বড় সর্বনাশ করলি? আমাদের পাকাধানে মই দিলি? আমাদের জলের পাত্রের উপরে হাত ছোঁয়ায়ে দিলি? হে ঈশ্বর, হে ভগবান!
ওরা কলসী উপুড় করে সব পানি ফেলে দিতো। সব পানি পড়ে যাবার পরেও কিছুক্ষণ খালি কলসীকে জোরেসোরে ঝাড়তে থাকতো যাতে আমাদের ছুঁয়ে দেওয়া কলসী থেকে জলের শেষ বিন্দুটিও ঝড়ে পড়ে যায়। তার পর কলসী ধুয়ে আবার কলের হাতল ধরে ঝুলতে ঝুলতে চাপ দিয়ে দিয়ে পানি তুলে কলসী ভরে নিতো। আমরা আবার এসে ভরা কলসীর উপরে একটু করে ছুঁয়ে দিয়ে দিতাম দৌড়। আবার শুরু হতো ওদের করুণ আর্তনাদ। আবার হতো একই দৃশ্য ও সংলাপের অবতারণা।
আমরা খিকখিক করে হেসে বলতাম, আমরা কলসীর উপরে একটু ছুঁলেই যদি সে পানি তোদের খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায় তাহলে আমাদের ছোঁয়া কল থেকে পানি নিয়ে খাস কীভাবে? কল তো আমরা সারাদিনই ছুঁই! এ বলে কল ছুঁয়ে দিতাম। ওরা বলতো, আরে ধুর পাগল কোথাকার! মুসলমানে কল ছুঁলে তো জল নষ্ট হয় না। জল নষ্ট হয় মুসলমানে জলের কলসী ছুঁলেই। আর জল তো কল থেকে আসে না, বোকারা! জল আসে মাটির নিচ থেকে। আমরা বলতাম, এই মাটির উপর দিয়ে তো আমরা দিনরাত হাঁটি। তখন নষ্ট হয় না পানি? ওরা বলতো, আরে না না, তোরা কিচ্ছু জানিস না। মুসলমানে মাটির উপর দিয়ে হাঁটলেও মাটির নিচের জল নষ্ট হয় না। নষ্ট হয় কেবল মুসলমানে জলের কলসী ছুঁয়ে দিলেই। কলসী আর মাটি কি এক জিনিস হলো? কল আর কলসী কি এক জিনিস হলো? আমরা বলতাম, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করে মরলে তোরা দোজখে যাবি। মুসলমান হয়ে যা। ওরা বলতো, মুসলমানের সবাই যাবে নরকে। আমরা হিন্দুরা যাবো সগ্যে। এভাবে জলকেলি, দৃশ্য ও সংলাপ চলতো কয়েক দফা।
এক সময় সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতো। আমরা ক্লান্ত হয়ে ক্ষান্ত দিয়ে ঘরে ফিরে আসতাম। আমাদের খালি কলসীগুলিতেও পানি ভরে আনতে হবে যে। ওরা আবার জল ভরে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতো। আমরা আর ছুঁতাম না।
আমরা মুসলমানের ঘরে জন্ম নেওয়া মানব-সন্তান। ওরা হিন্দুর ঘরে জন্ম নেওয়া মানব-সন্তান। দেখতে আমরা একই রকম। আমরা একই রকম কাপড় পরতাম। একই স্কুলে যেতাম। একই বাজার থেকে বাজার করতাম। বাস করতাম একই এলাকায়। একই আলো বাতাসে বেড়ে উঠছিলাম আমরা। ফুসফুসে টেনে নিচ্ছিলাম একই অক্সিজেন। কিন্তু আমাদের ছোঁয়া কলসীর পানিকে ওরা নষ্ট বলতো কেন? এক ধর্মের মানুষের ছোঁয়া আরেক ধর্মের মানুষের কাছে নষ্ট কেন? আমরাও কেন ওদের বারে বারে কষ্ট দিতাম ওদের ভরা কলসী ছুঁয়ে দিয়ে? বারবার ওদের কষ্ট আর্তনাদ ও রাগ দেখে আমরা কেন আনন্দ পেতাম? কেন এটা একটা আনন্দের খেলা ছিল আমাদের কাছে? কতই বা বয়েস ছিল আমাদের! ৮-১০ বছর। বয়েসের কারণেই কি? কিন্তু আমাদের বয়োজেষ্ঠরা জানতো আমাদের এই নিষ্টুর খেলার কথা। তারা তো আমাদের মানা করতো না এই সাম্প্রদায়িক খেলা খেলতে! বড়রাও কি মজা পেতো আমাদের ছোটদের এই সম্প্রদায়িক খেলায়?
ওরাও তো আমাদের মতোই ছোট ছিল। ওরা ওই বয়েসেই কীভাবে জানতো, কলসী মুসলমানে ছুঁয়ে দিলে সেই জল আর পানের যোগ্য থাকে না? ওদের বড়রাই তো ওদের এই শিক্ষা দিয়েছিল। শিখিয়েছিল বৈষম্য। ওদের শিশুমনের ভেতরে রোপন করেছিল সাম্প্রদায়িক বিভেদের বীজ। মানুষে-মানুষে বিভেদহীন মানবতার কথা আমাদের কিংবা ওদের শিশুমনে তো আমাদের কিংবা ওদের গুরুজনেরা কেউ কখনো বলেনি। ওদের বড়রা ওদেরকে শিখিয়েছিল, মুসলমানের ছোঁয়া খাওয়া যায় না। আমাদের বড়রা আমাদের শিখিয়েছিল, মুসলমান ছাড়া বাকি সব মানুষ মৃত্যুর পরে দোজখে যায়, সে যত ভালো মানুষই হোক না কেন। ওরা আর আমরা ছিলাম মানব-সন্তান। কিন্তু ওদের পিতামাতারা ওদের শিখিয়েছিল হিন্দু হতে। আর আমাদের পিতামাতারা আমাদের শিখিয়েছিল মুসলমান হতে। মানুষ হতে কারুরু পিতামাতাই শেখায় নি।
ধর্মই মানুষের মধ্যে উচুনিছু, ভেদাভেদ তৈরি করে দিয়েছে।
অমুক মন্ডল স্যার সুমন রায়ের বাচ্চাকে পড়াতে যেত, পড়া হয়ে গেলে চলে আসত। মাঝে চা বিস্কুট দিত। সময় মত বেতনও দিত। সবই ঠিক আছে। কিন্তু মাস খানেক পর মন্ডল স্যার ছেলেটিকে পড়ান বন্ধ করে দিল। কেন? সমস্যা কি?
মাসখানেক পরে একদিন পড়ানোর সময় ছেলেটি স্যারকে প্রশ্ন করল, স্যার আপনি চলে যাবার পর মা আপনার বসার চেয়ারটি গোবর জল দিয়ে ধোয় কেন?
আপনার বলবেন কি কেন? এই বিংশ শতাব্দীদে ঢাকা শহরে এমন শিক্ষিত হিন্দু পরিবার এখনও অনেক পাবেন। তারা বদলাবে না !
হিন্দুধর্মের যে কোন গ্রন্থই
পর্যালোচনা করা হক না কেন এই রকম সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র লিখা নেই।লিখা রয়েছে, ধর্মীয় অনু শাসন মেনে সুষ্ঠভাবে জীবন ধারনের কথা।এই ধর্মের এক মহামানব বলেছেন,”যত মত,তত পথ”।আপনি সৎ ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে যে পথেই চলুন না কেন বেহেশত লাভ সম্ভব। কারন আমদের কোন গ্রন্থই বলা নেই,যে অন্য ধর্মের সমালোচনা করা ধর্মীয় বিধির মাঝে পরে।
প্রকৃত কথা হল”এই সকল সাম্প্রদায়িক চেতনা শুধুমাত্র লোকমুখে বয়ে আসা। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবেই ধর্ম গ্রন্থের সাথে কোন সংযোগ নেই।কোন অহিন্দুর হাতের মৃদু স্পর্শের ফলে কাখের কলসির পানি অশুদ্ধ হয়ে যাওয়ার কথা হিন্দু ধর্মের আদ্যপ্রান্ত খুঁজে ও পাবেন না।অহেতুক পবিত্র ধর্মের নামে এই সকল গুজব ছড়ানো। যা বহুকাল আগে থাকে হিন্দু পুর্বপুরুষদের হাত ধরে বয়ে আসা।তাই ধর্মের দোহাই দিয়ে এই সকল কর্মকাণ্ড নেহাই পাশবিক।
তাই লোকমুখে ছড়ানো এই সকল প্রথার জন্য পবিএ কোন ধর্মকে কুলষিত করা,আপনার ধর্ম গ্রন্থেরও কিন্তু অন্তর্ভুক্ত নয়।
ছোট্ট একটি ঘটনা মাস খানেক আগে ঘটে গেল – আপনার লেখার সাথে প্রাসঙ্গিক, তাই না বলে পারছি না|
আমার বড় মাসি ভালবাসার টানে ধর্মান্তরিত হন | আমার মা ব্রাম্মন পরিবারের , মাসির মসুলমান হওয়া তে তাকে ত্যাজ্য করা হয় |
আমার মা এর বিয়ে বড় মাসির বিয়ের আগে হয়| যতদূর শুনেছি বড় মাসি এই ঘটনার আগে আমাকে বুকে আগলে রাখতেন | তারপর অনেক বছর চলে গেছে | মাতৃকুলের পরিবার কখনো তাকে খুব একটা স্মরণ করে না |
হঠাত মাস খানেক আগে আমাকে ফেসবুকে একটি মেয়ে বন্ধু তালিকায় সংযুক্ত করে | আমার সবকিছুতেই তার পছন্দ | আমি অবাক হলাম , কিন্তু আলাপচারিতায় যাই নি | একদিন মেয়েটির কাছ থেকে একটি ম্যাসেজ আসলো – খুব সহজ সরল প্রশ্ন – আপনি ভালো আছেন ? আমি বললাম -হ্যা ভালো | কিছুক্ষণ পরেই আমার মামার বাড়ির প্রসঙ্গ টানতেই আমি বল্লাম আপ্নি কি ওখানে থাকেন ? আমার থেকে অনেক ছোট মেয়েটি হ্যা বলল | কিছুক্ষন পর জিজ্ঞেষা করলো – আপনার মামা কয়জন? মাসী কয়জন? আমি যখন বড় মাসি সহ সংখ্যা টা বললাম | মেয়েটি কিছুটা থমকে বললো- আপনি কি জানেন আমি কে ?
আমি উত্তর দিলাম – আমি অনুমান করতে পারছি । তুমি আমার মেশতুতো বোন |আমার বড় মাসীর মেয়ে | হ্যা আমি সেই থেকে বোনের সাথে যোগাযোগ রাখছি নিয়মিত | সে বাংলাদেশে আমি যুক্তরাষ্ট্রে | সে মুসলিম আমি হিন্দু | কিন্তু অনেক বছর পর এক বোন কে ফিরে পেয়ে আনন্দ হচ্ছে খুব | বোন খুব ভয় পাচ্ছিল – যদি আমার মামার বাড়ী ব্যাপারটা সহজে না নেয় !!! আমি বলেছি — কোনো ভয় নেই , আমি পাশে আছি | ভাই হিসেবে সারা পৃথিবীর সামনেই আছি – সাধারণ ধর্মপার্থক্য এর মত তুচ্ছ মানসিক গন্ডী তে আমাদের ভাই বোনের মত মধুর সম্পর্ক আবদ্ধ থাকবে না |
আমার বোন টা অনেক ভালো |
লেখাটা পড়ে মন্তব্য করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
মনে আছে ছোট বেলা আমরা লাল পিপড়া মারতাম, আমার খালাতো আপু বলত লাল পিপড়া হলো হিন্দু, আর কালো গুলা হলো মুসলিম।
:good:
:good:
আমাদের অফিসে জাফর নামে এক সহকর্মী আছে। পুরির জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ সবাইকে ভাগ করে দেওয়ার সময় নিতে অস্বিকার করে, এবং প্রকাশ্যে মালাউন এর বাচ্ছা ফাহিন্নির পুত এই সব গালাগালি করে , তার পর থেকে আমরা মিশি না ওর সঙ্গে। আপনার লেখাটি পড়লাম। হ্যা এটি জঘন্য , ছোঁয়াছুঁয়ি এর ব্যাপার টা। একই ভাবে মুসলিম রা অমুসলিম দের কাফের , ফাহিন্নির পুত এই সব বলতে দ্বিধা বোধ করে না এখন। মা , বাবা শেখাচ্ছে হিন্দু , মুসলিম এই সব হতে , মানুষ হতে নয়। ঠিক আধুনিক সমাজের একই অবস্থা, সেখায় ডাক্তার হতে , ইংঞ্জিনিয়ার হতে, মানুষ হতে সেখায় না , যার ফল হল সভ্য সমাজ হয়ে উঠছে sofisticated animal socity. এইটা যেমন লিখেছেন , আধুনিক কুস্নকার এর বিরুদ্ধেও লিখুন। কারণ ধর্মীয় মৌলবাদের বাইরের আধুনিক দুনিয়া , এটিও অতি নীচ, স্বার্থপর। এখানে আছে কলেজ র্যাগিং , কর্পোরেট দুর্নীতি ইত্যাদি, যা আমাদের স্নক্সক্রিতি এর বিরোধি,
ছোট বেলায় অামরাও এমন করতাম।তবে অাজ বুঝতে পারছি এটা ছিল অন্যায়।
মন্তব্য… আপু, ধর্ম যদি মানুষের মধ্যে তফাৎ সৃষ্টি করে তাইলে তো আল্লাহ /ভগবান একটা ধর্মই দিতে পারতেন ..এমন হলো না কেনো!!
হা হা চমৎকার লাগলো। আমার জন্ম হিন্দু পরিবারে, তাই বলে আমি এই মজা থেকে বঞ্চিত হই নি। আমাদের এখানে অনেক মহিলা ছিল যাদের ছোয়াবাতিক ছিল। তাদের কাপড় পর্যন্ত অন্যের ছোঁয়া লাগ্লে নষ্ট হয়ে যেত। আমরা পিচ্চিরা ইচ্ছে করে কাপড়ের উপর পড়ে যেতাম 😛 । আর স্নানের সময় বৃদ্ধরা ডুব দিয়ে জিজ্ঞেস করত মাথা পানির নিচে গিয়েছে কি না? যার ছোয়াবাতিক ছিল আমরা বার বার বলতাম না হয় নি, চুল ভেসেছিল ইত্যাদি ইত্যাদি।
তবে ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি হিন্দু পরিবারে রক্ষণশীল হবার যা পাঠ দেয় সাম্প্রদায়িকতার তা নয়। মুস্লিম পরিবারে দুটোর পাঠই ভালো ভাবে দেয়া হয়। আর দু পরিবারেই এটা ঘটে না বুঝে অন্ধ অনুকরণের কারনে।
ধর্ম খেলাটা অর্থ আর অভাবের সাথে জড়িত । যে পরিবার যত বেশি সচল সে পরিবার তত বেশি মানুষ ( ধার্মিক নয়)।
লেখাটা পড়ে শৈশবের অনেক ঘটনা মনে পড়ে গেল। এই মানুষটির চোখে আজো স্পষ্ট সেইদিনের ছবি, যেদিনটাতে ইসলাম ধর্মাবলম্বীর কিছু মানুষ, যারা ছিল তার বন্ধুবান্ধব, তারা সকলে মিলে ঠাট্টা করেছিল যে আমার ধর্মের কারণে আমার আত্মার জায়গা কখনো স্বর্গে হবে না। আমার আত্মা জন্মের পর জন্মান্তর কষ্ট পাবে। সেইসময় কিছু না বোঝার কারণে অনেক কেঁদেছিলাম, মাঝরাতে ভেবেই বসেছিলাম ঘর থেকে পালিয়ে মসজিদে যাব। পরে ভূতের ভয়ে যাওয়া হয়নি। আজ এই মানুষটি ধর্মহীন হয়ে মানুষের সেবা করে বেড়াই, কিন্তু কিছু লোক দান করা টাকা ফেলে দিয়ে বলে, “যে মানুষ ধর্ম মানে না, তার হাত দিয়ে টাকা নেয়া মানে জাহান্নামের খাতায় নিজের নাম লিখে রাখা।”
যে মানুষ ধর্ম মানে না, তার হাত দিয়ে টাকা নেয়া মানে জাহান্নামের খাতায় নিজের নাম লিখে রাখা।”
মানুষ যে কত মুর্খ হতে পারে তা উপরের বাক্যটি থেকে স্পস্ট বোঝা যায়।।।
আগে বাঁচ, পরে ধর্ম বাঁচাস।।।।।
লেখিকা নীলাঞ্জনাকে একটা কথা বলতে চাই যে, শিশুদের হাতেকলমে শেখাতে হয়না, তারা বড়দের অনুসরণ করে শিখে। তারা যখন দেখে যে, একজন মুসলমান বাড়ীর ভিতরে আসলে গোবর জল ছিটানো হয়, বা তাদের ছোঁয়া জিনিষ না ধুয়ে খাওয়া হয়না, বা দিঘে-পুকুরে যে ঘাটে তার নামে সেই ঘাটের জল ব্যবহার করা যাবেনা, এই রকম কত কি। এই সব দেখে দেখে শিশু মনে দাগ কেটে যায়, যার ফল সুদুর প্রসারী। একে মন থেকে বাদ দেওয়া খুব কঠিন। পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ বড় হয়ে, জ্ঞান হওয়ার পর আরও অনেক কিছু শিখে। তেমনি অন্যদিকে হিন্দু ধর্মের প্রতি বিদ্দেষাগার শিশু মনে বিরাট প্রভাব ফেলে। এই শিশুরাই বড় হয়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদে অংশ গ্রহণ করে।
এই বিভেদের মুল কারন হল ধর্মীয় অগ্রাস্ন। ইসলাম ধর্মের জন্ম সুত্র থেকে অগ্রাস্ন ভাব অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীদের সংরক্ষিত হতে হয়েছে। তবে বর্তমান যুগে বিশেষ করে গত দশক থেকে সমাজ চেতনা/ মানবিক চেতনা যে ভাবে ছাত্র/যুবা ও অন্যান্যদের মধ্যে এসেছে, সেই বিন্দু থেকে বলতে পারি যে, সময় আর বেশী নেই, মানব ধর্মের জয় হবেই। সেখানে তথাকথিত ধর্মের ধজ্জবা কতখানি উড়বে, তা ভাববার বিষয় হবে।
সায়ন কায়ন বাবুর কথায়, মাতৃভূমি ছেড়ে, ছোটবেলার বন্ধুবান্ধব ছেড়ে পর দেশে থাকতে কি কারো ভালো লাগে? কিন্তু বাধ্য হয়ে পরবাসে থাকতে হয়। এরজন্য দায়ী কারা, সেটা বলে আর কি হবে? পরবাসে বসেও মাতৃভূমির কথা ভুলতে পারিনা, ভুলতে পারিনা শৈশব ও কৈশোরের বন্দুবান্ধব্দের কথা। ভুলতে পারিনা বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের কাটফাটা গ্রমে আম,জাম,কাঁঠাল, লিচুর কথা, বর্ষায় চারিদিকে জলের উপর সবুজ ধানের ক্ষেত, ভাদ্রের তাল, শীতে খেজুরের রসের কথা। এই সব কথা মনে পড়লে মনে খুব ক্ষঠ হয়, আর মনে হয় কেন বা কদের জন্য আজ আমরা পরবাসী? কেন আমরা একসাথে একই দেশে থাকতে পারলাম না? বর্তমান যুগেও কিছু লোক আছে যারা সাম্প্রদায়ীক ভেদাভেদের বিজ রোপণ করে যাচ্ছে। এখন সময় হয়েছে, আমাদের সজাগ হবার, কারন আমাদের বর্তমান ও ভবিষত পরজন্মের জন্য। তারা যেন আমাদের মত সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের শিকার না হয়। আর যেন মানব ধরমের জয় হয়। এই আশাতেই আছি। দেখে যেতে পারবো কিনা, জানিনা। তবে মনে এই শান্তি নিয়ে মরতে পারবো যে, ভবিষতের সূর্য আলোয় রাতের অন্ধকার ছাড়িয়ে উষা দেখা দিয়েছে।
লেখিকা ও পাঠকদের ধন্যবাদ।
আম্নের মতো আমারো জন্ম হিন্দু সম্প্রাদয় বেষ্টিত গ্রারামে।এক্কেবারে হ্রায় হমাইন্না হমাইন্না আম্নের মতো আহ্রো বাইড়া উইটছি,শয়তানি বদমাইশি কইরছি আমার হিন্দু বন্ধু -বাইন্দুবীদের লইয়া।
৭০/৮০ দশকে দেইখছি প্রানের বন্ধুওরা এইক এইক কুউরা কোন দূর অজানার দেশে চইল্লা যায়।মনডার মইদ্যে যে কি কশট্র আর জ্বালা হইত হেইডা আইজো কইলজায় তীর মাইরলে যে যন্ত্রণা হয় হেই রকম কস্ট হয়।
পরে অনেক কাল পর বুইঝতে পাইরছি কেন তারা ত্রিপুরা আসামে অজানার উইদ্দেশে নিরুইদ্দেশ হইয়াছিল।
দেশ স্বাধীন কইরা যেদেশ হইবার কথা আছিল আমগো সব্বাইর হেইডা যে কিভাবে অন্য এক সাম্প্রদায়িক মুওসলমান দেশ হইয়া গেছিগে এডাতো এখন আমরা হগগ্লে দেখবার পাইতাছি।
আহারে,আমার ছোট্রকালের সখা-সখীরা এখন যে কি করে???????
আম্নেরে এক্ষাইন কদিম্বুচি থাইক্লো।
ভালা থাইক্কেন।
ছোট্টবেলার বন্ধুরা এখন কে কোথায় আছে কিছু জানি না। খুব মনে পড়ে সবাইকে। মনে পড়ে ঝগড়া কথা, কথায় কথায় আড়ি দেওয়ার কথা আবার ভাব করে নেবার কথা।
অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
লেখায় সুন্দর রুপ ফুটে উঠেছে, যার তুলনা হয়না। পরিবার একটি বুনিয়াদ পাঠশালা। শিশু মনে প্রথম পাঠ সেখানেই হয়। দেখে ও শুনে শিশুরা প্রথম সহজ পাঠ সেখান থেকে গ্রহণ করে। সেখানে যদি বিভেদ বা ভেদাভেদ শিখে, তবে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ শিশুর মস্তিষ্ক গঠন তখন থেকে গঠন হয়ে যায়। ব্যাতিক্রম কিছু ক্ষেত্রে হয় বটে, কিন্তু সেটা খুবই কম। যদি প্রব্রতি সময়ে ভালো শিক্ষা পায়, তবেই সম্ভব। ধর্ম বিষয়টা এমন একটা বিষয় যা মাথায় একবার ঢুকে গেলে ঘিলুটাকে কুঁকড়ে কুঁকড়ে খায়। তার থেকে নিস্তার পাওয়া খুব দুষ্কর। আমাদের শিক্ষকেরা যদি সেই বিষয়ে খুব সচেষ্ট হন, তবে পরিবর্তন সম্ভব।
লেখিকাকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ ও এরকম আরো অনেক দেশের পরিবার থকে শিশুরা মন্দ জিনিসই বেশি শেখে। তাদের শেখানো হয়, কাজের মানুষের প্রতি খারাপ ব্যবহার করতে, শেখানো হয় সাম্প্রদায়িক বিভেদ। এরকম আরো অনেক কিছু।
আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
দারুন লাগল ! এখন আর এই মজার খেলাটা নেই, মুসলমানদের সাথে থাকতে থাকতে হিন্দুরাও এখন শিখেগিয়েছে জল ছুঁলে কিছুই হয় না। কেন যে ওরা শিখল এটা দুৎ !
মজার খেলা একটা বন্ধ হলে কী হবে। আরো কত মজার খেলা এখনো রয়ে গেছে, আরো কত কত মজার খেলা তৈরি করেছে ধর্মের ভিত্তিতে মানুষ। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে হিন্দুরাও কম খেলার শিকার হয়নি। জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, ওদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, ওদের মেয়েদের ধর্ষণ করা, ওদেরকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা, ওদের উপাসনালয় ভেঙে দেওয়া আরো কতো কী করেছে ও করছে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশীরা সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর। হিন্দুরা যে মুসলমানদের ছোঁয়া খেতো না, এটা ওদের দোষ নয়। দোষ ধর্মের। মুসলমানরা যে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর এত নির্যাতন করেছে ও করছে তাও তাদের দোষ নয়। দোষ ধর্মের।
দিদি ধর্মের দোষ কিভাবে থাকে বলেন, এটা আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা। ধর্মের তো কোন হাত পা নেই, আর কোন ধর্মে মানুষের প্রতি কোন অমানবিক আচরনের কোন শিক্ষাও নেই আমার বিশ্বাস। এগুলি সবই রাজনিতির খেলা। ধার্মিক মানুষ সে যে ধর্মেরই হোক তারা কখন অন্যের ক্ষতি করে না। কিন্তু যারা অধার্মিক তাদের আচরন খুবই নিষ্ঠুর। তাদের মধ্যে কোন দয়ামায়া নেই দেখবেন। কারন তাদের কারো কাছে জবাবদিহির ভয় থাকে না, তাই তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।
মানুষ হতে কেউই শিখায় না, সবাই শেখায় ধার্মিক হতে। চমৎকার লেখা।
পরিবার থেকেই শিশুরা অধিকাংশ শিক্ষা পায়। পরিবার হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিদ্যালয়। বাংলাদেশ ও এরকম আরো অন্যান্য দেশে পরিবারে আমরা কুশিক্ষাই বেশি পাই। ভালো-মন্দ বিচার করার বোধটুকুও আমাদের লোপ পাইয়ে দেয় পারিবারিক কুশিক্ষা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিলুপ্ত করে দেয়।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, রতন।