ভ্যালেরিয়া ম্যাসালিনা

একটা কথা এত বছর ধরে শুনে আসছি যে মেয়েদের যৌন চাহিদা কম বলে তারা একটা পুরুষ নিয়েই সারা জীবন পার করে দিতে পারে, কিন্তু ছেলেদের যৌন চাহিদা অনেক বেশি তাই তাদের চারটা কিংবা একাধিক নারী লাগে। এখানে প্রশ্ন হল, সেক্সি কিংবা যৌনাবেদনময়ী এই শব্দটার জন্মই হয়েছে মেয়েদের জন্য । পরুষ কে ইদানীং হট, পৌরুষদীপ্ত, এসব বলা হলেও যৌনতার আবেদন নারীই বহন করে । তাহলে নারীর যৌন চাহিদা পুরুষের থেকে কম এই ধরেনর কথা কতটা যৌক্তিক? নারীর যৌনতা আসলে কতটা? নারী কি শুধুমাত্র ভালবাসা এবং সমাজের চাপে তাদের যৌনতা কে নিয়ন্ত্রণ করে নাকি আসলেই নারী যৌনতায় পুরুষের থেকে পিছিয়ে? নাকি পুরো বিষয়টাই পুরুষের তথা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ধাপ্পাবাজি?

শুরু করি রোমান সাম্রাজ্য দিয়ে , রোমান রানীদের যৌনাসক্তির কথা জগত বিখ্যাত। রোমান রানী ভ্যালেরিয়া ম্যাসালিনা ছিল তাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি আলোচিত । বলা হয় তার প্রথম স্বামী রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস এর ধ্বংসের কারণ ছিল ভ্যালেরিয়ার এই অতিরিক্ত যৌনাসক্তি। স্বামী ক্লডিয়াস যখনই বাইরে যেতেন ভ্যালেরিয়া তখন প্রাসাদ থেকে বের হয়ে অপরিচিত পুরুষদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হতেন, এবং নাগালের মধ্যে যত পুরুষ পাওয়া যায় তত পুরুষের সাথেই সঙ্গম করতেন। শেষ পর্যন্ত এই রানী নিজেকে বারবনিতায় পরিণত করেছিলেন। অবশ্যই বারবনিতা হওয়াটা তার জন্য মোটেও অর্থে আয়ের পথ ছিল না। শুধু তার যৌন চাহিদা কে পরিপূর্ণ করার উপায় ছিল এই বেশ্যাবৃত্তি। বেশ্যালয়ের সব চেয়ে জনপ্রিয় নারী ছিল সিসিলিয়া। একদিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পুরুষের সাথে সঙ্গম করার রেকর্ডটি ছিল তার। তাই ভ্যালেরিয়া একবার বেশ্যালয়ে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। সিসিলিয়া নাকি ভ্যালেরিয়া, দুজনের মধ্যে এক দিনে যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুরুষের সাথে সঙ্গম করতে পারবে সে-ই হবে বিজয়ী । ১৫ জনের পরই সিসিলিয়া হার মেনে নিয়েছিল কিন্তু ভ্যালেরিয়া ২৫ পার করেও ক্লান্ত হয়নি, বরং না থেমে ব্রথালয় বন্ধের আগ পর্যন্ত সে তার কাজ চালিয়ে গেছে। কোন সন্দেহ নেই সেই বিজয়ী হয়েছিল। ভ্যালেরিয়া যখন তার দ্বিতীয় বিয়েটি করে, তখন সে জনসম্মুখে তার দ্বিতীয় স্বামীর সাথে যৌনতায় লিপ্ত হয়। এই রানী এক কথায় শি উলফ ছিল। ভ্যালেরিয়ার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল সেক্স!! ভ্যালেরিয়াকে ইতিহাস মনে রেখেছে শুধুই তার যৌনতার প্রতি এই প্রবল আসক্তির জন্যই । যৌনাসক্তি-ই তার সব চেয়ে বড় পরিচয়। অবশ্য এক দিনে নন স্টপ সঙ্গম করার রেকর্ডটি ভ্যালেরিয়ার নয়, এটি জয় করেছিল মার্কিন পর্নস্টার লিসা স্পারাক্স। সে এক দিনে ৯১৯ জনের সাথে সঙ্গম করে এই বিশ্ব রেকর্ডটি করেছিল।

আর একজন রানীর কথা এক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা যায়। ক্যাথরিন দ্যা গ্রেট। ১৭৪৫ সালে তার বিয়ে হয় রাজা পিটারের সাথে। পিটার ছিল শারীরিক ভাবে অক্ষম পুরুষ। বিয়ের পর সাত বছর পর্যন্ত তাদের মধ্যে কোন যৌন সম্পর্ক হয়নি । এর পর রানী ক্যাথরিন একের পর এক পুরুষ কে তার প্রেমিক হিসেবে বেঁছে নিতে থাকেন এবং তার যৌন চাহিদা মেটাতে থাকেন। তবে তিনি যে কোন পুরুষের সাথেই সঙ্গম করতেন না । যদি তার কোন পুরুষ পছন্দ হত তবে আগে তার নিজস্ব ডাক্তার দিয়ে আগে ঐ পুরুষ টিকে চেক করাত যে তার শরীরে কোন রোগ আছে কিনা এবং সে শারীরিক ভাবে যৌনতায় সক্ষম কিনা এরপর তাকে সে তার যৌন সঙ্গী হিসেবে বেঁছে নিত। ক্যাথেরিনের তিন’শ প্রেমিক ছিল, যাদের সাথে সে যৌন সঙ্গ ভোগ করেছে।এখানে উল্লেখ্য যে সব পুরুষ-ই চাইত ক্যাথেরিনের যৌন-সঙ্গী হতে কারণ ক্যাথরিন তার এই সব প্রেমিকদের প্রচুর ধনসম্পদ দিত। রাশিয়ার বিখ্যাত এই রানী যৌনতার প্রতি এতই আসক্ত ছিল যে বলা হয়ে থাকে, সে তার ঘোরার সাথে সঙ্গম করতে গিয়ে মারা যায়। যদিও এ প্রসঙ্গে কোন তথ্য প্রমাণ নেই। তবুও তার যৌনতার প্রতি আসক্তি এবং এ জন্য সে কতটা আগ্রহী ছিল তার প্রচুর সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে ইতিহাসের পাতায়।

ক্যাথরিন দ্যা গ্রেট

নিকল নারিয়েন, প্লেবয় ম্যাগাজিনে ২০০২ বিখ্যাত প্লেমেট অফ দা মান্থ হয়েছিল । এই আলোচিত মডেল তার যৌনাসক্তি নিয়ে বেশ খোলামেলা বক্তব্য সব সময় রেখে আসছে। তার ভাষায়, যৌন চাহিদা তাকে প্রচণ্ডভাবে তাড়িত করে, এবং যে কোন অবস্থাতেই যৌনতা তার কাছে মুখ্য বিষয়। এটা শুধু নিকলের বক্তব্য নয়, অসংখ্য নারী মডেল, অভিনেত্রী এবং পাশ্চাত্যের স্বাধীনচেতা নারীরা যৌনতার প্রতি তাদের আকর্ষণ এবং প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে প্রবল যৌনতা-পূর্ণ জীবন ধারণ করেন। অনেকেই বলে থাকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে নারীদের যৌনতা কমে যায় অথচ পুরুষের কমে না। তাই বৃদ্ধ বয়সে কোন পুরুষ বিয়ে করলে সেটাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে দেখা হয় আর কোন নারী মাঝ বয়সে বিয়ে করলেও আমাদের সমাজে ঐ নারীর যৌন ক্ষমতা নিয়ে ঠাট্টা করা হয়। এমন কি সমবয়সী ছেলে মেয়ে বিয়ে না করার পেছনে নারীর যৌনতা কমে যায় নামক ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ ভাবে দায়ী।

আচ্ছা পৃথিবীর সব চেয়ে বেশি বয়সী বারবনিতার বয়স কত আন্দাজ করতে পারেন? ঠিক আছে আমি-ই বলে দিচ্ছি; তার বয়স ৮২ বছর। তার নাম চিনু। তাইওয়ানের এই নারী এই বয়সেও প্রচণ্ড ভাবে যৌনতায় সক্ষম।
গত ২৯ জুলাই ২০১০এ টেলিগ্রাফ একটা সংবাদ প্রকাশ করেছিল, গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, মধ্য বয়সী নারীরা অল্প বয়সী নারীদের তুলনায় যৌনতায় বেশি সক্রিয় থাকে। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন ৩১ থেকে ৫৪ বছরের নারীরা যৌনতায় সব চেয়ে বেশি একটিভ থাকে। তাই নারীর বয়স যৌনতার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে না। বিষয়টা সম্পূর্ণ-ই শারীরিক চর্চার। যে নারী শরীর চর্চা করে কিংবা চর্চার সুযোগ পায়, তার যৌন ক্ষমতা ঠিকই থাকে। যেমনটা থাকে পুরুষের। এই সমীক্ষাগুলো কে অনেকেই ব্যতিক্রম বলে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করবেন জানি। তাদের জন্য আরও চমকপ্রদ তথ্য আছে। মহাভারতের দ্রৌপদী চরিত্রটির স্বামী ছিল ৫ জন। এই চরিত্রটি বাস্তব উদাহরণ হল ভারতের উত্তরখাণ্ড এর দেরাদুন গ্রামে বসবাস করা নারী রাজো ভার্মা। তার পাঁচ স্বামী। যারা আপন পাঁচ ভাই। নিয়ম করেই স্বামীদের সঙ্গে সময় কাটে রাজোর। স্বামীরাও এক স্ত্রী নিয়ে মহা সুখে আছে। শুধু রাজোড় পাঁচ স্বামী তা নয়, এটা তাদের গাঁয়ের প্রাচীন রীতি। তার মায়ের ছিল তিন স্বামী।

নারীদের বহুস্বামী রাখার এই রীতি বহু পুরাতন রীতি। একে বলা হয় পলিয়েন্ডারী। তানজেনিয়ার “নিম্বুই” সম্প্রদায়ের নারীরা তাদের ইচ্ছানুযায়ী পাঁচ বা ততোধিক স্বামী একত্রে রাখতে পারে। এক্ষেত্রে পুরুষের সাথে তাদের সম্পর্কের কোন সমস্যা হয় না। এছাড়া তিব্বত, ক্যানাডার আর্কটিক, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, ভারতের লাদাখ ও ঝাড়খণ্ড, কেনিয়া, তানজেনিয়া, অ্যামাজনের জো উপজাতিরা,ভেনিজুয়েলা এবং আর কয়েকটি পোলিনেশিয়া সমাজে এই ধরনের বিবাহ সামাজিক ভাবেই স্বীকৃত। চীনের মঙ্গোলীয় অঞ্চলে মসোউ গোষ্ঠী, সাহারা আফ্রিকা ও আমেরিকার উপজাতিদের মাঝেও এই রীতি রয়েছে। তিব্বত, চীন ও তাঞ্জানিয়ার কয়েকটি আদিবাসী সম্প্রদায়েও এই প্রথা চালু রয়েছে। একে বলা হয় “ফ্রেটারনিটি পলিয়েন্ডারী”। এই ধরনের বিয়েতে নারী কেবল মাত্র সহোদর ভাইদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এছাড়া ভেনিজুয়েলার বারী ক্ল্যান সম্প্রদায়ের নারীরা সামাজিক ভাবে একই সাথে দুজন পুরুষকে বিয়ে করে এবং দুজনেই সামাজিকভাবে সন্তানের পিতার মর্যাদা পেয়ে থাকে। অ্যামেরিকার এবিসি নিউজ ২০১১ সালে এমন একটি পরিবারকে নিয়ে রিপোর্ট করে, যেখানে দেখানো হয় জায়া তার দুই স্বামী জন, ইয়ান এবং তাদের দুই বছরের ছেলে এইমেন কে নিয়ে একই ছাদের নীচের বাস করছে দুই বছরের বেশী সময় ধরে। এবং তারা যথেষ্ট সুখী। নারীর যৌনতা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে অসংখ্য তত্ত্ব উপাত্ত আছে। নারী যে পুরুষের চেয়ে যৌনতায় বেশি সক্রিয় এর অসংখ্য প্রমাণ আছে। সেক্স ডিফারেন্স ইন সেক্সচুয়াল ফ্যান্টাসি বইটি তে এলিস স্যামন্স উল্লেখ করেছেন যৌন ক্ষেত্রে নারীরা অনেক সময় পুরুষের তুলনায় ৭ গুণ বেশি সক্রিয় থাকে।

12571269_10153830493864383_202620141_n

“ঈশ্বর নারী কে যৌন ক্ষমতা দিয়েছেন” মাঝে মাঝে এডউইন লুয়িস কোলের মত ধর্ম প্রসারকদের মুখ ফসকে সত্যিটা বের হয়ে যায়। যদিও ধর্ম গ্রন্থগুলো নারীকে যৌনতা উপভোগের কোন বিঁধান দেয়নি। কোথাও বলা হয়নি স্ত্রী যদি যৌনতায় সন্তুষ্টি লাভ না করে তবে স্বামীর পাপ হবে। অথচ নারীদের ক্ষেত্রে উল্টা। তাদের একমাত্র কাজ স্বামীর যৌনতার আনন্দটুকু নিশ্চিত করা। সেখানে স্বামী অক্ষম হলেও স্বামী কে ছেড়ে যাবার অধিকার নারী কে দেয়া হয়নি। আমাদের সমাজে যৌনতা শব্দটাই নিষিদ্ধ তার উপড়ে কন নারী যদি যৌনতার কথা বলে তবে তাকে কি বলে সম্বোধন করা হয় সে কথা কারোর-ই অজানা নয়। আর পুরো বিষয়টাকে ধর্মীয় ছকে ফেলা হয়েছে বলে নারীরা নিজেদের জন্য যৌন আনন্দ বলে যে কিছু আছে সেটা থেকে গুটিয়ে থাকে। পুরো বিষয়টা নির্ভর করে স্বামীর ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর। নারী আসলে পুরুষের তুলনায় যৌনতায় কখনোই পিছিয়ে ছিল না। তার প্রচণ্ড ভাবেই এই বিষয়ে আকর্ষণ বোধ করে কিন্তু বেশ্যা, বারবনিতা ট্যাগ এবং সামাজিক শাস্তির ভয়ে নিজের ভেতরে প্রচণ্ড একটা দেয়াল তুলে রাখে, আর পুরুষেরা সেই সুযোগে নিজের যৌনতা প্রবণ, যৌনতা কামী প্রমাণ করে তাদের একাধিক নারী কামনা কে জায়েজ করে নেয়।