শৈশব থেকে পাখীপড়ার মত করে প্রতিটি মুসলমান শিশু শেখে, ইসলাম হচ্ছে একমাত্র সত্যধর্ম, কোরআন হচ্ছে একমাত্র সহি কিতাব এবং দ্বীনের পথই আল্লাহর পথ; এবং তার সংরক্ষকও আল্লাহ। আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনেই নিহিত রয়েছে সকল কল্যাণ; ব্যাস্টিক ও সামস্টিক। যে বা যারা সে পথ হতে বঞ্চিত, তারা সকলেই কাফের, তারা সকলেই ব্রাত্য। তারা ‘আমাদের’ লোক নয়।
অথচ মুসলমানেরা সকলেই যদি একই ঐশীগ্রন্থ কোরআনেই বিশ্বাসি হবে তাহলে তার এত ধরনের ব্যাখ্যা বা ইন্টারপ্রিটেশন প্রচলিত কেন, কেনইবা মুসলমানদের মধ্যে রয়েছে এত বিভক্তি, সে প্রশ্নের জবাবে সকলের মুখে পাওয়া যায় একই কৈফিয়তমূলক বুলি… “উহা সহি ইসলাম নহে”।
ধর্মপালনকারী মুসলমানদের অধিকাংশ কোরআন, হাদিস, সিরাত ও ইসলামের ইতিহাসের বিন্দুমাত্র পড়েনা বলেই ইসলামের সহিংস ইতিহাস ও বর্বর শিক্ষা সম্পর্কে এরা কিছুই জানেনা; সিলেক্টিভ ধর্মপালনের এই প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র পরিবারের গুরুজনদের মুখে শুনে, চেরি-পিকিং এর মত করে, পরিপ্রেক্ষিত বিবর্জিত ভাবে, কিছু আপাত নিরীহ আয়াতই তারা শোনে, বলে ও পড়ে; ফলে কথিত সহি ইসলামের প্রকৃত চেহারা জানা থেকে তারা বঞ্চিত এবং নিজ নিজ জীবনাচারে প্রবল ভ্রান্তিতে বসবাস করে।
অপরাপর সকল ধর্মের মতই ইসলামও একটি ভাববাদী দর্শনাশ্রয়ী ধারণা; এর সাথেও যোগ আছে উপলব্ধির এবং উপলব্ধির সাথে যোগ আছে ধী, মেধা, প্রজ্ঞা ও বিচারশক্তির। কিন্তু মৌলবাদী সংস্কৃতির প্রবল প্রভাবে এ সময়ের ধার্মিকদের জন্য আধ্যাত্মিক সে দর্শনের বিচার হয়ে উঠেছে গৌণ; সেই স্থান দখল করে নিয়েছে অসহিষ্ণু ধর্ম-অহং এবং আজ্ঞাধীন প্রাত্যহিক আচার।
নেশাগ্রস্তের মত আচার পালনের সাথে যোগ আছে অন্ধ অনুশীলনের, যার মূর্খ অনুসরণ ডেকে আনে হ্রদয় ও মস্তিস্কের অন্ধত্ব। ফলে মুসলমানেরা তাদের দোষকুণ্ঠিত বক্তব্যে, জেনে এবং না জেনে, প্রতিনিয়ত ন্যায্যতা দিচ্ছে, শক্তিশালী করেছে রাজনৈতিক ইসলামকে; প্রতিষ্ঠিত করে চলেছে মৌলবাদের ধারাটিকে। ধর্মীয় গভীর উপলব্ধিটিকে বৃত্তাবদ্ধ করেছে হারাম-হালাল এর দ্বিমাত্রিক ধারায়।
রাজনৈতিক ইসলাম শেখায় জীবন উপভোগের একমাত্র পথ হচ্ছে আল্লাহ্র পথে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া। চলার সে পথে নৃত্যশিল্প, চিত্রকর্ম, কারুশিল্প, সঙ্গীত, নাটক, সিনেমা, কবিতা, ক্রীড়া এমনকি দাবার মত নির্দোষ খেলাও নিষিদ্ধ। মোদ্দাকথা মানুষের সুকুমারবৃত্তি বিকশিত করে এমন সকল ক্রিয়াই নিষিদ্ধ এবং হারাম পথ। সুকুমারবৃত্তি বঞ্চিত এই মানব মন এক পর্যায়ে হয়ে ওঠে পশুবৎ; কেবল নিজ সম্প্রদায়ে আবদ্ধতা তাকে করে তোলে অসুস্থ, লালন করতে শেখায় অন্যদের প্রতি ঘৃণা, তাকে করে তোলে সহিংস।
যদিও রাজনৈতিক ইসলাম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েও যথাযথ কারনে ব্যর্থ হয়েছে, এবং এর অনিবার্য পতন প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে, তা সত্ত্বেও বিশ্বজোড়া মুসলমানদের মধ্যে, হোক সে মডারেট বা উগ্রবাদী, অধিকাংশের মনের গহন গভীরে রাজনৈতিক ইসলাম নামের মায়াপ্রপঞ্চটি আজ এমন ভাবে প্রোথিত, এমন ভাবে বিস্তার লাভ করেছে যে, বিশ্বাসীদের একটি অংশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে বিদ্যমান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যাগুলোর মোকাবেলায় এটিই একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান।
রাজনৈতিক ইসলামের মূল লক্ষ্য একটিই; সে হল সত্য ও মিথ্যা গুজবের ভিত্তিতে অলীক খিলাফতের মোহান্ধতা প্রচার। অতীতমুখিনতার ধারায় তার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের চিরকাল এই স্বপ্ন দেখিয়েই সে বেড়ে ওঠে যে, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সরকারের কার্যের প্রথম ভিত্তি হল শরিয়াহ। নির্লজ্জভাবে তারা প্রচার করে যে, সেটাই আল্লাহ্র নির্দেশ এবং সে নির্দেশের বিরোধিতা করা মানেই আল্লাহ্র নির্দেশের বিরোধিতা করা।
নিজ ধর্ম না জানা, কোরআন-হাদিস-সিরাত ও ইতিহাস না পড়া, সিলেক্টিভ ভাবে ধর্মপালনে অভ্যস্ত মুসলমানদের পক্ষে রাজনৈতিক ইসলামের দেয়া যুক্তির মোকাবেলা অসম্ভব; ফলে প্রকারান্তরে তারা আত্মসমর্পণ করে মৌলবাদী শিক্ষার পক্ষেই, সকল অনিচ্ছা সত্ত্বেও; শৈশবে শেখা মতদিক্ষার দূষণেই।
রাজনৈতিক ইসলাম প্রতিরোধের পথ একটিই; আর তা হল রাষ্ট্র ও ধর্মের পৃথকীকরণ; ধর্মকে মৌলবাদিদের সঙ্কীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করবার পথটিকে স্থগিত না করে মৌলবাদের উত্থানকে রোখা অসম্ভব।
বন্ধ হোক সকল ধরনের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি; অবসান হোক ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের।
আমরা মুসলিম হয়ে ইসলামের সঠিক নিয়মকানুন বুজতে পারতেছি না, আর বিধর্মি কাফেররা কিভাবে বুঝবে ইসলামের মর্ম।
মন্তব্য…ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্টিত সমাজ ব্যবস্তাই মানব জাতির জন্য কল্যাণকর
সব শিয়ালেরই এক ‘রা’, হুক্কা হুয়া। কেউ বলে আল্লা হুয়াকবর, কেউ বলে, জয় শ্রী রাম…….। বেশীর ভাগ মানুষই বলে, ধর্ম ছাড়া সমাজ ও দেশ চলেনা। তার মধ্যে শিক্ষিতের সংখ্যা কম নয়। এরা যতদিন না বুঝবে, ততদিন ধর্মের ধ্বজা পতপত করে উড়বে।
যে দেশে সেকুলারের মোড়কের সরকার মদিনা সনদে দেশ শাসন করে, সেই দেশে ধর্ম ভিত্তিক রাকনিতি কখনো বন্ধ হবে না।
আমার ত মনে হয় আগামী ১০০ বছরে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বরং ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। অবাক হয়ে যাচ্ছি দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে সদ্য যারা বেরিয়ে আসছে তাদের মধ্যেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বা ধর্মান্ধতা এত বেশি পরিমাণে চর্চা হচ্ছে যে একজন সাধারণ অশিক্ষিত মুসলমান তার চেয়ে অনেক বেশি উদার মনের।
বন্ধ হোক সকল ধরনের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি; অবসান হোক ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের।
এই অবস্থান থেকে বাংলাদেশের বের হয়ে আশা একান্ত জরুরী,তবে সে আশা আপাতত গুড়ে বালি । তবে আপনার লেখা দিয়ে শুরু করেছেন সেটাই এসময়ের জন্য এক বিশাল বাস্তব এজেন্ডা…… :good:
কলম চলুক দূর্বার গতিতে , ছিন্নভিন্ন হউক সকল চিন্তার জড়তা……..
ভাল লাগলো
কি করে বন্ধ হবে দাদা ? ধর্ম ছাড়া মানুষকে আর কি উদ্দীপিত করতে পারে ?
গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তির ঐক্য ছাড়া, সম্মিলিত প্রতিরোধ ছাড়া এই অচলায়তন চূর্ণ করবার আর কোন পন্থা নেই।
ইচ্ছা করলেই যদি হত, তাহলে তো ল্যাঠা চুকেই যেত। ধুরন্ধর ধাপ্পাবাজ এরশাদ (ভূতপূর্ব প্রেসিডন্ট বলা ভুল হবে!!) কিছুদিন আগেও সগর্বে বলেছিলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামে যে হাত দেবে, তার হাত জ্বলে যাবে। নেহায়েত ফাঁকা বুলি যে নয়, তার প্রমান রাষ্ট্রধর্ম বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে কতটুকু কাজ হবে তা নিশ্চিত নই। নিষিদ্ধ অবস্থায় এর প্রচার প্রসার বাড়বে না, কে বলতে পারে। বস্তুত প্রতিটি মসজিদে, ওয়াজ মাহফিলে এই পশ্চাদমুখি দর্শনের উচ্চকিত প্রচার প্রতি দিন, প্রতি মহল্লায়, প্রতি গ্রামে, প্রতি গঞ্জে, প্রতিনিয়ত হচ্ছে। রাষ্ট্র আর ধর্ম আলাদা করে এদেরকে কি রোখা যাবে? অন্ধকারকে আইন করে তাড়ানো যাবে না, আলো আনতে হবে। আর সে কাজ আমার আপনার সবার, যারা এটা বুঝতে পারছেন।
মানুষকে শিক্ষিত করতে হবে, শিক্ষার জন্য যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।
বন্ধ হোক সকল ধরনের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি; অবসান হোক ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের।
সকল ধর্মের রাজনীতি বন্ধ হোক। আগে যখন মূমীনের খাতায় নাম ছিল তখন মনে করলাম ইসলাম ছাড়া বাকি ধর্ম মিথ্যা। কিন্তু এখন মনে করি সত্যিই যদি ধর্ম ইশ্বরের সৃষ্টি হত তাহলে আমাজন বনের মানুষদের কোন ধর্ম থাকত না এবং তারা আগুন, গাছকেও পূজা করত না। মানুষ আইন তৈরির জন্য ইশ্বর নামের অদৃশ্য মানুষকে পূজা করে,সিজদা করে