হিন্দুদের অতীত আদৌ গৌরবের কি না-তাই নিয়ে কয়েকদিন আগে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম। হিন্দুত্ববাদিদের এমন পোষ্ট ভালো লাগার কথা না-কারন তারা একদমই পড়াশোনা করে না-আর এই অতীতের ইতিহাসটাও গোলমেলে। তবে আমার পোষ্টটাও ছিল বেশ দুর্বল। অনেক কিছুই পরিস্কার করে না লেখার জন্য, অনেকেই সঠিক মেসেজটাই ধরতে পারে নি।
প্রথম কথা হচ্ছে-প্রাচীন হিন্দু ভারত, বিশ্বমানব সভ্যতাকে এমন কিছু কি দিয়েছে, যা সভ্যতার গতিপথ পাল্টেছে? বা মানব সভ্যতায় ব্যাপক অবদান রেখেছে ?
আমি সেইসব প্রাচীন ভারতের আবিস্কার খুঁজছিলাম-যাদের ইম্প্যক্ট ফ্যাক্টর খুব বেশী গোটা বিশ্বে। সব খুঁজে পেতে মোটে দুটো জিনিস পেলাম- যেটা বলা যেতে পারে, প্রাচীন ভারতের অবদানে হাই ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর । কিন্ত এইসবের পরেও সামগ্রিক বিচারে দেখা যাবে ইজিপ্ট, চীন, সুমেরিয়ান বা গ্রীস সভ্যতার অবদান সভ্যতার ইতিহাসে সামগ্রিক ভাবে অনেকটাই বেশী। এর একটা বড় কারন এই যে বৈদিক ধর্ম বস্তুবিমুখ ছিল। সেখানে চীনের দর্শন বস্তু বা সমাজমুখী। ফলে গানপাউডার, কম্পাস, পেপার, প্রিন্টিং, মেটালার্জিক্যাল ফার্নেস এর মতন প্রায় সব গুরুত্বপূর্ন প্রযুক্তির জন্মস্থান প্রাচীন চীনে।
সভ্যতার ইতিহাসে ভারতের সব থেকে বড় অবদান দশমিক পদ্ধতি। গোটে বিশ্বে যে দশমিক নাম্বার পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়-তা হিন্দু-আরবিক নিউমেরাল বলে পরিচিত। যদিও এটা ভারতের আবিস্কার এবং পরে পার্সি-আরবিক বণিকের মাধ্যমে, তা ইউরোপের আসে।
গণিতে ভারতের বাকী অবদানগুলির স্ক্রুটিনি দরকার।
যেমন শুন্যের আবিস্কার। প্রচলিত ধারনা এটি ভারতের আবিস্কার। যা সম্পূর্ন ভুল। মিশরে খৃপূঃ ১৭০০ সাল থেকেই শুন্যের ব্যবহার চালুছিল। মেসোপটেমিয়া, রোমান, গ্রীস সব সভ্যতাতেই শুন্যের ব্যবহার ছিল।
ভারতের অবদান এই যে শুন্যকে কাজে লাগিয়ে দশমিক পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং তার ব্যপক ব্যবহার। যদিও দশমিক পদ্ধতি ইজিপ্টেও জানা ছিল-কিন্ত ব্যবহার ছিল না।
অনেকেই মনে করেন নেগেটিভ নাম্বার এবং বীজগণিতের ব্যবহার ও ভারতে প্রথম হয়। এই দাবীটি সর্বসম্মত নয়।
দুশো খৃষ্ঠাব্দেই চীনে ঋনাত্মক নাম্বার এবং বীজগণিতের প্রাথমিক প্রয়োগ দেখা যায়। ভারতে আর্য্যভট্ট এবং মূলত ভাস্করাচার্য্যের কাজেই ঋণাত্মক নাম্বার এবং বীজগণিতের প্রয়োগ দেখা যায়। কিন্ত তা চীনের কয়েক শতক পরে ।
দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে ভারতীয় গণিতবিদেরা মূলত “নিউমেরিক্যাল” নির্ভর ছিলেন। বীজগণিতে সিম্বলের ব্যবহার বা জ্যামিতিতে চিত্রের ব্যবহার এবং গ্রীস ইন্ডাক্টিভ বা ডিডাক্টিভ লজিক-এই তিনটে গুরুত্বপূর্ন জিনিসের ব্যবহার তারা জানতেন না। ফলে তাদের কাজ সেই অর্থে পরবর্তীকালে আর কোথাও প্রভাব ফেলে নি।
আরেকটা মিথ, ভাস্কারা-২ নিউটন বা লেইবিঞ্জের অনেক আগেই ক্যালকুলাস আবিস্কার করে ছিলেন। এর ভিত্তি হিসাবে তারা দেখান ভাস্করের কাজে (১) গ্রহগুলির ম্যাক্সিম্যাম অবস্থানে যে ডিফারেন্সিয়াল শুন্য হওয়ার ধারনা (২) ভ্রাম্যমান পথের ম্যাক্সিমাম অবস্থানে রেট অব চেঞ্জ শুন্য হওয়ার ধারনা -তার ট্রিটিজে পাওয়া যায়।
সমস্যা হল, ক্যালকুলাসের ভাষা হয় জ্যামিতিক ( যা নিউটনের প্রিন্সিপিয়াতে আমরা দেখি) না হলে এলজেব্রিক। এর কোনটাই ভাস্করের জানা ছিল না-যেহেতু ভারতে এদুটি জনপ্রিয়তা লাভ করে নি। ফলে ক্যালকুলাস নিয়ে তার প্রাথমিক সিদ্ধান্তগুলি নিউটন বা লেইবিঞ্জের মতন গণিতের কোন শাখার জন্ম দিতে পারে নি।
ভারতে গণিত প্রতিভা অবশ্যই ছিল-আর্য্যভট্ট, হলায়ুধ, ভাস্কর -এরা সম্পূর্ন স্বাধীন ভাবেই গণিতের উচ্চ গবেষনা করেছেন। কিন্ত তিনটি কারনে প্রাচীন ভারতের গণিত গবেষনা- গণিতের বা মানব সভ্যতার ইতিহাসকে প্রভাবিত করে নি
(১) ভারতের গণিত গবেষনা ছিল অন্যদেশের গণিতজ্ঞদের থেকে বিচ্ছিন্ন । আরবেরা যেমন গ্রীস, ভারত, চীন সব দেশের জ্ঞান সিঞ্চন করে, গণিত গবেষনাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন-ভারতের গণিতজ্ঞরা ছিলেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা। ফলে প্রাচীন ভারতে জ্যামিতির প্রসার হয় নি যাতে গ্রীকেরা পারদর্শী ছিল। ফলে ভাস্করাচার্য্যের পক্ষে ক্যালকুলাসের প্রাথমিক সিদ্ধান্তগুলি আবিস্কার করা সত্ত্বেও নতুন গণিতিক শাখার জন্ম দেওয়া সম্ভব হয় নি
(২) দ্বিতীয় সমস্যাটা হচ্ছে- গণিত চর্চায় ভারতীয়রা ডিডাক্টিভ বা ইনডাক্টিভ লজিকের ব্যবহার করত না। শুধু ইনটিউটিভলি সিদ্ধান্তগুলি লিখে রাখত। এর ফলে ভারতে গণিত চর্চা একটা ধাপের পরে আর এগোতে পারে নি। কিছু ভুল সিদ্ধান্তও পাওয়া যাবে । যেমন হলায়ুধ সিদ্ধান্তে এসেছিলেন ০/০ এর মান শুন্য হওয়া উচিত।
(৩) তৃতীয় সমস্যাটা ঐতিহাসিক। ভারতের গণিত চর্চা ছিল বিশুদ্ধ-ফলিত কারনে না। ইউরোপে বা আরবে জ্যোতিবিজ্ঞান চর্চার মূল কারন আরো ভালো নৌ নেভিগেশন সিস্টেমের জন্ম দেওয়া। ইজিপ্টে জ্যামিতির জন্ম- জমির ট্যাক্সেশন থেকে। চীনে গণিতের চর্চা হয়েছে মূলত আরো ভাল যুদ্ধ স্ট্রাটেজির উদ্ভাবনের জন্য। আরবে গণিতের পেছনে মূল ড্রাইভার ছিল-উন্নত যুদ্ধাস্ত্র, নেভিগেশন সিস্টেম। ইউরোপেও তাই। ভারতে গণিত চর্চার একটা কারন যজ্ঞের কারনে বেদী, ইত্যাদির জ্যামিতিক মাপ নেওয়া। যা মোটেও কোন ড্রাইভিং বস্তুবাদি কারন ছিল না। ফলে ভারতের গণিত আরব বা ইউরোপের সাথে বেশী দিন পাল্লা দিতে পারে নি। কারন সব কিছুরই রাজকীয় অনুগ্রহ দরকার হত। যুদ্ধ বা রাজকার্য্যে ( ট্যাক্সেশন ) না লাগলে, সেই বিদ্যার চর্চা বেশী টানা সম্ভব ছিল না ।
ভারতের দ্বিতীয় অবদান অবশ্যই দর্শন শাস্ত্রে। উপনিষদের দর্শন পার্শীদের হাতে অনুদিত হয়ে ইউরোপে আসে। সফোমেয়ারের হাত ধরে ইম্যানুয়েল কান্টের হাতে প্রথম ভারতীয় এবং ইউরোপিয়ান দর্শনের সিন্থেসিস হয়। যদিও পরবর্তী কালে নিৎসে বা আধুনিক ইউরোপিয়ান দর্শন মোটেও কান্টিয়ান না। কিন্ত তা সত্ত্বেও , ইম্যানুয়েল কান্ট এখনো ক্ল্যাসিকাল ওয়েস্টার্ন দর্শনের সব থেকে বড় স্তম্ভ। এবং তার দর্শনের অনেকটাই উপনিষদ প্রভাবিত।
তবে প্রাচীন ভারতের বস্তুবাদি অবদান প্রায় শুন্য। সেই দিক দিয়ে চীনকেই বস্তবাদি সভ্যতার ভিত্তিভূমি বলা যায়।
মুক্তমনা পড়ে খুব ভাল লাগল। অনেক কিছু জানতে পারছি। কেন এতদিন এর সন্ধান পাইনি ভেবে খারাপ লাগছে।
আপনি যদি ধরমীয় গোরামীতে ভোগেন তবে কোনদিনই আপনি ভারতের অবদান দেখতে পাবেন।
লেখক বূঝি চরক ও সূশ্রূতের নাম শোনেনি।দাবা যার প্রকৃত নাম চতূরঙ্গ এই খেলা টির আবিষ্কার যে ভারতের।এটা আপনি জানে না।এই রকম স্বল্প জ্ঞান নিয়ে নিজেকে জ্ঞানী মনে করেন ।লজ্জা করে না।
…প্রাচীন ভারতের বস্তুবাদি অবদান প্রায় শুন্য। সেই দিক দিয়ে চীনকেই বস্তবাদি সভ্যতার ভিত্তিভূমি বলা যায়…
আপত্তি করছি না, তবে একটা প্রশ্ন করতে চাই… বুদ্ধ কে বা কি এবং তার উৎস ও বিস্তার-এর আলোচনা যদি করতেন…
আর একটি কথা বলতে চাই, ভারতীয়দের বিশ্ব জয়ের বা যুদ্ধ জয়ের প্রয়োজন পড়েনি তার ভূগোলের কারনেই। একই অবস্থা মায়ানদের ও মধ্য-আফ্রিকার ফলে বিশ্বের গঠনের প্রশ্নে তাদের ‘জ্ঞান ও প্রযুক্তি’র বয়ান বেচতে হয়নি আজকের সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপিয়দের মত। বুদ্ধ ও দীর্ঘ আরব-পারসী-তুর্কী-মোঙ্গল (যা মুসলীম শাসন নামে ইউরোপীয় ইতিহাস বয়ান করে) শাসন ভারতীয় চিন্তার ধারাবাহিকতাকেই ছিন্ন করেছে। মনে রাখতে হবে ‘বেদের সীদ্ধান্তে অনাস্থা যার সে ‘নাস্তিক’, বুদ্ধ তাই। অশোকের তলোয়ার ও আগুন ভারতীয় চিন্তার মুন্ডু ও পান্ডুলিপি কি পরিমান ধ্বংস করেছে তা খুজে দেখবার সময় এসছে। আর ইউরোপিয়রা বারবার বলছে মুসলীম শাসন ব্যপক ধ্বংস সাধন করেছে, তা পুরোপুরি মিথ্যে নয়, আবার সত্যও নয়। ইউরোপীয়রা ইশ্বরকে গড (জিউস) বানিয়ে যে ধংস সাধন করলো তার কি হবে?
*গড শব্দে ইন্দ্র পযর্ন্ত বর্ননা করা যেতে পারে মাত্র। ব্রক্ষা, বিষ্ণু, শিব এবং ইশ্বরই অধরাই রয়ে যায়।
আসলে মুসলমানরা যে ব্যাপকভাবে হিন্দুদের ধ্বংস করেছে তা শুধু তারাই মানে না যারা বামপন্থী বিষে জর্জরিত | অশোক যে যুদ্ধ করে চক্রবর্তী সম্রাট হয়েছিল , সে যুদ্ধে কয়টা পুঁথি পুড়িয়েছিল সে প্রশ্নটাও কোনো ঐতিহাসিক করে না চাকরি যাবার ভয়ে , রুজি মাটি হবার ভয়ে | আমরা যে ইতিহাস পড়ি সেটা একদেশদর্শিতা দোষে দুষ্ট | হিন্দু রাজাদের পরস্পরের যুদ্ধে হিন্দুদের কি ক্ষতি হয়েছে সেটাও জানা উচিত | নয় কি ?
:good:
খুব দরকারি প্রবন্ধ। ভাল লাগলো পড়ে
গুরুতবপূর্ণ এবং আকর্ষনীয় বিষয়। আপনি এই বিষয় এর তিনটে মোটামুটি সমকৌণিক (mutully perpendicular) ধারা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এক, প্রাচীন হিন্দু ভারত, বিশ্বমানব সভ্যতাকে এমন কিছু কি দিয়েছে, যা সভ্যতার গতিপথ পাল্টেছে? বা মানব সভ্যতায় ব্যাপক অবদান রেখেছে ? দুই, প্রাচীন হিন্দু ভারত”-এ ঠিক কি কি গাণিতিক বিষয়ে চরচা হয়েছে। তিন, এই গণিতের প্রক্রিতি। মোটামুটি: Impact, Content of Mathematical work, Nature of Mathematical Work. মন্তব্যের দৈর্ঘ্যকে লেখার দৈর্ঘ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে কিছু বলি।
প্রথম ধারা দিয়ে শুরু করি। আপনি বলেছেনঃ
“আমি সেইসব প্রাচীন ভারতের আবিস্কার খুঁজছিলাম-যাদের ইম্প্যক্ট ফ্যাক্টর খুব বেশী গোটা বিশ্বে ……… সেখানে চীনের দর্শন বস্তু বা সমাজমুখী। ফলে গানপাউডার, কম্পাস, পেপার, প্রিন্টিং, মেটালার্জিক্যাল ফার্নেস এর মতন প্রায় সব গুরুত্বপূর্ন প্রযুক্তির জন্মস্থান প্রাচীন চীনে। ”
প্রথমত আপনি কি আলোচনা শুধু গণিতের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখছেন? সেক্ষেত্রে ভারতীয় গণিতের সাথে চীনের গণিতের তুলনা করা দরকার। দ্বিতীয়ত, ইম্প্যক্ট ফ্যাক্টর বলতে কি বিষয়টার in general নাকি সেটা বাকি বিশ্ব ভারতের কাছ থেকে নিয়েছে কিনা সেটা ধরছেন।
যদি দ্বিতীয়টা হয় তবে তাহলে এটা বলতে হয় complete decimal system with zero and negative number যার কথা আপনি কিছুটা বলেছেন সেটার impact factor তুলনাহীন এবং সেটা ভারত থেকেই বিশ্বে ছড়িয়েছে (Negative Number আরবরা ন্যায় নি। ব্রহ্মস্ফুটসিধান্ত-র অনুবাদের সময় সেটার ঐ অংশ গুলো বাদ দেয় পারসিক গণিতজ্ঞরা)। ভারতে অন্য যেসব গাইণিতিক বিষয় নিয়ে চর্চা হয়েছে সেগুলো সারা বিশ্বে না ছড়াবার কারণ রাজনৈতিক ও সামাজিক, গাণিতিক নয়। তবে এই দিক থেকে দেখতে গেলে ভারতীয় গণিতের ইম্প্যক্ট ফ্যাক্টর কম, কিন্তু চীনের গণিতের আরো কম। এই বিষয়ে নানান ঐতিহাসিক কারণে গ্রীসের ইম্প্যক্ট ফ্যাক্টর এর সাথে তুলনা কাররই চলেনা।
তবে প্রথমটা হলে কিন্তু বিষয়টা অনেক জটিল এবং আপনার লেখার দ্বিতীয় ধারা মানে, প্রাচীন হিন্দু ভারত”-এ ঠিক কি কি গাণিতিক বিষয়ে চরচা হয়েছে এর সাথে জড়িত। এই বিষয়ে যা বলব সবেরই reference হল Kim Plofker, Mathematics in India, Princeton University press. এই বিষয়ে এখন এটাই মোটামুটি প্রামাণ্য বই। পাঠককে অনুরোধ amazon.com এর comments দেখে বইটিকে বিচার করবেননা। আপনি বলেছেন
“যেমন শুন্যের আবিস্কার। প্রচলিত ধারনা এটি ভারতের আবিস্কার। যা সম্পূর্ন ভুল। মিশরে খৃপূঃ ১৭০০ সাল থেকেই শুন্যের ব্যবহার চালুছিল। মেসোপটেমিয়া, রোমান, গ্রীস সব সভ্যতাতেই শুন্যের ব্যবহার ছিল।”
এটা আংশিক সত্য। মেসোপটেমিয়া, গ্রীস, মিশর, রোম এবং চীন কাররি সংখ্যা পদ্ধতি Place-Value system ছিল না (Example of Non Place-value Numeral: Roman Numerals). ছিল ব্যবিলনে এবং ভারতে। এবং, অনকেউ-ই শূন্যকে সংখ্যা হিসাবে ব্যবহার করেনই। Zero as a place holder and zero as a Number এর গাণিতিক ফারাক বিশাল। ব্রহ্মগুপ্ত-ই প্রথম যিনি শূন্যকে সংখ্যা হিসাবে ব্যবহার করেন এবং ভারতে শূন্যের আবিষ্কার হয়েছে বলতে এটাই বোঝান হয়।
আপনি বলেছেনঃ
অনেকেই মনে করেন নেগেটিভ নাম্বার এবং বীজগণিতের ব্যবহার ও ভারতে প্রথম হয়। এই দাবীটি সর্বসম্মত নয়।”
Complete decimal system with zero and negative numbers AS NUMBERS, আবিষ্কার ভারতেই হয়। ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত-এই নেগেটিভ নাম্বার নিয়ে কাজ আছে এবং সংখ্যা হিসাবে শূন্যর ব্যবহার আছে। এই প্রসঙ্গে বলি, আপনি যেটাকে হলায়ুধ এর ভুল বলেছেন সেটা ব্রহ্মগুপ্তর এবং হলায়ুধ এর অনেক আগে। সেযুগের নিরিখে ঐ প্রশ্নটা নিয়ে ভাবাই remarkable। এছাড়াও ওখানেই দ্বিঘাত সমীকরণের সম্পুর্ণ সমাধান আছে নেগেটিভ নাম্বার ব্যবহার করে। বীজগণিতের ক্ষেত্রও গ্রীস এবং চীনে কিছু কাজ হলেও Place-value system এর অভাবে কাজ খুব বেশি এগোন সম্ভব ছিল না। ভারতে, তথাকথিত “Diophantine Equation” নিয়ে আর্য্যভট্ট, ব্রহ্মগুপ্ত, জয়দেব , ভাস্করাচার্য এবং নারায়ণ পণ্ডিত প্রায় সাতশ বছরের একটা সময়কালে কাজ করেন। আর্য্যভট্ট first degree case কে kuttaka algorithm দিয়ে পুরো সমাধান করেন। ব্রহ্মগুপ্ত X^2-Dy^2=1 এই ধরনের সমীকরণের ক্ষেত্রে (গণিতের লোক মাত্রেই জানেন এটা কতটা কঠিন problem) bhavana composition law and cakravala algorithm introduce করেন। এগুলোকে কাজে লাকিয়ে জয়দেব ভাস্করাচার্য এবং নারায়ণ পণ্ডিত এই সমস্যাটাকে পুরো সমাধান করেন। ভারতের বাইরে এটার প্রথম সমাধান করেন Lagrange।
ভারতে এই চার জনের হাতে বীজগণিতের যে উন্নতি হয় সেই ধরনের উন্নতি Newton-Gauss-Lagrange এর আগে আর কোথাও হয়নি। এই প্রসঙ্গে বলি এর একটাও বিতর্কিত নয়। এদের সবার কাজের ই original text কিছু ক্ষেত্রে english translation সহ রয়েছে। আমি যতটা জানি , Hindusthan Book Agency in their trim (texts and readings in mathematics) series এ এইসব বেশ কিছু বই ভবিষ্যতে অনুবাদ করতে চলেছে।
আপনি Calculas এর কথা বলেছেন। আর্কিমিদিস এবং ভাস্করাচার্য দুজনের কাজেই Infinitesimal Analysis রয়েছে। Infinitesimal Analysis কে formal calculas এ পরিণত করেন নিউটন এবং লিবনিজ। কিন্তু Pre-Calculas Infinitesimal Analyisis চূড়ান্ত উন্নতি হয় kerala school of astronomy and mathematics এ। ইচ্ছুক পাঠক ইন্টারনেট ঘেতে দেখতে পারেন তবে একটা কথা বলে রাখি both kuttaka-bhavana-cakravala and work of kerala school is very sophisticated and one atleat needs to know some college level math to or must have good mathematical maturity to understand.
আপনার লেখার শেষ ধারা এই গণিতের প্রক্রিতি। আপনি বলেছেনঃ
” ভারতে গণিত চর্চার একটা কারন যজ্ঞের কারনে বেদী, ইত্যাদির জ্যামিতিক মাপ নেওয়া। যা মোটেও কোন ড্রাইভিং বস্তুবাদি কারন ছিল না। ফলে ভারতের গণিত আরব বা ইউরোপের সাথে বেশী দিন পাল্লা দিতে পারে নি। কারন সব কিছুরই রাজকীয় অনুগ্রহ দরকার হত। যুদ্ধ বা রাজকার্য্যে ( ট্যাক্সেশন ) না লাগলে, সেই বিদ্যার চর্চা বেশী টানা সম্ভব ছিল না ।”
এটা উপনিষদের যুগের সমসাময়িক শুল্ব সূত্রের জন্য সত্য , আর্য্যভট্ট, ব্রহ্মগুপ্ত, জয়দেব , ভাস্করাচার্য এবং নারায়ণ পণ্ডিত বা পরের বেশিরভাগই astronomical problem দিয়ে motivated. এই প্রসঙ্গে
আর্য্যভট্টর আহ্নিক গতির আবিষ্কার এবং সেটা করতে ত্রিকোণমিতির উন্নতির কথা উল্লেখ্য।
আপনি deductive ar inductive reasoning এর কথা বলেছেন। এই প্রসঙ্গে পাণিনিয় ব্যাকরণ এবং নব্যন্যায় school এর কাজ আলোচনা না করলে পুরো চিত্রটা পরিষ্কার হয়না। এই ধরনের যুক্তি বিদ্যার চর্চা ভারতে হয়েছে কিন্তু সেগুলো দিনের শেষে technology তে পরিণত কেন হয়নি তার কারণ টা অনেকটাই রাজনৈতিক।
এই বিষয় নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটাবার জন্য ধন্যবাদ।
চরক ও সুশ্রুত অনেক আগেই এনাটমির পুন্গ্খানুপুন্খ জানতেন | চরকের সংহিতায় আমি স্বচক্ষে ওই বিবরণ দেখেছি | সুস্রুতের সার্জারির যন্ত্রপাতি দেখেছি | এর পরেও ভারতের অতীতের কোনো হাই ইমপ্যাক্ট অবদান নেই ?
শুধু গণিত আর দর্শন | এই দুটো নিয়ে আলোচনা করে সমগ্র ভারতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়াটা অতিসরলীকরণ হয়ে যাচ্ছে না ? ভারত চিকিত্সাবিজ্ঞানে গুরুত্ব পূর্ণ অবদান রেখেছিল | চরক ও সুশ্রুত সংহিত তার প্রমান | রসায়নে ভারতের অবদান হলো ধাতুর শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া আবিস্কার ও তার দ্বারা পারা শুদ্ধ করে ঔষধপত্রে ব্যবহার করা | এর প্রমান পাওয়া যায় রসার্ণব, রসরহস্য বিজ্ঞানম , রসরত্ন সমুচ্চয় প্রভৃতি বই থেকে | এর কিছু বই আমার কাছেই আছে |
ভারতে একটা লৌহস্তম্ভ রয়েছে দিল্লিতে | এতে কখনো জং ধরে না | ইটা উন্নত ধাতুবিদ্যার পরিচয় দেয় | বিশ্বের কোথাও এই নিদর্শন নেই | এ থেকে বুঝা যায় যে এই ধাতুবিদ্যা ভারত কোথাও থেকে শেখে নি | ইটা তার নিজস্ব | ধাতু আগুনে পোড়ালে আগুনের রং দেখে ধাতুর পরিচয় পাওয়ার বিদ্যাও ভারতেরই অবদান | প্রফুল্ল চন্দ্রের টি হিস্ট্রি অফ হিন্দু কেমিস্ট্রি পড়ে দেখবেন |
ভারতীয়রা আরোহী ও অবরোহী পদ্ধতি জানতেন না ইটা কে বলল আপনাকে ? ভারতের ন্যায় দর্শন এই দুই পদ্ধতি শিখিয়েছে | ভারতের তর্কবিদ্যা তেও এর বহু ব্যবহার আছে |
সঙ্গীতে ভারত জগতকে সাতটা সুর দিয়েছে যার উপর সঙ্গীতের দুনিয়া টিকে আছে | এগুলোর প্রত্যেকটিই হাই ইমপ্যাক্ট অবদান যা আজ পর্যন্ত দুনিয়া বানাতে পারে নি | বিশেষ করে জং না ধরা লৌহস্তম্ভ |
আরো বহু হাই ইমপ্যাক্ট অবদান আছে , নেট ঘেঁটে দেখবেন |
আপনি প্রবন্ধটি বোঝেন নি।
প্রাচীন ভারত পাটিগণিতে সেরা ছিল-পরের দিকে বীজগণিতেও উৎকর্ষ লাভ করে । ভাস্করা, মাধবাচার্য্য, হলায়ুধ-এরা একাধিক আইডেন্টি এবং
ইকোশন সমাধানে সম্পূর্ন মৌলিক অবদান রেখেছিলেন।
প্রশ্ন সেখানে না। প্রশ্ন হচ্ছে ভারতে গণিত চর্চার মৃত্যু হল কেন-আর কেনই বা আমাদের মধ্যে থেকে নিউটন বা লেইবিঞ্জের জন্ম হল না?
কারনটা হচ্ছে ভারতে গণিতজ্ঞরা , ইন্ডাক্টিভ/ডিডাক্টিভ লজিকের ব্যাবহার, জ্যামিতি এবং সিম্বলের ব্যবহারের ওপর জোর দেন নি।
সিদ্ধান্তগুলি সব একেকটা দীর্ঘ শ্লোক যা সিম্বলের ব্যবহারে হয়ত এক লাইনে লেখা যায়। ফলে “ম্যাথেমেটিক্স এজ মেথড” ভারতে গড়ে ওঠে নি।
পাটিগণিত দিয়ে পিরামিড নাম্বার সমাধান করতে গেলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই একজন গণিতজ্ঞকে অসাধারন মেধাবী হতে হবে-এবং সেক্ষেত্রে
ম্যাথেমাটিক্স এজ ডিসিপ্লিনএর গ্রোথ সম্ভব না।
আমার লেখাটা বুঝে মন্তব্য করলে ভাল হয়।
আপনি বলেছেনঃ সিম্বলের ব্যবহারের ওপর জোর দেন নি।
এটা ভুল তথ্য। আর্য্যভট্ট, ব্রহ্মগুপ্ত র বীজগণিত এবং পাণিনির ব্যাকরণ দুজায়গায়ই symbolism এর যে নমুনা দেখা যায় সেটা অন্যকথাও বিরল।
গণিতে সিম্বলের ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয় | সিম্বলগুলি গণিতে একটা কনসেপ্ট বা ধারনাকে প্রকাশ করে মাত্র | এর বেশি কিছু না | যেমন:
২+২= ৪ আর
দুয়ে দুয়ে চার
দুটি কথা একই | সুতরাং + সিম্বল না ব্যবহার করেও গণিতের বিকাশ করা যায় | গণিতের বিকাশ আটকায় না | জ্যমিতিক চিত্রের গল্পও একই | ওগুলো শুধুই কনসেপ্টকে বুঝায় | ওগুলো না থাকলে গণিতের বিকাশ হবে না , ইটা সত্যি নয় |
আর লজিক ছাড়া গণিত হয় না | সুতরাং ভারত যদি কিছুমাত্রও প্রগ্রেস করে থাকে গণিতে লজিকের সাহায্য নিয়েই করেছে |
প্রশ্নটা দুইভাগে ভাগ করা যায় : গণিত চর্চার মৃত্যু কেন হলো আর নিউটনের মত প্রতিভার জন্ম কেন হলো না ?
প্রথমত গণিত চর্চার মৃত্যুর কারণ সিম্বলের ব্যবহার না করা বা লজিকের ব্যবহার না করা নয় | মৃত্যুর কারণ হলো মুসলমানের অত্যাচার | মুঘল আমলে মুসলমানেরা ভারতের অজস্র হিন্দু পুঁথি পুড়িয়েছে | হিন্দু পন্ডিতদের উপর বর্বরোচিত অত্যাচার করেছে | তাই গণিত চর্চা শেষ হয়ে গেছে |
দ্বিতীয় প্রশ্নটা হলো আমাদের মধ্যে নিউটনের জন্ম নাও হতে পারে কিন্তু আর্য্য ভট্ট , বরাহ মিহির, ভাস্করাচার্য ইত্যাদি প্রতিভার জন্ম হয়েছে | আপনি যদি এখন এদের ইউরোপিয়ান বিজ্ঞানীদের সমকক্ষ না ভাবেন তাহলে আলাদা কথা |
দয়া করে ভালো যুক্তিপূর্ণ পোস্ট দেবেন |
আপনি একটা গুরুতবপূর্ণ পয়েন্ট বলেছেন যে symbolism গণিতে আবশ্যক নয়। তবে উচ্চতর গণিতের ক্ষেত্রে হয় symbol বা geometric figure এর একটা ব্যাবহার ছারা বেশিদূর এগোনও সম্ভব নয়। ভারতে বীজগণিত চর্চা যে পরযায়ে গেছিল সেটা symbolism ছারা হওয়া কঠিন এবং তা হয়-ও নি। আধুনিক গণিতের আগে ভারতের মত sophisticated symbolism গ্রীস বা চীন কারর ই ছিল না। এর ওপর গণিতবিদ David Mumford এর লেখা পড়ে দেখতে পারেন।
আসলে ভারতীয় গণিত সম্বন্ধে আমরা খুবই কম জানি | কারণ বেশিরভাগ পুঁথি মুসলিম শাসকরা পুড়িয়ে ফেলেছিল মুঘল আমলে | সুতরাং ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে ভারতীয় গণিত চর্চার বিষয়ে আলোচনা করতে যাওয়া বোকামি |
অথর্ব বেদের পরিশিষ্টের ১৬ টি সুত্র নিয়ে তৈরী যে বৈদিক ম্যাথ আজ আমাদের প্রতিটি কম্পেটিটিভ পরীক্ষায় ম্যাথ সেকশন ক্লিয়ার করতে সাহায্য করে , তা থেকে ভারতীয় গণিত যে কতটা উচ্চতর ছিল তার আভাসমাত্র পাওয়া যায় |
এছাড়া শুভঙ্করী মানসাঙ্ক ইত্যাদিও ভারতীয় গণিতের অন্তর্ভুক্ত ছিল | এইসব টুকরো টুকরো চিত্র দিয়ে ভারতীয় গণিতের পরিপূর্ণতা ও ব্যাপকতার পরিচয় পাওয়া যায় | মানসংকে বড় বড় যোগ বিয়োগ মনে মনে করতে হত আজ যা করতে ক্যালকুলেটর কম্পুটার আরো না জানি কি কি লাগে |
যে কটা গণিতের সুত্র মুসলিমদের অত্যাচার থেকে বেঁচে গিয়েছিল তা থেকে শুধু মনে হয় যে ভারত দুনিয়াকে শুধুই শুন্য দিয়েছে, দশমিক দিয়েছে ইত্যাদি | কিন্তু ইটা সত্যি নয় | যেসব পুঁথি মুসলিমরা পুড়িয়ে দিয়েছিল তাতে কি ছিল আমরা জানি না | আমাদের এই জ্ঞান অসম্পূর্ণ |
আমাদের ওই লুপ্ত জ্ঞান উদ্ধার করার যথাযোগ্য চেষ্টা করতে হবে | তবেই ভারতের গণিতকে আমরা জানতে পারব | সেটাই হবে প্রকৃত মুক্তমনার মত কাজ |
Symbolism এর ব্যাপারটা বহু পুরনো তথ্য। ভারতীয় গণিতের ইতিহারের অনেকটাই আসলে প্রমাণিত তথ্য সূত্র সহ জানা। নিচে মন্তব্যে এটা নিয়ে আরও বলেছি।
“Zero was invented independently by the Babylonians, Mayans and Indians (although some researchers say the Indian number system was influenced by the Babylonians). The Babylonians got their number system from the Sumerians, the first people in the world to develop a counting system.” [Source: LiveScience]
…মূল্যবান কিছু তথ্য রয়েছে আপনার এই লেখায়। ইন্দো-অ্যারাবিয়ায় নিউমারাল সিস্টেম (১, ২, ৩ …) বা দশমিক পদ্ধতি পড়াতে গিয়ে সবসময়ই শূন্য যে ভারতীয় গণিতবিদদের আবিষ্কার সেটা বলে আসছিলাম। …শূন্য দিয়ে শূন্যকে ভাগ করার ব্যাপারেও নানা মত প্রচলিত: এক) ০/০ = ১ দুই) ০/০ = ০ ও তিন) ০/০ = ইনফিনিটি (চিহ্নটি এখানে ব্যবহার করতে পারিনি)। ফলে আপনি দুই নম্বর সমস্যা হিসেবে যেটা তুলে ধরেছেন তা কিন্তু আদতে কোনো সমস্যাই নয়, চিন্তার দ্বার খুলে দেবার একটি উপায়। …নিউটন ও লাইবনিজ ছাড়াও একজন ভারতীয় গণিতবিদ ক্যালকুলাস নিয়ে ভেবেছিলেন এই তথ্যটি আমার উপকারে লাগবে। স্বীকার করতেই হয় যে আপনার লেখাটি বেশ ভালো কিন্তু আরো একটু সময় নিয়ে প্রবন্ধ আকারে উপস্থাপন ও সূত্রগুলো উল্লেখ করার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করা যেতো বলে ধারণা করি। অশেষ ধন্যবাদ।
এ বিষয়ে কোন জ্ঞানই ছিল না। অনেক নতুন তথ্য জানতে পারলাম। শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।