(১)
আগে যা ছিল চার দেওয়ালের মধ্যে, পর্দার আড়ালে, ফিস্ফাস, গুঞ্জন-এখন তা সোশাল মিডিয়াতে প্রকাশ্যে আছড়ে উঠছে সুনামীর মতন।
যারা বাঙাল-শৈশবের স্মৃতি নিশ্চয় ভোলেন নি। হয়ত স্মৃতি না-এখনো জীবন্ত সেসব আলোচনা। বিকেলে কোন মেসো বা জেঠু এসেছে বাড়িতে। চায়ের কাপে ঠোঁট ভিজতেই শুরু মুসলমানদের গালি দেওয়া। মুসলমানদের হাতে দেশ ছাড়া হওয়ার দুঃখ তারা কেউ ভোলেন নি। মুসলমান মানে কোন এক দাড়িওয়ালা মূর্তিমান তলোয়ার হাতে হিন্দুদের ছাগলের মতন জবাই করছে-এমন এক বিভীষিকাময় খন্ড ঐতিহাসিক উপন্যাস অশরীরির মতন ঘুরে বেড়ায় এই সব বাঙাল বৈঠকিতে। অজান্তে, অজ্ঞানে, নিভৃতে প্রায় প্রতিটা হিন্দু বাড়িতেই শিশুমনে রোপিত হয় ভবিষ্যতের চাড্ডি হওয়ার বীজ।
তবে মুসলমানদের গালি দেওয়াটা বহুদিন সীমাবদ্ধ ছিল চার দেওয়ালের মধ্যে। বাজারে, স্কুলে, রাস্তায় ইনারাই ছিলেন অসাম্প্রদায়িক-অনেকেই সিপিএম বা কংগ্রেসের কার্ড হোল্ডার। পাবলিক প্লেসে নিজেদের অসাম্প্রদায়িক প্রমান করার একটা “পিয়ার প্রেসার” কাজ করত।
মোদির ক্ষমতায়নে, এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত বিজেপিকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেওয়াতে, অনেক ক্লোজেট হিন্দুত্ববাদিই খোল ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছেন। এখন একজন ডাক্তার, শিক্ষক বা ইঞ্জিনিয়ার প্রকাশ্যেই মুসলমানদের গালি দেওয়াটা “আউট অব প্লেস” বা অভদ্রতা বলে মনে করেন না।
অবশ্য বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে মুসলমানরা এটা বহুদিন আগেই এচিভ করেছে। পাকিস্থানের টেক্সট বইতে হিন্দু বিরোধি, ভারত বিরোধি উপাখ্যানে সরকারি সিলমোহর আছে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতাতে সরকারি সীলমোহর হয়ত নেই-কিন্ত সেখানেও হিন্দুদের মালু বলে গালাগাল দেওয়াটা এখন আর অসভ্যতা না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের মনের কথা।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দফারফা হচ্ছে কোন সন্দেহ নেই। কিন্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কি আদৌ কোন কালে ছিল ভারতে? না কোন দেশে যেখানে মুসলমিরা ঐতিহাসিক ভাবে রাজত্ব করেছে?
ভারতে বা বাংলায় কোন কালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল না। এগুলো ঐতিহাসিক গুজব। সিরাজের বিরুদ্ধে যখন ষড়যন্ত্র সংগঠিত হচ্ছে-মূল সংগঠক নদীয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় হিন্দু রাজা বা এবং বণিকদের অনেকগুলো চিঠি লিখেছিলেন। সেগুলো দেখে নিতে পারেন। তাহলেই বুঝবেন মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে হিন্দু প্রজাদের উষ্মা বহুদিন থেকেই ছিল। আবার বৃটিশ আমলে তীতুমীরের উপাখ্যানেই পরিস্কার হবে মুসলমান প্রজারা কতটা ঘৃণা করত হিন্দু জমিদারদের। নোয়াখালির দাঙ্গা একদিনে হয় নি। এর সাম্প্রদায়িক পটভূমি প্রায় শত বছরের পুরাতন।
কোন শর্টকাটে এই সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প যাওয়ার না। ধর্ম থাকবে-আমরা হিন্দু মুসলমান থাকবো- আবার এক অসাম্প্রদায়িক বাঙালী বা ভারতীয় সমাজ তৈরী হবে-এগুলো অবান্তর দুর্বল মনের চিন্তা। ধর্ম থাকলে সাম্প্রদায়িকতা থাকবেই। ইসলাম মানেই ত ইসলামে বিশ্বাসী এক সম্প্রদায় তৈরী করা। হিন্দু ধর্মে এই সেক্ট বা সম্প্রদায়ের ধারনাটা ছিল গুরুকূল ভিত্তিক। হিন্দুত্ব পার্টিগুলির সাফল্য এই যে উনারাও হিন্দু ধর্মকে ইসলাম-২ বানিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন। ইসলাম ভীতিই এর মূল কারন।
সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে গেলে ধর্মকে কোনঠাসা করতেই হবে। আল্লা ভাল, মহম্মদ ভাল, কৃষ্ণনাম ভাল-সব ধর্মীয় গাঁজাখুরী ভাল- কিন্ত কিছু মৌলবাদি মুসলিমের জন্য বা কিছু হিন্দুর জন্য দুর্নাম হচ্ছে- ধর্ম ভালো কিন্ত ধর্মের লোকগুলো খারাপ- এগুলো ভীষন দুর্বল যুক্তি। দুর্ভাগ্য এই যে ভারত বাংলাদেশে সোকল্ড সেকুল্যার পার্টিগুলোও এই মিথ, সম্পূর্ন অবাস্তব ভিত্তিহীন বাস্তবতাকেই প্রচার করে।
সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দু বা মুসলমান মনে করে তাদের ধর্ম ভাল। তাদের ধর্মেই সমাধান নিহিত আছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আধুনিক যুক্তিবাদি চিন্তাকে আশ্রয় করে নিজেদের জীবন এবং ভবিষ্যতকে পরিবর্তন করার চেষ্টা কজন বাঙালী বা ভারতীয়র মধ্যে আছে?
হ্যা, নিজেদের ছেলেমেয়েদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে সবাই পাঠাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে এই প্রযুক্তির ছাত্ররাই হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর মূল কারন ধর্মীয় মিথ, ধর্মের ইতিহাস থেকে নিজেকে উদ্ধার করার জন্য যে সার্বিক পড়াশোনা করার দরকার ছিল-সেই চেষ্টা প্রায় কারোর মধ্যেই নেই। আর কোন সরকারি ইতিহাসের বই সেটা চায় ও না। আজ ইন্টারনেটের যুগে অনেক কিছু জানার সুযোগ হচ্ছে বলে, হিন্দু বা মুসলমানদের ইতিহাস কত বিভৎস এবং কলঙ্কিত সেটা গোচরে আসছে। ইতিহাসটাও ইস্যু না। এই পরিবর্তিত সময়ে যেখানে কম্পিউটার এবং অটোমেশনের সামনে কারো চাকরিই সুরক্ষিত না-উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থা ছাড়া বর্ধিত জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর কোন উপায় নেই-বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া কেওই উন্নত জাতির জন্ম দিতে পারবে না-সেখানে ইসলাম এবং হিন্দু ধর্ম মহান, এদের অবাস্তব মিথগুলোকে বিশ্বাস করা জাতিগত ভাবে আত্মহত্যা ছাড়া কিছু না। ধর্মে বিশ্বাস থাকলে সাম্প্রদায়িকতা থাকবেই। কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্ত এই কথাটা বলার মতন রাজনৈতিক সাহস কারুর নেই। বামেদের ও নেই।
(২)
চীনের শেষ রাজকূল কুইঙ্গ সাম্রাজ্য ( ১৬৪৪-১৯১১)। সম্রাট কুইনলনের (১৭১১-১৭৯৯) আমলে চীন পৃথিবীর বৃহত্তম সাম্রাজ্য এবং অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়। এই সময় রপ্তানীতে চীন পৃথিবীর এক নম্বর দেশ ছিল। আমদানি কিছু করতে হত না। চীনারা নিজেদের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি বলে মনে করত। চল্লিশ বছর বাদে, প্রথম আফিং যুদ্ধেই ধরা পরে চীনারা নিজেদের নিয়েই যতই গর্বিত বোধ করুক না কেন-আধুনিক ইউরোপিয়ান শক্তির কাছে তারা নস্যি। মাত্র কুড়ি হাজার বৃটিশ আর্মির কাছে হার মানে প্রায় দুলাখ সৈন্যের চাইনিজ এম্পিরিয়াল আর্মি। সেই সময় মাত্র একটি বৃটিশ স্টিম যুদ্ধহাহাজ -নেমেসিস প্রায় দেড়শো শক্তির চাইনিজ নৌবহরের মোকাবিলা করে! কারন নেমেসিসের বাস্প শক্তির জন্য এটি অনেক ভারী কামান বহন করতে পারত-এর রেঞ্জ ছিল অনেক বেশী-এবং শ্রোত বা বাতাসের বিরুদ্ধে এটিকে সেইল করা ছিল সহজ। এর ফলে ১৮৪২ সালে চীনের সম্রাট অপমানজনক শর্তে ন্যানকিং চুক্তি করতে বাধ্য হোন।
ন্যাংকিনের চুক্তি থেকে কুইং রাজবংশের পতন পর্যন্ত ( ১৯১১) চীন এক দীর্ঘ গভীর রক্তক্ষয়ী বিতর্কে নিমজ্জিত হয়। সেটা হচ্ছে পাশ্চাত্য শক্তির হাতে মার খাওয়ার পরে এটা নিশ্চিত ছিল যে সংস্কার দরকার। সরকার, মিলিটারী, আইন সর্বত্রই দরকার। কিন্ত তার অভিমূখ কি হবে? তারা প্রাচীন চৈনিক ঐতিহ্যকেই গ্রহন করবে বা পাশ্চাত্যকরন দরকার?
সংস্কারের প্রথম দফাতে রাজ বংশ বুঝল আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র এবং প্রযুক্তি ছাড়া মিলিটারী টিকবে না। কিন্ত সরকার এবং শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক করতে গেলে রাজ বংশ কতৃত্ব হারাবে। ফলে আধুনিক প্রযুক্তিকে গ্রহণ করা হল-কিন্ত চাইনিজ আদিম রীতিনীতিকে আঁকড়ে ধরে থাকল।
কিন্ত তাতে কি শেষ রক্ষা হয়? ১৮৯৪-৯৫ সালের চীন-জাপান যুদ্ধে, চীনের ভরাডুবি হল। চীন বরাবর জাপানকে একটা পুঁচকে দেশ হিসাবেই ভাবত। তাদের হাতে গো হারা হেরে সম্রাট বুঝলেন আর সেদিন নেই।
এবার সম্রাট গুয়াংগু দেখলেন ওই জার্মান ইঞ্জিনিয়ার হায়ার করে চীনা সেনাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে চীনা সাম্রাজ্য বাঁচানো যাবে না। দরকার আপাদ মস্তক আধুনিক রিফর্ম।
এর ফলশ্রুতি ১৮৯৮ সালের ১১ই জুন উনি ১০০ দিনের রিফর্ম চালু করলেন। যার মূল উদ্দেশ্য চীনকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা। এই সংস্কারের মধ্যে ছিল (১) স্কুল সিলেবাসে বিজ্ঞান, গণিত চালু করা ক্ল্যাসিকাল চাইনিজ টেক্সট বাদ দিয়ে -ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনিক্যাল স্কুল খুলতে হবে (২) সম্রাট হবে বৃটেনের মতন কন্সটিউশনাল-গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন (৩) মিলিটারী অর্গানাইজেশন হবে আধুনিক ইউরোপিয়ান স্টাইলে (৪) শিল্প স্থাপন, রেইল লাইন স্থাপনে জোর দেওয়া হবে ৫) মার্কেট রিফর্ম করতে হবে-মার্কেটের ওপর থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রন কমাতে হবে।
কিন্ত একশো দিনের সংস্কার সফল হয় নি। সংস্কার করতেই দেওয়া হল না সম্রাটকে। বাধ সাধলেন রাজমাতা ডগার সিকি। যিনি ছিলেন সিংহাসনের পেছনে আসল শক্তি। তার হাতেই ছিল ইম্পিরিয়াল পাওয়ার। উনি প্রচার চালালেন গুয়াংগু পাশ্চাত্য শক্তির এজেন্ট। ফল হল এই যে ১৯১১ সালে বেইজিং আক্রমনের সাথে সাথে ধ্বংস হল চীনের শেষ রাজবংশ।
আমি এই ইতিহাসটা এই জন্যেই নিয়ে আসলাম-শুধু বোঝাবার জন্য সামাজিক এবং ঐতিহাসিক বিবর্তন বড়ই নির্মম। আমাদের আশেপাশটা বদলে যাচ্ছে বুঝতে না পারলে-এবং অতীতকে আঁকরে ধরে বসে থাকলে- নিজেদের এবং জাতির ভবিষ্যতে দুর্দিন আসবেই। চীন বহুদিন ধরেই জ্ঞান প্রযুক্তিতে গোটে বিশ্বেই এগিয়ে ছিল-কিন্ত ওই অতীত থেকে নিজেদের বার করতে ব্যর্থ হওয়ার ফলে উনবিংশ শতাব্দিতে তারা সব কটা যুদ্ধে হেরেছে-বিংশ শতাব্দিতে জাপানের হাতে পদললিত হয়েছে। মহান গৌরবান্বিত চীনের অতীত তাদের বাঁচাতে পারে নি।
চীন এটা বহু নির্যাতন এবং রক্তের বিনিময়ে বুঝেছে বলেই তারা বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে আজ এত বিনিয়োগ করছে এবং গোটা পৃথিবীতে আবার তারা শ্রেষ্ট স্থানের দাবিদার হিসাবে ফিরে এসেছে।
ঠিক তেমন ভারতের গৌরব ধরে বসে থাকলে, আর গণেশ মামার সার্জারীর গল্পকে বিজ্ঞান হিসাবে চালালে, ভারতের অবস্থা হবে উনবিংশ শতাব্দির চীনের মতন। চীন যেখানে গবেষনা খাতে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে, ভারতের হিন্দুত্ববাদি সরকার-তা কমিয়ে চলেছে! অতীতের গৌরব প্রচার খাতে টাকা আছে-অথচ গবেষনা খাতে বরাদ্দ কমছে- গবেষকদের সংখ্যা কমানো হচ্ছে।
অতীতের গৌরব ধরে বসে থেকে বর্তমানে ধ্বংস হয়েছে এমন উদাহরন বহু আছে। আমেরিকাতে আমি হেনরি ফোর্ডের গল্প বলব। ১৯০৮ সালে ফোর্ড মটোর কোম্পানী বাজারে আনে মডেল টি। মাত্র আটশো ডলারের গাড়ি সেই যুগে ছিল বৈপ্লবিক। নেক্সট দশ বছরে আমেরিকাতে গাড়ি বলতে বোঝাত মডেল টি- ১৭ মিলিয়ান বিক্রি হয়েছিল সেই মডেল টি। কিন্ত ১৯২০ সাল পেরোতেই মডেল টির বিক্রি কমতে থাকে। বাজারে আসে জেনারেল মটোরস।
হেনরি ফোর্ডের ছেলে ইজেল ফোর্ড বাবাকে বার বার বোঝাতে থাকেন, বাজারে নতুন মডেল আনতে হবে। ফোর্ড দাবী করতে থাকেন, আসলে তার ছেলে ফোর্ড মটোরসের অতীতকে ফেরাতে পারছেন না। যাইহোক ১৯২৭ সালে যখন জেনারেল মটোরস ফোর্ডের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে-তখন একরকম বাধ্য হয়ে হেনরি ফোর্ড নতুন মডেল চালু করেন। তদ্দিনে ফোর্ড মটোরস তিন নাম্বারে নেমে গেছে । ফোর্ড মটোরসের বাকী দিনগুলিতেও হেনরি ফোর্ড প্রলাপ বকতেন-যে নাম্বার ওয়ান পজিশনে ফিরতে তাদের অতীতের গৌরবোজ্জল দিনগুলিতে ফিরতে হবে! গবেষনা, ডেভেলেপমেন্টের দরকার নেই! ইনফ্যাক্ট আজকের বিজেপির জাতীয়তাবাদ দেখে আমার হেনরী ফোর্ডের ইতিহাস খুব মনে দাগ কাটে!
শুধু কি প্রাইভেট কোম্পানী বা রাজবংশ? সিপিএমের দিকে তাকান। মার্কিস্ট-লেনিনিস্ট তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে রাজনীতি করার কোন বাস্তবতা আজ আর নেই- এই নিঠুর বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই নিয়েই কিন্ত ল্যাটিন আমেরিকাতে নব্য বামেরা লেনিনকে ছুঁড়ে ফেলে কোয়াপরেটিভ এবং গণতন্ত্রের মাধ্যমে নতুন জনশক্তি গড়েছেন। এতে ল্যাটিন আমেরিকাতে বাম শক্তি আজও প্রাসঙ্গিক। কিন্ত ভারতে প্রকাশ কারাতের অবস্থা চীনের রাজমাতা ডাওগার জি বা হেনরি ফোর্ডের মতন। পার্টি দেওলিয়া, বেস হারাচ্ছে-আর যত হারছে তত সেই অতীতকে আঁকরে ধরে টিকে থাকতে চাইছে।
যার হিন্দু বা মুসলমান হয়ে থাকতে চাইছেন-তারাও সেই অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকা পাবলিক। যারা প্রযুক্তির ফলে উদ্ভুত পরিবর্তনকে মানতে চাইছেন না বা বুঝতে চাইছেন না। ফলে সর্বোনাশটা তাদের ব্যক্তি জীবনেই শুধু আসবে না-জাতীয় জীবনেও আসবে।
যে আধুনিকতা কে অস্বীকার করে , বলতে হবে যে সে তাঁর নিজের পরম্পরার আসল দিকটিকেও মানে না , যে প্রকৃত সাবেকি সে কক্ষনো আধুনিকতা কে অস্বীকার করবে না। আপনার কথাই ঠিক। এদেশের মানুষ রা যত খন টিভি দেখে , দেখে শুধু ফালতু সিরিয়াল,
সেই একান্নবর্তী সংসারের কুট কচালি , সেই নোংরা নোংরা ফ্যামিলি পলিটিক্স এসব, ডিসকভারি , ট্রাভেল অ্যান্ড লিভিং এসব দেখার রুচি অধিকাংশ মানুষেরই নেই। এরা যে কোন যুগে বাস করছে এরা নিজেরাও কি জানে ? যাচ্ছেতাই…………………………।
অসহায় ক্ষোভে যে সম্ভাসন তাহাই গালি: মালু বা মাল্লুও গালি। মালায়লাম থেকে আগত সেন শাষকেরা বুদ্ধ বাংলাকে যখন শ্মশান বানালো তখোন এ থেকেই ‘মালু’ বাংলায় গালিই। সেনের উত্তরাধীকার বহন করছে যারা (রক্তে নয় মাথায় বা ধর্ম বোধে) তারা মালয়ী না হয়েও মাল্লু। আর অস্পৃশ্য বাঙ্গাল ইসলাম গ্রহন করে যখন শাষকের নিকটবর্তী হতে ইচ্ছুক কিংবা অস্পৃশ্যতার বন্দীত্ব থেকে মুক্ত হতে চায়, সে তখন ‘ম্লেছ’।
ভাল লেগেছে।
লেখাটি খুব ভাল লাগলো।
প্রকাশ কারাতের ঐতিহাসিক ভুলটি হলো ২০১০ সালে কেন্দ্র থেকে আনবিক ইস্যুতে সমর্থন তুলে নেয়া | এতে বাংলা যা বামপন্থার দ্বিতীয় ঘাঁটি ছিল , তাও ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল | এই লোকটা একটা আস্ত ইডিয়ট |
বঙ্গের জ্যোতিবাবু এন্ড কোং কম্পিউটার আর ইংরাজি শিক্ষার বিরোধিতা করে বাংলাকে ভারতের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে অতি পিছিয়ে দিয়েছিল | অথচ মার্কসীয় শিক্ষা হচ্ছে যে নতুন পরিবর্তনকে গ্রহণ করার শিক্ষা | দান্দ্বিক বস্তুবাদের মূল কথায় হচ্ছে জগত সদা সর্বদা পরিবর্তিত হচ্ছে | ওই পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে শেখার নামী হলো দান্দ্বিক বস্তুবাদ | জ্যোতিবাবু সেটা কেন ভুলে গেলেন বুঝলাম না |
আসলে কমিউনিস্ট পার্টি তার তাত্ত্বিক আদর্শ থেকেই অনেক সরে গেছিল | তাই তাদের পরাজয় হয়েছে | চিনের কমিউনিস্ট পার্টিও বাস্তব বোঝে শুধু ভারত পারে না |
বিপ্লবপালের পালের লেখা আমাকে বরাবরই আকৃষ্ট করে। সরাসরি আক্রমণ না করে তথ্যের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।
বেশকিছু প্রাসঙ্গিক উদাহরণ টেনে এনেছেন, যার কারণে লেখাটার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। আপনার লেখার বরাবরই ভক্ত। যখনই আপনার নতুন লেখা দেখি, সাথে সাথেই পড়তে বসে যাই। কারণ নিজেকে সবসময় আপগ্রেডেড রাখার ক্ষেত্রে আপনার লেখা খুবই সহায়ক। 🙂
খুবই প্রাসঙ্গিক লেখা। পশ্চিম বঙ্গে বাঙালিরা এক সময় বেশ উন্নাসিক ভঙ্গিতে বলত তারা নাকি জাতিবর্ণ মানে না- বলত ওসব বেশি “মেরো”,”পশ্চিমা” আর “মাদ্রাজি”-দের মধ্যে। পরিচয়ে প্রায়ই জিজ্ঞেস করত “বাঙালি না মুসলমান”। হাস্যকর বেপারটা হোল, এই কথাগুল যে কতটা বর্ণবাদি, সেটা বোঝার মত বোধও আমাদের ছিলনা। আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী উদাহরণ হিসেবে দেখাতেন উত্তর প্রদেশ, বিহার কে। আজ মাত্র পাঁচ বছর পর নিজের রাজ্যটার দিকে তাকালে কান্নাই পায়। উলটে বেঙ্গালর, মুম্বাইয়ের খেঁটে খাওয়া মানুষদের একটা বড় অংশ আজ বাঙালি।
কলকাতায় যারা আছে, তাদের তাও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে, যারা দুরে মফস্বলে থাকে, তাদের আর ঘরে ফেরার কোন উপায় নেই।
পরিস্থিতিটি আমরা অনেকেই উপলব্ধি করি, কিন্তু এমন ঐতিহাসিক উদাহরণসহ বর্ণনায় বিষয়টি সহজবোধ্য এবং জোড়ালো হয়েছে। ধর্মের অতীত উজ্জ্বলতায় যারা ফিরতে চাচ্ছেন, অজ্ঞতা আর হিংস্রতার ধুম্রজালে আচ্ছন্ন হয়ে ধ্বংশের দিকেই যাচ্ছেন তারা। পৃথিবীর সীমিত সম্পদের ভাগীদার কিছু কমেল যাদের লাভ, তারা এই আত্মবিনাশকামী ধার্মিকদের খুব একটা আন্তরিক বাঁধা দেবে না। ধর্মাক্রান্ত অনুন্নত অশিক্ষিত জনগোষ্ঠির জন্য সত্যিই বড় দুর্দিন সামনে। শিক্ষা চাই, শিক্ষিত চাই। আছে কি কোন উপায়, দ্রুত মানুষকে সুশিক্ষিত করার?
সময়ের সাথে নিজেদের আপগ্রেড করতে না পারলে পরাজয় তো হবেই,প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাই দুষ্কর হয়ে পড়বে।অতীত কে আঁকড়ে ধরে ধার্মিক হয়ে থাকতে চাওয়া মানে নিজেদের আপগ্রেড করতে না চাওয়া।হাজার হাজার বছর আগে কারো দেখানো পথে বর্তমানে পথ চলতে চাওয়ার কোন ইচ্ছা আমাদের থাকাই উচিৎ নয়।সেই সময়ের ধর্মগুরুদের আমাদের বর্তমান নিয়ে কোন ধারনাই ছিলনা।আমি ফোর্ডের টি সেভেন গাড়িতে চলতে চাই না।
খুবই মূল্যবান একটা লেখা। বাংলাদেশের জন্যও লেখাটা খুবই প্রাসঙ্গিক মনে করি।