নভেম্বর ১৩, ২০১৫; অর্থাৎ, ফ্রাইডে দ্যা থার্টিনথে আরেকটা দুর্ঘটনা যুক্ত হলো। প্যারিসে সন্ত্রাসী আক্রমণে মারা গেছে দেড় শতাধিক মানুষ (শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত), আহত আরো অনেকজন। বোমাবাজি হয়েছে, গোলাগুলি হয়েছে, আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে। আর এই আক্রমণের পর বেশিরভাগ মানুষকে যা করতে দেখছি, তা হলো Prayers লিখে একটা হ্যাশট্যাগ দেয়া।
যারা এই কাজটা করছেন, তাদেরকে বলছি – লাভ চিন্তা করুন। এতে কি আসলে কোনো লাভ আছে? আপনাদের আসলে কী করা উচিৎ?
কমেডিয়ান এনথনি জেসেলনিক অত্যন্ত ডার্ক কমেডি করে। এমনকি কখনো কোনো ট্র্যাজেডি হলেও সে কমেডি করতে ছাড়ে না। কিন্তু এটা করে সে আসলেই পরোক্ষভাবে কলজে কাঁপিয়ে দেয়, বুঝতে সাহায্য করে আসলেই কত ভয়ংকর ছিলো ট্র্যাজেডিটা। সে যে মজা করে, আসলে কাদেরকে পচায়? যারা ইচ্ছেমত MY THOUGHTS AND PRAYERS লিখে নিজেকে দায়িত্ববান মনে করে। তার ছোটো একটা ক্লিপ নিচে অনুবাদ করে দিলাম…
https://www.youtube.com/watch?v=1FLGEr1zJYo
“তো, এনথনি, সমস্যাটা হচ্ছে তুমি যদি দুর্ঘটনার দিনেই টুইটারে সেই ঘটনাটা নিয়ে মজা করো, তাহলে মনে হয় যে তুমি ক্ষতিগ্রস্থদেরকে নিয়ে কৌতুক করছো। আর এটা ঠিক না। কিন্তু না, আসলে আমি তেমন কিছু করছি না, কারণ দুর্ঘটনার দিনে ক্ষতিগ্রস্থরা টুইটারে আসে না। আমি কি ভুল কিছু বললাম? ঐদিন তো ওদেরকে নিজেদের ক্ষতি নিয়েই পড়ে থাকতে হয়। কেউ নিজেদের গায়ে হাসপাতালের চাদর জড়িয়ে জিজ্ঞেস করে না, “এই, আমরা কি এখন ট্রেন্ডিং টপিক?”
না, আমি মজা করছি অন্যদেরকে নিয়ে, যারা পৃথিবীতে ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনা হওয়ামাত্রই নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়াতে যাবে, ফেসবুক-টুইটার যাই হোক, সেখানে গিয়ে সবাই ঠিক একটাই কথা লিখবে, ‘আমার ভাবনা আর প্রার্থনা। আমার ভাবনা আর প্রার্থনা রইলো Aurora এর মানুষদের প্রতি। আমার ভাবনা আর প্রার্থনা রইলো Boston এর পরিবারগুলোর প্রতি।’ জানেন, এটার মূল্য কতটুকু? ঘোড়ার আণ্ডা! ঘোড়ার আণ্ডার চেয়েও কম! নিজের টাকাপয়সা, সময়, সহানুভূতি – কিছুই আপনি ওদের জন্য খরচ করছেন না। শুধু এটুকুই বলছেন, জাস্ট এটুকুই – ‘আজ কিন্তু আমাকে ভুলে যেও না। ভুলো না আমায়। খারাপ খারাপ খবরে মনযোগ হয়তো অন্যদিকে চলে যাবে, কিন্তু ভুলবেন না যে আমিও কিন্তু কষ্ট পেয়েছি’। এই মানুষগুলোর কোনো মূল্যই নেই, এবং এদেরকে নিয়ে মজা করাই উচিৎ।”
ভিডিওটা আরো আছে, কিন্তু আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক এতোটুকুই…
এই জায়গায় এসে অনেক দর্শক তাহলে জিজ্ঞেস করতে পারেন, “ও আচ্ছা, তাইলে আপনি কী করে উল্টায়ে ফেলতেসেন?” এখান থেকে মনযোগ দিয়ে পুরোটা পড়ুন……
সমস্যার গভীরের কারণটাকে ভালো করে দেখুন। এটার জন্য এলিয়েনরা দায়ী না, দায়ী আমরাই। আমাদের মধ্যে থেকে কেউই, কোনো এক “মানুষ”-ই এটা করছে। আর এটা ওরা করতে পারছে আপনার-আমার নীরব সমর্থনে। কারণটা দেখেও চুপ করে আছেন দেখেই সারা বিশ্বে এসব ঘটে যাচ্ছে। এটা ২ দিনে সমাধানের মত কোনো বিষয় না। আমি এখন উড়ে গিয়ে প্যারিসের হাসপাতালে সেবা করলে এই সমস্যার শেকড় মিটে যাবে না। তাহলে কিভাবে সমাধান আসবে?
প্রথমেই, কারণটাকে কারণ হিসেবে স্বীকার করে নিন। এরপর ছুঁড়ে ফেলে দিন সকল বিকৃত মতাদর্শিক আধিপত্য। যে মতবাদে এতো ভুল ব্যাখ্যা সম্ভব, যেখানে এতো সমস্যা, এতো হিংসা, সহমর্মিতা আর সহানুভূতির এতো অভাব, সেই মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করুন। সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসবাদ, দুটোকেই ভালো করে বোঝার চেষ্টা করুন।
“কিন্তু, তবে, আসলে” – এই জাতীয় আমতা-আমতামূলক শব্দ পরিত্যাগ করে কঠোর হন। এমন এক সামাজিক পরিবেশ তৈরি করুন, যেখানে এইসব সন্ত্রাস দিয়ে কারো সহমর্মিতা অর্জন করা যাবে না। বর্তমানে পৃথিবীতে এমন বেশ কিছু মতাদর্শ আছে, যাদের অনেক অনুসারীই নীরবে এদেরকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যারা সরাসরি খুন করে, অথবা টাকাপয়সা দিয়ে সমর্থন দিচ্ছে, তাদের কথা বলছি না। অনেক আপাত মডারেটদের কথা বলছি।
আইসিস এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে IBN এর খবরে দেখলাম, এখনো জানি না কতটুকু সত্য। তবে ২০০ মিলিয়ন মুসলিম মনে মনে এই হামলায় খুশি হয়েছে, তাদের মতে এই ধরনের জিহাদের দরকার আছে। হামলা যেই করুক না কেন, তার চেয়ে জরুরি এই মানসিকতার মানুষগুলোকে পালটানো। আপনাদের এই সমর্থন পাওয়া যাবে জেনেই ওরা এসব করতে পারছে। এবং আপনার মানসিকতা যদি এমন হয়, আপনার সন্তানই তো একদিন এই ধরনের সন্ত্রাসীতে পরিণত হবে।
এই সন্ত্রাসীদের জন্য এমন এক পৃথিবী তৈরি করুন, যেখানে ওরা কারো কাছ থেকেই এই ধরনের কাজে কোনো সহমর্মিতা পাবে না। সবাই মিলে এমন এক সামাজিক কণ্ঠ তৈরি করুন যেখানে এভাবে নির্বিচারে বোমাবাজি করে, কুপিয়ে মানুষ হত্যা করে কেউ শ্রদ্ধা পাবে না। নিজের পরিবারের আলোচনাতে এসব টপিক যখন আসবে, তখন সন্তানদের সামনে এমন কথা ভুলেও বলবেন না, যাতে ওদের কচি মনে এসব সন্ত্রাসীদের জন্য কোনো সহানুভূতি জাগে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যদি এই চর্চা করতে পারে, তাহলে পরের প্রজন্মতে গিয়ে আমরা একটা সুন্দর ভবিষ্যত পাবো। রাষ্ট্র এই হত্যাগুলোর বিচার হয়তো করতে পারবে, কিন্তু সেটাতে আপনার-আমার তেমন কিছু করার নেই। অবশ্যই ক্ষমাহীন বিচারের প্রয়োজন আছে, এটাও সমাধানের একটা জরুরি অংশ। তবে এটা পুরো সমাধান না, স্থায়ী সমাধানও না। প্রকৃত সমাধানে সময় লাগবে, আর সেটার কর্তব্য আমাদের। এটাই আমাদের এখনকার করণীয়।
আমাদের পূর্বপুরুষেরা যদি এই সমস্যাগুলো দেখে বিদ্রোহ করতো, “আমি তো কারো কোনো ক্ষতি করছি না, আমি নিজের মতামত নিয়ে সন্তুষ্ট” বলে ঘরে চুপ না মেরে থাকতো, তাহলে আজকে ISIS এর আয়োজনে এই খুনগুলো হতো না। আমাদের পূর্বপুরুষদের নীরবতা দায়ী আজকের ঘটনার জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কিছু হলে দায়ী থাকবে আমাদের নীরবতা।
ফারাদ হোসেন মাসুম তার লেখায় সর্ব শেষে একটা খুব গুরুত্ব পূর্ণ কথা বলেছেন যে,
“আমাদের পূর্বপুরুষেরা যদি এই সমস্যাগুলো দেখে বিদ্রোহ করতো, “আমি তো কারো কোনো ক্ষতি করছি না, আমি নিজের মতামত নিয়ে সন্তুষ্ট” বলে ঘরে চুপ না মেরে থাকতো, তাহলে আজকে ISIS এর আয়োজনে এই খুনগুলো হতো না। আমাদের পূর্বপুরুষদের নীরবতা দায়ী আজকের ঘটনার জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কিছু হলে দায়ী থাকবে আমাদের নীরবতা।”
আমি একটু বাড়িয়ে বলবো যে, তারা যদি মানবিকতা ও মানব ধর্মের জন্য প্তিবাদ করতেন, তাহলে আজ বাংলাদেশে ধর্মান্ধতার জায়গায় হতোনা এবং খুনা খুনির ও ঘটনা ঘটত না। তার উপরে রাজনৈতিক মঞ্চগুলি থেকে যদি একে প্রশ্রয় না দিত তাহলে বাংলাদেশ অনেকটা শান্ত থাকতো। ধর্মীয় জিগির তুলে কিছু লোকের ফয়দা হয়েছে, আর তারাই তাদের স্বার্থে ধর্মীয় জিগিরকে জিইয়ে রাখে। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা যে ভুল করেছে, সেই ভুল আমরা যদি না করি, তাহলে ভবিষত প্রজন্মকে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে বেগ পেতে হবেনা।
সৈয়দ ফারদ হোসনের কথায় বলতে চাই, শুধু সেকুলার বলে চেঁচালে হবেনা। সেকুলারের প্রতিটি সংজ্ঞাকে মেনে চলার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলির। কিন্তু এরা নিজেদের ভোটের রাজনীতির স্বার্থে সব কিছু ভুলে গিয়ে ধ্রমধজবার নীচে গিয়ে বাতির সলতে উচ্চকে দেয়। সেকুলার রাজনীতি তখনি হবে, যখন দেশের আইন সর্ব জনের স্বার্থে গ্রহণ যোগ্য হবে। দেশে এখন প্রতিবাদ করার মানুষ অল্প সংখ্যায়, আর প্রতিবাদ করলেই মৃত্যু। এইখানে সরকারকে দায়িতবের সাথে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং জনমত সংঘটিত করতে হবে। কিন্তু সরকার বা অন্যান্য রাজনৈতিকদলগুলি নিজেদের সব্রথে কিছুই করবেনা, বরং ধর্মীয় মৌলবাদীদের পিছন থেকে আশীর্বাদ করবে।
আরেকটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা পেলাম।
ধ্যন্যবাদ।
বাংলাদেশে যদি সত্যিই আই এস আসে, কিংবা যদি থাকে, এর জন্য সব রাজনৈতিক দল গুলো দায়ী। আমাদের রাজনীতিবিদদের একটা কমন বৈশিষ্ট্য হল, পীর ফকিরের দোয়া নিয়ে নির্বাচন শুরু করা। এইভাবে ধর্মজীবীদের পদ লেহন করে করে রাজনীতিতে ধর্মের বিষ বাষ্প ছড়িয়ে দিয়েছে। একসময় যারা নিজেদের সেকুলার বলে প্রচার করে এই দেশের মুক্তমনাদের প্রভাবিত করেছিল, তারাও এখন ধর্মজীবীদের সুরে কথা বলে। তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য তেতুল বাবাদের ধারস্ত হয়। হায়রে আমাদের এই সেকুলার রাজনীতি। এই ভাবে আর কতদিন? দেশ টা জঙ্গিতে ভরে গেলে আপনাদের করার কিছু নাই, কারণ আপনাদের দুই পা আমেরিকা যুক্তরাজ্যে, আর মুখ টা বাংলাদেশে।
কে বলল আমাদের আর কিছু করার নেই? আসলে আমাদের আর বেশি করে করা উচিত ছিল। আমরাই এগুল হতে দিচ্ছি। আজকে দকানে গিয়ে যখন বই চাই তখন দকান্দার বলে এই শুদ্ধস্বরের বই আনলে তমাকে কুপাবে আমাদেরও কুপাবে। এখানেই মুল সমস্যা। আমরা ভয় পাচ্ছি।
ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই ব্যাপারে। তারা কি এই গণহত্যাকারী সন্ত্রাসীদের নিজেদের দেশে পুষবে নাকি নিজেদের নিরাপত্তা ও প্রাণ রক্ষার জন্য এদের বের করে দেবে? এদেরকে কি কোনো দেশে ঢুকতে দেওয়া উচিত?
ওরা বলেছে, we are at war. দেখা যাক, কী হয়।
এই রকম পরিবেশ আগে বাংলাদেশে তৈরী করুন | তারপর বিশ্বের কথা বলবেন | বাংলাদেশের যে সমস্যা আজ বিশ্বের সেই একই সমস্যা |
চেষ্টা তো করছি। এজন্যেই এই কথাগুলো বাংলায় লেখা। পাশাপাশি ইংরেজিতেও লিখেছি,
http://farhadmasum.blogspot.com/2015/11/paris-attack-what-more-can-you-do.html
আমরা তো চেষ্টা করছিই। সংখ্যায় কম হলেও এই মানসিকতা আমরা ধারণ করছি। আফসোস যে, এখানে আমাকে “কিন্তু” শব্দটা ব্যবহার করে বলতে হচ্ছে, কিন্তু আশেপাশের গোড়া ধর্মান্ধদের মানসিকতা পাল্টানো যাচ্ছে না।
উগ্রপন্থী মুসলিমদের কাজকর্ম নিয়ে আমার এক খ্রিস্টান বন্ধুর সাথে তার এক মুসলিম বন্ধুর কথা কাটাকাটি হয়। মুসলিম বন্ধুটি ক্ষেপে গিয়ে এরপর খ্রিস্টান বন্ধুটির উপর চড়াও হয়, আর ওকে মেরে ফেলারও চেষ্টা করে। চিন্তা করা যায়?
বাহ, একদম সূরা নিসা স্টাইল!